ইদ বানান নিয়ে মারামারি শীর্ষক দাবিটি স্যাটায়ার 

সম্প্রতি, ফেসবুকে ‘Eid এর বাংলা বানান “ইদ” নাকি,”ঈদ” এ নিয়ে মারামারি। লুঙ্গীসহ পাঞ্জাবি ছিঁড়েছে ৩ জনের’ শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। 

ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে কিছু মানুষের মারামারির একটি ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot source: Rumor Scanner

একই দাবি ছবি ছাড়া শুধু পোস্ট হিসেবেও ছড়িয়েছে ফেসবুকে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot source: Rumor Scanner

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং গত বছরের অক্টোবরে বরিশালে শ্রমিক দলের বিভাগীয় প্রস্তুতি সভায় মারামারির একটি ছবি ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়া পোস্টটি মূলত সার্কাজম বা স্যাটায়ার। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে, শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশীয় গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো খবর প্রকাশ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি ওয়ার্ড সার্চ করে উক্ত দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র ছাড়াই ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।

ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান 

ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে একটি ছবি রয়েছে যেখানে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি মারামারি করছেন। ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

প্রতিবেদন এবং ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, বরিশালে ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত শ্রমিক দলের বিভাগীয় প্রস্তুতি সভায় মারামারির ঘটনার ছবি এটি। 

Screenshot source: Samakal

অর্থাৎ, পুরোনো এবং ভিন্ন একটি ঘটনার ছবি ইদ বানান নিয়ে মারামারির ছবি দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে। 

বিভ্রান্তির নমুনা

আলোচ্য ডিজিটাল ব্যানারটিতে ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক দাবিটি প্রচার করা হলে বাংলাদেশের অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী বিষয়টি যথাযথ যাচাই না করে ফেসবুকে প্রচার করেছেন। ফলে, অনেকে বিষয়টি সত্য ভেবে নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন।

বিভ্রান্তির নমুনা দেখুন ছবিতে – 

Screenshot Collage: Rumor Scanner

মূলত, ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, বাস্তবে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। গত বছরের অক্টোবরে বরিশালে শ্রমিক দলের বিভাগীয় প্রস্তুতি সভায় মারামারির একটি ছবি ব্যবহার করে উক্ত পোস্টটি স্যাটায়ার হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমির ‘আধুনিক বাংলা অভিধানে’ ‘ঈদ’ শব্দটির ভুক্তি রয়েছে দু’টি। এর মধ্যে একটি লেখা হয়েছে ‘ঈ’ ব্যবহার করে, অন্যটি ‘ই’ ব্যবহার করে। এর মধ্যে ‘ঈদ’কে প্রচলিত ও অসংগত বানান এবং ‘ইদ’কে সংগততর ও অপ্রচলিত বানান বলছে বাংলা একাডেমি। 

Screenshot source: BDTimes365

তবে, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান অবশ্য ২০১৭ সালে এক ফেসবুক পোস্টে (আর্কাইভ) এই দুটো বানান ব্যবহারের ক্ষেত্রেই মত দিয়েছেন।

সুতরাং, ইদ বানান নিয়ে মারামারি হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে; যা মূলত স্যাটায়ার।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img