জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ উদ্ধারে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সাবমেরিন পাঠায়নি

২৩ জন নাবিকসহ বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। জলদস্যুদের হাত থেকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি ২৩ নাবিকসহ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে। এরই মধ্যে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে “এইমাত্র পাওয়ার খবর আরো দুইটি সাবমেরিন নিয়ে রওয়ানা হয়েছে বাংলাদেশের নৌবাহিনী সোমালিয়ার উদ্দেশ্যে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

জলদস্যুদের

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ২ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ১৪ হাজার ৩ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং শেয়ার করা হয়েছে ১২৬ বার। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে বাংলাদেশ থেকে কোনো সাবমেরিন রওনা হয়নি বরং ২০২৩ সালে সময় টিভিতে প্রচারিত ভিন্ন ঘটনার পুরোনো একটি ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে সময় টিভি’র একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত লোগোর সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড  সার্চের মাধ্যমে সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩  সালের ২০ মার্চ “স্বাধীনতার মাসে আরও একটি অর্জন বাংলাদেশের সামরিক খাতে। Sheikh Hasina Submarine। Somoy TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner 

সময় টিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি দেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি স্থাপনের সময়কার। কক্সবাজারের পেকুয়ায় নবনির্মিত এই ঘাঁটির কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’ নামক দুটি আধুনিক সাবমেরিনের কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী। 

অর্থাৎ, সময় টিভি’র প্রচারিত ভিন্ন ঘটনার পুরোনো একটি ভিডিওকেই এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে রাশিয়া দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

পরবর্তীতে জাহাজ উদ্ধারের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে অনুসন্ধানে সময় টিভির ওয়েবসাইটে আজ (১৯ মার্চ) “জিম্মি জাহাজে অভিযানের বিষয়ে জানে না মালিকপক্ষ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ উদ্ধারের অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে সোমালিয়ার পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সম্মিলিত দল। তবে জাহাজটির মালিকপক্ষ এ ধরনের অভিযানের বিষয়ে কিছু জানেননা বলে দাবি করেছেন। 

মূলত, গত ১২ মার্চ মোজম্বিকের রাজধানী মাপুটো থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অপহরণ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরই মাঝে উক্ত ঘটনায় “এইমাত্র পাওয়ার খবর আরো দুইটি সাবমেরিন নিয়ে রওয়ানা হয়েছে বাংলাদেশের নৌবাহিনী সোমালিয়ার উদ্দেশ্যে” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে, সোমালিয়ার জলদস্যুদের ছিনতাইকৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কোনো সাবমেরিন পাঠায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালে দেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি স্থাপনের সময়কার সময় টিভিতে প্রচারিত একটি ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন পাঠানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img