সম্প্রতি, “মারহাবা মারহাবা মারহাবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন! প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম শরীফ করতে হবে বাধ্যতামূলক” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম বাধ্যতামূলক শীর্ষক কোনো নির্দেশনা দেননি বরং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার তথা কবরে মিলাদ কিয়াম করা প্রসঙ্গে প্রয়াত ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যের বরাতে উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
৪ মিনিট ২ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির ৫৮ সেকেন্ডে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন,’আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। বঙ্গবন্ধুর আমি রাজনৈতিক শিষ্য। বঙ্গবন্ধুর সাথেই আমি রাজনীতি শুরু করেছি। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনার পর এক বছর আমিও পলাতক ছিলাম। যখন আমি দেশে গেলাম ৭৬ সালে, মাজারের ধারে কেউ যেতে পারত না। ওই মাজার আর্মিদের দ্বারা আটকা ছিলো, ৩২ নম্বর বাড়ি আটকা ছিলো। কোনো আলেম ওলামা ওখানে গিয়ে জিয়ারত করত না।’
পরবর্তীতে শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘যেহেতু আমি মাদ্রাসায় পড়া লোক, আমার কিছু ধর্মীয় জ্ঞান আছে। ওইখানে আমিই কিন্তু মিলাদ পড়ানো শুরু করছি এবং আলেমরা আসত না ভয় পেয়ে। দীর্ঘ কয়েক বছর পর্যন্ত আমি কিন্তু মোনাজাত পড়িয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসলেও ওইখানে যেদিন মোনাজাত করা হয়, প্রথম মোনাজাত কিন্তু আমি করেছিলাম। তখন কিন্তু কোনো হুজুররা সেখানে আসতেন না।’
এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে মিলাদ কিয়াম পালনের ব্যাপারে উক্ত ভিডিওটির পরবর্তী ২ মিনিট থেকে ২ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ যখনই কোনো অনুষ্ঠান মাজারে হবে, সাথে সাথে মসজিদে মিলাদ হবে এবং মিলাদটা পরিচালনার দায়িত্ব আমার।’
সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের এই অংশটুকুই পরবর্তীতে বিভ্রান্তিকরভাবে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়। যদিও উনার বক্তব্যের কোথাও প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম পালনের কথা উল্লেখ নেই। তিনি মূলত প্রধানমন্ত্রীর বরাতে বঙ্গবন্ধুর মাজারে মিলাদ-কিয়াম পালনের কথা বলেছেন।
এছাড়া দাবিটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ “মিলাদ-কিয়াম বন্ধের বিষয়ে যা জানালেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মিলাদ-কিয়াম বন্ধ করা হয়েছে এমন একটি দাবির প্রেক্ষিতে সচিবালয়ে তৎকালীন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত সমন্বয় কমিটির প্রতিনিধিদের বিশেষ বৈঠক বসে। উক্ত বৈঠকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মিলাদ-কিয়াম বন্ধ করা হয়েছে বলে যে প্রচারণা চলছে, তা গুজব ও অপপ্রচার বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
মূলত, ২০১৯ সালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রয়াত ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহর নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি মিলাদ-কিয়ামকে বিদয়াত আখ্যায়িত করে বাইতুল মোকাররমে তা বন্ধ করেছেন। পরবর্তীতে এ নিয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত সমন্বয় কমিটির প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এই বৈঠককে কেন্দ্র করে তার দেওয়া একটি বক্তব্যের বরাতে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম শরীফ বাধ্যতামূলক করেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার তথা কবরে মিলাদ কিয়াম করা প্রসঙ্গে শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটি নির্দেশনাকে দেশের প্রত্যেক প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম করা বাধ্যতামূলক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম বাধ্যতামূলক করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ও জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজার তারিখ নিয়ে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর সাঈদীর পক্ষ থেকে আপিল করা হলে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এই দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ডেইলি স্টার।
২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীকে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড দেন শীর্ষক দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ এবং ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া শীর্ষক গণমাধ্যমের দাবিগুলো সঠিক নয় বরং ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন। পরে সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে গত ১৪ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। তবে সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আপিল বিভাগ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
Screenshot: BBC Bangla
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার ২০১৩ সালের ০১ মার্চের (আর্কাইভ) প্রিন্ট সংস্করণের প্রথম পাতায় সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ার খবরটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Samakal
সে বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সেসময় প্রকাশিত আরো একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ডয়চে ভেলে বাংলা।
আরো অনুসন্ধান করে ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সমকাল পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে আগের দিন অর্থাৎ ১৭ সেপ্টেম্বর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির সাজা কমিয়ে আপিল বিভাগ কর্তৃক আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার খবর খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Samakal
১৭ সেপ্টেম্বর (২০১৪) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি (২০১৩) সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। ঐ সাজা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আপিল করেছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আর রাষ্ট্রপক্ষ বাকি ছয়টি অভিযোগে সাজা চেয়ে আপিল করে, যেগুলোতে দোষী সাব্যস্ত হলেও ট্রাইব্যুনাল সাজা দেয়নি।
পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধান করে ২০১৭ সালের ১৬ মে সমকাল পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে আগের দিন অর্থাৎ ১৫ মে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখার খবর বেরোয়।
১৫ মে (২০১৭) জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনথেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনে সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় পুনর্বহাল চাওয়া হয়। একই বছরের ১৭ জানুয়ারি আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সাঈদী। রিভিউ আবেদনে সাঈদীর খালাস চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে পৃথক দুই রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, বহাল রাখেন আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ।
গণমাধ্যমে “২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ” শীর্ষক দাবিটি প্রচারের বিষয়টি অনুসন্ধানে সে সময়ের অর্থাৎ ১৮ ফেব্রুয়ারির একাধিক পত্রিকার (ভোরের কাগজ, ইনকিলাব) প্রিন্ট সংস্করণে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ও জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর তার সাজার তারিখ নিয়ে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়েছে। কতিপয় গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এরপর সাঈদীর পক্ষ থেকে আপিল করা হলে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। অধিকাংশ গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কতিপয় গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ সাঈদীকে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন। তবে সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ এবং স্লোগানের ভিডিওকে প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। রুমিন ফারহানা নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এই ভিডিওটিতে বিক্ষুব্ধ কিছু মানুষকে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেলেও সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হামলার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।
তবে, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ‘Bd Tube Master’ শীর্ষক লোগের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ১৮ সেপ্টেম্বর Bd Tube Master নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও প্রধানমন্ত্রী বা অন্যকোনো ব্যক্তির ওপর হামলার কোনো দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Video Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে usanewsonline নামের একটি ফেসবুক পেজে একই ঘটনার একটি দীর্ঘ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেই ভিডিওটিতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।
এই ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রে আগমনকে কেন্দ্র করে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানের সময়ের ভিডিও।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলার অনলাইন সংস্করণে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ‘নিউইয়র্কে আ.লীগ-বিএনপির মারামারি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানোর সময় নিউইয়র্কে মুখোমুখি অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর এলাকায়। পরবর্তীতে জ্যাকসন হাইটসে দুইদলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্কে গমন উপলক্ষ্যে স্থানীয় সময় গত ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আনন্দ সমাবেশের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগ। একই স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয় যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপি। পরবর্তীতে দুইদলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ এবং স্লোগানের ভিডিওকে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪২ মিনিটে নিউইয়র্কে জেএফ কেনেডি বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, পূর্বেও জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হলে বিষয়টি মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার নামে গণমাধ্যমের আদলে তৈরিকৃত ‘এমপি, রুমিনের ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)’ শীর্ষক একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
কোনো গণমাধ্যম উল্লেখ ব্যতীত ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার ভিডিও ভাইরালের দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড এবং ভিডিও ভাইরালের দাবিটিও মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি’র একটি ফটোকার্ড সম্পাদনার মাধ্যমে আরেক গণমাধ্যম প্রথম আলো’র লোগো ব্যবহার করে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
ফটোকার্ডটি প্রথম আলো’র নয়
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে গত ১৬ জুলাই 71 TV নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘দারুন না ব্যাপারটা (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Claim post
এই ফটোকার্ডটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটিতে জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো’র লোগো রয়েছে। তবে ফটোকার্ডটিতে কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধানে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে এমন কোনো প্রতিবেদন বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া গণমাধ্যমটির প্রকাশিত একাধিক ফটোকার্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের সাথে গণমাধ্যমটি কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের ভিন্নতা রয়েছে।
Photocard analysis: Rumor Scanner
বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি’র ফটোকার্ড সম্পাদনা করে এটি তৈরি
ফটোকার্ডটির উৎস নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি’র ফেসবুক পেজে গত ২১ এপ্রিল ‘বুবলীর ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল’ শীর্ষক একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ফটোকার্ডের সাথে রুমিন ফারহানার ভিডিও ভাইরালের দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ডিজাইন ও শিরোনামের শব্দচয়নের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Photocard analysis: Rumor Scanner
পরবর্তীতে আলোচিত ফটোকার্ডটি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে একই গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে গত ২৬ এপ্রিল ‘ফের বুবলীর ২৫ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)’ শীর্ষক আরও একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ফটোকার্ডে উপস্থাপিত শিরোনামের গঠনের সাথে রুমিন ফারহানার ভিডিও ভাইরালের দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের শিরোনামের গঠনের মিল দেখা যায়।
Photocard analysis: Rumor Scanner
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির ভাষা বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেখানে রুমিন ফারহানার নামের পূর্বে এমপি সম্বোধন করা হয়েছে এবং পরে রুমিন ফারহানার নামের পূর্বে কমা ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি তার পুরো নামটিও ব্যবহার করা হয়নি।
অপরদিকে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাসহ বিএনপির সাত সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন।
স্বাভাবিকভাবে গণমাধ্যমে এমন ভাষাগত ও তথ্যগত ভুল দেখা যায় না। এসব বিশ্লেষণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই ফটোকার্ডটি কোনো গণমাধ্যমের তৈরি নয়।
মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমের আদলে ফটোকার্ড তৈরি করে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে ‘এমপি, রুমিনের ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)’ শীর্ষক দাবিতে জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক প্রথম আলো’র লোগো সম্বলিত একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গণমাধ্যমের ফটোকার্ড, লোগো ইত্যাদি ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের একটি ফ্যাক্টফাইল দেখুন
সুতরাং, প্রথম আলো’র লোগো ব্যবহারের মাধ্যমে রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে তার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চিত্রনায়িকা মৌসুমী বিএনপির হয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০১৯-২০২১ মেয়াদি নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর দেওয়া বক্তব্যের খণ্ডাংশকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই দাবিটিতে থাকা একুশে টেলিভিশন এর মাইক্রোফোন এর সূত্র ধরে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘একুশে টেলিভিশন’ এর ইউটিউব চ্যানেলে “জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীরা যদি মৌসুমীর মত হতো সবাই” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর বক্তব্য থেকে একটি খণ্ডাংশ নিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওটিতে চিত্রনায়িকা মৌসুমী বলেন,’আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমাদের নির্বাচন খুব কাছে চলে এসেছে। আমি আমার সম্মানিত সদস্যদের সভাপতি পদপ্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে আমি দোয়াপ্রার্থী এবং আপনাদের সকলের সমর্থন আশা করছি। আশা করি আপনারা সবাই আমাকে সমর্থন দিবেন ভালোবেসে। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকাটাই বড় কথা। নির্বাচনে দ্বন্দ্ব বা অন্যকিছু আমি ভাবছিনা এখন…।’
চিত্রনায়িকা মৌসুমীর কথার সূত্র ধরে আরো অনুসন্ধানে একুশে টেলিভিশন এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর “চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি পদে লড়বেন মৌসুমী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০১৯-২০২১ মেয়াদি কমিটির নির্বাচনে সভাপতি পদে অভিনেত্রী মৌসুমীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার তথ্য জানা যায়।
এছাড়া জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর “সভাপতি পদে দাঁড়াবেন অভিনয়শিল্পী মৌসুমী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও মৌসুমীর শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০১৯-২০২১ মেয়াদের নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর দেওয়া বক্তব্যের খণ্ডাংশ আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
তাছাড়া, অভিনেত্রী মৌসুমী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করবেন এমন কোনো তথ্য মৌসুমি কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়নি এবং উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে কোনো প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়নি।
মূলত, ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০১৯-২০২১ মেয়াদি নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে লড়েছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। সেসময় সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে একুশে টেলিভিশনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিওর খণ্ডাংশকে সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করবেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া, অনুসন্ধানে অভিনেত্রী মৌসুমি বিএনপির পক্ষে নির্বাচন করবেন এমন দাবিরও সত্যতা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০১৯-২০২১ মেয়াদি নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অভিনেতা সওদাগরের কাছে হেরে যান অভিনেত্রী মৌসুমী। এর আগের মেয়াদে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মৌসুমী।
সুতরাং, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করবেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চীনের সাংহাই টাওয়ার বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম ভবন নয় বরং দ্বিতীয় উচ্চতম ভবন মালয়েশিয়ার মারডেকা ১১৮। এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সাংহাই টাওয়ার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘BBC’ এর Science Focus’ এর ওয়েবসাইটে গত ০৮ মে “Top 10 skyscrapers: Tallest buildings in the world” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Sciencefocus.com
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চীনের সাংহাই শহরে অবস্থিত সাংহাই টাওয়ারটির উচ্চতা ৬৩২ মিটার। এই ভবনটি উচ্চতার দিক এই ভবনটির অবস্থান বিশ্বে ২য়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরে অবস্থিত ‘মারডেকা-১১৮’ ভবনটির উচ্চতা ৬৭৯ মিটার এবং বিশ্বে এর অবস্থান ৩য়।
মূলত, সম্প্রতি চীনের সাংহাই টাওয়ারকে বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম ভবন শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম ভবনগুলোর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সাংহাই টাওয়ার, যার উচ্চতা ৬৩২ মিটার। অন্যদিকে উচ্চতার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরে অবস্থিত ‘মারডেকা-১১৮’ ভবন, যার উচ্চতা ৬৭৯ মিটার।
প্রসঙ্গত, পূর্বে চীনে ১৯ দিনে ৫৭ তলা বিল্ডিং বানানোর দাবিতে ব্রাজিলের বিল্ডিংয়ের ছবি প্রচার করলে বিষয়টি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, উচ্চতার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীনের সাংহাই টাওয়াকে বিশ্বের দ্বিতীয় উঁচু ভবন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম দেশ রূপান্তরের ই-প্রিন্ট সংস্করণের আদলে ‘বিএনপির সমাবেশে ভাড়াটে কর্মী রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০’ শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘বিএনপির সমাবেশে ভাড়াটে কর্মীর রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০’ শীর্ষক দাবিতে দেশ রূপান্তরে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি বরং ‘সভা সমাবেশে ভাড়াটে কর্মী রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০’ শীর্ষক শিরোনামে দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম বিকৃত করে উক্ত সংবাদটি প্রচার করা হচ্ছে।
Comparison of headline: Rumor Scanner
মূলত, দেশের মূলধারার গণমাধ্যম দেশ রূপান্তরের ওয়েবসাইট ও প্রিন্ট সংস্করণে গত ৪ আগস্ট ‘সভা সমাবেশে ভাড়াটে কর্মী রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনের শিরোনামটিকে বিকৃত করে ‘বিএনপির সমাবেশে ভাড়াটে কর্মী রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০” শীর্ষক শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন ভূমি আইন পাস ও ১০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং ভূমি আইন নামে কোনো আইন গত ১০ জানুয়ারি বা তার আগে সংসদে প্রণয়ন করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছিল ভূমি মন্ত্রণালয়।
মূলত, ভূমি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল সেবা প্রবর্তনের পাশাপাশি আইন ও বিধি-বিধান সংশোধন ও নতুন আইনের খসড়া তৈরি করছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় আইন কমিশন ‘ভূমি আইন, ২০২২ (ধারনা পত্র, খসড়া আইন ও সুপারিশ)’ নামক একটি খসড়া সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। যেটি এখনো প্রণয়ন না হলেও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ভূমি আইন পাস হয়েছে, ১০ই জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। তবে গত ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে গুজব হিসেবে উল্লেখ করে সেসময় তাদের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেইজে জানিয়েছিল, ‘ভূমি আইন’ নামে কোনো আইন জাতীয় সংসদে এখন পর্যন্ত প্রণয়ন করা হয়নি।’
প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩’ আইনে পরিণত হয়েছে। এর আগে, গত ১২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস হয়। এটি গত ১৮ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল (১৯ সেপ্টেম্বর) ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি একই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে সেসময় এটিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
দীর্ঘ সময় ধরে “সেফাত উল্লাহ সরাসরি লাইভে এসে ভিপি নুরকে বকাবাজি করলেন” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
ভিডিওটিতে সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানীসহ আরও দুইজন ব্যক্তিকে দেখা যায়। যেখানে নুরুল হক নুর কথা বলার মাঝে সেফুদাকে গালাগালি করতে শোনা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে সেফাত উল্লাহর গালাগালি করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে Face The People- ফেস দ্যা পিপল নামের একটি ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিওতে সেফাত উল্লাহর ভিন্ন একটি ভিডিও প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
১ ঘন্টা ১০ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, লাইভ ভিডিওটিতে সেফাত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন না। তবে এই ভিডিওটিতে নুরুল হক নুরসহ উপস্থিত অন্যান্যদেরদের পোশাকের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে তাদের পরিহিত পোশাকের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তীতে সেফাত উল্লাহর গালাগালি করার মূল ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে Sefat Ullah নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর “মুনমুনের সাথে লাইভে সেফুদা, রেগে গেলো সেফুদা (আর্কাউভ)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৩ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে একজনকে সেফাত উল্লাহ গালাগালি করছেন। এছাড়া প্রচারিত ভিডিওটিতে যে গালাগালি শুনতে পাওয়া যায় এবং যে পোশাক ও ব্যাকগ্রাউন্ডে সেফাত উল্লাহকে দেখা যায়, তার সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, নুরুল হক নুরকে গালাগালি করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে সেফাত উল্লাহর অংশটি ভিন্ন আরেকটি ভিডিও এবং সেখানে তিনি নুরুল হক নুরকে গালাগালি করেননি।
মূলত, ২০২০ সালে সাইফুর রহমান সাগরের সঞ্চালনায় Face The People- ফেস দ্যা পিপল নামের একটি পেজের ফেসবুক লাইভে অংশ নেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানী, সাংবাদিক ইলিয়াস, সাংবাদিক মাসুদ কামাল। সেই লাইভ ভিডিওতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি সেফাত উল্লাহর ভিন্ন এক ব্যক্তিকে গালাগালি করার আরেকটি ভিডিও সম্পাদনা করে বসিয়ে সেফাত উল্লাহ নুরকে গালাগালি করছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও নুরুল হক নুরকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গুজব ছড়ানো হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
বাংলাদেশের পাঠ্যবইগুলোতে ভুলের প্রবণতার বিষয়টি বেশ কয়েক বছর ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে একটি তথ্যগত ভুল দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
যে ভুল নিয়ে আলোচনা
মাধ্যমিকের নবম-দশম শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান’ পাঠ্যবইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ে (১১২ পৃষ্ঠা) “বিবর্তন বা অভিব্যক্তির উপর বিভিন্ন মতবাদ” নামক প্যারায় বলা হয়েছে, “চার্লস ডারউইনকে জৈব বিবর্তনের জনক বলা হলেও তার মতবাদের ওপর এখনো কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে। তার মতবাদের যে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তার উত্তরের খোঁজে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীকে নিয়ে একবার একটা জরিপ নেওয়া হয়েছিল, জরিপের বিষয়বস্তু ছিল, পৃথিবীর নানা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ কোনটি। বিজ্ঞানীরা রায় দিয়ে বলেছিলেন, বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হচ্ছে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব।”
Screenshot source: Class 9-10 Science Text Book
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীকে নিয়ে হওয়া জরিপে বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হিসেবে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব নির্বাচিত হওয়া শীর্ষক পাঠ্যবইয়ের দাবিটি সঠিক নয় বরং ২০১২ সালে মার্কিন ব্লগ সাইট এজ কর্তৃক বিভিন্ন ক্ষেত্র বা পেশার ১৯২ জনের কাছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় গভীর, মার্জিত বা চমৎকার ব্যাখ্যা কোনটি হবে সে বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে একেকজন একেক বিষয়ে মতামত জানান, যার মধ্যে ছয় জন ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য কিছু মতামতেও ডারউইন প্রসঙ্গ এসেছে। এই ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে পাঠ্যবইয়ে। প্রকৃতপক্ষে, এটি কোনো জরিপ ছিল না এবং তার প্রেক্ষিতে কোনো তালিকা বা ফলাফলও প্রকাশ করা হয়নি।
আলোচিত এই বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের (২০২৩) ফেব্রুয়ারি থেকে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রাথমিক পর্যায়ের অনুসন্ধানে ইউটিউবের একটি চ্যানেলের ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে বিবর্তনবাদ বিষয়ে কথা সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি বক্তব্য খুঁজে পাই আমরা। জাফর ইকবাল তার বক্তব্যে (আর্কাইভ) বলেন (৫০ মিনিট সময় থেকে), “..একবার পৃথিবীর সমস্ত সায়েন্টিস্টরা মিলে একটা জরিপ করলেন, এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে যত সায়েন্টিফিক থিউরী আছে, তার ভিতরে সবচেয়ে ভালো সায়েন্টিফিক থিউরী কোনটি। আমি মনে মনে আশা করেছিলাম, যে পৃথিবীর সায়েন্টিস্টরা বলবেন, আইনস্টাইনের জেনারেল থিউরী অফ রিলেটিভিটি। কিন্তু দেখা গেল, পৃথিবীর সমস্ত সায়েন্টিস্ট মিলে ঠিক করেছেন, যে ডারউইনর বিবর্তনের যে থিউরী সেটা পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সায়েন্টিফিক থিউরী।”
এখানে, উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটির সংযোজন, পরিবর্ধন, পুনর্লিখন ও সম্পাদনা দলে আছেন। এই বইটি সর্বশেষ ২০১৩ সালে সম্পাদনা করা হয়েছিল। বিবর্তন বিষয়ক জরিপের বিষয়ে বইটির দাবি এবং জাফর ইকবালের ২০১৯ সালের বক্তব্যের সাথেও মিল পাওয়া যাচ্ছে।
পরবর্তীতে ২০১৩ সাল পূর্ব সময়ে এমন কোনো জরিপ হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি “বিজ্ঞানের ‘সবচেয়ে সুন্দর যে তত্ত্ব’” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব ‘সবচেয়ে সুন্দর তত্ত্ব’ হিসেবে বিজ্ঞানীদের একটি তালিকায় স্থান পেয়েছে। আর এর পরই রয়েছে আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ। তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদদের মতামতের ভিত্তিতে। বিজ্ঞানীদের তৈরি এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব—‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে দৈবক্রমে’। বিজ্ঞানীদের অনলাইনভিত্তিক সংস্থা এজ ডট ও আর জি-এর সভাপতি জন ব্রকম্যান প্রতিবছরের জানুয়ারি মাসে বিজ্ঞানী, কম্পিউটার-শিল্প ও অনলাইন কমিউনিটির অভিজাত ব্যক্তি এবং বিজ্ঞ পণ্ডিত ও বিদ্বান ব্যক্তিদের কাছে একটি প্রশ্নের উত্তর চেয়ে থাকেন। আগের বছরগুলোতে যেসব প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ‘ইন্টারনেট কীভাবে আপনার চিন্তার ধরনই বদলে দিচ্ছে?’ ও ‘বিগত দুই হাজার বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার কোনটি?’ তবে চলতি বছর তিনি একটি খোলা প্রশ্ন করেন। সেটি ছিল: ‘আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় গভীর, মার্জিত বা চমৎকার ব্যাখ্যা কোনটি?’।
প্রথম আলো লিখেছে, এই প্রশ্নের ওপর প্রায় ২০০ জন বিদ্বান ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে যে তত্ত্বগুলো নির্বাচন করা হয়েছে, তা গত রোববার রাতে প্রকাশ করা হয়। মতামত প্রদানকারীদের মধ্যে রয়েছেন: জোতির্বিদ রয়্যাল মার্টিন, পদার্থবিদ ফ্রিম্যান ডাইসন ও বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডাকিনসের মতো ব্যক্তিরাও। ওই ২০০ জনের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিই বিজ্ঞানের সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি তত্ত্বের পক্ষে মত দিয়েছেন। তত্ত্ব দুটি হচ্ছে: ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ।
Screenshot source: Prothom Alo
প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের নাম।
এই সংবাদটির বিষয়েই বিজ্ঞান পাঠ্য বই বা জাফর ইকবালের বক্তব্যে এসেছে কিনা এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে যোগাযোগ করেছিল।
তিনি আমাদের জানান, এটিই সেই জরিপের সংবাদ।
কিন্তু বিজ্ঞান বইয়ে বিবর্তন বিষয়ে হওয়া কথিত এই জরিপের ফলাফলে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকে ‘বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। অথচ, প্রথম আলোর সংবাদে এটিকে বলা হচ্ছে, ‘সবচেয়ে সুন্দর তত্ত্ব’।
‘সবচেয়ে সুন্দর’ এবং ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ এই দুইয়ে স্পষ্ট পার্থক্য প্রতীয়মান হলেও ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল রিউমর স্ক্যানারের কাছে দাবি করেছেন, “সায়েন্স ফিল্ডে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। আপনি যেভাবে চান তা ব্যাখ্যা করতে পারেন।”
প্রথম আলোর সূত্র ধরে পরবর্তীতে রয়টার্সের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot source: Reuters
১৬ জানুয়ারি (২০১২) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনামেও ‘বিজ্ঞানের সবচেয়ে সুন্দর তত্ত্ব’ শীর্ষক বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। রয়টার্সের পুরো প্রতিবেদনটি আমরা পড়ে দেখেছি। প্রতিবেদনের কোথাও তালিকার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। স্বাভাবিকভাবেই তালিকার শীর্ষস্থান নিয়েও কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। রয়টার্সের প্রতিবেদনে উক্ত প্রায় ২০০ জনের মতামতকে ‘প্রতিক্রিয়া’ বা ‘রেসপন্স’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখানে কোনো জরিপ হয়নি। বিজ্ঞানীসহ একাধিক ক্ষেত্র বা পেশার মানুষের মতামত জানতে চাওয়ার ক্ষেত্রে তারা তাদের মতামত দিয়েছেন। রয়টার্স এমনই কিছু মতামত রেখেছে তাদের প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে এই মতামত প্রকাশের সাইট Edge এ ২০১২ সালে প্রকাশিত আলোচিত বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট পাতা খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: Edge
এই পাতা থেকে জানা যাচ্ছে, সে বছর (২০১২) ১৯৪ জনের কাছে একটি বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। বিষয়টি হচ্ছে, “WHAT IS YOUR FAVORITE DEEP, ELEGANT, OR BEAUTIFUL EXPLANATION?” বাংলায় অনুবাদে যা দাঁড়ায়, “‘আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় গভীর, মার্জিত বা চমৎকার ব্যাখ্যা কোনটি?”
এই প্রশ্নটি নির্বাচন করেছেন স্টিভেন পিঙ্কার নামে এক ব্যক্তি। ১৯৪ জনের কাছে মতামত চাওয়া হলেও মতামত দিয়েছেন ১৯২ জন। এই ১৯২ জনের নাম উল্লেখ আছে একই পাতায়। আলাদা একটি পাতায় এদের নাম এবং পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিম নামের তালিকাটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এই তালিকার সকলে বিজ্ঞানী নয়। ১৯২ জনের মধ্যে আমরা ৮৪ জন বিজ্ঞানী পেয়েছি। (বি:দ্র: তালিকায় যেসব ব্যক্তির একাধিক পরিচয় রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী পরিচয় থাকলে সেটি ধরেই হিসেব করা হয়েছে) এদের মধ্যে অবশ্য সকলে বিবর্তন বিষয়ে অভিজ্ঞও নয়। কারণ, এদের মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, পদার্থ বিজ্ঞানী, স্নায়ুবিজ্ঞানীও রয়েছেন। বিজ্ঞানী ছাড়াও তালিকায় ৫২ জন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের নাম পাওয়া গেছে। এছাড়া, একই তালিকায় নাট্যকার/লেখক, অর্থনীতিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবিদ, উদ্যোক্তা, আর্টিস্ট, টিভি ডকুমেন্টারি প্রডিউসার, স্থপতি, সম্পাদক, দার্শনিক, নৃতত্ত্ববিদ, সাংবাদিক এবং প্রত্নতত্ত্ববিদের উপস্থিতি রয়েছে।
১৯২ জনের মতামত এজ এর সাইটে উল্লেখ রয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম সকলের মতামতই পড়ে দেখেছে। যেহেতু এটি কোনো জরিপ ছিল না, তাই ১৯২ জনের সকলে তাদের নিজস্ব মতামত দিয়েছেন এজ’কে। এই মতামত জানাতে গিয়ে কেউ কবিতা লিখেছেন, কেউ শুধু এক বাক্যেই বলে দিয়েছেন মত, কেউ-বা গণিতের বিষয়ে মতামতে গাণিতিক বিশ্লেষণও দেখিয়েছেন। তবে অধিকাংশই তাদের মতামত দিয়েছেন অনুচ্ছেদ আকারে।
রিউমর স্ক্যানার টিম মতামতগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৯২ জনের মধ্যে মাত্র ছয়জন সরাসরি ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন। এরাসহ অন্যান্য কিছু মতামতেও ডারউইন প্রসঙ্গ এসেছে।
ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব ছাড়া সবচেয়ে বেশি মতামত এসেছে ওয়াটসন ও ক্রিকের ডিএনএ মডেল (৫), কোয়ান্টামতত্ত্ব (৩), আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (২) বিষয়ে। এর বাইরে প্রায় সকলেই বিভিন্ন বিষয়েই মতামত জানিয়েছেন। সবাই যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বিষয়েই মতামত দিয়েছেন এমনও নয়। কেউ সামাজিক সমস্যা নিয়ে লিখেছেন, কারো ভাবনা এসেছে অর্থনৈতিক নানান বিষয়ে, কেউ কেউ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে লিখেছেন।
অর্থাৎ, এজ এর ২০১২ সালের একটি প্রশ্নের উত্তরে ১৯২ জন বিভিন্ন পেশার ব্যক্তি তাদের নিজস্ব মতামত জানিয়েছেন, যেখানে অন্যান্য বিষয় বা তত্ত্বের পাশাপাশি ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের বিষয়েও মতামত এসেছিল। তবে এটি কোনো অর্থেই জরিপ ছিল না।
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে তালিকার ১৯২ জন ব্যক্তির মধ্যে একাধিক ব্যক্তির সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করেছে, কথা বলার চেষ্টা করেছে এজ এর সম্পাদকের সাথেও। তবে বিষয়টি প্রায় সাড়ে ১১ বছরের পুরোনো হওয়ায় অনেকেই এ বিষয়টি পুরোপুরি মনে করতে পারছেন না বলে মত দিয়েছেন। তাছাড়া, তালিকায় থাকা একাধিক ব্যক্তি মারাও গিয়েছেন।
তালিকায় থাকা মার্কিন মনোবিদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) এর শিক্ষক শেরি তার্কলের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “এটি কোনো বৈজ্ঞানিক জরিপ ছিল না। সম্পাদক তার কাছের মানুষদের কাছে মতামত জানতে চেয়েছিলেন।”
মূলত, নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান পাঠ্য বইয়ে দাবি করা হয়েছে, পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীকে নিয়ে হওয়া জরিপে বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হিসেবে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। ২০১২ সালে মার্কিন ব্লগ সাইট এজ এর সম্পাদক বিভিন্ন ক্ষেত্র বা পেশায় থাকা তার কাছের ১৯২ জন ব্যক্তির কাছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় গভীর, মার্জিত বা চমৎকার ব্যাখ্যা কোনটি হবে সে বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে একেকজন একেক বিষয়ে মতামত জানান, যার মধ্যে ছয় জন সরাসরি ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়া উক্ত ছয় জন ব্যতিত অন্যান্য কিছু ব্যক্তির মতামতেও ডারউইন প্রসঙ্গ এসেছে। উক্ত ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে পাঠ্যবইয়ে। প্রকৃতপক্ষে, এটি কোনো জরিপ ছিল না এবং তার প্রেক্ষিতে কোনো তালিকা বা ফলাফলও প্রকাশ করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলের বিষয়ে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০১২ সালে ১৯২ জন ব্যক্তির বিভিন্ন বিষয়ে জানানো মতামতকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীর জরিপে বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হিসেবে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব নির্বাচিত হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান পাঠ্য বইয়ে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।