সম্প্রতি, “শ্বাস ছেড়ে একটু শান্তির নিঃশ্বাস, মাধবদী নরসিংদী” শীর্ষক ক্যাপশনে গাছপালা বেষ্টিত একটি খালে মানুষের গোসলের দৃশ্যকে বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সবুজ গাছপালা বেষ্টিত খালে মানুষের গোসল করার ছবিটি বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার কোনো স্থানের নয় বরং এটি যা ভারতের কেরালায় অবস্থিত ওনজাপাড়া খালে(কৃত্রিম) মানুষের গোসলের দৃশ্য।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত জানুয়ারি গত ১৩ এপ্রিল ২০১৮ এ ভারতীয় গণমাধ্যম ‘Times of India’ এ “Curb likely on access to Oonjapara aqueduct” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওনজাপাড়া খালের ছবির সাথে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Times of India
গুগলে ‘Oonjapara Canal’ শীর্ষক কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে জানা যায় এটি ভারতের কেরালাতে অবস্থিত।
Screenshot from Google
এছাড়া অনুসন্ধানের মাধ্যমে নরসিংদীতে অবস্থিত এরকম কোনো খালের তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি গাছপালা বেষ্টিত একটি কৃত্রিম খালে মানুষের গোসলের দৃশ্যকে বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার ছবি উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায় উক্ত দাবিতে প্রচারিত খালটি বাংলাদেশের নরসিংদীতে নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি ভারতের কেরালায় অবস্থিত ওনজাপাড়া খালে(কৃত্রিম) মানুষের গোসলের ছবি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের কেরালার ওনজাপাড়ার খালটি বন্ধ আছে।
সুতরাং, ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি কৃত্রিম খালের ছবিকে বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায় অবস্থিত খালের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ ও বেতন-ভাতা সংক্রান্ত গেজেট’ শীর্ষক শিরোনামে দুইটি বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ ও বেতন-ভাতা সংক্রান্ত গেজেট নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ ও বেতন-ভাতা সংক্রান্ত গেজেটের দাবিতে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিগুলো ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে এই ভুয়া বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন অধিশাখার নামে দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগ, বেতন-ভাতাসংক্রান্ত প্রকাশিত ভুয়া গেজেট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রকাশিত গেজেটটি ভুয়া এবং এতে মাঠপর্যায়ে সর্বমহলে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ।’
Screenshot: Daily Prothom Alo
প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইন অধিশাখা নামে কোনো অধিশাখা নেই। এছাড়া গেজেটে যে কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সে নামে এ মন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তা কর্মরত নেই।
পাশাপাশি আলোচিত গেজেটটিতে উল্লেখিত মৃণাল কান্দি দে নামে কোনো উপসচিবও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া গেজেটটি বিজিপ্রেস থেকে গত ৯ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছে দাবি করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটেও এমন কোনো গেজেট এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে দাবিটির বিষয়ে অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি গুজব বলে নিশ্চিত করেন।
মূলত, গত ৫ ও ৯ এপ্রিল যথাক্রমে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ ও বেতন-ভাতা সংক্রান্ত গেজেট’ শীর্ষক শিরোনামে দুইটি বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ ও বেতন-ভাতা সংক্রান্ত গেজেট’ শীর্ষক বিজ্ঞপ্তি দুইটি সঠিক নয়। উক্ত বিজ্ঞপ্তি দুইটি ভুয়া ও ভিত্তিহীন বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেমন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
সুতরাং, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ ও বেতন-ভাতা সংক্রান্ত গেজেট শীর্ষক ফেসবুকে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তি দুইটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিনেতা ডিপজলের পক্ষ থেকে হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিমকে বাস উপহার দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সেখানে কোথাও ডিপজল কর্তৃক হাফেজ তাকরিমকে বাস উপহার দেওয়ার বিষয়ে কোন তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
গত ১০ এপ্রিল আমরা ও মানুষ নামের একটি ফেসবুক পেজে ‘এইমাত্র বিশ্বজয়ী হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিমকে কোটি টাকার বাস উপহার দিলেন ডিপজল’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিও(আর্কাইভ) প্রকাশ করা হয়।
Screenshot: Facebook
১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওতে বলা হয়, কপাল খুললো তাকরিমের। বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিমকে কোটি টাকার একটি বাস উপহার দিলেন ডিপজল। আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় আবারও বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম। এবার দুবাই আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রথম হয়েছেন তিনি। তাকরিমের এই সাফল্যে উচ্ছাসিত হয়েছে পুরো বাংলাদেশ।
এরপর ভিডিও’র ১ মিনিট ০৫ সেকেন্ড অংশে বলা হয়, তাকরিমের এমন বিশ্বজয়ে খুশি হয়ে তার নামে একটি বাস উপহার দিলেন ডিপজল। তিনি তাকরিমকে তার পক্ষ থেকে কোটি টাকার বাসটি উপহার দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার ডিপজেল নামের একটি বাস তিনি তাকরিমের নামে প্রচার করবেন, যা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রোডে নিয়মিত চলবে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত দাবিটি প্রচারিত ভিডিওটি অভিনেতা ডিপজলের ছবির সাথে ডিপজল নামের একটি বাসের ছবি এবং তাকরিমের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ও বিভিন্ন জায়গায় সংবর্ধনার কয়েকটি ছবি যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি গণমাধ্যমে কিংবা নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো সূত্রে এখন পর্যন্ত হাফেজ তাকরিমকে অভিনেতা ডিপজলের পক্ষ থেকে বাস উপহার দেওয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে অভিনেতা ডিপজলের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৩ এপ্রিল হাফেজ তাকরিমকে নিয়ে একটি পোস্ট(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি হাফেজ তাকরিমের একটি ছবি শেয়ার করে লেখেন ‘আল্লাহ তুমাকে আরও বড় করুক। দোয়া থাকবে।’
Screenshot: Facebook
এছাড়াও প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম কালের কণ্ঠের অনলাইন সংস্করণে ‘আল্লাহ তোমাকে আরো বড় করুক’ তাকরিমের প্রতি ডিপজলের দোয়া” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Kalerkantho Online
প্রতিবেদনে বলা হয়,
আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় আবারো বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম। এবার ২৬তম দুবাই আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রথম হলেন তাকরিম। এবার হাফেজ তাকরিমকে নিয়ে কথা বললেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় খলঅভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ফেসবুকে তাকরিমকে নয়ে একটি পোস্ট দেন ডিপজল। ওই পস্টে তাকরিমের ছবি ব্যবহার করে ডিপজল বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে আরও বড় করুক। দোয়া থাকবে।’
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ১৮ এপ্রিল Islamic Culture BD নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সত্যি কি ডিপজল বাস উপহার দিয়েছেন? জেনে নিন আসল সত্য‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তাকরিমের উপস্থিততে তার শিক্ষক মুফতি মুরতজা হাসান ফয়েজী মাসুম উক্ত পুরস্কারটি পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন।
Screenshot: YouTube
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওগুলোর বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এ বিষয়ে তাকরিমের শিক্ষকের বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করলে এটা স্পষ্ট যে, অভিনেতা ডিপজলের পক্ষ থেকে হাফেজ তাকরিমকে বাস উপহার দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অর্জন করেন বাংলাদেশের হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম। হাফেজ তাকরিমের এ অর্জনে অভিনেতা ডিপজল খুশি হয়ে তাকরিমকে কোটি টাকার বাস উপহার দেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব এবং টিকটকে একাধিক ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারে অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইলে ডিপজলের এবং ডিপজল পরিবহনের একটি বাসের ছবি ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিডিওগুলো প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অভিনেতা ডিপজল তাকরিমকে কোনো বাস উপহার দেননি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে অভিনেতা শাকিব খান তাকরিমকে এক কোটি টাকা উপহার দিয়েছেন দাবিতে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, অভিনেতা ডিপজলের পক্ষ থেকে হাফেজ তাকরিমকে কোটি টাকার বাস উপহার দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘৭ দিনের মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিলো সেনাপ্রধান, বিপাকে আ.লীগ’ শীর্ষক শিরোনাম এবং সক্ষমতায় যাচ্ছে সেনাবাহিনী, হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৭ দিনের মধ্যে পদত্যাগের কোনো আল্টিমেটাম দেননি এবং বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিও তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
গত এপ্রিল Sabai Sikhi নামের ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ০৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
Screenshot: YouTube
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান উর্ধতন কর্মকর্তাকে দেখা যায়।
১ মিনিট ০৮ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওটিতে বলা হয়, এবার শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলো সেনাপ্রধান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নেওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলো সেনাপ্রধান। যাতে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন অংশগ্রহণ করে, ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারে। এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সকল সমঝোতা করবে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের যেকোনো দায়িত্ব পেলে তারা সঠিক ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল সহযোগিতা করবে। এদিকে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ায় বিপাকে পড়লো আওয়ামী লীগ সরকার।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি। ভিডিওটির ৩৭ সেকেন্ডের সময় প্রদর্শিত ছবিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩ সদস্যকে রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত ছবিটি বিবিসি নিউজের অনলাইন সংস্করণে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘নির্বাচনী কাজে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।
Image Collage: Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের অন্যান্য সময়ের বিভিন্ন কার্যক্রমের ছবি যুক্ত করা হয়েছে যার কোনোটিই সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি এবং ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো সূত্রে প্রধানমন্ত্রীকে সেনাপ্রধানের পদত্যাগের নির্দেশ সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি সেনাবাহিনী ক্ষমতায় যাচ্ছে এবং সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাম জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে এক ব্যক্তি সূর্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দাবিতে একটি পোস্ট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
এসব পোস্টের কোনো কোনোটিতে দাবি করা হচ্ছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের। শিবপাল সিং নামের এক ব্যক্তি প্রচণ্ড গরমে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়ার কারণে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৯৭৩ সালের ১৫৪ ধারায় সূর্যের বিরুদ্ধে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের মামলা দায়ের করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সূর্যের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০১৬ সালে ভারতের মধ্য প্রদেশের এক ব্যক্তি অতিরিক্ত তাপমাত্রায় সূর্যদেবতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার জন্য আবেদন পত্র জমা দিয়েছিলেন। উক্ত ঘটনাটিকেই সময় উল্লেখ না করে সম্প্রতি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
গরমে বিরক্ত হয়ে ভারতের মধ্য প্রদেশের একজন ব্যাক্তি কর্তৃক সূর্যের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানে, প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Hindustan Times এ ২০১৬ সালের ২৪ মে “MP: Man submits application against Sun” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot Source: Hindustan Times
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় বিরক্ত হয়ে শাজাপুর জেলার এক ব্যক্তি স্থানীয় পুলিশের কাছে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন যাতে সূর্যদেবতার বিরুদ্ধে এফআইআর করার অনুরোধ করা হয়।
অভিযোগকারী শিবপাল সিং যাদব যিনি একজন আইনজীবী, তিনি পুলিশের কাছে ফৌজদারি দন্ডবিধির ১৫৪ ধারার অধীনে ঈশ্বরের (সূর্য দেবতা) বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করার অনুরোধ করেছেন।
প্রায় সাত বছর পূর্বে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, শাজাপুর জেলার পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্য করে শিবপাল সিং তার আবেদনে বলেছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের অসহ্য গরমের কারণে মানুষ, পশু-পাখি এবং গাছপালা সব প্রাণীই মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক রাজেন্দ্র ভার্মার বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, অভিযোগকারী ২০১৬ সালের ২০ মে এ বিষয়ে আবেদন করেন।
অর্থাৎ, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সূর্যের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘটনাটি ভারতের এবং এটি প্রায় সাত বছরের পুরোনো ঘটনা।
পত্রিকার ভাইরাল ক্লিপটির উৎসের খোঁজে
ইন্টারনেটে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সূর্যের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘটনার বিষয়ে সম্প্রতি একটি পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণ থেকে ক্যামেরায় তোলা একটি ক্লিপ বেশ ভাইরাল হয়েছে।
Screenshot source: Facebook
ক্লিপটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রতিবেদনের শুরুতে ‘মানবকণ্ঠ ডেস্ক’ লেখা রয়েছে। মানবকণ্ঠ বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা। প্রতিবেদনে কোনো তারিখ উল্লেখ না থাকায় শুরুতে ২০১৬ সালের মে মাসে উক্ত ঘটনা (২০ মে আবেদন) পরবর্তী সময়ের মানবকণ্ঠ পত্রিকার ই-পেপার সংস্করণগুলোতে উক্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
এক পর্যায়ে, ২৯ মে (২০১৬) এর মানবকণ্ঠ পত্রিকার ৩য় পাতায় আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। দেখুন এখানে।
Screenshot source: Manobkantha
অর্থাৎ, ভাইরাল হওয়া পত্রিকার প্রতিবেদনের ক্লিপটিও ২০১৬ সালের।
মানুষ যেভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছে
২০১৬ সালের আলোচিত এই ঘটনাটিকেই ইন্টারনেটে সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। Faridpur LIVE নামের একটি ফেসবুক পেজে দাবি করা হচ্ছে, “ঘটনা কিন্তু সত্যি প্রচণ্ড গরমে জীবন অতিষ্ঠ হওয়ায় এবার সূর্যের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের শিবপাল সিং নামে এক ব্যক্তি। মামলায় সূর্যের বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তিনি।”
অথচ উক্ত ঘটনাটি প্রায় সাত বছরেরও পুরোনো। কিন্তু পোস্টে উক্ত সংবাদটিকে সাম্প্রতিক ঘটনা (এবার) হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
Screenshot from Facebook
আবার বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে উক্ত ঘটনাটিকে সরাসরি সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে দাবি করা না হলেও কোনোরূপ স্থান/কাল উল্লেখ ব্যতিত প্রচার করায় অনেকেই এটিকে সাম্প্রতিক ঘটনা ভেবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
রংপুর,বাংলাদেশ নামের একটি ফেসবুক পেজে কোনোরূপ স্থান/কাল উল্লেখ না করে শুধু “প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সূর্যের বিরুদ্ধে মামলা। বিস্তারিত কমেন্টে।” ক্যাপশন ব্যবহার করে পোস্ট করায় অনেকেই এটিকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা ভেবেও বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
Screenshot from Facebook
আর এই বিভ্রান্তির নমুনা উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনেই লক্ষ্য করা যায়।
Image Collage by Rumor Scanner
মূলত, ২০১৬ সালে ভারতের মধ্য প্রদেশের শাজাপুর জেলায় বসবাসরত শিবপাল সিং যাদব নামক এক ব্যক্তি ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় বিরক্ত হয়ে পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করার জন্য আবেদন পত্র জমা দেন। উক্ত ঘটনাটিকেই সম্প্রতি কোনো সময় উল্লেখ না করে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ২০১৬ সালে ভারতে এক ব্যক্তি কর্তৃক সূর্য-দেবতার প্রতি আইনি অভিযোগ দায়ের করার ঘটনাকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক আল-আকসা মসজিদের ইমাম হামলার শিকার হয়ে মারা যাননি বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে আল-আকসা মার্টায়ার ব্রিগেড কমান্ডার ইব্রাহিম আল-নাবুলসির মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া, আল-আকসা মসজিদের ইমাম সুস্থ আছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির কি-ফ্রেম থেকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০২২ সালের ৯ আগস্ট ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ‘Haaretz’ এ “Two Palestinian Militants, 16-year-old Killed During Israeli Military Raid in Nablus” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের একটি ছবির সাথে উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটির একট স্থিরচিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Collage by Rumor Scanner
ছবিটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, মঙ্গলবার শোকাহতরা আল-আকসা মার্টায়ার ব্রিগেড কমান্ডার ইব্রাহিম আল-নাবুলসির মরদেহ বহন করছে।
কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২০২২ সালের ৯ আগস্ট ‘Al Jazeera’ তে “Israeli forces kill al-Aqsa Brigades commander in Nablus raid” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক আল-আকসা মার্টায়ার ব্রিগেড কমান্ডার ইব্রাহিম আল-নাবুলসির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
Screenshot from Al Jazeera
অর্থাৎ, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আল-আকসা মার্টায়ার ব্রিগেড কমান্ডার ইব্রাহিম আল-নাবুলসির মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
পরবর্তীতে আল-আকসা মসজিদের ইমামের সাম্প্রতিক অবস্থার বিষয়ে নিশ্চিত হতে অনুসন্ধান করে গত ২২ এপ্রিল সৌদি আরব ভিত্তিক ফেসবুক পেজ ‘Haramain Sharifain’ এ একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম শেখ সুদাইসের সাথে ঈদুল ফিতরে দেখা করেছেন আল আকসার ইমাম।
Screenshot from Facebook
অর্থাৎ, আল-আকসা মসজিদের ইমাম মারা যাননি। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন।
মূলত, ২০২২ সালে ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক আল-আকসা মার্টায়ার ব্রিগেড কমান্ডার ইব্রাহিম আল-নাবুলসির মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে তার লাশ বহনকারী ভিডিওটি সম্প্রতি ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক আল-আকসা মসজিদের ইমামের মৃত্যুর পর তার লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু দাবিটি সঠিক নয়। তাছাড়া, আল-আকসার ইমামের সাম্প্রতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি সুস্থ রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও আল-আকসা মসজিদে হামলা নিয়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ছবি ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই ইসরায়েলি পুলিশ কর্তৃক তৎকালীন আল-আকসা মসজিদের ইমাম শেখ ইকরিমা সাবরি আহত হন।
একই দাবি ছবি ছাড়া শুধু পোস্ট হিসেবেও ছড়িয়েছে ফেসবুকে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot source: Rumor Scanner
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং গত বছরের অক্টোবরে বরিশালে শ্রমিক দলের বিভাগীয় প্রস্তুতি সভায় মারামারির একটি ছবি ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়া পোস্টটি মূলত সার্কাজম বা স্যাটায়ার।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে, শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশীয় গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো খবর প্রকাশ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি ওয়ার্ড সার্চ করে উক্ত দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র ছাড়াই ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান
ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে একটি ছবি রয়েছে যেখানে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি মারামারি করছেন। ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন এবং ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, বরিশালে ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত শ্রমিক দলের বিভাগীয় প্রস্তুতি সভায় মারামারির ঘটনার ছবি এটি।
Screenshot source: Samakal
অর্থাৎ, পুরোনো এবং ভিন্ন একটি ঘটনার ছবি ইদ বানান নিয়ে মারামারির ছবি দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিভ্রান্তির নমুনা
আলোচ্য ডিজিটাল ব্যানারটিতে ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক দাবিটি প্রচার করা হলে বাংলাদেশের অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী বিষয়টি যথাযথ যাচাই না করে ফেসবুকে প্রচার করেছেন। ফলে, অনেকে বিষয়টি সত্য ভেবে নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন।
বিভ্রান্তির নমুনা দেখুন ছবিতে –
Screenshot Collage: Rumor Scanner
মূলত, ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, বাস্তবে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। গত বছরের অক্টোবরে বরিশালে শ্রমিক দলের বিভাগীয় প্রস্তুতি সভায় মারামারির একটি ছবি ব্যবহার করে উক্ত পোস্টটি স্যাটায়ার হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমির ‘আধুনিক বাংলা অভিধানে’ ‘ঈদ’ শব্দটির ভুক্তি রয়েছে দু’টি। এর মধ্যে একটি লেখা হয়েছে ‘ঈ’ ব্যবহার করে, অন্যটি ‘ই’ ব্যবহার করে। এর মধ্যে ‘ঈদ’কে প্রচলিত ও অসংগত বানান এবং ‘ইদ’কে সংগততর ও অপ্রচলিত বানান বলছে বাংলা একাডেমি।
Screenshot source: BDTimes365
তবে, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান অবশ্য ২০১৭ সালে এক ফেসবুক পোস্টে (আর্কাইভ) এই দুটো বানান ব্যবহারের ক্ষেত্রেই মত দিয়েছেন।
সুতরাং, ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে; যা মূলত স্যাটায়ার।
সম্প্রতি, বলিউড তারকা হৃত্বিক রোশান “ফিলিস্তিনের সাথে অনেক খারাপ হচ্ছে। কিন্তু আপনাদের আমি সমর্থন করছি। ফিলিস্তিনকে আমি ভালোবাসি।” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, হৃত্বিক রোশান ফিলিস্তিনের সমর্থনে সম্প্রতি কোনো ভিডিও প্রকাশ করেননি বরং হৃত্বিকের একটি ভিডিওতে টিকটক ফিল্টার ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হৃত্বিক রোশান সেদিন ভিডিওটিতে কোভিড-১৯ প্রসঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি করোনাকালীন সতর্কতা এবং করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। তবে ভিডিওতে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে একইদিনে অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৭ মার্চ ‘Hrithik Roshan’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, হৃত্বিক রোশান ফিলিস্তিনের সমর্থনে কোনো ভিডিও প্রকাশ করেননি।
এছাড়া, হৃত্বিক রোশানের একই ভিডিও (২০২০ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত) ব্যবহার করে “আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি” শীর্ষক দাবি ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot from Facebook
অনুসন্ধানে টিকটক অ্যাপে একটি ফিলিস্তিন পতাকা এবং আরবিতে ফিলিস্তিন লেখা সহ ‘Palestine’ নামে একটি ফিল্টার পাওয়া যায়। উক্ত ফিল্টার ব্যবহার করে হৃত্বিক রোশানের করোনাকালীন টুইটারে সতর্কতামূলক ভিডিও বার্তা এডিট করে এমনটা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
Screenshot from Tiktok
একই ফিল্টার ব্যবহার করে অন্যান্য টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকেও একইরকম কন্টেন্ট (১,২,৩) তৈরি হয়েছে।
Screenshot from Tiktok
ইন্টারনেটের বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করে অনুসন্ধানে, হৃত্বিক রোশানের টিকটক অ্যাকাউন্ট রয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকসহ ইন্টারনেটে বলিউড তারকা হৃত্বিক রোশান ফিলিস্তিনকে সমর্থন করছেন দাবি করে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, হৃত্বিক রোশান ফিলিস্তিনের সমর্থনে কোনো ভিডিও প্রকাশ করেননি। হৃত্বিক রোশানের ফিলিস্তিনকে সমর্থনের যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে সেটি হৃত্বিকের পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিওতে টিকটক ফিল্টার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বলিউড তারকা অক্ষয় কুমার ফিলিস্তিনের সমর্থনে ভিডিও প্রকাশ করেছেন শীর্ষক একটি ভুয়া দাবি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
প্রসঙ্গত, গত ০৫ এপ্রিল ইসরায়েলি পুলিশ আল আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের নামাজরত অবস্থায় হামলা করলে সেই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ইন্টারনেটে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
সুতরাং, ভারতীয় অভিনেতা হৃত্বিক রোশান ফিলিস্তিনকে সমর্থন করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা এডিটেড।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোতে হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ির নয় বরং এটি তুরস্কের সানলিউরফা প্রদেশের হাররান অঞ্চলে অবস্থিত একটি বাড়ির ছবি। উক্ত বাড়িটির সাথে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Adil Hafiza’ নামের একটি টুইটার আইডি থেকে “Harran evleri #Sanliurfa” ক্যাপশনে করা একটি টুইট বার্তার সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত টুইট বার্তায় সংযুক্ত ছবি এবং ফেসবুকে হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ি দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে সংযুক্ত ছবির তুলনা করার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে দুটি ছবি একই স্থান থেকে তোলা হয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, Sanliurfa হচ্ছে তুরস্কের একটি প্রদেশ এবং Harran এই প্রদেশেরই একটি শহরের নাম। তুর্কি শব্দ evleri এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে House (বাংলায়ঃ বাড়ি)। অর্থাৎ উক্ত টুইট দ্বারা মূলত তুরস্কের সানলিউরফা প্রদেশের হাররান অঞ্চলে অবস্থিত একটি বাড়িকে বোঝানো হয়েছে।
তাছাড়া, হাররানে অবস্থিত এই বাড়ি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে turktoyu.com নামক ওয়েবসাইট কর্তৃক Domed Harran Houses শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানেও ফাতেমা (রাঃ) বাড়ি দাবিতে প্রচারিত ছবিটির ন্যায় একই রকম দেখতে অন্য আরেকটি ছবি রয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
উক্ত আর্টিকেলে বলা হয়, এথেন্স এবং মার্ডিনের শহরগুলোর মতো একসময়ের “বিজ্ঞান কেন্দ্র” হিসেবে পরিচিত Harrnan ছিলো একটি সুপ্রতিষ্ঠিত জনবসতি যেখানে শতাব্দী ধরে বহু সভ্যতা গড়ে উঠেছে।
গম্বুজযুক্ত বাড়িগুলো হাররানের অন্যতম ঐতিহ্যের প্রতীক যা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এটি একটি স্থানীয় স্থাপত্যের উদাহরণ যার অস্তিত্ব রক্ষার্থে ১৯ শতকে এটিকে পুনরায় সংস্করণের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং এখনও সানলিউরফার দক্ষিণ-পূর্বে এই বাড়িগুলো ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
Screenshot Source: Turktoyu
উক্ত আর্টিকেলে আরো বলা হয়, হাররানের বাড়িগুলোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হল এগুলোর গম্বুজে কোনো প্রকার গাছ ব্যবহার করা হয় না। মরুভূমির পরিবেশে গাছের সংকট হওয়ার কারণে গম্বুজ নির্মাণে ইটের ব্যবহারকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া এই এলাকায় ইট ছিলো সহজলভ্য।
সাধারণত ৩০-৪০টি ইটের সারির মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই ঘরগুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫ মিটার। অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক পৃষ্ঠগুলোতে মূলত স্লাইম প্লাস্টার করা হতো। গ্রীষ্মকালে নিজেদের শীতল এবং শীতকালে উষ্ণ রাখতে সক্ষম এই বাড়িগুলো ১৯৮৯ সাল থেকে সুরক্ষার অধীনে রয়েছে। এই স্থান থেকে কোনোপ্রকার উপকরণ সংগ্রহ করা, চ্যানেল খনন করা এবং নতুন নির্মাণ নিষিদ্ধ। তবে এই বাড়িগুলোর মধ্যে একটিকে ১৯৯৯ সালে পুনরধিষ্ঠিত করার মাধ্যমে “Harran Culture House” নামে পর্যটনের পরিষেবায় রাখা হয়েছিল।
Screenshot Source: Turktoyu
তাছাড়া, হাররানের এই বাড়িগুলোর ইতিহাস, নির্মাণশৈলী এবং শীত-গ্রীষ্মে কীভাবে এদের ভেতরের পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকতো সে ব্যাপারে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম Vernacular domed houses of Harran, Turkey শিরোনামে একটি রিসার্চ আর্টিকেল খুঁজে পায়।
উক্ত আর্টিকেলের সূচনাতে বলা হয়, হাররান হলো তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে ইউফ্রেটিস এবং টাইগ্রিস নদীর মধ্যবর্তী একটি সমতল ভূমির শহর যা তার আকর্ষণীয় স্থানীয় স্থাপত্য-শৈলীর দ্বারা সহজেই মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে। সচরাচর এই ধরণের স্থাপত্য তুরস্কের আর কোথাও দেখা যায়না, যেখানে মূল নির্মাণ সামগ্রী হচ্ছে রোদে শুকানো ইট (Adobe)। বর্তমানে এই ধরনের স্থাপত্য কেবলমাত্র দক্ষিণ ইতালি, সাইপ্রাস, এবং লিবিয়ার ফেজান ও কুফরা এলাকাতেই দেখা যায়।
উক্ত আর্টিকেলে আরো উল্লেখ করা হয়, হাররানের শঙ্কু আকৃতিযুক্ত গম্বুজ-ঘরগুলোর শিকড় বোঝার জন্য হাররানের ইতিহাসের দিকে একটু নজর দেওয়া প্রয়োজন। হাররান সম্পর্কে আমাদের এখন পর্যন্ত জানা লিখিত নথিগুলো এটাই নির্দেশ করে যে এর ইতিহাস ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মতো। উর্বর ভূমি এবং বাণিজ্যপথে এর অবস্থান হওয়ার কারণে, অনেক সভ্যতা হাররানে বিকাশ লাভ করেছে।
এছাড়া আরো বলা হয় যে, মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার মাধ্যমে হাররানের ঘরগুলো শিকড় অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। ২৫০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, এই অঞ্চল শাসন করা আসিরিয়ানদের কিছু পাথরের শিল্পকর্মে হাররানের বাড়িগুলোর অনুরূপ চিত্র দেখা যায়। মিসোপটেমিয়ার প্রত্নতাত্তিক খননগুলোর মাধ্যমে জানা যায়, একটি বর্গাকার কক্ষে গম্বুজবিশিষ্ট এই বাড়িগুলো খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং এই বাড়িগুলোতে ব্যবহৃত গম্বুজের ব্যাস ছিল ০৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে।
শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এই অঞ্চলে কাঠ ছিলো বিরল। এজন্য লোকেরা তাদের ঘরগুলো তৈরি করেছিল অ্যাডোব, ইট এবং ছোট পাথর দিয়ে যা তাদের জন্য খুবই সহজলভ্য ছিল। হাররানের বাড়িগুলো আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এটি খুব দ্রুত নির্মাণ করা যায়। যাযাবর জীবনধারা এবং জলবায়ু পরিস্থিতি মানুষকে এমন ধরনের বাড়ি তৈরিতে বাধ্য করেছিল যা সহজেই তাঁবুর মতো তৈরি করা যেতে পারে এবং একই সাথে তাপ এবং ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করে।
১৯৯৮ সালের এই গবেষণাপত্রটিতে দেখা যায়, একজন পুরোনো কারিগর তার দেওয়া সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে গবেষকদের কিছু অবজারভেশন নিশ্চিত করেছেন। সেই কারিগর বলেন,‘‘আমরা খননের সময় প্রাচীন ভবনের গম্বুজগুলো দেখেই কীভাবে এই শঙ্কু আকৃতির গম্বুজগুলো তৈরি করতে হয় তা শিখেছি। বর্তমান বাড়িগুলো ১৯৩৯ সালের দিকে নির্মিত হয়েছিল যখন আমি একটি বালক ছিলাম। আমাদের একটি গম্বুজের জন্য ১৩০০টি ইটের প্রয়োজন হয়েছিল। তবে এই ইট আমরা হাররানে তৈরি করিনি বরং প্রাচীন ভবনগুলোর ধ্বংসাবশেষ থেকেই এই ইটগুলো সরবরাহ করেছি। আমি একদিনে দুই ডোম তৈরি করতে পারতাম।”
উক্ত আর্টিকেলে আরো বলা হয় যে, হাররানের বাড়িগুলো তৈরিতে ব্যাবহৃত মূল উপকরণ যেহেতু মাটি এবং ক্লে (Clay) দ্বারা তৈরি ইট দ্বারা নির্মিত হয়েছিল তাই এদের আয়ুষ্কাল নির্দিষ্ট। এটা বলা যায় যে, বর্তমানে যে বাড়িগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো ৭০-১৫০ বছরের বেশি পুরাতন নয়। এটা প্রবলভাবে সম্ভব যে সময়ের সাথে সাথে শঙ্কু আকৃতির গম্বুজযুক্ত হাররানের এই বাড়িগুলো বহুবার ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং পুনর্নির্মিত হয়েছে। ফলে সময়ের সাথে সাথে তাদের আকারে পরিবর্তনও হয়েছে।
তবে, হাররানের বাড়িগুলো ঠিক কত বছরের পুরোনো তা নিয়ে আরো অনুসন্ধান চালালে, তুরস্কের মূলধারার গণমাধ্যম Daily Sabah এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে হাররানের এই বাড়িগুলোর বয়স ২৫০ বছরের বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot source: Daily Sabah
অর্থাৎ হাররানের বাড়িগুলো নিয়ে করা গবেষণা এবং তুরস্কের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হাররানের বাড়িগুলোর সাথে প্রায় ২৫০০ হাজার বছরেরও পুরোনো ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও বর্তমানে যেসব গম্বুজবিশিষ্ট বাড়ি দেখা যায় সেগুলো সর্বোচ্চ ২৫০ বছর পুরোনো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এত অল্প সময়কাল পূর্বে তুরস্কে তৈরিকৃত এই বাড়িগুলোকে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে আরবের মক্কা নগরীতে বসবাসকারী হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ি দাবিতে প্রচারিত হলে তা স্পষ্টতই মিথ্যাচার। তাছাড়া, হযরত ফাতেমা (রাঃ) জীবিত থাকাকালীন অবস্থাতেও তুরস্কে তার কোনো বাড়ি ছিল কিনা সে ব্যাপারে ঐতিহাসিক প্রমাণও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য যে, তুরস্ক ব্যাতীত দক্ষিণ ইতালি, সাইপ্রাস এবং লিবিয়ার কিছু এলাকায় এই ধরনের গম্বুজ আকৃতির বাড়ি থাকার ব্যাপারে তথ্য থাকলেও সোদি আরবের মক্কায় এই ধরনের বাড়ি রয়েছে কিনা সেটির ব্যাপারেও কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
মূলত, তুরস্কের সানলিউরফা প্রদেশের হাররান অঞ্চলে অবস্থিত একটি বাড়ির ছবিকে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর বাড়ি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে, রিউমর স্ক্যানারের বিস্তর অনুসন্ধানে তুরস্কের উক্ত স্থানটিতে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর বাড়ি থাকার ব্যাপারে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, তুরস্কের সানলিউরফা প্রদেশের হাররান অঞ্চলে অবস্থিত একটি বাড়ির ছবিকে কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর বাড়ির ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
গত মার্চে, মালয়েশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
উক্ত ছবি যুক্ত করে দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন সময় টিভি।
উক্ত ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি গত মার্চের নয় বরং মালয়েশিয়ায় ২০২১ সালের বন্যার ঘটনার পুরোনো ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তজার্তিক সংবাদমাধ্যম গণমাধ্যম Yahoo News এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ১৮ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় বন্যায় বেশকিছু ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। তেমনই কিছু বাড়ির দৃশ্য এটি।
Screenshot source: Yahoo News
পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম New Straits Times এর ওয়েবসাইটে একইদিন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: NST
পোস্টের ক্যাপশন থেকেও ছবিটির বিষয়ে একই তথ্যই পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি গত মার্চে মালয়েশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনার নয়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবে ছবিটি মালয়েশিয়ার গত মার্চের বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত মার্চে মালয়েশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে যে ছবিটি প্রচার করা হয়েছে তা সেসময়ের নয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালে মালয়েশিয়ার বন্যার ঘটনার ছবি এটি। প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিটি মালয়েশিয়ার বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, গত মার্চে মালয়েশিয়ায় বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে পুরোনো ঘটনার ছবিকে উক্ত ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।