শুক্রবার, অক্টোবর 4, 2024
spot_img

বাজেটে এনআইডি থাকলেই ২ হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রস্তাবের দাবিটি মিথ্যা 

সম্প্রতি ‘যাদের NID আছে তাদের ইনকাম না থাকলেও ২০০০ টাকা কর দিতে হবে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রধারী প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনআইডি নয়, টিআইএন(TIN) ধারীদের মধ্যে যাদের আয় করমুক্ত সীমার নিচে কিন্তু সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন করদাতাদেরও নূন্যতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে গত পহেলা জুন ‘বাজেটে আয়কর সম্পর্কে যা বলা হয়েছে‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: BBC Bangla 

প্রতিবেদনটিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট বক্তৃতাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন সকল করদাতার ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।”

Screenshot: BBC Bangla 

অর্থাৎ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা টিন নাম্বারধারী ব্যক্তি যখন রিটার্ন জমা দিতে যাবে, তখন তাকে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা কর দিতেই হবে। সেক্ষেত্রে তার করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক।

প্রতিবেদনটি থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা সম্পর্কেও তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।

Screenshot: BBC Bangla 

যেমন, উল্লেখিত অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা পুরুষের জন্য করা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ ও নারীদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ টাকা। 

একই বিষয়ে গত ২ জুন জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ‘রিটার্ন জমা দিলেই দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট বক্তৃতাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। এ ধরনের অংশীদারিমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা আছে, এমন করদাতাদের ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।’

অর্থাৎ, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট অনুযায়ী, পুরুষদের ক্ষেত্রে আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ ও নারীদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ টাকা বা এর কম থাকলে তাকে কর দিতে হবে না। কিন্তু ঐ ব্যক্তি যদি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা টিন নাম্বারধারী হয় এবং সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন করদাতা কেউ হয়, তবে তার করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক কমপক্ষে দুই হাজার টাকা কর দিতেই হবে।

পাশাপাশি একইদিনে অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এ ‘রিটার্ন দিলেই ২০০০ টাকা কর কেন, ব্যাখ্যা দিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম নূন্যতম করের বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমি আগে রিকোয়েস্ট করব আপনাদের, কাদের টিআইএন থাকতে হয়, টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের, সিই লিস্টটা যদি সামনে নেন, তাহলে সেখানে দেখবেন টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জন্য, কমিশন এজেন্সির জন্য। টিআইএন বাধ্যতামূলক পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য। সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি, গাড়ির জন্য। 

“আপনি যেটা বললেন, সাধারণ গরিব মানুষের কোনো অসুবিধা হবে কি না, সাধারণ গরিব মানুষেরতো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।”

Screenshot: bdnews24

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমি যে ক্যাটাগরিগুলো বললাম, আপনারা লিস্টে দেখবেন, এই ধরনের ক্যাটাগরিতে যে মানুষগুলো আছে, তাদের জন্য দুই হাজার টাকা বছরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে উন্নয়নের অংশীদার হওয়া, এটি একটি গর্বের বিষয় হওয়ার কথা। বোঝা মনে করার কথা নয়।”  

অর্থাৎ, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি থাকলে বাধ্যতামূলক কর দেওয়া সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব করা হয়নি।

টিআইএন নাম্বার কি? 

এ প্রসঙ্গে অনুসন্ধানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমানের ‘কেন টিআইএন সার্টিফিকেট নেবেন।‘ শীর্ষক একটি পরামর্শ মূলক লেখা থেকে জানা যায়, ‘টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার একটি বিশেষ নম্বর, যা দিয়ে করদাতাকে শনাক্ত করা হয়।’ টিন নাম্বারকে তুলনা করেছেন ঘরের চালে থাকা ঢেউটিনের সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘরের চালে থাকা ঢেউটিনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তাদের কাজ প্রায় একই—সুরক্ষা দেওয়া। টিআইএন করদাতাকে করের সব ঝামেলা থেকে সুরক্ষা করে।’

Screenshot: Daily Prothom Alo 

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে টিআইএন নাম্বারধারীর সংখ্যা প্রায় ৮৮ লাখ। 

মূলত, গত পহেলা জুন আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল টিআইএনধারীদের মধ্যে যাদের আয় করমুক্ত সীমার নিচে কিন্তু সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন করদাতাদেরও নূন্যতম কর ২০০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন। তাঁর এ প্রস্তাবকে ঘিরেই পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয় যে, ‘যাদের NID আছে তাদের ইনকাম না থাকলেও ২০০০ টাকা কর দিতে হবে।’ তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, করের বিষয়টির সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। প্রকৃতপক্ষে এর সঙ্গে টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার সম্পৃক্ত।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাজেট পাশের আগেই করের আওতা বাড়াতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি থাকলেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পক্ষে মত দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

সুতরাং, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রধারী প্রত্যেককে তাদের ইনকাম না থাকলেও দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার নিয়ম চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img