সম্প্রতি, চোখের পলকে ব্রিজ তৈরী করে দেখালো রাশিয়া শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি রাশিয়ার নয় এবং এটি ব্রিজ তৈরির কোনো দৃশ্যও নয় বরং পশ্চিম জার্মানির একটি মোটরওয়ে সেতু ভেঙে ফেলার ভিডিও রিভার্স করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে HD1080ide নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ মে “The Fastest Way to Build a Bridge” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে আসল ভিডিওটি সম্পর্কে জানা যায়।
Screenshot: Youtube
পরবর্তীতে একই ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৮ মে প্রকাশিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, গত ০৭ মে পশ্চিম জার্মানির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার লুডেনশিডে অবস্থিত রহমেদ ভ্যালি নামক একটি মোটরওয়ে সেতু নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ থাকার পর ভেঙে ফেলা হয়।
ফ্রান্স ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা Euronews এর এক সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০৭ মে পশ্চিম জার্মানির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার লুডেনশিডতে অবস্থিত রহমেদ ভ্যালি নামের সেতুটি দীর্ঘ ১৭ মাস নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ থাকার পর ভেঙে ফেলা হয়। ব্রিজটির ওজন ছিলো ১৭ হাজার টন, ৭০ মিটার উঁচু এবং ৪৫৩ মিটার লম্বা। ব্রিজটিকে ভাঙ্গার জন্য প্রায় ১৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক দরকার হয়েছিল। ১৯৬৫-১৯৬৮ সালে রহমেদ উপত্যকার উপর মোটরওয়ে ব্রিজটি নির্মিত হয়েছিল।
মূলত, গত ০৭ মে পশ্চিম জার্মানির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার লুডেনশিডতে অবস্থিত রহমেদ ভ্যালি নামের একটি সেতু নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ থাকার পর ভেঙে ফেলা হয়। সেতুটি ভাঙ্গার জন্য কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ব্যবহার করে। সেতুটি ভাঙ্গনের ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় রিভার্স করে “রাশিয়া চোখের পলকে ব্রিজ তৈরী করে দেখালো” দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যা সঠিক নয়।
সুতরাং, জার্মানীতে একটি সেতু ভাঙার ভিডিওকে রিভার্স করে রাশিয়ায় ব্রিজ তৈরির দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে, যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু হাসিনার ফাঁদে পা দিলো– শীর্ষক শিরোনামে এবং গ্রেফতার জিএম কাদের ও চুন্নু জাতীয় পার্টির গোপন তথ্য ফাঁস– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে গ্রেফতার করা হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও।
ভিডিও যাচাই- ১
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে চ্যানেল আই এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ ডিসেম্বর “বরিশালে বিএনপির সমাবেশে পুলিশের বাধা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটি আলোচিত ভিডিওটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
চ্যানেল আই এর ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বরিশালে বিএনপির সমাবেশে পুলিশের বাধা দেওয়ার দৃশ্য এটি। এছাড়া আলোচিত ভিডিওটিতে উক্ত ভিডিওটির সাথে ভিন্ন অডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও যাচাই- ২
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেশ রূপান্তর এর ফেসবুক পেজে গত ১৮ ডিসেম্বর “মহাসচিবের বক্তব্য শেষ না হতেই ক্ষেপে গেলেন জাপা নেতা” শীর্ষক শিরোনামে একটি একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তি এবং ব্যক্তির দেওয়া বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। পরবর্তীতে দলটির এক নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে এ-সব কথা বলেন।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও যাচাই- ৩
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেশ রূপান্তর এর ফেসবুক পেজে গত ১৮ ডিসেম্বর “২৬ জনকে এমপি বানাতে জাতীয় পার্টি সৃষ্টি হয়নি” শীর্ষক শিরোনামে একটি একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তি এবং ব্যক্তির দেওয়া বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এই বক্তব্যটিও গত ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়ার কথা জানানোর পর দলটির এক নেতার প্রতিক্রিয়ার।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও যাচাই- ৪
ভিডিওটির এই অংশে লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমানকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। উক্ত সূত্র ধরে জাহেদ উর রহমানের নামে পরিচালিত ইউটিউব চ্যানেল Zahed’s Talk এ গত ১৮ ডিসেম্বর “জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, জাহেদ উর রহমান জাতীয় পার্টির নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে নানা মতামত ব্যক্ত করেন। তবে তিনি দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গ্রেফতার হওয়া সংক্রান্ত কোনো কথা বলেননি।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও যাচাই- ৫
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং দেশের বেসরকারি টেলিভিশন দেশ টিভি’র লোগোও দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেশ টিভি’র ফেসবুক পেজে গত ১৮ ডিসেম্বর “সমঝোতার কারণে মৃত্যুশয্যায় চলে গেলো জাতীয় পার্টি” শীর্ষক শিরোনামে একটি একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তি এবং ব্যক্তির দেওয়া বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এই বক্তব্যটিও গত ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা দলটির মহাসচিব জানানোর পর এক নেতার দেওয়া বক্তব্য।
Video Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তীতে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গ্রেফতার হয়েছেন কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল নানা কৌতূহল। গত ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে বলে জানান। তবে দলটির নেতা-কর্মীদের একাংশ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্য প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি দেশের প্রধান দুই শত্রুর একজন হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করেছেন।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ওবায়দুল কাদেরের সদৃশ কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, আজকে দেশের প্রধান দুই শত্রু। এক শত্রু শেখ হাসিনা আরেক শত্রু ডেঙ্গু।
এই ভিডিও সম্বলিত একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, গত ০৬ নভেম্বর রাকিব ইসলাম নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এই ভিডিওটি প্রকাশের পর এখন অবধি প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন। একই সময়ে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন প্রায় ১৯০০ মানুষ, রিয়েক্ট পড়েছে ১২ হাজারের অধিক।
একই ভিডিও টিকটকে প্রায় চার লাখ ২০ হাজারের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টেচক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবির ভিডিওর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের প্রধান দুই শত্রুর একজন দাবি করে মন্তব্য করেননি বরং তিনি বলেছেন, দেশের প্রধান দুই শত্রু বিএনপি ও ডেঙ্গু। মূল ভিডিওর অডিওটি সম্পাদিত করে উক্ত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভাইরাল ভিডিওতে সময় টিভির লোগো থাকার প্রেক্ষিতে ফেসবুকে সময় টিভির অফিশিয়াল পেজে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়৷ গত ০৯ আগস্ট প্রকাশিত ডেঙ্গুর মতোই ভয়ংকর বিএনপি থেকে সাবধান: ওবায়দুল কাদের শীর্ষক শিরোনামের ভিডিওটিতে ওবায়দুল কাদেরকে বলতে শোনা যায় (১৪ সেকেন্ড সময় থেকে), “আজকে দেশের প্রধান দুই শত্রু। এক শত্রু হচ্ছে বিএনপি আরেক শত্রু হচ্ছে ডেঙ্গু।”
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যে দেশের শত্রু হিসেবে শেখ হাসিনার নাম নয়, উল্লেখ ছিল বিএনপির নাম।
জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় রবীন্দ্র সরোবরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের আলোচিত মন্তব্যটি করেন।
Screenshot: The Daily Star
সেসময় এ বিষয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। দেখুন যুগান্তর, বাংলানিউজ২৪।
মূলত, গত ১৯ আগস্ট ঢাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেন, “আজকে দেশের প্রধান দুই শত্রু। এক শত্রু হচ্ছে বিএনপি আরেক শত্রু হচ্ছে ডেঙ্গু।” সম্প্রতি তার এই বক্তব্যকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে সম্প্রতি প্রচার করা হচ্ছে, তিনি দেশের প্রধান দুই শত্রুর একজন হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং, বিএনপি ও ডেঙ্গুকে দেশের প্রধান শত্রু উল্লেখ করে দেওয়া ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যকে সম্পাদনা করে তিনি শেখ হাসিনাকে দেশের প্রধান দুই শত্রুর একজন বলে সম্বোধন করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা এডিটেড বা বিকৃত।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান সহ ৫১ জনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই- ১
আলোচিত ভিডিওটিতে একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Dr. Fayzul Haq নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ জুন “৫১ জনের ভিসা বাতিল! টাকা নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে! কোথাও যায়গা নেই। শেষ ঠিকানা বাংলাদেশ।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ড. ফয়জুল হক নামের ওই ব্যক্তি “সাপ্তাহিক আজকাল” নামক একটি অনলাইন পোর্টালে গত ৩ জুন “মার্কিন ভিসা বাতিল ৫১ বাংলাদেশির!” শীর্ষক শিরোনামে একটি একটি প্রতিবেদন পাঠ করতে শোনা যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ৫১ জন বাংলাদেশির ভিসা বাতিল করেছে। এ কার্যক্রম গত তিন মাসের। যাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও শিল্পী।
তবে, প্রতিবেদনটিতে গ্রহণযোগ্য কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
ভিডিও যাচাই- ২
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে একই ব্যক্তিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে DR. FAYZUL’S VOICE নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ মে “শামীম ওসমানকে ভিসা দেয়নি আমেরিকা! খেলা শুরু।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ড. ফয়জুল হক নামের একজন কোনো তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ না করে নিজের মনগড়া কথা বলছেন।
Video Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তীতে, শামীম ওসমান সহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সামাজিক মাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে শামীম ওসমান সহ ৫১ জনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো তথ্য যায়নি।
এছাড়া, ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটেও এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘শামীম ওসমান সহ ৫১ জনকে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেনা। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি সংবাদের থাম্বনেইল যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, পূর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তিকে জড়িয়ে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার গুজব প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন– এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৫১ জনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী রাস্তার পাশে পোস্টার লাগাচ্ছেন, এমন একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। পোস্টারটিতে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছবি রয়েছে এবং পাশে লেখা রয়েছে, খালেদা জিয়া’র ফাঁসি চাই।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নিপুণ রায় চৌধুরী খালেদা জিয়া’র ফাঁসি চাই শীর্ষক কোনো পোস্টার রাস্তায় লাগাননি বরং খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই শীর্ষক ২০১৯ সালের একটি পোস্টারে উক্ত দাবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে বসিয়ে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০১৯ সালের ০৯ সেপ্টেম্বর মো: জাকির হোসেন যুবদল (Md Jakir Hosan Jubodol) নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে আলোচিত ছবি সদৃশ বেশকিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
জনাব জাকির তার পোস্টে লিখেছেন, সেদিন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে নিজ হাতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্বলিত পোস্টার লাগান।
Screenshot: Facebook
এই পোস্টে উক্ত দাবির মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। এখানে যে পোস্টারটি রয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে, খালেদা জিয়া’র মুক্তি চাই।
Image comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, এই ছবিটিই এডিট করে উক্ত দাবি প্রচার করা হয়েছে।
একইদিন নিপুণ রায়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি পোস্ট করা হয়৷ তবে আলোচিত ছবিটি ছিল না এখানে।
মূলত, ২০১৯ সালে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবি সম্বলিত কিছু পোস্টার লাগান কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে। সম্প্রতি উক্ত ঘটনার একটি ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে খালেদা জিয়া’র মুক্তি চাই শীর্ষক লাইনের স্থলে খালেদা জিয়া’র ফাঁসি চাই শীর্ষক লাইন বসিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, একই ছবিটি সম্প্রতি ভিন্ন দাবিতেও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, খালেদা জিয়া’র মুক্তি চাই শীর্ষক পোস্টারের স্থলে বিশ্ব বাটপার শীর্ষক একটি পোস্টার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও ইন্টারনেটে নিপুণ রায়ের বিষয়ে একাধিক ভুল তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই শীর্ষক ২০১৯ সালের একটি পোস্টারে খালেদা জিয়া’র ফাঁসি চাই শীর্ষক দাবি যুক্ত করে সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা এডিটেড বা বিকৃত।
‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে ঠিকই তো আছে’ শীর্ষক শিরোনামে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর ঘটনায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে সমর্থন করে কোনো বক্তব্য দেননি বরং টাঙ্গাইলে এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে আলাপকালে আক্ষেপের সুরে দেওয়া শামীম ওসমানের দীর্ঘ বক্তব্যের একটি খণ্ডিত অংশ আলোচিত দাবিতে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত স্থিরচিত্র রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ‘ATV Bangla News’ এর ফেসবুক পেইজে গত ২১ আগষ্ট তারিখে ‘নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান টাংগাইল এসে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে গরম বক্তব্য দিলেন’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে গত ২২ আগষ্ট তারিখে একই শিরোনামে ‘NK Cable Vision HD’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও দুইটির বিবরণী থেকে জানা যায়, চলতি বছরের আগষ্ট মাসে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রধান অতিথি হয়ে টাঙ্গাইলে এক সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে শামীম ওসমান বলেন, “বলা হলো শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে, হত্যা করাই তো উচিৎ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, ঠিকই তো করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে না তো কাকে হত্যা করবে। বংশ নির্বংশ করে দিয়েছে, এই বাঙ্গালীরাই করেছে। পাকিস্তানের বাহিনী করে নাই কিন্তু। আমরা অকৃতজ্ঞ বাঙ্গালী জাতিরাই করেছি। এই লোকটি সারা জীবন সংগ্রাম করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে আমরা তাকেই স্বপরিবারে হত্যা করেছি।”
তাছাড়া, আলোচিত সমাবেশের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চে গত ২১ আগস্ট তারিখে দৈনিক বাংলার ওয়েবসাইটে ‘বিএনপি শুধু বান্দরের নাচ নাচতে পারবে: শামীম ওসমান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ২১ আগষ্ট টাঙ্গাইল পৌর উদ্যানে টাঙ্গাইল শহর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান সেখানে প্রধান অতিথির ভূমিকায় বক্তব্য প্রদান করেন।
অর্থাৎ, শামীম ওসমান তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকে সমর্থন করে কোনো কথা বলেননি।
মূলত, গত ২১ আগষ্ট টাঙ্গাইলে ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার শহীদদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। বক্তব্য প্রদানের একপর্যায়ে শামীম ওসমান বলেন, “বলা হলো শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে, হত্যা করাই তো উচিৎ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, ঠিকই তো করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে না তো কাকে হত্যা করবে। বংশ নির্বংশ করে দিয়েছে, এই বাঙ্গালীরাই করেছে। পাকিস্তানের বাহিনী করে নাই কিন্তু। আমরা অকৃতজ্ঞ বাঙ্গালী জাতিরাই করেছি। এই লোকটি সারা জীবন সংগ্রাম করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে আমরা তাকেই স্বপরিবারে হত্যা করেছি”। তবে, শামীম ওসমানের সেই বক্তব্য থেকে সম্প্রতি কিছু অংশ কেটে ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে ঠিকই তো আছে’ শীর্ষক অংশটুকু প্রচার করে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ইন্টারনেটে বিকৃতভাবে প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে ঠিকই তো আছে’ শীর্ষক শিরোনামে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের বক্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি বিকৃত।
সম্প্রতি, ‘তারেককে কল দিয়ে ক্ষমা চাইলেন সিইসি নির্বাচন বর্জন করে গ্রেফতার জিএম কাদের’ শীর্ষক শীর্ষক থাম্বনেইল এবং একই তথ্য সম্বলিত শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফোন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের ক্ষমা চাওয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও জিএম কাদের-এর নির্বাচন বর্জন করা কিংবা এজন্যে তাকে গ্রেফতার করার মতও কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিওর অডিও যুক্তের মাধ্যমে একটি ভুয়া কল রেকর্ড তৈরি করে তার সাথে অপ্রাসঙ্গিক কিছু ভিডিও যুক্ত করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির শুরুতে তারেক রহমান ও সিইসি হাবিবুল আউয়ালের কল রেকর্ড দাবিতে একটি অডিও শোনানো হয়। যাতে একজনকে বলতে শোনা যায়, “আমাকে ক্ষমা করবেন ওই জন্যে; ক্ষমা করবেন। আপনাকে আমি বলে দিচ্ছি নির্বাচন হবে না।” এরপর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল Channel 24 এবং Desh Tv এর দুটি ভিডিও এবং সর্বপরি স্যুট পরিহিত একজন ব্যক্তির ভিডিও দর্শকদের উদ্দেশ্যে দেখানো হয়। উক্ত স্যুট পরিহিত ব্যক্তির ভিডিওটি আলোচিত ভিডিওর একদম শেষ পর্যন্ত দর্শকদের দেখানো হয়। রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে আলোচিত ভিডিওটির একদম শুরুর কল রেকর্ডটি ব্যতীত উক্ত ভিডিওতে এর থাম্বনেইল ও শিরোনামের দাবির সপক্ষে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অডিও যাচাই
আলোচিত ভিডিওতে তারেক রহমান ও সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের কল রেকর্ড দাবিতে উপস্থাপিত অডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Face The People নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ নভেম্বর আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি নির্বাচন হবে না! আপনি প্রকাশ করেন: মেজর আবু বকর সিদ্দিকী শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর শুরুর অংশে অবসর প্রাপ্ত মেজর সিদ্দিকী নামের একজন ব্যক্তিকে “আপনাকে আমি বলে দিচ্ছি নির্বাচন হবে না।” শীর্ষক বক্তব্য দিতে শোনা যায়। যার সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে কল রেকর্ড দাবিতে উপস্থাপিত অডিওটির “আপনাকে আমি বলে দিচ্ছি নির্বাচন হবে না।” শীর্ষক অংশের হুবহু মিল রয়েছে।
এছাড়াও জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি মূলত Face The People নামের ইউটিউব চ্যানেলটি আয়োজিত একটি অনলাইন টকশোর ভিডিও। যেখানে অবসর প্রাপ্ত মেজর সিদ্দিকীসহ সৈয়দ মামুন মাহবুব নামের একজন ব্যক্তি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিও যাচাই ১
আলোচিত ভিডিওটিতে চ্যানেল ২৪ এর একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়। ভিডিওতে দেখানো উক্ত মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদনের শিরোনাম ও চ্যানেলটির লোগোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন | Channel 24 শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত প্রতিবেদনের সাথে উক্ত প্রতিবেদনের হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
তবে উক্ত প্রতিবেদনে জাতীয় পার্টির আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা কিংবা বর্জন করার কারণে জিএম কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে শীর্ষক কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি।করা হয়নি। প্রতিবেদনটি মূলত সেসময় জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দলীয় নেতাকর্মীদের করা মানববন্ধনকে নিয়ে।
ভিডিও যাচাই ২
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওতে বেশকয়েকজন ব্যক্তির গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দেওয়া দুটি ভিডিও দেখানো হয়। যার প্রথমটি না পাওয়া গেলেও দ্বিতীয়টির বাম পাশের উপরের DESH TV লেখাটির সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল DESH TV News এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৭ ডিসেম্বর ‘সমঝোতার কারণে মৃত্যুশয্যায় চলে গেলো জাতীয় পার্টি’ | Jatiya Party | Election 2024 | Desh TV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে এই ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
তবে উক্ত ভিডিওটিতেও জিএম কাদেরের গ্রেফতার হওয়া কিংবা তারেক রহমানকে সিইসির ফোন করে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভিডিও যাচাই ৩
আলোচিত ভিডিওটির উপস্থাপক সবার শেষে দর্শকদের উদ্দেশ্যে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির বক্তব্যের একটি ভিডিও দেখান। পরবর্তীতে তার নামের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেল Golam Maula Rony তে গত ১৮ ডিসেম্বর জিএম কাদের বনাম এরশাদের পল্টিবাজির রাজনীতি ! আ.লীগকে কে বেশি নাকানি চুবানি দিলো ! শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে উক্ত ভিডিওর বেশকিছু অংশের হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
কিন্তু উক্ত ১৪ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা যায় এটিতেও জিএম কাদেরের নির্বাচন বর্জন করা ও এর কারণে তাকে গ্রেফতার করার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এছাড়াও ভিডিওটির কোথাও তারেক রহমানকে সিইসির ফোন করে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারেও কোনো আলাপ করা হয়নি।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে তারেক রহমানকে সিইসির ফোন করে ক্ষমা চাওয়া ও নির্বাচন বর্জন করার জন্যে জিএম কাদেরকে গ্রেফতার করার বিষয়ে গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২৩ নভেম্বর Face The People নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের একটি অনলাইন টকশোতে আবু বকর সিদ্দিকী নামের একজন অবসর প্রাপ্ত মেজর “আপনাকে আমি বলে দিচ্ছি নির্বাচন হবে না।” শীর্ষক একটি মন্তব্য করেন। উক্ত মন্তব্যের অডিওর সাথে ভিন্ন কয়েকটি অডিও যুক্ত করে তারেক রহমানের সাথে সিইসি হাবিবুল আউয়ালের কল রেকর্ড দাবিতে ভুয়া একটি অডিও তৈরি করা হয়। এর সাথে বিএনপির নেতা গোলাম মাওলা রনি-র একটি ভিডিও ও কয়েকটি গণমাধ্যমের মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদন ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে যুক্ত করে অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়।
সুতরাং, তারেক রহমানকে ফোনকে সিইসির ক্ষমা চাওয়া এবং নির্বাচন বর্জন করায় জিএম কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইসলাম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
খবরগুলোয় দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মেলোনি গত ১৭ ডিসেম্বর তার দলের দলের পক্ষ থেকে রোমে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, ইসলামি সংস্কৃতি ইউরোপীয় সভ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলামি সংস্কৃতি এবং ইউরোপীয় সভ্যতার মূল্যবোধ ও অধিকারের একটি ‘সামঞ্জস্যতা সমস্যা’ রয়েছে। ইতালিতে শরিয়া আইন প্রয়োগ করতে দেবেন না তিনি।
কতিপয় গণমাধ্যমে এমনও দাবি করা হয়েছে যে, বেশ আগে ধারণ করা সেই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে মেলোনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভিডিওর বক্তব্যটি আমার এবং আমি এখনও মনে করি যে ইসলামি সংস্কৃতি বা এই সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যাখ্যা এবং ইসলামে স্বীকৃত অধিকার ও মূল্যবোধের সঙ্গে আমাদের সভ্যতার সামঞ্জস্যগত সমস্যা রয়েছে।’
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জর্জিয়া মেলোনি ইসলাম নিয়ে সম্প্রতি কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি বরং ২০১৮ সালে তার এ সংক্রান্ত একটি বক্তব্যের ভিডিও প্রচার করে উক্ত দাবিটি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে গত ১৭ ডিসেম্বর রোমে আয়োজিত Atreju নামক সরকারি দলের আলোচিত অনুষ্ঠানের বিষয়ে ইতালির সংবাদমাধ্যম Rai News এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী মেলোনির বিস্তারিত বক্তব্যে ইসলাম বিষয়ে কোনো মন্তব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
আমরা ইতালির আরো কিছু সংবাদমাধ্যমে (১, ২, ৩) একই অনুষ্ঠানে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে উল্লেখ পেলেও তাকে ইসলাম বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। মেলোনির সেদিনের বক্তব্যের পুরো লাইভ দেখুন এখানে।
তাছাড়া, ইতালির প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত জর্জিয়া মেলোনির সাম্প্রতিক সময়ে অংশ নেওয়া অনুষ্ঠানগুলোর প্রেস রিলিজ বিশ্লেষণ করেও ইসলাম সম্পর্কে তার কোনো বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে তথ্য মেলেনি।
পরদিন সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) তিনি তার ইসলাম নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন এমন দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে ইতালির গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ না পেলেও মেলোনির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে সেদিন প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়৷ তবে এই পোস্টে ইসলাম বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
আমরা পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে ইতালির ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টা ডট নিউজের (Facta.news) ফ্যাক্টচেকার ফ্রান্সেসকা কাপোচ্চিয়ার (Francesca Capoccia) সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মেলোনি সাম্প্রতিক সময়ে ইসলাম নিয়ে উক্ত মন্তব্য করেননি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে ইতালির আরেক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান পেজেল্লা পলিটিকার (Pagella Politica) এডিটোরিয়াল ম্যানেজার কার্লো কানেপার (Carlo Canepa) সাথেও কথা বলেছি আমরা। তিনি বলছিলেন, মেলোনি ২০১৮ সালে এমন একটি মন্তব্য করেছিলেন। সে বছরের ০৮ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (০১:৫৯ মিনিট সময় থেকে) বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে ইসলামী সংস্কৃতি বা এর কিছু ব্যাখ্যা এবং আমাদের সভ্যতার অধিকার ও মূল্যবোধের মধ্যে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সমস্যা রয়েছে। আমি অবগত যে ইতালির অধিকাংশ ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সৌদি আরব থেকে অর্থায়ন পায়, যারা এমন একটি দেশ যেটি দেশীয়ভাবে শরিয়া আইন প্রয়োগ করে। শরিয়া ব্যভিচারের জন্য পাথর মারা, ধর্মত্যাগের জন্য মৃত্যুদণ্ড এবং সমকামিতার জন্য মৃত্যুদণ্ডকে বোঝায়। এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। এর অর্থ ইসলাম সম্পর্কে সাধারণীকরণ নয় বরং ইউরোপে ইসলামিকরণের একটি প্রক্রিয়াকে স্বীকার করা যা আমাদের সভ্যতার মূল্যবোধ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বিচ্ছিন্ন।
কার্লো কানেপা আমাদের বলছিলেন, মেলোনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বে ইসলাম সম্পর্কে প্রায়ই সমালোচনামূলক মতামত প্রকাশ করতেন। ২০১৬ এবং ২০২১ সালেও দুইবার এমন মন্তব্য করে সমালোচনায় পড়েছিলেন তিনি৷
তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, ইসলাম সম্পর্কে তার সমালোচনামূলক মন্তব্য করা কমেছে বলে ধারণা কানেপার। উল্টো ইসলামের পক্ষেই তাকে অবস্থান করতে দেখেছেন তিনি। কানেপা জানালেন, গত ২৫ অক্টোবর এক সংসদীয় বক্তৃতায় মেলোনি ইসরায়েলের উপর হামাসের আক্রমণ এবং ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছিলেন।
মূলত, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এক বক্তব্যে বলেন, ইসলামি সংস্কৃতি এবং ইউরোপীয় সভ্যতার মূল্যবোধ ও অধিকারের একটি ‘সামঞ্জস্যতা সমস্যা’ রয়েছে। ইতালিতে শরিয়া আইন প্রয়োগ করতে দেবেন না তিনি। তার এই বক্তব্যকে সাম্প্রতিক দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জর্জিয়া মেলোনি ২০২২ সালের অক্টোবরে ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
সুতরাং, ২০১৮ সালে ইতালির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ইসলাম নিয়ে করা বিরূপ মন্তব্যের একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ক্ষমা চাইলো রাষ্ট্রপতি ও সিইসি, যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি ও সিইসি ক্ষমা চায়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে নির্বাচনও বন্ধ হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও। এছাড়া, ভিডিওটিতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকেও বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
ভিডিও যাচাই- ১
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে MANCHITRO নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহে খোদ সিইসির” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটিতে মঞ্জুরুল আলম পান্না নামের একজনকে বক্তব্য দিতে শোনা যায়। ৬ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে তিনি গণমাধ্যমে প্রচারিত কয়েকটি সংবাদ নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও যাচাই- ২
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এছাড়া, ভিডিওটিতে বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভি’র লোগো লক্ষ্য করা যায়।
সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে “সুপ্রীম কোর্ট দিবস অনুষ্ঠানে যে কারণে ক্ষমা চাইলেন রাষ্ট্রপতি!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৮ ডিসেম্বর “সুপ্রীম কোর্ট দিবস” অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও এটি।
Video Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা খণ্ডিত ভিডিওগুলো মূলত ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার।
এছাড়া, আলোচিত দাবিগুলো যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ক্ষমা চাইলো রাষ্ট্রপতি ও সিইসি, যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রতীকও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং, রাষ্ট্রপতি ও সিইসির ক্ষমা চাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, মেট্রোরেলের দরজায় শাড়ি আটকে প্রাণ হারালেন এক নারী- শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ বাংলাদেশের দাবিতে দেশীয় গণমাধ্যম “দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস” এর একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মেট্রোরেলের দরজায় শাড়ি আটকে এক নারী নিহতের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর সূত্র ধরে ফেসবুকে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর ফেসবুক পেজে আলোচিত ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া (আর্কাইভ) যায়।
Screenshot: The Bangladesh Moments Facebook Page
উক্ত গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে ফটোকার্ড নিয়ে প্রচারিত পোস্টের কমেন্টে এসম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতে মেট্রো ট্রেনের দরজায় শাড়ি আটকে মেট্রোর নিচে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক নারী। প্রথমে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও পরে মারা যান ওই নারী।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটেছে দেশটির রাজধানী দিল্লির ইন্দরলোক স্টেশনে।
এছাড়া একই বিষয়ে শিরোনামে ভারতের কথা উল্লেখ না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আরও কিছু গণমাধ্যম। প্রতিবেদন দেখুন-
প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করায় বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন না পড়েই তারা বিষয়টিকে বাংলাদেশের মনে করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেট্রোরেলের দরজায় শাড়ি আটকে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ৩৫ বছর বয়সী ওই নারীকে প্রায় ২৫ মিটার টেনে নিয়ে যায় ট্রেনটি। এ সময় ট্র্যাক অ্যাক্সেস গেটের সঙ্গে তার মাথা সজোরে ধাক্কা লাগে। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এ ঘটনা ঘটে। দুইদিন পর শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুরুত্বর আহত ওই নারীর মৃত্যু হয়।
অর্থাৎ, মেট্রোরেলের দরজায় শাড়ি আটকে এক নারী নিহতের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তবে এসম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম না উল্লেখ করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।
মূলত, সম্প্রতি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মেট্রোরেলের দরজায় শাড়ি আটকে এক নারী নিহতের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন দুটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, মেট্রোরেলের দরজায় শাড়ি আটকে এক নারী নিহতের ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।