সম্প্রতি, ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তা সুলতানা নিজের অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট পুড়িয়ে সরকারি চাকরি পেয়েছেন দাবিতে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেসবুক লাইভে এসে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ভাইরাল হয়ে পাওয়া ইডেন ছাত্রী মুক্তা সুলতানার চাকরিটি সরকারি নয় বরং এটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব সিকিউরড ই-মেইল ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার’ প্রজেক্টে ‘কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট এন্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার’ পদে ছয় মাসের চুক্তিভিত্তিক একটি অস্থায়ী চাকরি
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে গত ২৯ মে প্রচারিত এ সম্পর্কিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Zunaid Ahmed Palak Facebook
ভিডিওটির শিরোনামে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক লিখেন, ‘আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা আইসিটি ডিভিশনের পক্ষ থেকে ১ লক্ষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো। সেই প্রজেক্টের কন্টেন্ট ডেভেলপার, সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার হিসেবে আমাদের আইসিটি ডিভিশনে কাজ করবে মুক্তা সুলতানা। ছয় মাসের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আমরা তার হাতে তুলে দিয়েছি।
আমার বিশ্বাস এই ছয় মাসের মধ্যেই সে তার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ দিয়ে আগামীতে আরো ভালো করবে এবং তার সাফল্যের মধ্য দিয়ে লক্ষ কোটি তরুণ তরুণী উৎসাহিত হবে। আমাদের এই সুযোগটা করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।’
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে মুক্তা সুলতানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘চাকরিটি একটি সরকারি প্রজেক্টের অধীনে, তবে এটি কোনো সরকারি চাকরি নয়।’
অর্থাৎ সরকারি চাকরি না পাওয়ায় সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ভাইরাল হওয়া ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তা সুলতানার আইসিটি ডিভিশনে পাওয়া চাকরিটি কোনো সরকারি চাকরি নয়।
মূলত, ইডেন কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে দীর্ঘদিন যাবত চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে নিজের অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ভাইরাল হন মুক্তা সুলতানা নামের এক তরুণী। পরবর্তীতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সহায়তায় তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব সিকিউরড ই-মেইল ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার’ প্রজেক্টে ‘কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট এন্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার’ পদে ৬ মাসের চুক্তিভিত্তিক চাকরি পান। তবে, একটি প্রজেক্টের অধীনে মুক্তার পাওয়া চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী চাকরির বিষয়টিকেই মুক্তা সুলতানা সরকারি চাকরি পেয়েছেন দাবিতে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
প্রসঙ্গত, আইসিটি বিভাগের প্রজেক্টে চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে যোগদান করায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের যুগ্ন আহ্বায়ক মুক্তা সুলতানাকে সংগঠনটি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
সুতরাং, ইডেন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মুক্তা সুলতানার পাওয়া একটি প্রজেক্টের অধীনে ছয় মাস মেয়াদী অস্থায়ী চাকরিকে সরকারি চাকরি হিসেবে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বরাতে কক্সবাজারের খুরুশকুলের বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র দাবি করে একটি তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,কক্সবাজারের খুরুশকুলে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয় ফেনীর মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ২০০৫ সালে। এছাড়া গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্য মতে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার কিলোওয়াট বা ৮৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও যুক্ত হয়েছিল।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল ‘বাংলাদেশেও আছে বায়ুশক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অপার সম্ভাবনা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Ministry of Power, Energy and Mineral Resources website
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বায়ুশক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০০৫ সালে ফেনীর মহুরী নদীর তীর ও সোনাগাজী চরাঞ্চল ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ৬ একর জমির উপর স্থাপিত হয় বাংলাদেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
Screenshot: Ministry of Power, Energy and Mineral Resources website
ওয়েবসাইটটি থেকে আরও জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এটি বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে তা পুনরায় চালু হয়। চালু হওয়ার পর ২০১৪ সালে মোট উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২ লাখ ২ হাজার ৪শ ৩৯ ইউনিট। তখন গড় উৎপাদন ছিল ১৬ হাজার ৮৩০ ইউনিট।
এছাড়া প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের অন্য আরেকটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়৷ ২০০৮ সালের পহেলা বৈশাখে এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ৬০০ গ্রাহকের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বিতরণও করা হয়েছিল, যেখানে ছিল ৫০টি টারবাইন। প্রতিটির ক্ষমতা ২০ কিলোওয়াট করে৷
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ফেনীর মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ২০০৫ সালে ছয় একর জমির উপর চালু হয় বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র। ঐ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়৷
Screenshot: bdnews24
পরবর্তীতে ২০০৬ সালের শুরুতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এরপর থেকে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১১ কেভি লাইনে যুক্ত হয় উৎপাদিত বিদ্যুৎ। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর পর দুই বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও ২০০৭ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটি।
একই বিষয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ‘Country’s first big leap in wind energy from December‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সর্বপ্রথম ২০০৫ সালে ফেনীর সোনাগাজি উপজেলায় মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে শূন্য দশমিক ৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে।
Screenshot: The Business Standard
পরবর্তীতে তিন বছর পরে ২০০৮ সালে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও একটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। তবে বর্তমানে দুইটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আগ্রহের অভাবে উৎপাদনের বাইরে আছে।
Screenshot: The Business Standard
এছাড়া বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরিটিভির ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১০ জুলাই ‘ফের বন্ধ সোনাগাজীর বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাখা না ঘোরা ও চুক্তি নবায়ন না করার অজুহাতে ফের বন্ধ হয়ে গেছে ফেনীর সোনাগাজীতে নির্মিত দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পটির মিটারের তথ্যমতে, প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর থেকে (প্রতিবেদন প্রকাশ) পর্যন্ত এই প্রকল্পে উৎপাদিত ৮ লাখ ৮৮ হাজার কিলোওয়াট বা ৮৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছিল।
অর্থাৎ, কক্সবাজারের খুরুশকুলে স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের খুরুশকুলে স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র না হলেও এটি দেশের বৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে। ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি স্থাপন করছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
মূলত, সম্প্রতি বেসরকারি উদ্যোগে কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে নির্মাণাধীন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। তবে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বরাতে এটিকে দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়,
কক্সবাজারের খুরুশকুলে স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পূর্বে দেশে আরো অন্তত দুইটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়া এবং সেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার তথ্য খোদ গণমাধ্যম সূত্রেই জানা যায়। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০০৫ সালে ফেনীর সোনাগাজি উপজেলায় মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে চালু করা হয়েছিল। ঐ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার কিলোওয়াট বা ৮৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও যুক্ত হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ফেনীর সোনাগাজি উপজেলায় মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ আছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বরাতে কক্সবাজারের খুরুশকুলে স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি “মুসকান আর নেই, ইন্না-লিল্লাহি ও ইন্নাইলাহি রাজিউন। ভারতে আল্লাহু আকবারের ধ্বনীতে যে ইসলামী বীর মুসকান বিশ্ব কাঁপিয়ে ছিলেন কাফেরের দলের আর সহ্য হয়নি, আল্লাহ তুমি তোমার প্রিয় বান্ধীকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান কর আমিন আমিন আমিন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের কর্ণাটকে হিজাবকাণ্ডে প্রতিবাদী তরুণী মুসকান খান মারা যান নি বরং মুসকানের মৃত্যু দাবিতে প্রচারিত ছবিটি 6 বছর আগে কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক শিক্ষার্থীর।
মূলত, ২০১৭ সালে ভারতের দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার একটি কলেজে নিরাপত্তা বাহিনীর কথিত ‘হাইহান্ডেনেস’-এর বিরুদ্ধে কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ঐ বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। উক্ত সংঘর্ষে আহত এক শিক্ষার্থীর পুরোনো একটি ছবিকে সম্প্রতি মুসকানের মৃত দেহের ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, গত ২৬ এপ্রিল দেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতির গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে ভিআইপি প্রোটোকলের কারণে একজন নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে ফেইসবুকে আক্ষেপ জানানোই পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ইসমাঈল নামে উচ্চ মাধ্যমিকের এক শিক্ষার্থীর একমাস কারাগারে থাকার দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৬ এপ্রিল দেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতির গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে ভিআইপি প্রোটোকলের কারণে একজন নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে ফেসবুকে লাইভ কারণে ইসমাঈল নামে উচ্চ মাধ্যমিকের এক শিক্ষার্থীর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে থাকার তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ইসমাঈলের লাইভে দেখানো শিশুটি রাষ্ট্রপতির আগমনে ভিআইপি প্রোটোকলের কারণে মারা যায়নি, শিশুটি এর আগেই হাসপাতালে মারা যায় এবং মৃত শিশুটিকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় ইসমাঈল লাইভে এসে উপরিউক্ত দাবিতে প্রচার করেছিল।
বিষয়টির সত্যতা প্রসঙ্গে উক্ত ঘটনার ভিডিও ধারণকারী মো: ইছমাইলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট Md Ismail এ গত ২৮ এপ্রিল রাত ১২ টা ৫৩ মিনিটে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Image: Md Ismail Facebook Post
পোস্টটিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আসসালামুয়ালাইকুম। আমি গত ২৬/০৪/২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ১০ ঘটিকায় গোপালগঞ্জ শহর হতে আমার বাড়ি চন্দ্রদিঘলিয়া যাওয়ার পথে চন্দ্র দিঘলিয়া বাজারে রাস্তার উপর পৌছালে একটি অটো রিক্সায় একজন মহিলার কোলে নবজাতক শিশুর মৃতদেহ দেখে আমি তাৎক্ষণিক একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করি। পরবর্তীতে জানতে পারি উক্ত নবজাতক শিশুটি গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।আমি ভুলবশত না জেনে ফেসবুকে উক্ত পোস্টটি আপলোড করি। আমি যাচাই বাছাই না করে সঠিক তথ্য না জেনে উক্ত পোস্টটি করায় সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।’
এই পোস্টটির সঙ্গে তিনি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের একটি রোগী ভর্তির ফরম ও রোগ বৃত্তান্ত ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতার দুইটি ছবিও যুক্ত করেন।
Image Analysis: Rumor Scanner
ফরমটির ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিশুটিকে গত ২৫ এপ্রিল সকাল ৮ টা ৩৭ মিনিটে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউ ব্রন ইউনিটে (স্ক্যানো) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ফরমটিতে শিশুটিকে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভর্তি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
একই ফরমের নিচে গত ২৬ এপ্রিল কবিতা নামে একজনের স্বাক্ষরে ‘মৃতদেহ সহ মৃত্যুর প্রমাণপত্র বুঝিয়া পাইলাম’ শীর্ষক একটি স্বীকারোক্তিও খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, শিশুটি গত ২৬ এপ্রিল হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করে।
এছাড়া শিশুটির পিতা তারিকুল শেখও শিশুটির মৃত্যু হাসপাতালেই হয়েছিল নিশ্চিত করে সেই সময় রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘আমার বাচ্চা হাসপাতালেই মারা গেছে। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার পথে পুলিশ পথে গাড়ি আটকিয়েছিল। পরে আমি সেখানে উপস্থিত পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতার সাথে কথা বললে আমাদের গাড়ি ছেড়ে দিতেও বলেছিলেন উনি।’
পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাসুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, মো: ইছমাইলকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নামে অপপ্রচার চালানোয় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
মূলত, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঐ সময় সে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে একটি মৃত শিশুর ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হয় যে, ‘রাষ্ট্রপতির টুঙ্গিপাড়াযাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে নবজাতকের মৃত্যু’ হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, শিশুটি পূর্বেই হাসপাতালে মারা যায় এবং মৃত শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময়ের ভিডিও ধারণ করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ঘটনাকে রাষ্ট্রপতির টুঙ্গিপাড়াযাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে নবজাতকের মৃত্যু’ শীর্ষক দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে বিষয়টি মিথ্যা হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রধারী প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনআইডি নয়, টিআইএন(TIN) ধারীদের মধ্যে যাদের আয় করমুক্ত সীমার নিচে কিন্তু সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন করদাতাদেরও নূন্যতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে গত পহেলা জুন ‘বাজেটে আয়কর সম্পর্কে যা বলা হয়েছে‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: BBC Bangla
প্রতিবেদনটিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট বক্তৃতাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন সকল করদাতার ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।”
Screenshot: BBC Bangla
অর্থাৎ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা টিন নাম্বারধারী ব্যক্তি যখন রিটার্ন জমা দিতে যাবে, তখন তাকে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা কর দিতেই হবে। সেক্ষেত্রে তার করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক।
প্রতিবেদনটি থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা সম্পর্কেও তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।
Screenshot: BBC Bangla
যেমন, উল্লেখিত অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা পুরুষের জন্য করা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ ও নারীদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ টাকা।
একই বিষয়ে গত ২ জুন জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ‘রিটার্ন জমা দিলেই দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট বক্তৃতাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। এ ধরনের অংশীদারিমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা আছে, এমন করদাতাদের ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।’
অর্থাৎ, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট অনুযায়ী, পুরুষদের ক্ষেত্রে আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ ও নারীদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ টাকা বা এর কম থাকলে তাকে কর দিতে হবে না। কিন্তু ঐ ব্যক্তি যদি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা টিন নাম্বারধারী হয় এবং সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন করদাতা কেউ হয়, তবে তার করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক কমপক্ষে দুই হাজার টাকা কর দিতেই হবে।
পাশাপাশি একইদিনে অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এ ‘রিটার্ন দিলেই ২০০০ টাকা কর কেন, ব্যাখ্যা দিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম নূন্যতম করের বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমি আগে রিকোয়েস্ট করব আপনাদের, কাদের টিআইএন থাকতে হয়, টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের, সিই লিস্টটা যদি সামনে নেন, তাহলে সেখানে দেখবেন টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জন্য, কমিশন এজেন্সির জন্য। টিআইএন বাধ্যতামূলক পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য। সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি, গাড়ির জন্য।
“আপনি যেটা বললেন, সাধারণ গরিব মানুষের কোনো অসুবিধা হবে কি না, সাধারণ গরিব মানুষেরতো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।”
Screenshot: bdnews24
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমি যে ক্যাটাগরিগুলো বললাম, আপনারা লিস্টে দেখবেন, এই ধরনের ক্যাটাগরিতে যে মানুষগুলো আছে, তাদের জন্য দুই হাজার টাকা বছরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে উন্নয়নের অংশীদার হওয়া, এটি একটি গর্বের বিষয় হওয়ার কথা। বোঝা মনে করার কথা নয়।”
অর্থাৎ, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি থাকলে বাধ্যতামূলক কর দেওয়া সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব করা হয়নি।
টিআইএন নাম্বার কি?
এ প্রসঙ্গে অনুসন্ধানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমানের ‘কেন টিআইএন সার্টিফিকেট নেবেন।‘ শীর্ষক একটি পরামর্শ মূলক লেখা থেকে জানা যায়, ‘টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার একটি বিশেষ নম্বর, যা দিয়ে করদাতাকে শনাক্ত করা হয়।’ টিন নাম্বারকে তুলনা করেছেন ঘরের চালে থাকা ঢেউটিনের সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘরের চালে থাকা ঢেউটিনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তাদের কাজ প্রায় একই—সুরক্ষা দেওয়া। টিআইএন করদাতাকে করের সব ঝামেলা থেকে সুরক্ষা করে।’
মূলত, গত পহেলা জুন আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল টিআইএনধারীদের মধ্যে যাদের আয় করমুক্ত সীমার নিচে কিন্তু সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন করদাতাদেরও নূন্যতম কর ২০০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন। তাঁর এ প্রস্তাবকে ঘিরেই পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয় যে, ‘যাদের NID আছে তাদের ইনকাম না থাকলেও ২০০০ টাকা কর দিতে হবে।’ তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, করের বিষয়টির সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। প্রকৃতপক্ষে এর সঙ্গে টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার সম্পৃক্ত।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাজেট পাশের আগেই করের আওতা বাড়াতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি থাকলেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পক্ষে মত দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সুতরাং, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রধারী প্রত্যেককে তাদের ইনকাম না থাকলেও দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার নিয়ম চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ৩০ মে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র প্রিন্ট সংস্করণে “এরদোয়ান জিতলেন, কিন্তু তুরস্ক কি জিতল” শিরোনামে প্রকাশিত অষ্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মেহমেত ওজাল্প এর একটি কলামে (অনূদিত) দাবি করা হয়েছে, “জরিপে দেখা গেছে, তিনি (ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলু) জেলের বাইরে থাকলে ভালোভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানকে হারাতে পারতেন। ইমামোলুর অনুপস্থিতিতে সবচেয়ে দুর্বল ভাবমূর্তির নেতা কিলিচদারওলুকে বিরোধীরা সমর্থন দিতে বাধ্য হয়।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম আলোয় ইংরেজি থেকে অনূদিত কলামের তথ্য দাবি করা হলেও মূল ইংরেজি কলামে প্রথম আলোয় প্রকাশিত ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলুর বিষয়ে তিনি জেলে আছেন এবং তার অনুপস্থিতিতে দুর্বল ভাবমূর্তির নেতা কিলিচদারওলুকে বিরোধীরা সমর্থন দিতে বাধ্য হয় শীর্ষক তথ্যগুলো উল্লেখ নেই। তাছাড়া, নির্বাচনের সময় তিনি কারাবন্দীও ছিলেন না এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনুপস্থিতও ছিলেন না। প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামোলুর অনীহা থাকলেও তার দলের প্রার্থীর পক্ষে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলোর আলোচিত কলামটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মেহমেত ওজাল্প এর লেখা কলামটি প্রথম আলো ‘এশিয়া টাইমস’ থেকে সংগ্রহ করে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছে।
পরবর্তীতে হংকং ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম Asia Times এর ওয়েবসাইটে গত ২৯ মে প্রকাশিত কলামটি খুঁজে পাওয়া যায়।
এশিয়া টাইমস কলামটি সংগ্রহ করেছে The Conversation থেকে।
Screenshot source: Asia Times
অনুসন্ধানে অষ্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম The Conversation এর ওয়েবসাইটে গত ২৮ মে প্রকাশিত মূল কলামটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: The Conversation
প্রথম আলো মূল কলাম বিকৃত করেছে?
The Conversation এ প্রকাশিত মূল কলামটি হুবহুই প্রকাশ করেছে Asia Times। তবে প্রথম আলো’র প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত একই কলামে মূল কলামের সাথে বেশ কিছু অসঙ্গতি নজরে এসেছে রিউমর স্ক্যানার টিমের।
কলামটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম আলো এই কলামটির সংক্ষেপিত সংস্করণ প্রকাশ করেছে। কিন্তু পত্রিকাটি বিষয়টি তাদের কলামে উল্লেখ রাখেনি।
তাছাড়া, একরেম ইমামোলুর বিষয়ে The Conversation এর কলামে এসেছে, “জরিপে দেখা গেছে, তিনি (ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলু) ভালোভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানকে হারাতে পারতেন। ইমামোলু দৃশ্যপটের বাইরে থাকায় সবচেয়ে দুর্বল ভাবমূর্তির নেতা কিলিচদারওলুকে বিরোধীদের সমর্থন দিতে হয়েছিল।”
কিন্তু প্রথম আলো একই লাইনগুলোর অনুবাদ লিখেছে এভাবে, “জরিপে দেখা গেছে, তিনি (ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলু) জেলের বাইরে থাকলে ভালোভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানকে হারাতে পারতেন। ইমামোলুর অনুপস্থিতিতে সবচেয়ে দুর্বল ভাবমূর্তির নেতা কিলিচদারওলুকে বিরোধীরা সমর্থন দিতে বাধ্য হয়।”
Screenshot collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, প্রথম আলোর প্রিন্ট সংস্করণের ইংরেজি থেকে অনূদিত কলামে মূল কলামের লেখা বিকৃত করা হয়েছে।
একরেম ইমামোলু কি জেলে আছেন?
প্রথম আলো তাদের কলামে দাবি করেছে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলু জেলে আছেন। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত বছরের (২০২২) ১৪ ডিসেম্বর সরকারি কর্মকর্তাদের মানহানির দায়ে একরেম ইমামোলুকে ২ বছর ৭ মাসের কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত। মেয়র একরেম এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে সে সময় জানিয়েছিল কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। যদি উচ্চ আদালতে এ কারাদণ্ড বহাল থাকে, তবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। তবে এর আগ পর্যন্ত মেয়র পদে থাকা এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নিতে তার কোনো বাধা নেই।
ইমামোলু এই সাজার ফলে এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও কারাবরণ করেননি। বরং তাকে তার দলের প্রার্থী কিলিচদারওলুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে। এমনকি তিনি নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন।
অর্থাৎ, প্রথম আলোর কলামে ইমামোলু জেলে আছেন বলে যে দাবি করা হয়েছে তা সঠিক নয়।
ইমামোলু কি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছিলেন?
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা সংক্রান্ত আইন বলছে, একজন ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য, তাকে সংসদ সদস্য হওয়ার মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। আইনে বলা হয়েছে, ‘অবহেলা অপরাধ ব্যতীত যারা মোট এক বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড এবং ভারী কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন, তারা সংসদের প্রার্থী হতে পারবেন না। তখন রাষ্ট্রপতি পদে তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
এ সংক্রান্ত দুইটি আইন দেখুন এখানে (১০১ নং) এবং এখানে (১১ নং)।
তবে ইমামোলু চাইলেই নির্বাচনে দাঁড়াতে পারতেন। তুরস্কের ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা Dogrula এর একজন ফ্যাক্ট চেকার রিউমর স্ক্যানার টিমকে বলছিলেন, ইমামোলুর মামলা এখনও যেহেতু বিচারাধীন তাই তিনি তার প্রার্থী হতে বাধা ছিল না। একই কারণে তিনি এখনও মেয়র পদে রয়েছেন।
অর্থাৎ, ইমামোলুর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য আইনগত কোনো বাধা ছিল না।
কিন্তু তার এই পদে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল না বলেই প্রতীয়মান হয়।
গত মার্চে ইমামোলু প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য তার দলের পক্ষ থেকে পাওয়া আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেন।
গত বছরের (২০২২) মে মাসে ইমামোলু এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়া তার এজেন্ডায় নেই।
অর্থাৎ, ইমামোলু চাইলেই রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারতেন। এতে আইনগত কোনো বাধা ছিল না তার।
কী বলছেন মূল কলাম লেখক?
কলামটির বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করেছিল মূল লেখক মেহমেত ওজাল্পের সাথে, যিনি অষ্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
মেহমেত ওজাল্পের সাথে যখন আমরা যোগাযোগ করি তখন তিনি ছুটিতে। মেইল মারফত আমাদের জানানো হয়, তিনি ১২ জুন পর্যন্ত ছুটিতে থাকবেন। তবে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে একইদিন রাতেই জনাব ওজাল্প আমাদের প্রশ্নের উত্তরগুলো পাঠান।
একরেম ইমামোলু জেলে থাকা সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য যেহেতু মেহমেত ওজাল্প করেননি, তাই আমরা তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো মতামত জানতে চাইনি। ওজাল্পের কাছে আমরা দুইটি বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম।
প্রথম জিজ্ঞাসা ছিল, তিনি (মেহমেত ওজাল্প) একরেম ইমামোলু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দৃশ্যপটের বাইরে ছিলেন বলে দাবি করেছেন তার কলামে। কিন্তু নির্বাচনে প্রচারণার কাজে ইমামোলুকে নিয়মিতই দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়া একরেম ইমামোলুর এজেন্ডায় নেই বলেও মন্তব্য করেছিলেন ইমামোলু। এ বিষয়গুলো মেহমেত ওজাল্পকে জানানোর পর তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “একরেম ইমামোলু নির্বাচনে ছিলেন এবং কিলিচদারওলুকে সমর্থন করেছিলেন কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না। কিলিচদারওলু স্বাভাবিকভাবেই চেয়েছিলেন এবং ইমামোলুর মতো তার দলের শক্তিশালী ব্যক্তিত্বদের সমর্থন পেয়েছিলেন। এটি এই সত্যটি পরিবর্তন করে না যে ইমামোলু তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী অফিসকে অপমান করার মতো সন্দেহজনক অভিযোগে আদালতে মামলার কারণে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি।”
তবে তার মন্তব্যটি যে সঠিক ছিলনা তা স্পষ্ট আমাদের উল্লেখিত আগের প্যারাতেই।
মেহমেত ওজাল্প তার কলামে দাবি করেছেন, “জরিপে দেখা গেছে, তিনি (ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলু) ভালোভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানকে হারাতে পারতেন।”
কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাসখানেক আগে পরিচালিত দুইটি জরিপের ফলে দেখা গেছে, এরদোয়ানই অন্য প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন একাধিক জরিপই হয়েছে। মেহমেত ওজাল্পের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি ঠিক কোন জরিপের তথ্য তার কলামে উল্লেখ করেছেন।
এই প্রশ্নের জবাবে মেহমেত ওজাল্প রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “কয়েক বছর ধরে তুরস্কের পোলিং সংস্থাগুলোর অসংখ্য জরিপ দেখা গেছে যে একরেম ইমামোলু প্রার্থী হলে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে জয়ী হবেন। এরদোয়ানের বিরুদ্ধে কারা শক্তিশালী প্রার্থী তা পরীক্ষা করার জন্যই এই জরিপগুলো করা হয়েছে।
মেহমেত ওজাল্প দুইটি জরিপের লিংক পাঠিয়েছেন রিউমর স্ক্যানারের কাছে। দেখুন এখানে (ফেব্রুয়ারি, ২০২২), এখানে (মে, ২০২০)।
অর্থাৎ, মেহমেত ওজাল্প নির্বাচনের আগের অন্তত বছর খানেক পুরোনো জরিপের ফলাফলের তথ্য দিয়েছেন তার কলামে। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণা পরবর্তী সময়ের জরিপগুলো বলছে, এরদোয়ানই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন সেসময়।
মূলত, গত ৩০ মে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র প্রিন্ট সংস্করণে “এরদোয়ান জিতলেন, কিন্তু তুরস্ক কি জিতল” শিরোনামে প্রকাশিত অষ্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মেহমেত ওজাল্প এর লেখা একটি কলামে (অনূদিত) দাবি করা হয়েছে, “জরিপে দেখা গেছে, তিনি (ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলু) জেলের বাইরে থাকলে ভালোভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানকে হারাতে পারতেন। ইমামোলুর অনুপস্থিতিতে সবচেয়ে দুর্বল ভাবমূর্তির নেতা কিলিচদারওলুকে বিরোধীরা সমর্থন দিতে বাধ্য হয়।” কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মূল কলামে ইমামোলুর জেলে থাকা শীর্ষক কোনো তথ্য নেই এবং নির্বাচনের সময় তিনি কারাবন্দীও ছিলেন না। তাছাড়া, প্রথম আলো উক্ত কলামের সংক্ষেপিত সংস্করণ প্রকাশ করেছে। কিন্তু পত্রিকাটি এই বিষয়টি তাদের কলামে উল্লেখ রাখেনি।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে তুরস্কে প্রথম দফা নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য কোনো প্রার্থীই প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। পরবর্তীতে গত ২৮ মে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে জয়ী হন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
প্রসঙ্গত, তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ে পূর্বে গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা সনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রথম আলোয় এরদোয়ানের বিষয়ে অনূদিত কলামে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলুর বিষয়ে প্রচারিত তথ্যগুলো বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আর্জেন্টাইন ফুটবলার লাওতারো মার্টিনেজের বিয়ের খবরে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি লাওতারো ও তার স্ত্রীর নয় বরং এটি তার সতীর্থ আরেক আর্জেন্টাইন ফুটবলার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এবং তার স্ত্রীর ছবি, যারা ২০১৭ সালেই বিয়ে করেছেন।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম The Sun এর ওয়েবসাইটে গত ৩০ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে লাওতারোর বিয়ের বিষয়ে জানা যায়।
সম্প্রতি ইতালিতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন লাওতারো। সান এর প্রতিবেদনে লাওতারোর বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা তার সতীর্থ এমিলিয়ানো এবং তার স্ত্রীর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়, যা কতিপয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে লাওতারোর বিয়ের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
Screenshot: The Sun
সান এর প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লাওতারো মার্টিনেজের ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৩০ মে প্রকাশিত তার বিয়ের কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তার বিয়েতে উপস্থিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
Screenshot: Lautaro Martinez Instagram
পরবর্তীতে লাওতারো মার্টিনেজের সতীর্থ এমিলিয়ানো মার্টিনেজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৩০ মে লাওতারোর বিয়েতে তোলা কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ছবিটিও সেখানে ছিল।
Screenshot: Emiliano Martinez Instagram
ছবিটির ক্যাপশনে পর্তুগিজ ভাষায় লেখা “felicidades lautaro martinez agus gandolfo” বাক্যটি বাংলায় অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়ায়, অভিনন্দন লাওতারো মার্টিনেজ ও অগাস গান্দোলফোর।
অর্থাৎ, কতিপয় গণমাধ্যমে লাওতারো বিয়ের খবরের ফিচারে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তা লাওতারো ও তার স্ত্রীর নয়।
পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধান করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Times of India-র ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আর্জেন্টাইন ফুটবলার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ২০১৭ সালের ২২ মে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তাদের দুই সন্তান রয়েছে।
Screenshot: Times of India
মূলত, সম্প্রতি আর্জেন্টাইন ফুটবলার লাওতারো মার্টিনেজের বিয়ের খবরে কতিপয় গণমাধ্যমে গণমাধ্যমের ফিচারে একটি কাপল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি লাওতারো ও তার স্ত্রীর নয়। প্রকৃতপক্ষে, লাওতারোর বিয়েতে উপস্থিত থাকা আরেক আর্জেন্টাইন ফুটবলার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ও তার স্ত্রীর ছবিকে লাওতারোর বিয়ের ছবি দাবি করে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভুল তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আর্জেন্টাইন ফুটবলার লাওতারো মার্টিনেজের ছবি দাবিতে তার সতীর্থ এমিলিয়ানো মার্টিনেজের ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “হাছিনা পাঁক্কা ঈমানদার, গোপালগঞ্জের গোলাপি আর কত কাল জ্বলাবি আর করিস না শেখ শেখ দেশের দিকে চাইয়া দেখ, হাঠা হাছিনা বাঁচা দেশ এটা আমার সোনার বাংলাদেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কোলাজ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
এই কোলাজ ছবির মধ্যে এক নারী কর্তৃক শেখ হাসিনাকে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার একটি ছবিও সংযুক্ত রয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে সিঁদুর পরানোর ছবিটি আসল নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় শেখ হাসিনার ছবিতে সিঁদুর পরানোর একটি ছবি জুড়ে দিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার হয়ে আসছে।
মূলত, ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারী দুইদিনের সফরে ভারতের আগরতলায় যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদানের সময় তোলা একটি ছবিতে এডিটে করে ‘ভিন্ন কোনো ছবি থেকে এক নারী কর্তৃক সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার’ ছবি বসিয়ে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ছবি দিয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতে গিয়ে সিঁদুর পরানো হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে চিনতে পারেননি জো বাইডেন এবং তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে শ্বেতাঙ্গ এক ভদ্রলোকের সাথে হ্যান্ডশেক করেছেন” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ক্লিপ ও কিছু ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচারিত হয়।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আয়ারল্যান্ড সফরে বেলফাস্ট বিমানবন্দরে নেমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে চিনতে না পেরে তার সাথে দায়সারাভাবে হাত মিলিয়ে অন্যদের সাথে কথা বলতে চলে যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং সেদিন বাইডেন বিমানবন্দরে নেমেই সর্বপ্রথম ঋষি সুনাকের সাথে করমর্দনের পাশাপাশি কিছু সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলেন।
এ বিষয়ে ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ‘C-SPAN’ এর ওয়েবসাইটে গত ১১ এপ্রিল “President Biden Greeted By British Prime Minister in Belfast” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ৭ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: C-SPAN Website
উক্ত ভিডিওতে দেখা যায়, বাইডেন বিমান থেকে নামার পর পরই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে করমর্দন করে এবং বেশ কয়েক সেকেন্ড স্বতঃস্ফূর্ত ও হাস্যউজ্জ্বলভাবে কথা বলেন।
Screenshot: C-SPAN Website
এরপর ঋষি সুনাকের সাথে ইউনিফর্ম পরিহিত সামরিক কর্মকর্তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেন। পরবর্তীতে বাইডেনকে ঋষি সুনাকের কাঁধে হাত রেখে তার (বাইডেন) সফরসঙ্গীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দেখা যায়।
Screenshot: C-SPAN Website
এছাড়া একই বিষয়ে বৃটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সান এর ওয়েবসাইট এবং দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য টেলিগ্রাফ এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনেও ঋষি সুনাকের সাথে বাইডেনের স্বতঃস্ফূর্ত কুশল বিনিময়ের দৃশ্য দেখা যায়।
বিভ্রান্তির সূত্রপাত
অনুসন্ধানে, জো বাইডেন ঋষি সুনাককে চিনতে না পেরে সরিয়ে দিয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে বৃটিশ সংবাদমাধ্যম Sky News এর ইউটিউব চ্যানলে গত ১২ এপ্রিল “US President Joe Biden lands in Northern Ireland” (Archive) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনের প্রথম অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এটি স্পষ্ট যে, বিমানবন্দরে বাইডেন ও ঋষি সুনাকের কুশল বিনিময়ের মুহূর্তগুলো বাদ দিয়ে এটি সম্পাদনা করা হয়েছে।
তবে একই দিনে সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে “US president Joe Biden and UK prime minister Rishi Sunak shake hands” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিওতে বেলফাস্ট বিমানবন্দরে নেমেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়।
Screenshot from Sky News
যা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিনতে না পারার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে অনুপস্থিত ছিলো।
অর্থাৎ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়ারল্যান্ডের বিমানবন্দরের অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষারত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে চিনতে না পেরে তাকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে শ্বেতাঙ্গ এক ভদ্রলোকের সাথে হ্যান্ডশেক করেছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, গত ১১ এপ্রিল গুড ফ্রাইডের শান্তি চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়ারল্যান্ড সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় আয়ারল্যান্ডের বিমানবন্দরে জো বাইডেনকে স্বাগত জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। উক্ত ঘটনায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে চিনতে না পেরে তাকে অন্যত্র সরিয়ে দিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিমানবন্দরেই নেমেই সর্বপ্রথম বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে করমর্দন করেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে কুশল বিনিময় করেন। তবে তাদের এই কুশল বিনিময়ের অংশটুকু বাদ দিয়ে একটি সম্পাদিত ভিডিওর মাধ্যমে ঋষি সুনাককে চিনতে না পেরে সরিয়ে দিলেন বাইডেন শীর্ষক দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে চিনতে না পেরে সরিয়ে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং এই দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করার দাবিটি সঠিক নয় বরং ‘দ্য স্ট্যাটিসটিক্স’ নামের একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের সূত্রে এই তথ্যটি ২০১৮ সাল থেকে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
মূলত, দ্য স্ট্যাটিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে সূত্র ধরে সর্বপ্রথম ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বর্তমান শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে এই তথাকথিত অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানানো হলে এটি বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রচার করা হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে এই নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অপরদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বের সেরা দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘের ওয়েবসাইটেও এ জাতীয় কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।