সম্প্রতি, গত ২৬ এপ্রিল দেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতির গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে ভিআইপি প্রোটোকলের কারণে একজন নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে ফেইসবুকে আক্ষেপ জানানোই পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ইসমাঈল নামে উচ্চ মাধ্যমিকের এক শিক্ষার্থীর একমাস কারাগারে থাকার দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন –এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে, (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৬ এপ্রিল দেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতির গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে ভিআইপি প্রোটোকলের কারণে একজন নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে ফেসবুকে লাইভ কারণে ইসমাঈল নামে উচ্চ মাধ্যমিকের এক শিক্ষার্থীর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে থাকার তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ইসমাঈলের লাইভে দেখানো শিশুটি রাষ্ট্রপতির আগমনে ভিআইপি প্রোটোকলের কারণে মারা যায়নি, শিশুটি এর আগেই হাসপাতালে মারা যায় এবং মৃত শিশুটিকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় ইসমাঈল লাইভে এসে উপরিউক্ত দাবিতে প্রচার করেছিল।
বিষয়টির সত্যতা প্রসঙ্গে উক্ত ঘটনার ভিডিও ধারণকারী মো: ইছমাইলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট Md Ismail এ গত ২৮ এপ্রিল রাত ১২ টা ৫৩ মিনিটে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আসসালামুয়ালাইকুম। আমি গত ২৬/০৪/২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ১০ ঘটিকায় গোপালগঞ্জ শহর হতে আমার বাড়ি চন্দ্রদিঘলিয়া যাওয়ার পথে চন্দ্র দিঘলিয়া বাজারে রাস্তার উপর পৌছালে একটি অটো রিক্সায় একজন মহিলার কোলে নবজাতক শিশুর মৃতদেহ দেখে আমি তাৎক্ষণিক একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করি। পরবর্তীতে জানতে পারি উক্ত নবজাতক শিশুটি গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।আমি ভুলবশত না জেনে ফেসবুকে উক্ত পোস্টটি আপলোড করি। আমি যাচাই বাছাই না করে সঠিক তথ্য না জেনে উক্ত পোস্টটি করায় সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।’
এই পোস্টটির সঙ্গে তিনি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের একটি রোগী ভর্তির ফরম ও রোগ বৃত্তান্ত ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতার দুইটি ছবিও যুক্ত করেন।

ফরমটির ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিশুটিকে গত ২৫ এপ্রিল সকাল ৮ টা ৩৭ মিনিটে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউ ব্রন ইউনিটে (স্ক্যানো) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ফরমটিতে শিশুটিকে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভর্তি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
একই ফরমের নিচে গত ২৬ এপ্রিল কবিতা নামে একজনের স্বাক্ষরে ‘মৃতদেহ সহ মৃত্যুর প্রমাণপত্র বুঝিয়া পাইলাম’ শীর্ষক একটি স্বীকারোক্তিও খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, শিশুটি গত ২৬ এপ্রিল হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করে।
এছাড়া শিশুটির পিতা তারিকুল শেখও শিশুটির মৃত্যু হাসপাতালেই হয়েছিল নিশ্চিত করে সেই সময় রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘আমার বাচ্চা হাসপাতালেই মারা গেছে। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার পথে পুলিশ পথে গাড়ি আটকিয়েছিল। পরে আমি সেখানে উপস্থিত পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতার সাথে কথা বললে আমাদের গাড়ি ছেড়ে দিতেও বলেছিলেন উনি।’
পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাসুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, মো: ইছমাইলকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নামে অপপ্রচার চালানোয় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
মূলত, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঐ সময় সে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে একটি মৃত শিশুর ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হয় যে, ‘রাষ্ট্রপতির টুঙ্গিপাড়াযাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে নবজাতকের মৃত্যু’ হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, শিশুটি পূর্বেই হাসপাতালে মারা যায় এবং মৃত শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময়ের ভিডিও ধারণ করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ঘটনাকে রাষ্ট্রপতির টুঙ্গিপাড়াযাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে নবজাতকের মৃত্যু’ শীর্ষক দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে বিষয়টি মিথ্যা হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের বিস্তারিত অনুসন্ধান পড়ুন ‘রাষ্ট্রপতির আগমনে রাস্তা বন্ধ থাকায় গোপালগঞ্জে শিশু মৃত্যুর দাবিটি মিথ্যা।’