ব্রাজিলে গত মার্চ মাসে ভূমিধসের ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনটি ভিন্ন ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

ছবিগুলো ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সময় টিভি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইনকিলাব, ভোরের কাগজ, বৈশাখী টিভি।

একই দবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো গত মার্চ মাসের ঘটনার নয় বরং পূর্বে ব্রাজিলের ভূমিধসের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবিকে উক্ত ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ছবি যাচাই ০১

এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সময় টিভি, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Reuters এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘Brazil downpours leave at least 50 dead as rescue ship arrives’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি ২২ ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিলের সাও সেবাস্তিয়াওয়ে ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসের স্থানে একজন ফায়ার ফাইটার এবং অপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকার ছবি। রয়টার্সের পক্ষে ছবিটি তুলেছেন আমান্ডা পেরোবেলি।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি গত মার্চের নয়।
ছবি যাচাই ০২

এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনকিলাব, ভোরের কাগজ।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম BBC এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের পহেলা ডিসেম্বর ‘Deadly landslide engulfs motorway in Brazil’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ব্রাজিলের পারানা রাজ্যের গুয়ারাতুবা এলাকায় ভারী বর্ষণে একটি রাস্তায় ভূমিধসের ঘটনায় ধারণকৃত।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে ফ্রান্স ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম France 24 এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের পহেলা ডিসেম্বর ‘Deadly landslides cut off access to major Brazilian grains port’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রাজিলের সেসময়ের ভূমিধসের এই ছবিটি সে বছরের ২৯ নভেম্বর তোলা হয়।
অর্থাৎ, প্রচারিত ছবিটি সাত মাস পূর্বের ভিন্ন ঘটনার৷
ছবি যাচাই ০৩

এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বৈশাখী টিভি।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম AP এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি ‘Rain-fed landslides, flooding kill at least 19 in Brazil’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি ব্রাজিলের সাও পাওলো রাজ্যে ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসে বাড়িঘরের ধ্বংসস্তুপ থেকে ফায়ার ফাইটাররা বাসিন্দাদের খোঁজার সময়ের ছবি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ছবিটি এক বছরেরও বেশি সময়ের পুরোনো।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি বরং কিছু গণমাধ্যমে ছবিগুলো সংগৃহীত, কোনো কোনো গণমাধ্যমে ছবির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো গত মার্চে ব্রাজিলের ভূমিধসের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত মার্চে ব্রাজিলে ভূমিধসের ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্রাজিলে ভূমিধসের পুরোনো তিনটি ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও উল্লেখ করা হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো ব্রাজিলের গত মার্চে ভূমিধসের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে কঙ্গোতে ভারী বর্ষণে বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে একাধিক পুরোনো ছবি ব্যবহার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ব্রাজিলে গত মার্চের ভূমিধসের ঘটনায় গণমাধ্যমে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।