গণমাধ্যমে ভুল: ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসের পরিসংখ্যান

চলতি বছরের (২০২৪) প্রথম ছয় মাসে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ভুল সংবাদ প্রকাশের হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকগুলোয় গণমাধ্যমের ভুলগুলো বিশ্লেষণ এবং পূর্বের পরিসংখ্যানের সাথে তুলনা করে এমন তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে। 

পরিসংখ্যান কী বলছে?

রিউমর স্ক্যানার চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানে দেশের ১৬৪টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো যাচাই করেছে। এই সংবাদমাধ্যমগুলোতে সর্বোচ্চ ২০টি থেকে সর্বনিম্ন একটি ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া গেছে।  চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভুল না পাওয়ায় পূর্বের পরিসংখ্যানে (২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসের) থাকা ৫৮টি সংবাদমাধ্যমকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ভুল তথ্যের প্রমাণ মিলেছে এমন আরো ১৮টি সংবাদমাধ্যম নতুন করে যুক্ত হয়েছে এই পরিসংখ্যানে। সব মিলিয়ে ১৬৪টি সংবাদমাধ্যমে থাকা ৬৮১টি প্রতিবেদন যাচাই করে ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে এবার। 

পরিসংখ্যানে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচারের দরুন প্রথম স্থানে রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ‘কালবেলা’। ভুল তথ্য ছিল এমন শনাক্ত হওয়া ৭৮টি প্রতিবেদনের মধ্যে ২০টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মূলধারার এই সংবাদমাধ্যম। 

Image: Rumor Scanner 

গণমাধ্যমে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে মার্চ মাসে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা গেছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে জাতীয় বিষয়ে। পরিসংখ্যানে বেসরকারি গণমাধ্যমের পাশাপাশি ভুল সংবাদ প্রচারের তালিকায় যেমন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও রয়েছে তেমনি বাদ যায়নি বিদেশী গণমাধ্যমও। 

  • ১৬৪টি গণমাধ্যমের অবস্থান দেখুন এখানে
  • ভুল সংবাদগুলোর তালিকা দেখুন এখানে 

মার্চে ভুল তথ্য বেশি

গণমাধ্যমে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৭৮টি প্রতিবেদনকে ভুল হিসেবে শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২২টি ভুল তথ্য (২৮ শতাংশ) শনাক্ত হয়েছে মার্চ মাসে। এপ্রিলে শনাক্ত ১৪টি (১৮ শতাংশ)। সবচেয়ে কম ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে, ৭টি।

মিথ্যা আর বিভ্রান্তিকর সংবাদের ছড়াছড়ি  

২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) মোট ৭৮টি ঘটনায় ৪১টি মিথ্যা, ৩৫টি বিভ্রান্তিকর এবং ০২টি বিকৃত তথ্যকে সত্য তথ্য হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এসব ঘটনায় মিথ্যা তথ্য প্রচারের হার ছিল প্রায় ৫২ শতাংশ। তাছাড়া, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর হারও নেহায়েত কম নয়, প্রায় ৪৫ শতাংশ।  

কালবেলা যেভাবে প্রথম  

গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের এই পরিসংখ্যানের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে দেশের অন্যতম জাতীয় দৈনিক কালবেলা। সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজে প্রকাশিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২০টি ভুল সংবাদ প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাঁচটি ভুল সংবাদ প্রচার হয়েছে ধর্মীয় বিষয়ে, শতকরা হিসেবে যা প্রায় ২৫ শতাংশ।  

ক্যাটাগরি বা বিষয়ের বাইরে ধরনভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় কালবেলার সবচেয়ে বেশি ভুল ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (৯), যা মোট ভুলের প্রায় ৪৫ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে কালবেলা সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন ঘটনার ভুল ছবি ব্যবহার করেছে পাঁচটি, যা মোট ভুলের ২৫ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রকাশের হার প্রায় ৩০ শতাংশ।

রিউমর স্ক্যানার কর্তৃক প্রকাশিত ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসের পরিসংখ্যানেও যৌথভাবে প্রথম অবস্থানে দেখা গেছে এই সংবাদমাধ্যমকে।  

কোন ক্যাটাগরিতে বেশি ভুল?  

গণমাধ্যমগুলোর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রচারিত ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে জাতীয় বিষয়ে (১৪টি), শতকরার হিসেবে যা ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে (১৩টি)। খেলাধুলা ও ধর্মীয় বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ছিল ১১টি, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর বাইরে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে ৯টি, রাজনীতি বিষয়ে ৭টি, বিনোদন বিষয়ে ৬টি, শিক্ষা বিষয়ে ৩টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ২টি ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও প্রতারণা বিষয়ে সমানসংখ্যক (একটি করে) ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।   

কী ধরনের ভুল বেশি?  

ধরনভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গণমাধ্যমগুলোয় সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (৪১টি), যা মোট ভুলের ৫২ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন ঘটনার ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ১৯টি, যা শতকরা হিসেবে ২৪ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে ১৮টি।   

কোন খবরে বেশি ভুল? 

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৭৮টি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটি বিষয়ে অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞার খবরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৭২) গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য প্রচার করতে দেখা গেছে। একটি খবরে অন্তত ১০টি গণমাধ্যম ভুল সংবাদ দিয়েছে এমন বিষয় পাওয়া গেছে ১৮টি। এসব বিষয়ের মধ্যে জাতীয়, আন্তর্জাতিক, ধর্মীয় এবং খেলাধুলা ক্যাটাগরিতে তিনটি করে ভুল সংবাদ শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, রাজনীতি ক্যাটাগরিতে একটি, শিক্ষায় একটি, বিনোদনে দুইটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একটি এবং পরিবেশ ও জলবায়ু ক্যাটাগরিতে একটি করে ভুল সংবাদ পাওয়া গেছে। 

ক্রমিকফ্যাক্টচেকভুল তথ্য প্রদানকৃত গণমাধ্যম সংখ্যা 
০১সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি প্রশাসন৭২
০২‘পঞ্চায়েত-২’ সিরিজের অভিনেত্রী আঁচল তিওয়ারির মৃত্যুর গুজব গণমাধ্যমে৫৪
০৩সমর্থককে সাকিবের চড় মারার ভিডিওটি ভোটের দিনের নয়৫৩
০৪ফেসবুক ডাউনের ঘটনায় ব্যবহারকারীদের ‘চিল’ করতে বলেননি মার্ক জাকারবার্গ৫০
০৫পুরোনো ভিডিও প্রচার করে কাবায় তারাবিতে মুসুল্লিদের দীর্ঘ স্রোতের ভুল দাবি গণমাধ্যমে৫০

কোন ইস্যুতে বেশি ভুল? 

চলতি বছরের ০৭ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। রিউমর স্ক্যানার গত জানুয়ারিতে এই নির্বাচন কেন্দ্রিক চারটি ভুল সংবাদ শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে। ফ্যাক্টচেকগুলো দেখুন , , , । চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একক কোনো ঘটনা বিবেচনায় এই নির্বাচন নিয়েই সর্বোচ্চ ভুল সংবাদ প্রচার করেছে গণমাধ্যমগুলো। এছাড়া, অযোধ্যার রাম মন্দির উদ্বোধন ইস্যু, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ ইস্যু এবং রাসেল’স ভাইপার ইস্যুতে তিনটি করে ভুল সংবাদ শনাক্ত করা হয়েছে। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ অপহরণ ইস্যুতে গণমাধ্যমে প্রচারিত দুইটি সংবাদকে ভুল হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু ইস্যুতে একটি ভুল সংবাদ প্রচার করেছে গণমাধ্যম।

কাদের বিষয়ে বেশি ভুল? 

জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান চলতি বছর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। খেলোয়াড় পরিচয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেও চলতি বছর বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের খবরে এসেছে তার নাম। রিউমর স্ক্যানারের চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, একক কোনো ব্যক্তি হিসেবে সাকিবের বিষয়েই সবচেয়ে বেশি (৩টি) ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে। এই তিনটির মধ্যে একটি রাজনীতি কেন্দ্রিক হলেও বাকি দুইটি খেলাধুলা বিষয়ক। ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো দেখুন , , ।   এর বাইরে গণমাধ্যমের সংবাদের মাধ্যমে একটি করে ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তিরা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক অর্থ মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক সংসদ সদস্য সায়েদুল হক সুমন, সংগীত শিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় জাহানারা আলম, জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় তামিম ইকবাল, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার শোয়েব মালিক, ভারতের টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার কুসাল মেন্ডিস, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার কাকা এবং ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। এছাড়া স্থাপনা হিসেবে সবচেয়ে বেশি (২টি করে) ভুল সংবাদের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল ও ভারতের বাবরি মসজিদ। এছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিষয়ে একটি ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও ভুল তথ্যের প্রচার

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’ এর ওয়েবসাইটে প্রথম ছয় মাসে একটি ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। গত মার্চে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৩০০ টন পেঁয়াজ আমদানি শীর্ষক দাবিতে একটি সংবাদ গণমাধ্যমটি প্রচার করে। পরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সে সময় ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করা হয়নি। তবে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোনো ভুল তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রচারের প্রমাণ মেলেনি।

বিদেশী গণমাধ্যমও বাদ যায়নি

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দুইটি ভুল সংবাদের প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

জালালউদ্দিন হায়দারের তোলা ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেওয়ার সময়কার একটি ছবিকে সে বছরের ৭ মার্চের ছবি দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক এখানে। 

২০২০ সালে ইরানে একটি বিমান দুর্ঘটনার ছবিকে গত মে মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের বিধ্বস্ত অবস্থার ছবি দাবিতে বিবিসি বাংলা সংবাদ প্রচার করে। এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে। 

তবে ‘ডয়চে ভেলে বাংলা’ এবং ‘ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা’য় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোনো ভুল তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রচারের প্রমাণ মেলেনি।   

৫৮ গণমাধ্যম বাদ, নতুন করে যুক্ত ১৮টি

গণমাধ্যমে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভুল তথ্যের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, গত বছর অন্তত একটি সংবাদে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে, তবে এ বছর একটিও ভুল তথ্য সম্বলিত সংবাদ পাওয়া যায়নি এমন ৫৮টি গণমাধ্যম রয়েছে। এসব গণমাধ্যমকে এবারের পরিসংখ্যান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ এই তালিকায় দ্য ডেইলি স্টার, ডয়চে ভেলে বাংলা, ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা, বাংলা ট্রিবিউন, নিউ এজের মতো মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোও রয়েছে। পূর্বের পরিসংখ্যানে ছিল না, তবে এ বছর ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে, নতুন করে এমন ১৮টি গণমাধ্যম যুক্ত হয়েছে পরিসংখ্যানে। 

Image: Rumor Scanner

৮১ শতাংশ গণমাধ্যমে উন্নতির চিত্র 

রিউমর স্ক্যানার ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যানের সাথে ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১১৭টি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে পূর্বের পরিসংখ্যানের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচারের হার হ্রাস (শতকরা ৮১ শতাংশ প্রায়) পেয়েছে। উন্নতির এই তালিকায় সবার উপরে ৮৯ শতাংশ হ্রাসের হার নিয়ে অবস্থান করছে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। গণমাধ্যমটি গত বছরের শেষ ছয় মাসে  ০৯টি ভুল সংবাদ প্রচার করলেও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রচার করেছে একটি ভুল সংবাদ। এছাড়া, ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হারে ভুলের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এমন গণমাধ্যমের তালিকায় রয়েছে প্রথম আলো, সময় টিভি, আজকের পত্রিকা, মানবজমিন, যমুনা টিভি, চ্যানেল২৪, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, ঢাকা ট্রিবিউন, ঢাকা পোস্ট, একাত্তর টিভি, বিডিনিউজ২৪, ডেইলি অবজারভার, ডেইলি সান, কালের কণ্ঠ, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ইউএনবি, পূর্ব পশ্চিম বিডি, সময়ের আলো, রাইজিং বিডি, বাংলাদেশ পোস্ট, সংবাদ, সমকাল, সাম্প্রতিক দেশকাল, নিউজজি২৪, দৈনিক সংগ্রাম, বিবিএস বাংলা, এশিয়ান টিভি, বাংলাদেশ জার্নাল, রেডিও টুডে নিউজ, ভোরের ডাক, নাগরিক টিভি, ডেইলি মেসেঞ্জার, সময় জার্নাল, চ্যানেল আই, আমাদের সময়, বার্তা২৪, আলোকিত বাংলাদেশ, বহুমাত্রিক, ইত্তেফাক, নিউজ নাউ২৪, জনবাণী, বিজনেস জার্নাল, দৈনিক সরোবর, সুখবর, নিউজ২৪, মানবকণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, এবিনিউজ২৪, ইনকিলাব, নয়া শতাব্দী, প্রতিদিনের সংবাদ, দৈনিক আমাদের সময়, বাহান্ন নিউজ, বাংলাদেশ টুডে, বাংলাভিশন, জাগোনিউজ২৪, বায়ান্ন টিভি, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, বাংলা ইনসাইডার, দেশ টিভি, ডেইলি বাংলাদেশ, স্বাধীন আলো, ২৪ লাইভ নিউজপেপার বাংলা, বাংলাদেশ প্রতিদিন, সোনালী নিউজ, দৈনিক করতোয়া, বণিক বার্তা, শেয়ার বিজ, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, সংবাদ প্রকাশ, ফ্রিডম বাংলা নিউজ, বিবার্তা২৪, এসএ টিভি, আজকের দর্পণ, একুশে সংবাদ, বাংলাদেশ মোমেন্টস, দৈনিক শিক্ষা, স্টার সংবাদ, পদ্মা নিউজ, ডেল্টা টাইমস, গ্লোবাল টিভি, সানবিডি২৪, বিএনএ নিউজ২৪, প্রবাসীর দিগন্ত, পদ্মা টাইমস২৪। পুরো তালিকা দেখুন এখানে 

২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে শীর্ষ পাঁচে ছিল কিন্তু এবারের পরিসংখ্যানে শীর্ষ পাঁচের তালিকায় আসেনি, এমন গণমাধ্যমের মধ্যে রয়েছে একাত্তর টিভি ও দৈনিক ইত্তেফাক। দুইটি গণমাধ্যমেরই ৬৭ শতাংশ হারে ভুল সংবাদ প্রচারের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। 

শীর্ষ পাঁচের সকল গণমাধ্যমেই উন্নতির চিত্র

এবার তালিকার শীর্ষ পাঁচে অবস্থান করছে ১২টি গণমাধ্যম। তবে এই সবগুলো গণমাধ্যমেরই পূর্বের পরিসংখ্যানের তুলনায় ভুল সংবাদ প্রচারের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। এসব গণমাধ্যমে সর্বোচ্চ ৬৭ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ পর্যন্ত ভুল সংবাদ প্রচারের হার হ্রাস পেয়েছে। গণমাধ্যমগুলোর ভুল সংবাদ প্রচারের হার হ্রাস পাওয়ার শতকরা পরিমাণ যথাক্রমে চ্যানেল২৪ ৬৭ শতাংশ, সময় টিভি ৬৩ শতাংশ, ঢাকা পোস্ট ৫৮ শতাংশ, ডেইলি বাংলাদেশ ৫৮ শতাংশ, কালবেলা ৩৯ শতাংশ, জনকণ্ঠ ৩৬ শতাংশ, জুম বাংলা ৩৬ শতাংশ, যুগান্তর ৩৩ শতাংশ, আরটিভি ২৯ শতাংশ, ডিবিসি নিউজ ২৮ শতাংশ, বিডি২৪রিপোর্ট ২৫ শতাংশ এবং যায়যায়দিন ১০ শতাংশ। 

১৪ গণমাধ্যমের অবনমন

রিউমর স্ক্যানার ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যানের সাথে ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৪টি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে পূর্বের পরিসংখ্যানের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচারের হার বৃদ্ধি (শতকরা সাড়ে নয় শতাংশ প্রায়) পেয়েছে। 

অবনমনের এই তালিকায় সবার উপরে ২০০ শতাংশ হার নিয়ে অবস্থান করছে যৌথভাবে এখন টিভি, নতুন সময়, তরঙ্গ নিউজ এবং বাঙ্গি নিউজ। এছাড়া, ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হারে ভুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন গণমাধ্যমের তালিকায় রয়েছে বিবিসি বাংলা, এটিএন নিউজ, দৈনিক গণমুক্তি, সংবাদ সারাবেলা, নিউজবাংলা২৪, মাই টিভি, ফেস দ্যা পিপল, অর্থ সংবাদ এবং প্রবাস জার্নাল। পুরো তালিকা দেখুন এখানে

প্রথম ছয় মাসে শীর্ষ পাঁচে ছিল না কিন্তু এবার আছে এমন গণমাধ্যমের তালিকায় রয়েছে আরটিভি, ডিবিসি নিউজ, যুগান্তর, যায়যায়দিন, জনকণ্ঠ এবং বিডি২৪রিপোর্ট। তবে এদের মধ্যে সকলেরই পূর্বের তুলনায় ভুল সংবাদ প্রচারের হার হ্রাস পেয়েছে।   

আরো ১৪ গণমাধ্যমের অবস্থানের পরিবর্তন নেই

রিউমর স্ক্যানার ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যানের সাথে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখেছে, পরিসংখ্যানের অধীনে থাকা ১৪টি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে ভুল সংবাদ প্রচারের হার হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়নি। এরা হলো সময়ের কণ্ঠস্বর (৬), ঢাকা রিপোর্ট২৪ (৫), বাংলাদেশ টাইমস (৫), বিজনেস বাংলাদেশ (৪), মত ও পথ (৪), খবরের কাগজ (৩), আমার সংবাদ (৩), বিজনেস ইনসাইডার (২), ডেইলি মিরর অব বাংলাদেশ (২), অধিকার বিডি (২), প্রাইম নিউজ (১), নিরাপদ নিউজ (১), স্টার গল্প (১), অধিকার.নিউজ (১)। এসব গণমাধ্যমে গত বছরের শেষ ছয় মাসে যে পরিমাণ ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেও একই পরিমাণ ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। 

ধরে রাখতে হবে উন্নতির চেষ্টা  

দেশের গণমাধ্যমগুলোয় ভুল তথ্য প্রচারের হার ক্রমশ কমে আসছে। উন্নতির এই চেষ্টা রিউমর স্ক্যানারের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পূরণে বড় এক সাফল্য বলে মনে করছি আমরা। গণমাধ্যমে ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান প্রকাশের উদ্দেশ্য একটাই, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করা। গণমাধ্যম তার আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলুক, এমনটা প্রত্যাশিত নয়। সেই লক্ষ্যে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। সংবাদ প্রকাশের পূর্বে একাধিক সূত্র থেকে ক্রসচেক করে নেওয়া, প্রয়োজনে মূল সূত্র থেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে পারে গণমাধ্যমগুলো। তবে কিছু সংবাদের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্রসচেক কিংবা প্রচলিত অনুসন্ধান কাজে দেয় না। এ ধরণের সংবাদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বেই ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাগুলোর সহায়তা নেওয়া একটি সাধারণ বিষয়। বাংলাদেশেও এ বিষয়টির চর্চা শুরু হতে দেখেছি আমরা। দেশের একাধিক গণমাধ্যম তথ্য যাচাইয়ে বিগত সময়ে রিউমর স্ক্যানারের সহায়তা নিয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতারই আশ্বাস দিয়ে থাকে। 

আরও পড়ুন

spot_img