সম্প্রতি ‘রাষ্ট্রপতির টুঙ্গিপাড়াযাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে নবজাতকের মৃত্যু’ শীর্ষক দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
অনলাইন গণমাধ্যম ফেইস দ্যা পিপলের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে হাসপাতালে নিতে না পারায় চিকিৎসার অভাবে নবজাতকের মৃত্যুর দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে শিশুটি এর আগেই হাসপাতালে মারা যায় এবং মৃত শিশুটিকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময়ের ভিডিও ধারণ করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে ফেসবুকে উক্ত ঘটনার ভিডিও ধারণকারী মো: ইছমাইলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট Md Ismail এ গত ২৮ এপ্রিল রাত ১২ টা ৫৩ মিনিটে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টটিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আসসালামুয়ালাইকুম। আমি গত ২৬/০৪/২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ১০ ঘটিকায় গোপালগঞ্জ শহর হতে আমার বাড়ি চন্দ্রদিঘলিয়া যাওয়ার পথে চন্দ্র দিঘলিয়া বাজারে রাস্তার উপর পৌছালে একটি অটো রিক্সায় একজন মহিলার কোলে নবজাতক শিশুর মৃতদেহ দেখে আমি তাৎক্ষণিক একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করি।
পরবর্তীতে জানতে পারি উক্ত নবজাতক শিশুটি গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।আমি ভুলবশত না জেনে ফেসবুকে উক্ত পোস্টটি আপলোড করি। আমি যাচাই বাছাই না করে সঠিক তথ্য না জেনে উক্ত পোস্টটি করায় সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।’
এই পোস্টটির সঙ্গে তিনি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের একটি রোগী ভর্তির ফরম ও রোগ বৃত্তান্ত ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতার দুইটি ছবিও যুক্ত করেন।
ফরমটির ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিশুটিকে গত ২৫ এপ্রিল সকাল ৮ টা ৩৭ মিনিটে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউ ব্রন ইউনিটে (স্ক্যানো) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ফরমটিতে শিশুটিকে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভর্তি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
একই ফরমের নিচে গত ২৬ এপ্রিল কবিতা নামে একজনের স্বাক্ষরে ‘মৃতদেহ সহ মৃত্যুর প্রমাণপত্র বুঝিয়া পাইলাম’ শীর্ষক একটি স্বীকারোক্তিও খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, শিশুটি গত ২৬ এপ্রিল হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করে।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম শিশুটির পিতা তারিকুল শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
তিনি এই ঘটনা প্রসঙ্গে রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘আমার বাচ্চা হাসপাতালেই মারা গেছে। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার পথে পুলিশ পথে গাড়ি আটকিয়েছিল। পরে আমি সেখানে উপস্থিত পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতার সাথে কথা বললে আমাদের গাড়ি ছেড়ে দিতেও বলেছিলেন উনি।’
তিনি আরও বলেন, তারা বাড়িতে আসার পর তার স্ত্রী তাকে জানায় যে, একটা ছেলে তাদের ভিডিও করে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনা যে এতদূর পর্যন্ত আসবে তিনিও সেটা বুঝতে পারেননি।
একই বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ইনচার্জ) নাজমা খাতুন রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি এসেছিলেন গত ২৬ এপ্রিলে। সেদিনের এমন কোনো ঘটনা নিয়ে আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই। নবজাতক মৃত্যুর কোনো ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই আগে আমার কাছে তথ্য আসে। পরে আমি সিভিল সার্জন অফিসেকে রিপোর্ট করি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাসুদ রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘প্রথমত বাচ্চাটা হাসপাতালে মারা গেছে। এই বাচ্চাটাকে অটো করে তার মা নিয়ে যাচ্ছিল। যেহেতু মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় স্বাভাবিকভাবে রাস্তা বন্ধ থাকে। এই সময় কিছু ছেলেপেলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যাওয়ার কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় বাচ্চা মারা গেছে এমন অভিযোগে বিক্ষোভ সৃষ্টি করতে ইচ্ছাকৃতভাবে অপপ্রচার চালাতে এই ভিডিওটি করেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির নামে অপপ্রচার চালানোয় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’
মূলত, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঐ সময় সে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে একটি মৃত শিশুর ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হয় যে, ‘রাষ্ট্রপতির টুঙ্গিপাড়াযাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে নবজাতকের মৃত্যু’ হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, শিশুটি পূর্বেই হাসপাতালে মারা যায় এবং মৃত শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময়ের ভিডিও ধারণ করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির তরিকুল শেখ গত ২৫ এপ্রিল পুত্র সন্তানের বাবা হন। জন্মগ্রহণের পর থেকে শিশুটি শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগছিলো। চিকিৎসার জন্য ওইদিনই শিশুটিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউ ব্রন ইউনিটে (স্ক্যানো) ভর্তি করা হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনীর দিনও মাওয়া-শিমুলিয়া ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় অ্যাম্বুল্যান্সে অক্সিজেনের অভাবে শিশু মারা যাওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সে সময়েও রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উক্ত তথ্যটি গুজব হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান পড়ুন এখানে।
সুতরাং, রাষ্ট্রপতির টুঙ্গিপাড়া যাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে হাসপাতালে নিতে না পেরে রাস্তায় নবজাতকের মৃত্যু দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Md Ismail Facebook Post: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=pfbid02A4fLuK3aM8n4beu3bzsjZYB4FVLB4tyRLmgiVd5kFyEExd3WfhTqrdFeQZX97oMel&id=100051231713864&mibextid=Nif5oz
- Contact with deceased child’s father
- Contact with Gopalganj Sadar Health Inspector
- Contact with Gopalganj Sadar Police Station