Home Blog Page 533

বৃষ্টিতে গাজায় দুই শিশুর ঘুমিয়ে থাকার এই ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

0

গেল বছরের (২০২৩) ০৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলা কেন্দ্র করে শুরু হয় ইসরায়েল-হামাস সংঘাত যা এখনও চলছে। গত ২৬ জানুয়ারি গাজায় ভারী বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয়েছে আশ্রয় শিবির। এর প্রেক্ষিতে একটি ছবি নেটিজেনরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ও পেজে শেয়ার করছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে দুইজন শিশু একটি তাঁবুর সামনের কর্দমাক্ত স্থানে ঘুমিয়ে আছে। 

এই ছবি পোস্ট করে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ছবিটা কোনো শিল্পীর আকাঁ নয়। এই তীব্র শীতে আমাদের দুনিয়ারই আরেক প্রান্তে থাকা আরেক নগরী গাজার ছবি এটি।

দুই শিশুর

কিছু পোস্টের ক্যাপশনে এই ছবিটির বিষয়ে লেখা রয়েছে, “গাজায় এই কনকনে শীতে মুষলধারে বৃষ্টি জড়োসড়ো হয়ে পিতামাতা হারা এতিম মাসুম দুই শিশু কি অবস্থায় ঘুমাচ্ছে।”

উক্ত ছবিকে বাস্তব দাবি করে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃষ্টিতে গাজায় দুই শিশুর ঘুমিয়ে থাকার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয় বরং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবিটিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফিলিস্তিনিদের ফটো সাংবাদিক মোহাম্মদ আল মাশরির ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

জনাব মাশরি তার পোস্টে বৃষ্টিতে গাজার শিশুদের মানবেতর জীবনযাপনের একাধিক ছবির সাথে আলোচিত ছবিটিও শেয়ার করেছেন। 

ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “আমার সাথে কল্পনা করুন, আপনি মানুষ! কল্পনা করুন যে এই শিশুরা আপনার নিজের। কল্পনা করুন যে এই শিশুরা আপনার ভাইবোন। আমার সাথে কল্পনা করুন যে এই শিশুরা আপনার আত্মীয়। গাজায় বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে প্রতি সেকেন্ডে হাজার বার মারা যায় শিশু, নারী ও বৃদ্ধ! পানি ছাড়া, খাবার ছাড়া, আচ্ছাদন ছাড়া, কাপড় ছাড়া, তাঁবু ছাড়া তারা মাটিতে পড়ে থাকে! আপনি কি এমন কিছু কল্পনা করতে পারেন!” (ভাবানুবাদ)।

Screenshot: Instagram 

মাশরির পোস্টের ক্যাপশন থেকে ছবিটি বাস্তব বা এআই দিয়ে তৈরি কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। তবে তার এই ছবি প্রকাশের পরই সেটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরপর এই ছবিটি তিনি তার পোস্ট থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। 

আমরা ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে বেশকিছু অসঙ্গতি পেয়েছি। যেমন, হাতের আঙ্গুলের সংখ্যা, নাক ও কানের অস্বাভাবিকতা এআই টুল দিয়ে তৈরি ছবির সাথে মিলে যায়। 

Image analysis: Rumor Scanner 

ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফও (Kashif) একই পর্যবেক্ষণের কথা জানাচ্ছে। 

প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, এটি এআই দিয়ে তৈরি। তবে কে তৈরি করেছে তা বের করা যায়নি। মূলত একজন ফটোগ্রাফার তাঁবুতে বাচ্চাদের জন্য সত্যিকারের ছবি প্রকাশ করার পরে এটির প্রচার পেতে শুরু করে। 

কাশিফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফটো সাংবাদিক মোহাম্মদ আল মাশরির সাথে তারা কথা বলেছেন। মাশরি তাদের জানিয়েছেন, এই ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমেই তৈরি করা হয়েছে। 

মূলত, গেল বছরের (২০২৩) ০৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি গাজায় ভারী বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয়েছে আশ্রয় শিবির। এর প্রেক্ষিতে একটি ছবি নেটিজেনরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ও পেজে শেয়ার করছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে দুইজন শিশু একটি তাঁবুর সামনের কর্দমাক্ত স্থানে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে,

এই ছবিটি বাস্তব নয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই দিয়ে তৈরি। ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফ (Kashif) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি। 

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবিকে গাজায় দুইজন শিশুর একটি তাঁবুর সামনের কর্দমাক্ত স্থানে ঘুমিয়ে থাকার বাস্তব ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

এয়ারহোস্টেসের ভিন্ন ঘটনার ছবির সাথে ভিত্তিহীন গল্প জুড়ে দিয়ে প্রচার 

0

সম্প্রতি, এয়ারহোস্টেসের তিনটি ছবি কোলাজ করে এর সাথে একটি শিরোনাম যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। শিরোনামে বলা হচ্ছে, “ফ্লাইটে পাইলট ঘোষণা করলো, আধা ঘণ্টার মধ্যে আমরা ল্যান্ড করতে যাচ্ছি। একথা বলার পর  কিন্তু পাইলট মাইক বন্ধ করতে ভুলে গেলো এবং পাশে থাকা পাইলটকে বললো, এখন আমি প্রথমে গরম চা খাবো তারপর এয়ার হোস্টেস কে চুমু খাবো। একথা শুনে এয়ার হোস্টেস মাইক বন্ধ করার জন্য দৌড়াতে গিয়ে এক শিশুর পায়ে হোঁচট খেয়ে নিচে  পড়ে গেলো। শিশুটি বলল, আপনার এতো ভেতরে যাওয়ার তাড়া কিসের!ও আগে চা খাবে বললো শোনোনি?

এয়ারহোস্টেসের

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এয়ারহোস্টেসের ভাইরাল ছবিগুলোর সঙ্গে থাকা গল্পটি সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার দুইটি ছবি যুক্ত করে ভিত্তিহীন দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি ছবি ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ার এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইটে একজন চীনা যাত্রী কর্তৃক এয়ারহোস্টেসের দিকে গরম পানি ছুঁড়ে মারার। বাকি দুইটি ছবি ২০১৬ সালে রাশিয়ান এয়ারলাইনসে একদল ফুটবল অনুরাগী কর্তৃক একজন এয়ারহোস্টেসকে বিভ্রান্ত করার সময়কার। 

ছবি যাচাই – ০১ 

আলোচিত দাবিতে থাকা ভাইরাল ছবিগুলোর বামদিকে থাকা প্রথম ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দৈনিক গণমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এর ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর “In Hot Water: Thai Flight Turns Around After Chinese Passenger Flips” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে থাকা প্রথম ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে ব্যাংকক থেকে নানজিংগামী এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটে একজন চীনা যাত্রীর সাথে এয়ারহোস্টেসের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই চীনা যাত্রী এয়ারহোস্টেসের দিকে গরম পানি ছুঁড়ে মারে। উক্ত ঘটনার একটি ছবিকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

একই তথ্য পাওয়া গেছে আরো একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।  

ছবি যাচাই ২ ও ৩ 

পরবর্তী ছবি দুইটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ার টুডে’র ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ২২ জুলাই “WATCH: Football fans distracting an air hostess doing a safety drill will leave you in stitches” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের সর্বশেষ অংশে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত বাকি দুইটি ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে রাশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে এয়ারহোস্টেস নিরাপত্তাবিষয়ক দিকনির্দেশনা দেওয়ার সময় ফ্লাইটে উপস্থিত একদল ফুটবল অনুরাগী তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলো। ওই সময়কার দুইটি স্থিরচিত্র আলোচিত দাবিতে প্রচারিত গল্পের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এয়ারহোস্টেস এবং পাইলটকে জড়িয়ে প্রচারিত আলোচ্য গল্পটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, এয়ারহোস্টেসের ভাইরাল ছবিগুলো পুরোনো ভিন্ন ঘটনার। এর সাথে ভিত্তিহীনভাবে একটি গল্প জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। 

মূলত, ২০১৪ সালে ব্যাংকক থেকে নানজিংগামী একটি ফ্লাইটে একজন চীনা যাত্রীর সঙ্গে এয়ারহোস্টেসের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই চীনা যাত্রী এয়ারহোস্টেসের দিকে গরম পানি ছুঁড়ে মারে এবং ২০১৬ সালে রাশিয়ান এয়ারলাইনসে একদল ফুটবল অনুরাগী একজন এয়ারহোস্টেসকে নিরাপত্তাবিষয়ক নির্দেশনা দেওয়ার সময় তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। উক্ত দুইটি ঘটনার কিছু স্থিরচিত্র কোলাজ করে এর সাথে একটি গল্প জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে,আলোচিত দাবিতে প্রচারিত গল্পটি ভিত্তিহীন এবং কোলাজ করা ছবিগুলো পুরোনো ভিন্ন ঘটনার। 

সুতরাং, ভিন্ন ঘটনার দুইটি ছবি জুড়ে দিয়ে এয়ারহোস্টেস এবং পাইলটকে জড়িয়ে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।  

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/ Update

০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে কতিপয় টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

আফরান নিশোর হাতে তুফান সিনেমার পোস্টার দাবিতে এডিটেড ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি, ঢাকাই সিনেমার চলচ্চিত্র অভিনেতা আফরান নিশো’র হাতে শাকিব খান অভিনীত তুফান সিনেমার পোস্টারের একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

 তুফান

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পোস্টগুলোতে ১২ হাজারের অধিক ব্যবহারকারী রিয়্যাক্ট দিয়েছেন এবং ৯শ এর অধিক ব্যবহারকারী নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আফরান নিশো’র হাতে তুফান সিনেমার পোস্টারের ছবিটি বাস্তব নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। 

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, আফরান নিশো অভিনীত সুরঙ্গ সিনেমার পরিচালক Raihan Rafi এর ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ২৮ জুলাইয়ের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ফেসবুক পোস্টের সাথে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Source: Raihan Rafi Facebool Page

উক্ত ফেসবুক পোস্টে সংযুক্ত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মূল ছবিতে সুড়ঙ্গ সিনেমার পোস্টার ছিল। সেটির এডিট করে তুফান সিনেমার পোস্টার জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

মূলত, ২০২৩ সালে সুড়ঙ্গ সিনেমার পরিচালক রায়হান রাফি তার ফেসবুক পেজে সুড়ঙ্গ সিনেমার পোস্টার সম্বলিত একটি ছবি পোস্ট করেন। সুড়ঙ্গ সিনেমার পোস্টার সম্বলিত সে ছবিটিই সম্প্রতি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট বা সম্পাদনা করে তুফান ছবির পোস্টার যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও আফরান নিশোকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, তুফান সিনেমার পোস্টার হাতে আফরান নিশো’র ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়নি

সম্প্রতি, ‘বিএনপি দমনের ষড়যন্ত্র করছে সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনীকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৯৫ হাজার বার। এতে তিন হাজারেও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দমনের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য নয় বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিন্ন ও অপ্রাসঙ্গিক ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ও ছবি একত্রে জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ১৪ নভেম্বর Bd VIP News নামের এক ইউটিউব চ্যানেলে ‘বিএনপি দমনের ষড়যন্ত্র করছে সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনীকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে আরও দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পূর্বের কিছু কার্যক্রম দেখানো হয় ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, ‘সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে যাতে পরবর্তীতে আরও উচ্চপদে যাওয়া যায়। কারণ, সেনাবাহিনীর সকল উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে প্রতিরক্ষা দপ্তর। আর এই দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। সুতরাং সেনাবাহিনী যদি রাজনীতির সাথে জড়িত থাকে তাহলে এইজন্য অবশ্যই সরকারকে দায় নক্তে হয়। বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম করার অভিযোগ এসেছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এই বিষয়গুলো তুলে ধরে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬ জন কংগ্রেস সদস্য। একই সাথে উল্লেখ করা হয়ে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ একাধিক সদস্যকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তবে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Somoy TV’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ০৪ জুন ‘মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা হলে প্রতিহত করবে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে সেসময়ে দেশের জনগণের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির শুরুর দিকে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ০৪ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ পার্বত্য জেলা বান্দরবান রিজিয়ন পরিদর্শনকালে বিচ্ছিন্নতা বাদীদের সশস্ত্র তৎপরতা ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের কেউ ক্ষতি করছে বা জনগণের ক্ষতি করছে, সেটাকে রোধ করতে গিয়ে যদি আমাদের শক্ত অবস্থানে যেতে হয় তাহলে আমরা অবশ্যই যাবো। মরণ কামড় কেউ দিলে আমরাও তা প্রতিহত করবো, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা শান্তিপূর্ণ সব সমাধান চাই।

এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রেক্ষিতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশের বিষয়ে অনুসন্ধানে দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসা নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।

মূলত, ২০২৩ সালের ০৪ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ পার্বত্য জেলা বান্দরবান রিজিয়ন পরিদর্শনকালে বিচ্ছিন্নতা বাদীদের সশস্ত্র তৎপরতা ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে সেসময় বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া সময় টিভিতে সংবাদ প্রচারিত হয়। সম্প্রতি, এই ভিডিওসহ পূর্বের ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে ভিডিও তৈরি করে ভিত্তিহীনভাবে দাবি করা হয় ‘সেনাবাহিনী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দমনের ষড়যন্ত্র করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সেনাবাহিনীকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’ তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো তথ্য মূলধারার গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না। 

সুতরাং, ভিন্ন এবং অপ্রাসঙ্গিক ঘটনার ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে ‘‘সেনাবাহিনী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দমনের ষড়যন্ত্র করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সেনাবাহিনীকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নবমের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে প্রাচীন জেরিকো নগরীর আলোচনায় ভুল মানচিত্র প্রচার

0

দেশে চলতি বছর থেকে নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। নতুন কারিকুলামের ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের একটি ভুল নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

যে ভুল নিয়ে আলোচনা

নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের ‘মিলেমিশে নিরাপদে বসবাস’ নামক অধ্যায়ের ১৪৯ নং পৃষ্ঠায় ‘নগর বসতি’ শিরোনামের পাঠে একটি মানচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে যেখানে লেবানন, সিরিয়া, সামারা, জেরিকা, জুড়িয়া, ইসরাইল, জেরুজালেম, গাম্বিয়া, মিশর, জর্ডান নামক স্থানের অবস্থান দেখানো হয়েছে। 

প্রাচীন জেরিকো

বইটিতে দাবি করা হচ্ছে, এই মানচিত্রটি প্রাচীন জেরিকো নগরের অবস্থান নির্দেশ করছে। 

এ সংক্রান্ত পাঠে লেখা রয়েছে, “ইতিহাসবিদদের মতে, নগরায়ণের সর্বপ্রথম বিকাশ ঘটে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার জর্ডন নদী উপত্যকায় অবস্থিত জেরিকো নামক স্থানে।” (বানান অপরিবর্তিত)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে প্রাচীন জেরিকো নগরের অবস্থান সম্বলিত যে মানচিত্রটি দেখানো হয়েছে তা সঠিক নয় বরং জেরিকো নগরীর অবস্থান নির্দেশ করতে গিয়ে মানচিত্রে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়কালের স্থানকে নির্দেশ করা হয়েছে। তাছাড়া, মানচিত্রে গাম্বিয়া নামে যে স্থানটিকে নির্দেশ করা হয়েছে সেখানে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া নয়, রয়েছে ফিলিস্তিনের গাজার অবস্থান।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত মানচিত্রে থাকা গাম্বিয়ার অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ২০০৫ সালের একটি প্রতিবেদনে এবং বিশ্বকোষ হিসেবে পরিচিত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার ওয়েবসাইটের একটি নিবন্ধে একই স্থানের মানচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। এই মানচিত্রগুলোতে গাম্বিয়ার স্থলে গাজা’র অবস্থান দেখানো হয়েছে।

Screenshot collage: Rumor Scanner 

শুধু আন্তর্জাতিক সূত্রই নয়, খোদ ইসরায়েল সরকারের ওয়েবসাইটেও একই অবস্থানে গাজাকে চিহ্নিত অবস্থায় দেখা গেছে।

Screenshot: Israeli Govt. Website

অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া থেকে গাজার বর্তমান অবস্থানের দূরত্ব প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। (, )।

Screenshot: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, পাঠ্যবইয়ে গাজার অবস্থানকে গাম্বিয়া হিসেবে দাবি করা হয়েছে।

বৈশ্বিক জিওগ্রাফি বিষয়ক ওয়েবসাইট World Atlas এ আমরা একই স্থানের একটি মানচিত্র খুঁজে পেয়েছি যাতে দেখা যাচ্ছে, জেরিকো নগরীটি বর্তমানে পশ্চিম তীর (West Bank) এর অন্তর্ভুক্ত। পাঠ্যবইয়ে অবশ্য এই পশ্চিম তীরের অবস্থানও উল্লেখ করা হয়নি। 

Screenshot: World Atlas

মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক থট এন্ড সিভিলাইজেশ্যন  (International Institute of Islamic Thought and Civilization) এর পিএইচডি ক্যান্ডিডেট আসিফ আদনান বলছেন, “বইয়ে আলোচনা হচ্ছে প্রথম নগরায়নের। এর উদাহরণ হিসেবে আনা হচ্ছে জেরিকো-র কথা। যেটার সময়কাল হল আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫০০-৯৫০০। (সময়কাল নিয়ে নানা মত আছে।) এর সাথে আবার দেখানো হচ্ছে ‘জুড়িয়াহ’, সামারা, ‘ইস্র–‘ – অথচ ঐ টাইমলাইনে এগুলো ছিল না। এগুলো আরও পরের কথা।”

আসিফ জানাচ্ছেন, তানাখের বক্তব্য অনুযায়ী সল (তালুত) এর অধীনে কিংডম অফ ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা হয়। সুলাইমান (আঃ) এর মৃত্যুর পর কিংডম অফ ইসরায়েল দুই ভাগ হয়। এক ভাগের নাম কিংডম অফ জুডাহ, আরেক ভাগের নাম কিংডম অফ সামারিয়া/কিংডম অফ ইসরায়েল। আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে এই দুই রাজ্যের সময়কাল হল খ্রিষ্টপূর্ব ৯৩০-৭২০। এর বহু পরে সিলিউসিডদের বিরুদ্ধে বনী ইসরাইল বিদ্রোহ করে জুডিয়া নামে একটা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গঠন করে খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৭ এর দিকে। 

জনাব আসিফের মতে, “যদি ভুল করে খ্রিষ্টপূর্ব ৯৭০ এর দিকের ম্যাপই দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে এখানে ‘জেরিকা’ আর ‘জুড়িয়াহ’ এর আশেপাশে থাকবে আম্মোন, ইডোম, মোয়াব, আসিরিয়াদের রাজ্যের নাম। ঐ সময়ে এগুলোই ছিল পার্শ্ববর্তী রাজ্য। অথচ আশেপাশে দেখানো হয়েছে মিশর, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন আর গাম্বিয়াকে! যেগুলোর আধুনিক বর্ডার হয়েছে ১৯৪৬ এর পর।” 

আসিফ বলছেন, (পাঠ্যবইয়ের) লেখাতে এক টাইমলাইনের কথা বলা হচ্ছে। ছবির এক অংশে (‘জুড়িয়াহ-জেরিকা’) আরেক টাইমলাইন দেখানো হচ্ছে। আশেপাশের দেশের জায়গায় দেখানো হচ্ছে তৃতীয় আরেক টাইমলাইন। এভাবে এক ছবিতে (মানচিত্রে) আটকা পড়ে গেছে তিন টাইমলাইন (প্রাচীন জেরিকো নগরী – আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫০০-৯৫০০, জুডিয়া/সামারা দুই রাজ্য – আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৯৭০-৭২০, আশেপাশে মিশর, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান – ১৯৪৬ এর পরে।) আর দুই মহাদেশ। 

  • প্রাচীন জেরিকো নগরীর বিষয়ে পড়ুন এখানে।  
  • জুডিয়া/সামারা দুই রাজ্য বিষয়ে পড়ুন এখানে। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের সাথে, যিনি ‘ইসরাইলের উত্থান-পতন’ এবং ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’  নামে দুইটি বইয়ের লেখক। তিনিও আসিফের সাথে একমত। বলছিলেন, “এই মানচিত্রের মূল সমস্যাটিই হলো বিভিন্ন টাইমলাইনকে এক করে ফেলা, তাছাড়া জায়গাগুলোর নামও সঠিক জায়গায় চিত্রিত হয়নি, যেমন গাজার জায়গায় গ্যাম্বিয়া এখানে আসবার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া, ‘জর্ডন’ বা ‘জুড়িয়া’-র মতো বানান বাংলাদেশি রীতি অনুসরণ করে না।” 

আব্দুল্লাহ বলছেন, “জেরিকো নগরীর আরবি উচ্চারণ ‘আরিহা’ (أريحا), হিব্রুতেও কাছাকাছিই- ‘আরিহো’ (יְרִיחוֹ)। এর পূর্বে জর্ডান নদী আর পশ্চিমে জেরুজালেম। মিশর থেকে এ এলাকায় ফেরা ইসরাইলিরা কানান-দেশ বা পবিত্র ভূমি বিজয় অভিযান শুরু করেছিল এই জেরিকো নগরী অধিকার করার মধ্য দিয়ে। ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী (খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ সাল), জেরিকো অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জশুয়া বা ইউশা ইবনে নূন (আ)। বাইবেলের প্রাচীন সেই জেরিকো নগরীর বর্তমান স্থান তেল-এস-সুলতান বলা হয়ে থাকে।”

আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ এ সংক্রান্ত ইতিহাস টেনে বলেন, “ওল্ড টেস্টামেন্টে দাউদ (আ) ও তাঁর পুত্র সুলাইমান (আ)-এর সময় বনী ইসরাইলের রাজত্ব স্বর্ণশিখরে ছিল, ইয়াকুব (আ)-এর অপর নাম ‘ইসরাইল’ থেকে এ সাম্রাজ্যকে ইসরাইল রাজ্য বলা হতো। কিন্তু সুলাইমান (আ)-এর পুত্র রেহোবামের রাজত্বের সময় (খ্রিস্টপূর্ব দশম শতক) ভেঙে যায় এ সাম্রাজ্য। উত্তরের রাজ্যের নাম হয় ইসরাইল রাজ্য, আর দক্ষিণের নাম হয় জুদাহ (Judah) রাজ্য। ইয়াকুব বা ইসরাইল (আ) এর চতুর্থ পুত্র ছিলেন জুদাহ বা এহুদা। যদিও নামে মনে হতে পারে, ইসরাইল রাজ্য হয়তো বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল, কিন্তু আসলে জুদাহ রাজ্যেই ছিল জেরুজালেম ও বাইতুল মুকাদ্দাস।” 

“পরে রোমানরা এ অঞ্চল অধিকার করে নিলে সামারিয়া, ইসরাইল, জুদাহ- এসব মিলিয়েই তারা গঠন করে রোমান জুডিয়া প্রদেশ (খ্রিস্টীয় ৬ সাল)। ইহুদীদের কাছে কেবল দক্ষিণের অঞ্চল ‘জুদাহ’ হলেও, রোমানদের কাছে এই বৃহত্তর এলাকার নাম ছিল ‘জুডিয়া’ (Judea, Judaea)। অবশ্য একথা মাথায় রাখা জরুরি যে, দাউদ-সুলাইমান (আ)-এর ইসরাইল আর বর্তমানে গাজায় আগ্রাসন চালানো ইসরাইল এক নয়। এ অঞ্চলকে তখন জুডিয়া নামকরণ করা হলেও বহু আগে থেকেই এ অঞ্চল প্যালেস্টাইন (পেলেসেৎ) নামে পরিচিত, এমনকি খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের লেখাতেও আমরা প্যালেস্টাইন পাই। মূলত এই প্রচলিত নাম থেকেই পরে রোমানরা সরকারিভাবেই নতুন নাম দেয়- ‘সিরিয়া প্যালেস্টিনা’; ১৩২ সালে ইহুদীদের রোমান-বিরোধী বার কোখবা বিদ্রোহের সময় জুডিয়া আরেকটু বড় হয় এবং তখনই রোমানরা এই ‘প্যালেস্টিনা’ নাম রাখে, জুডিয়া বা ইসরাইল নয়।” 

আমরা ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফ (Kashif) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা’র সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি বলছিলেন, এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি জাতিসংঘ প্রদত্ত মানচিত্র বইতে দেয়া হয়। এতে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। 

জাতিসংঘ প্রদত্ত উক্ত স্থানের মানচিত্র দেখুন এখানে। 

নবম শ্রেণির এই বইটির রচনা ও সম্পাদনা দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলম। আমরা তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। জনাব আকসাদুল আলম রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “বইটা দুইটি কন্টেন্ট নিয়ে করা। একটি ইতিহাসের, অন্যটি সামাজিক বিজ্ঞানের। ইতিহাসের অংশটা আমি দেখিনি। আমার ধারণা, সম্ভবত কোনোভাবে ভুল একটি মানচিত্র ছাপা হয়েছে, যেখানে কন্টেন্টের সাথে মিলও নেই৷” 

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গত ২৭ জানুয়ারি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমি এ বিষয়টা মাত্র জানলাম। এ ধরনের ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই এটা পরিবর্তন হবে।

মূলত, নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে ‘নগর বসতি’ শিরোনামের পাঠে একটি মানচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে লেবানন, সিরিয়া, সামারা, জেরিকা, জুড়িয়া, ইসরাইল, জেরুজালেম, গাম্বিয়া, মিশর, জর্ডান নামক স্থানের অবস্থান দেখানো হয়েছে। বইটিতে দাবি করা হচ্ছে, এই মানচিত্রটি প্রাচীন জেরিকো নগরের অবস্থান নির্দেশ করছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, এই মানচিত্রটি মূলত জেরিকো নগরীর বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে উপস্থাপন করা হলেও একই মানচিত্রে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের দেশ ও অঞ্চলকে স্থান দেওয়া হয়েছে। জেরিকো নগরীর উত্থানকালে লেবানন, সিরিয়া, সামারা, জুডিয়া, ইসরাইল, জেরুজালেম, গাম্বিয়া বা জর্ডানের বর্তমান পরিচয়, অবস্থান বা সীমানার অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু এদের অবস্থানও জেরিকোর সাথে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। সামারা এবং জুডিয়া রাজ্যের উৎপত্তি সেসময় ঘটেনি। তাই সেসময়ের মানচিত্রে এদের অবস্থান থাকার কথা নয়। অন্যদিকে বাকি যে স্থানগুলোর অবস্থান দেখানো হয়েছে সেগুলোর উৎপত্তি গত শতাব্দীতে। তাই এদের অবস্থানও এই মানচিত্রে অপ্রাসঙ্গিকভাবেই এসেছে। তাছাড়া, মানচিত্রে গাম্বিয়া নামে যে স্থানটিকে নির্দেশ করা হয়েছে সেখানে গাম্বিয়া নয়, রয়েছে গাজার অবস্থান।  

প্রসঙ্গত, গেল কয়েক বছর ধরেই পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলের বিষয়ে নিয়মিত ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে আসছে রিউমর স্ক্যানার। দেখুন এখানে।

সুতরাং, সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোর ভুল উপস্থাপনের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে প্রাচীন জেরিকো নগরী বিষয়ক একটি মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ভিডিওটিতে প্রদর্শিত নৃত্য পরিবেশনকারী এই ব্যক্তি ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি নন

গত ২২ জানুয়ারি ভারতের অযোধ্যায় হিন্দুদের জনপ্রিয় দেবতা রামের নামে তৈরি মন্দির ‘রাম মন্দির’ উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্দির চত্বরে ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলি নেচেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

 বিরাট কোহলি

উক্ত দাবিতে বাংলাদেশে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ওপার বাংলায় প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত নৃত্য পরিবেশনকারী এই ব্যক্তি ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি নন বরং ভিডিওটি’র এই ব্যক্তি বিরাট কোহলির মত দেখতে অপর এক ব্যক্তি। প্রকৃতপক্ষে বিরাট কোহলি অযোধ্যার রাম মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি।

অনুসন্ধানের শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘India Times’ এর ওয়েবসাইটে গত ২২ জানুয়ারি ‘Why Did Virat Kohli And Anushka Sharma Skip Ram Mandir’s ‘Pran Pratishtha’ Ceremony In Ayodhya?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, ভারতের অযোধ্যার রাম মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েও ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি ও তার স্ত্রী বলিউড তারকা আনুষ্কা শর্মা সেখানে যোগ দেননি। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রতিবেদনটিতে ভারত বনাম ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ এবং আনুষ্কা শর্মার প্রেগন্যান্সির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘এশিয়ানেট নিউজ বাংলা’ এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৪ জানুয়ারি ‘ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি পরে মাথায় ক্যাপ টুপি এবং অবিকল বিরাট কোহলির মত একটি চকচকে সানগ্লাস পরে অযোধ্যার রাম মন্দির চত্বরে হাজির হয়েছেন এক যুবক। তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য উদ্দাম উন্মাদনা বিরাটের ভক্তদের মধ্যে।’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Asianet News Bangla Facebook

সেখানে উল্লিখিত তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলির মত বেশভূষা ধারণ করে এক যুবক অযোধ্যার রাম মন্দির চত্বরে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের দিন উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে সেখানে ওই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এই ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তির সাথে বিরাট কোহলি দাবিতে প্রচারিত ব্যক্তির পোশাক ও আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তুর মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, নৃত্য পরিবেশনকারী এই ব্যক্তি ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি নন বরং তার মত দেখতে অপর এক ব্যক্তি।

মূলত, গত ২২ জানুয়ারি ভারতের অযোধ্যায় হিন্দুদের জনপ্রিয় দেবতা রামের নামে তৈরি মন্দির ‘রাম মন্দির’ উদ্বোধনের দিন ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি’র বেশভূষা ধারণ করে এক ব্যক্তি উক্ত মন্দির চত্বরে নৃত্য পরিবেশন করেন। পরবর্তীতে উক্ত যুবকের নাচের ভিডিওটিকে ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি’র নাচের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে বিরাট কোহলি অযোধ্যার রাম মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি।

সুতরাং, ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি’র মত দেখতে এক ব্যক্তির নাচের ভিডিওকে অযোধ্যার রাম মন্দির চত্বরে বিরাট কোহলি’র নাচের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বেগম খালেদা জিয়া হযরত শাহ জালাল (র:) মাজার জিয়ারত করার ভিডিওটি পুরনো

সম্প্রতি, সুস্থতার জন্য শাহজালাল মাজারে খালেদা জিয়া, মা কে দেখতে দেশে আসলেন তারেক রহমান শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়া

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৬৫ হাজার বার। ভিডিওটিতে এক হাজার সাতশত এরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কর্তৃক হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারতের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ভিডিওটি পুরোনো। এছাড়া দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসার তথ্যটিও বানোয়াট। প্রকৃতপক্ষে পূর্বে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০১

ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি “সিলেটে হযরত শাহ জালাল (র:) ও হয়রত শাহ পরান (র:) এর মাজার জিয়ারত করেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিলেটে হযরত শাহ জালাল (র:) মাজার এবং হযরত শাহ পরান (র:) এর মাজার জিয়ারত করেন।

পাশাপশি, বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া চ্যানেল আই এ ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, ২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিলেটে হযরত শাহ জালাল (র:) মাজার এবং হযরত শাহ পরান (র:) এর মাজার জিয়ারত করার ভিডিও সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়া, সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া সিলেটে হযরত শাহ জালাল (র:) মাজার জিয়ারত করার কোনো তথ্য দেশিয় বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভিডিও যাচাই ০২

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে, London Voice Bangla নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ জানুয়ারি “নির্বাচনের পর প্রকাশ্যে তারেক রহমান, ভাইয়ের জন্য দোয়া চাইলেন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রকাশিত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা-কর্মী কর্তৃক মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

এছাড়া, তারেক রহমানের দেশে আসার প্রেক্ষিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সিলেটে হযরত শাহ জালাল (র:) মাজার এবং হযরত শাহ পরান (র:) এর মাজার জিয়ারত করেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে সেসময় বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া চ্যানেল আই নিউজে সংবাদ প্রচারিত হয়। এছাড়া সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া হযরত শাহ জালাল (র:) মাজার জিয়ারত করার প্রেক্ষিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা-কর্মীর আয়োজনে গত ২৫ জানুয়ারি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি, এই ভিডিওটি তারেক রহমানের দেশে ফেরার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, ২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হযরত শাহ জালাল (র:) মাজার জিয়ারত করার ভিডিও সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যুক্তরাজ্যে অবস্থানের ভিডিও প্রচার করে বাংলাদেশে এসেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার সাথে খালেদা জিয়ার কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি

সম্প্রতি, “দেশ বাঁচাতে খালেদার সাথে হাসিনার জরুরি বৈঠক সিমান্তে ভারতের গুলিতে বিজিবির লাশের সারি” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার সাথে খালেদা

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি এবং সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে বিজিবির লাশের সারির দাবিও সঠিক নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিন্ন ঘটনার ফুটেজ জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি একটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Jamuna Tv এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি “এবার বিএসএফের ছোড়া ককটেলে বাংলাদেশি যুবক নিহত | Lalmonirhat BSF Killed | BGB | Jamuna TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত সংবাদ পাঠ অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি লালমনিরহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর নিক্ষিপ্ত ককটেল বিস্ফোরণে বাংলাদেশি একজন যুবক নিহত হয়েছেন। 

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সাংবাদিক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট মোস্তফার ফিরোজের ইউটিউব চ্যানেল Voice Bangla তে গত ২৭ জানুয়ারি “‘বিজিবি সদস্য রইস উদ্দিন নি*হত’ জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের দাবি বিএনপির I Mostofa Feroz I Voice Bangla” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে গত ২১ জানুয়ারি যশোর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিন নিহত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন মোস্তফা ফিরোজ।

উপরোক্ত দুইটি ভিডিওর কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে খালেদা জিয়ার বৈঠকের কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে বিজিবি সদস্যদের লাশের সারি দাবির স্বপক্ষেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে পৃথক দুইটি ঘটনায় বিএসএফের গুলিতে এক বিজিবি সদস্যসহ একজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ওপরে উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়।

এছাড়াও, মূলধারার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকেও আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ২১ জানুয়ারি যশোর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিন নিহত হন। পরবর্তীতে ২৮ জানুয়ারি লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফ এর নিক্ষিপ্ত ককটেল বিস্ফোরণে রাফিউল ইসলাম ওরফে টুকলু নিহত হয়েছেন। এই সকল ঘটনার প্রেক্ষিতে “দেশ বাঁচাতে খালেদার সাথে হাসিনার জরুরি বৈঠক সিমান্তে ভারতের গুলিতে বিজিবির লাশের সারি” দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে বিজিবির লাশের সারিন এবং সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

তামিমকে ভুয়া এবং ডটবাবা বলায় সাকিব লাইভে আসেননি 

সম্প্রতি, তামিমকে ভুয়া এবং ডটবাবা বলায় লাইভে এসে একি বললেন সাকিব আল হাসান- শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

তামিমকে ভুয়া

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তামিমকে ভুয়া এবং ডটবাবা বলায় সাকিব আল হাসান লাইভে আসেননি বরং ভিন্ন একটি ভিডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইলে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শুরুতে তামিম ইকবাল আউট হয়ে মাঠ থেকে ফেরার সময় দর্শকরা ‘ভুয়া ও ডটবাবা’ বলে স্লোগান দিচ্ছে। পরবর্তীতে সাকিব আল হাসানকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এরপর উপস্থাপককে মনগড়া কিছু কথা বলতে শোনা যায়। 

সাকিব আল হাসানের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সাকিব আল হাসান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলছেন “এটা বলে কী বুঝাতে চাচ্ছেন সেটা বলেন? আমি জানি না।”

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর “সাংবাদিকের উপর ক্ষেপলেন সাকিব; বারবার করলেন পাল্টা প্রশ্ন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

৭ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে, ১ মিনিট ১০ সেকেন্ডে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন। এছাড়া, ভিডিওটি পূর্বের। 

পাশাপাশি, সাকিব আল হাসানের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও সম্প্রতি তামিম ইকবালকে নিয়ে কোনো লাইভ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি তামিমকে ভুয়া এবং ডটবাবা বলায় লাইভে এসে একি বললেন সাকিব আল হাসান- শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, তামিম ইকবাল আউট হয়ে মাঠ থেকে ফেরার সময় দর্শকদের ‘ভুয়া ও ডটবাবা’ স্লোগান দেওয়ায় সাকিব আল হাসান লাইভে এসেছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রতি সাকিব আল হাসান লাইভে আসেননি। এছাড়া, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিও গতবছরের। 

সুতরাং, তামিমকে ‘ভুয়া ও ডটবাবা’ বলায় সাকিব আল হাসানের লাইভে আসার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের কারামুক্তির গুজব

গত ২৭ জানুয়ারি Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘ব্যারিস্টার সুমনের নেতৃত্বে ফখরুলের মুক্তি, খালেদার সাথে সাক্ষাৎ করলেন ফখরুল’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

কারামুক্তির

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ৭ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগার থেকে মুক্তি পাননি বরং তিনি বর্তমানে কারাগারেই আছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার সাক্ষাত করার দাবিটিও সঠিক নয় বরং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপের সাথে আলোচিত দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার পুরোনো ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও।

আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম ও থাম্বনেইলে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের নেতৃত্বে মির্জা ফখরুলের মুক্তির কথা বলা হলেও ভিডিওটিতে কোথাও ব্যারিস্টার সুমন সম্পর্কিত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, আলোচিত দাবিগুলোর পক্ষে ভিডিওটিতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া উল্লেখিত দাবিগুলোর বিষয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোরসত্যতা পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই- ০১

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ০২ এপ্রিল ‘৩০ মার্চ ২০১৬, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানালেন মহাসচিব এবং সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত প্রথম ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এটি ২০১৬ সালে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী’র বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময়ের ভিডিও।

অর্থাৎ, এটি প্রায় ৮ বছর আগে ধারণকৃত ভিডিও। তাই এটা স্পষ্ট যে এই ভিডিওটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক সময়ে সাক্ষাতের কোনো ঘটনার নয়। 

ভিডিও যাচাই- ০২

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ০৩ মে ‘খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে যা জানালেন মির্জা ফখরুল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের অংশের ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটিতে সেসময় শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার পর দেশবাসীর উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দোয়া চাইতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি দেড় বছরের অধিক পূর্বের ভিডিও।

এছাড়াও, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র অনলাইন সংস্করণে গত ২৬ জানুয়ারি ‘কারাগারেই কাটল মির্জা ফখরুলের জন্মদিন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত ২৬ জানুয়ারি তার ৭৭ তম জন্মদিনে পরিবারের সদস্যরা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে তার সাথে কারাগারে দেখা করেন। 

অর্থাৎ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে মুক্তি পাননি।

মূলত, ঢাকার পল্টনে গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ১১টি মামলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে একটি মামলায় ২৯ অক্টোবর তাকে প্রথমে গ্রেপ্তার এবং পরে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১০ জানুয়ারি পল্টন ও রমনা থানার পৃথক নয়টি মামলায় সিএমএম আদালতে জামিন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরই মধ্যে গত ২৭ জানুয়ারি Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘ব্যারিস্টার সুমনের নেতৃত্বে ফখরুলের মুক্তি, খালেদার সাথে সাক্ষাত করলেন ফখরুল’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। গত ১০ জানুয়ারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়টি মামলায় জামিন পেলেও আরও দুইটি মামলায় জামিন অপেক্ষমাণ থাকায় তিনি এখনই কারামুক্তি পাচ্ছেন না। এই দুই মামলায় কারামুক্তির আগ পর্যন্ত তাকে কারাগারেরই থাকতে হবে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুলের বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার দাবিটিও বানোয়াট।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কারামুক্তির ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র