সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন এবং শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসার দাবিতে মিথ্যা তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর অধীনেই নির্বাচন হবে: সিইসি। শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা– শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সেনাবাহিনীর অধীনেই নির্বাচন হবে। এছাড়া আরও দাবি করা হয়, শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। 

সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং দেশের শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসার তথ্যটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৩ মিনিট ৬ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেশীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের থাম্বনেইল ব্যবহার করে উপস্থাপক সেই সংবাদগুলো নিজের মতো আলোচনা করেছেন। 

এছাড়া, ভিডিওটিতে উপস্থাপককে সিইসি’র আলোচিত মন্তব্য এবং এমপি, ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

পরবর্তীতে, দাবিগুলো যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত মাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি, দেশের শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে  যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা এ বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সেনাবাহিনীর অধীনেই নির্বাচন হবে: সিইসি। শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি সংবাদের থাম্বনেইল যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। 

সুতরাং, শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং সেনাবাহিনীর অধীনেই নির্বাচন হবে- সিইসি এমন মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img