মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনীর সংঘাত চলছে। এরইমধ্যে গত ০৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হন দুইজন। নিহত দুইজনই বাংলাদেশের নাগরিক শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত পোস্ট দেখুন মাইটিভি (ফেসবুক) প্রতিদিনের বাংলাদেশ (ফেসবুক), বার্তা বাজার (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে স্থানীয় গণমাধ্যমের আরো কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেলের আঘাতে যে দুইজন নিহত হয়েছেন, তারা দুইজনই বাংলাদেশের নাগরিক নয় বরং একজন বাংলাদেশের এবং আরেকজন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক।
অনুসন্ধানের গত ০৫ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে “মর্টার শেলে বাংলাদেশে দুই জনের মৃত্যু, জনশূন্য হচ্ছে গ্রামগুলো” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘুমধুমের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘুমধুমের জলপাইতলীর বাদশা মিয়ার বাড়ির সাথেই তার জমিতে কাজ করছিলেন রোহিঙ্গা এক শ্রমিক। দুপুর আড়াইটার পর তিনি সেই বাড়িতে ভাত খেতে রান্নাঘরে যান। তখন মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়ে রান্নাঘরের ওপর। ঘটনাস্থলেই ওই রোহিঙ্গা শ্রমিক মারা যান। এতে গুরুত্বর আহত হোসনে আরাকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তারও মৃত্যু হয়।
একই দিনে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশিসহ নিহত ২” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। নিহত নারী জলপাইতলী গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা (৫৫)। নিহত রোহিঙ্গার নাম নবী হোসেন (৬৫)। তিনি বালুখালী আশ্রয়শিবিরের ৮-ই ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি হোসেনে আরার বাড়িতে ধানখেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে এসেছিলেন।
মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বিডিনিউজ২৪’ এর ওয়েবসাইটে পরদিন (০৬ ফেব্রুয়ারি) “ঘর ছাড়ার আতঙ্ক উসকে দিল মিয়ানমারের যুদ্ধের গোলায় মৃত্যু”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিহত রোহিঙ্গা ব্যক্তি উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৮/ইস্ট, ৭৩ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন।। তার এফসিএন নম্বর- ১৩০৬৩৪।
একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে সময় টিভি, আজকের পত্রিকা এবং মানবজমিন।
মূলত, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আবারও মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ গত ০৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হন দুইজন। নিহত দুইজনই বাংলাদেশের নাগরিক দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলেও রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, নিহত দুইজনের একজন বাংলাদেশের নাগরিক এবং একজন মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশের নাগরিকের নাম হোসনে আরা এবং মিয়ানমারের নাগরিকের নাম নবী হোসেন।
সুতরাং, গত ০৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেলের আঘাতে এক বাংলাদেশি ও একজন রোহিঙ্গার নিহত হওয়ার তথ্যকে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- BBC Bangla- মর্টার শেলে বাংলাদেশে দুই জনের মৃত্যু, জনশূন্য হচ্ছে গ্রামগুলো
- Prothom Alo- মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশিসহ নিহত ২
- Bdnews24- ঘর ছাড়ার আতঙ্ক উসকে দিল মিয়ানমারের যুদ্ধের গোলায় মৃত্যু
- Rumor Scanner’s own analysis