Home Blog Page 564

মাধ্যমিকের রসায়ন বই নিয়ে জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ কুমার রায়ের অভিযোগ: কী ঘটেছে আসলে? 

0

গত ১৪ এপ্রিল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে “জাফর ইকবাল স্যারের কুকৃতি” শীর্ষক ক্যাপশন ব্যবহার করে লাইভে (আর্কাইভ) আসেন নিজেকে নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন পাঠ্যবইয়ের লেখক দাবি করা বিদ্যুৎ কুমার রায়। 

বিদ্যুৎ কুমার রায় বলছেন, “আজকে আমি এক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কেমিস্ট্রি (রসায়ন) বইয়ের লেখক কে? সে বলে, জাফর ইকবাল। খুব কষ্ট লাগলো। বই লিখসি আমি, জাফর ইকবাল স্যার এক লাইনও লেখে নাই৷ অথচ জাফর ইকবাল স্যার আমার এই ভালো বইটা তার নাম দিয়ে একদম পপুলার হয়ে গেল। খুব কষ্ট লাগে।” 

জনাব বিদ্যুৎ কুমার রায় জানান, জাফর ইকবাল স্যার কমিটিতে ছিল। স্যারকে বলছিলাম, স্যার, আপনি নাম, মোবাইল নাম্বার সবকিছু বইয়ে লিখে দেন। যাতে বই পড়ে কোনো ছাত্র যদি কোনো জায়গায় সমস্যা হয় তাহলে যেন সরাসরি একদম মোবাইল নাম্বার দিয়ে কথা বলতে পারে। অনেক ছাত্রদের অনেক সমস্যা, বইয়ে অনেক ত্রুটি থাকে, বিভিন্ন ঝামেলা থাকে। জাফর ইকবাল স্যার বলেন, না এগুলো লেখার দরকার নাই। একটা জ্ঞান দিবো আমি। আমার মোবাইল নাম্বার দিতে চাইলাম। জাফর ইকবাল স্যার দিতে দেয় নাই। আমি বললাম, আমি ভাষানটেক সরকারি কলেজে আছি। আপনি কলেজের নাম লিখে দেন। কিন্তু তিনি বললেন, না বোর্ড দেয় না। আমি বললাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যখন আপনাকে দিয়ে বলছে বই লেখার কথা, তখন কক্সবাজারে শিক্ষা সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রী আপনাকে দায়িত্ব দিসিলো পুরো বইটাকে নতুন করে গরীব অসহায় মানুষের জন্য দেওয়া। কিন্তু স্যার, আপনি যদি না করেন তাহলে কী হবে? যাহোক জাফর ইকবাল স্যার করে নাই। আমার লেখা বই। আমার নাম হয় না। জাফর ইকবাল স্যারের নামে হয়। আমার খুব কষ্ট লাগে। এটা কখনোই ভালো কাজ হতে পারে না। এটা কুকীর্তির শামিল।”

Screenshot source: Facebook

লাইভ ভিডিওটি ডাউনলোড করে পরবর্তীতে তিনি আবার পোস্ট করেন এবং এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাসও দেন। 

বিদ্যুৎ কুমার রায় কর্তৃক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের বিষয়ে অভিযোগ এনে করা পোস্টগুলোর কমেন্টেও তিনি জাফর ইকবাল বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেন। 

তার কিছু নমুনা দেখুন স্ক্রিনশটে- 

Screenshot collage: Rumor Scanner 

উক্ত লাইভটি পরবর্তীতে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই ডাউনলোড করে পোস্ট করেছেন। দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

গত ২১ এপ্রিল ‘ফেস দ্য পিপল’ নামে একটি ফেসবুক পেজের লাইভ অনুষ্ঠানে (আর্কাইভ) বিদ্যুৎ কুমার রায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি সেখানে তার অভিযোগগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

Screenshot source: Facebook

এ সংক্রান্ত বিদ্যুৎ কুমার রায়ের অভিযোগগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত হতে আমরা তার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের সুনির্দিষ্ট চারটি অভিযোগ জানান। 

প্রথম অভিযোগ হচ্ছে, বইটির লেখক হিসেবে তিনি প্রাপ্য সম্মান পাননি। রসায়ন বইতে লেখক এবং সম্পাদনসহ বই সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত সকলের নাম একসাথে থাকায় লেখক হিসেবে তার নাম আলাদাভাবে হাইলাইট হয়নি। 

জনাব বিদ্যুৎ কুমার রায়ের দ্বিতীয় অভিযোগ, লেখক হিসেবে তার নামের সাথে তার কলেজের নাম এবং ফোন নম্বরও যুক্ত করতে বলেছিলেন জাফর ইকবালকে। কিন্তু তিনি তাতে সাড়া দেননি। 

তৃতীয় অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, রসায়ন বইটির লেখার দায়িত্ব একমাত্র তিনজনের ছিল, যেখানে জাফর ইকবালের নাম নেই। তবু রসায়ন বইয়ের লেখক হিসেবে জাফর ইকবালের নামই জেনে আসছে মানুষ। যা লেখক হিসেবে তাকে পীড়া দেয়।

সর্বশেষ অভিযোগে জনাব বিদ্যুৎ কুমার রায় জানান, রসায়ন বইয়ে যে ছবিগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো জাফর ইকবালের দেওয়া। কিন্তু ছবিগুলো বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। ছবিগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর তাকে দেখানো হয়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, রসায়ন বইটির সর্বশেষ পরিমার্জিত সংস্করণ বেরিয়েছে ২০১৭ সালে। ছয় বছর পর এসে তিনি অভিযোগ করছেন। সেটিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নয়, অভিযোগ উত্থাপন করেছেন ফেসবুকে।  

Screenshot source: Class 9-10 Textbook Chemistry 

আরও অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে, বই সংশ্লিষ্টদের নামের তালিকায় আলাদা করে লেখকদের কোনো নাম নেই। এ সংক্রান্ত পাতায় বইটিকে সহজপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করার জন্য পরিমার্জিত সংস্করণে প্রয়োজনীয় সংযোজন, পরিবর্ধন, পুনর্লিখন ও সম্পাদনার জন্য একটি দল কাজ করেছে। এই দলের শুরুতেই বিদ্যুৎ কুমার রায়ের নাম দেখা যাচ্ছে। তালিকার ৪র্থ নামটি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের। 

Screenshot collage: Rumor Scanner 

তালিকায় প্রথমেই লেখক হিসেবে বিদ্যুৎ কুমার রায়ের নাম থাকায় তিনি হাইলাইট না হওয়া বিষয়ক যে অভিযোগটি করেছেন তা অবান্তর বলেই প্রতীয়মান হয়৷ 

বিদ্যুৎ কুমার রায় লেখক হিসেবে তার নামের সাথে তার কলেজের নাম এবং ফোন নম্বরও যুক্ত করতে বলেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের একাধিক সংস্করণের পাঠ্যবই রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে। কোনো বইতেই এমন রীতির প্রচলন নেই। এক্ষেত্রে তাই জাফর ইকবালকে এখানে ঢালাওভাবে অভিযুক্ত করার সুযোগ নেই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। 

অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে কথা বলেছি আমরা। 

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “বইয়ের উন্নত সংস্করণের কাজে এডিটরদের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজটাকে এগিয়ে নিতে হয়েছে৷ আমি এবং ড. কায়কোবাদ সে সময় বিজ্ঞান এবং গণিতের ছয়টি বইয়ের সম্পাদনায় ছিলাম। আমি আপনাকে এ বিষয়ে এনসিটিবির সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছি এবং একইসাথে যে নিয়মগুলো মানতে হয়েছে সেগুলোও খুঁজে বের করার অনুরোধ করছি। আমার এ বিষয়ে ব্যক্তিগত কোনো মতামত নেই।”

জাফর ইকবালের সাথে কথা বলার পর গত এপ্রিলের শেষ দিকে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করি আমরা। অভিযোগগুলো তাকে দেখানোর পর তিনি জানান, “আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। মূল সমন্বয়কারীকে বিস্তারিত জানাতে বলেছি। আমি যতটুকু জেনেছি মূল লেখক সে (বিদ্যুৎ কুমার রায়) ছিলনা, বইটি সুখপাঠ্য করার সময়ে সে সাহায্য করেছে মাত্র।”

এ বিষয়ে ফলোআপ জানতে চেয়ে গত ২৮ মে ফের জনাব অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “রসায়ন বইটির মূল লেখক হিসেবে তিনি (বিদ্যুৎ কুমার রায়) কখনোই ছিলেন না। ২০১২ এর শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তকটি ২০১৩ সালে প্রনয়ণ করা হয়েছে। তবে ২০১৭ সালে বইটি সুখপাঠ্য করা হয়। মোট ১২টি বই তখন সুখপাঠ্য করা হয়। সুখপাঠ্য করার সময় তিনি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এমতাবস্থায় তার দাবীর  যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি জাফর ইকবাল স্যার, সদস্য শিক্ষাক্রম বা অন্যরা আমলে নিচ্ছে না।”

জনাব বিদ্যুৎ কুমার রায় ইতোমধ্যেই তার এ সংক্রান্ত দুইটি ভিডিও এবং একটি স্ট্যাটাস ফেসবুক থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। 

সুতরাং, সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কুমার রায়ের অভিযোগগুলো আমলে নেওয়ার মতো কোনো ভিত্তি নেই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

তথ্যসূত্র

  • Class 9-10: Chemistry Book
  • Statement from Biddut Kumer Ray
  • Statement from Dr. Muhammed Zafar Iqbal
  • Statement from Prof Md Farhadul Islam, Chairman, NCTB
  • Rumor Scanner’s own analysis 

ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিকাশ কর্তৃক ব্যবহারকারীদের ৫৯৯৯ টাকা বোনাস দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি, ‘বিকাশ ঈদুল আযহা উপলক্ষে ব্যবহারকারীদের ৫৯৯৯ টাকা বোনাস দিচ্ছে’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন লিংক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিকাশ কর্তৃক ব্যবহারকারীদের ৫৯৯৯ টাকা বোনাস দেওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং বিকাশের ওয়েবসাইট নকল করে তৈরি ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বোনাস প্রদানের এই প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে বোনাসের প্রলোভন দেখানো ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশের চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু সেসময় ওয়েবসাইট লিংকটি কাজ না করায় প্রবেশ সম্ভব হয়নি।

Screenshot: Fake Website

বিকাশ কি এমন কোনো ক্যাম্পেইন চালু আছে?

বিকাশের ওয়েবসাইট ও ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে অনুসন্ধান করে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ব্যবহারকারীদের বোনাস দেওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

Screenshot: BKash Website

পাশাপাশি, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে বিকাশ থেকে এমন বোনাস দেওয়া প্রসঙ্গে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে বলা হয়, ‘অনুগ্রহ করে এ ধরনের ভুল তথ্য দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না। অসাধু চক্র বিভিন্ন নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা অফার দেখিয়ে বিকাশের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিকাশ এ ধরনের কোনো অফার ঘোষণা করেনি এবং উক্ত অফারগুলোর সাথে বিকাশ-এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই, এসব মিথ্যা অফারের লোভে পড়ে কিংবা প্রতারিত হয়ে এই ধরনের কোনো ওয়েবসাইট অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে কোনো লেনদেন করবেন না এবং আপনার বিকাশ একাউন্ট নাম্বার, পিন, ভেরিফিকেশন কোড বা অন্য কোনো তথ্য দিবেন না। এছাড়া এ ধরনের ওয়েবসাইটের লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকবেন।’

মূলত, ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিকাশ ব্যবহারকারীদের ৫৯৯৯ টাকা বোনাস দিচ্ছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিকাশের পক্ষ থেকে এমন কোনো বোনাস ঘোষণা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে বিকাশের লোগো ব্যবহার করে বিকাশের ওয়েবসাইটের আদলে তৈরি ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতারণার উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

ইতিপূর্বে একাধিকবার বিকাশের ওয়েবসাইট নকল করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রলোভন দেখানো হয়। সেসময় উক্ত বিষয়গুলোকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

প্রতিবেদন গুলো দেখুন: বিকাশের ছয় কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষ্যে ব্যবহারকারীদের ৬৬০০ টাকা বোনাস দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা, ১০ বছর পূর্তিতে বিকাশ থেকে ১০ হাজার টাকা উপহার শীর্ষক ক্যাম্পেইনটি ভুয়া। 

সুতরাং, ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিকাশ ব্যবহারকারীদের ৫৯৯৯ টাকা বোনাস দিচ্ছে শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মুজিবুল হক এমপি আহত হননি

সম্প্রতি, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কুমিল্লা-১১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক আহত হয়েছেন দাবি করে জাতীয় ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের ওয়েবসাইট এবং প্রিন্ট সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন নিউ এজ

গণমাধ্যমটির প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৬ জুন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব আহত হননি বরং সংঘর্ষের দিন মুজিবুল হক কুমিল্লাতেই ছিলেন না। তিনি সে-সময় ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে ৬ জুন ‘কুমিল্লায় আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২৫‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Bangla Tribune 

প্রতিবেদনটিতে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, গত ৬ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এবং চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। 

Screenshot: Bangla Tribune 

প্রতিবেদনটিতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বরাতে বলা হয়, ঐ সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মাঝে একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রতিবেদনটি থেকে আহতদের নামের কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে একইদিনে ‘কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বন্ধ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। 

Screenshot: Daily Prothom Alo 

এই প্রতিবেদন থেকেও সেদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের নামের কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এ ঘটনায় অন্যান্য গণমাধ্যম যেমন, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের ‘20 hurt as AL factions clash ‘, অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এর  ‘আওয়ামী লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ‘, কালেরকণ্ঠের ‘কুমিল্লায় আ. লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, মহাসড়কে ভোগান্তি’, নিউজবাংলা২৪ এর ‘কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২৩‘, সমকালের ‘কুমিল্লায় আ. লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ‘ প্রতিবেদন থেকেও উল্লেখিত ঘটনায় সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের উপস্থিতি ও তার আহত হওয়ার দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গণমাধ্যমের পাশাপাশি মুজিবুল হকের উপস্থিতি সম্পর্কে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম সংঘর্ষের ঘটনার দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মুজিবুল হকের সমর্থক কর্তৃক প্রচারিত একাধিক পোস্ট যাচাই করে দেখে। এসব পোস্টের ছবি ও ভিডিওতে সংঘর্ষের দিন ঘটনাস্থলে মুজিবুল হকের অনুগত চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি থাকলেও সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানেএখানে

Image Collage: Rumor Scanner

পরবর্তীতে উক্ত বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. জুয়েল এবং চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ্য সহসভাপতি মীর হোসেন মীরু এবং চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভরঞ্জন চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। 

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রামে মুজিবুল হকের বিরোধী পক্ষের নেতা চৌদ্দগ্রামের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় আমাদের কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে আমি বা মুজিবুল হক সাহেব আহত হননি এবং তিনি ঘটনাস্থলেও ছিলেন না।’ 

সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. জুয়েল বলেন, ‘স্যার ঐদিন ঢাকায় ছিলেন, উনার সংসদ ছিল। তাহলে উনি কিভাবে কুমিল্লায় সংঘর্ষে থাকেন?’

একই বিষয়ে মুজিবুল হক এমপির অনুগত নেতা, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ্য সহসভাপতি মীর হোসেন মীরু বলেন, ‘ঐদিনের ঘটনায় মুজিবুল হকের উপস্থিত থাকা ও আহত হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়, এটি মিথ্যা।’

এছাড়া চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, ‘সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের আহত হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। তিনি তো ঢাকায় ছিলেন, আহত হবেন কিভাবে?’

মূলত, গত ৬ জুন কুমিল্লা-১১ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে এবং বেশ কয়েকজন আহতও হয়। তবে পরবর্তীতে এই ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে মূলধারার জাতীয় ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ জানায়, উক্ত সংঘর্ষে সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি আহত হয়েছেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার কর্মী সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষ হলেও তিনি সে ঘটনায় আহত হননি এবং তিনি কুমিল্লাতেও উপস্থিত ছিলেন না।

সুতরাং, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সাবেক রেলমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক আহত হয়েছেন দাবিতে জাতীয় দৈনিক নিউ এজে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

পাকিস্তানের লাহোরে সাম্প্রতিক বন্যার খবরে গণমাধ্যমে পুরোনো ছবি

গত মে মাসে পাকিস্তানের লাহোরে হওয়া বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। 

উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা করেছে যমুনা টিভি

উক্ত ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং পাকিস্তানের এই ছবিটি অন্তত পাঁচ বছরের পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে পাকিস্তানের ব্লগিং ওয়েবসাইট Pakistan Tour এ ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট “Importance of Monsoon Season In Pakistan” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Pakistan Tour

আরো অনুসন্ধান করে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম BUSINESS RECORDER এ ২০১৮ সালের ৩ জুলাই “Six killed as heavy rain wreaks havoc in Lahore” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাঞ্জাবের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টিপাতে লাহোরে বন্যার কারণে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে।

Screenshot:Business Recorder

কিন্তু প্রতিবেদনে ছবিটির ক্যাপশনে ছবির সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। 

তবে পাঁচ বছর পূর্বের সংবাদে ছবিটি খুঁজে পাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, আলোচিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।  

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। ফলে সাম্প্রতিক ঘটনার সংবাদে ছবিটি ব্যবহার করায় স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয় যে ছবিটি সাম্প্রতিক ঘটনার সময়ের। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়। 

মূলত, গত মে মাসে পাকিস্তানের লাহোরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়। সেই ঘটনার সংবাদে ব্যবহৃত একটি ছবি অনুসন্ধান করে জানা যায়, ছবিটি সে সময়ের নয়। ছবিটি ২০১৮ সালে লাহোরে হওয়া বন্যার সংবাদে খুঁজে পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে কোনোকিছু লেখা না থাকায় ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। 

সুতরাং, পাকিস্তানের লাহোরে হওয়া বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অন্তত পাঁচ বছরের পূর্বের ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ক্ষমতায় গিয়ে সারাদেশকে সেন্ট্রাল এসি’র আওতায় আনা নিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি মির্জা ফখরুল

0

সম্প্রতি, “ক্ষমতায় গিয়ে সারাদেশকে সেন্ট্রাল এসি’র আওতায় আনা হবে – ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ডিজিটাল ব্যানার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছে। যেখানে উক্ত বক্তব্যটি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “ক্ষমতায় গিয়ে সারাদেশকে সেন্ট্রাল এসি’র আওতায় আনা হবে” শীর্ষক ফেসবুকে প্রচারিত এই বক্তব্যটি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেননি বরং ভিত্তিহীনভাবে উক্ত মন্তব্যকে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

এমন কোনো মন্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর করেছেন কি না তার প্রাথমিক অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে উক্ত বক্তব্য সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Google

অনুসন্ধানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উক্ত বক্তব্য দিয়েছেন তার কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় পরবর্তীতে বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইং এর সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “প্রশ্নই হয় না। এধরনের কোনো বক্তব্য রাখেনি। এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি পায়তারা।”

মূলত, “ক্ষমতায় গিয়ে সারাদেশকে সেন্ট্রাল এসি’র আওতায় আনা হবে- ফখরুল” শীর্ষক একটি বক্তব্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার এর অনুসন্ধানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উক্ত বক্তব্য দেওয়ার প্রমাণ মেলেনি। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে এমন কোনো মন্তব্য মির্জা ফখরুল দেননি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ফেসবুকে একাধিক ভুয়া বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। যেগুলোর সত্যতা যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানেএখানে

সুতরাং, ক্ষমতায় গিয়ে সারাদেশকে সেন্ট্রাল এসি’র আওতায় আনা হবে- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  1. Statement of Khaleda Zia’s wing member Shairul Kabir Khan
  2. Rumor Scanner’s searches

লাইলি মজনুর ছবি দাবিতে ভিন্ন ব্যক্তিদের ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি, ‘চিনেন এদেরকে, এরাই সেই লাইলা আর মজনু’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, লাইলি-মজনুর আসল ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি লাইলি-মজনুর ছবি নয় বরং এটি সাধারণ দু’জন মানুষের সংযুক্ত ছবির কিছুটা পরিবর্তিত সংস্করণ।

মূলত, লাইলি-মজনুর প্রেমকথা বেদুইন জনপদে ৫ম শতাব্দী থেকে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় উপকথা। পরবর্তীতে, নাজামি গাজনবী নামে এক পার্সিয়ান কবি এই ভালোবাসার গল্পে মুগ্ধ হয়ে রচনা করেন এক মহাকাব্য। সেটি বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়ে লাইলি-মজনুর প্রেম-কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়ে। এরই প্রেক্ষিতে সাধারণ দুই বেদুইন নারী-পুরুষের ছবিকে লাইলি-মজনুর আসল ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেন্দ্রিক জরিপ নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য

0

গত ১৭ এপ্রিল জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ওয়েবসাইটে “তুরস্কে নির্বাচন, জরিপে এগিয়ে এরদোগান শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

প্রতিবেদনের শেষ অংশে যুগান্তর দাবি করেছে, “এদিকে ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে এর মধ্যে করা আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এরদোগানের পক্ষে। আর ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বিরোধী জোটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।”

Screenshot source: Jugantor

লক্ষ্য করুন, প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে ১৭ এপ্রিল (রাত ৮:৪৩ মিনিটে) । কিন্তু জরিপের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে। 

এর মানে দাঁড়াচ্ছে, জরিপের ১১ দিন আগেই জরিপের ফলাফল জানিয়ে দিয়েছে যুগান্তর! 

আমরা এ বিষয়ে পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধান করে পরদিন অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল দেশের আরও কিছু গণমাধ্যমে একই সংবাদ খুঁজে পেয়েছি। 

সংবাদগুলো দেখুন বাংলা খবর ২৪ (১৭ এপ্রিল রাত ৯:১৫), নয়া দিগন্ত (১৮ এপ্রিল রাত ১২:০৫), ডেইলি অবজারভার (১৮ এপ্রিল সকাল ৯:৫০), রিদ্মিক নিউজ (১৮ এপ্রিল দুপুর ১২:৩০ জিএমটি ৬:৩০), দৈনিক করতোয়া (১৮ এপ্রিল রাত ৭:৫৩), ইনকিলাব (১৮ এপ্রিল রাত ০৮:১৮)। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, যুগান্তর এ বিষয়ে দেশে প্রথম সংবাদ প্রকাশের পর যুগান্তরের প্রতিবেদনের আলোচিত শেষ অংশটি অন্যান্য গণমাধ্যমগুলো হুবহু প্রকাশ করেছে। 

এই সংবাদের তথ্যসূত্র হিসেবে যুগান্তর ‘Daily Sabah’ এর নাম উল্লেখ করেছে। 

পরবর্তীতে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ‘Daily Sabah’ এর ওয়েবসাইটে গত ১৬ এপ্রিল “Erdoğan leads in surveys ahead of Turkish elections” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত তথ্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Daily Sabah

ডেইলি সাবাহ লিখেছে, জরিপকারী সংস্থা Areda survey company এর করা গত ১২ থেকে ১৪ এপ্রিলের একটি জরিপে দেখা গেছে, তুরস্কের নির্বাচনে এরদোয়ানের পক্ষে থাকবেন প্রায় ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে প্রায় ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ বিরোধী জোটের পক্ষে অবস্থান নেবেন। একই নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ালে এরদোয়ানের পক্ষে থাকবেন প্রায় ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে প্রায় ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বিরোধী জোটের পক্ষে অবস্থান নেবেন।

ডেইলি সাবাহ আরো বলছে, একই সংস্থা ২৮ মার্চ থেকে ০১ এপ্রিল আরেকটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। উক্ত জরিপের বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলেও প্রতিবেদনে বলা হয়, উক্ত জরিপ থেকে এই জরিপে ০.২ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছেন এরদোয়ান। 

অর্থাৎ, আলোচিত জরিপকেই ভিন্ন একটি জরিপ দাবি করে বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যম জরিপটির তারিখ উল্লেখ করেছে ২৮ এপ্রিল থেকে ০১ মে। কিন্তু গণমাধ্যমগুলোর সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ’র প্রতিবেদনে একই জরিপেরই প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে উক্ত জরিপের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, ১২ থেকে ১৪ এপ্রিল। 

আরও অনুসন্ধান করে, Areda survey company এর টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ১৫ এপ্রিল আলোচিত জরিপটির বিষয়ে একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। এই টুইটেও জরিপের তারিখ ১২ থেকে ১৪ এপ্রিল উল্লেখ করে একই ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে।  

Screenshot source: Twitter 

সুতরাং, অর্থাৎ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিচালিত জরিপ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত উল্লিখিত তথ্যগুলো সঠিক নয়।

তথ্যসূত্র

প্রধানমন্ত্রী আজহারীকে ফোনকলে দেশে আসার অনুরোধ করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির ফেসবুক পেজের স্ক্রিনশট যুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

টিকটকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় এবং সময় টিভির লোগো ব্যবহার করে উক্ত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটিও আসল নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় স্ক্রিনশটটি তৈরি করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য সময় টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে সেখানে কোথাও প্রচারিত দাবিটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Somoy TV Facebook 

এছাড়া, সময় টিভির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও প্রচারিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

Screenshot: Somoy TV website

পরবর্তীতে, উক্ত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত মাধ্যমগুলোতেও বিষয়টি সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও সময় টিভির লোগো সংযুক্ত করে প্রচারিত স্ক্রিনশটটির ফন্ট, লেখার ধরন এবং বানান লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, এটি বাস্তব নয় বরং এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।

Screenshot: Tiktok

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানানোর বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানানোর দাবিটি সঠিক নয়। 

মূলত, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি তথ্য প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য অন্যকোনো সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানানোর বিষয়ে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও মিজানুর রহমান আজহারীকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ওড়িশার রেল দুর্ঘটনায় ক্রিকেটার ধোনির ৬০ কোটি টাকা দান করার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, ভারতীয় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ৬০ কোটি টাকা দান করেছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ধোনি ৬০ কোটি টাকা দান করেননি এবং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় মূলধারার একাধিক গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য অন্যান্য মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ধোনির ৬০ কোটি রূপি দানের বিষয়টির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে মাহেন্দ্র সিং ধোনির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানেও প্রচারিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মাহেন্দ্র সিং ধোনির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ওডিশার ট্রেন দূর্ঘটনা পরবর্তী অ্যাক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ করলে সেখানে ০২ জুন প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

এবং সেখানে ০৭ জুন প্রকাশিত LMG মুভির টিজার নিয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তাছাড়া দুর্ঘটনা পরবর্তী আর কোনো পোস্ট সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে, মাহেদ্র সিং ধোনির ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও ট্রেন দূর্ঘটনায় ডোনেশন সম্পর্কিত কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: MS Dhoni Instagram

পাশাপাশি, গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ডোনেশনের বিষয়ে ধোনি বা সংশ্লিষ্ট কারো পক্ষ থেকে কোনো অফিশিয়াল ঘোষণা বা বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, ভারতের একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ওড়িশার রেল দুর্ঘটনায় ক্রিকেটার ধোনির ৬০ কোটি টাকা দান করার দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ওডিশার রেল দূর্ঘটনায় ধোনির ৬০ কোটি টাকা দান করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।

মূলত, সম্প্রতি ভারতের ওডিশার রেল দূর্ঘটনায় ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি ৬০ কোটি টাকা দান করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। গণমাধ্যম বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ধোনির ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় কোনো ধরনের ডোনেশনের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের ওডিশার রেল দূর্ঘটনায় মুসলিমদের দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় মাহেন্দ্র সিং ধোনি ৬০ কোটি টাকা দান করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সদ্য সমাপ্ত ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পেয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার দাবিটি মিথ্যা, ভাইরাল চিঠিটিও ভুয়া

সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ না হওয়ায় চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছে দাবি করে একটি চিঠির ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে চিঠিটি ব্যবহার করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রাম বা দেশের কোনো স্থানের কোনো শিক্ষার্থীই চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেননি বরং ভুয়া একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে আজ (১০ জুন) দুপুর দুইটা পর্যন্ত দেশের কোনো সংবাদমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত কোনো খবর প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়নি৷  

পরবর্তীতে আলোচিত চিঠিটি বিশ্লেষণ করে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

কী লেখা আছে চিঠিতে?

চিঠিতে দেখা যাচ্ছে, এটি লেখা হয়েছে ০৭ জুন সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে। চিঠির বামদিকে কোণায় R/13 লেখা দেখা যাচ্ছে। এর পাশে একটি মৌ নাম ব্যবহার করে একটি স্বাক্ষর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। চিঠির নিচের অংশেও R লেখা রয়েছে। 

Image source: Facebook 

চিঠিটি জনৈক মৌমিতা মৌ তার মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন। চিঠিতে লেখা রয়েছে, “আমি ঢাবিতে চান্স পেলাম না। আমার জন্য তোমরা অনেক টাকা খরচ করেছো। আমি চান্স না পাওয়াতে তোমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছোনা। সবাই শুধু আমার সমালোচনা করছে, মেয়েটা সারাদিন পড়েও ঢাবিতে এমনকি কোথাও চান্স পেল না! কিন্তু আমি আমার জীবনের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্ত দুর্ভাগ্যক্রমে চান্স হলো না। আমি এত সমালোচনা, অপমান, টেনশন সহ্য করতে পারছিনা। আমি এখন আত্মহত্যা করবো। এর জন্য কেউই দায়ী নয়। এই চিরকুটটি যখন কেউ পাবেন, তখন আমি ফ্যানের সাথে ফাঁসিতে ঝুলে থাকবো।”

প্রথম পোস্টদাতার খোঁজে

চিঠির তথ্যগুলোর সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ এবং ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে গত ০৭ জুন সন্ধ্যা ৭:৪৩ মিনিটে ফেসবুকে ‘Dhaka University Admission Helpline 2022-23’ নামক একটি পাবলিক গ্রুপে Rakib Hasan নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে (আর্কাইভ) আলোচিত তথ্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে এটিই এ বিষয়ে প্রথম পাবলিক পোস্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে। 

Screenshot source: Facebook 

লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, চিঠিতে সময় উল্লেখ ছিল সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিট এবং রাকিবের পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে এর মাত্র ১৩ মিনিট পর। চিঠি লেখা শেষ করে আত্মহত্যার পর সে খবরটি ফেসবুকের সাধারণ একজন ব্যবহারকারীর কাছে চিঠি লেখার মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল। 

পোস্টে অবশ্য সেই শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ ছিল না। সুইসাইড নোটের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তার ছবি যুক্ত ছিল না। আবার চিঠিতে কোনো স্থানের নাম উল্লেখ না থাকলেও রাকিবের পোস্টে উক্ত শিক্ষার্থী কুড়িগ্রামের বলে উল্লেখ করা হয়। 

রাকিবের পোস্টের ঠিক দুই মিনিট পর সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে ফেসবুকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ২০২২-২৩’ নামক একটি প্রাইভেট গ্রুপে Raisa Rehman Ridika নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে (আর্কাইভ) হুবহু একই তথ্যই খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source: Facebook 

একই গ্রুপে পরদিন (০৮ জুন) সকাল ৮:১৫ মিনিটে Raisa Rehman Ridika আলোচিত চিঠিটি (আর্কাইভ) প্রকাশ করেন। রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে চিঠিটি যুক্ত করে এটিই এ বিষয়ে প্রথম পাবলিক পোস্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

Screenshot source: Facebook 

লক্ষ্য করুন, Rakib Hasan এবং Raisa Rehman Ridika এই দুইটি নামেই R অক্ষরটি রয়েছে। আলোচিত চিঠির উপরের অংশেও R অক্ষর রয়েছে। মৌমিতা মৌ নামটিতে কোনো R অক্ষর নেই৷ সেক্ষেত্রে R/13 লেখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। 

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে দুইটি অ্যাকাউন্টের সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম আমরা৷ কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা শুরুর পর Raisa Rehman Ridika তার দুইটি পোস্ট ডিলিট করে দেন। 

রাকিব এবং রিদিকার বিষয়ে যা জানা গেল

Rakib Hasan এর আইডিটি লক থাকায় তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে না পেরে তিনি যে গ্রুপে এ বিষয়ে পোস্ট করেছিলেন সেই ‘Dhala University Admission Helpline 2022-23’ নামক গ্রুপটিতে তার পূর্বের পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছি আমরা। 

গত ০১ এপ্রিল করা তার একটি পোস্টের (আর্কাইভ) কমেন্টে তিনি লিখেছেন, তিনি কুড়িগ্রামে আছেন। 

Screenshot source: Facebook 

আরও অনুসন্ধান করে গত ২৯ মার্চ রাকিবের আরেকটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তিনি লিখেছেন, তার বাসা কুড়িগ্রাম। তিনি ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। 

Screenshot source: Facebook 

গত ১১ মার্চ তিনি গ্রুপটিতে যুক্ত হোন।

এ বিষয়ে জানতে গ্রুপের এডমিন মো: আবদুল আলিমের সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনিও রাকিবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হোন। 

আলিম জানান, “এটার সত্যতা নিয়ে আমিও সন্দিহান। আমার এক ফ্রেন্ড বলেছে সুইসাইড এটেম্পট করেছিলো ঠিক সময়ে হসপিটালাইজ্ড করা হয়েছে তাই মারা যায় নি৷ যে ফ্রেন্ড বলেছে সেও সিউর না। সে অন্য কোথাও থেকে শুনেছে কিন্তু সে ব্যক্তি সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। কুড়িগ্রামের ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করলাম সেও fb তে দেখেছে কিন্তু নিশ্চিত নয়।”

একইভাবে Raisa Rehman Ridika এর বিষয়েও খোঁজ নিয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিদিকার ফেসবুক আইডির তথ্য বলছে, তার বাড়ি ফেনী। পড়াশোনা করেছেন সরকারি জিয়া মহিলা কলেজে। এই অ্যাকাউন্টটিও লক থাকায় বিস্তারিত জানা যায়নি। 

রিদিকা যে গ্রুপে এ বিষয়ে পোস্ট করেছিলেন সেই ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ২০২২-২৩’ নামক গ্রুপের এডমিনও তিনি। গত ০৯ ফেব্রুয়ারি তিনি গ্রুপটিতে যুক্ত হোন। নিয়মিতই তিনি ভর্তি বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট করছেন গ্রুপে। পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে তার বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।

এ বিষয়ে জানতে গ্রুপটির আরেক এডমিন ফয়সাল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিদিকার বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি আমাদের। 

কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা? 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান চলাকালীন গত ০৮ জুন চ্যানেল২৪ এর বিকেল ছয়টার খবরে কথিত আত্মহত্যার ইস্যুতে লাইভে (২২ সেকেন্ড সময় থেকে) আসেন সংবাদমাধ্যমটির কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি গোলাম মাওলা সিরাজ।

তিনি জানান, “আজ সকালে এটি আমাদের নজরে আসে। আমি যখন এটা দেখি তখন স্থানীয় যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে বা সদর থানা পুলিশ রয়েছে তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই৷”

জনাব সিরাজ সম্ভাব্য কিছু স্থানে খোঁজ নেন এবং অন্যান্য গণমাধ্যমের সহকর্মীদের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেন। কিন্তু সকলেই বলেছে, এমন কোনো খবরের সত্যতা কেউ পায়নি। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজেও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। সেখান থেকেও এ ধরণের কোনো তথ্য মেলেনি। 

Screenshot source: Golam Maula Shiraj

রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট জানতে চেয়ে আজ বিকেলে গোলাম মাওলা সিরাজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পরবর্তীতেও তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আর কোনো তথ্য পাননি। 

পরবর্তীতে আজ সকালে কুড়িগ্রামের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো: শহিদুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে আমরা জানতে চেয়েছিলাম গেল সপ্তাহে তাদের হাসপাতালে কোনো শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার কোনো তথ্য এসেছে কিনা। তিনি আমাদের জানান, গত এক সপ্তাহে কোনো শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার তথ্য তার কাছে নেই।

একইসাথে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) এম আর সাঈদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও আমাদের জানান, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো খবর আসেনি। 

রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে কুড়িগ্রামের একাধিক গণমাধ্যমকর্মীর সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে। তারা সকলেই বলছেন, শিক্ষার্থী আত্মহত্যার এমন কোনো ঘটনা গেল সপ্তাহে ঘটেনি। 

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার রাজু মোস্তাফিজ রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন। কিন্তু এই খবরের কোনো সত্যতা পাননি। 

একইভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জাহানুর রহমান, বিডিনিউজ২৪ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আহসান হাবীব নীলু এবং ডেইলি স্টারের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি দীলিপ রায়। 

মূলত, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ না হওয়ায় চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছে দাবি করে একটি চিঠির ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রাম বা দেশের কোনো স্থানের কোনো শিক্ষার্থীই চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেননি। ভুয়া একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এ বিষয়টি কুড়িগ্রামের পুলিশ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। 

সুতরাং, ঢাবিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Channel 24: News
  • Statement from Golam Maula Shiraj
  • Statement from Raju Mustafiz
  • Statement from Dilip Roy
  • Statement from Jahanur Rahman
  • Statement from Ahsan Habib Nilu
  • Statement from Khan Md. Shahriar 
  • Statement from Dr. Md.Shahidullah 
  • Rumor Scanner’s own analysis