সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বরাতে কক্সবাজারের খুরুশকুলের বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র দাবি করে একটি তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন- জাগোনিউজ২৪, যুগান্তর, জনকণ্ঠ, নয়াদিগন্ত, ইত্তেফাক, সময় টিভি, আমাদের সময়.কম, বৈশাখী টিভি, ঢাকা ট্রিবিউন, নিউজ২৪, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, পূর্ব-পশ্চিম বিডি, আলোকিত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মোমেন্টস, নয়া শতাব্দী, বাংলা ভিশন, ডেইলি বাংলাদেশ, মানবকণ্ঠ, একুশে সংবাদ, প্রিয়.কম, প্রেস বাংলা এজেন্সি, বাংলাদেশ টুডে.নেট, দৈনিক দেশের কণ্ঠ, চট্টলার খবর, গ্রীন ওয়াচ বিডি, এবিনিউজ২৪বিডি, সিলেটপ্রতিদিন২৪, গণকণ্ঠ।
গণমাধ্যমের ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন- যমুনা টিভি (আর্কাইভ), সময় টিভি (আর্কাইভ)।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
কক্সবাজারের খুরুশকুলের বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প দাবিতে ইতোপূর্বে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন –বাংলা ট্রিবিউন, বাংলা নিউজ২৪, ঢাকা মেইল, দেশ রূপান্তর, ভোরের কাগজ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), সোনালী নিউজ, একুশে টিভি।
শিক্ষক বাতায়নের সরকারি ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখুন কক্সবাজারে হচ্ছে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,কক্সবাজারের খুরুশকুলে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয় ফেনীর মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ২০০৫ সালে। এছাড়া গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্য মতে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার কিলোওয়াট বা ৮৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও যুক্ত হয়েছিল।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল ‘বাংলাদেশেও আছে বায়ুশক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অপার সম্ভাবনা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বায়ুশক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০০৫ সালে ফেনীর মহুরী নদীর তীর ও সোনাগাজী চরাঞ্চল ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ৬ একর জমির উপর স্থাপিত হয় বাংলাদেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
ওয়েবসাইটটি থেকে আরও জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এটি বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে তা পুনরায় চালু হয়। চালু হওয়ার পর ২০১৪ সালে মোট উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২ লাখ ২ হাজার ৪শ ৩৯ ইউনিট। তখন গড় উৎপাদন ছিল ১৬ হাজার ৮৩০ ইউনিট।
এছাড়া প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের অন্য আরেকটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়৷ ২০০৮ সালের পহেলা বৈশাখে এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ৬০০ গ্রাহকের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বিতরণও করা হয়েছিল, যেখানে ছিল ৫০টি টারবাইন। প্রতিটির ক্ষমতা ২০ কিলোওয়াট করে৷
পাশাপাশি অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪.কমের ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ৯ মে ‘লোড শেডিংয়ে ব্যাহত বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: bdnews24
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ফেনীর মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ২০০৫ সালে ছয় একর জমির উপর চালু হয় বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র। ঐ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়৷
পরবর্তীতে ২০০৬ সালের শুরুতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এরপর থেকে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১১ কেভি লাইনে যুক্ত হয় উৎপাদিত বিদ্যুৎ। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর পর দুই বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও ২০০৭ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটি।
একই বিষয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ‘Country’s first big leap in wind energy from December‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সর্বপ্রথম ২০০৫ সালে ফেনীর সোনাগাজি উপজেলায় মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে শূন্য দশমিক ৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে।
পরবর্তীতে তিন বছর পরে ২০০৮ সালে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও একটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। তবে বর্তমানে দুইটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আগ্রহের অভাবে উৎপাদনের বাইরে আছে।
এছাড়া বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরিটিভির ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১০ জুলাই ‘ফের বন্ধ সোনাগাজীর বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাখা না ঘোরা ও চুক্তি নবায়ন না করার অজুহাতে ফের বন্ধ হয়ে গেছে ফেনীর সোনাগাজীতে নির্মিত দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পটির মিটারের তথ্যমতে, প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর থেকে (প্রতিবেদন প্রকাশ) পর্যন্ত এই প্রকল্পে উৎপাদিত ৮ লাখ ৮৮ হাজার কিলোওয়াট বা ৮৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছিল।
এই বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরও প্রতিবেদন দেখুন পিডিবির বোঝা দুই বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র ( শেয়ারবিজ), বায়ু বিদ্যুতে বাংলাদেশের যা অবস্থা ( ডয়েচে ভেলে বাংলা)।
অর্থাৎ, কক্সবাজারের খুরুশকুলে স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের খুরুশকুলে স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র না হলেও এটি দেশের বৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে। ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি স্থাপন করছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
মূলত, সম্প্রতি বেসরকারি উদ্যোগে কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে নির্মাণাধীন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। তবে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বরাতে এটিকে দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়,
কক্সবাজারের খুরুশকুলে স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পূর্বে দেশে আরো অন্তত দুইটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়া এবং সেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার তথ্য খোদ গণমাধ্যম সূত্রেই জানা যায়। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০০৫ সালে ফেনীর সোনাগাজি উপজেলায় মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে চালু করা হয়েছিল। ঐ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার কিলোওয়াট বা ৮৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও যুক্ত হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ফেনীর সোনাগাজি উপজেলায় মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ আছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বরাতে কক্সবাজারের খুরুশকুলে স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Ministry of Power, Energy
- and Mineral Resources: বাংলাদেশেও আছে বায়ুশক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অপার সম্ভাবনা
- bdnews24 (1): লোড শেডিংয়ে ব্যাহত বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন
- bdnews24 (2): বন্ধ আছে দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র
- The Business Standard: Country’s first big leap in wind energy from December
- RTV: ফের বন্ধ সোনাগাজীর বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র
- Sharebiz.net: পিডিবির বোঝা দুই বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র
- DW Bangla: বায়ু বিদ্যুতে বাংলাদেশের যা অবস্থা
- Bonik Barta: দেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে কক্সবাজারে
- Bbarta24.net: কক্সবাজারে বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু