Home Blog Page 565

প্রথম আলো’র ফটোকার্ড নকল করে তারেক রহমানকে জড়িয়ে টাঙ্গাইলের বিএনপি নেতার নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার 

সম্প্রতি, “তারেক রহমান না আসা পর্যন্ত আর কোন সমাবেশে আসবো না” শীর্ষক মন্তব্যকে টাঙ্গাইলের বিএনপি নেতার মন্তব্য দাবিতে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তারেক রহমান না আসা পর্যন্ত আর কোন সমাবেশে অংশগ্রহণ করবো না শীর্ষক মন্তব্যকে টাঙ্গাইলের বিএনপি নেতার মন্তব্য দাবিতে প্রথম আলো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৮ অক্টোবর ২০২৩। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগো ও তারিখের সূত্র ধরে প্রথম আলো’র ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ২৮ অক্টোবর কিংবা তার আগে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, প্রথম আলো’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া,পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে গত ২৮ অক্টোবর (যেহেতু ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটিতে তারিখ ২৮ অক্টোবর লেখা রয়েছে) উল্লেখ করে তিনটি ফটোকার্ড (,,,) প্রকাশ করা হয়েছে, যার কোনোটির সাথেই আলোচিত দাবির মিল পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি আলোচিত ফটোকার্ডটির টেক্সট ফন্টের সাথে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত অন্যান্য ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টের ভিন্নতা রয়েছে।

Image Collage : Rumor Scanner

অর্থাৎ, প্রথম আলো আলোচিত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। 

আলোচিত ফটোকার্ডের ছবিতে থাকা এই ব্যক্তিটি কে? 

ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডের ছবির পেছনে আমরা একটি ব্যানার দেখতে পাই। ব্যানারে থাকা ‘বিএনপি, টাঙ্গাইল’ লেখার সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে এক ব্যক্তির ছবি খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডে থাকা ব্যাক্তির ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ছবিতে উক্ত ব্যক্তির পরিচয় দেওয়া হয়েছে,  টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। 

Image: Facebook 

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে আরও অনুসন্ধানে ‘Ad.Farhad Iqbal- এড.ফরহাদ ইকবাল‘ নামে উক্ত ব্যক্তির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ছবির সাথেও আলোচিত ছবিতে থাকা ব্যক্তির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook 

পরবর্তীতে ফরহাদ ইকবালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই ফটোকার্ডটি প্রথম আলো প্রকাশ করেনি সেটি আমি আগেই জানতে পেরেছি এবং আমার এমন কোনো মন্তব্য করার প্রশ্নই উঠেনা।”

মূলত, গতকাল ২৮ অক্টোবর সরকার পতেনের এক দফা দাবি আদায়ে ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। উক্ত মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ‘তারেক রহমান না আসা পর্যন্ত আর কোন সমাবেশে আসবো না’ শীর্ষক মন্তব্যকে টাঙ্গাইলের বিএনপি নেতার মন্তব্য দাবিতে দেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, এই মন্তব্যটি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের নামে প্রচার করা হলেও তিনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি বলে নিশ্চিত করেছেন। 

উল্লেখ্য, বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরে সমাবেশের ঘটনায় বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, টাঙ্গাইলের বিএনপি নেতা’ তারেক রহমান না আসা পর্যন্ত আর কোন সমাবেশে আসবো না’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

কালবেলা’র নকল ফটোকার্ডে তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুলকে নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি, পল্টন ছেড়ে বিএনপি নেতাদের পলায়ন। মীর্জা ফখরুল’কে ফোনে পাচ্ছেন না তারেক জিয়া শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি যুক্ত জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

তারেক রহমান

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে দৈনিক কালবেলা উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৮ অক্টোবর ২০২৩। 

Screenshot: Facebook Claim Post

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং কালবেলা’র লোগোর সূত্র ধরে কালবেলা’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২৮ অক্টোবর প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও কালবেলা’র ওয়েবসাইটেও এসংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইনের প্রায় হুবহু মিল থাকলেও আলোচিত দাবিতে কালবেলা কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।

Image Collage : Rumor Scanner 

এছাড়া, দাবিটির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্যান্য গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসমাবেশের আয়োজন করে। পরবর্তীতে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে সেই সমাবেশ স্থগিত করে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পল্টন ছেড়ে বিএনপি নেতাদের পলায়ন। মীর্জা ফখরুল’কে ফোনে পাচ্ছেন না তারেক জিয়া– শীর্ষক তথ্য সম্বলিত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি যুক্ত জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় দৈনিক কালবেলা এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় গণমাধ্যমটির আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে তারেক রহমানের একটি ছবি ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিএনপি’র এই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়ানো হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, পল্টন ছেড়ে বিএনপি নেতাদের পলায়ন,নির্জা ফখরুলকে ফোনে পাচ্ছেন না তারেক রহমান শীর্ষক তথ্যটি মিথ্যা এবং কালবেলা’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

বিএনপি’র চট্টগ্রামে রোড মার্চের ছবিকে ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট গণজমায়েতের ছবি দাবি

সম্প্রতি, ‘ঢাকার রাজপথ এখন মুক্তিকামী জনতার দখলে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এই ছবিটি ঢাকায় বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট গণজমায়েতের নয় বরং এটি গত ০৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম অনুষ্ঠিত বিএনপি’র রোডমার্চের ছবি।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বিএনপি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ০৫ অক্টোবর ‘চট্টগ্রামে সমাপনী পথসভায় জনতার ঢল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্টে কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

উল্লেখিত পোস্টটির বিস্তারিত বিবরণীতে বলা হয়, “৫ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে ১ দফা দাবি আদায়ে কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম রোড মার্চ এর কাজীর দেউড়ী মোড়ে সমাপনী পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।”

এই ছবিগুলোর মধ্যকার একটি ছবির সাথে বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার জনতার ঢল দাবিতে প্রচারিত ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, আলোচিত এই ছবিটি ঢাকায় বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট গণজমায়েতের নয়।

মূলত, গত ০৫ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে ১ দফা দাবি আদায়ে চট্টগ্রামে বিএনপি’র রোড মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে সেই রোড মার্চের একটি ছবিকে বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার রাজপথে জনতার ঢলের দৃশ্য ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

প্রসঙ্গত, গতকাল ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি।

উল্লেখ্য, বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরে সমাবেশের ঘটনায় বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, গত ০৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম অনুষ্ঠিত বিএনপি’র রোডমার্চ কর্মসূচির ছবিকে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার রাজপথে জনতার ঢলের দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  • BNP Verified Facebook Page: Post
  • Rumor Scanner’s Own Analysis

প্রথম আলো’র ফটোকার্ড বিকৃত করে সমাবেশ স্থগিতের বিষয়ে মির্জা ফখরুলের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি, ‘কারো ভয়ে সমাবেশ স্থগিত করা হয়নি; হঠাৎ বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করায় সমাবেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি’ শীর্ষক মন্তব্যকে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ‘কারো ভয়ে সমাবেশ স্থগিত করা হয়নি; হঠাৎ বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করায় সমাবেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং প্রথম আলোও উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ২৮ অক্টোবরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

Screenshot: Facebook Claim Post

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগো ও তারিখের সূত্র ধরে প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৮ অক্টোবর বা তার আগে পরে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, প্রথম আলো’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে প্রথম আলো’র বিনোদন শাখা হতে প্রকাশিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গণমাধ্যমটির বিনোদন শাখা হতে প্রকাশিত ফটোকার্ডের ন্যায় আলোচিত ফটোকার্ডটির ব্যাকগ্রাউন্ডেও পেল পিংক ও ল্যাভেন্ডার পিংক রঙের একাধিক শেড রয়েছে। ধারণা করা যায়, প্রথম আলোর’র বিনোদন শাখার একটি ফটোকার্ড সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির টেক্সট ফন্টের সাথে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত অন্যান্য ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টের ভিন্নতা রয়েছে।

Photocard Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড কিংবা সংবাদ প্রকাশ করেনি।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন কোনো মন্তব্যের দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, গতকাল ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসমাবেশের আয়োজন করে। পরবর্তীতে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে সেই সমাবেশ স্থগিত করে দলটির পক্ষ থেকে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে হরতালের ডাক দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ‘কারো ভয়ে সমাবেশ স্থগিত করা হয়নি; হঠাৎ বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করায় সমাবেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরে সমাবেশের ঘটনায় বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, মির্জা ফখরুল ‘কারো ভয়ে সমাবেশ স্থগিত করা হয়নি; হঠাৎ বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করায় সমাবেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রথম আলো’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

বিএনপি ও জামায়াতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে তিন সাংবাদিক আক্রমণের শিকার দাবিতে গণমাধ্যমের নকল ফটোকার্ড প্রচার

২৮ অক্টোবর ঢাকায় ঢাকায় একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দেশের মূল ধারার সংবাদমাধ্যম একাত্তর টিভির সৌমিত্র মজুমদার, সমকালের কাজল হাজরা এবং জাগোনিউজ২৪ এর বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লব আক্রমণের শিকার হয়েছেন দাবিতে গণমাধ্যম তিনটির আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

সাংবাদিক

একাত্তর টিভির প্রতিবেদক সৌমিত্র মজুমদার ও ক্যামেরাপার্সন কাউসার আহমেদ পল্টনে বিএনপির সমাবেশে হামলার শিকার হয়েছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

দৈনিক সমকাল পত্রিকার সিনিয়র ফটো সাংবাদিক কাজল হাজরার ক্যামেরা বিএনপির নেতা কর্মীরা কেড়ে নিয়েছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

জাগোনিউজ২৪ এর সিনিয়র ফটো সাংবাদিক বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লবকে মারধর ও ক্যামেরা ভাংচুর করেছে শিবিরের কর্মীরা শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় একাধিক রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নিজেদের সাংবাদিক আক্রমণের শিকার দাবিতে একাত্তর টিভি, সমকাল ও জাগোনিউজ২৪ কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকরা কোনো আক্রমণের শিকার হননি বলে গণমাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

একাত্তর টিভির কোনো সাংবাদিক কি সম্প্রতি হামলার শিকার হয়েছেন? 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে ২৮ অক্টোবর বা সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ফটোকার্ডটি খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম। 

পরবর্তীতে ফটোকার্ডে থাকা ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২২ সালে রাজশাহীর একটি ঘটনায় সাংবাদিক আহত হওয়া একাধিক গণমাধ্যমের খবরে (, ) ছবিটির খোঁজ মেলে। 

Screenshot: Dhaka Tribune

ঢাকা ট্রিবিউনে সে বছরের ২৬ মে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সেদিন রাজশাহীতে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ৬ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। হামলায় আহতরা হলেন, বেসরকারি টেলিভিশন “চ্যানেল ২৪” এর ক্যামেরাপারসন আখতরুজ্জামান লেলিন, সময় টিভির আব্দুস সালাম, দীপ্ত টিভির রফিকুল ইসলাম, এসএ টিভির আবু সাঈদ, গাজী টিভির রবিউল ইসলাম খোকন এবং নিউজ ২৪ এর সামিউল আলীম বাপ্পী। 

এই তালিকায় একাত্তর টিভির কোনো সাংবাদিক নেই। 

পরবর্তীতে ফটোকার্ডটিতে উল্লিখিত প্রতিবেদক সৌমিত্র মজুমদারের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানিয়েছেন, তিনি ২৮ অক্টোবর ঢাকাতেই ছিলেন না। তিনি চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন কর্মসূচীর খবর সংগ্রহ করতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 

অর্থাৎ, ২০২২ সালের ভিন্ন ঘটনার একটি ছবি ব্যবহার করে একাত্তর টিভির সাংবাদিক পল্টনে বিএনপির সমাবেশে আহত হওয়া শীর্ষক দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

তাছাড়া, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচীতে একাধিক সাংবাদিক আক্রমণের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটলেও একাত্তর টিভির কোনো সাংবাদিক আক্রমণের শিকার হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সমকালের কোনো সাংবাদিক কি সম্প্রতি হামলার শিকার হয়েছেন? 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সমকাল এর ফেসবুক পেজে ২৮ অক্টোবর বা সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ফটোকার্ডটি খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম। 

পরবর্তীতে ফটোকার্ডে থাকা ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২২ সালে রাজশাহীর উপরোল্লিখিত একই ঘটনায় প্রকাশিত আরেক গণমাধ্যমের সংবাদে এই ছবিটির খোঁজ মেলে। 

Screenshot: Jugantor 

উক্ত ঘটনায় আহত হওয়া সাংবাদিকদের  তালিকায় সমকালের কোনো সাংবাদিক ছিল না। 

পরবর্তীতে ফটোকার্ডটিতে উল্লিখিত ফটো সাংবাদিক কাজল হাজরার বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যাচ্ছে, তিনি বর্তমানে সমকাল কর্মরত নয়, কাজ করছেন আরেক জাতীয় দৈনিক কালবেলা’য়। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায় এবং কালবেলার অনলাইন বিভাগের প্রধান পলাশ মাহমুদও রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

Screenshot: Facebook 

পলাশ এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গতকাল দৈনিক কালবেলার পাঁচ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এরা হলেন রাফসান জানি, আবু সালেহ মুসা, রবিউল ইসলাম রুবেল, তৌহিদুল ইসলাম তারেক ও জনি রায়হান।

এই তালিকায় কাজল হাজরার নাম নেই। 

অর্থাৎ, ২০২২ সালের ভিন্ন ঘটনার একটি ছবি ব্যবহার করে সমকালের ফটো সাংবাদিক বিএনপির সমাবেশে আহত হওয়া শীর্ষক দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

তাছাড়া, সমকাল এক ফেসবুক পোস্টেও জানিয়েছে, ফটো সাংবাদিক কাজল হাজরার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার খবর দিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কার্ডটি সমকালের নয়। 

জাগোনিউজ২৪ কি সাংবাদিক আহত দাবিতে আলোচিত ফটোকার্ডটি প্রকাশ করেছে?

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাগোনিউজ২৪ এর ফেসবুক পেজে ২৮ অক্টোবর আলোচিত ফটোকার্ডটি খুঁজে পাওয়া না গেলেও একইদিন ফটোকার্ডে থাকা ছবি সম্বলিত আরেকটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এই ফটোকার্ডে কোনো সাংবাদিক আহত হওয়া সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি৷ এই ফটোকার্ডটি ছিল ঢাকার আরামবাগে বিএনপি কর্মীদের সাথে পুলিশের বাগবিতণ্ডা সম্পর্কিত।

Screenshot Comparison: Rumor Scanner 

জাগোনিউজ২৪ এর এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদনেও সাংবাদিক আহত হওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য মেলেনি। 

তাছাড়া, জাগোনিউজ২৪ এর চিফ রিপোর্টার মাসুদ রানা রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, (বিপ্লবের সাথে) এমন কিছু ঘটেনি। উনি সুস্থ আছেন। ফটোকার্ড নকল করে এমনটা প্রচার করা হচ্ছে। উনি গতকাল বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও শাপলা চত্বরে জামায়াতের সমাবেশে ছিলেন। 

এছাড়া, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচীতে একাধিক সাংবাদিক আক্রমণের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটলেও জাগোনিউজ২৪ এর কোনো সাংবাদিক আক্রমণের শিকার হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দেশের একাধিক গণমাধ্যমের অন্তত ৩০ জন সংবাদকর্মী আক্রান্ত এবং হামলার শিকার হয়েছেন। এই খবরের মধ্যেই মূল ধারার সংবাদমাধ্যম একাত্তর টিভির সৌমিত্র মজুমদার, সমকালের কাজল হাজরা এবং জাগোনিউজ২৪ এর বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লব আক্রমণের শিকার হয়েছেন দাবিতে গণমাধ্যম তিনটির আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, এই ফটোকার্ডগুলো সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, কাজলা হাজরা বর্তমানে সমকালে নয়, কাজ করছেন কালবেলা’য়। তিনি আক্রমণের শিকার হননি গতকাল। অন্যদিকে, সৌমিত্র মজুমদার গতকাল ঢাকাতেই ছিলেন না, গিয়েছিলেন চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচীতে। তাছাড়া, বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লবের সাথেও গতকাল এমন কিছু ঘটেনি বলে জাগোনিউজ২৪ জানিয়েছে। অর্থাৎ, তিন গণমাধ্যমের আদলে নকল ফটোকার্ড তৈরি করে ভুয়া এই তথ্যগুলো প্রচার করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে সেসব বিষয়ে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে৷ 

সুতরাং, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একাত্তর টিভির সৌমিত্র মজুমদার, সমকালের কাজল হাজরা এবং জাগোনিউজ২৪ এর বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লব আক্রমণের শিকার হয়েছেন শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে গণমাধ্যম তিনটির আদলে তৈরি ফটোকার্ডগুলোও ভুয়া।  

তথ্যসূত্র

  • Ekattor Tv: Facebook Page
  • Samakal: Facebook Page
  • Jagonews24: Facebook Post
  • Statement from Soumitra Majumdar, Ekattor Tv
  • Statement from Masud Rana, Jagonews24
  • Rumor Scanner’s own investigation 

বিএনপি’র মহাসমাবেশে কর্মীদের ট্রেনে করে যোগদানের ভিডিও দাবিতে বিশ্ব ইজতেমার পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির মহাসমাবেশে কর্মীদের যোগদানের ভিডিও দাবিতে একটি যাত্রীবাহী চলন্ত ট্রেনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ট্রেনে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গতকাল ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপি’র মহাসমাবেশের উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ট্রেনে করে ঢাকায় আসার ঘটনার নয় বরং এটি গাজীপুরের টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমার যাত্রীদের বহনকারী ট্রেনের ভিডিও।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Train Lover নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল  World Most Crowded Train – Bangladesh Railway শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিডিওটির ২৩ সেকেন্ড থেকে ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। তবে উক্ত ভিডিওটি আলোটিত ভিডিওটির থেকে কিছুটা দূর থেকে ধারণ করা হয়েছে বা উক্ত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় জুম করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner 

এছাড়াও ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ২০১৯ সালের ইজতেমার সময় ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা গাজীপুরের টঙ্গী অঞ্চলের তুরাগ নদীর তীরে এসে জড়ো হন। তাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে সেসময় বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে  Just Train নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি World Most Dangerous Train Journey || Ijtema Special Train 2019 | Bangladesh Railway শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর ট্রেনটির সাথে উক্ত ভিডিওর ট্রেনটির মিল রয়েছে। এছাড়াও ট্রেনের সামনের দিকে বসে থাকা নীল শার্ট ও সবুজ টুপি পড়া ব্যক্তি এবং ট্রেনের উপরে বসে থাকা ব্যক্তির বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর বিষয়টিও হুবহু মিলে যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির মহাসমাবেশে কর্মীদের যোগদানের কোনো ঘটনার নয়।

মূলত, শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে যোগ দিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে দলটির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে  বিএনপির মহাসমাবেশে কর্মীদের যোগদানের ভিডিও দাবিতে একটি যাত্রীবাহী চলন্ত ট্রেনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি বিএনপি’র মহাসমাবেশে যোগদানের কোনো ভিডিও নয়। আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২০১৯ সালের ইজতেমার সময় ধারণকৃত। 

উল্লেখ্য, দেশের প্রায় ৪০ টি রাজনৈতিক দলের ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্যের বিষয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির মহাসমাবেশে কর্মীদের যোগদানের ভিডিও দাবিতে ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের যাত্রীদের বহন কাজে ব্যবহৃত ট্রেনের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

প্রথম আলো এবং কালবেলার ফটোকার্ড নকল করে আওয়ামী লীগের সমাবেশ স্থগিতের ভুয়া দাবি প্রচার 

সম্প্রতি, ‘একই দিনে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন কর্মসূচী থাকায় ২৮ অক্টোবরের আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ স্থগিত – ওবায়দুল কাদের‘ শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড এবং ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ স্থগিত’ শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

সমাবেশ

দৈনিক প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডসহ ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন, এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

দৈনিক কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডসহ ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন, এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, একই দিনে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন কর্মসূচী থাকায় ২৮ অক্টোবরের আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ স্থগিত হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোনো মন্তব্য করেননি এবং দৈনিক প্রথম আলো এবং দৈনিক কালবেলা উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং উক্ত ফটোকার্ড দুটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে দৈনিক প্রথম আলো এবং দৈনিক কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ অক্টোবর ২০২৩।

Screenshot from Facebook

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং দৈনিক প্রথম আলো ও কালবেলা’র লোগোর সূত্র ধরে প্রথম আলোকালবেলার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২৭ অক্টোবর প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত দুটি শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও প্রথম আলো এবং কালবেলা’র ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তবে কালবেলা’র ফেসবুক পেজে গত ২৬ অক্টোবর ‘সমাবেশের বিষয়ে আ.লীগের কাছে ৭ তথ্য চেয়েছে ডিএমপি’ শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডের ডিজাইন এবং এতে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Photocard Comparison: Rumor Scanner

এছাড়া, উক্ত ফটোকার্ড পোস্টের কমেন্টে একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকায় ২৮ অক্টোবর সমাবেশের ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে চায় দলটি। তবে গত ২৫ অক্টোবর বুধবার একটি চিঠির মাধ্যমে বিকল্প হিসেবে আরও দুটি জায়গার নামসহ ৭টি তথ্য জানতে চায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

২৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা আরও দুটি ভেন্যুর নাম কী কী দেব তা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। আজকেই তাদের (পুলিশ) চিঠির জবাব দেওয়া হবে।

অর্থাৎ, কালবেলা’র ফেসবুক পেজে গত ২৭ অক্টোবর প্রচারিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তাতে ‘সমাবেশের বিষয়ে আ.লীগের কাছে ৭ তথ্য চেয়েছে ডিএমপি’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, গত ২৪ অক্টোবর পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য নিয়ে একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। এই ফটোকার্ডটির সঙ্গে আলোচিত ফটোকার্ডটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Photocard Comparison: Rumor Scanner

এছাড়া, উক্ত ফটোকার্ড পোস্টের কমেন্টে একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে যোগ দিতে রাজধানীতে এসে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আত্মীয়স্বজনের বাসায় উঠা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের এত আত্মীয় কোথা থেকে এল। কার আত্মীয় কে, সেই খবর নেওয়া উচিত।

এদিকে, ২৭ অক্টোবর রাতে প্রথম আলো তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে করা এক পোস্টে আলোচিত ফটোকার্ডটিকে মিথ্যা প্রচারণা উল্লেখ করে জানিয়েছে, ‘প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই স্ক্রিনশটটি নকল, আমাদের তৈরি নয়। বিভ্রান্তি এড়াতে আমাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও অনলাইনের সঙ্গে থাকুন।’

Screenshot from Facebook

মূলত, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে আজ ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি  দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি’র মহাসমাবেশ করবে এবং আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করার কথা রয়েছে। 

উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডে ‘একই দিনে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন কর্মসূচী থাকায় ২৮ অক্টোবরের আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ স্থগিত – ওবায়দুল কাদের’ এবং দৈনিক কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডে  ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ স্থগিত’ শীর্ষক তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ড দুইটি এডিটেড। এছাড়া, আওয়ামী লীগের আজকের পূর্ব ঘোষিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ স্থগিতের বিষয়টিও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রথম আলো ও কালবেলা’র ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত পুরোনো দুইটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ফটোকার্ড দুইটি তৈরি করে আলোচিত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ স্থগিত দাবিতে দলটির অফিসিয়াল প্রেস বিজ্ঞপ্তির আলোকে একটি বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেটিকে ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, একই দিনে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন কর্মসূচী থাকায় ২৮ অক্টোবরের আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ স্থগিত হওয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দেওয়ার দাবির দাবিটি মিথ্যা এবং সে বিষয়ে প্রথম আলো নামে প্রচারিত ফটেকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত। এছাড়া সমাবেশ স্থগিত দাবিতে কালবেলা’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিও এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

শাপলা চত্বর দখলে নিলো জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, “পুলিশ বেড়ি ভেঙে রাতের শাপলা চত্বর দখলে নিলো জামায়াত- শিবিরের নেতা কর্মীরা” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

শাপলা চত্বর

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশ বেড়ি ভেঙে রাতেই শাপলা চত্বর দখলে নিলো জামায়াত- শিবিরের নেতাকর্মীরা শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার। প্রকৃতপক্ষে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ হাটহাজারী মাদরাসা ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মুসল্লিদের উপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিলের একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ‘Bangladesh Jamaat-e-Islami’ এর ইউটিউব চ্যানেলে “পুলিশের গুলিতে সাত জন নিহত প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumour Scanner 

উক্ত ভিডিওটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, পুলিশের গুলিতে সাতজন নিহত ও শতশত মুসল্লিকে আহত করার ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীতে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। 

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ নয়া দিগন্তের ওয়েবসাইটে “রাজধানী জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের গুলিতে অসংখ্য মুসল্লিকে হতাহত করার ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীতে মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ।

মূলত, ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামী শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের আয়োজন করে। এই মহাসমাবেশকে ঘিরে ‘পুলিশ বেড়ি ভেঙে রাতেই শাপলা চত্বর দখলে নিলো জামায়াত- শিবিরের নেতাকর্মীরা’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ হাটহাজারী মাদরাসা ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মুসল্লিদের উপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিলের একটি পুরোনো ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২৮ অক্টোবর শনিবার সকাল থেকে আরামবাগে অবস্থান নেয় জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা। সেখানে তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে পুলিশ। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে আরামবাগ স্কুলের সামনে দিয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বরে ঢুকে পড়েন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। দুদিক থেকে পুরো শাপলা চত্বর দখলে নেন জামায়াতের কর্মীরা। 

সুতরাং, জামায়াতের নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বর দখলে নিলো দাবিতে ইন্টারনেটে একটি পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে ; যা বিভ্রান্তিকর  

ইউজিসিকে উদ্ধৃত করে আগামী দুই মাস বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার গুজব

0

সম্প্রতি, আগামী দুইমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার প্রস্তুতি হিসেবে ২৯ অক্টোবর সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যনির্বাহী সভা ডাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি) নির্দেশনা দিয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

শিক্ষা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আগামী দুইমাস সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার বিষয়ে ইউজিসির নির্দেশনা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

শুরুতেই জাতীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে আলোচিত তথ্যটির ব্যাপারে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু, সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র হতে আলোচিত দাবির বিষয়ে সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি) এর ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু ইউজিসি’র ওয়েবসাইটে আলোচিত নির্দেশনার বিষয়ে কোনো নোটিশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Source: UGC 

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বার্তা সংস্থা ইউএনবির নামও ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে অনুসন্ধানে ইউএনবিতে এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে অধিকতর সত্যতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের(ইউজিসি) জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. এ কে এম শামসুল আরেফিনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, আগমী দুইমাস বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ক তথ্যটি সঠিক নয়।

অর্থাৎ, ইউজিসি আগামী দুইমাস সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি।

মূলত, আগামী দুইমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার প্রস্তুতি হিসেবে ২৯অক্টোবর সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যনির্বাহী সভা ডাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউজিসি এরূপ কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক  ড. এ কে এম শামসুল আরেফিন আলোচিত দাবিটি মিথ্যা বলে রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন। 

সুতরাং, ইউজিসি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার প্রস্তুতির জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন: নোটিশ বোর্ড
  • Statement of AKM Samshul Arefin, Director, Public Relations and Information Department, UGC

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঢাকায় ফেরার নির্দেশনা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া

সম্প্রতি, “ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঢাকায় ফেরার নির্দেশ” শীর্ষক শিরোনামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ কর্তৃক ২৭অক্টোবর স্বাক্ষরিত একটি কথিত বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। 

 বিজ্ঞপ্তি

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেনি বরং ছাত্রলীগের প্রচলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির আদলে একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ওয়েবসাইটে ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ সেকশনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Source: BSL

পরবর্তীতে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ Bangladesh Student’s League এ অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিটি “শহীদ মিজান দিবস” শীর্ষক শিরোনামে ২৬অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছিল। তবে আলোচিত শিরোনামের কোনো বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।

Source: BSL Facebook Page

পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। উক্ত মহাসমাবেশের একইদিনে আওয়ামীলীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠন শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ডাক দেয়। ২৮অক্টোবরের রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রেক্ষাপটেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় ফেরার নির্দেশের কথিত বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

মূলত, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাত দিয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এবং ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া।

উল্লেখ্য, পূর্বেও আওয়ামীলীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ স্থগিত হয়েছে দাবিতে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঢাকায় ফেরার নির্দেশনা জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ব্যানারে একটি বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র