গত মে মাসে পাকিস্তানের লাহোরে হওয়া বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা করেছে যমুনা টিভি।
উক্ত ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং পাকিস্তানের এই ছবিটি অন্তত পাঁচ বছরের পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে পাকিস্তানের ব্লগিং ওয়েবসাইট Pakistan Tour এ ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট “Importance of Monsoon Season In Pakistan” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Pakistan Tour
আরো অনুসন্ধান করে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম BUSINESS RECORDER এ ২০১৮ সালের ৩ জুলাই “Six killed as heavy rain wreaks havoc in Lahore” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাঞ্জাবের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টিপাতে লাহোরে বন্যার কারণে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে।
Screenshot:Business Recorder
কিন্তু প্রতিবেদনে ছবিটির ক্যাপশনে ছবির সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
তবে পাঁচ বছর পূর্বের সংবাদে ছবিটি খুঁজে পাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, আলোচিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। ফলে সাম্প্রতিক ঘটনার সংবাদে ছবিটি ব্যবহার করায় স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয় যে ছবিটি সাম্প্রতিক ঘটনার সময়ের। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত মে মাসে পাকিস্তানের লাহোরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়। সেই ঘটনার সংবাদে ব্যবহৃত একটি ছবি অনুসন্ধান করে জানা যায়, ছবিটি সে সময়ের নয়। ছবিটি ২০১৮ সালে লাহোরে হওয়া বন্যার সংবাদে খুঁজে পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে কোনোকিছু লেখা না থাকায় ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, পাকিস্তানের লাহোরে হওয়া বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অন্তত পাঁচ বছরের পূর্বের ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “ক্ষমতায় গিয়ে সারাদেশকে সেন্ট্রাল এসি’র আওতায় আনা হবে – ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ডিজিটাল ব্যানার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছে। যেখানে উক্ত বক্তব্যটি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “ক্ষমতায় গিয়ে সারাদেশকে সেন্ট্রাল এসি’র আওতায় আনা হবে” শীর্ষক ফেসবুকে প্রচারিত এই বক্তব্যটি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেননি বরং ভিত্তিহীনভাবে উক্ত মন্তব্যকে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
এমন কোনো মন্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর করেছেন কি না তার প্রাথমিক অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে উক্ত বক্তব্য সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Google
অনুসন্ধানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উক্ত বক্তব্য দিয়েছেন তার কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় পরবর্তীতে বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইং এর সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “প্রশ্নই হয় না। এধরনের কোনো বক্তব্য রাখেনি। এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি পায়তারা।”
মূলত, “ক্ষমতায় গিয়ে সারাদেশকে সেন্ট্রাল এসি’র আওতায় আনা হবে- ফখরুল” শীর্ষক একটি বক্তব্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার এর অনুসন্ধানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উক্ত বক্তব্য দেওয়ার প্রমাণ মেলেনি। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে এমন কোনো মন্তব্য মির্জা ফখরুল দেননি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ফেসবুকে একাধিক ভুয়া বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। যেগুলোর সত্যতা যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে ও এখানে।
সুতরাং, ক্ষমতায় গিয়ে সারাদেশকে সেন্ট্রাল এসি’র আওতায় আনা হবে- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Statement of Khaleda Zia’s wing member Shairul Kabir Khan
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, লাইলি-মজনুর আসল ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি লাইলি-মজনুর ছবি নয় বরং এটি সাধারণ দু’জন মানুষের সংযুক্ত ছবির কিছুটা পরিবর্তিত সংস্করণ।
মূলত, লাইলি-মজনুর প্রেমকথা বেদুইন জনপদে ৫ম শতাব্দী থেকে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় উপকথা। পরবর্তীতে, নাজামি গাজনবী নামে এক পার্সিয়ান কবি এই ভালোবাসার গল্পে মুগ্ধ হয়ে রচনা করেন এক মহাকাব্য। সেটি বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়ে লাইলি-মজনুর প্রেম-কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়ে। এরই প্রেক্ষিতে সাধারণ দুই বেদুইন নারী-পুরুষের ছবিকে লাইলি-মজনুর আসল ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রতিবেদনের শেষ অংশে যুগান্তর দাবি করেছে, “এদিকে ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে এর মধ্যে করা আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এরদোগানের পক্ষে। আর ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বিরোধী জোটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।”
Screenshot source: Jugantor
লক্ষ্য করুন, প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে ১৭ এপ্রিল (রাত ৮:৪৩ মিনিটে) । কিন্তু জরিপের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে।
এর মানে দাঁড়াচ্ছে, জরিপের ১১ দিন আগেই জরিপের ফলাফল জানিয়ে দিয়েছে যুগান্তর!
আমরা এ বিষয়ে পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধান করে পরদিন অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল দেশের আরও কিছু গণমাধ্যমে একই সংবাদ খুঁজে পেয়েছি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, যুগান্তর এ বিষয়ে দেশে প্রথম সংবাদ প্রকাশের পর যুগান্তরের প্রতিবেদনের আলোচিত শেষ অংশটি অন্যান্য গণমাধ্যমগুলো হুবহু প্রকাশ করেছে।
এই সংবাদের তথ্যসূত্র হিসেবে যুগান্তর ‘Daily Sabah’ এর নাম উল্লেখ করেছে।
ডেইলি সাবাহ লিখেছে, জরিপকারী সংস্থা Areda survey company এর করা গত ১২ থেকে ১৪ এপ্রিলের একটি জরিপে দেখা গেছে, তুরস্কের নির্বাচনে এরদোয়ানের পক্ষে থাকবেন প্রায় ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে প্রায় ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ বিরোধী জোটের পক্ষে অবস্থান নেবেন। একই নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ালে এরদোয়ানের পক্ষে থাকবেন প্রায় ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে প্রায় ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বিরোধী জোটের পক্ষে অবস্থান নেবেন।
ডেইলি সাবাহ আরো বলছে, একই সংস্থা ২৮ মার্চ থেকে ০১ এপ্রিল আরেকটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। উক্ত জরিপের বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলেও প্রতিবেদনে বলা হয়, উক্ত জরিপ থেকে এই জরিপে ০.২ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছেন এরদোয়ান।
অর্থাৎ, আলোচিত জরিপকেই ভিন্ন একটি জরিপ দাবি করে বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যম জরিপটির তারিখ উল্লেখ করেছে ২৮ এপ্রিল থেকে ০১ মে। কিন্তু গণমাধ্যমগুলোর সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ’র প্রতিবেদনে একই জরিপেরই প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে উক্ত জরিপের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, ১২ থেকে ১৪ এপ্রিল।
আরও অনুসন্ধান করে, Areda survey company এর টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ১৫ এপ্রিল আলোচিত জরিপটির বিষয়ে একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। এই টুইটেও জরিপের তারিখ ১২ থেকে ১৪ এপ্রিল উল্লেখ করে একই ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে।
Screenshot source: Twitter
সুতরাং, অর্থাৎ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিচালিত জরিপ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত উল্লিখিত তথ্যগুলো সঠিক নয়।
সম্প্রতি, বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির ফেসবুক পেজের স্ক্রিনশট যুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় এবং সময় টিভির লোগো ব্যবহার করে উক্ত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটিও আসল নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় স্ক্রিনশটটি তৈরি করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য সময় টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে সেখানে কোথাও প্রচারিত দাবিটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Somoy TV Facebook
এছাড়া, সময় টিভির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও প্রচারিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Somoy TV website
পরবর্তীতে, উক্ত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত মাধ্যমগুলোতেও বিষয়টি সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও সময় টিভির লোগো সংযুক্ত করে প্রচারিত স্ক্রিনশটটির ফন্ট, লেখার ধরন এবং বানান লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, এটি বাস্তব নয় বরং এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot: Tiktok
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানানোর বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানানোর দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি তথ্য প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য অন্যকোনো সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানানোর বিষয়ে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও মিজানুর রহমান আজহারীকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ফোনকলের মাধ্যমে দেশে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ভারতীয় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ৬০ কোটি টাকা দান করেছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ধোনি ৬০ কোটি টাকা দান করেননি এবং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় মূলধারার একাধিক গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য অন্যান্য মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ধোনির ৬০ কোটি রূপি দানের বিষয়টির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে মাহেন্দ্র সিং ধোনির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানেও প্রচারিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মাহেন্দ্র সিং ধোনির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ওডিশার ট্রেন দূর্ঘটনা পরবর্তী অ্যাক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ করলে সেখানে ০২ জুন প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
এবং সেখানে ০৭ জুন প্রকাশিত LMG মুভির টিজার নিয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তাছাড়া দুর্ঘটনা পরবর্তী আর কোনো পোস্ট সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে, মাহেদ্র সিং ধোনির ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও ট্রেন দূর্ঘটনায় ডোনেশন সম্পর্কিত কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: MS Dhoni Instagram
পাশাপাশি, গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় ডোনেশনের বিষয়ে ধোনি বা সংশ্লিষ্ট কারো পক্ষ থেকে কোনো অফিশিয়াল ঘোষণা বা বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, ভারতের একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ওড়িশার রেল দুর্ঘটনায় ক্রিকেটার ধোনির ৬০ কোটি টাকা দান করার দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ওডিশার রেল দূর্ঘটনায় ধোনির ৬০ কোটি টাকা দান করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি ভারতের ওডিশার রেল দূর্ঘটনায় ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি ৬০ কোটি টাকা দান করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। গণমাধ্যম বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ধোনির ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় কোনো ধরনের ডোনেশনের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের ওডিশার রেল দূর্ঘটনায় মুসলিমদের দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ওডিশার রেল দুর্ঘটনায় মাহেন্দ্র সিং ধোনি ৬০ কোটি টাকা দান করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ না হওয়ায় চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছে দাবি করে একটি চিঠির ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রাম বা দেশের কোনো স্থানের কোনো শিক্ষার্থীই চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেননি বরং ভুয়া একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে আজ (১০ জুন) দুপুর দুইটা পর্যন্ত দেশের কোনো সংবাদমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত কোনো খবর প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়নি৷
পরবর্তীতে আলোচিত চিঠিটি বিশ্লেষণ করে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম।
কী লেখা আছে চিঠিতে?
চিঠিতে দেখা যাচ্ছে, এটি লেখা হয়েছে ০৭ জুন সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে। চিঠির বামদিকে কোণায় R/13 লেখা দেখা যাচ্ছে। এর পাশে একটি মৌ নাম ব্যবহার করে একটি স্বাক্ষর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। চিঠির নিচের অংশেও R লেখা রয়েছে।
Image source: Facebook
চিঠিটি জনৈক মৌমিতা মৌ তার মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন। চিঠিতে লেখা রয়েছে, “আমি ঢাবিতে চান্স পেলাম না। আমার জন্য তোমরা অনেক টাকা খরচ করেছো। আমি চান্স না পাওয়াতে তোমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছোনা। সবাই শুধু আমার সমালোচনা করছে, মেয়েটা সারাদিন পড়েও ঢাবিতে এমনকি কোথাও চান্স পেল না! কিন্তু আমি আমার জীবনের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্ত দুর্ভাগ্যক্রমে চান্স হলো না। আমি এত সমালোচনা, অপমান, টেনশন সহ্য করতে পারছিনা। আমি এখন আত্মহত্যা করবো। এর জন্য কেউই দায়ী নয়। এই চিরকুটটি যখন কেউ পাবেন, তখন আমি ফ্যানের সাথে ফাঁসিতে ঝুলে থাকবো।”
প্রথম পোস্টদাতার খোঁজে
চিঠির তথ্যগুলোর সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ এবং ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে গত ০৭ জুন সন্ধ্যা ৭:৪৩ মিনিটে ফেসবুকে ‘Dhaka University Admission Helpline 2022-23’ নামক একটি পাবলিক গ্রুপে Rakib Hasan নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে (আর্কাইভ) আলোচিত তথ্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে এটিই এ বিষয়ে প্রথম পাবলিক পোস্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
Screenshot source: Facebook
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, চিঠিতে সময় উল্লেখ ছিল সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিট এবং রাকিবের পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে এর মাত্র ১৩ মিনিট পর। চিঠি লেখা শেষ করে আত্মহত্যার পর সে খবরটি ফেসবুকের সাধারণ একজন ব্যবহারকারীর কাছে চিঠি লেখার মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল।
পোস্টে অবশ্য সেই শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ ছিল না। সুইসাইড নোটের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তার ছবি যুক্ত ছিল না। আবার চিঠিতে কোনো স্থানের নাম উল্লেখ না থাকলেও রাকিবের পোস্টে উক্ত শিক্ষার্থী কুড়িগ্রামের বলে উল্লেখ করা হয়।
রাকিবের পোস্টের ঠিক দুই মিনিট পর সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে ফেসবুকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ২০২২-২৩’ নামক একটি প্রাইভেট গ্রুপে Raisa Rehman Ridika নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে (আর্কাইভ) হুবহু একই তথ্যই খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: Facebook
একই গ্রুপে পরদিন (০৮ জুন) সকাল ৮:১৫ মিনিটে Raisa Rehman Ridika আলোচিত চিঠিটি (আর্কাইভ) প্রকাশ করেন। রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে চিঠিটি যুক্ত করে এটিই এ বিষয়ে প্রথম পাবলিক পোস্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
Screenshot source: Facebook
লক্ষ্য করুন, Rakib Hasan এবং Raisa Rehman Ridika এই দুইটি নামেই R অক্ষরটি রয়েছে। আলোচিত চিঠির উপরের অংশেও R অক্ষর রয়েছে। মৌমিতা মৌ নামটিতে কোনো R অক্ষর নেই৷ সেক্ষেত্রে R/13 লেখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে দুইটি অ্যাকাউন্টের সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম আমরা৷ কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা শুরুর পর Raisa Rehman Ridika তার দুইটি পোস্ট ডিলিট করে দেন।
রাকিব এবং রিদিকার বিষয়ে যা জানা গেল
Rakib Hasan এর আইডিটি লক থাকায় তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে না পেরে তিনি যে গ্রুপে এ বিষয়ে পোস্ট করেছিলেন সেই ‘Dhala University Admission Helpline 2022-23’ নামক গ্রুপটিতে তার পূর্বের পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছি আমরা।
গত ০১ এপ্রিল করা তার একটি পোস্টের (আর্কাইভ) কমেন্টে তিনি লিখেছেন, তিনি কুড়িগ্রামে আছেন।
Screenshot source: Facebook
আরও অনুসন্ধান করে গত ২৯ মার্চ রাকিবের আরেকটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তিনি লিখেছেন, তার বাসা কুড়িগ্রাম। তিনি ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।
Screenshot source: Facebook
গত ১১ মার্চ তিনি গ্রুপটিতে যুক্ত হোন।
এ বিষয়ে জানতে গ্রুপের এডমিন মো: আবদুল আলিমের সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনিও রাকিবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হোন।
আলিম জানান, “এটার সত্যতা নিয়ে আমিও সন্দিহান। আমার এক ফ্রেন্ড বলেছে সুইসাইড এটেম্পট করেছিলো ঠিক সময়ে হসপিটালাইজ্ড করা হয়েছে তাই মারা যায় নি৷ যে ফ্রেন্ড বলেছে সেও সিউর না। সে অন্য কোথাও থেকে শুনেছে কিন্তু সে ব্যক্তি সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। কুড়িগ্রামের ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করলাম সেও fb তে দেখেছে কিন্তু নিশ্চিত নয়।”
একইভাবে Raisa Rehman Ridika এর বিষয়েও খোঁজ নিয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিদিকার ফেসবুক আইডির তথ্য বলছে, তার বাড়ি ফেনী। পড়াশোনা করেছেন সরকারি জিয়া মহিলা কলেজে। এই অ্যাকাউন্টটিও লক থাকায় বিস্তারিত জানা যায়নি।
রিদিকা যে গ্রুপে এ বিষয়ে পোস্ট করেছিলেন সেই ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ২০২২-২৩’ নামক গ্রুপের এডমিনও তিনি। গত ০৯ ফেব্রুয়ারি তিনি গ্রুপটিতে যুক্ত হোন। নিয়মিতই তিনি ভর্তি বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট করছেন গ্রুপে। পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে তার বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে গ্রুপটির আরেক এডমিন ফয়সাল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিদিকার বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি আমাদের।
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা?
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান চলাকালীন গত ০৮ জুন চ্যানেল২৪ এর বিকেল ছয়টার খবরে কথিত আত্মহত্যার ইস্যুতে লাইভে (২২ সেকেন্ড সময় থেকে) আসেন সংবাদমাধ্যমটির কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি গোলাম মাওলা সিরাজ।
তিনি জানান, “আজ সকালে এটি আমাদের নজরে আসে। আমি যখন এটা দেখি তখন স্থানীয় যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে বা সদর থানা পুলিশ রয়েছে তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই৷”
জনাব সিরাজ সম্ভাব্য কিছু স্থানে খোঁজ নেন এবং অন্যান্য গণমাধ্যমের সহকর্মীদের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেন। কিন্তু সকলেই বলেছে, এমন কোনো খবরের সত্যতা কেউ পায়নি। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজেও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। সেখান থেকেও এ ধরণের কোনো তথ্য মেলেনি।
Screenshot source: Golam Maula Shiraj
রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট জানতে চেয়ে আজ বিকেলে গোলাম মাওলা সিরাজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পরবর্তীতেও তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আর কোনো তথ্য পাননি।
পরবর্তীতে আজ সকালে কুড়িগ্রামের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো: শহিদুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে আমরা জানতে চেয়েছিলাম গেল সপ্তাহে তাদের হাসপাতালে কোনো শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার কোনো তথ্য এসেছে কিনা। তিনি আমাদের জানান, গত এক সপ্তাহে কোনো শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার তথ্য তার কাছে নেই।
একইসাথে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) এম আর সাঈদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও আমাদের জানান, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো খবর আসেনি।
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে কুড়িগ্রামের একাধিক গণমাধ্যমকর্মীর সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে। তারা সকলেই বলছেন, শিক্ষার্থী আত্মহত্যার এমন কোনো ঘটনা গেল সপ্তাহে ঘটেনি।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার রাজু মোস্তাফিজ রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন। কিন্তু এই খবরের কোনো সত্যতা পাননি।
একইভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জাহানুর রহমান, বিডিনিউজ২৪ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আহসান হাবীব নীলু এবং ডেইলি স্টারের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি দীলিপ রায়।
মূলত, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ না হওয়ায় চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছে দাবি করে একটি চিঠির ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রাম বা দেশের কোনো স্থানের কোনো শিক্ষার্থীই চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেননি। ভুয়া একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এ বিষয়টি কুড়িগ্রামের পুলিশ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, ঢাবিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মৌমিতা মৌ নামে কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসিকে নিয়ে তার স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো ফেসবুকে তার পেজে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন দাবি করে বাংলাদেশ ও ভারতের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো মেসির দলবদলকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে কোনো পোস্ট দেননি বরং মেসির স্ত্রীর নামে তৈরি একটি ভেরিফাইড ভুয়া ফেসবুক পেজের পোস্টকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রোকুজ্জোর কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত পেজটির (আর্কাইভ) ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত পেজটি ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৈরি করা হয়েছে। তবে পেজটির অ্যাডমিন লোকেশন হাইড থাকায় পেজটি কোন দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে সে সম্পর্কে তথ্য মেলেনি।
Screenshot: Antonela Roccuzzo Facebook
এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত অ্যাকাউন্টটির বায়োতে লেখা আছে, তার কোনো টুইটার এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই।
Screenshot: Instagram
পরবর্তীতে, গত ০৮ জুন রাত থেকে আলোচিত ভুয়া ভেরিফাইড পেজটি ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মূলত, গত ০৫ জুন আর্জেন্টিনার ফুটবলার লিওনেল মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর নামে পরিচালিত একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে মেসিকে বাড়ি ফেরার কথা বলে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পরবর্তীতে একই পেজ থেকে মেসির বিষয়ে আরো দুইটি পোস্ট করা নয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, পেজটি মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর নামে তৈরি একটি ভুয়া ভেরিফাইড পেজ, যেটির এখন আর ফেসবুকে উপস্থিতি নেই। মেসির স্ত্রী নিজেই তার ইন্সটাগ্রাম আইডির বায়োতে স্পষ্টভাবে লিখেছেন, ‘তার কোনো টুইটার এবং ফেসবুক আইডি নেই।’ কিন্তু আলোচিত পোস্টগুলো রোকুজ্জোই দিয়েছেন দাবি করে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেও একই পেজের পোস্টকে রোকুজ্জোর পোস্ট ভেবে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়লে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, দেশের কতিপয় গণমাধ্যমসহ ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় জন কংগ্রেসম্যান কর্তৃক একটি চিঠি দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পাঠানোর বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। উক্ত চিঠিটি ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছে কতিপয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে।
সংবাদমাধ্যমে উক্ত দাবিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন বাংলা ইনসাইডার।
বাংলা ইনসাইডারের এ সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই সংবাদমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে এ সংক্রান্ত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
গত ০৫ জুন একই বিষয়ে জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার প্রিন্ট এবং অনলাইন সংস্করণেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ভোরের কাগজের প্রতিবেদনের শিরোনামে চিঠির সত্যতা নেই বলে দাবি করা হলেও মূল প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি যাচাই করছে বলে দাবি করেছে পত্রিকাটি। তাছাড়া, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এক কংগ্রেসম্যানের টুইটারে উক্ত চিঠিটি প্রকাশ করার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও উক্ত চিঠি রিসিভ করা হয়েছে কিনা এমন কোনো তথ্য সেখানে নেই বলে দাবি করেছে জাতীয় এই দৈনিক।
ফেসবুকের কিছু পোস্টে উক্ত চিঠিটি বানোয়াট এবং মার্কিন কোনো সিনেটর এমন চিঠি দেননি বলে দাবি করা হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে দেশটির ছয় জন কংগ্রেসম্যানের লেখা আলোচিত চিঠিটি ভুয়া শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ২৫ মে প্রকাশিত উক্ত চিঠিটি আসল বলে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি’র (PA-10) ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর জে ওস্ট্রিচ রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে চিঠিটি ভুয়া বলে দাবির পূর্ব থেকেই চিঠিটির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত ২৮ মে মূলধারার সংবাদমাধ্যম The Business Standards এর ওয়েবসাইটে চিঠিটির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর উক্ত প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয় সংবাদমাধ্যম কর্তৃপক্ষ।
Screenshot source: The Business Standards
একইভাবে আরেক সংবাদমাধ্যম ‘আমাদের সময়’-ও গত ২৯ মে একই সংবাদ প্রকাশের পর তা সরিয়ে নেয়।
Screenshot source: Amader Somoy
বিষয়টি রিউমর স্ক্যানার টিমের নজরে আসার পর অনুসন্ধান শুরু করি আমরা।
‘The Business Standards’ এবং ‘আমাদের সময়’ এর প্রতিবেদনে চিঠিটি ১৭ মে প্রকাশিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ‘The Business Standards’ এর প্রতিবেদনে চিঠিটির কোনো ছবি যুক্ত করা না হলেও ‘আমাদের সময়’ এর প্রতিবেদনে চিঠির একটি অংশের ছবি যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে কি ওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুকে একই চিঠির দুইটি সংস্করণ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। দুইটি চিঠির ভাষা এবং স্বাক্ষরকারীদের নাম এক হলেও একটি চিঠিতে ১৭ মে (আর্কাইভ) এবং অন্যটিতে ২৫ মে (আর্কাইভ) তারিখ উল্লেখ ছিল।
Screenshot collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, একই চিঠি দুইটি ভিন্ন তারিখে (১৭ ও ২৫ মে) প্রকাশের দাবিতে ছড়িয়েছে।
চিঠিগুলোর বিষয়ে জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট কংগ্রেসম্যানদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি’র (PA-10) ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর জে ওস্ট্রিচ (Jay Ostrich) গত ৩০ মে রাতে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, উক্ত চিঠিটি আসল। ২৫ মে স্বাক্ষরিত চিঠির একটি কপিও রিউমর স্ক্যানারকে পাঠিয়েছেন তিনি।
Screenshot collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে গত ০২ জুন উক্ত চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান বব গুড তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২৫ মে লেখা চিঠিটি প্রকাশ করেন।
Screenshot source: Bob Good Website
গত ০৬ জুন অনলাইন সংবাদমাধ্যম Just News Bd এর হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে (আর্কাইভ) জানান, “বাংলাদেশে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি সম্পর্কে হোয়াইট হাউস অবগত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)’র স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি।”
গত ০৫ জুন হোয়াইট হাউসে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জ্যাঁ পিয়েরের সঞ্চালনায় আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন বলে জানান মুশফিকুল ফজল আনসারী।
মুশফিকুল ফজল আনসারীর করা এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডমিরাল কিরবি বলেন, আমরা আমাদের অবস্থানে স্থির রয়েছি। এই যোগাযাযোগের (চিঠি পাঠানো) বিষয়ে আমি অবগত।
মুশফিকুল ফজল আনসারী একই পোস্টে Just News Bd এর একটি প্রতিবেদন এবং ব্রিফিংয়ের একটি ভিডিও সংযুক্ত করেন।
Screenshot source: Facebook
মূলত, সম্প্রতি দেশের কতিপয় গণমাধ্যমসহ ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় জন কংগ্রেসম্যান কর্তৃক একটি চিঠি দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পাঠানো একটি চিঠি ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছে কতিপয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। ২৫ মে প্রকাশিত উক্ত চিঠিটি আসল বলে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি’র (PA-10) ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর জে ওস্ট্রিচ রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান বব গুডও তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া, কংগ্রেসম্যানের চিঠি সম্পর্কে হোয়াইট হাউস অবগত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)’র স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি।
সুতরাং, বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে দেশটির ছয় জন কংগ্রেসম্যানের লেখা আলোচিত চিঠিটি ভুয়া শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন দাবি প্রচার করা হচ্ছে।
দাবি ১: ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে সাফা কবিরের মৃত্যু
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাট্য অভিনেত্রী সাফা কবির মারা যাননি এবং তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়েও নন বরং শাহরিয়ার কবিরের যে মেয়ে মারা গেছেন, তার নাম অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমু, সাফা কবির নয়।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের নাম কি সাফা কবির?
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ বাথরুমের জানালার সঙ্গে গলা রশি বাঁধা অবস্থায় তাঁর লাশটি ঝুলছিল। প্রতিবেদনে তার নাম উল্লেখ করা হয় অর্পিতা শাহরিয়ার মুমু (৪১)।
Screenshot: Ajker Patrika
পাশাপাশি অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এ একইদিনে ‘শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মরদেহ উদ্ধার‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের নাম অর্পিতা কবির মুমু।
Screenshot: bdnews24
এছাড়া একই গণমাধ্যমে ‘শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মৃত্যু: ‘বিব্রত’ সাফা কবির‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার মহাখালীতে শাহরিয়ার কবিরের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় তার মেয়ে অর্পিতা কবির মুমুর মরদেহ। তবে এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণ এবং অনলাইন পোর্টালে ওই খবর প্রচার করা হয় সাফা কবিরের নাম দিয়ে। আর এই ভুল তথ্যের কারণে বিড়ম্বনায় পড়েছেন মডেল- অভিনেত্রী সাফা কবির।
Screenshot: bdnews24
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে আলোচিত প্রসঙ্গে অভিনেত্রী সাফা কবিরের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেইজে সবাইকে ছুটির দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Safa Kabir Facebook Post
সেখানে তিনি বলেন, ‘একটি ভুল পোস্টে আমাকে অনেকেই ট্যাগ করছেন। নামের সাথে মিল থাকায় অনেকেই আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। না জেনে এভাবে প্যানিক ছড়ানোটা ঠিক না। এতে আমাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে, বিব্রত হতে হয়েছে। আমি আল্লাহর রহমতে এবং আপনাদের দোয়ায় সুস্থ আছি, ভালো আছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ সবার ভালো করুক, আমিন।’
অর্থাৎ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মৃত মেয়ের নাম অর্পিতা কবির মুমু, সাফা কবির নয়। কিন্তু কিছু জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণ এবং অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদনে অর্পিতা কবির মুমুকেই সাফা কবির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া অভিনেত্রী সাফা কবিরের পোস্টের প্রেক্ষিতে কতিপয় গণমাধ্যমে পুনরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনেও শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে হিসেবে সাফা কবির নামটি উল্লেখ করে।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের সার্বিক অনুসন্ধানে উভয়ের নামের মধ্যে ‘কবির’ ব্যতীত আর কোথাও মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অভিনেত্রী সাফা কবির কি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে?
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অভিনেত্রী সাফা কবিরের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হয়, অভিনেত্রী সাফা কবির শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিনেত্রী সাফা কবিরের সাথে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের কোনো সম্পর্ক নেই।
বরং অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অভিনেত্রী সাফা কবিরের পরকালে বিশ্বাস সম্পর্কিত একটি বক্তব্যের জেরে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ঐ দাবিটিই সত্য তথ্য হিসেবে বিভিন্নভাবে প্রচার হতে থাকে।
পোস্টটিতে জন কবির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নামে গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে লিখেন তার পিতার নাম, আলমগীর ও মাতার নাম লায়লা। তার আরও আরও দুই ভাই থাকলেও কোনো বোন নেই।
পোস্টটিতে তিনি লিখেন, ‘শাহরিয়ার কবির চাচা..ছোটবেলা থেকে তাকে আমি চিনি খুশী কবির..উনাকে আমি অসম্ভব পছন্দ করি জন কবির..যে আমার কো-আর্টিস্ট, সাফা কবির যার সাথে আমার হার্ডলি 2 বার দেখা হয়েছে দুটো প্রোগ্রামে ।। আমাদের নামের সাথে নাম মিলিয়ে একটা ফ্যামিলি বানানো হয়েছে memeটাতে যেটা খুবই হাস্যকর !! যেখানে জোর করে আমাকে ফ্যামিলি মেম্বার করা হয়েছে আমাকে -সাবা কবির বানিয়ে! যাই হোক আমার একটা ভাই আছে। আমরা এক ভাই এক বোন ইহজনমে আমার কোন বোন নাই !!’
অর্থাৎ জন কবির, সাফা কবির ও সোহানা সাবার শাহরিয়ার কবিরের ছেলে-মেয়ে হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, শাহরিয়ার কবিরের স্ত্রীর নামও খুশি কবির নয় বরং তার স্ত্রীর নাম ডানা কবির।
তবে পরবর্তীতে তিনি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বক্তব্য দিয়ে জানান, ‘ফেসবুকে সাফা কবিরের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে সাবা কবির, শাহরিয়ার কবির ও খুশি কবিরের ছবি শেয়ার দেওয়া হয়েছিল। আমি সেগুলো যাচাই বাছাই না করেই ওয়াজে বলেছিলাম। ভুলক্রমে আমি সেটা বলেছি। আসলে ফেসবুকের কোনো পোস্ট দেখে কেউ যেন কখনো কোনো বক্তা ওয়াজ না করেন। আমি দুঃখিত, আমি তওবা করেছি, ফেসবুকের পোস্ট দেখে আমি আর কখনো ওয়াজ করব না। আর তথ্য না জেনে যেন কেউ আলোচনা না করেন।’
মূলত, গত বুধবার (৭ জুন) দিবাগত রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে গণমাধ্যমে শাহরিয়ার কবিরের মেয়েকে সাফা কবির হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে এই তথ্যটিই বিকৃত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনেত্রী সাফা কবিরের মৃত্যুর সংবাদ দাবিতে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিনেত্রী সাফা কবির ও শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা কবির দুইজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি এবং সাফা কবিরের সঙ্গে শাহরিয়ার কবিরের কোনো পারিবারিক সম্পর্কই নেই।
সুতরাং, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মৃত্যুর ঘটনায় তাকে সাফা কবির হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি অভিনেত্রী সাফা কবির শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।