চায়না প্লাস্টিকের ডিমের দাবিটি কতটুকু সত্য?

সম্প্রতি, “ডিম নাকি চায়না প্লাস্টিক বল!! স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকিতে প্রতিটি পরিবার” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

যা দাবি করা হচ্ছে

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর ক্যাপশনে বলা হয়, “ডিম নাকি চায়না প্লাস্টিক বল!!স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকিতে প্রতিটি পরিবার,টাকা দিয়ে সন্তানদের বিষ খাওয়াচ্ছি।হাতেনাতে দোকানদার আটক।”

ফেসবুকে ছরিয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্লাস্টিকের ডিম বিক্রেতার হাতে-নাতে ধরা পড়ার ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য নয় বরং এটি বাজার থেকে কিনে আনা সাধারণ ডিমের গায়ে প্যারাগন কোম্পানির লোগো বসিয়ে বিক্রি করায় দোকানীকে ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তাদের জেরা করার ভিডিও।

যেভাবে অনুসন্ধান

ভিডিওতে দেখা যায়, ভোক্তা অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা উক্ত দোকানীকে ডিম ভেঙে দেখাতে বলেন। তারপর ডিমের গায়ে বসানো লোগো পরীক্ষা করে দেখেন। দেখা যায়, দোকানে দুই ধরণের ডিম আছে। এক ধরণের ডিম আসল প্যারাগণ কোম্পানির এবং অন্যটি প্যারাগণের সীল নকল করে বসানো বাজারের সাধারণ ডিম। সাধারণ ডিমের গায়ে নকল সীল বসানোর বিষয়টিই ভিডিওতে বার বার উল্লেখ করেছেন দোকানী নিজে ও কর্মকর্তাগণ। ভিডিওটির কোথাও “প্লাস্টিকের ডিম” উচ্চারণ করা হয়নি।

“প্লাস্টিকের ডিম” কি-ওয়ার্ড সার্চে M Ishaq Choudhry নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ১৯ মে How its made plastic eggs শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে প্লাস্টিক ডিম কিভাবে তৈরি হয় তা দেখানো হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে ফ্রান্স ভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান France 24 এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটিতে দেখানো প্লাস্টিকের ডিমগুলো মূলত slime, যা শিশুদের জন্য তৈরী এক ধরণের খেলনা।

পরবর্তীতে এ বিষয়ে ২০১৮ সালে ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের একটি নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়

নির্দেশনাটি থেকে জানা যায়, প্লাস্টিকের ডিমের সত্যিকার অর্থে কোনো অস্তিত্ব নেই। এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব ও কাল্পনিক।

২০১৮ সালে প্লাস্টিকের ডিমের গুজব অত্যধিক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে মানুষ যখন ডিম খাওয়া ছেড়ে দেয় তখন বাংলাদেশ খাদ্য মন্ত্রপণালয়ের অধীনস্ত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও এবিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়।

এই গণবিজ্ঞপ্তি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় বাজারে নকল ডিমের কোনো অস্তিত্ব নেই। নকল ডিম নিয়ে বাজারে হৈ চৈ পড়লেও এ নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নকল ডিমের তথ্য নিয়ে যে সংবাদ ছাপা হয়েছে তা অসত্য বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

মূলত, সকল পণ্যেরই একটি মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ থাকে। তবে, ডিমও যে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে পারে এই ধারণাটি বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। ডিমের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ সীল করে দেওয়ার প্রচলণটাও আমাদের দেশে নতুন। আর ডিমের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ সীল করে এমন একটি কোম্পানি প্যারাগণ। আলোচিত ভিডিওটিতে বাজার থেকে কেনা সাধারণ ডিমের গায়ে প্যারাগণের সীল নকল করে বসানো হয়েছে। এই বিষয়েই ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ প্রশ্ন করছেন দোকানীকে। ঐ ভিডিওটিই প্লাস্টিকের ডিমের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, ডিমের ভেতরে খোসার ঠিক নিচে একটা পাতলা মেমব্রেন বা আবরণ থাকে। ডিম কড়া রোদে বেশিদিন থাকলে সেটা শুকিয়ে কাগজের মতো হতে পারে। যাকে প্লাস্টিকের ডিমের বৈশিষ্ট দাবিতে প্রচার করা হয়। অন্যদিকে, বাজারে একটি ডিমের দাম ৮-১০ টাকার মধ্যে ওঠানাম করে। ওই দামে সুদুর চীন থেকে কাচামাল এনে প্লাস্টিক দিয়ে ডিম বানিয়ে বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক নয়ই বরং লোকসান নিশ্চিত।

প্রসঙ্গত, রিউমর স্ক্যানার টিম পূর্বেও প্লাস্টিকের ডিমপ্লাস্টিকের চাল সংক্রান্ত ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সুতরাং, সাধারণ ডিমের গায়ে প্যারাগণ কোম্পানির সীল বসিয়ে বিক্রি করায় ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ দোকানদারকে জেরা করা ভিডিওকে প্লাস্টিকের ডিম বিক্রেতার হাতে-নাতে ধরা পড়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img