সম্প্রতি, “আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেনি বরং কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত ভিত্তিহীন দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে কি না- তার প্রাথমিক অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবি সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানের মাধ্যমে দৈনিক ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ২৫ মে “ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন কারা, যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।

পরবর্তীতে তথ্যটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল বা কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নীতি ঘোষণা করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরেও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের মার্কিন ভিসা বাতিল সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোন দেশের সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে অ্যান্থনি ব্লিনকেন সে বিষয় নিয়ে টুইট প্রকাশ করে থাকেন।
পাশাপাশি, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিলের বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
কি আছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত নতুন ভিসা নীতিতে?
অনুসন্ধানে বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের সমর্থনে প্রণীত নতুন ভিসানীতি সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাস্য‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, নতুন এই ভিসা নীতিমালার আওতায় এখন পর্যন্ত কোনো ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।

মূলত, গত ২৫ মে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এই ভিসা নীতির আওতায় এখনো কাউকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। কিন্তু, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের মার্কিন ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এমন একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকে যেসব পোস্টে উল্লিখিত দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে সেসব পোস্টে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ছাড়াই আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট শীর্ষক ভিত্তিহীন দাবিটি ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ডিএমপি’র গুলশান থানার ওসির মার্কিন ভিসা বাতিল এর ভুল দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদন গুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The Daily Star – “ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন কারা, যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস”
- U.S. Department Of Treasury- Website
- U.S. Department Of State- Facebook Page
- U.S. Department Of State- Website
- Rumor Scanner’s own analysis