Home Blog Page 562

মিরপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষকে গণমাধ্যমে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, রাজধানীর ‘মিরপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ‘শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

সংঘর্ষ

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন সময় টিভি, ইত্তেফাক, মোহনা টিভি, ঢাকা টাইমস, সময়ের আলো, এবি নিউজ, আলোকিত বাংলাদেশ, বিবার্তা২৪, রিদ্মিক নিউজ, যুবকণ্ঠ, জনমত, বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) ও এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট এবং জামায়াতে ইসলামীর তিনদিনের অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানীর মিরপুরে ১১ নম্বরে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ঐ এলাকায় পোশাক শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪ এ ৩১ অক্টোবর ‘মিরপুরে পোশাকশ্রমিক-আওয়ামী লীগ-পুলিশ সংঘর্ষ’  শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নাজমুলকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনের মধ্যে পিকেটিংয়ের ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশও মাঠে নামে।

জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক আজকের পত্রিকায় একই ঘটনায় ‘মিরপুরে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ–সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, আহত ২৩‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে মিরপুর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘আন্দোলনরত শ্রমিকদের নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে হালকা হাতাহাতি হয়েছে। হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। দুই-এক দিনের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির কথা রয়েছে। এটা  উপেক্ষা করে তারা আন্দোলন করছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে তুলে দিয়েছি।’ 

একই ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরও প্রতিবেদন ও ছবির তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখুন 

Image Analysis: Rumor Scanner

মিরপুরে পোশাক শ্রমিক-আওয়ামী লীগ-পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ২১ (নিউজবাংলা২৪)

এছাড়া বিষয়টি নিয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে। 

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের দাবিটি গুজব। এখানে সংঘর্ষটি হয়েছে শ্রমিকদের দুইটি পক্ষের মধ্যে। বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা এখানে ছিল না। 

একই বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের ডেপুটি কমিশনার ফারুক হোসেনের সাথেও যোগাযোগ করে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, মিরপুরের ঘটনাটি বিএনপির সাথে সংঘর্ষ না। ওটা শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ। 

মূলত, আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ছিল সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে শুরু হওয়া বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট এবং জামায়াতে ইসলামীর তিনদিনের অবরোধের প্রথম দিন। এদিনই রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে একটি পোশাক কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একইসাথে এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদেরও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই সংঘর্ষকেই পরবর্তীতে একাধিক গণমাধ্যমে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনাকে গণমাধ্যমে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আফগানিস্তানে ছাত্রদের দ্বারা নির্মিত ২শত কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের ছবি দাবিতে স্পেনের পুরোনো ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি, ‘আফগানিস্তানের কুন্দুজ থেকে জালালাবাদ পর্যন্ত ২ শত কিলোমিটার অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্ররা সম্পন্ন করেছে’ দাবিতে একটি রাস্তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আফগানিস্তানের কুন্দুজ থেকে জালালাবাদ পর্যন্ত ২ শত কিলোমিটার অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদের করার দাবিতে রাস্তার যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে তা আফগানিস্তানের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের অটোভিয়া দেল অলিভার নামের একটি রাস্তার।

ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Driftwood Journals নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর  Spain’s 10 Most Scenic Road-Trip Routes ~ A Windows Down Guide শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফিচার প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner 

ফিচার প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত প্রতিবেদনে থাকা একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত রাস্তার ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে।

এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, এটি মূলত স্পেনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এমন কিছু রাস্তা নিয়ে যেখানে গাড়ি নিয়ে দারুণ একটি রোড ট্রিপ দেওয়া যেতে পারে। সেই রাস্তাগুলোর মধ্যে আলোচিত ছবিটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আন্দালুসিয়ার জলপাই বাগানে ঘেরা অটোভিয়া দেল অলিভার নামক রোডটি অন্যতম।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জনপ্রিয় উন্মুক্ত বিশ্বকোষ Wikipedia এর ওয়েবসাইটে ২০০৭ সালের ২৫ নভেম্বর File:Autovia olivar.jpg শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত আরেকটি ছবি খুঁজে যায়। উক্ত ছবিটির সাথেও আলোচিত ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Image Comparison by Rumor Scanner 

এছাড়াও উক্ত ছবির সাথে প্রদত্ত মেটাডেটা থেকে জানা যায়, ছবিটি অটোভিয়া দেল অলিভার নামক মহাসড়কের। যা ফারনান্দো আলদা ক্যালভো নামের একজন ফটোগ্রাফার ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর তুলেছেন।

তাছাড়া, lacontradejaen নামের স্পেন ভিত্তিক ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১৫ বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে স্পেনের অলিভার হাইওয়ে তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং এই রাস্তার কাজ ২০০৫ সালে শুরু হয়েছিল।

পরবর্তী অনুসন্ধানে সম্প্রতি আফগানিস্তানে কুন্দুজ থেকে জালালাবাদ পর্যন্ত ২ শত কিলোমিটারের অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কোনো কাজ হয়েছে কিনা এবং তার সাথে সে দেশের শিক্ষার্থীরা যুক্ত আছেন কিনা জানতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাথে আফগানিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই।

মূলত, ২০০১ সালের পর পুনরায় ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতায় আসে তালিবান। দীর্ঘ সংগ্রামের পর দেশটিতে শাসন ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর দেশের সকল পর্যায়ে নতুন আইন প্রণয়ন শুরু করা হয়। যার কিছু কিছু ব্যাপক সমালোচিত হলেও কিছু কর্মকাণ্ড সমাদৃতও হয়েছে। তবে সম্প্রতি, আফগানিস্তানের কুন্দুজ থেকে জালালাবাদ পর্যন্ত ২ শত কিলোমিটার অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির ছাত্ররা সম্পন্ন করেছে এমন দাবিতে একটি রাস্তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত রাস্তার ছবিটি আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত কোনো রাস্তার ছবি নয়। ছবিটি মূলত স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের অটোভিয়া দেল অলিভার নামের একটি রোডের। তাছাড়া এই ছবিটি প্রায় ১৬ বছর আগের।

সুতরাং, ‘আফগানিস্তানের কুন্দুজ থেকে জালালাবাদ পর্যন্ত ২ শত কিলোমিটার অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্ররা সম্পন্ন করেছে’ দাবিতে স্পেনের একটি রাস্তার পুরোনো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

মাওলানা তারিক জামিলের ছেলের মৃত্যু অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে হয়নি

সম্প্রতি, “অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে মাওলানা তারিক জামিলের ছেলে নিহত” শীর্ষক শিরোনামে কিছু প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়।

মৃত্যু

সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন আমাদের সময়, ইনসাফ

একই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অজ্ঞাত পরিচয় কোনো বন্দুকধারীর গুলিতে পাকিস্তানের ইসলামিক স্কলার মাওলানা তারিক জামিলের ছেলে আশেক জামিলের মৃত্যু ঘটেনি বরং নিরাপত্তারক্ষীর কাছ থেকে বন্দুক নিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম The Dawn এর ওয়েবসাইটে আজ (৩০ অক্টোবর) “Tariq Jamil’s son dies under ‘mysterious’ circumstances” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনে আঞ্চলিক পুলিশ কর্মকর্তা (আরপিও) সোহাইল চৌধুরীর বরাত দিয়ে জানানো হয়, মাওলানা তারিক জামিলের পুত্র আশেক জামিল বাড়ির ব্যায়ামাগারে অনুশীলনের সময় নিরাপত্তাকর্মীকে ডাকেন এবং তার বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে নিজের বুকে গুলি চালান। পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

পাকিস্তানের মিয়ান চান্নুর ডেপুটি পুলিশ সুপার সালিম, আশেক জামিলের আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।

Source: The Dawn

পরবর্তীতে, মাওলানা তারিক জামিলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আজ (৩০ অক্টোবর) মধ্যরাতে একটি পোস্টে মাওলানা তারিক জামিলের অপর পুত্র ইউসুফ জামিলের একটি ভিডিও বার্তা খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।

Screenshot: Facebook 

উর্দুতে লেখা উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন বাংলায় অনুবাদ করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটি ইউসুফ জামিলের ভাই আশেক জামিলের মৃত্যু বিষয়ক ভিডিও বার্তা। 

উক্ত ভিডিও বার্তায় মাওলানা তারিক জামিলের ছেলে ইউসুফ জামিল জানান, তার ভাই আশেক জামিল দীর্ঘদিন থেকেই মানসিক অবসন্নতায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি তার মানসিক অবস্থার অবনতি হলে সেটি নিয়ন্ত্রণের জন্য বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার চিকিৎসাও চলছিল। ঘটনার দিন তার (ইউসুফ জামিল) ভাই আশেক জামিল বাড়িতে একাই ছিলেন। একসময় তিনি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীর হাত থেকে বন্দুক নিয়ে নিজেই নিজের বুকে গুলি চালান। 

মূলত, পাকিস্তানের ইসলামিক স্কলার মাওলানা তারিক জামিলের ছেলে আশেক জামিল দীর্ঘদিন থেকেই মানসিক অবসন্নতায় ভুগছিলেন। মানসিক অবসন্নতার কারণেই ২৮ অক্টোবর বাড়ির নিরাপত্তায় নিয়োজিত এক নিরাপত্তাকর্মীর বন্দুক নিয়ে নিজের বুকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন তিনি। তার এই মৃত্যুর ঘটনায় মাওলানা তারিক জামিলের ছেলে আশেক জামিল অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।

উল্লেখ্য, পূর্বে মাওলানা তারিক জামিলের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, মাওলানা তারিক জামিলের পুত্র আশেক জামিল অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভূমিকম্প কী: ভূমিকম্প কি ভবিষ্যদ্বানী করা সম্ভব?

0

প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম। U.C. Berkeley এবং Stanford University এর গবেষকদের মতে, হয়তো এই ভূমিকম্পের কারণে ট্রয় নগরী, মায়ান সভ্যতা, দক্ষিণ এশিয়ার হরোপ্পা সভ্যতাসহ পৃথিবীর বহু সভ্যতা এবং নগরী ধ্বংস হয়েছিল।

বিবিসি বাংলা কর্তৃক ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “গত একশো বছরে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভূমিকম্পের কারণে। যদিও এই সময়ে প্রযুক্তির অনেক উন্নতি ঘটেছে, কিন্তু তাতে ভূমিকম্পের কারণে মানুষের মৃত্যু খুব একটা ঠেকানো সম্ভব হয়নি।”

২০২৩ সালের ০৬ই ফেব্রুয়ারি সিরিয়া এবং তুরস্কে সংঘটিত ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ভয়াবহতা দেখেছে গোটা বিশ্ব। কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা কর্তৃক ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় দেশের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, এই মাসের শুরুতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার। দেশটির দুর্যোগ ও জরুরী ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (AFAD) জানিয়েছে, উক্ত ভূমিকম্পে তখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৪,২১৮ জন। অন্যদিকে সিরিয়ায় সর্বশেষ ঘোষিত মৃতের সংখ্যা ছিল ৫,৯১৪ জন। উক্ত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, এই ভূমিকম্পের কারণে তুরস্কের প্রায় ১লক্ষ ৭৩ হাজার ভবন ধসে পড়ে এবং তুরস্কের প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ এই ভূমিকম্পের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে জাতিংঘের ধারণা অনুযায়ী, সিরিয়ার প্রায় ৮.৮ মিলিয়ন মানুষ এই ভূমিকম্প দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

ভূমিকম্প নিয়ে এত এত ভয়াবহতা দেখার পর পর মানুষের মনে প্রায়সই একটি প্রশ্ন জাগে। আর এই প্রশ্নটি হলো আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদেরকে  ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, টর্নেডো, সুনামি  এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের বেলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রায় নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী দিতে দেখা গেলেও ভূমিকম্পের বেলায় কেন তারা এরকম পূর্বাভাস দেন না? তাহলে কি ভূমিকম্পের বেলায় কোনো পূর্বাভাস বা ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়া সম্ভব নয়? এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখা যায়। তাই এ নিবন্ধে আমরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব কি না তা নিয়ে আলোচনা করবো। 

ভূমিকম্প সম্পর্কে কি আসলেই কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব কিনা? কিংবা যদি ভবিষদ্বাণী যদি নাই করা যায়, তাহলে সেটা কেন সম্ভব না? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বুঝতে হলে আমাদের সবার আগে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান রাখতে হবে তা হলোঃ

  • ভূমিকম্প কী?
  • পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরিন গঠন।
  • ভূমিকম্পের কারণ (পাত সঞ্চালন তত্ত্ব)। 

ভূমিকম্প কী?

স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতিতে ছোট বড় বিভিন্ন কারণেই ভূমির কম্পন অনুভূত হয়। যেমন মাটিতে কোনো কিছু পড়লেও তা ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি করে, আবার রেললাইনে গাড়ি চলার কারণেও ভূমির কিছুটা কম্পন অনুভূত হয়। তবে রেললাইনের গাড়ি চলার সময় মাটির কম্পন হলেও এটিকে কিন্তু ঠিক ভূমিকম্প বলা যায়না। ভূমিকম্প হলো বিশেষ কিছু কারণে আকস্মিকভাবে ভূপৃষ্ঠের তীব্র কাঁপন কিংবা ভূ-আন্দোলন, যা একটি বিশাল এলাকা জুড়ে অনুভূত হয়। 

ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার অন্যতম কারণগুলো হতে পারে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং পৃথিবীতে আছড়ে পড়া উল্কাপিন্ডের আঘাত। তবে ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে পাত/টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চালণ। এই পাত/টেকটোনিক প্লেট কি সেটা বোঝার জন্য পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। 

পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরীণ গঠন 

আমরা বর্তমানে আমাদের যে পৃথিবী দেখছি, তা একটা সময় এরকম ছিলোনা। ক্যালিফর্নিয়া একাডেমি অব সায়েন্স এর তথ্যমতে, প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে, পৃথিবী ছিলো জলন্ত এবং অত্যন্ত উত্তপ্ত একটি পিন্ড। সময়ের সাথে সাথে পৃথিবী তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হতে শুরু করে এবং তৈরী হয় আমাদের এই ভূ-ত্বক। তবে সময়ের ব্যাবধানে পৃথিবীর উপরিভাগ শক্ত হলেও পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তর এখনো অত্যন্ত উত্তপ্ত রয়েছে এবং এটি এখনো ক্রমাগত ঠান্ডা হচ্ছে। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে পৃথিবী যখন ঠান্ডা হতে শুরু করে তখন এর ভারী উপাদানগুলো কেদ্রের দিকে এবং তুলনামূলক হালকা উপাদান গুলো নিচে অবস্থান করে। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে আমরা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনকে প্রধান তিনটি স্তরে ভাগ করতে পারি। যথাঃ

  1. Crust
  2. Mantle
  3. Core

পৃথিবীর উপরস্থ ভূত্বক (Crust) এবং Mantle স্তরের সবচাইতে উপরের যে কঠিন স্তর রয়েছে এই উভয় অংশকে একত্রে বলা হয় Lithosphere (লিথোস্ফিয়ার)। পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরীণ গঠন আরো ভালোভাবে বুঝতে, দেখুন নিচের চিত্রটিঃ-

ভূমিকম্প কী
Image Source: United State Geological survey

ভূমিকম্পের কারণ (পাত সঞ্চালন তত্ত্ব)

ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং পৃথিবীতে আছড়ে পড়া উল্কাপিন্ডের আঘাত। তবে ভূমিকম্প সবচেয়ে বেশি সংঘটিত হয় পাত/টেকটোনিক্স প্লেটের সঞ্চালণের কারণে। 

National Geographic এর একটি আর্টিকেলে বলা হয়, প্লেট টেকটোনিক্স হল একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, যা ব্যাখ্যা করে কিভাবে পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরীণ গতিবিধির ফলে প্রধান ভূমিরূপ তৈরি হয়। ১৯৬০ এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বটি পর্বত নির্মাণ, আগ্নেয়গিরি এবং ভূমিকম্প সহ অনেক ঘটনা ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্লেট টেকটোনিক্স থিওরি অনুযায়ী পৃথিবীর উপরে যে লিথোস্ফিয়ার বা অশ্বমন্ডল রয়েছে সেটি পুরোপুরি নিরেট নয় বরং এই লিথোস্ফিয়ার মূলত আলাদা আলাদা পাথুরে পাত (Plate) এ বিভক্ত। আর এই প্লেটগুলো অ্যাথেনোস্ফিয়ার নামক পাথরের আংশিক গলিত স্তরের উপরে ভাসমান অবস্থায় থাকে। অ্যাথেনোস্ফিয়ার এবং লিথোস্ফিয়ারের পরিচলনের কারণে, পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলো প্রতি বছর দুই থেকে 15 সেন্টিমিটার (এক থেকে ছয় ইঞ্চি) বিভিন্ন হারে একে অপরের সাপেক্ষে সরে যায়।

বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘Think School’ এ বলা হয়, পৃথিবীর ভেতরে তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলোর ক্ষয়ের কারণে ভীষণ রকমের তাপের সৃষ্টি হয়। এছাড়া সেই সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে যখন বিভিন্ন ধরনের গ্রহাণুর সম্মেলনে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিল আমাদের এই গ্রহ, তখন তাদের শক্তিও পৃথিবীর গভীরে আটকা পড়ে যায়। এদের থেকে ক্রমাগত হারে তাপ বের হচ্ছে এখনও। এই তাপশক্তি পৃথিবীর গভীরের ম্যান্টেলের মধ্য দিয়ে ক্রমশ উপরের দিকে উঠে আসতে থাকে কনভেকশন কারেন্ট বা পরিচলন স্রোতে। ব্যাপারটাকে অনেকটা হাঁড়িতে ডাল গরম করার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। হাঁড়ির নিচের আগুনের তাপ তরল ডালের মধ্যে কনভেকশান স্রোত সৃষ্টি করে ওপরে উঠে আর নিচ থেকে উত্তপ্ত ডাল ক্রমাগত উপরে উঠে আসতে থাকে এর সাথে। আর ওদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বাইরের স্তর বা লিথোস্ফেয়ার, যার উপরে আমরা দাঁড়িয়ে আছি তা কিন্তু নিরেট নয়, বরং ১৫-২০টি ছোট বড় টেকটনিক প্লেট বা পাতে বিভক্ত এবং এই পাতগুলো তাদের নিচের সেই গলিত, পাথরের স্তর বা ম্যাগমার ওপর ধীরগতিতে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে ম্যান্টেলের ভিতর থেকে সেই উত্তপ্ত বস্তু লিথোস্ফিয়ারের বা দুটো পাতের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে এবং ধাক্কা দিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘Think School’ এ বলা হয়, পৃথিবীর ভেতরে তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলোর ক্ষয়ের কারণে ভীষণ রকমের তাপের সৃষ্টি হয়। এছাড়া সেই সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে যখন বিভিন্ন ধরনের গ্রহাণুর সম্মেলনে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিল আমাদের এই গ্রহ, তখন তাদের শক্তিও পৃথিবীর গভীরে আটকা পড়ে যায়। এদের থেকে ক্রমাগত হারে তাপ বের হচ্ছে এখনও। এই তাপশক্তি পৃথিবীর গভীরের ম্যান্টেলের মধ্য দিয়ে ক্রমশ উপরের দিকে উঠে আসতে থাকে কনভেকশন কারেন্ট বা পরিচলন স্রোতে। ব্যাপারটাকে অনেকটা হাঁড়িতে ডাল গরম করার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। হাঁড়ির নিচের আগুনের তাপ তরল ডালের মধ্যে কনভেকশান স্রোত সৃষ্টি করে ওপরে উঠে আর নিচ থেকে উত্তপ্ত ডাল ক্রমাগত উপরে উঠে আসতে থাকে এর সাথে। আর ওদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বাইরের স্তর বা লিথোস্ফেয়ার, যার উপরে আমরা দাঁড়িয়ে আছি তা কিন্তু নিরেট নয়, বরং ১৫-২০টি ছোট বড় টেকটনিক প্লেট বা পাতে বিভক্ত এবং এই পাতগুলো তাদের নিচের সেই গলিত, পাথরের স্তর বা ম্যাগমার ওপর ধীরগতিতে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে ম্যান্টেলের ভিতর থেকে সেই উত্তপ্ত বস্তু লিথোস্ফিয়ারের বা দুটো পাতের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে এবং ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে থাকে মহাদেশীয় বা সামুদ্রিক, টেকটনিক পাতগুলোকে। আর এভাবেই অনবরত ঘটে পাতের সঞ্চালন।

ভূ অভ্যন্তরের এই টেকটোনিক প্লেটগুলোর সঞ্চালন কিভাবে ঘটে?

National Oceanic and Atmospheric Administration এর তথ্যমতে, ভূ-অভ্যন্তরীণ টেকটোনিক প্লেটগুলোর সঞ্চালন মূলত তিনভাবে ঘটতে পারে। এগুলো হচ্ছেঃ

  1. divergent boundary
  2. convergent boundary
  3. transform plate boundary
Screenshot from: NOAA

Divergent Boundary: ভূ-অভ্যন্তরীণ টেকটোনিক প্লেটগুলোর সঞ্চালনের ক্ষেত্রে যদি দুটি প্লেট পরস্পর থেকে দূরে সরতে থাকে তখন তাকে ডাইভারজেন্ট বাউন্ডারি বা বিমুখগামী সীমা বলে। বিমুখগামী সীমাগুলোতে ভূমিকম্প একটি সাধারণ ঘটনা এবং এই সীমাগুলো দিয়েই ভূ-অভ্যন্তর থেকে গলিত ম্যাগমা পৃথিবীর উপরিভাগে উঠে আসে এবং নতুন মহাসাগরীয় ভূত্বক সৃষ্টি করে। 

Convergent Boundary: যখন দুটি প্লেট পরস্পরের দিকে একত্রিত হতে থাকে, এটি একটি অভিসারী সীমানা হিসাবে পরিচিত। এক্ষেত্রে পাতগুলো কাছাকাছি আসতে আসতে একে অন্যের নিচে ঢুকেও যায়। তবে অভিসারমুখী সীমায় যে সবসময় একটি পাত অন্য একটি পাতের নিচে চলে যায় তাও কিন্তু নয়। কখনো কখনো দুটি টেকটোনিক প্লেট কেউ কারো নিচে চলে না গিয়ে দুটি প্লেটই নিজেদের সংঘর্ষস্থল থেকে উপরের দিকে উঠতে থাকে। আর এভাবেই প্রায় ৪০-৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে মহাদেশ থেকে বিচ্ছন্ন হওয়া ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছিল।

Screenshot Source: United State Geological Survey

Transform Plate Boundary: ভূ-অভ্যন্তরীণ টেকটোনিক প্লেটগুলোর সঞ্চালনের ক্ষেত্রে যদি দুটো পাত একে অপরের সাথে সমান্তরালভাবে সরতে থাকে তাহলে সেটিকে বলা হয় ট্রান্সফর্ম বাউন্ডারি বা পরিবর্তক সীমা। পরিবর্তক সীমার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ার সান আন্দ্রিয়াস ফাটল।

গত ১০ মিলিয়ন বছরে সান আন্দ্রেয়াস ফল্ট গড়ে প্রতি বছর ৩০মিমি থেকে ৫০ মিমি করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চলাচলের এই বর্তমান হার বজায় থাকলে এই ফাটলের দুদিকের ভূমি সরতে সরতে আজ থেকে ২০ মিলিয়ন বছর পরে, বর্তমানে লস এঞ্জেলস শহর সান ফ্রানসিসকো শহরের পাশে চলে আসবে

ভূমিকম্প কেন হয়?

ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলো মোটেও স্থির না বরং খুবই ধীর গতিতে এরা সর্বদা সঞ্চালিত হতে থাকে। আর পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলোর সঞ্চালনের ফলে কখনো কখনো এরা নিজেদের ফাটল রেখা বরাবর কখনো কখনো একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের উপরে উঠে যাওয়ার জন্য, আবার কখনো বা আনুভূমিকভাবে পিছলে সরে যাওয়ার জন্য চাপে থাকে। মূলত শিলার মধ্যে থাকা ঘর্ষণ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণেই এই চাপের সৃষ্টি হয়।

US Geological Survey এর তথ্যমতে, পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলো যেহেতু ধীরে হলেও সর্বদা চলমান থাকে তাই একই ফাটলরেখা (Fault Line) বরাবর অবস্থানরত দুটো টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে ক্রমাগত চাপ বাড়তে থাকে। ফলে একটা সময় পর তা শিলার প্রতিরোধ ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়াতে এই শিলাগুলো ভেঙে যায় এবং এদের স্থানচ্যুতি ঘটে। টেকটোনিক প্লেটগুলোর এই আকষ্মিক স্থানচ্যুতির কারণে মুক্তি পায় বহুকাল ধরে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ শক্তি, যা তরঙ্গ আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর টেকটোনিক প্লেটের আকষ্মিক স্থানচ্যুতির কারণে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া সিসমিক তরঙ্গের কারণেই ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ আন্দোলিত হয়, যাকে আমরা ভূ-কম্পন কিংবা ভূমিকম্প বলে থাকি। 

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ভূমিকম্পগুলো যেহেতু দুটি টেকটোনিক প্লেটের সীমানা কিংবা ফাটলরেখা বরাবর হয়ে থাকে তাই যেসকল দেশ/স্থানের উপর দিয়ে এরকম ফাটলরেখাগুলো গিয়েছে সেসব দেশ/স্থানগুলোই বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ। উদাহরণস্বরুপঃ জাপানের মধ্যে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় টেকটোনিক প্লেটের ফাটলরেখা (Fault Line) বেশি হওয়াতে এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়। 

একটি ফাটলরেখায় দুটি টেকটোনিক প্লেটের স্থানচ্যুতির ফলে যে শক্তি নির্গত হয়, তা ভূ-ত্বকের শিলার মাধ্যমে চারিদিকে তরঙ্গ বা ওয়েব হিসেবে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর দুটি প্লেটের স্থানচ্যুতির ফলে চার ধরণের তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। এই তরঙ্গগুলো হচ্ছেঃ

  1. P-wave
  2. S-wave
  3. Love Wave
  4. Rayleigh Wave

উলেখ্য যে এই চার ধরণের ওয়েভের মধ্যে P এবং S wave ভূত্বকের গভীর অংশ দিয়ে ছড়ায় এবং অনেক দূর পর্যন্ত পৌছাতে পারে। এদের মধ্যে P-wave বলতে গেলে পৃথিবীর কোর বা কেন্দ্রের মধ্য দিয়েও প্রবাহিত হতে পারে। 

Screenshot Source: US Geological Survey

উল্লেখ্য যে, একটি ভূমিকম্প কতটা মারাত্মক হবে সেটা নির্ভর করে দুটি টেকটোনিক প্লেটের আকস্মিক স্থানচ্যুতির কারণে নির্গত শক্তির উপর। দুটি টেকটোনিক প্লেটের স্থানচ্যুতি যত বিস্তৃত এলাকাজুরে হবে, সেখান থেকে নির্গত তরঙ্গও তত বেশি শক্তিশালী হবে, ফলে ভূপৃষ্ঠে এর প্রভাবও ততটাই সুদূর প্রসারী হবে। তাছাড়া, ভূমিকম্পের তীব্রতাকে প্রভাবিত করে এমন আরো কিছু ফ্যাক্টর হচ্ছে, ভূমিকম্পের গভীরতা, চ্যুতির নৈকট্য, অন্তর্নিহিত মাটি এবং ভবনের বৈশিষ্ট্যগুলো-বিশেষ করে উচ্চতা ইত্যাদি।

ভূমিকম্প নিয়ে কি কোনো ভবিষ্যদ্বাণী  করা যায়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে Can you predict earthquakes? শীর্ষক একটি faq এর উত্তরে বলা হয়েছে, 

“না। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে অথবা অন্য কোনো বিজ্ঞানীরা কখনো বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেননি। আমরা জানি না কীভাবে এই ভবিষ্যদ্বাণী করতে হয়। নিকট ভবিষ্যতে এটা জানা যাবে, এমনটা মনেও হয় না। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (USGS) এর বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক সময়ের (বছর) মধ্যে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা গণনা করতে পারেন।

Screenshot : USGS

ভূমিকম্প সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করার ক্ষেত্রে যে তিনটি বিষয়ের অবশ্যই সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে সেগুলো হচ্ছে,  ১.ভূমিকম্পের তারিখ ও সময়; ২.স্থান; এবং ৩.ভূমিকম্পের অনুমিত মাত্রা।

হ্যাঁ, কিছু লোক বলে যে তারা ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে, কিন্তু তাদের দাবিগুলো মিথ্যা। আর এর কারণগুলো হচ্ছেঃ

  • তাদের এই ভবিষ্যদ্বানীগুলো বৈজ্ঞানিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে করা হয়না। অন্যদিকে ভূমিকম্প একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার অংশ।
  • ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য উপরোক্ত তিনটি বিষবস্তু সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য আগে থেকেই সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
  • যারা দাবি করে যে, তারা আগে থেকেই ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে, তাদের ক্ষেত্রে লক্ষ করলে দেখা যায় এই ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো খুবই সাধারণ মানের। উদাহরণস্বরুপঃ যদি বলা হয়ে থাকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোথাও একটি M4 মাত্রার ভূমিকম্প হবে তাহলে সেটি কখনোই সূস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী হতে পারেনা। 

যখন কোনো ভূমিকম্প হয়, যেটা তাদের পূর্বাভাসের কিছু অংশের সাথে মিলে যায়, তখন তারা দাবি করে তারা সফল, যদিও তাদের পূর্বাভাসের একাধিক তথ্য বাস্তবে যা হয় তার চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন, তাই এটা ব্যর্থ পূর্বাভাস ।

অবৈজ্ঞানিক ব্যক্তিদের ভবিষ্যদ্বাণী সচরাচর তখনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোরাঘুরি শুরু করে যখন কোনো অজানা কিছু হয়, যেটাতে ধারণা করা হয় যে এই সব ঘটনা নিকট ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের আভাস দেয় । এই আভাসগুলো হতে পারে ছোট ছোট ভূমিকম্পের মড়ক, স্থানীয় জলাশয়ে রেডন গ্যাস বেড়ে যাওয়া, প্রাণীদের অস্বাভাবিক আচরণ, মাঝারি ভূমিকম্পের মাত্রায় বৃদ্ধি বা একটি মাঝারি ধাক্কা, যা এত বিরল যে সেটাকে পূর্বাঘাত (foreshock) হিসেবেও ধরা যায় না।

দুর্ভাগ্যবশত, এই ধরনের বেশিরভাগ আভাসগুলো প্রায়শই ভূমিকম্পের পূর্ব প্রভাব ছাড়াও ঘটে। তাই, প্রকৃপক্ষে ভুমিকম্প নিয়ে একটি বাস্তব  ভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব নয়। তবে ভূমিকম্প সম্পর্কে বাস্তব বা প্রকৃত অর্থে ভবিষ্যদ্বাণী না করা গেলেও এর পরিবর্তে কিছু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে পূর্ভাভাস সম্পর্কে বেশ কিছু সম্ভাবনা দাঁড় করানো যেতে পারে।”

অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগের মতো ভূমিকম্পের বেলায় বাস্তব ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব না হলেও একটি নির্ষিষ্ট সময়কালের (Time Window) মধ্যে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তার সম্ভাবনা দাঁড় করানো যেতে পারে। আর এই বিষয়টি বোঝানোর জন্য বিজ্ঞানীরা দুইটি আলাদা পদ (Terms) ব্যবহার করে থাকে। যথাঃ

1. Earthquake Probabilities.

2.Earthquake Forecast. 

‘Earthquake Probabilities’ দ্বারা মূলত একটি দীর্ঘমেয়াদি সময়ব্যাপ্তির মধ্যে ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা নির্দেশ করে। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ঐতিহাসিক ঘটনার গড় হার থেকে নির্ধারিত হয়। কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ভূমিকম্প সংঘটনের হারকে ধ্রুবক হিসেবে ধরে নিলে পরবর্তী বছরগুলোতে ভূমিকম্পের হার সম্পর্কে সম্ভাব্য বিবৃতি প্রদান করা সম্ভব। তবে এই সম্ভাবনার সীমা ১/৩০ থেকে শুরু করে ১/৩০০০ এর মধ্যে হতে পারে। 

তবে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে, ঐতিহাসিক ঘটনার তথ্য পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে Slip Rate নামক গাণিতিক টার্ম ব্যবহার করে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয়। আর এই সম্ভাবনার সীমা ১/৩০ থেকে ১/৩০০ এর মধ্যে হতে পারে। 

অন্যদিকে, ‘Earthquake Forecast’ দ্বারা মূলত একটি সময়ব্যপ্তির মধ্যে ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা নির্দেশ করে। সাধারণত ভূমিকম্পের আফটার-শক (Aftershocks) এর ব্যাপারে এই টার্ম ব্যবহৃত হয়। একটি বড় ভূমিকম্পের পরে, আফটারশক হিসেবে আরেকটি হয় যেটির তীব্রতার মাত্রা এবং সময়ব্যপ্তি পূর্বের ভূমিকম্পের চেয়ে তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। বেশিরভাগ আফটারশকের ক্রম একই প্যাটার্ন অনুসরণ করে বিধায় ভূমিকম্পের পর একটি একটি নির্দিষ্ট আফটারশকের সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এই সম্ভাবনার সীমা ১/৩০ এর বেশি হতে পারে। 

ভূমিকম্প আগে থেকেই প্রেডিক্ট করা যায় কিনা সে ব্যাপারে দৈনিক প্রথম আলো কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞান ম্যাগাজিন ‘বিজ্ঞানচিন্তা‘ এর  একটি আর্টিকেলে বলা হয়,

ভূমিকম্প সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য জানা প্রয়োজন ৪টি জিনিস। ১. ভূমিকম্পের তারিখ, ২.  সময়, ৩. স্থান আর ৪. ভূমিকম্পের অনুমিত মাত্রা। কথা হলো, এই চারটা জিনিস বিজ্ঞানীরা বুঝবেন কীভাবে? একটা উদাহরণ দিই।

বৃষ্টি হবে, এটা বোঝার উপায় কী? আকাশে মেঘ জমতে হবে প্রথমে। সেক্ষেত্রে বৃষ্টির সম্ভাবনা বোঝা যায়। মেঘের নিচের স্তর থেকে মূলত বৃষ্টি হয়। এই স্তরটা ভারী হয়ে উঠছে কি না, ওপরের দিকের উষ্ণ ও হালকা বায়ু আর নিচের দিকের শীতল ও ভারী বায়ুর বিনিময় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় খেয়াল করেন আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা। এ থেকে তাঁরা অনুমান করেন, বৃষ্টি কোথায়, কখন, কতটা হবে।

তারমানে, ভূমিকম্পের সঙ্গেও এরকম কিছু বিষয়ের সংযোগ বের করতে হবে ভূতত্ত্ববিদদের। দেখতে হবে, একটা ভূমিকম্পের আগে আগে ঠিক কোন ঘটনাগুলো ঘটে। আর লাগবে মহাদেশীয় পাতগুলোর সঞ্চারণ বা নড়াচড়া অনুমানের মতো সূক্ষ্ম গাণিতিক মডেল। এই মডেল ব্যবহার করে অনুমান করতে হবে, পাতগুলো কখন, কতটা নড়বে ও কোনদিকে যাবে; এ সময় কী কী হতে পারে এসব।

বিজ্ঞানীরা সেই চেষ্টা করেছেন তবে সফল হননি। তাঁরা বেশ কিছু প্রাকৃতিক ঘটনার সঙ্গে ভূমিকম্পের সংযোগ বের করার চেষ্টা করেছেন। যেমন ভূমিকম্পের আগে অনেক সময় আশপাশের জলাধারগুলোতে রেডনের পরিমাণ বেড়ে যায়। পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। পরিবর্তন দেখা যায় তড়িৎচৌম্বকীয় ক্রিয়ায়। বিভিন্ন প্রাণীর আচরণে নানারকম অসঙ্গতিও চোখে পড়ে। কিন্তু অনেকভাবে চেষ্টা করেও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেননি, এরকম কিছু হলেই ভূমিকম্প হবে। আবার অনেক সময় ভূমিকম্প হলেও এসব ঘটতে দেখা যায় না। অর্থাৎ, ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ তাঁদের হাতে নেই।

ভূমিকম্পের উৎপত্তি পৃথিবীর অনেকটা গভীরে। সেখান থেকে প্রচণ্ড শক্তি এসে পৌঁছে পৃষ্ঠতলে। হতে পারে, ভূমিকম্পের উৎপত্তির আগে কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা ঘটে। কিন্তু পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে আমরা সেগুলো শনাক্ত করতে পারি না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, কি যে শনাক্ত করতে হবে বা কোন চিহ্নটা খোঁজা প্রয়োজন, তা-ই জানেন না বিজ্ঞানীরা। তাঁদের হাতে এ বিষয়ক কোনো সূত্রও নেই।

বিজ্ঞানীরা তাই আপাতত কাছাকাছি একটি কাজ করেন। তাঁরা কিছু নির্দিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফল্ট লাইনের গাণিতিক মডেল তৈরি করে, সেগুলোর আচরণ থেকে বোঝার চেষ্টা করেন, ভূমিকম্প হতে পারে কি না। তবে এই কাজটিও অনেক জটিল। প্রচণ্ড চাপ ও তাপমাত্রায় পাথর কীভাবে কাজ করে, শুধু সেটা বের করলেই হয় না। পৃথিবীর যত গভীরে যাব, তাপমাত্রা ও চাপ তত বাড়বে। এই প্রচণ্ড তাপমাত্রা, চাপ, এদের পরিবর্তনশীলতা ও পাথর এবং খনিজদের এ পরিস্থিতিতে আচরণ—সব আবার গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে বানিয়ে দেখা বা খুঁটিনাটি সব উপাত্ত ব্যবহার করে মডেল বানিয়ে সিমুলেশন তৈরি করা খুব সহজ কাজ নয়। এ জন্য বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রের সান আন্দ্রেয়াজ ফল্ট অঞ্চলে গর্ত খুঁড়ে, উপাত্ত সংগ্রহ করেও দেখেছেন। কিন্তু এগুলোর জন্য অনেক শ্রম যেমন দিতে হয়, তেমনি কাজগুলোও অনেক ব্যয়বহুল। আর সবশেষে যুতসই ফলাফলও পাওয়া যায় না। সবমিলে, বিষয়টা বেশ জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরেকটি বিষয় হলো, বিজ্ঞানীদের সাধারণ ধারণা, মৃদু ভূমিকম্প ও প্রচণ্ড ভূমিকম্পগুলো একইভাবে শুরু হয়। ভাবনাটি যৌক্তিক। ফলে, সমস্যা হলো, কোনো প্রাথমিক চিহ্ন খুঁজে পেলেও সেটা বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত করছে, নাকি মৃদু ভূমিকম্প—সেটা অনুমান করা মুশকিল।

প্রাণীরা কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে?

US Geological Survey কর্তৃক ‘Animals & Earthquake Prediction’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে বলা হয়, ভূমিকম্পের পূর্বে পশুপাখিদের অস্বাভাবিক আচরণের বিষয়টি প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রীষ্টপূর্ব ৩৭২ অব্দে, গ্রীসে। আরো বলা হয়, ইঁদুর, নীল, সাপ এবং সেন্টিপিডস এর মতো প্রাণীদেরকে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পের বেশ কয়েক দিন আগে নিরাপত্তার জন্য তাদের বাড়িঘর ছেড়ে দিতে দেখা গিয়েছে। এমনকি মাছ, পাখি, সরীসৃপ এবং কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক সেকেন্ড আগে পর্যন্ত অদ্ভুত আচরণ প্রদর্শন আশ্চর্যজনক প্রমাণ রয়েছে। যাই হোক, সিসমিক ইভেন্টের (ভূমিকম্প সংঘটন) পূর্বে  প্রাণীদের এমন সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য আচরণ, এবং এটি কীভাবে কাজ করতে পারে তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা এখনও আমাদের কাছে নেই। বর্তমান সময়ে, এই রহস্যের উদঘাটনে কাজ করা বিজ্ঞানীরা চীন এবং জাপানে রয়েছেন।

তবে ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ড পূর্বে প্রানীদের অস্বাভাবিক আচরণের ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীদের কাছে রয়েছে। ভূমিকম্পের কোনো স্থানে ভূমিকম্প হলে ঐ স্থান থেকে ‘P Wave’ নামের এক ধরনের ছোট শকওয়েভ সবার আগে পৃথিবীতে পৌছায়। বেশিরভাগ মানুষ এই ‘P Wave’ এর উপস্থিতি টের না পেলেও অনেকে প্রাণীরাই এই ওয়েভের উপস্থিতি ঠিকই টের পায়। অন্যদিকে বেশিরভাগ মানুষ ভূমিকম্প টের পায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে যখন ‘S Wave’ ভূ-পৃষ্ঠে এসে পৌছায়। মূলত ভূ-পৃষ্ঠে S ওয়েভের আগে P ওয়েভ পৌছানোর কারণে মানুষের আগে কিছু কিছু প্রাণীরা ভূমিকম্পেরর উপস্থিতি টের পায় এবং তাদের মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা যায়।

একসময় একটি কথিত থিওরি ছিলো যেখানে বলা হয়, ‘San Jose Mercury’ এর নিউজে হারিয়ে যাওয়া পোষা প্রাণীর বিজ্ঞাপন এবং ‘San Francisco Bay’ ভূমিকম্পের তারিখগুলোর মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৮৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়া জিওলজিতে প্রকাশিত এক আর্টিকেলে এই তত্ত্বের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে নিউজে হারিয়ে যাওয়া পোষা প্রাণীদের বিজ্ঞাপনের তারিখের সাথে সান ফ্রান্সিকোর ‘বে’ এলাকায় হওয়া ভূমিকম্পের কোনো সম্পর্ক নেই। 

ভূমিকম্পের সময় প্রাণীদের অস্বাভাবিক আচরণের ব্যাপারে ২০০০ সালে একজন বিজ্ঞানীর একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র সংক্ষেপে তুলে ধরা হচ্ছেঃ-

ভূমিকম্পের সময় কিংবা সিসমিক ইভেন্টের সময় কিছু পূর্বে প্রাণীদের অস্বাভাবিক আচরণ বিবর্তনগত কিনা এবং এই ধরণের আচরণ কোনো জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে উক্ত গবেষণাপত্রে বলা হয়, সমস্ত প্রাণী সহজাতভাবেই শিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে এবং তাদের জীবন রক্ষার জন্য তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদান করে থাকে। বিপদকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরণের মেরুদন্ডী ইতোমধ্যেই ‘প্রাথমিক সতর্কতা’ আচরণ প্রকাশ করে, যা আমরা ভূমিকম্প ব্যতীত অন্যান্য ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে  বুঝতে পারি, তাই এটি সম্ভব যে ভূমিকম্পের সময়ে প্রাণীদের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জিনগত কারণে আগে থেকেই বিদ্যমান। যদিও সিসমিক ইভেন্টের পর একটি বৃহত্তর S তরঙ্গের সেকেন্ড আগে একটি P-তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানার পর প্রাণীদের অস্বাভাবিক আচরণ একটি সহজাত প্রতিক্রিয়া, তাই বলতে গেলে এটি একটি ‘বিশাল ব্যাবধান কিংবা বড় কিছু’ নয়। তবে ভূমিকম্পের কয়েক দিন বা সপ্তাহ আগে ঘটতে পারে এমন অন্যান্য পূর্বাভাস সম্পর্কে কি আমরা এখনও জানি না? প্রকৃতপক্ষে, যদি ভূমিকম্পের এমন কোনো পূর্বাভাস থাকে যা সম্পর্কে আমরা এখনো ভালোভাবে জানতে পারিনি (স্থল কাত হওয়া,ভূগর্ভস্থ জলের পরিবর্তন, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের বিচিত্রতা) তাহলে, প্রকৃতপক্ষে এটি হতে পারে যে কিছু প্রাণী এসব পূর্বাভাস বুঝতে পারে।

তবে, এই বিষয়ে এখনও আরও অনেক গবেষণা করা প্রয়োজন।…. কারণ এই সংকেতগুলো যদি ভূমিকম্পের আগে পরিবেশে উপস্থিত না থাকে তবে একটি সংযোগ অপ্রাসঙ্গিক।”

Screenshot Source: USGS

সুতরাং, এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো বিজ্ঞানী অথবা গবেষণা সংস্থা কর্তৃক ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানীরা কেবল একটি নির্দিষ্ট স্থানে কয়েক বছরে মধ্যে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা করতে পারলেও, কোনো স্থানে কখন, কোথায় এবং কত মাত্রায় ভূমিকম্প হতে পারে সে ব্যাপারে আগে থেকে কিছু বলা সম্ভব হয়নি। আবার ভূমিকম্প সংঘটনের কয়েকঘন্টা কিংবা কয়েকদিন পূর্বে কিছু প্রাণীর মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা গেলেও প্রকৃতপক্ষে এই অস্বাভাবিক আচরণের পেছনে ভূমিকম্প দায়ী কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত নয় এবং বিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন। তাই, ভূমিকম্প এখন পর্যন্ত প্রেডিক্ট করা যায় না, সামনে প্রেডিক্ট করা যাবে এ বিষয়েও নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। ভূমিকম্প প্রেডিক্ট করতে পারার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। তবে ভূমিকম্প ঝুঁকির এলাকাগুলোর ভূমিকম্পের সম্ভাবনা অনুমান করা যায়। আবার এই অনুমান সবসময় সঠিক হবে না। সাধারণত যারা ভূমিকম্প প্রেডিক্ট করতে পারে বলে দাবি করে তারা মূলত অধিক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলো নিয়ে তাদের প্রেডিকশন প্রকাশ করে, যে এলাকায় সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভবনা বেশি এবং যেখানে যেকোনো সময় ভূমিকম্প হতে পারে। তবে কেউ যদি বলে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যেই ভূমিকম্প ঘটবে এবং উল্লেখিত মাত্রায় ঘটবে তবে তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সুতরাং, বৈজ্ঞানিকভাবে সুনির্দিষ্ট করে ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বানী করা সম্ভব নয়।

তথ্যসূত্র

বিএনপির কার্যালয়ে বক্তব্য দেওয়া মিয়ান আরেফি জো বাইডেনের উপদেষ্টা নয়

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মহাসমাবেশের পর সন্ধ্যায় কার্যালয়ের ভেতরে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা মিয়ান আরাফি শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে। 

 মিয়ান আরেফি

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন কালবেলা, মানবজমিন, ইনকিলাব, জাগোনিউজ২৪, বাংলা ইনসাইডার, বাংলাদেশ টাইমস (ফেসবুক)। 

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুকের ফেসবুক পোস্টসহ আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির কার্যালয়ে বক্তব্য দেওয়া মিয়ান আরেফি মার্কিন সরকার সংশ্লিষ্ট কেউ নয় এবং ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্যও নয় বরং প্রবাসী এই মার্কিন নাগরিক নিজের সাথে মার্কিন সরকারের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে দাবি করার পর তা গণমাধ্যমেও প্রচার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দুইটি দাবির কোনোটিই সত্য বলে প্রমাণ মেলেনি। 

প্রাথমিক অনুসন্ধানে কী জানা গেছে?

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশীয় গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবরগুলো পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বাইডেনের কথিত এই উপদেষ্টাকে বিএনপি কার্যালয়ে নিয়ে যান।

বিষয়টি জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে জানতে পারে, এই বিষয়ে বিএনপি কিছু জানে না। বিএনপিকে দূতাবাস থেকে তার ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

পরবর্তীতে দলটির ফেসবুক পেজেও এ সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি (আর্কাইভ) প্রকাশের মাধ্যমে একই তথ্য দেওয়া হয়।  

Screenshot: Facebook 

এই ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইশরাকের বক্তব্যও খুঁজে পাওয়া যায়। ইশরাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সংঘর্ষের পর অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। হাসপাতালে আমি তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি এবং অন্যদেরও খোঁজখবর নিই। পরে আরও কিছু নেতা-কর্মী আহতাবস্থায় বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছে শুনে তাদের খোঁজখবর নিতে সেখানে যাই। তার পরপরই সাবেক সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল হাসান সারওয়ার্দী দুজন ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন।

তিনি দাবি করেন, হাসান সারওয়ার্দীর সঙ্গে আসা একজন নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা বলে পরিচয় দেন। আহতদের সঙ্গে কথাও বলতে চান। আহতরা সে সময় কার্যালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন কক্ষেই অবস্থান করছিলেন। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলার পর সেখানে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এ সময় তাদের সঙ্গে আমাকেও বসতে বললে সে পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে আমিও অংশ নেই। এর বাইরে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আমি আর তেমন কিছু জানি না।

এছাড়া, সেদিন নয়া পল্টনের কার্যালয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাথেও জনাব আরাফিকে কথা বলতে দেখা (আর্কাইভ) যায়। 

Screenshot: Facebook

২৮ অক্টোবর রাতে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলর স্টিফেন ইভেলি (Stephen Ibelli) এর বরাতে বলা হয়, নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ ও সংঘাত ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস প্রতিনিধিদল ওই এলাকা পরিদর্শন করেছে বলে যে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল তা পুরোপুরি অসত্য।

স্টিফেন ইভেলি বলছেন, “ওই ভদ্রলোক যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে কথা বলেন না। তিনি একজন বেসরকারি ব্যক্তি।”

Screenshot: Kaler Kantho 

সংবাদ সম্মেলনে কী বলেছিলেন মিয়া আরাফি? 

২৮ অক্টোবর রাতে ফেসবুকের একটি পোস্টে (আর্কাইভ) বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জনাব আরাফির দেওয়া বক্তব্যের ১৩ মিনিটের একটি ক্লিপ খুঁজে পাওয়া যায়।

আরাফি জানান, “আমি গতকালের আগের দিন (২৬ অক্টোবর) ওয়াশিংটন থেকে এসেছি। আমি ঘুমানোর সময় পাইনি। আমি এখানে ইভেন্টটা কেমন হচ্ছে তা দেখার জন্য শুধু এসেছি। যা ঘটেছে আমরা এমন কিছু আশা করি নি। এটা লজ্জাজনক সকলের জন্য, বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের জন্য।” 

আরাফি বলেন, “আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেন সারওয়ার্দীকে। তিনি সবকিছু আয়োজন করতে এবং বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম এবং অন্য মুসলিম এবং গণতন্ত্রমনা দলগুলোকে একসাথে করতে কঠোর পরিশ্রম করছেন।”

জনাব আরাফি দাবি করেন, “বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশে কোনো কথা বলার স্বাধীনতা নেই। আমি এ বিষয়ে পুরোপুরি অবগত আছি।”

আরাফি তার দীর্ঘ বক্তব্যে দাবি করেন, “আমি বাংলাদেশে গত প্রায় ৪৫ বছর পর গত বছর দেশে এসেছিলাম। আমি আবিষ্কার করলাম, সব কিছুই ভুল চলছে। আমি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়েছি। আমি স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে ২০২২ সালের ০২ ডিসেম্বর মিটিং করেছি। সেখানে ফরেন অফিসার মিস কেলা উপস্থিত ছিলেন। তিনি এখন ঢাকায় আছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে কাজ করেন। সবকিছু মনিটরিং করছেন। আমি তাকে বলেছি, সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ খাবার কিনে খেতে পারছে না। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ সকালের নাস্তা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তারা লাঞ্চ-ডিনারের খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সেখানে কোনো মাছ, মুরগী, গরু, খাসি বা অন্যকিছু থাকে না। থাকে শুধু ভর্তা ভাজি ডাল এবং ভাত। ইউএস ডিপার্টমেন্ট এসব বিষয়ে অবগত আছে। আমি তাদের বিস্তারিত বলেছি।”

নিজেকে বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশেই জন্মগ্রহণ করেছেন দাবি করে আরাফি বলেছেন, তার পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছে। প্রায় ৫০ বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তার দাদা-দাদি/নানা-নানি উল্লাপাড়ায় থাকেন।

আরাফির দাবি, তিনি যখন বাংলাদেশে আসেন তখন বাংলা ভাষায় খুব একটা কথা বলতে পারতেন না। 

আওয়ামী লীগের লোকেদের অনেক কালো টাকা আছে দাবি করে তিনি বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে এদের।  

গানশটের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তিনি এ বিষয়ে জানিয়ে মেসেজ করেছেন। তিনি এই বার্তা স্টেট ডিপার্টমেন্টকে, সেক্রেটারি অ্যান্থমী ব্লিঙ্কেন, এখানকার রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এবং তিন ফরেন অ্যাফেয়ার্স অফিসার মিস কেলা, মিস ম্যাথিউ ও মিস্টার চেটবিয়াকে পাঠিয়েছেন বলেও দাবি করেন। 

কিন্তু এখন আমেরিকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন জানিয়ে তিনি দাবি করেন, আমি জরুরি ভিত্তিতে মেসেজগুলো দিয়েছি এবং আমি নিশ্চিত যে তারা দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। আমি পুলিশ ফোর্স, আনসার ফোর্সকে স্যাংশন দিতে আহ্বান জানিয়েছি এবং এটা হতেই হবে। 

আরাফি দাবি করেছেন, তিনিই সেই লোক যে র‌্যাবের উপরও স্যাংশন দিয়েছিল। 

Screenshot: Facebook

তিনি বলছেন, “এখন পুলিশ, হোম মিনিস্টার, ফরেন মিনিস্টার এবং ল মিনিস্টারকেও স্যাংশন দিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। কারণ সময় নেই৷ সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে এটা করতে হবে।” 

আরাফি তার বক্তব্যে দাবি করেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়।”

তার দাবি, “আমি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটির সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা। জো বাইডেনের সাথে ১০-১৫ বার দিনে মেসেজ আদান প্রদান হয়। তিনি বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকায় ১/২ টি মেসেজের জবাব দেন। স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানে, আমি এখানে।” 

কে এই আরাফি? 

আরাফির বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার দেওয়া পরিচয়ের পক্ষে প্রমাণ না মেলায় আমরা বিষয়টি নিয়ে স্বাধীন অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিই। 

হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটে বাইডেনের কতিপয় উপদেষ্টাদের নাম ধরে সার্চ করে তাদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলেও (, ) মিয়ান আরেফির নাম ধরে সার্চ করে কোনো তথ্য মেলেনি। 

Screenshot: White House 

মিয়ান আরাফি নামটির ইংরেজি বিভিন্ন অক্ষরের বানান দিয়ে কি ওয়ার্ড সার্চ করে লিংকডইনে Mian Arefy নামে একটি অ্যাকাউন্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টের প্রোফাইলের ছবির সাথে আলোচিত ব্যক্তির মিল লক্ষ্য করা গেছে।

Screenshot: Linkedin

লিংকডইন অ্যাকাউন্টের নাম অনুযায়ী বাংলায় তার নাম অনেকটা মিয়া আরেফি বলেই প্রতীয়মান হয়। অ্যাকাউন্টে তার জন্ম তারিখ ০৯ আগস্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের ডামাসকাসে থাকেন বলেও জানা যাচ্ছে অ্যাকাউন্ট থেকে। 

অ্যাকাউন্টের About সেকশনে নিজেকে ম্যানেজমেন্ট প্রোফেশনাল হিসেবে দাবি করে এই ফিল্ডে বিশ বছরেরও বেশি সফল অভিজ্ঞতা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। একই সেকশনে নিজের কাজের একাধিক ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করলেও তিনি যে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বলে দাবি করেন তা উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

Screenshot: Linkedin

জনাব আরেফির এই অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ এক্টিভিটি ছিল আট মাস পূর্বে। সে সময় ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথরিন ম্যাক্লে এর একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন তিনি। ওয়ালমার্টের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান Sam’s club বিষয়ক পোস্টটিতে তাকে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্টের সমালোচনা করতে দেখা যায়। 

মিয়ান আরেফি লিংকডইনে তার পেশাজীবনের বিষয়ে বিষদ উল্লেখ রেখেছেন। তার অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কে Duane Reade Drugs নামের একটি প্রতিষ্ঠানে স্টোর ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সাড়ে তিন বছর সেখানে কাজ করার পর পরবর্তী প্রায় ১২ বছর সমজাতীয় পদে কাজ করেছেন যথাক্রমে Pathmark Drug Stores, F&M Distributors এবং CVS Caremark Corporation এ। ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ছয়টি একই ধরণের প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে তিনি স্টোর টিমের লিড পদে যোগ দেন Big Lots Stores নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। বর্তমান অবধি তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সাথেই যুক্ত আছেন বলে উল্লেখ করেছেন। 

বিগ লটস যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল চেইন শপ। প্রতিষ্ঠানটির চিফ হিউমান রিসোর্স অফিসার মাইক স্কোলোনস্কাই সহ একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। 

কি ওয়ার্ড সার্চ করে জনাব মিয়ান আরেফির অন্তত তিনটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

Screenshot: Facebook

এর মধ্যে একটি অ্যাকাউন্ট (আর্কাইভ) লক অবস্থায় থাকায় বিস্তারিত তথ্য জানা না গেলেও About সেকশনে উল্লেখ রয়েছে, তিনি বাংলাদেশের পাবনা জিলা স্কুল এবং সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া, একই সেকশনে নিজেকে তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু উক্ত সেকশনে বাইডেনের উপদেষ্টা শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

Screenshot: Facebook

জনাব আরেফির অ্যাকাউন্টে উল্লেখ থাকা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটির সদস্য শীর্ষক তথ্যটির বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের Democratic National Committee এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি ক্যাম্পেইন ভিত্তিক উদ্যোগ, যার মাধ্যমে এটির সদস্যরা জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনী প্রচারণায় ডেমোক্রেটদের পক্ষে কাজ করে থাকে। ওয়েবসাইটের লিডারশীপ সেকশনে এই কমিটির সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিদের তালিকা রয়েছে, সেখানে এবং উক্ত ওয়েবসাইটসহ অনলাইনে একাধিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে মিয়ান আরেফির সাথে এই কমিটির সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। 

আরেফির আরো দুইটি অ্যাকাউন্টের (, ) কোনোটিতেই তার কথিত দুই পরিচয়ের (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটির সদস্য, জো বাইডেনের উপদেষ্টা) বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। 

মিয়া আরেফির ফেসবুক অ্যাক্টিভিটির সালভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। যেমন, গত ১৩ অক্টোবর American Bangla Channel নামে একটি পেজের টক শোতে তাকে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটির সদস্য বলে পরিচয় দেওয়া হয়। গত ২৬ জুন তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি আনঅফিশিয়াল গ্রুপে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট করতে দেখা যায়। আবার, একই মাসে এক ব্যক্তি জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করার ঘোষণার বিষয়ে জানিয়ে করা পোস্টে আরেফিকে ট্যাগ করেন। সেখানে আরেফি কমেন্ট করে বলেন, “জয় বাংলা নয়, জয় বাংলাদেশ হবে। কারণ আমরা মুসলিম।”

২০২২ সালে আরেফি পাবনার একটি গ্রুপে করা পোস্টে নিজেকে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি তার শহর পাবনাকে মিস করছেন। 

একই বছর আবদুল বাতেন হিরু নামে এক ব্যক্তি অন্তত দুইটি পোস্ট (, ) করেন মিয়া আরেফিকে নিয়ে। 

একটি পোস্ট (আর্কাইভ) থেকে জানা যাচ্ছে, আরেফির বাবার নাম রওশন আলী। আরেফির বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের মানিকদিয়ার গ্রামে। 

আরেক পোস্ট (আর্কাইভ) থেকে জানা যাচ্ছে, আরেফির ডাকনাম বেলাল। তারা দশ ভাই বোন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। 

এই পোস্টেই জনাব হিরু আরেফির নাম সম্বলিত Democratic National Committee এর একটি মেম্বারশিপ কার্ডের ছবি যুক্ত করেন। 

আরেফিকে ২০২১ সালের ০৫ এপ্রিল একটি ফেসবুক গ্রুপে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের বিষয়ে একটি পোস্ট  করতে দেখা যায়। তিনি সেখানে লিখেছেন, “মামুনুল হককে ফাঁসাতে নিজের স্ত্রীকে ব্যবহার করেছে যুবলীগ নেতা রনি। মিডিয়াতে যে মেয়েটির পরিচয় দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেই মেয়েটি আসলে যুবলীগ নেতা রনির আসল বউ।”

একই গ্রুপে একই বছরের ০৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি দুর্ঘটনার বিষয়ে করা তার পোস্ট দেখুন এখানে।

আরেফির কথিত মেম্বারশিপ কার্ডের বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে 

জনাব হিরুর পোস্ট থেকে পাওয়া Official 2022 DNC Membership Card লেখা আলোচিত কার্ডটি থেকে জানা যাচ্ছে, মিয়ান আরেফি ২০২১ সাল থেকে মেম্বার রয়েছেন। কার্ডের পেছনে লেখা রয়েছে, এই কার্ডধারী ব্যক্তি নিজেকে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির কন্ট্রিবিউটিং মেম্বার বলে পরিচয় দিতে পারবেন। কার্ডের নাম্বার 33364435।

Image: Facebook 

এই কার্ডের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, ডেমোক্রেটিক পার্টিতে কেউ ডোনেশন (সর্বনিম্ন ১০ ডলার) দিলে পার্টির পক্ষ থেকে এই কার্ড সরবরাহ করা হয়। ২০২২ সালে এ সংক্রান্ত ক্যাম্পেইন লিংক দেখুন এখানে। 

Screenshot: ActBlue

২০২৩ সালে এ সংক্রান্ত ক্যাম্পেইন লিংক দেখুন এখানে। 

এই কার্ডধারী আমর হালদার নামে আরেক বাংলাদেশির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে। 

Screenshot: Facebook 

অর্থাৎ, আরেফি ডোনেশনের মাধ্যমে Democratic National Committee এর একটি সম্মানসূচক কন্ট্রিবিউটিং মেম্বারশিপ কার্ড পেয়েছেন, যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য বলে দাবি করছেন। 

তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী? 

২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনের সংবাদ সম্মেলনে মিয়ান আরেফি “যুক্তরাষ্ট্র সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়” শীর্ষক যে দাবি করেছেন তার পক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একাধিক কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়েই বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু এসব বক্তব্যে তারা বাংলাদেশের জনগণ বা যুক্তরাষ্ট্র সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে একই এবং সমজাতীয় দাবি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

আরেফির বিষয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে 

মিয়ান আরেফির বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় আরেফি ছাড়াও আসামি করা হয়েছে একই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে। 

মামালার এজাহার থেকে জানা যাচ্ছে, অপরের রূপ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করার অভিযোগ এনে এই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এর আগে একইদিন দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আরেফিকে আটক করা হয়। গণমাধ্যমে পুলিশের একটি সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র পালিয়ে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। 

সেদিন রাতেই গণমাধ্যমে তার স্বীকারোক্তিমূলক একটি বক্তব্যের ভিডিও প্রচার করা হয়। প্রায় তিন মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিওটিতে তাকে বলতে শোনা যায়, ডেমোক্রেট কমিটির লিডার এবং জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলতে। 

আরেফির দাবি, তিনি ভুল করেছেন এবং এটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। 

এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদের বক্তব্য দেখুন এখানে। 

ডিবি প্রধান জানিয়েছেন, তার নাম মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফি। তার বাড়ি পাবনা। তিনি ২০২২ সালে বাংলাদেশে এসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তিনি থাকতেন ঢাকায় বারিধারা ডিওইচএসে। সেখানে পরিচয় হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীর সাথে। এরপর তাদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়৷ তিনিই তাকে নয়া পল্টনে নিয়ে যান।

এদিকে ৩০ অক্টোবর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মিয়া আরেফীর জন্য কনস্যুলার অ্যাক্সেস চেয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। আরেফী মার্কিন নাগরিক হওয়ায় কনস্যুলার এক্সেস (যোগাযোগ বা আলাপের জন্য অনুমতি) চেয়েছে মার্কিন দূতাবাস।

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়া পল্টনে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মহাসমাবেশের পর সন্ধ্যায় সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা মিয়ান আরাফি পরিচয়ে এক ব্যক্তি বক্তব্য দেন। পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা দাবি করে কতিপয় গণমাধ্যমের খবরে প্রচার করা হয়। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, মিয়ান আরেফির সাথে মার্কিন সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই যা ঢাকার মার্কিন দূতাবাস নিশ্চিত করেছে। তিনি নিজেকে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তার কাছে Democratic National Committee এর একটি সম্মানসূচক কন্ট্রিবিউটিং মেম্বারশিপ কার্ড রয়েছে যা ডোনেশনের মাধ্যমে যে কেউই পেতে পারে। 

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মিয়ান আরেফি নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা এবং ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য বলে দাবি করছেন এবং তা গণমাধ্যমেও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ব্রায়ান লারার নামে ‘বাংলাদেশ টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য নষ্ট করছে’ শীর্ষক ভুয়া মন্তব্য প্রচার

0

সম্প্রতি, বাংলাদেশ বড় টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য নষ্ট করতে আসছে শীর্ষক একটি মন্তব্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ব্রায়ান লারার মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ব্রায়ান লারার

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ বড় টুর্নামেন্ট খেলে টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য নষ্ট করছে/করতে আসছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি ব্রায়ান লারা বরং লারার ভিন্ন একটি মন্তব্যকে বিকৃত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে মাত্র ৮৫ রান করে ৯ উইকেটে হেরেছিল জিম্বাবুয়ে। ম্যাচটির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক লারাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এই ধরনের একপেশে ম্যাচ বড় টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য নষ্ট করছে কিনা। জবাবে লারা বলেছিলেন, “আমি মনে করি বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে এবং র‍্যাঙ্কিংয়ের নিচের দলগুলোকে উৎসাহিত করা উচিত। যদি জিম্বাবুয়ে এখানে না থাকতো তাহলে বাংলাদেশেরও থাকা উচিত নয়। কিন্তু তারা পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে এবং আপনার তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। সামগ্রিকভাবে ক্রিকেটের জন্য বিষয়টি ভালো এবং আমাদের এটা মেনে নিতে হবে।” অর্থাৎ, লারার উক্ত মন্তব্যকেই বিকৃত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ভিডিওটি পুলিশ-সাংবাদিক কর্তৃক বিএনপি’র সমাবেশে সংঘর্ষে আগুন লাগানোর নয়

সম্প্রতি ‘সরকার দাবি করে বিএনপি ও জামাত আগুন দিয়েছে, আসলে কে আগুন দিয়েছে নিচের ভিডিওতে দেখুন’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

যা দাবি করা হচ্ছে

একজন সংবাদকর্মী ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। অথচ সরকার দাবি করে, সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি ও জামাত আগুন দিয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র  ডাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিক মিলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে সংঘর্ষ চলাকালে টিয়ারশেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে আগুন জ্বালিয়ে একজন পুলিশ ও সংবাদকর্মীর রক্ষা পাওয়ার চেষ্টার সময় ধারণকৃত ভিডিওকেই ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধান যেভাবে

আলোচিত ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটিতে বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙা টিভির একটি মাইক্রোফোন ও চ্যানেলটির লোগো সম্বলিত ভেস্ট পরিহিত একজন সংবাদকর্মীকে দেখা যায়। যেখানে তাকে কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ কাগজ সদৃশ কোনো বস্তুতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।

Screenshot: Facebook Claim Video

এসব সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটিতে দৃশ্যমান সংবাদকর্মীর নাম মাহমুদ কমল। তিনি মাছরাঙা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার। 

পরবর্তীতে তার কাছে ভিডিওটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, সংঘর্ষের দিন বাতাসে ছড়িয়ে পড়া টিয়ারশেল গ্যাসে আক্রান্ত হতে হয় পুলিশ, সাংবাদিকসহ আশপাশে থাকা প্রত্যেকটি মানুষকে। যেকোনো কিছুতে আগুন ধরিয়ে এই টিয়ারশেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে হয়। আগুনের ধোঁয়া এই গ্যাসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। তেমনই একটি মুহূর্তে নিজেকে ও আক্রান্ত কয়েকজন পুলিশ সদস্য রক্ষা করতে কাগজে আগুন ধরানোর চেষ্টা করি। যদিও আগুন ধরিয়ে ঝাঁঝ থেকে বাঁচার চেষ্টা সফল হয়নি। কারণ যেটাতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেছিলাম তা প্লাস্টিক জাতীয় কিছু হওয়ায় আগুন ধরেনি। ভিডিওটিতেও দেখা যায় সেটি। সেই সময়ের একটি ভিডিও ধারণ করে নাগরিক টেলিভিশন।

পাশাপাশি তিনি রিউমর স্ক্যানারের সাথে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টও শেয়ার করেন। যেখানে তিনি ২৮ অক্টোবরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

তার এ বর্ণনা সূত্রে পরবর্তীতে বেসরকারি টিভি চ্যানেল নাগরিক টিভির ফেসবুক পেজে গত ২৮ অক্টোবর ‘মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ! | BNP News | 28 October Shomabesh | Nagorik TV (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ৪০ সেকেন্ড থেকে প্রায় ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়কালের সঙ্গে ইন্টারনেটে পুলিশ ও সাংবাদিক মিলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Collage: Rumor Scanner

এই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে সংবাদকর্মী মাহমুদ কমলের দেওয়া বর্ণনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সংবাদকর্মী মাহমুদ কমল ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য কাগজ জাতীয় কিছুতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করছেন। তবে সেটিতে আগুন ধরতে দেখা যায়নি। 

এছাড়া ভিডিওটি সূক্ষ্ণভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা কাগজ জাতীয় যে বস্তুটিতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করছেন সেটি সাধারণ কোনো কাগজ নয় বরং রঙিন প্লাস্টিকের তৈরি পোস্টার জাতীয় কিছু ছিল। ফলে সেখানে আগুন ধরেনি। 

পাশাপাশি নাগরিক টিভির প্রতিবেদনটিতেও এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ করা হয়নি, যার দ্বারা প্রমাণ করা যায় যে, তারা কোথাও আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন।

উপরিউক্ত বর্ণনা ও নাগরিক টিভির মূল ভিডিও বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের সময় ঐ সংবাদকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা মূলত  টিয়ারশেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছিলেন। 

টিয়ারশেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে আগুন 

একাধিক গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলে দেখা যায়, বিভিন্ন সংঘর্ষ ও বিক্ষোভ চলাকালে টিয়ারশেল ছোড়া হলে ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে আগুন জ্বালানোর চর্চা আছে। 

২৮ অক্টোবর সংঘর্ষ চলাকালে সেখানে উপস্থিত থাকা প্রতিদিনের বাংলাদেশের স্টাফ রিপোর্টার আবু বকর রায়হান রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, সেদিন বাতাসের কারণে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের ঝাঁঝ আমাদের দিকে আসছিলো। তখন অনেককেই দেখেছি আগুন জ্বালিয়ে এর থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমিও নিজেই তাই করেছি। 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কমের অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক আল-আমিন রাজু বলেন, টিয়ারগ্যাস তাৎক্ষণিকভাবে খুবই কষ্টের একটা মুহূর্ত তৈরি করে। আমি নিজেও ২৮ অক্টোবর একাধিকবার টিয়ারগ্যাসের মুখোমুখি হয়েছি। টিয়ারগ্যাস থেকে বাঁচতে আগুন তৈরি করে কষ্ট কমানোর চেষ্টা করে। এমন কি যারা টিয়ারগ্যাস মারে সেই পুলিশও এর বাইরে না। তারাও পিকেটারদের সরিয়ে দিয়ে নিজেরা বাঁচতে আগুন জ্বালিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে৷ তবে সেই আগুন বড় নয়, বড়জোড় একটি কাগজের টুকরো। পেশাগত কাজে পুলিশের পাশাপাশি সাংবাদিকদের কাজ করার কারণে এমনটা করে থাকে৷ এখানে গুজব ছড়িয়ে বিষয়টা ঘোলাটে করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। 

দৈনিক নয়া শতাব্দীর স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম) জাফর ইকবাল বলেন, বিভিন্ন ক্রাইসিসে তথ্য সংগ্রহে আমাদের মাঠেঘাটে কাজ করতে হয়। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসব টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় চোখ মারাক্তক জ্বলে, একদম তাকানো যায় না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণত আগুন জ্বালিয়ে নিজেদের টিয়ারশেলের ধোঁয়া থেকে সেভ করে থাকি। আগুনে টিয়ারশেলের ধোঁয়ার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এটা একটা সাধারণ প্রক্রিয়া। 

এছাড়া গণমাধ্যম সূত্রেও টিয়ার শেল থেকে রক্ষা পেতে ২৮ অক্টোবর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের আগুন জ্বালানোর খবর পাওয়া যায়। 

Screenshot: Daily Samakal

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন

প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীতে মহাসমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে পরবর্তীতে এ মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পুলিশের হিসাবে নয়াপল্টন ও আশপাশ এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স,পুলিশের গাড়ি, বাসসহ ৮৭টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ৪১টি ও ১০টি ভ্যান এবং রিকশা রয়েছে। 

এর মধ্যে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরিহিত এক যুবককে শনাক্ত করেছে পুলিশ। গণমাধ্যম থেকে পুলিশের বরাতে জানা যায়, বাসে আগুন দেওয়া ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরিহিত ওই যুবক হলেন রবিউল ইসলাম নয়ন। তিনি যুবদল ঢাকা দক্ষিণের সদস্য সচিব।

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে পরবর্তীতে এ  মহাসমাবেশ ভণ্ডুল হয়ে যায় এবং বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে মাছরাঙা টিভির একজন সংবাদকর্মী ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য কাগজ জাতীয় বস্তুতে আগুন জ্বালাতে চেষ্টা করেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সে সময়ের ধারণকৃত একটি ভিডিওকেই সম্প্রতি বিএনপির  ডাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিক মিলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিএনপি’র এই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়ানো হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, টিয়ার শেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ ও সাংবাদিকের চেষ্টাকে বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিক মিলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সত্য নয়।

তথ্যসূত্র

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পাননি

সম্প্রতি, ডিবি কার্যালয় ঘেরাও করার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেল– শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওটিতে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একটি গাড়ি থেকে বলতে শোনা যায়, বন্ধুরা চুপ করুন। গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন সে আন্দোলনকে দমানো যাবে না। আপনাদের সকলেই, বাংলাদেশের মানুষকে, বিএনপি’র সকল অঙ্গ সংগঠনকে, তাদের নেতাকর্মীদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, চেয়ারম্যান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আমাদের সকল নেতাকর্মী ভাইদেরকে আমার অজস্র কৃতজ্ঞতা এবং আমার শুকরিয়া। আমরা আটক হওয়ার পরে আপনারা যে আন্দোলন করেছেন… আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীরা এখনো কারাগারে আটক হয়ে আছে এবং দুঃখজনকভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমি অবিলম্বে আমাদের এই নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি এবং বিশ্বাস করি জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সহফ হবে। আপনাদের সকলকে আবারও ধন্যবাদ। 

মির্জা ফখরুল

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 


টিকটকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি পাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং গত জানুয়ারি মাসে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ধারণকৃত একটি ভিডিওকেই সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ জানুয়ারি “মুক্তি পেয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

৩ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রথম ৫৫ সেকেন্ডের পরের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

এছাড়া, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেয়েছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর সকালে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। আটকের প্রায় ৯ ঘণ্টা পর তাকে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানায় পুলিশ। এদিন রাত প্রায় আটটার দিকে মির্জা ফখরুলকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। উক্ত মামলায় মির্জা ফখরুল আদালতে জামিন আবেদন করলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

অর্থাৎ, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পাননি।

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসমাবেশের আয়োজন করে। পরবর্তীতে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে সেই সমাবেশ স্থগিত করে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। একই দিনে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রাজধানীর গুলশান-২-এর বাসা থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরবর্তীতে রাত ৮ টা ১০ মিনিটে তাকে এক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম)আদালতে পাঠানো হয়। মির্জা ফখরুল আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত তা আমলে না নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এরইমধ্যে ‘ডিবি কার্যালয় ঘেরাও, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেল’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত জানুয়ারি মাসে মির্জা ফখরুলের থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ধারণ করা। প্রকৃতপক্ষে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। 

উল্লেখ্য, বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরে সমাবেশের ঘটনায় বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কারামুক্তির পুরোনো ভিডিওকে অতি সম্প্রতি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে প্রচারি করা হচ্ছে; যা সত্য নয়।

তথ্যসূত্র

ফিলিস্তিনের নয়, বাবা মেয়েকে বিস্ফোরণের শব্দকে খেলনার শব্দ বোঝানোর এই ভিডিওটি সিরিয়ার 

সম্প্রতি, একজন ফিলিস্তিনি বাবা তার মেয়েকে বলছেন যে বিস্ফোরণের শব্দ হচ্ছে খেলনার শব্দ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

বিস্ফোরণের শব্দ

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন দুটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাবা মেয়েকে বিস্ফোরণের শব্দকে খেলনার শব্দ বোঝানোর এই ভিডিওটি ফিলিস্তিনের নয় বরং সিরিয়ার ২০২০ সালের এই ভিডিওকে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।  

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম The Guardian এর ইউটিউব চ্যানেল Guardian News এ ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘Syrian father teaches daughter to cope with bombs through laughter’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, সিরিয়ার বাসিন্দা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ বোমার আওয়াজ থেকে তৈরি ট্রমা থেকে দূরে রাখার জন্য তার মেয়ে সালওয়ার সাথে বোমার আওয়াজ একটি খেলার অংশ হিসেবে বেছে নেন।

তাছাড়া, চীনের সংবাদমাধ্যম ‘South China Morning Post’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

 Screenshot from Youtube

মূলত, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিরিয়ার বাসিন্দা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ বোমার আওয়াজ থেকে সৃষ্ট ট্রমা থেকে তার মেয়ে সালওয়াকে দূরে রাখার জন্য বোমার আওয়াজকে একটি খেলার অংশ হিসেবে বেছে নেন। পরবর্তীতে সেই ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেই ভিডিওকেই সম্প্রতি ফিলিস্তিনের ঘটনার ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন- ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷

উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, ২০২০ সালে সিরিয়ার এক বাসিন্দা বোমার আওয়াজ থেকে সৃষ্ট ট্রমা থেকে রক্ষা পেতে মেয়ের সাথে খেলার একটি ভিডিও সম্প্রতি ফিলিস্তিনের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

শিশুর সাথে খালেদা জিয়ার ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার এই ছবিটি এডিটেড

সম্প্রতি, “অ তে আন্দোলন, ক তে কচু” শীর্ষক শিরোনামে খালেদা জিয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রচার হয়ে আসছে। 

উক্ত ছবিটি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

যা দাবি করা হচ্ছে

ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে খালেদা জিয়া একটি স্কুলের ব্ল্যাক বোর্ডে লিখছেন “আ = আন্দোলন/ ক = কচু হবে।” এই ছবিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট ও শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের সাথে দেখা যায়, খালেদা জিয়া কর্তৃক ব্ল্যাকবোর্ডে “আ = আন্দোলন ক = কচু হবে” লেখার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সত্য নয় বরং বরং ব্ল্যাকবোর্ডে খালেদা জিয়ার লেখার মূল ছবিকে সম্পাদনা বা এডিট করে ভিন্ন লেখা বসিয়ে প্রচার করা হয়েছে।

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে, ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তারিখে “While the govt inflates literacy figure to mislead the nation, BNP always will continue to genuinely increase the quality of education” শীর্ষক শিরোনামে খালেদা জিয়ার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Twitter 

ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এক শিশুকে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দেখাচ্ছেন। সেখানে আন্দোলন বা কচু এমন শব্দ দেখা যাচ্ছে না। সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে ছবিটি তিনি টুইট করেছিলেন নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে।

মূলত, ২০১৭ সালে সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে খালেদা জিয়ার অফিশিয়াল টুইটার একাউন্ট থেকে একটি ছবি সংযুক্ত করে টুইট প্রকাশ করা হয়েছিলো। ছবিটিতে দেখা যায়, খালেদা জিয়া ব্ল্যাকবোর্ডে এক শিশুকে লিখে দেখাচ্ছেন। সেই ছবিটিই ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে ব্ল্যাক বোর্ডে “আ = আন্দোলন ক = কচু হবে” লিখে দিয়ে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ছবিটি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।