গত ৭ আগস্ট খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে চারটি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, মৃতদেহ সৎকারের জন্য শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে একটি মসজিদের সামনে “হরে কৃষ্ণ হরে রাম” বলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এই হামলা করা হয়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাটি গত ৭ আগস্টের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালের ৭ আগস্ট শিয়ালী গ্রামে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলায় সেসময় করা একটি ফেসবুক পোস্ট কপি করে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Goutam Halder Pranto নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ৭ আগস্ট করা একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।

পোস্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে খুলনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলার দাবিতে প্রচারিত পোস্টের প্রথম দুই পারার সাথে উক্ত পোস্টের শুরুর দুই পারার হুবহু মিল রয়েছে। উভয় পোস্টেই খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে হামলা হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে গৌতম হালদার প্রান্তর প্রোফাইলের ২০২১ সালের পোস্টটিতে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ততকালীন ইউএনও, পুলিশ কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম্বার প্রদান করা হয়। এছাড়া পোস্টটিতে হামলার ঘটনায় হওয়া ক্ষয়ক্ষতির বেশ কয়েকটি ছবিও দেখতে পাওয়া যায়। যার সাথে সাম্প্রতিক হামলা দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবিরও মিল পাওয়া যায়। পাশপাশি গৌতম হালদার প্রান্ত পোস্টে উল্লেখ করেন, সে ততকালীন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক। তবে তার প্রোফাইল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সে বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি।
পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৭ আগস্ট খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেবছরের ৬ আগস্ট রাতে মন্দির থেকে কয়েকজন নারীভক্ত কীর্তন করতে করতে শিয়ালী মহাশ্মশানের দিকে যাচ্ছিলেন। পথের মাঝে একটি মসজিদ ছিল। মসজিদের ইমাম নারীদের কীর্তন করতে নিষেধ করেন। তখন তাদের মধ্যে কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি নিয়ে পরদিন থানায় বৈঠক হওয়ার কথা থাকলে ৭ আগস্ট বিকেলে শতাধিক যুবক রামদা, চাপাতি, কুড়াল নিয়ে শিয়ালী গ্রামে হামলা চালায়। যাতে চারটি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু দোকান ও কয়েকটি বাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুতরাং, খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে ২০২১ সালে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাকে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Goutam Halder Pranto Facebook Post
- Samakal Website: খুলনায় দুর্বৃত্তের হামলা, ৪ মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুর
- Rumor Scanner’s Analysis