সম্প্রতি, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন তালিকায় থাকা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের আমেরিকার ভিসা বাতিলের দাবিতে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবি: বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন তালিকায়।

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও এখানে (আর্কাইভ)।
দাবি: মেয়র তাপস যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন তালিকায় নেই ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের আমেরিকার ভিসাও বাতিল হয়নি। বরং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত দাবি দুইটি প্রচার করা হচ্ছে।
দাবি: বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন লিস্টে
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় থাকার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ৩১ মে জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তায় ‘মার্কিন ভিসা নীতির প্রতিক্রিয়া জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন সরকার ঘোষিত ভিসা নীতির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। প্রতিক্রিয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে প্রতিবেদনটি থেকে আসাদুজ্জামান খান কামালকে যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে তথ্যটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নীতি ঘোষণা করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরেও এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোন দেশের সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে অ্যান্থনি ব্লিনকেন সে বিষয় নিয়ে টুইট প্রকাশ করে থাকেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভিসা নীতি ঘোষণার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল আই এর টকশো অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রায় লাইভে যুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থাপক জিল্লুরের প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, “আমি একটি বিষয় খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আজ আমরা কাউকে স্যাংশন দিচ্ছি না। সেক্রেটারি অফ স্টেট একটি নতুন নীতির ঘোষণা করেছেন, যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেই সব ব্যক্তির ভিসা সুবিধায় বিধি–নিষেধ আরোপ করতে পারবে, যারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির ফেসবুক পেইজ ও বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের টুইটার অ্যাকাউন্ট খুঁজেও এমন কোনো তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন তালিকায় থাকার দাবিটি কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে।
দাবি: মেয়র তাপস যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত পহেলা জুন ‘Yes, মেয়র তাপস যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না.এটাই সত্য‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ইউটিউব ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে উপস্থাপক দাবি করেন, সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম‘ শীর্ষক বক্তব্যের জেরে তার ভিসা বাতিল হবে।

এক্ষেত্রে উপস্থাপক সূত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত নতুন ভিসা নীতির কথা উল্লেখ করেন এবং এর পক্ষে ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
অর্থাৎ উপস্থাপক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের জেরে তার আমেরিকার ভিসা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা বা অনুমানের কথা বলেছেন এবং তার দাবির পক্ষে পুরো ভিডিওতে তিনি আর কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র উল্লেখ করতে পারেননি।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির ফেসবুক পেইজ ও বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের টুইটার অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করেও উপস্থাপকের দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কি আছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত নতুন ভিসা নীতিতে?
অনুসন্ধানে বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের সমর্থনে প্রণীত নতুন ভিসানীতি সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাস্য‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, নতুন এই ভিসা নীতিমালার আওতায় এখন পর্যন্ত কোনো ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।

মূলত, গত ২৫ মে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে নতুন এই ভিসা নীতির আওতায় এখনো কাউকে বিধিনিষেধ আরোপ করা না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার দলীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যেমন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নামে প্রচার করা হচ্ছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় পড়েছেন বা তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত ভিত্তিহীন দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন তালিকায় থাকার ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের আমেরিকার ভিসা বাতিল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Daily Banik Barta: মার্কিন ভিসা নীতির প্রতিক্রিয়া জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ
- U.S. Department of the treasury: Sanction Programs and Information
- Antony Blinken Twitter Account: https://twitter.com/SecBlinken?s=09
- Antony Blinken Twitter: https://twitter.com/SecBlinken/status/1661418792365195284?s=19
- US Embassy Dhaka: https://www.facebook.com/bangladesh.usembassy?mibextid=ZbWKwL
- US Ambassador Peter Haas Twitter: https://twitter.com/PeterHaasAmb?s=09
- US Embassy Bangladesh: বাংলাদেশের নির্বাচনের সমর্থনে প্রণীত নতুন ভিসানীতি সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাস্য