সদ্য সমাপ্ত হলো ২০২২ সাল। প্রায় চারিদিকেই চলছে বিদায়ী সালের নানা ধরণের হিসাব-নিকাশ। বিদায়ী সালে বছর জুড়ে ছিলো নানান ধরণের আলোচিত ঘটনাসমূহ। বৃহৎ পরিসরের তথ্যের এই ভাণ্ডারে বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা এবং ভুল তথ্যের ও যেনো কমতি ছিলো না। বাংলাদেশের অন্যতম ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারও বছর জুড়ে ছড়ানো বিভিন্ন গুজব, বিভ্রান্তি ও মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে সর্বমোট ১৪০০টি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ইতিমধ্যে একটি জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ০৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর থেকে পাওয়া পাওয়া এক তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫২.৮ মিলিয়ন। অর্থাৎ, বাংলাদেশে ৫ কোটির ও বেশি সংখ্যক মানুষ সামাজিক যোগাযোগের এই জনপ্রিয় মাধ্যমটি ব্যবহার করে থাকেন। নেটিজেনদের অধিক সচেতনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রথম হিসেবে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশের পাশাপাশি একটি ডিজিটাল ব্যানারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিউমর স্ক্যানারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রচার করা হয়। যাতে নেটিজেনরা সহজে সত্য তথ্যটি অনুধাবন করতে পারে এবং ভুল তথ্য শেয়ারের পূর্বে তা যাচাই করতে পারে।
রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে মাসভিত্তিক সর্বাধিক প্রতিক্রিয়া (রিয়েকশন) পাওয়া কয়েকটি ‘ফেসবুক কন্টেন্ট’ এই প্রতিবেদেনটির মূল আলোচ্য বিষয়।
১. জার্মানির এক টানেলের এডিটেড ছবি বঙ্গবন্ধু টানেল দাবিতে প্রচার
২০২২ সালের শুরুতে (জানুয়ারিতে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে “বঙ্গবন্ধু টানেল। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে স্থাপিত দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম টানেল। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।” শীর্ষক শিরোনামে একটি টানেলের ছবি দাবি সম্বলিত পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে তথ্যটি যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে, আলোচিত ছবিটি বঙ্গবন্ধু টানেলের নয় বলে জানা যায়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি জার্মানির একটি টানেল এবং কর্ণফুলী নদীর একটি ছবির সমন্বয়ে এডিট করা হয়েছে।
অর্থাৎ, জার্মানির একটি টানেলের ছবির সাথে কর্ণফুলী নদীর ছবির সমন্বয়ে তৈরি একটি এডিটেড ছবিকে বঙ্গবন্ধু টানেলের ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছিলো; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
২. একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বরাতে প্রচারিত বক্তব্যটি মিথ্যা
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে “বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর-২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো নির্বাচন হয় নাই। হয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিনতাইয়ের মহোৎসব। ক্ষমতাসীন দলের কাছে নির্বাচন কমিশন ছিল সুবিধাভোগী ক্রীতদাস। এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনী ছিল পাহারাদার” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট এর বক্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের এমন কোনো বক্তব্যের হদিস খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের বক্তব্য দাবিতে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটির সূত্রপাত খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বরে M S Afzal নামের একটি ফেসবুক আইডি হতে প্রকাশিত একটি পোস্টে উক্ত লেখাটি হুবহু প্রচার করা হয়েছিলো। তথ্যসূত্র বিহীন এই লেখাটিই ২০১৯ সালের পর থেকে পরবর্তী সময়ে কপি-পেস্ট হয়ে প্রচার হতে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে, কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসুত্র ছাড়া “বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর-২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো নির্বাচন হয় নাই” শির্ষক বক্তব্যটি বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বক্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছিলো, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
৩. ভিন্ন ঘটনার দুইটি ছবি সংযুক্ত করে ফেসবুকে বানোয়াট গল্প প্রচার
২০২২ সালের মার্চ মাসে “একটা অপারেশন হয়ছিলো। যে অপারেশনটি করতে দীর্ঘ ৭ ঘন্টা লেগেছিল। সদ্য জন্মানো বাচ্চা শিশুটি তার মৃত মায়ের হাতের উপরে। এবং তার পাশেই ডাক্তার কাঁদছেন” শীর্ষক শিরোনামে দুইটি ছবি সংযুক্ত করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিলো।
তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া উক্ত ঘটনাটি ভিত্তিহীন। এছাড়া, প্রচারিত ছবি দুইটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার এবং পাশে মাস্ক পরিহিত ব্যক্তিটিও কোনো ডাক্তার নন।
মূলত, ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে ইন্সটাগ্রাম ও ফেসবুকে প্রচারিত ভিন্ন দুই ফটোগ্রাফারের তোলা ছবির সঙ্গে বানোয়াট একটি গল্প যুক্ত করে উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিলো।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
পরবর্তীতে, রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন প্রকাশের প্রায় ৭ দিন পর অর্থাৎ ২০ মার্চ তারিখে দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘সময় টিভি’ একই ছবি ব্যবহার করে “২ মিনিটের মাতৃত্বের স্বাদ পেতে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন মা!” শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রচার করে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সময় টিভির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মূলত, আলাদা দুইটি ছবি সংযুক্ত করে বানোয়াট একটি গল্প মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘সময় টিভি’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে এবং তা ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের কুইক ফ্যাক্ট প্রতিবেদনটি দেখুনঃ ভিন্ন ঘটনার দুইটি ছবি যুক্ত করে গণমাধ্যমে বানোয়াট সংবাদ প্রচার
৪. ছবিটি মহানবী (সাঃ) এর জুব্বার নয়, এটি মিশরের পিরামিড থেকে পাওয়া একটি পোশাক
গত বছরের এপ্রিল মাসে “বিশ্ব মানবতার মহান শিক্ষক মহানবী (সঃ) এর জোব্বা মোবারক” শীর্ষক শিরোনামে একটি জামা/জুব্বার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
তবে, প্রচারিত ছবিতে থাকা বস্তুটি হযরত মুহম্মদ (সা) এর জুব্বার ছবি নয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এটি ২০০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দে মিশরের পিরামিড থেকে পাওয়া একটি জামা।
মূলত, ২০০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দে মিশরের পিরামিড থেকে পাওয়া একটি জামাকে হযরত মুহম্মদ (সা) এর জুব্বা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছিলো, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
৫. ভারতে হিজাব বিতর্কে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়ে ভাইরাল তরুণী মুসকানের মৃত্যুর খবরটি মিথ্যা
ভারতে কর্ণাটকে হিজাবকাণ্ডে প্রতিবাদী তরুণী মুসকান খান। আলোচিত এই ঘটনা ঘটার পরবর্তী সময়ে কে না চেনে তাকে। হিজাব পরিহিত অবস্থায় একদল ব্যক্তি ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগানে ছাত্রীটির দিকে এগিয়ে গেলে তিনিও দুই হাত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এই ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোড়ন তৈরি করে ফেলেছিলো। আলোচনা-সমালোচনার যেনো কমতি ছিলো না কোনো অংশে।
ঘটনা পরবর্তী সময়ে মুসকান খান নামে হিজাবকাণ্ডে প্রতিবাদী এই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে দাবিতে অসংখ্য পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পরেছিলো।
তবে, অনুসন্ধানে মুসকান খানের মৃত্যুর সংবাদের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বরং মুসকানের মৃত্যু দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে এটি প্রায় ৬ বছর পূর্বে কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক শিক্ষার্থীর পুরোনো ছবি।
মূলত, ২০১৭ সালে ভারতের দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার একটি কলেজে নিরাপত্তা বাহিনীর কথিত ‘হাইহান্ডেনেস’-এর বিরুদ্ধে কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ঐ বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। উক্ত সংঘর্ষে আহত এক শিক্ষার্থীর পুরোনো একটি ছবিকে হিজাবকাণ্ডে প্রতিবাদী তরুণী মুসকানের মৃত দেহের ছবি দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিলো, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
৬. পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্থাপন করেননি
পদ্মা সেতু বা পদ্মা বহুমুখী সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এই সেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা সংযুক্ত হয়েছে। সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়।
গত বছর ০৫ জুন (রবিবার) তারিখে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, ‘পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্থাপন করেননি বরং ২০০১ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মূলত, ১৯৯৮-১৯৯৯ সালের তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বপ্রথম পদ্মা সেতুর প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় এবং ২০০১ সালের ০৪ জুলাই পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে, বিএনপি সরকার ক্ষমতা আসার পর ২০০৪ সালে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার মাধ্যমে সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়ে থাকলেও কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
৭. ছবিটি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী তরুণী প্রিসিলা ফাতেমার নয়
গত বছরের জুলাই মাসে “আমাদের বাংলাদেশি মেয়ে প্রিসিলা যখনমিয়া খলিফা হয়ে যায়।” সহ ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি শিরোনামে নিউয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশী মেয়ে প্রিসিলা ফাতেমার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত শিরোনামে প্রচারিত ছবিটি প্রিসিলা ফাতেমার নয় বরং এটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট বা বিকৃত করা একটি ছবি।
মূলত, পর্ণ তারকা মিয়া খলিফা ২০১৯ সালে তার অফিশিয়াল ইন্সট্রাগ্রাম একাউন্টে ওয়েস্ট হ্যাম ফুটবল ক্লাবের জার্সি পরিহিত একটি ছবি পোস্ট করে। সেই ছবিটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিয়া খলিফার মুখাবয়বের স্থলে প্রিসিলা ফাতেমার মুখ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বিকৃত করে ছবিটিকে প্রিসিলা ফাতেমার ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
৮. আকাশে শ্রীকৃষ্ণের অলৌকিক আগমনের ভিডিওটি এডিট করা
২০২২ সালের আগষ্ট মাসের শেষের দিকে ‘শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনে আকাশে শ্রীকৃষ্ণের আগমন’ দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে ভিডিওটি সত্য নয় বলে জানা যায়, বরং ভিডিওটি ভিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এডিট করা।
মূলত, পর্তুগীজ এক শিল্পী কর্তৃক ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় নির্মিত একটি ভিডিওকে আকাশে শ্রীর্কৃষ্ণের জন্মদিন ‘জন্মাষ্টমিতে’ শ্রীকৃষ্ণের অলৌকিক আগমনের বাস্তব ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি বিকৃত করা।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
৯. ১১১টি দেশকে পেছনে ফেলে নয়, তাকরিম তৃতীয় হয়েছেন নিজ বিভাগে
গত বছরের “সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১১১টি দেশের মধ্যে/ দেশের সাথে/ দেশকে পেছনে ফেলে/ দেশকে হারিয়ে বাংলাদেশের হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যপকভাবে প্রচার হয়েছিলো।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে, সৌদি আরবে বাদশাহ আব্দুল আজিজ কোরআন প্রতিযোগিতার ৪২ তম আসরে বাংলাদেশি হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম ১১১ দেশের ১৫৩ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে বা হারিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন দাবিটি পুরোপুরি সত্য নয় বরং উক্ত কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১১ টি দেশের ১৫৩ জন প্রতিযোগী ৫ টি বিভাগে বিভক্ত হয়ে অংশগ্রহণ করেছেন এবং প্রতিটি বিভাগে আলাদাভাবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঘোষণা করা হয়েছে। তার মধ্যে তাকরিম একটি বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন।
অর্থাৎ, সৌদি আরবে কুরআন প্রতিযোগিতায় ১১১ টি দেশের ১৫৩ জন প্রতিযোগীকে হারিয়ে বা পেছনে ফেলে বাংলাদেশের সালেহ আহমেদ তাকরিম তৃতীয় হওয়ার দাবিতে দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি আংশিক মিথ্যা।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
১০. সাকিবকে নিয়ে কেন উইলিয়ামসনের উক্ত উক্তিটি ভুয়া
গত বছরের অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে “আমাদের দলে সাকিব আল হাসানের মতো একজন অলরাউন্ডার থাকলে আমরা আরো আগেই বিশ্বকাপ জিততে পারতাম: কেন উইলিয়ামস” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছিলো।
তবে অনুসন্ধানে, সাকিব আল হাসানকে নিয়ে কেন উইলিয়ামসনের উক্ত উক্তিটির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, উক্তিটি ভিত্তিহীন এবং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই এটি ছড়ানো হচ্ছে।
মূলত, কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে “আমাদের দলে সাকিব আল হাসানের মতো একজন অলরাউন্ডার থাকলে আমরা আরো আগেই বিশ্বকাপ জিততে পারতাম” শীর্ষক দাবিতে কেন উইলিয়ামনের উদ্ধৃতি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত তথ্যটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
১১. ব্রাজিলের ৬৬ বছর ধরে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে কোন ম্যাচ না হারার দাবিটি মিথ্যা
২০২২ সালের আলোচিত ঘটনাসমূহের মধ্যে কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন ছিলো অন্যতম। গত বছরের ২০ নভেম্বর কাতারে শুরু হয় ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। প্রায় এক মাসের ফুটবল মহারণ শেষে ১৮ ডিসেম্বর ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে এই আসরের। ফিফা বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে আসর শুরুর পূর্বে থেকে বিশ্বকাপ ও অংশগ্রহণকারী দলকেন্দ্রিক নানা গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপ বিষয়ে সর্বমোট ১১১টি গুজব শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত নভেম্বরে “গত ৬৬ বছরে ধরে বিশ্বকাপের group stage এ কোনো ম্যাচ হারেনি ব্রাজিল এবং গত ৬৪ বছরে ব্রাজিল দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে কখনও তৃতীয় ম্যাচের দিকে তাকানো লাগে নাই!” শীর্ষক শিরোনামে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর’ এর ফেসবুক পেজে প্রচার করা হয়েছিলো।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,গত ৬৬ বছর ধরে ব্রাজিলের গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচ না হারা ও ৬৪ বছর ধরে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে তৃতীয় ম্যাচের উপর নির্ভর না করার তথ্যটি সঠিক নয় বরং গত ২৪ বছরে গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচ হারেনি ব্রাজিল।
মূলত, কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের টানা দুই ম্যাচ জয়ের প্রেক্ষিতে ফেসবুকে ৬৬ বছরে ধরে বিশ্বকাপের group stage এ ব্রাজিল কোনো ম্যাচ হারেনি ও গত ৬৪ বছরে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে কখনও তৃতীয় ম্যাচের উপর নির্ভর করতে হয়নি শীর্ষক দুইটি তথ্য প্রচার করা হয়েছিলো। তবে অনুসন্ধানে, সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নরওয়ের কাছে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরেছিল ব্রাজিল। এছাড়া বিগত দুই বিশ্বকাপে (২০১৪ ও ২০১৮) দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে ব্রাজিলকে তৃতীয় ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
১২. ভিডিওটি মেসির মাকে জড়িয়ে ধরার মুহূর্তের নয়
গত বছরের শেষ মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় লিওনেল মেসির দল আর্জেন্টিনা। ম্যাচ জয়ের পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মাঠে উদযাপনের দৃশ্য দেখে আনন্দিত ছিলো গ্যালারি এবং টেলিভিশন দর্শকরাও।
ম্যাচ জয় পরবর্তী সময়ে “বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির নিজ মাকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ব্যপকভাবে প্রচার হয়েছিলো।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে থাকা নারী মেসির মা নন বরং তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের রাঁধুনি।
মূলত, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর মাঠে মাকে মেসির জড়িয়ে ধরার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ঐ নারী মেসির মা নন। বিশ্বকাপ ফাইনালের পুরো দিন মেসির মা আর্জেন্টিনার পার্পল কালারের জার্সি পরে ছিলেন, কিন্তু ভিডিওটিতে থাকা নারী আকাশী নীল জার্সি পরে ছিলেন। তাছাড়া ওই নারীর হাতে একটি ট্যাটু থাকলেও মেসির মায়ের হাতে কোনো ট্যাটু নেই। এছাড়াও, আর্জেন্টিনার একাধিক মূলধারার গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে যে ভিডিওতে থাকা নারী আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের রাঁধুনি অ্যান্টোনিয়া ফারিয়াস। এছাড়া রিউমর স্ক্যানার টিমের নিজিস্ব অনুসন্ধানেও নিশ্চিত হয় ভিডিওতে থাকা নারী আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের রাঁধুনি অ্যান্টোনিয়া ফারিয়াস ই ছিলেন।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে।
গুজবের বিরুদ্ধে চলমান এ লড়াইয়ে পাঠকদের অধিকতর সচেতন করার প্রয়াসে রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ডিজিটাল ব্যানার যেকোনো (মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, ভূল তথ্য) বিষয়ে অতি সহজে বুঝতে অধিকতর কার্যকরী।