প্লাস্টিকের চাল; বাস্তব না মিথ?

বাংলাদেশীদের বলা হয় মাছে-ভাতে বাঙালি। আমাদের প্লেটে দুইবেলা ভাত না উঠলে মনে হয় কি যেন এক অতৃপ্তি রয়ে গেল। কিন্তু এই ভাত হয় যে চাল দিয়ে তা যদি প্লাস্টিকের! তাহলে কেমন হবে? 

কিন্তু আসলেই কি প্লাস্টিকের চাল রয়েছে? কিভাবে প্লাস্টিকের চালের ধারণা এলো? প্লাস্টিকের চাল কি উৎপাদন করা সম্ভব? এমন চাল উৎপাদন করাই বা কতটুকু সাশ্রয়ী? 

এসব প্রশ্নের উত্তর জানবো আমরা এই প্রতিবেদনে। 

প্লাস্টিকের চাল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত কিছু নমুনা

১. ২০১৬ সালের ২৯ মে “দেখুন প্লাস্টিকের নকল চাল”  শীর্ষক শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

২. সম্প্রতি “প্লাস্টিকের চাল ও ভাত গুজব নয় ১০০% সত্য ঘটনা । ভাত খেয়ে হতবাক” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

৩. সম্প্রতি “শুনেছি যে প্লাস্টিকের চাল হয় 🤔কিন্তু আজ বাস্তবে দেখলাম প্লাস্টিকের চাল  আর এ চাউল আমরা প্রতিনিয়ত খেয়ে চলছি  কি জামানা আসলো  এরা আমাদেরকে বাঁচতে দিবে না  আল্লাহ তুমি আমাদেরকে হেফাজত করো  তুমি ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই  🤲😭😭🥀..!  আমিন” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

৪. ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি বাজারে প্লাস্টিকের চাল বিক্রির অভিযোগ ও প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা খুঁজে পাওয়া নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক সমকাল ও অনলাইন গণমাধ্যম নিউজবাংলা২৪.কম। প্রতিবেদন দুইটিতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে এগুলো প্লাস্টিকের চাল বলে ধারণা করা হলেও চালগুলোকে আরও পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট এলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৫. ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা পৌর শহরে ‘প্লাস্টিকের চাল’ সন্দেহে ৫০ কেজি চাল জব্দ করা হয়। জব্দ করা চালের মধ্যে ১৫ কেজি চাল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা করে দেখার জন্য, আসলেই তা প্লাস্টিকের চাল কিনা। জব্দ করার পর প্রাথমিকভাবে তা ‘প্লাস্টিকের চাল’ বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার রায়। তবে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, প্লাস্টিকের চাল নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল বার্তা এসেছে। ক্রেতার অভিযোগে যে চাল জব্দ করা হয়েছে তা প্লাস্টিক কিংবা ভেজাল চাল নয়। এছাড়া এই ঘটনার পর কৃষিমন্ত্রীও বলেন, সেটি কোনোভাবেই প্লাস্টিকের চাল নয়।

” প্লাস্টিকের চাল” তথ্যের সূত্রপাত 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে চীনে এই গুজবের সূত্রপাত। সেখানে গুজব ছড়ায়, যে প্লাস্টিকের চাল তৈরি হচ্ছে এবং তা সাধারণ চালের মধ্যে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। চীনের ‘উচ্যাং’ নামে একটি ব্র্যান্ডের সুগন্ধি চালের বিখ্যাত ছিল। এই চালে কৃত্রিম ফ্লেভার যুক্ত করা হতো, ফলে রান্নার পর ভাতে এক ধরনের সুগন্ধ তৈরি হতো। তবে ‘উচ্যাং’ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, তারা সাধারণ চালের মধ্যে ফ্লেভার মিশিয়ে  ‘নকল চাল’ বাজারজাত করছে৷ 

পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি দ্যা কোরিয়ান টাইমস পত্রিকা সংবাদ প্রচার করে যে, অসাধু ব্যবসায়ীরা চীনের তাইজুয়ান, শানজি প্রদেশে ‘নকল চাল’ বিক্রি করছে। ওই চাল আলু, মিষ্টি আলু ও প্লাস্টিক মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনটিতে অভিযোগ করা হয়।

পরবর্তীতে এটিই ইন্টারনেট থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, চীনে “প্লাস্টিকের চাল” উৎপাদন করা হচ্ছে।

“প্লাস্টিকের চাল” তৈরির ফুটেজ!

“প্লাস্টিকের চাল” তৈরি করা হচ্ছে এমন দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ ইন্টারনেটে অনেক ভিডিও ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যায়। ১ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে ফরাসী ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান France24.com। 

ভিডিও ফুটেজটিতে দেখা যায়, জনৈক ব্যক্তি একটি মেশিনের এক প্রান্ত দিয়ে প্লাস্টিক প্রবেশ করাচ্ছে। একাধিক ধাপ শেষে মেশিনটির অপরপ্রান্ত দিয়ে চাল সদৃশ কিছু বেরিয়ে আসছে। 

ফ্রান্স২৪.কম এই প্রতিবেদনে আরও বলছে, এই চাল সদৃশ জিনিসগুলো মূলত প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ। যা বিভিন্ন ভঙ্গুর জিনিসপত্র যেমন কাঁচ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

ইন্টারনেটে একই ধরনের আরও ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া বাংলাদেশে “প্লাস্টিকের চাল” তৈরির দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির প্রক্রিয়ার সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

দেশভেদে ” প্লাস্টিকের চাল” এর গুজব

বাজারে “প্লাস্টিকের চাল” এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার গুজব পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়েছে।

যেমন, ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি নিউজের বরাতে জানা যায়, ২০১৭ সালে আফ্রিকান দেশ সেনেগাল, ঘানা, গাম্বিয়ার বাজারে ” প্লাস্টিকের চাল” এর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ঘানায় এই গুজব এতটা প্রকট আকার ধারণ করে যে, ঘানার ফুড ও ড্রাগ অথোরিটি এটি নিয়ে তদন্ত নামে৷ এর অংশ হিসেবে তারা ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের “প্লাস্টিকের চাল” এর নমুনা জমা দিতে বলে। এসব নমুনা পরীক্ষা শেষে দেশটি জানায়, তাদের বাজারে কোনো ” প্লাস্টিকের চাল”নেই।

এছাড়া এই বিষয়ে সেনেগালের ডাকার ফুড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ফ্যালাও সার বলেন, আমাদের ইনস্টিটিউটে সেনেগালে যে চালগুলোকে সন্দেহ করা হয়েছিলো, সেগুলোর পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, যে চালগুলোকে প্লাস্টিকের চাল বলে সন্দেহ করা হয়েছে, সেগুলো দুই বছরের পুরাতন চাল। এছাড়া অন্যান্য পরীক্ষাতেও চালগুলোতে কোনো প্লাস্টিক খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

নাইজেরিয়ায় “প্লাস্টিকের চাল” এর গুজব

২০১৬ সালে আফ্রিকার আরেক নাইজেরিয়ার বাজারেও “প্লাস্টিকের চাল” পাওয়া যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

তবে দেশটির জাতীয় ফুড ও ড্রাগ এজেন্সি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানায়, তারা কোনো “প্লাস্টিকের চাল” পায়নি। বরং তাদের সংগৃহীত নমুনার চালগুলো ছিল দূষিত এবং সেসবে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীও “প্লাস্টিকের চাল” দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানান।

ইন্দোনেশিয়ায় “প্লাস্টিকের চাল” নিয়ে গুজব

২০১৫ সালে ইন্দোনেশিয়াতেও “প্লাস্টিকের চাল” নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়লে দেশটির পুলিশ জানায়, ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় তারা নমুনা হিসেবে সংগৃহীত চালের মধ্যে কোনো প্লাস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। 

ভারতে “প্লাস্টিকের চাল” নিয়ে গুজব

২০১৭ সালে ভারতের তেলাঙ্গানা, হায়দ্রাবাদ ও অন্ধ্র প্রদেশে বাজারে “প্লাস্টিকের চাল” পাওয়া যাওয়া নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

এই ঘটনার পর ভারতের তেলাঙ্গানা ফুড অ্যান্ড সিভিল সাপ্লাইস ডিপার্টমেন্ট নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিটি কন্ট্রোল এনালিস্ট ওসমান মহিউদ্দিন বলেন, “প্লাস্টিকের চাল” বলতে আসলে কিছুই নেই। চীনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এই ধারণা সামনে এসেছে। কেউ এই ধরনের কিছু এখনো প্রমাণ করতে পারে নাই। বড়জোর যেটা হতে পারে, এসব চাল ভেজালমিশ্রিত। 

বাংলাদেশে “প্লাস্টিকের চাল” নিয়ে গুজব

বাংলাদেশে “প্লাস্টিকের চাল” নিয়ে বিভিন্ন সময়েই গুজবের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, ২০১৯ সালে গাইবান্ধা পৌর শহরে সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ‘প্লাস্টিকের চাল’ সন্দেহে ৫০ কেজি চাল জব্দ করা হয়। জব্দ করা চালের মধ্যে ১৫ কেজি চাল প্লাস্টিকের চাল কিনা তা যাচাই করতে 

ঢাকায় পাঠানো হয়। তবে চালগুলো জব্দ করার পর এগুলোকে ‘প্লাস্টিকের চাল’ বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার  নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার রায়। কিন্তু পরেরদিনই গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, প্লাস্টিকের চাল নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল বার্তা এসেছে। ক্রেতার অভিযোগে যে চাল জব্দ করা হয়েছে তা প্লাস্টিক কিংবা ভেজাল চাল নয়। এছাড়া একই ঘটনায় কৃষিমন্ত্রীও বলেন, সেটি কোনোভাবেই প্লাস্টিকের চাল নয়।

“প্লাস্টিকের চাল” বলতে আসলে কি কিছু আছে?

চাল নিয়ে প্রতারণা সম্পর্কিত বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা আয়ারল্যান্ডের কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টের ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটির প্রতিষ্ঠাতা ও খাদ্য নিরাপত্তার অধ্যাপক ক্রিস ইলিয়ট বলেন, “প্লাস্টিকের চাল” আসলে প্লাস্টিক থেকে তৈরি হয় না। যদি চাল ভালোভাবে সংরক্ষণ করা না হয় এবং দশ বছর পর্যন্ত এভাবেই থেকে যায়, তাহলে চাল ছত্রাক দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এর ফলে চালের সুন্দর সাদা রঙ বদলে গিয়ে সুবজ রঙ ধারণ করে।

এই অবস্থায় প্রতারকেরা এগুলো সংগ্রহ করে সাদা রঙ ফিরিয়ে আনতে এর উপর ব্লিচিং ছিটিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, এভাবে ব্লিচিং ব্যবহারের ফলে চাল তার উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। তখন প্রতারকেরা এর উপর প্যারাফিন মোম ব্যবহার করে। আর যখন এভাবে প্যারাফিন ব্যবহার করা হয়, তখন ঐ চাল ভালোভাবে রান্না হয় না এবং এটিকে দেখতে প্লাস্টিক চাল মনে হয়। 

প্রকৃত চালের ভাত কি লাফায়?

ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকা ভিডিওগুলোতে প্লাস্টিকের চালের অস্বিত্ব প্রমাণে দেখানো হয় যে,  প্লাস্টিকের চাল থেকে রান্না করা ভাত দিয়ে তৈরি বল লাফায়। 

ভাত দিয়ে তৈরি বল লাফানোর বিষয়টিকে সত্য উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠন রাইস এসোসিয়েশনের ডিরেক্টর অ্যালেকজেন্ডার ওয়াহ বিবিসি নিউজকে বলেন, ভিডিওগুলো হয়তো সত্য। তবে ভাতের বল লাফানোর কারণ প্লাস্টিক নয়। চাল যখন সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তখন এভাবে লাফাতে পারে।

তিনি আরও বলেন, চালের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত৷ তাই এটা দিয়ে এমন কিছু করা সম্ভব। 

তার এই ব্যাখ্যার আরও বিস্তারিত জানা যায়, সেনেগালের ডাকার ফুড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ফ্যালাও সারের উদ্ধৃতি থেকে। তিনি বলেন,  চালে মূলত দুই ধরনের উপাদান রয়েছে৷ যথা আম্যাইলোজ- যেটি চালকে শক্ত করে। আরেকটি আম্যাইলোপেক্টিন-যেটি চালকে আঠালো করে। 

যখন চাল অনেক পুরাতন হয়ে যায়, তখন চালে আম্যাইলোজ কমতে থাকে বিপরীতে আম্যাইলোপেক্টিন বাড়তে থাকে। আর যখন এমন চালকে তাপ দেওয়া হয় তখন এটি অনেক আঠালো হয়ে যায়। এরপর এটি শুকালে অনেক বেশি গাঢ় হয়ে যায়। যার ফলে এমন চালে রান্না করা ভাত লাফাতে পারে।

চাল কি আগুনে পুড়ে?

প্লাস্টিকের চাল প্রমাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেটে অনেক ভিডিওতে দেখা যায়, চালের মধ্যে আগুন ধরিয়ে বা অথবা আগুনে চাল পুড়িয়ে প্রমাণ করা হয় সেগুলো প্লাস্টিকের চাল। 

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসল চালেও আগুন ধরে। বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব ল্যুভাইনের টক্সোলজিস্ট ড. আলফ্রেড বার্নাড বলেন, ভালোমানের চালে যখন তাপ দেওয়া হয়, তখন সেটি পুড়ে যায়। 

তিনি আরও বলেন, চাল পুড়ে গেলেই প্লাস্টিক নয়। কারণ প্লাস্টিক পোড়ালে যেমন গন্ধ আসে, এখান থেকে তেমন কোনো গন্ধই আসবে না।

ভালো চাল কিভাবে চিনবো? 

ভারতের তেলাঙ্গানা ফুড অ্যান্ড সিভিল সাপ্লাইস ডিপার্টমেন্টের কোয়ালিটি কন্ট্রোল এনালিস্ট ওসমান মহিউদ্দিন বলেন, প্রকৃত চালকে যেকোনো চাল সদৃশ বস্তু থেকে খুব সহজেই আলাদা করা সম্ভব।

যেকোনো চালকে পানিতে দিলে সেটি যদি ডুবে যায় তাহলে সেটি প্রকৃত চাল। যদি না ডুবে তাহলে তার সঙ্গে কোনো বস্তু মেশানো থাকতে পারে।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, চালের বিশুদ্ধতা পরীক্ষায় প্রথমে কিছু ধানের সঙ্গে ২০ মিলিমিটার নীল মিথিলিন যুক্ত করা হয়। এরপর এগুলোকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড দিয়ে ধুয়ে পুনরায় হলুদ মিথিলিন দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। যদি চালগুলো আসল না হয় তবে সেগুলো সবুজ হয়ে যাবে৷ ভালো চাল সাদা থেকে যাবে। 

প্লাস্টিকের চালের উৎপাদন কি সাশ্রয়ী?

প্লাস্টিকের চাল উৎপাদন কতটা সাশ্রয়ী এই সংক্রান্ত অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্লাস্টিক চালের চেয়ে অনেক দামী। এ বিষয়ে বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের উর্ধতন যোগাযোগ কর্মকর্তা কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন বলেন, বাজারে এক কেজি চাল প্রকারভেদে ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। আর এক কেজি প্লাস্টিকের দাম কত? ইন্টারনেট ঘেটে দেখলাম মোটামুটি নিম্নমানের কেজি প্লাস্টিকের দাম কোনো অবস্থাতেই ১৫০ থেকে ২০০ টাকার কম না। 

আর সেই কাঁচামালকে দিয়ে চাল বানিয়ে সেই চাল যদি চীন থেকে বাংলাদেশে জাহাজে বা স্থলপথে আমদানি করা হয় এবং বেশ কয়েকজন মধ্যভোগীর হাত পেরিয়ে মুদির দোকানে পৌছাতে পৌছাতে তা কখনোই ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজির কম হওয়া সম্ভব নয়। সেই অবস্থায় কীভাবে ক্রেতা কিভাবে সেটা ৫০ টাকা কেজিতে কিনতে পারবেন?

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ক্রপস উইংয়ের পরিচালক এম এম হাছিন আলীকে উদ্ধৃত করে দেশীয় অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন জানায়, প্লাস্টিকের চাল বলে কিছু নেই। বাংলাদেশে চালের যেই দাম, ওই দামে প্লাস্টিকের চাল তৈরি করা খুব কঠিন কাজ। 

“প্লাস্টিকের চাল” এর গুজব কেন ছড়ায়?

প্লাস্টিকের চালের গুজব ছড়ানোর পেছনে ফরাসি গণমাধ্যম ফ্রান্স২৪.কমের সাংবাদিক আলেকজান্ডার ক্যাপ্রন বিবিসি নিউজকে বলেন, এই ধরনের গুজবগুলো ছড়ানো হয় মূলত স্থানীয় কিছু ব্যক্তিদের দ্বারা৷ যারা ভোক্তাদের দিয়ে নিজেদের স্থানীয় পণ্য কেনাতে চায়।

মূলত, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রমাণ ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিও এবং তথ্যের আলোকে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের চালের একটি তথ্য ছড়িয়ে আসছে। যার সাথে বৈজ্ঞানিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বরং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশেই যখন প্লাস্টিক চালের কোনো দাবি উঠেছে তখনই দেখা গেছে, সেটি গুজবে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ প্লাস্টিকের চালের কোনো অস্তিত্ব নেই।

সুতরাং, প্লাস্টিকের চাল বিষয়টি পুরোটাই একটি গুজব। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের চালের কোনো অস্তিত্ব নেই।

তথ্যসূত্র

BBC News: Why people believe the myth of ‘plastic rice’

BBC News: Nigeria rice ‘contaminated, not plastic’ – NAFDAC

France24.com: INVESTIGATION: “Plastic rice” (Part 1): the videos tricking African social media

Thenewsminute.com: Fact check: Is there such a thing called ‘plastic’ rmedia

snopes.com: Plastic Rice from China

Foodsafetynews.com: So-called plastic rice could have been the real deal, but stored for a decade
Banglatribune.com: প্লাস্টিকের চাল আছে, নাকি নেই?

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img