সম্প্রতি, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা শহরে অবস্থিত কেওড়াতলা মহাশ্মশানের সামনে “I Love Keoratala Mahasashan” ফলকযুক্ত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে “I Love Keoratola Mahasashan” ফলকযুক্ত ছবিটি আসল নয় বরং কেওড়াতলা মহাশ্মশানের একটি ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তার সম্পাদনা করে “I Love Keoratola Mahasashan” শীর্ষক ফলক যুক্ত করে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ছবিটির মূল উৎস অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে “Sahanagar Crematorium – Keoratala – Kolkata” শীর্ষক ক্যাপশনে ২০১১-১০-১৪ তারিখে উইকিমিডিয়ায় আপলোডকৃত একটি ছবি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উইকিমিডিয়ার সেই পেইজে বলা হয় ছবিটি বিশ্বরূপ গাঙ্গুলি নামের একজন ফটোগ্রাফারের তোলা।
সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটি এবং উইকিমিডিয়াতে ২০১১ সালে আপলোড হওয়া ছবিটি পাশাপাশি তুলনা করলা দেখা যায় ছবি দুটির সাইজ, ছবিতে থাকা ঘড়ির সময় এবং মানুষের অবস্থান হুবুহু একই রকম। তবে উইকিমিডিয়ার ছবিটিতে “I Love Keoratola Mahasashan” লেখাযুক্ত কোনো ফলক নেই। অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড।
Image Comparison by Rumor Scanner
মূলত, ভারতের কেওড়াতলা মহাশ্মশানের একটি পুরোনো ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তার সম্পাদনা করে ছবিতে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের সামনে “I Love Keoratola Mahasashan” শীর্ষক ফলক বসিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, “I Love Keoratola Mahasashan” ফলকযুক্ত কেওড়াতলা মহাশ্মশানের যে ছবিটি ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে তা এডিটেট।
সম্প্রতি ভারতীয় অভিনেতা অক্ষয় কুমার “হাই, আমি অক্ষয়। আমি আপনাদের বলতে চাই যে আমি হিন্দু না, আমি মুসলিম না। আমি ফিলিস্তিন কে সমর্থন করছি হ্যাঁ আমি ফিলিস্তিনকে সমর্থন করছি।” শীর্ষক দাবিতে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে একাধিক ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানানের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় অভিনেতা অক্ষয় কুমার ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে উল্লিখিত দাবিতে কোনো বক্তব্য দেননি বরং ভিন্ন ভিন্ন দুইটি ঘটনার ভিডিওতে টিকটক ফিল্টার ব্যবহার করে উক্ত ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভারতীয় অভিনেতা অক্ষয় কুমার সেদিন ভারত সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে মুম্বাই ট্রাফিক পুলিশের টুইটারে একটি সচেতনতামূলক ভিডিও বার্তা দেন। তবে সেখানে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন নিয়ে কোনো কিছু বলেন নি।
অনুসন্ধানে টিকটক অ্যাপে একটি ফিলিস্তিন পতাকা এবং আরবিতে ফিলিস্তিন লেখা সহ ‘Palestine’ নামে একটি ফিল্টার পাওয়া যায়। উক্ত ফিল্টার ব্যবহার করে অক্ষয় কুমারের মুম্বাই ট্রাফিক পুলিশের টুইটারে সচেতনতামূলক ভিডিও বার্তাএডিট করে এমনটা করা হয়েছে।
Screenshot from Tiktok
উক্ত ফিল্টার ব্যবহার করে অন্যান্য টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকেও আরও অনেক কন্টেন্ট তৈরি হয়েছে।
Screenshot from Tiktok
অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২৪ জুন ২০২২ এ ‘Akshay Kumar’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে “Sending my best wishes, hamesha” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিওটির সাথে দ্বিতীয় দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অক্ষয় কুমারের এই ভিডিওটি ছিলো সে সময়ের একটি চলচ্চিত্রের প্রমোশনাল ভিডিও।
Image Comparison: Rumor Scanner | Screenshot from Instagram
উল্লেখ্য, ইন্টারনেটে অনুসন্ধানে ভারতীয় অভিনেতা অক্ষয় কুমারের টিকটক অ্যাকাউন্ট থাকা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ৫ এপ্রিল ইসরায়েলি পুলিশ আল আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের নামাজরত অবস্থায় হামলা করলে সেই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছেন। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে ভারতীয় অভিনেতা অক্ষয় কুমার ফিলিস্তিনকে সমর্থন করছেন দাবি করে একাধিক ভিডিও প্রচারিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায় ভারতীয় অভিনেতা অক্ষয় কুমারের ফিলিস্তিনকে সমর্থনের যে ভিডিওগুলো টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে তা আসল নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন দুইটি ঘটনার ভিডিওতে টিকটক ফিল্টার ব্যবহার করে উক্ত ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বলিউডে বিভিন্ন তারকাদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ভারতীয় অভিনেতা অক্ষয় কুমার ফিলিস্তিনকে সমর্থন করেছেন দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওগুলো এডিটেড।
সম্প্রতি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েই জাতীয় নির্বাচন জানালেন সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘টকশোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মুখ খুললেন সেনাপ্রধান’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান কোনো মন্তব্য করেননি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিও তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
গত ৮ এপ্রিল Sabai Sikhi(আর্কাইভ) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
Screenshot: YouTube
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান উর্ধতন কর্মকর্তাকে দেখা যায়।
১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওটিতে বলা হয়, ‘এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই সেনাপ্রধান কর্মকর্তা। আগামী ৩ মাসের মধ্যেই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার অঙ্গীকার করেন এই সেনাপ্রধান কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হলে তা যথাযথভাবে পালন করা হবে বলেন জানান এই কর্মকর্তা। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দল যেন অংশগ্রহণ করে সেজন্য তত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারবে।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় ভিডিওটির শুরুর ১৬ সেকেন্ড ২০১৮ সালে প্রচারিত ডিবিসি নিউজের রাজকাহন টকশো(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে। ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ‘সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত’ শিরোনামে ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর প্রচারিত ৩৭ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের টকশোটি ৩৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ড অংশ থেকে ৩৫ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড অংশ পর্যন্ত দাবিকৃত প্রতিবেদনে নেওয়া হয়েছে।
Screenshot: DBC NEWS YouTube
উক্ত টকশোতে অংশগ্রহণকালীন বর্তমান সেনা প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেসময় তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে এসডিএস’র দায়িত্ব ছিলেন।
Screenshot: DBC NEWS YouTube
এছাড়াও ভিডিওটি থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায় সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি। ভিডিওটির ৪৬ সেকেন্ডের সময় প্রদর্শিত একটি ছবিতে সেনাবাহিনীর এক উর্ধতন কর্মকর্তাকে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে দেখা যায়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত ছবিটি বৈশাখী টিভি’র অনলাইন সংস্করণে গত ৩১ জানুয়ারি ‘আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হবে: সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটি’র ৫০ সেকেন্ডের সময় প্রদর্শিত একটি ছবিতে কয়েকজন সেনা সদস্যকে দেখা যায়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে উক্ত ছবিটি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বাসস) এর অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ০৭ মে ‘সেনাবাহিনীর প্রধানের কক্সবাজার খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটির ১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩ সদস্যকে রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত ছবিটি বিবিসি নিউজের অনলাইন সংস্করণে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘নির্বাচনী কাজে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি এবং ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো সূত্রে সেনাপ্রধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়া নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এর মন্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হবে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান কোনো মন্তব্য করেননি।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাম জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হবে বলে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো পাকিস্তান – আফগানিস্তানে গত মার্চের ভূমিকম্পের নয় বরং গত মার্চে ইকুয়েডরের ভূমিকম্প এবং ২০২২ সালে আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Getty Images এর ওয়েবসাইটে “TOPSHOT-ECUADOR-EARTHQUAKE” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির চিত্রগ্রাহক হিসেবে Ariel Suarez নামক জনৈক ফটোগ্রাফারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি ছবিসূত্র হিসেবে বার্তাসংস্থা AFP এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ছবিটির ডেসক্রিপশন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ছবিটি ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ ইকুয়েডরের মাচালা শহরে ভূমিকম্পের ঘটনার সময় ধারণ করা হয়।
গত ২১ মার্চ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে দ্য ডেইলি মেসেঞ্জার।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: AP
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় দক্ষিণ আফগানিস্তানে পাক্তিরা প্রদেশে ভূমিকম্প আঘাত হানে। উক্ত ঘটনারই ছবি এটি।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি গত মার্চের পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের সময়ের নয়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহীত উল্লেখ করেছে। কতিপয় গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখে নি। ফলে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো পাকিস্তান আফগানিস্তানের মার্চের ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত ২১ মার্চ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ৬.৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় ধ্বংসস্তূপের দুটি ছবি কতিপয় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিগুলো উক্ত ঘটনার নয়। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত একটি ছবি গত ১৯ মার্চ ইকুয়েডরের ভূমিকম্পের ঘটনার এবং আরেকটি ছবি ২০২২ সালের জুনে আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ঘটনার। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো পাকিস্তান আফগানিস্তানের গত মার্চের ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে নিউজিল্যান্ডে ভূমিকম্পের খবরে ভাঙা রাস্তার পুরোনো ছবি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ইকুয়েডরের মার্চের ভূমিকম্প এবং আফগানিস্তানে ২০২২ সালের ভূমিকম্পের ছবিকে পাকিস্তান-আফগানিস্তানে গত মার্চের ভূমিকম্পের ছবি দাবি করে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন দাবি প্রচার করা হচ্ছে।
দাবি ১: বিশ্বের সৎ সরকার প্রধানদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
উক্ত জরিপের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিপরিষদের অভিনন্দন জানানো সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখুন এখানে। একই জরিপের সূত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের লেখা পড়ুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে সৎ পাঁচজন সরকার প্রধানের তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় স্থানে আছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে একটি ভিত্তিহীন, ভুয়া ওয়েবসাইটের সূত্রে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম এই তথ্যটি প্রচার করা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিবছরই এই তথ্যটি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
অনুসন্ধান যেভাবে
দাবি ১: বিশ্বের সৎ সরকার প্রধানদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনলাইন নিউজ পোর্টাল Bangla Insider এ ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ‘শেখ হাসিনা বিশ্বের ৩য় সৎ সরকার প্রধান‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Bangla Insider
প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, ‘বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ ৫ টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেতৃত্বের সততার মান বিচার করে বিশ্বের ৫ জন সরকার রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছেন, যাদের দুর্নীতি স্পর্শ করেনি, বিদেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, উল্লেখ করার মতো কোনো সম্পদও নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সৎ এই পাঁচজন সরকার প্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিপলস অ্যান্ড পরিটিক্স ১৭৩ টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করেছে। এই গবেষণায় সংস্থাটি এরকম মাত্র ১৭ জন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছেন যাঁরা শতকরা ৫০ ভাগ দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
Screenshot: Bangla Insider
প্রতিবেদনটিতে আরও দাবি করা হয়, ‘১৭৩ জন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সৎ সরকার প্রধান হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। ৫ টি প্রশ্নে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৯০। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লং, ৮৮ পেয়ে সৎ সরকার প্রধানদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন। ৮৭ নম্বর পেয়ে এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮৫ নম্বর পেয়ে বিশ্বে চতুর্থ সৎ সরকার প্রধান বিবেচিত হয়েছেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলাবার্গ। আর ৮১ নম্বর পেয়ে এই তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।’
প্রতিবেদনটিতে প্রকাশিত এসব দাবির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই জরিপকারী সংস্থা ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নিয়ে অনুসন্ধান করে।
বাংলা ইনসাইডারের প্রতিবেদনে ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’কে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করা হলেও রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এই নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। উক্ত নামে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে কেবল কিছু বই ও সিরিজের নাম পাওয়া যায়।
Screenshot: Web Search
পরবর্তীতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যতীত ঐ তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা বাকী ৪ জনের নাম ধরে অধিকতর অনুসন্ধানে তাদের নামে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যেহেতু বাংলা ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, এই জরিপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন নিয়ে যেভাবে ইন্টারনেটে তথ্য পাওয়া যায়, সেভাবে শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে তাদের নামে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুরূপভাবে রিউমর স্ক্যানার টিম পাঁচজনের মধ্যে অন্তত দুইজন রাষ্ট্রপ্রধান যথাক্রমে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির জীবনী ও ক্যারিয়ার সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখে। সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের ক্যারিয়ার ও জীবনবৃত্তান্ত সংক্রান্ত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন:
এসব প্রতিবেদন থেকে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও অর্জন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানা গেলেও সেখানে দাবি সংক্রান্ত এমন কোনো অর্জনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দাবি ২: বিশ্বের কর্মঠ সরকার প্রধানের তালিকায় ৪র্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রতিবেদনটিতে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে বিশ্বের সৎ সরকার প্রধানদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় অবস্থানে থাকায় এবং একই প্রতিষ্ঠানের করা কর্মঠ সরকার প্রধানদের তালিকায় তিনি ৪র্থ অবস্থানে থাকায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ।
বিশ্বের কর্মঠ সরকার প্রধানের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চতুর্থ হওয়ার ব্যাপারে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে, ‘যেসব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান কঠোর পরিশ্রম করেন এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তার দেশে দৃশ্যমান উন্নতি করেছেন, তাদের কাজ পর্যালোচনা করে এই মূল্যায়ন করা হয়েছে।
Screenshot: Bangla Tribune
এই জরিপের ক্ষেত্রে ১০ টি মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স। এর ভিত্তিতে ১০০ নম্বরের মধ্যে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ৮৭ নম্বর পেয়ে তালিকার শীর্ষে, ৮৫ নম্বর পেয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি দ্বিতীয়, ৮৩ নম্বর পেয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তৃতীয় এবং ৮০ নম্বর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ হয়েছেন। এ তালিকায় ৭৮ নম্বর পেয়ে পঞ্চম অবস্থানে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।’
অর্থাৎ বিশ্বের কর্মঠ সরকার প্রধানের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪র্থ হওয়ার দাবিতে যে জরিপটির ফলাফলকে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সেটিও পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। যা ইতোমধ্যে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে ভিত্তিহীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের সৎ সরকার প্রধানদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন দাবি করা অনলাইন পোর্টাল বাংলা ইনসাইডারই ‘দুর্নীতিতে জিয়া পরিবার বিশ্বে ৩য়‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যা পরবর্তীতে অন্যান্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারের তালিকায় খালেদা জিয়ার পরিবার তৃতীয় হওয়ার দাবিটি মিথ্যা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি দুইটিকে তাদের মধ্যে তুলনা করে একসাথে প্রচার করতেও দেখা যায়।
Image collage: Rumor Scanner
মূলত, ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ‘শেখ হাসিনা বিশ্বের ৩য় সৎ সরকার প্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে বাংলা ইনসাইডার নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে সৎ পাঁচজন সরকার প্রধানের তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় স্থানে আছেন। বাংলা ইনসাইডার এক্ষেত্রে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করে ‘বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’কে। এছাড়া একই সূত্রে কর্মঠ সরকার প্রধানদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪র্থ অবস্থানে আছেন দাবিতেও একটি তথ্য প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামে কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। একটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি প্রতিষ্ঠান সূত্রেই বাংলা ইনসাইডার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যা পরবর্তীতে অন্যান্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার হয়ে আসছিলো।
সুতরাং, বিশ্বের সবচেয়ে সৎ পাঁচজন সরকার প্রধানের তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় স্থানে ও কর্মঠ সরকার প্রধানদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি,“ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন অধিক তাপমাত্রায় গাড়িতে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি তেল ভরতে নিষেধ করেছে কারণ এতে জ্বালানি ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ হতে পারে” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুক পোস্টগুলোতে বলা হচ্ছেঃ
“ সতর্কবার্তা
ইন্ডিয়ান অয়েল একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে আগামী দিনে তাপমাত্রা বাড়তে চলেছে, তাই সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত আপনার গাড়িতে জ্বালানি ভরবেন না। এটি জ্বালানী ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। আপনার গাড়ির অর্ধেক জ্বালানী ট্যাঙ্ক পূরণ করে বাতাসের জন্য জায়গা রাখুন। সর্বোচ্চ পেট্রোল ভরার কারণে চলতি সপ্তাহে ৫টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
দিনে একবার পেট্রোল ট্যাঙ্ক খুলুন এবং ভিতরে তৈরি গ্যাসটি বেরিয়ে আসতে দিন।
আপনার পরিবারের সদস্যদের এবং অন্য সবাইকে এই বার্তাটি পাঠান, যাতে লোকেরা এই দুর্ঘটনা এড়াতে পারে।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অধিক তাপমাত্রায় গাড়িতে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি ভরলে জ্বালানী ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে উল্লেখ করে কোনো বিবৃতি দেয়নি ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন বরং কোন রকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের নামে প্রচারিত হয়ে আসছে।
অনুসন্ধান
ইন্ডিয়ান ওয়েল করপোরেশন উক্ত বিষয়ে কোন বিবৃতি দিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের করা একটি টুইট বার্তা খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
২০১৯ সালের ০৩ জুন প্রতিষ্ঠানটি এক টুইট বার্তায় জানায়, “শীত-গ্রীষ্ম নির্বিশেষে প্রস্তুতকারকের দ্বারা নির্দিষ্ট সীমা (সর্বোচ্চ) পর্যন্ত যানবাহনে জ্বালানি পূরণ করা সম্পূর্ণ নিরাপদ।”
Screenshot from Indian Oil Corporation
তাছাড়া, একই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৯ এপ্রিল ২০২২ তারিখে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে করা একটি পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম টিম।
Screenshot from Indian Oil Corporation
এছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের নামে উক্ত দাবিগুলো নতুন করে প্রচারিত হলে গত ১২ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে তাদের ফেসবুক পেইজে আরো একটি পোস্ট করা হয়।
Screenshot from Indian Oil Corporation
অর্থাৎ, প্রায় তিন বছর আগের টুইট, ২০২২ এবং ২০২৩ সালের করা এই ফেসবুক পোস্ট প্রমাণ করে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের নাম দিয়ে এই দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
উক্ত দাবিগুলোর বিপরীতে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন প্রতিবারই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছে যে, “অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানীগুলো গাড়ির নিরাপত্তা অন্যান্য আনুসঙ্গিক প্রতিটি দিক বিবেচনা করেই গাড়ি ডিজাইন করেন। আর পেট্রোল/ডিজেল চালিত গাড়িতে জ্বালানির ট্যাঙ্ক তৈরির ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটি প্রযোজ্য। তাই, শীত-গ্রীষ্ম নির্বিশেষে সকল সময়েই গাড়ির প্রস্তুতকারকের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী জ্বালানি ট্যাঙ্কে পূর্ণ মাত্রায় তেল ভরা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
উল্লেখ্য যে, একই দাবি পূর্বেও পাকিস্তান স্টেট অয়েল (PSO) এর নামে প্রচারিত হলে ১৯ মে ২০১৮ তারিখে পাকিস্তান স্টেট অয়েল তাদের ফেসবুক পোস্টে জানায় যে তার পূর্ণ ক্ষমতায় জ্বালানি ট্যাঙ্ক ভর্তি করা গাড়ি বা এর যাত্রীদের জন্য কোনও হুমকির কারণ নয়।
পাকিস্তান স্টেট অয়েল আরো জানায়, যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পেট্রোল স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠে তা পাকিস্তানের গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রার থেকেও অনেক বেশি। তাই আপনার ফুয়েল ট্যাঙ্ককে তার পূর্ণ ক্ষমতায় পূরণ করলে তা গাড়ি কিংবা যাত্রী কারো জন্যই কোনো ধরনের হুমকির কারণ হয় না এবং গাড়ি চালানোর জন্য এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং উপকারী বলেও মনে করা হয়।
Screenshot from Pakistan State Oil
মূলত, অধিক তাপমাত্রায় গাড়িতে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানী পূর্ণ করলে জ্বালানি ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটার দাবিটি কোনো রকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বহুকাল ধরে ভারত এবং পাকিস্তানের দুইটি বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানীর নাম দিয়ে প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে উভয় দেশের কোম্পানীগুলোই তাদের নামে প্রচারিত উক্ত দাবিগুলোকে মিথ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
সুতরাং, অধিক তাপমাত্রায় গাড়িতে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি ট্যাঙ্ক পূর্ণ করলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন সতর্কবার্তা দিয়েছে দাবি করে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোয়েল মল্লিক দ্বিতীয়বার মা হতে যাচ্ছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়, বরং তার প্রথমবার মা হওয়ার পুরোনো ছবিকেই বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে কোয়েল মল্লিকের দ্বিতীয়বার মা হওয়ার ব্যাপারে মূলধারার গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় নি।
এছাড়াও, কোয়েলের ভেরিফাইড ইনস্টাগ্রাম একাউন্টের সাম্প্রতিক অ্যাক্টিভিটি পর্যালোচনা করেও দ্বিতীয়বার মা হওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায় নি।
এই তথ্যের সূত্র ধরে কোয়েল মল্লিকের ভেরিফাইড ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে ২০২০ সালের ০৩ মে প্রকাশিত একটি পোস্টে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Source: Rumor Scanner Collage
অর্থাৎ, টলিউড অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের বেবিবাম্পের ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, তার প্রথম সন্তান জন্মদানের সময়ের ছবি।
অনলাইন পোর্টালগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনগুলোতে কোয়েল মল্লিক দ্বিতীয়বার মা হতে যাচ্ছেন দাবি করা হলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রের বরাত দেওয়া হয় নি।
উপরন্তু, বিস্তারিত প্রতিবেদনগুলোতে শুধুমাত্র কোয়েল মল্লিকের অনুরাগী মহলের কল্পনার ব্যাপারে বলা হয়েছে। এমনকি প্রতিবেদনগুলোতে এ-ও বলা হয়েছে যে, কোয়েল মল্লিকের প্রথম সন্তান জন্মদানের সময়ের ছবিগুলোই পুনরায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে এই জল্পনার জন্ম দিয়েছে।
Source: Rumor Scanner Collage
মূলত, প্রথম সন্তান জন্মদানের পূর্বে ২০২০ সালে টলিউড অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক বেবিবাম্পের কিছু ফটোশ্যুট করেন। তার সেই পুরোনো ছবিকে ব্যবহার করে কোয়েল মল্লিক দ্বিতীয়বার যমজ সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন দাবিতে সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ০৫ মে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন কোয়েল মল্লিক।
সুতরাং, পুরোনো ছবি ব্যবহার করে কোয়েল মল্লিক দ্বিতীয়বার মা হতে যাচ্ছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবিটি গত ফেব্রুয়ারি মাসের নয় বরং ২০১৮ সালে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হামলার সময়কার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম Middle East Eye এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর “Gaza: Six killed as Israel and Hamas exchange fire” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Middle East Eye
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর ফিলিস্তিনের গাজা শহরের আল-আকসা টিভি অফিসে হওয়া ইসরাইলি বিমান হামলার সময়ের ছবি।
পাশাপাশি, জেরুজালেম ভিত্তিক গণমাধ্যম The Times of Israel এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর “Bombed out and broke, Hamas-asffiliated Al-Aqsa TV to go off air” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, ছবিটি ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজা শহরের হামাস পরিচালিত টেলিভিশন স্টেশন আল-আকসা টিভি ভবনের।
Screenshot: The Times of Israel
অর্থাৎ, ফেব্রুয়ারি মাসে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে সাড়ে চার বছরের পূর্বের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে ছবিটি মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যম Middle East Eye থেকে সংগৃহীত বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং একটিতে কিছুই লিখা হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যম Middle East Eye এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় এটি ২০১৮ সালের ছবি। কিন্তু, সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহার করায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি ছবি প্রচারের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সে সময়ের নয়। এটি ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হামলায় সময়কার ছবি। গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য না দেওয়ায় ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, ফিলিস্তিনের গাজায় সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাযইলের হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাড়ে চার বছর পূর্বের ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুইডিশ ফুটবলার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের উক্তি সম্বলিত একটি ডিজিটাল ব্যানার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে তিনি বিশ্বকাপে দুর্নীতি বিষয়ে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন।
যা দাবি করা হচ্ছে
ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ বলেছেন, “২০২২ সালে এসেও যদি বিশ্বকাপে দুর্নীতি হয়, তবে আগের আমলের জুলে রীমে ট্রফিতে কি হতো? তখন বোধহয়, ট্রফিটাই কিনতে পাওয়া যেতো!”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ বিশ্বকাপে দুর্নীতি বিষয়ে সম্প্রতি কোনো মন্তব্য করেননি বরং জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের ছবি ব্যবহার করে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে তার নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের সাম্প্রতিক অ্যাক্টিভিটি পর্যালোচনা করে তার এরূপ কোনো বক্তব্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
পাশাপাশি, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের ভেরিফাইড ইনস্টাগ্রাম ও টুইটার অ্যাকাউন্টের সাম্প্রতিক অ্যাক্টিভিটিও পর্যালোচনা করা হয়। সেখানেও উল্লিখিত বক্তব্যের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ডিজিটাল ব্যানারগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের নামসম্বলিত ডিজিটাল ব্যানারগুলো ক্রীড়াবিষয়ক বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম প্যাভিলিয়নের ব্যানারের আদলে তৈরি করা। কিন্তু প্যাভিলিয়নের ফেসবুক পেজে অনুসন্ধান চালিয়ে উক্ত ব্যানারটি খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
তবে, প্যাভিলিয়নের ব্যানারের সাথে আলোচ্য ব্যানারের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে ব্যবহৃত ফন্টের ভিন্নতা খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।
Screenshot Collage: Rumor Scanner
অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে, উক্ত ব্যানারটি প্যাভিলিয়নের তৈরি নয় বলে নিশ্চিত করেছেন প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের উক্তি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানারটি ভুয়া।
মূলত, সম্প্রতি ফেসবুকে সুইডিশ ফুটবলার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের উক্তি সম্বলিত একটি ডিজিটাল ব্যানার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে তিনি বিশ্বকাপে দুর্নীতি বিষয়ে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন। উক্ত দাবিতে ক্রীড়াবিষয়ক ওয়েবসাইট প্যাভিলিয়নের একটি ব্যানারও ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্যাভিলিয়ন এমন কোনো ব্যানার তৈরি করেনি। তাছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনও সূত্র থেকেই জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের আলোচ্য উক্তির সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের নামে প্রচারিত মিথ্যা উক্তির ব্যাপারে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সুতরাং, সুইডিশ ফুটবলার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ বিশ্বকাপে দুর্নীতি বিষয়ে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ন মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘২ মাসের বাচ্চা নিয়ে মায়ের শপিং। প্রচন্ড গরমে মায়ের কোলেই বাচ্চার মৃত্যু। শপিংয়ের মনোযোগে বুঝতেই পারে নি “মা”।‘ শীর্ষক দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানের নাম এবং ভিন্ন ভিন্ন নারী ও শিশুর ছবি উল্লেখ করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচণ্ড গরমে শপিংয়ে মায়ের কোলে দুই মাসের শিশুর মৃত্যুর দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানের নাম এবং ভিন্ন ভিন্ন নারী ও শিশুর ছবি ব্যবহার করে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমে ফেসবুকে প্রচারিত দাবিটির তথ্যসূত্র জানার চেষ্টা করে।
এক্ষেত্রে পোস্টগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই। অর্থাৎ ঘটনাটি কোন মার্কেটে, কখন ঘটেছে, ঘটনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচয় এমন কোনো তথ্য উক্ত পোস্টগুলো থেকে পাওয়া যায়নি। বিপরীতে একই দাবিতে রিউমর স্ক্যানার টিম অজ্ঞাত স্থান সহ দুইটি আলাদা আলাদা স্থানের নামের উল্লেখ পায়।
এর মধ্যে কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হয়, এই ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে, আবার কেউ কেউ বলছেন এই ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চান্দিনায়। আবার কিছু পোস্টে এই ঘটনাটির কোনো স্থান উল্লেখ না করে কেবল তথ্যটিই প্রচার করা হচ্ছে।
Image Collage: Rumor Scanner
দাবিটি নিয়ে আরও অধিকতর যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানেও কোনো গণমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে উক্ত দাবির বিপরীতে ফেসবুকে কুমিল্লার স্থানীয় সাংবাদিক ও বাসিন্দাদের পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে চান্দিনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের চান্দিনা প্রতিনিধি মো. আব্দুল বাতেন লিখেন, ‘ফেসবুকে একটি মিথ্যা সংবাদের শিরোনাম পোস্ট করেছে। চান্দিনায় এ বছর এধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি, তবে গেল বছর রমজান মাসে ঘটেছিল এই ঘটনাটি, চান্দিনায় ২ মাসের বাচ্চা নিয়ে শপিংয়ে আসা মায়ের কোলে শিশুর মৃত্যু! তীব্র গরমে শিশুটির মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক।
Screenshot: Abdul Baten Facebook Post
বাচ্চা নিয়ে শপিং। মায়ের কোলে বাচ্চা মরে আছে, নিজের কোলের শিশু মৃত্যুর অনেক পরে বুঝতে পেরেছে মা!! ) পোস্ট করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। এ নিয়ে নেটিজেনরা অনেক মন্তব্য করেছেন। যে সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা যা এই বছর ঘটেনি পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পুনঃ প্রকাশ করেছেন কিছু কপি পেস্ট সাংবাদিকরা…।’
মুনীর সাঈদ নামে কুমিল্লার চান্দিনার স্থানীয় এক বাসিন্দা লিখেন, ‘চান্দিনা নিয়ে মহাগুজব! আজকে সারাদিন দেখলাম, চান্দিনায় নাকি কোন মহিলা শপিং করা অবস্থায় তার কোলে থাকা ২ মাসের বাচ্চা মারা গেছে! সে মহিলা টেরই পায়নি।
ভাইরে ভাই, আমি নিজেই কুমিল্লা জেলার চান্দিনার ছেলে। সারাদেশের চমকপ্রদ সংবাদগুলো সবার আগে পোস্ট করতে চেষ্টা করি। অথচ আমার এলাকায় এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো, অথচ আমিই জানলাম না, বিষয়টা কেমন হয়ে গেল না? হতে পারে, এই খবরটা আমার দৃষ্টিতে আসে নি। আমার ছোটভাই এখনো চান্দিনাতেই কর্মরত। তার নজরেও এমন খবর পড়েনি! এমনকি স্থানীয় সাংবাদিক ও প্রশাসনের কাছেও এমন তথ্য নেই। তাহলে ফেইসবুকের লাইক কমেন্ট ব্যবসায়ীরা এই তথ্য কোথায় পেলো? তবে এক সাংবাদিক লিখেছেন, এমন ঘটনা গত বছর ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু এ বছর এ জাতীয় কোনো ঘটনাই ঘটেনি!…’
Screenshot: Munir Sayed Facebook Post
পাশাপাশি রিউমর স্ক্যানার টিমও তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এখন টিভির সিনিয়র রিপোর্টার ও কুমিল্লা ব্যুরো চীফ সাইফুল্লাহ খালিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি কুমিল্লা চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাতে জানান, ঘটনাটি মিথ্যা। এছাড়া চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাবুদ্দীন খাঁনের সঙ্গেও যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনিও চান্দিনায় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া কোনো কোনো পোস্টে চান্দিনার ঘটনা দাবিতে প্রচারিত উক্ত তথ্যটির তথ্যসূত্র হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টারকে (টাওয়ার হাসপাতাল) উদ্ধৃত করা হয়।
Screenshot: Chandinar Somoy 24
পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম থেকে কুমিল্লার টাওয়ার হাসপাতালেও যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানে গতকাল এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করে।
অপরদিকে অনুসন্ধানে যমুনা ফিউচার পার্কেও এমন কোনো ঘটনা ঘটার বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক বিশ্লেষণে স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, রাজধানী ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের মতো জনবহুল জায়গায় এমন কোনো ঘটনা ঘটলে সেটার সংবাদ গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিস্তারিত তথ্যসহ পাওয়া যেত।
উক্ত ঘটনার দাবিতে প্রচারিত ছবির সত্যতা যাচাই
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ঘটনার ছবি দাবিতে অন্তত চারটি ভিন্ন ভিন্ন ছবি প্রচার করা হচ্ছে৷
Image Collage: Rumor Scanner
রিউমর স্ক্যানার টিম ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করে৷
Image Comparison: Rumor Scanner
এর মধ্যে অন্তত দুইটি ছবির ক্ষেত্রে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবি দুইটি পুরানো ও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটির মূল উৎস দেখুন এখানে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, একইরকম একটি ঘটনা পূর্বেও ২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আকারে প্রচার হয়েছিল। তবে তখনকার পোস্টগুলোতে বাচ্চার বয়স দেখানো হয়েছিল ৬ মাস এবং ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছিল নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার। সেসময়কার এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
Image Collage: Rumor Scanner
তবে এসব ফেসবুক পোস্ট ব্যতীত রিউমর স্ক্যানারের প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে সেসময় কোনো গণমাধ্যম সূত্রে নারায়ণগঞ্জে এমন কোনো ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকদিন ধরে দেশ জুড়ে প্রচণ্ড দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ১৯৬৫ সালের পর গতকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া টানা ১৪ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়ে।
মূলত, পুরো দেশ জুড়ে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই মানুষ ঈদের কেনাকাটা সারছেন। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে যে, ‘২ মাসের বাচ্চা নিয়ে মায়ের শপিং। প্রচণ্ড গরমে মায়ের কোলেই বাচ্চার মৃত্যু। শপিংয়ের মনোযোগে বুঝতেই পারে নি “মা”।’ তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলোতে এই ঘটনার কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি ঘটনাটি বর্ণনার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন জায়গার নাম ও ভিন্ন ভিন্ন শিশুর ছবি প্রচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে উক্ত ঘটনাটি কুমিল্লা জেলার চান্দিনার ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হলেও চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় সাংবাদিক ও বাসিন্দা সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, চান্দিনায় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া ইতোপূর্বে ২০২০ সালেও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানাকে উদ্ধৃত করে প্রায় কাছাকাছি এমন তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ঐ ঘটনারও কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, প্রচণ্ড গরমে শপিংয়ে মায়ের কোলে দুই মাসের শিশুর মৃত্যু ও মায়ের বুঝতে না পারার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।