সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি প্রশাসন

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনীর সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের রেশ ধরে মিয়ানমারের সাথে থাকা বাংলাদেশের সীমান্তগুলোতেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সীমান্তের এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি “অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা” শীর্ষক শিরোনামের একটি খবর প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এছাড়া, একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

উক্ত শিরোনাম ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন সময় টিভি (ফেসবুক), কালবেলা, ডিবিসি নিউজ, একাত্তর টিভি, কালের কণ্ঠ, আরটিভি, নিউজ২৪, দেশ টিভি, ইত্তেফাক, ডেইলি অবজারভার, এনটিভি, নয়া দিগন্ত, জাগোনিউজ২৪, জনকণ্ঠ, দেশ রূপান্তর, ইনকিলাব, দৈনিক বাংলা, দৈনিক আমাদের সময় (ফেসবুক), একুশে টিভি, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, ঢাকা পোস্ট, প্রতিদিনের সংবাদ, বিজয় টিভি, বাংলাভিশন, ঢাকা মেইল, ঢাকা টাইমস, এশিয়ান টিভি, রাইজিং বিডি, বাংলানিউজ২৪, নিউজবাংলা২৪, ঢাকা প্রকাশ, ভোরের কাগজ, নিউজজি২৪, নয়া শতাব্দী, আজকের দর্পণ, ডেইলি বাংলাদেশ, বায়ান্ন টিভি, বাংলাদেশ টাইমস, অধিকার.নিউজ, অধিকার বিডি, নতুন সময়, অর্থ সংবাদ, পিবিএ এজেন্সি, দৈনিক করতোয়া, আজকালের খবর, ডেল্টা টাইমস, জুম বাংলা, সময়ের কণ্ঠস্বর, অর্থসূচক, খবর সংযোগ, বিডি২৪লাইভ, বিডি২৪রিপোর্ট, ঢাকা রিপোর্ট২৪, সানবিডি২৪, বিবার্তা২৪, এবিনিউজ২৪, বাংলাদেশ মোমেন্টস, বার্তা বাজার, মর্নিং টাইমস, ফ্রিডম বাংলা নিউজ, ডেইলি মিরর অব বাংলাদেশ, বাংলা আউটলুক, বিএনএনিউজ২৪, সংবাদ সারাবেলা, বিজনেস ইনসাইডার, মত ও পথ, এমটিনিউজ২৪, প্রবাস জার্নাল, প্রাইম নিউজ, বাঙ্গি নিউজ, বাংলা২৪লাইভ নিউজপেপার। 

এছাড়া, ‘যমুনা টিভি’ও উক্ত শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করেছে। তবে পূর্বের সংবাদটির আর্কাইভ সংস্করণ পাওয়া যায়নি।  

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজসহ অন্যান্য পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে একই দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি প্রশাসন বরং মিয়ানমারের চলমান সহিংসতার ফলে নিরাপত্তাজনিত কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাকী রুটগুলোতে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারবেন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এর ওয়েবসাইটে গত ০৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে রুটে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সব পর্যটকবাহী জাহাজ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সেদিন (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেয়। 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরীর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী সব পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে চলাচলকারী জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে।

একই তথ্য জানিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে দ্য ডেইলি স্টার, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, প্রথম আলো।  

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, “অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা” শীর্ষক বা সমজাতীয় শিরোনামে প্রকাশিত দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোর খবরেও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে (কতিপয় গণমাধ্যমে কক্সবাজার থেকেও জাহাজ চলাচল বন্ধের দাবি এসেছে) জাহাজ চলাচল বন্ধ বিষয়ক তথ্যই এসেছে৷ তবে শিরোনামে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উল্লেখ থাকায় স্পষ্টতই বিভ্রান্তির সুযোগ রয়েছে, যার প্রমাণ গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একাধিক পোস্টে অসংখ্য নেটিজেনদের কমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এছাড়া গণমাধ্যমের চটকদার শিরোনামে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী শিরোনাম কপি পেস্ট করে নিজের অ্যাকাউন্ট ও পেজে পোস্ট করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইয়ামিন হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, সেন্টমার্টিন পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাকী রুটে পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবেন। 

একই তথ্য দিয়েছেন টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আদনান চৌধুরী। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। টেকনাফ রুটে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং এই রুটে অন্য কোনো উপায়েও চলাচল করা যাবে না। তবে, কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এই রুটে যেতে পারবে।

মূলত, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনীর সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের ফলে মিয়ানমারের সাথে থাকা বাংলাদেশের সীমান্তগুলোতেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সীমান্তের এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি “অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা” শীর্ষক শিরোনাম এবং একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি প্রশাসন। প্রকৃতপক্ষে, নিরাপত্তাজনিত কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাকী রুটে পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে, যে সকল গণমাধ্যম “অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা” শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের অধিকাংশই মূল সংবাদে সংশ্লিষ্ট রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধের বিষয়টি উল্লেখ করলেও সংবাদগুলোর শিরোনামের মাধ্যমেই অসংখ্য নেটিজেনকে বিভ্রান্ত হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

প্রসঙ্গত, গত ০৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেলের আঘাতে এক বাংলাদেশি ও একজন রোহিঙ্গার নিহত হওয়ার তথ্যকে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সুতরাং, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞার খবরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img