Home Blog Page 564

ওড়িশার রেল দুর্ঘটনায় ক্রিকেটার ধোনির ৬০ কোটি টাকা দান করার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, ভারতীয় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ৬০ কোটি টাকা দান করেছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ধোনি ৬০ কোটি টাকা দান করেননি এবং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় মূলধারার একাধিক গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য অন্যান্য মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ধোনির ৬০ কোটি রূপি দানের বিষয়টির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে মাহেন্দ্র সিং ধোনির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানেও প্রচারিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মাহেন্দ্র সিং ধোনির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ওডিশার ট্রেন দূর্ঘটনা পরবর্তী অ্যাক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ করলে সেখানে ০২ জুন প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

এবং সেখানে ০৭ জুন প্রকাশিত LMG মুভির টিজার নিয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তাছাড়া দুর্ঘটনা পরবর্তী আর কোনো পোস্ট সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে, মাহেদ্র সিং ধোনির ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও ট্রেন দূর্ঘটনায় ডোনেশন সম্পর্কিত কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: MS Dhoni Instagram

পাশাপাশি, গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ডোনেশনের বিষয়ে ধোনি বা সংশ্লিষ্ট কারো পক্ষ থেকে কোনো অফিশিয়াল ঘোষণা বা বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, ভারতের একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ওড়িশার রেল দুর্ঘটনায় ক্রিকেটার ধোনির ৬০ কোটি টাকা দান করার দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ওডিশার রেল দূর্ঘটনায় ধোনির ৬০ কোটি টাকা দান করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।

মূলত, সম্প্রতি ভারতের ওডিশার রেল দূর্ঘটনায় ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি ৬০ কোটি টাকা দান করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। গণমাধ্যম বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ধোনির ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় কোনো ধরনের ডোনেশনের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের ওডিশার রেল দূর্ঘটনায় মুসলিমদের দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় মাহেন্দ্র সিং ধোনি ৬০ কোটি টাকা দান করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সদ্য সমাপ্ত ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পেয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার দাবিটি মিথ্যা, ভাইরাল চিঠিটিও ভুয়া

সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ না হওয়ায় চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছে দাবি করে একটি চিঠির ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে চিঠিটি ব্যবহার করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রাম বা দেশের কোনো স্থানের কোনো শিক্ষার্থীই চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেননি বরং ভুয়া একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে আজ (১০ জুন) দুপুর দুইটা পর্যন্ত দেশের কোনো সংবাদমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত কোনো খবর প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়নি৷  

পরবর্তীতে আলোচিত চিঠিটি বিশ্লেষণ করে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

কী লেখা আছে চিঠিতে?

চিঠিতে দেখা যাচ্ছে, এটি লেখা হয়েছে ০৭ জুন সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে। চিঠির বামদিকে কোণায় R/13 লেখা দেখা যাচ্ছে। এর পাশে একটি মৌ নাম ব্যবহার করে একটি স্বাক্ষর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। চিঠির নিচের অংশেও R লেখা রয়েছে। 

Image source: Facebook 

চিঠিটি জনৈক মৌমিতা মৌ তার মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন। চিঠিতে লেখা রয়েছে, “আমি ঢাবিতে চান্স পেলাম না। আমার জন্য তোমরা অনেক টাকা খরচ করেছো। আমি চান্স না পাওয়াতে তোমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছোনা। সবাই শুধু আমার সমালোচনা করছে, মেয়েটা সারাদিন পড়েও ঢাবিতে এমনকি কোথাও চান্স পেল না! কিন্তু আমি আমার জীবনের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্ত দুর্ভাগ্যক্রমে চান্স হলো না। আমি এত সমালোচনা, অপমান, টেনশন সহ্য করতে পারছিনা। আমি এখন আত্মহত্যা করবো। এর জন্য কেউই দায়ী নয়। এই চিরকুটটি যখন কেউ পাবেন, তখন আমি ফ্যানের সাথে ফাঁসিতে ঝুলে থাকবো।”

প্রথম পোস্টদাতার খোঁজে

চিঠির তথ্যগুলোর সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ এবং ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে গত ০৭ জুন সন্ধ্যা ৭:৪৩ মিনিটে ফেসবুকে ‘Dhaka University Admission Helpline 2022-23’ নামক একটি পাবলিক গ্রুপে Rakib Hasan নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে (আর্কাইভ) আলোচিত তথ্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে এটিই এ বিষয়ে প্রথম পাবলিক পোস্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে। 

Screenshot source: Facebook 

লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, চিঠিতে সময় উল্লেখ ছিল সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিট এবং রাকিবের পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে এর মাত্র ১৩ মিনিট পর। চিঠি লেখা শেষ করে আত্মহত্যার পর সে খবরটি ফেসবুকের সাধারণ একজন ব্যবহারকারীর কাছে চিঠি লেখার মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল। 

পোস্টে অবশ্য সেই শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ ছিল না। সুইসাইড নোটের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তার ছবি যুক্ত ছিল না। আবার চিঠিতে কোনো স্থানের নাম উল্লেখ না থাকলেও রাকিবের পোস্টে উক্ত শিক্ষার্থী কুড়িগ্রামের বলে উল্লেখ করা হয়। 

রাকিবের পোস্টের ঠিক দুই মিনিট পর সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে ফেসবুকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ২০২২-২৩’ নামক একটি প্রাইভেট গ্রুপে Raisa Rehman Ridika নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে (আর্কাইভ) হুবহু একই তথ্যই খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source: Facebook 

একই গ্রুপে পরদিন (০৮ জুন) সকাল ৮:১৫ মিনিটে Raisa Rehman Ridika আলোচিত চিঠিটি (আর্কাইভ) প্রকাশ করেন। রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে চিঠিটি যুক্ত করে এটিই এ বিষয়ে প্রথম পাবলিক পোস্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

Screenshot source: Facebook 

লক্ষ্য করুন, Rakib Hasan এবং Raisa Rehman Ridika এই দুইটি নামেই R অক্ষরটি রয়েছে। আলোচিত চিঠির উপরের অংশেও R অক্ষর রয়েছে। মৌমিতা মৌ নামটিতে কোনো R অক্ষর নেই৷ সেক্ষেত্রে R/13 লেখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। 

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে দুইটি অ্যাকাউন্টের সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম আমরা৷ কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা শুরুর পর Raisa Rehman Ridika তার দুইটি পোস্ট ডিলিট করে দেন। 

রাকিব এবং রিদিকার বিষয়ে যা জানা গেল

Rakib Hasan এর আইডিটি লক থাকায় তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে না পেরে তিনি যে গ্রুপে এ বিষয়ে পোস্ট করেছিলেন সেই ‘Dhala University Admission Helpline 2022-23’ নামক গ্রুপটিতে তার পূর্বের পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছি আমরা। 

গত ০১ এপ্রিল করা তার একটি পোস্টের (আর্কাইভ) কমেন্টে তিনি লিখেছেন, তিনি কুড়িগ্রামে আছেন। 

Screenshot source: Facebook 

আরও অনুসন্ধান করে গত ২৯ মার্চ রাকিবের আরেকটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তিনি লিখেছেন, তার বাসা কুড়িগ্রাম। তিনি ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। 

Screenshot source: Facebook 

গত ১১ মার্চ তিনি গ্রুপটিতে যুক্ত হোন।

এ বিষয়ে জানতে গ্রুপের এডমিন মো: আবদুল আলিমের সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনিও রাকিবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হোন। 

আলিম জানান, “এটার সত্যতা নিয়ে আমিও সন্দিহান। আমার এক ফ্রেন্ড বলেছে সুইসাইড এটেম্পট করেছিলো ঠিক সময়ে হসপিটালাইজ্ড করা হয়েছে তাই মারা যায় নি৷ যে ফ্রেন্ড বলেছে সেও সিউর না। সে অন্য কোথাও থেকে শুনেছে কিন্তু সে ব্যক্তি সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। কুড়িগ্রামের ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করলাম সেও fb তে দেখেছে কিন্তু নিশ্চিত নয়।”

একইভাবে Raisa Rehman Ridika এর বিষয়েও খোঁজ নিয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিদিকার ফেসবুক আইডির তথ্য বলছে, তার বাড়ি ফেনী। পড়াশোনা করেছেন সরকারি জিয়া মহিলা কলেজে। এই অ্যাকাউন্টটিও লক থাকায় বিস্তারিত জানা যায়নি। 

রিদিকা যে গ্রুপে এ বিষয়ে পোস্ট করেছিলেন সেই ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ২০২২-২৩’ নামক গ্রুপের এডমিনও তিনি। গত ০৯ ফেব্রুয়ারি তিনি গ্রুপটিতে যুক্ত হোন। নিয়মিতই তিনি ভর্তি বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট করছেন গ্রুপে। পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে তার বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।

এ বিষয়ে জানতে গ্রুপটির আরেক এডমিন ফয়সাল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিদিকার বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি আমাদের। 

কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা? 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান চলাকালীন গত ০৮ জুন চ্যানেল২৪ এর বিকেল ছয়টার খবরে কথিত আত্মহত্যার ইস্যুতে লাইভে (২২ সেকেন্ড সময় থেকে) আসেন সংবাদমাধ্যমটির কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি গোলাম মাওলা সিরাজ।

তিনি জানান, “আজ সকালে এটি আমাদের নজরে আসে। আমি যখন এটা দেখি তখন স্থানীয় যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে বা সদর থানা পুলিশ রয়েছে তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই৷”

জনাব সিরাজ সম্ভাব্য কিছু স্থানে খোঁজ নেন এবং অন্যান্য গণমাধ্যমের সহকর্মীদের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেন। কিন্তু সকলেই বলেছে, এমন কোনো খবরের সত্যতা কেউ পায়নি। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজেও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। সেখান থেকেও এ ধরণের কোনো তথ্য মেলেনি। 

Screenshot source: Golam Maula Shiraj

রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট জানতে চেয়ে আজ বিকেলে গোলাম মাওলা সিরাজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পরবর্তীতেও তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আর কোনো তথ্য পাননি। 

পরবর্তীতে আজ সকালে কুড়িগ্রামের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো: শহিদুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে আমরা জানতে চেয়েছিলাম গেল সপ্তাহে তাদের হাসপাতালে কোনো শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার কোনো তথ্য এসেছে কিনা। তিনি আমাদের জানান, গত এক সপ্তাহে কোনো শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার তথ্য তার কাছে নেই।

একইসাথে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) এম আর সাঈদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও আমাদের জানান, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো খবর আসেনি। 

রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে কুড়িগ্রামের একাধিক গণমাধ্যমকর্মীর সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে। তারা সকলেই বলছেন, শিক্ষার্থী আত্মহত্যার এমন কোনো ঘটনা গেল সপ্তাহে ঘটেনি। 

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার রাজু মোস্তাফিজ রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন। কিন্তু এই খবরের কোনো সত্যতা পাননি। 

একইভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জাহানুর রহমান, বিডিনিউজ২৪ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আহসান হাবীব নীলু এবং ডেইলি স্টারের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি দীলিপ রায়। 

মূলত, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ না হওয়ায় চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছে দাবি করে একটি চিঠির ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রাম বা দেশের কোনো স্থানের কোনো শিক্ষার্থীই চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেননি। ভুয়া একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এ বিষয়টি কুড়িগ্রামের পুলিশ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। 

সুতরাং, ঢাবিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Channel 24: News
  • Statement from Golam Maula Shiraj
  • Statement from Raju Mustafiz
  • Statement from Dilip Roy
  • Statement from Jahanur Rahman
  • Statement from Ahsan Habib Nilu
  • Statement from Khan Md. Shahriar 
  • Statement from Dr. Md.Shahidullah 
  • Rumor Scanner’s own analysis 

মেসির দলবদলকে কেন্দ্র করে তার স্ত্রী ফেসবুকে কোনো পোস্ট দেননি

0

সম্প্রতি, আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসিকে নিয়ে তার স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো ফেসবুকে তার পেজে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন দাবি করে বাংলাদেশ ও ভারতের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।  

উক্ত দাবিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন একাত্তর টিভি, আজকের পত্রিকা, দৈনিক আমাদের সময়, স্টার সংবাদ, এমটিএন নিউজ

একই দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন আনন্দবাজার, আজতক, সংবাদ প্রতিদিন, জিনিউজ

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো মেসির দলবদলকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে কোনো পোস্ট দেননি বরং মেসির স্ত্রীর নামে তৈরি একটি ভেরিফাইড ভুয়া ফেসবুক পেজের পোস্টকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রোকুজ্জোর কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত পেজটির (আর্কাইভ) ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত পেজটি ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৈরি করা হয়েছে। তবে পেজটির অ্যাডমিন লোকেশন হাইড থাকায় পেজটি কোন দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে সে সম্পর্কে তথ্য মেলেনি।

Screenshot: Antonela Roccuzzo Facebook 

এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত অ্যাকাউন্টটির বায়োতে লেখা আছে, তার কোনো টুইটার এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই।

Screenshot: Instagram

পরবর্তীতে, গত ০৮ জুন রাত থেকে আলোচিত ভুয়া ভেরিফাইড পেজটি ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

মূলত, গত ০৫ জুন আর্জেন্টিনার ফুটবলার লিওনেল মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর নামে পরিচালিত একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে মেসিকে বাড়ি ফেরার কথা বলে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পরবর্তীতে একই পেজ থেকে মেসির বিষয়ে আরো দুইটি পোস্ট করা নয়।  তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, পেজটি মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর নামে তৈরি একটি ভুয়া ভেরিফাইড পেজ, যেটির এখন আর ফেসবুকে উপস্থিতি নেই। মেসির স্ত্রী নিজেই তার ইন্সটাগ্রাম আইডির বায়োতে স্পষ্টভাবে লিখেছেন, ‘তার কোনো টুইটার এবং ফেসবুক আইডি নেই।’ কিন্তু আলোচিত পোস্টগুলো রোকুজ্জোই দিয়েছেন দাবি করে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেও একই পেজের পোস্টকে রোকুজ্জোর পোস্ট ভেবে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়লে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।  

বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ছয় কংগ্রেসম্যানের লেখা চিঠিটি আসল 

সম্প্রতি, দেশের কতিপয় গণমাধ্যমসহ ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় জন কংগ্রেসম্যান কর্তৃক একটি চিঠি দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পাঠানোর বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। উক্ত চিঠিটি ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছে কতিপয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। 

সংবাদমাধ্যমে উক্ত দাবিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন বাংলা ইনসাইডার।

বাংলা ইনসাইডারের এ সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

একই সংবাদমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে এ সংক্রান্ত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

গত ০৫ জুন একই বিষয়ে জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার প্রিন্ট এবং অনলাইন সংস্করণেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 

ভোরের কাগজের প্রতিবেদনের শিরোনামে চিঠির সত্যতা নেই বলে দাবি করা হলেও মূল প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি যাচাই করছে বলে দাবি করেছে পত্রিকাটি। তাছাড়া, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এক কংগ্রেসম্যানের টুইটারে উক্ত চিঠিটি প্রকাশ করার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও উক্ত চিঠি রিসিভ করা হয়েছে কিনা এমন কোনো তথ্য সেখানে নেই বলে দাবি করেছে জাতীয় এই দৈনিক।

ফেসবুকের কিছু পোস্টে উক্ত চিঠিটি বানোয়াট এবং মার্কিন কোনো সিনেটর এমন চিঠি দেননি বলে দাবি করা হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে দেশটির ছয় জন কংগ্রেসম্যানের লেখা আলোচিত চিঠিটি ভুয়া শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ২৫ মে প্রকাশিত উক্ত চিঠিটি আসল বলে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি’র (PA-10) ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর জে ওস্ট্রিচ রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে চিঠিটি ভুয়া বলে দাবির পূর্ব থেকেই চিঠিটির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

গত ২৮ মে মূলধারার সংবাদমাধ্যম The Business Standards এর ওয়েবসাইটে চিঠিটির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর উক্ত প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয় সংবাদমাধ্যম কর্তৃপক্ষ। 

Screenshot source: The Business Standards

একইভাবে আরেক সংবাদমাধ্যম ‘আমাদের সময়’-ও গত ২৯ মে একই সংবাদ প্রকাশের পর তা সরিয়ে নেয়। 

Screenshot source: Amader Somoy 

বিষয়টি রিউমর স্ক্যানার টিমের নজরে আসার পর অনুসন্ধান শুরু করি আমরা। 

‘The Business Standards’ এবং ‘আমাদের সময়’ এর প্রতিবেদনে চিঠিটি ১৭ মে প্রকাশিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ‘The Business Standards’ এর প্রতিবেদনে চিঠিটির কোনো ছবি যুক্ত করা না হলেও ‘আমাদের সময়’ এর প্রতিবেদনে চিঠির একটি অংশের ছবি যুক্ত করা হয়। 

এ বিষয়ে কি ওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুকে একই চিঠির দুইটি সংস্করণ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। দুইটি চিঠির ভাষা এবং স্বাক্ষরকারীদের নাম এক হলেও একটি চিঠিতে ১৭ মে (আর্কাইভ) এবং অন্যটিতে ২৫ মে (আর্কাইভ) তারিখ উল্লেখ ছিল। 

Screenshot collage: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, একই চিঠি দুইটি ভিন্ন তারিখে (১৭ ও ২৫ মে) প্রকাশের দাবিতে ছড়িয়েছে।  

চিঠিগুলোর বিষয়ে জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট কংগ্রেসম্যানদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি’র (PA-10) ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর জে ওস্ট্রিচ (Jay Ostrich) গত ৩০ মে রাতে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, উক্ত চিঠিটি আসল। ২৫ মে স্বাক্ষরিত চিঠির একটি কপিও রিউমর স্ক্যানারকে পাঠিয়েছেন তিনি। 

Screenshot collage: Rumor Scanner

পরবর্তীতে গত ০২ জুন উক্ত চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান বব গুড তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২৫ মে লেখা চিঠিটি প্রকাশ করেন। 

Screenshot source: Bob Good Website 

গত ০৬ জুন অনলাইন সংবাদমাধ্যম Just News Bd এর হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে (আর্কাইভ) জানান, “বাংলাদেশে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি সম্পর্কে হোয়াইট হাউস অবগত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)’র স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি।”

গত ০৫ জুন হোয়াইট হাউসে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জ্যাঁ পিয়েরের সঞ্চালনায় আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন বলে জানান মুশফিকুল ফজল আনসারী।

মুশফিকুল ফজল আনসারীর করা এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডমিরাল কিরবি বলেন, আমরা আমাদের অবস্থানে স্থির রয়েছি। এই যোগাযাযোগের (চিঠি পাঠানো) বিষয়ে আমি অবগত।

মুশফিকুল ফজল আনসারী একই পোস্টে Just News Bd এর একটি প্রতিবেদন এবং ব্রিফিংয়ের একটি ভিডিও সংযুক্ত করেন। 

Screenshot source: Facebook

মূলত, সম্প্রতি দেশের কতিপয় গণমাধ্যমসহ ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় জন কংগ্রেসম্যান কর্তৃক একটি চিঠি দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পাঠানো একটি চিঠি ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছে কতিপয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। ২৫ মে প্রকাশিত উক্ত চিঠিটি আসল বলে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি’র (PA-10) ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর জে ওস্ট্রিচ রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান বব গুডও তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া, কংগ্রেসম্যানের চিঠি সম্পর্কে হোয়াইট হাউস অবগত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)’র স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি।

সুতরাং, বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে দেশটির ছয় জন কংগ্রেসম্যানের লেখা আলোচিত চিঠিটি ভুয়া শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Statement from Jay Ostrich
  • Mushfiqul Fazal Ansarey: Facebook Post 
  • Rumor Scanner’s own analysis

অভিনেত্রী সাফা কবির শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে নন

সম্প্রতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন দাবি প্রচার করা হচ্ছে। 

দাবি ১: ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে সাফা কবিরের মৃত্যু

উক্ত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ঢাকা টাইমস২৪, বিজনেস পোস্ট, দৈনিক আমাদের সময়, সমকাল, দ্যা রিপোর্ট২৪বাংলাদেশ জার্নাল, বার্তা বাজার, ডিবিসি নিউজসাম্প্রতিক দেশকাল, বাংলা ভিশন, দেশ রূপান্তর ঢাকা প্রকাশ, রাইজিং বিডি, কালের কণ্ঠ, বাংলা নিউজ২৪, বাংলা.২৪ লাইভ নিউজপেপার, বাংলাদেশ মোমেন্টস, রেডিও টুডে, সানবিডি২৪, জনবানী, আগামী নিউজ, বিএনএ নিউজ, আমাদের কাগজ, নিউজ নাউ২৪, স্বাধীন আলো, একুশে সংবাদ, ডেইলি করতোয়া, বাংলা ইনসাইডার, ফেস দ্যা পিপল (আর্কাইভ)। 

এছাড়া মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘জাগোনিউজ২৪’ ও দৈনিক আমাদের সময় এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তা ঠিক করে নেয়।

গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেইজের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের এডিট হিস্ট্রি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে টুইটারে প্রচারিত টুইট দেখুন এখানে

দাবি ২: অভিনেত্রী সাফা কবিরের মৃত্যু 

উক্ত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ),  এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাট্য অভিনেত্রী সাফা কবির মারা যাননি এবং তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়েও নন বরং শাহরিয়ার কবিরের যে মেয়ে মারা গেছেন, তার নাম অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমু, সাফা কবির নয়।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের নাম কি সাফা কবির?

দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকায় গত ৯ জুন ‘শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের লাশ উদ্ধার নিয়ে যা জানাল পুলিশ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Ajker Patrika 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ বাথরুমের জানালার সঙ্গে গলা রশি বাঁধা অবস্থায় তাঁর লাশটি ঝুলছিল। প্রতিবেদনে তার নাম উল্লেখ করা হয় অর্পিতা শাহরিয়ার মুমু (৪১)। 

Screenshot: Ajker Patrika 

পাশাপাশি অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এ একইদিনে ‘শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মরদেহ উদ্ধার‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের নাম অর্পিতা কবির মুমু।

Screenshot: bdnews24

এছাড়া একই গণমাধ্যমে ‘শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মৃত্যু: ‘বিব্রত’ সাফা কবির‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার মহাখালীতে শাহরিয়ার কবিরের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় তার মেয়ে অর্পিতা কবির মুমুর মরদেহ। তবে এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণ এবং অনলাইন পোর্টালে ওই খবর প্রচার করা হয় সাফা কবিরের নাম দিয়ে। আর এই ভুল তথ্যের কারণে  বিড়ম্বনায় পড়েছেন মডেল- অভিনেত্রী সাফা কবির।

Screenshot: bdnews24

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে আলোচিত প্রসঙ্গে অভিনেত্রী সাফা কবিরের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেইজে সবাইকে ছুটির দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Safa Kabir Facebook Post

সেখানে তিনি বলেন, ‘একটি ভুল পোস্টে আমাকে অনেকেই ট্যাগ করছেন। নামের সাথে মিল থাকায় অনেকেই আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। না জেনে এভাবে প্যানিক ছড়ানোটা ঠিক না। এতে আমাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে, বিব্রত হতে হয়েছে। আমি আল্লাহর রহমতে এবং আপনাদের দোয়ায় সুস্থ আছি, ভালো আছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ সবার ভালো করুক, আমিন।’

অর্থাৎ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি  শাহরিয়ার কবিরের মৃত মেয়ের নাম অর্পিতা কবির মুমু, সাফা কবির নয়। কিন্তু কিছু জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণ এবং অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদনে অর্পিতা কবির মুমুকেই সাফা কবির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এছাড়া অভিনেত্রী সাফা কবিরের পোস্টের প্রেক্ষিতে কতিপয় গণমাধ্যমে পুনরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনেও শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে হিসেবে সাফা কবির নামটি উল্লেখ করে।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন 

ঢাকা টাইমস২৪, সময়ের আলো, বাংলাদেশ মোমেন্টস। 

তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের সার্বিক অনুসন্ধানে উভয়ের নামের মধ্যে ‘কবির’ ব্যতীত আর কোথাও মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অভিনেত্রী সাফা কবির কি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে?

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি  শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অভিনেত্রী সাফা কবিরের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হয়, অভিনেত্রী সাফা কবির শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে।

তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিনেত্রী সাফা কবিরের সাথে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি  শাহরিয়ার কবিরের কোনো সম্পর্ক নেই।

বরং অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অভিনেত্রী সাফা কবিরের পরকালে বিশ্বাস সম্পর্কিত একটি বক্তব্যের জেরে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ঐ দাবিটিই সত্য তথ্য হিসেবে বিভিন্নভাবে প্রচার হতে থাকে। 

এই দাবির ভিত্তিতে ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

Image Collage: Rumor Scanner 

এসব পোস্টে দাবি করা হয়, অভিনেত্রী সাফা কবির, গায়ক জন কবির ও আরেক অভিনেত্রী সোহানা সাবার (সাবা কবির) বাবা-মা হলেন শাহরিয়ার কবির ও খুশি কবির। 

এ নিয়ে অনুসন্ধানে গায়ক জন কবিরের ফেসবুক পেইজে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল ‘Hello social media, I usually give out my personal data for important paper works but today making an exception for an obvious reason‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Jon Kabir  Facebook Post

পোস্টটিতে জন কবির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নামে গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে লিখেন তার পিতার নাম, আলমগীর ও মাতার নাম লায়লা। তার আরও আরও দুই ভাই থাকলেও কোনো বোন নেই। 

পাশাপাশি অভিনেত্রী সোহানা সাবার ফেসবুক পেইজেও একই বছরের ১৬ এপ্রিল ‘অনেক আগে আমাকে নিয়ে একটা “মিম(meme)” করা  হয়েছিল .. যেটা এত বোকা বোকা একটা meme যে হাসিও পায় নি  আমার বরং বিরক্ত লেগেছে‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Sohana Saba Facebook Post

পোস্টটিতে তিনি লিখেন, ‘শাহরিয়ার কবির চাচা..ছোটবেলা থেকে তাকে আমি চিনি খুশী কবির..উনাকে আমি অসম্ভব পছন্দ করি জন কবির..যে আমার কো-আর্টিস্ট, সাফা কবির যার সাথে আমার হার্ডলি 2 বার দেখা হয়েছে দুটো প্রোগ্রামে ।। আমাদের নামের সাথে নাম মিলিয়ে একটা ফ্যামিলি বানানো হয়েছে memeটাতে যেটা খুবই হাস্যকর !! যেখানে জোর করে আমাকে ফ্যামিলি মেম্বার করা হয়েছে আমাকে -সাবা কবির বানিয়ে! যাই হোক আমার একটা ভাই আছে। আমরা এক ভাই এক বোন ইহজনমে আমার কোন বোন নাই !!’

Screenshot: Sohana Saba Facebook Post 

পরবর্তীতে সাফা কবির নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার বাবার নাম হুমায়ুন কবির সবুজ ও মাতার নাম জেসমিন কবির

Screenshot: agami24

অর্থাৎ জন কবির, সাফা কবির ও সোহানা সাবার শাহরিয়ার কবিরের ছেলে-মেয়ে হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, শাহরিয়ার কবিরের স্ত্রীর নামও খুশি কবির নয় বরং তার স্ত্রীর নাম ডানা কবির। 

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই দাবির ভিত্তিতে ২০১৯ সালে কুমিল্লার হোমনায় একটি ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দেন মাওলানা শহিদুল ইসলাম সিদ্দিক নামে একজন ইসলামি বক্তা৷ 

Screenshot: Sylhettoday24

তবে পরবর্তীতে তিনি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বক্তব্য দিয়ে জানান, ‘ফেসবুকে সাফা কবিরের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে সাবা কবির, শাহরিয়ার কবির ও খুশি কবিরের ছবি শেয়ার দেওয়া হয়েছিল। আমি সেগুলো যাচাই বাছাই না করেই ওয়াজে বলেছিলাম। ভুলক্রমে আমি সেটা বলেছি। আসলে ফেসবুকের কোনো পোস্ট দেখে কেউ যেন কখনো কোনো বক্তা ওয়াজ না করেন। আমি দুঃখিত, আমি তওবা করেছি, ফেসবুকের পোস্ট দেখে আমি আর কখনো ওয়াজ করব না। আর তথ্য না জেনে যেন কেউ আলোচনা না করেন।’

মূলত, গত বুধবার (৭ জুন) দিবাগত রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে গণমাধ্যমে শাহরিয়ার কবিরের মেয়েকে সাফা কবির হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে এই তথ্যটিই বিকৃত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  অভিনেত্রী সাফা কবিরের মৃত্যুর সংবাদ দাবিতে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিনেত্রী সাফা কবির ও শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা কবির দুইজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি এবং সাফা কবিরের সঙ্গে শাহরিয়ার কবিরের কোনো পারিবারিক সম্পর্কই নেই।

সুতরাং, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মৃত্যুর ঘটনায় তাকে সাফা কবির হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি অভিনেত্রী সাফা কবির শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশুর মৃত্যুর খবরে গণমাধ্যমে তার জীবিত ভাইয়ের ছবি প্রচার

সম্প্রতি, দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তির মৃত্যুর খবরে দেড় বছর বয়সী দাবি করে আবদুর রহমান নামে এক শিশুর ছবি প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত ছবি প্রকাশ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো, ইত্তেফাক, দৈনিক আমাদের সময়, আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

একই ছবি ব্যবহার করে আজকের (০৮ জুন) প্রিন্ট সংস্করণে সংবাদ প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক কালবেলা

একই দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

কতিপয় গণমাধ্যমে শিশুটির বাবা মাহবুবুরকে জীবিত দাবি করে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন কালের কণ্ঠ, ডেইলি অবজারভার, সিল্কসিটি নিউজ, প্রভাত আলো, সোনার দেশ

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কতিপয় গণমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তির মৃত্যুর খবরে দেড় বছর বয়সী আবদুর রহমান নামে যে শিশুটির ছবি প্রচার করা হয়েছে সে আবদুর রহমান নয় বরং আবদুর রহমানের প্রায় আট বছর বয়সী মেঝো ভাই আবু হুরায়রার ছবিকে আবদুর রহমানের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, দুর্ঘটনায় শুধু শিশুটিই নয়, ঘটনাস্থলেই মারা গেছে তার বাবা মাহবুব আলম। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে Mahabubur Rahman Shozib নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল (০৭ জুন) বিকেলে প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের। 

জনাব সজীব লিখেছেন, “প্রথম আলো যে যাচাই বাছাই ছাড়াই নিউজ করে এটাও তার একটা প্রমান, বড় ছেলের ছবি আমি ভুলে পোস্ট করেছিলাম,আর ওই ছবিই সবাই পোস্ট করেছে, আর প্রথম আলো যাচাই ছাড়াই ছবির পাশে দেড় বছরের ছেলে লিখে দিয়েছে। প্রথম আলো ছবি দেখেও ভাবলো না এই ছেলের বয়স দেড় বছর না অনেক বড়।” 

Screenshot source: Facebook 

সজীবের অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একইদিন (০৭ জুন) দুপুরে তিনি এই দুর্ঘটনার বিষয়ে আরেকটি পোস্টে (আর্কাইভ) শুরুতে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত আলোচিত শিশুটির ছবি প্রকাশ করেন। তবে পরবর্তীতে পোস্ট এডিট করে মৃত শিশুটির ছবি যুক্ত করেন। 

সজীব এই পোস্টে উল্লেখ করেন, “মালেক ভাইয়ের শাশুড়ীর জানাজায় এসে ফেরার পথে মাহাবুব ভাই ও তার ছেলে দাশুড়িয়ায় রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে, তার স্ত্রী ও আরেক ছেলেও গাড়ীতে ছিলো।”

Screenshot source: Facebook 

পরবর্তীতে জনাব সজীবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানার টিমকে মাহবুব আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, তার মেজ ভাই আবদুল মালেক এবং ছোট বোন শাকিলা আফরিন তিথির ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান দেন। জনাব সজীব জানান, মাহবুব আলম তার প্রতিবেশী। 

মাহবুব আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের (আর্কাইভ) প্রোফাইল পিকচারে গণমাধ্যমে প্রচারিত মাহবুবের ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Facebook 

জনাব সজীবের সহায়তায় মাহবুব আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ১০ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) মাহবুবের তিন সন্তানের ছবিই খুঁজে পাওয়া যায়। জনাব সজীব রিউমর স্ক্যানার টিমকে ছবির ব্যক্তিদের মধ্যে মাহবুবের তিন সন্তানকে চিহ্নিত করে দেখিয়েছেন। ছবিতে চিহ্নিত ২য় সন্তানের সাথে গণমাধ্যমে প্রকাশিত শিশুটির মিল আছে বলে প্রতীয়মান হয়। 

Screenshot source: Facebook 

পরবর্তীতে মাহবুবের মেজ ভাই আবদুল মালেকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ১৪ মে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) ২য় সন্তানের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে গণমাধ্যমের আলোচিত শিশুটির ছবির মিল রয়েছে। 

Screenshot collage: Facebook

আরও অনুসন্ধান করে জনাব সজীবের সহায়তায় মাহবুবের ছোট বোন শাকিলা আফরিন তিথির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ১৬ মে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) ৩য় সন্তানের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

তিথি তার পোস্টে উল্লেখ করেন, তার বড় ভাইয়ের ছেলে সন্তান হয়েছে। 

Screenshot source: Facebook 

তিথির পোস্টের সূত্র ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, ছেলেটির বর্তমান বয়স এক বছর এক মাস প্রায়। 

জনাব সজীব রিউমর স্ক্যানার টিমকে Shah Alam নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল (০৭ জুন) প্রকাশিত একটি পোস্টের  সন্ধান দেন। এই পোস্টে মাহবুব ও তার সন্তানের মৃতদেহের ছবি রয়েছে বলে জানান সজীব। 

Screenshot source: Facebook 

সার্বিক বিষয়ে নিশ্চিত হতে পরবর্তীতে প্রথমে মাহবুবের মেজ ভাই আবদুল মালেক এবং পরবর্তীতে তার ছোট বোন শাকিলা আফরিন তিথির সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। আবদুল মালেক রিউমর স্ক্যানারকে জানান, কতিপয় গণমাধ্যমে যে শিশুর ছবি প্রচার করা হয়েছে সেটি মারা যাওয়া শিশুটির নয়। মারা যাওয়া উক্ত শিশুর (আবদুর রহমান) একটি ছবিও তিনি আমাদের কাছে পাঠান। 

Screenshot source: WhatsApp 

পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের সাথে মাহবুব আলমের ছোট বোন শাকিলা আফরিন তিথির কথা হয়৷ তিনি জানান, “যে ছবিটা গণমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে সে তো আমাদের কাছে জীবিত আছে। সে আমার ভাইয়ের দ্বিতীয় সন্তান। তার নাম আবু হুরায়রা। বয়স আট বছর হয়েছে। সে আহত হলেও এখন বিপদমুক্ত। যে মারা গেছে সে ভাইয়ের ছোট ছেলে। তার গত মাসে এক বছর পূর্ণ হয়েছে।”

মূলত, সম্প্রতি দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তির মৃত্যুর খবরে দেড় বছর বয়সী আবদুর রহমান নামে এক শিশুর ছবি প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবিটি মারা যাওয়া শিশুটির নয়। মারা যাওয়া শিশু আবদুর রহমানের প্রায় আট বছর বয়সী মেঝো ভাই আবু হুরায়রার ছবিকে আবদুর রহমানের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, কতিপয় গণমাধ্যমে দুর্ঘটনায় শুধু শিশুটিই মারা গেছে বলে দাবি করা হলেও অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিশুটির সাথে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে তার বাবা মাহবুব আলম। 

সুতরাং, সড়ক দুর্ঘটনায় ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে জীবিত মেজো ভাইয়ের ছবি কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • Mahabubur Rahman Shozib: Facebook Post
  • Statement from Mahabubur Rahman Shozib
  • Statement from Abdul Malek
  • Statement from Shakila Afrin Tithi
  • Rumor Scanner’s own analysis 

ঢাকাকে জঙ্গল মনে হয় শীর্ষক কোনো বক্তব্য দেননি মেয়র তাপস

সম্প্রতি ‘রাজধানী ঢাকাকে জঙ্গল মনে হয়। যেখানে-সেখানে অনেক গাছ লাগানো। এগুলো অনেক জায়গা দখল করে আছে। কিন্তু বাতাস পাওয়া যায় কম।‘ শীর্ষক বক্তব্যকে গাছ কাটা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্য দাবি করে একটি তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন যমুনা টিভি

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাছ কাটা নিয়ে গণমাধ্যম সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বক্তব্যটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নয় বরং গাছ কাটা সংক্রান্ত বিষয়ে গত ১৩ মে জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি রম্য রচনায় থাকা কল্পিত মেয়রের বক্তব্যকে মেয়র তাপসের আসল বক্তব্য হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।

দাবিটির সূত্রপাত যেভাবে

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোর সূত্রে বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টিভির একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: সাদা এপ্রোন ফেসবুক পেইজ 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে যমুনা টিভির ওয়েবসাইটে ‘গাছ কাটার সংবাদ প্রকাশ: ক্ষতিপূরণ চেয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মেয়র তাপসের নোটিশ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jamuna TV 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘রাজধানীতে গাছ কাটা নিয়ে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের কাছে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। একইসঙ্গে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক ও প্রতিবেদক বরাবর।’ 

প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘গত ১৩ মে ‘কাটিং ট্রিস টু মেক ওয়ে ফর এয়ার’ শিরোনামে ডেইলি স্টারে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, তীব্র গরমের মধ্যে রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ অংশে গাছ কাটার কর্মসূচি নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তবে গাছ কাটার বিষয়ে মেয়র তাপস যুক্তি দিয়ে বলেন, রাজধানী ঢাকাকে জঙ্গল মনে হয়। যেখানে-সেখানে অনেক গাছ লাগানো। এগুলো অনেক জায়গা দখল করে আছে। কিন্তু বাতাস পাওয়া যায় কম। বাতাস চলাচলের জন্য আমাদের অনেক খোলামেলা বড় জায়গা দরকার। আর গাছ কাটা হলে এসব খালি জায়গা দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারবে।’

অর্থাৎ ১৩ মে গাছ কাটা নিয়ে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কারণে মানহানির অভিযোগ এনে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

কি আছে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনটিতে? 

অনুসন্ধানের এই পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার টিম গত ১৩ মে গাছ কাটা নিয়ে ডেইলি স্টারে ‘Cutting trees to make way for air‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যাচাই করে। 

এতে দেখা যায়, প্রতিবেদনটির শুরুতেই উল্লেখ রয়েছে এটি ‘Satireday’ এর একটি প্রকাশনা৷ অর্থাৎ এটি একটি স্যাটায়ার বা রম্য।

Screenshot: Daily Star 

এছাড়া প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে কোথাও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বা করপোরেশনটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বিষয় উল্লেখ নেই বরং উল্লেখ রয়েছে ধোকা সাউথ টাউন করপোরেশন এবং করপোরেশনটির মেয়রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে ফাপস ধর। 

Screenshot: Daily Star 

এছাড়া গণমাধ্যমে যেই বক্তব্যটিকে মেয়র তাপসের বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে, সেটিও মূলত ঐ রম্যরচনার কল্পিত মেয়র ফাপস ধরের।

Screenshot: Daily Star 

পরবর্তীতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের আইনি নোটিশের প্রেক্ষিতে ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে ৮ জুন ‘Our reply to legal notice‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Daily Star 

ডেইলি স্টারের সম্পাদক বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, Satireday হচ্ছে ডেইলি স্টারের সাপ্তাহিক একটি রম্যপাতা। এই রম্যপাতাতেই গত ১৩ মে ‘Cutting trees to make way for air‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। 

অর্থাৎ এটি কোনো সংবাদ প্রতিবেদন বা কলাম ছিল না বরং এটি ছিল একটি রম্যরচনা। 

প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, রম্য রচনাটিতে কাউকে আঘাত বা কারো প্রতি মানহানি করা হয়নি। তবে আইনি নোটিশের প্রেক্ষিতে উক্ত রম্য রচনাটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। 

একই ঘটনায় গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন

গণমাধ্যমে ডেইলি স্টারের রম্য রচনার কল্পিত মেয়রের বক্তব্যকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের আসল বক্তব্য হিসেবে প্রচার করার পাশাপাশি এই বিষয়ে ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে অধিকাংশ গণমাধ্যমে বিষয়টি যে রম্যরচনা ছিল সেটি উল্লেখ ছাড়াই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন 

বাংলাদেশ জার্নাল, চ্যানেল২৪চ্যানেল২৪ (ইউটিউব), বাংলা ভিশনসময় টিভি, সময় টিভি (ইউটিউব), সমকালবাংলাদেশ মোমেন্টস, সাম্প্রতিক দেশকালঢাকা টাইমস, জুম বাংলা, বাংলাদেশ বুলেটিনরেডিও টুডে, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, বাংলা নিউজ২৪, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, বাংলা ট্রিবিউন, দৈনিক বাংলা, এনটিভি, নিউজ বাংলা২৪দৈনিক করতোয়া, বাহান্ন নিউজ, মানবজমিন, একাত্তর টিভি, ঢাকা ট্রিবিউন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, একুশে টিভি, নয়া দিগন্ত, আজকের  পত্রিকা, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ডেইলি সান, নিউজনাউ২৪, বাংলা.২৪লাইভ নিউজপেপার, সময়ের কণ্ঠস্বর, জনবানী, দৈনিক কল্যান

এসব প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনগুলোতে কেবল মেয়র তাপসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমানকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তবে প্রতিবেদনগুলোতে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনটি যে একটি রম্যরচনা ছিল সে সম্পর্কিত কোনো তথ্যের উল্লেখ ছিল না, যা স্পষ্টত বিভ্রান্তিকর। 

মূলত, গত ১৩ মে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার তাদের সাপ্তাহিক আয়োজন স্যাটায়ার ডে তে ‘কাটিং ট্রিস টু মেক ওয়ে ফর এয়ার’ শিরোনামে একটি রম্যরচনা প্রকাশ করে। গাছ কাটা নিয়ে ডেইলি স্টারের এই রম্যরচনায় ধোকা সাউথ টাউন করপোরেশন এবং  করপোরেশনটির একজন কল্পিত মেয়রের সাক্ষাতকার প্রকাশ করা হয়। তবে এই ঘটনায় মানহানি হয়েছে দাবি করে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০০ কোটি টাকা চেয়ে ইংরেজি দৈনিকটিকে আইনি নোটিশ পাঠান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে গণমাধ্যমে ডেইলি স্টারের রম্য রচনায় থাকা কল্পিত মেয়রের বক্তব্যকেই মেয়র তাপসের আসল বক্তব্য হিসেবে প্রচার করা হয়।

সুতরাং, গাছ কাটা নিয়ে গণমাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ স্যাটায়ার। 

তথ্যসূত্র

খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীকে বেইমান-মুনাফেক আখ্যায়িত করেছেন দাবিতে এডিটেড ভিডিও প্রচার

দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন  ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্ধৃত করে ‘জামায়াতে ইসলাম এরা হলো বেইমান মুনাফেক’ শীর্ষক একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 


সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)
২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 


ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপি চেয়ারপারসন  ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কর্তৃক বেইমান মুনাফেক বলার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর বক্তব্যটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি জনসভায় দেওয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে সম্পাদনা বা বিকৃত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওগুলোর সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রদানের উক্ত সমাবেশটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। 

Screenshot: মো: মুরছালিন মোল্লা ফেসবুক পোস্ট

এই তথ্যের সূত্রে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Daily Prothom Alo 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে এবং গুম-খুন-নির্যাতন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ২০-দলীয় জোট উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

পরবর্তীতে এই প্রতিবেদনের সূত্রে অনুসন্ধানে ফেসবুকে ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক বিএনপি’র সংবাদপত্র নামের একটি ফেসবুক পেইজে ‘আওয়ামী লীগ মুনাফেক-বেঈমান : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খালেদা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: দৈনিক বিএনপি’র সংবাদপত্র ফেসবুক পোস্ট

পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বর্তমান সরকার অবৈধ মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ হলো মুনাফেক, বেইমান। তিনি বলেন, এদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষের চেয়ে টাকা বড়। তাই দেশ রক্ষায় এদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিকেল ৫ টা ১৬ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করে সন্ধ্যা প্রায় ৬ টার দিকে বক্তব্য শেষ করেন।’

একইদিনে একই শিরোনামে প্রকাশিত ফেসবুকে আরও কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে। 

Image Collage: Rumor Scanner 

এসব পোস্ট ব্যতীত সেই সময় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জামায়াতেইসলামীকে ‘মুনাফেক-বেইমান’ আখ্যায়িত করেছেন এমন কোনো তথ্য গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং অনুসন্ধানে দেখা যায়,  খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত ঐ জনসভায় জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমানও বক্তব্য দিয়েছিলেন।

Screenshot: Banglanews24

ঐদিনের সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে কি বলেছিলেন খালেদা জিয়া?

জামায়াতে ইসলামীকে খালেদা জিয়া ‘মুনাফেক-বেইমান’ বলেছেন কি না এমন তথ্য অনুসন্ধানে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ এ ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ‘জেলে ভয় পাই না, তবে পরের বিষয়টি ভেবে দেখবেন‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Banglanews24

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। 

বক্তব্যের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের হাতে কোনো ধর্মই নিরাপদ নয় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সময় আসবে তখন ভুলে যাবেন না। এদের হাতে আপনাদের রক্ত। শুধু আলেম বা মুসলমান না, কোনো মানুষই নিরাপদ না। চট্টগ্রামে বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙে দিয়েছে। সারা দেশে হিন্দুদের মন্দির ভেঙে দিয়েছে। এ কারণে এ সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। এরা বেঈমান, মুনাফেক। এদের কাছে টাকা আর ক্ষমতাই বড়।

Screenshot: Banglanews24

বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আছে বলে এখন জামায়াতে ইসলাম খারাপ, স্বাধীনতা বিরোধী। কিন্তু এই জামায়াতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল। তখন তারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ছিল।

Screenshot: Banglanews24

অর্থাৎ খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আলাদা আলাদা বক্তব্য দেন এবং আওয়ামী লীগ নিয়ে বক্তব্যের অংশে দলটিকে ‘বেঈমান, মুনাফেক।’ হিসেবে উল্লেখ করেন। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলেন, জামায়েত ইসলাম যখন আওয়ামী লীগের সাথে ছিল তখন তারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ছিল, এখন বিএনপির সঙ্গে আছে বলে এখন জামায়াতে ইসলাম খারাপ, স্বাধীনতা বিরোধী।

পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার বক্তব্যটি অধিকতর অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম সেদিনের বক্তব্যটির ভিডিও সংস্করণ খুঁজে। 

অনুসন্ধানে Shahjalal Saju নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৮ জুন ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড সহ আওয়ামী লীগের কুকর্ম নিয়ে খালেদা জিয়ার ঐতিহাসিক ভাষণ (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত প্রায় ২২ মিনিটের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Shahjalal Saju Youtube 

এই ভিডিওটির সঙ্গে খালেদা জিয়া কর্তৃক জামায়াতে ইসলামকে ‘বেইমান মুনাফেক’ আখ্যায়িত করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

এই ভিডিওটির ৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড সময়কালে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকারের হাতে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়। আপনারা দেখেছেন না, পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে কি অবস্থা করেছে! সারা দেশে হিন্দুদের মন্দির ভেঙে দিয়েছে। এ কারণে এ সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। এরা বেঈমান, মুনাফেক। এদের কাছে টাকা আর ক্ষমতাই বড়।’

একই বক্তব্যের ৮ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামকে বলে…জামায়াতে ইসলাম বিএনপির সঙ্গে আছে, এখন তাই জামায়াতে ইসলামকে নানা অপবাদ দেওয়া হয়। জামায়াত ইসলাম খারাপ, জামায়াতে ইসলামীকে কখনো জঙ্গী বানায়, কখনো স্বাধীনতা বিরোধী, যা ইচ্ছা তাই বলে। কিন্তু জামায়াতে ইসলাম যখন আওয়ামী লীগের সাথে ছিল তখন তারা ছিল আওয়ামী লীগের বন্ধু, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।’

অর্থাৎ, রিউমর স্ক্যানার টিমের সার্বিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, জামায়াতে ইসলামীকে খালেদা জিয়া ‘মুনাফেক-বেইমান’ বলেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খালেদা জিয়ার দেওয়া একটি দীর্ঘ বক্তব্যের দুইটি খন্ডিত অংশ জোড়া দিয়ে তৈরী করা। 

মূলত, ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ২০-দলীয় জোট উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে যোগ দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই সমাবেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা সহ নানা বিষয় তুলে ধরে পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য রাখেন তিনি। এই সময়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি জামায়াত ইসলামী নিয়েও কথা বলেন৷ রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,  তার দীর্ঘ পৌনে এই এক ঘণ্টার বক্তব্য থেকেই আলাদা আলাদা আলোচনার দুইটি অংশ কেটে জোড়া দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে, জামায়াতে ইসলামীকে খালেদা জিয়া ‘মুনাফেক-বেইমান’ বলেছেন।

সুতরাং, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ২০১৪ সালের দীর্ঘ একটি বক্তব্য থেকে আলাদা আলাদা দুইটি অংশ কেটে নিয়ে তিনি জামায়াতে ইসলামীকে বেইমান বলেছেন-মুনাফেক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

বিল পরিশোধ করতে না পারায় আদানি থেকে বিদ্যুৎ আসা বন্ধের বিষয়টি মিথ্যা

0

সম্প্রতি ‘বিল পরিশোধ করতে না পারায় পায়রার পর এবার ভারতের আদানি থেকে বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়ে গেল’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিল পরিশোধ করতে না পারায় ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়নি বরং চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে বুধবার (০৭ জুন) ঝড়ো বাতাসে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ‘ট্রিপ’ করায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলেও পরবর্তীতে গত রাতেই পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম The Daily Star এর ওয়েবসাইটে গত ০৭ জুন ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে আদানি পাওয়ারের সঞ্চালন লাইনে ‘ট্রিপ’, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: The Daily Star

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল (০৭ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে আদানি পাওয়ারের ট্রান্সমিশন লাইনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে গতকাল (০৭ জুন) রাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন-সংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক মো. শামীম হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “এটা সম্পূর্ণই মিথ্যা কথা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে বেলা আড়াইটার দিকে ঘটে যাওয়া টর্ণেডোর কারণে আদানি থেকে যে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়, তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে আদানির বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং একইসাৎে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও বন্ধ হয়ে যায়। ঘন্টা দু’য়েকের মধ্যে বাংলাদেশ অংশের সঞ্চালন লাইন মেরামত করা হয় এবং তা আদানিকে জানিয়ে দেয়া হয়।”

শামীম হাসান জানান, “আজ (গতকাল) রাত ১১ টা নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হবে বলে আদানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

“রাত ১১ টার পর এ বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট জানতে চেয়ে জনাব শামীমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর বিষয়টি পিজিসিবি জানাতে পারবে কারণ তারাই এই বিষয়গুলো দেখে।”

পরবর্তীতে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর মুখপাত্র এ. বি. এম বদরুদ্দোজা খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে আজ দুপুরে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “গত রাত ৩.৪৩ মিনিট থেকেই পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।”

জনাব বদরুদ্দোজা খানের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় আদানির কেন্দ্র থেকে দেশের জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের পরিমাণ ছিল ৬০৭ মেগাওয়াট।’

মূলত, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে বুধবার দুপুরে ঝড়ো বাতাসের কারণে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ‘ট্রিপ’ করায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে সঞ্চালন লাইন দুই ঘন্টা পরই ঠিক করা হয় এবং পুনরায় গত রাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু উক্ত ঘটনাকেই ‘বিল পরিশোধ করতে না পারায় আদানি থেকে বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়েছে’ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের সক্ষমতার তুলনায় বেশি বা কম বিদ্যুৎ সঞ্চালন বা কোনো কারণে সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে যাকে লাইন ‘ট্রিপ’ করেছে বলা হয়।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারিত হলে সে সময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, বিল পরিশোধ করতে না পারায় ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা বন্ধের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পদত্যাগ এবং বহিস্কারের দাবিগুলো মিথ্যা

সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলায় বহিস্কৃত হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পদত্যাগ করেননি এবং তাকে বহিস্কার করার কোনো ঘটনাও ঘটেনি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিও তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। 

গত ০৬ জুন Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। 

Screenshot: Sabai Sikhi YouTube

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পুরোনো কয়েকটি ছবি দেখা যায়। 

১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওটিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের অন্য একটি ভিডিও সংযুক্ত করা হয়। এরপর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলার বহিস্কার হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণায় তিনি বহিস্কৃত হলেন। এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণায় বিপাকে পড়লো আওয়ামী লীগ সরকার।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। 

পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে। 

এছাড়াও প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে নাগরিক টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৪ জুন ‘নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নেবেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Nagorik TV YouTube

এই ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির শুরুর অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, গত ০৪ জুন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের সাথে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে কথা বলার সময়ের একটি ভিডিও আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ ও বহিষ্কার করা হয়েছে দাবির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের পদত্যাগ কিংবা তার বহিস্কার সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আনিসুল হক এখনো আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর পদে বহাল আছেন।

Screenshot: Ministry of Law Website

অর্থাৎ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পদত্যাগ এবং তার বহিস্কৃত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়। 

মূলত, সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলায় বহিস্কৃত হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ কিংবা তাকে বহিস্কারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

প্রসঙ্গত, গত ০৪ জুন রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক আলাপচারিতায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন করবেন’। তবে পরবর্তীতে আইনমন্ত্রীর উক্ত বক্তব্যকে তার শব্দচয়নে ভুল উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে আইন মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে ভিডিও প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং তাকে বহিস্কারের দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র