Home Blog Page 532

ভোট ও থিসিস চুরির বিষয়ে ঢাবির সাবেক শিক্ষক সামিয়া রহমানের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

0

বিগত কয়েক বছর ধরে “ভোট চুরি করে দেশ চালাতে পারলে থিসিস চুরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে সমস্যা কোথায়?” শীর্ষক মন্তব্য সিনিয়র সাংবাদিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক সামিয়া রহমান করেছেন দাবিতে উক্ত তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং এক্স (সাবেক টুইটার) এ প্রচার করা হয়েছে।

থিসিস চুরির

২০২১ সালে উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

২০২১ সালে এক্স (সাবেক টুইটার) এ উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

২০২৪ সালে উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধনে জানা যায়, সিনিয়র সাংবাদিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক সামিয়া রহমান আলোচিত মন্তব্যটি করেননি বরং কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত মন্তব্যটি তার নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার হয়ে আসছে। 

গুজবের সূত্রপাত

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Basherkella – বাঁশেরকেল্লা নামক এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি ইন্টারনেটে প্রকাশিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: X

অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে আলোচিত দাবির প্রেক্ষিতে সামিয়া রহমানের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং দেশিয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য সামিয়া রহমানের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

“ভোট চুরি করে দেশ চালাতে পারলে থিসিস চুরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে সমস্যা কোথায়?” শীর্ষক মন্তব্য তিনি করেছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনার কি মনে হয় এই জাতীয় লেখা আমি লিখবো? বিএনপি-জামাত কেউ এই কাজটা করেছে।”

তিনি আরও বলেন,”আমার ফেসবুক অথরাইজড। কোথাও কি এই জাতীয় হাস্যকর লেখা পোস্ট হয়েছে কোনোদিন? পাবলিকের কাজ নাই তাই এই সব ফাজলামি করে। আমার তাতে কিছু এসে যায়না।”

অর্থাৎ, আলোচিত মন্তব্যটি সামিয়া রহমান করেননি।

মূলত, ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্লাটফর্মে “ভোট চুরি করে দেশ চালাতে পারলে থিসিস চুরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে সমস্যা কোথায়?” শীর্ষক মন্তব্যটি সিনিয়র সাংবাদিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক সামিয়া রহমান করেছেন দাবিতে একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সামিয়া রহমান আলোচিত মন্তব্যটি করেন নি। সামিয়া রহমান বিষয়টি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।

সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক সামিয়া রহমান“ভোট চুরি করে দেশ চালাতে পারলে থিসিস চুরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে সমস্যা কোথায়?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন উল্লেখ করে ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Samia Rahman – Facebook Account
  • Statement from Samia Rahman
  • Rumor Scanner’s own analysis

‘দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সর্বশেষ কবিতা নয়

0

সম্প্রতি, “দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে” শীর্ষক একটি কবিতাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সর্বশেষ কবিতা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

দুঃখের আঁধার রাত্রি

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে” শীর্ষক কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত সর্বশেষ কবিতা নয় বরং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সর্বশেষ কবিতা হলো “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি”।

মূলত, ১৯৪১ সালের ২৯ জুলাই রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে “দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে” কবিতাটি রচনা করেন। এই কবিতাটিকেই সম্প্রতি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সর্বশেষ কবিতা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত কবিতা রচনার একদিন পর অর্থাৎ, ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই কবিগুরু রচনা করেন “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি” কবিতাটি; যেটি তার জীবনের শেষ রচনা।

উল্লেখ্য, পূর্বেও দাবিটি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজন নয়, চারজন নিহত হয়েছেন 

গত ০৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে উক্ত দুর্ঘটনার ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে নিহতের দুইটি ভিন্ন সংখ্যা প্রচারিত হয়। অধিকাংশ গণমাধ্যমে নিহতের সংখ্যা ৪ জন বলে দাবি করা হলেও কিছু কিছু গণমাধ্যম নিহতের সংখ্যা ৫ জন বলে দাবি করা হয়। তবে যেসকল গণমাধ্যমে ৫ জন নিহত খবর প্রচার করা হয় তার মধ্যে অনেক গুলোতে পরবর্তীতে সংশোধন করে ৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়।

পরবর্তীতে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে রিউমর স্ক্যানার টিম।

ট্রেনে

পাঁচজন নিহত দাবিতে দেশীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন- নিউজবাংলা২৪, নয়া দিগন্ত, জাগোনিউজ২৪, জনকণ্ঠ, যুগান্তর, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, এখন টিভি, এক টাকার খবর (ফেসবুক) নাগরিক টিভি (ফেসবুক), ডেইলি ক্যাম্পাস, ঢাকা প্রকাশ, এবিনিউজ২৪, নিউজজি২৪, বাংলা২৪লাইভ নিউজপেপার, বাহান্ন নিউজ, বার্তা বাজার, ডেল্টা টাইমস, অর্থসূচক, দৈনিক সরোবর, জনমত, সময়ের কণ্ঠস্বর, আজকের বাংলাদেশ, জাগরণ, দৈনিক করতোয়া, আজকের দর্পণ, শেয়ারনিউজ২৪, দৈনিক করতোয়া– ২(ফেসবুক)।

একই দাবি দৈনিক আমাদের সময় প্রতিবেদন করলেও পরবর্তীতে তারা প্রতিবেদনটি সংশোধন করে নেয়। সংশোধন পূর্ববতী প্রতিবেদনের আর্কাইভ পাওয়া যায়নি।

পাঁচজন নিহত দাবিতে ভিনদেশী গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন- এই সময়, হিন্দুস্তান টাইমস, ফার্স্ট পোস্ট, দ্য ইকোনোমিক টাইমস, উইয়ন, নিউজ৯, ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি, আউটলুক ইন্ডিয়া, কালিঙ্গা টিভি, পর্দাফাঁস, প্রেগ নিউজ, মিন্ট, এডিটরজি, ইন্ডিয়া ব্লুম, নিউজ রুম ওডিশা, ইন্টারন্যাশনাল দ্য নিউজ, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, গলফ নিউজ। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজন নিহত হননি বরং উক্ত ঘটনায় সর্বমোট চারজন নিহত হয়েছেন।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ৯ জানুয়ারি “ট্রেন পোড়ানোর মামলায় নবীকে রিমান্ডে চায় রেল পুলিশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ০৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুরে ঢোকার আগে আগে আগুন লাগানো হলে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন পুড়ে মারা যান।

একই তারিখে আজকের পত্রিকা “বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন: রেল মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও সন্দেহ ৩ যুবককে নিয়ে” শীর্ষক শিরোনামে একটি আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

এই প্রতিবেদনেও চারজন নিহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। 

এছাড়া, ঘটনার দিন ০৫ জানুয়ারি বিবিসি বাংলা এবং ডয়েচে ভেলে-ও চারজন নিহতের তথ্য উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করে।

পাশাপাশি একই দিনদেশীয় মূলধারার অধিকাংশ গণমাধ্যম চারজন নিহত হওয়ার তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন- প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, কালের কণ্ঠ এবং সমকাল। 

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। 

অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, আহতাবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা কেউ মারা যাননি। 

পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। 

মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, “চারজনের লাশ হাসপাতালে আনা হয়েছে। এছাড়া কেউ মারা যাননি। চিকিৎসাধীন থাকা কেউ মারা যাননি।” 

মূলত, গত ০৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগ কাঁচাবাজার এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনটির কয়েকটি বগি আগুনে পুড়ে যায়। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ মোট চারজন পুড়ে মারা যান। তবে এই ঘটনাটিকেই পরবর্তীতে কতিপয় দেশীয় এবং ভিনদেশী গণমাধ্যমে কোনো প্রকার তথ্যপ্রমাণ ব্যতীত পাঁচজন নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়।

সুতরাং, রাজধানীতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে পাঁচজন নিহত হওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়; যা বিভ্রান্তিকর।  

তথ্যসূত্র

সংসদে জি এম কাদের কর্তৃক ওবায়দুল কাদেরকে পেটানোর গুজব 

0

গত ৩১ জানুয়ারি Sabai Shiki নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে “সংসদে ওবায়দুল কাদেরকে পিটালো জিএম কাদের, ভয়ে সংসদ বন্ধের নির্দেশ” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং “সংসদে বসেই ওবায়দুল কাদেরকে পি*টা*লো জিএম কাদের, হাসিনার অধিনে সংসদ বয়কট” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

সংসদে জি এম

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভাইরাল এক  ভিডিও দেখা হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ১৫ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ৩ হাজার হাজার ২০৯  পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

পরবর্তীতে আরও একটি ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি’র লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংসদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পিটাননি এবং গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম অধিবেশনে সংসদ বন্ধ কিংবা বয়কটের ঘটনাও ঘটেনি বরং গত ২৮ জানুয়ারি মালদ্বীপের সংসদে সরকারি ও বিরোধীদলীয় এমপিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এবং গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংসদে জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে উদ্দেশ্য করে লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মোতাহার হোসেনের দেওয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের উত্তেজিত হওয়ার ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও ওবায়দুল কাদেরকে জিএম কাদের পিটিয়েছেন এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ভিডিও কিংবা বক্তব্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি’র শিরোনাম ও থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত প্রথম তিনটি ভিডিও ক্লিপই গত ২৯ জানুয়ারি মালদ্বীপে সংসদের ভেতরে এমপিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম এটিএন নিউজ, যমুনা টিভি এবং ডিবিসি নিউজ এ প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।

Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 

আলোচিত ভিডিওর সর্বশেষ অংশে থাকা ভিডিওটির অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি “আবারও উত্তপ্ত জাতীয় সংসদ, জাপা এমপিদের ওয়াকআউটের হুমকি | Parliament | JaPa | Jamuna TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম অধিবেশন শুরু দিন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর নিজের বক্তব্য দিচ্ছিলেন লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মোতাহার হোসেন। কথা প্রসঙ্গে সংসদকে তিনি জানান, অনেক আগে সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জামানত হারিয়েছিলেন তার কাছে। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন জাপা এমপিরা। এ ইস্যুতে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলতে না দিলে ওয়াকআউটের হুমকি দেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ডেপুটি স্পিকারের জায়গায় কার্যক্রম চালানোর দায়িত্ব নিজ হাতে নেন স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী।

তবে এই ঘটনায় সরকার ও বিরোধীদলের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতি, সংঘর্ষ কিংবা সংসদ বন্ধ বা বয়কটের ঘটনা ঘটেনি।

অর্থাৎ, উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলোর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলো আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে যুক্ত করা হয়েছে।  

এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে ওবায়দুল কাদেরকে জি এম কাদের পিটিয়েছেন কিংবা সংসদ বন্ধের নির্দেশ সম্পর্কিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ২৮ জানুয়ারি মালদ্বীপের সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জোর মন্ত্রীসভার সদস্যদের অনুমোদন দিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসে। মুইজ্জো সরকারের নতুন চার মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় যোগদানের বিলে প্রবল অসম্মতি জানান বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। সেসময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের চেম্বারে প্রবেশের বাধা দেন সরকারি দলের এমপিরা। এর থেকেই দুই দলের এমপিদের মধ্যে মারামারি ও চুল টানাটানির ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম অধিবেশনে লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মোতাহার হোসেন বলেন, অনেক আগে সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জামানত হারিয়েছিলেন তার কাছে। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক জাতীয় পার্টির সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এতে সংসদে হট্টগোল দেখা দিলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসব ঘটনা নিয়ে নিয়ে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের কিছু ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে “সংসদে ওবায়দুল কাদেরকে পিটালো জিএম কাদের, ভুয়ে সংসদ বন্ধের নির্দেশ” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং “সংসদে বসেই ওবায়দুল কাদেরকে পি*টা*লো জিএম কাদের, হাসিনার অধিনে সংসদ বয়কট” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে, দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে একাধিক ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, সংসদে ওবায়দুল কাদেরকে জিএম কাদের পিটিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বিয়ের বয়স মেয়েদের ১৬ বছর ও ছেলেদের ১৮ বছর নির্ধারণ করে নতুন আইন পাস হয়নি

0

সম্প্রতি, ‘বিয়ের বয়স মেয়েদের ১৬ বছর ও ছেলেদের ১৮ বছর নির্ধারণ করে মন্ত্রীসভায় নতুন আইন পাশ হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

নতুন আইন

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ের বয়স মেয়েদের ১৬ ও ছেলেদের ১৮ বছর নির্ধারণ করে মন্ত্রিসভায় নতুন আইন পাস হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধে প্রস্তাবিত আইনে উক্ত বয়সের কথা উল্লেখ থাকলেও পরবর্তীতে সেটি চূড়ান্তভাবে পাস হয়নি। তাছাড়া ২০১৭ সালে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাস হয়। উক্ত আইনে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলের ক্ষেত্রে ২১ বছর রাখা হয়েছে।

দাবিটি’র সূত্রপাত

কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় অনলাইন পোর্টাল বিডিসি নিউজ৭১ এ ২০১৯ সালের ০৩ অক্টোবর ‘বিয়ের বয়স মেয়েদের ১৬ বছর ও ছেলেদের ১৮ বছর বয়স করে মন্ত্রীসভায় নতুন আইন পাশ’ শীর্ষক শিরোনামে ও জনতার কথা বলে নামের পোর্টালে ২০২২ সালের ২৬ আগস্ট একই শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Collage by Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে উল্লেখিত তথ্যগুলো বিবিসি নিউজের বাংলা সংস্করণে ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘বাল্য বিবাহের দোষে শাস্তি বাড়ছে, কমছে বয়স’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যের সাথে ওই প্রতিবেদনগুলোর তথ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

বিবিসি নিউজে প্রকাশিত এসম্পর্কিত প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধে প্রস্তাবিত এক আইনে সাজা ও জরিমানার মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি বিয়ের বয়স কমিয়ে নারীদের জন্য ১৬ এবং পুরুষদের জন্য ১৮ করা হয়েছে।

তবে বিবিসি’র উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এসংক্রান্ত আইনটি প্রস্তাবিত ছিল। চূড়ান্তভাবে পাস হয়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ‘বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ ওয়েবসাইটে ‘সংসদে বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭ পাস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী বিয়ের জন্য সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর ও ছেলের ক্ষেত্রে ২১ বছর উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর কম বয়সীদের বিয়ের জন্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তৎকালীন মহিলা ও ,শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি জাতীয় সংসদে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে কণ্ঠভোটে সেটি পাস হয়।

তবে উক্ত আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”

Screenshot: Ministry of Law website

উক্ত ধারাতেও বিশেষ কোনো বয়সের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

তাছাড়া ২০১৭ সালে সংসদে উক্ত বিলটি পাশ হওয়ার পর তা সেবছরের মার্চে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত এই আইন সংশোধন কিংবা অন্যকোনো নতুন আইন পাসের কোনো তথ্য গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ২০১৭ সালে পাস হওয়া বাল্য বিবাহ নিরোধ বিলে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলের ক্ষেত্রে ২১ বছরই রয়েছে এবং এই আইনের বিশেষ বিধানেও নির্দিষ্ট কোনো বয়সের কথা উল্লেখ নেই।

মূলত, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধে প্রস্তাবিত এক আইনে সাজা ও জরিমানার মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি বিয়ের বয়স কমিয়ে নারীদের জন্য ১৬ এবং পুরুষদের জন্য ১৮ করা হয়। সেসময় এবিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে উক্ত আইনটি সেসময় চূড়ান্তভাবে পাস হয়নি। তবে উক্ত বিষয়টিকেই সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ের বয়স মেয়েদের ১৬ বছর ও ছেলেদের ১৮ বছর নির্ধারণ করে মন্ত্রিসভায় নতুন আইন পাশ হয়েছে শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০১৭ সালে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাস হয়। উক্ত আইনে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলের ক্ষেত্রে ২১ বছর রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালের পরবর্তী সময়ে এই আইন সংশোধন কিংবা এ বিষয়ে নতুন কোনো আইন পাস হয়নি।

সুতরাং, বিয়ের বয়স মেয়েদের ১৬ বছর ও ছেলেদের ১৮ বছর নির্ধারণ করে মন্ত্রিসভায় নতুন আইন পাস হয়েছে দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পদত্যাগের গুজব 

0

সম্প্রতি, ক্ষেপেছে সেনাবাহিনী পদত্যাগ করতে শুরু করেছে এমপি মন্ত্রীরা পাখির মত গুলি করে হত্যা শুরু শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

মন্ত্রীদের পদত্যাগের

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে ১১ হাজার বার। ভিডিওটিতে সাড়ে চারশতবারের বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের নবগঠিত সরকারের মন্ত্রী এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের কোনো সদস্য পদত্যাগ করেননি বরং ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পূর্বে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের দাবি সম্পর্কিত প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ভিডিও কিংবা বক্তব্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি’র শিরোনাম ও থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রথম দিকের ক্লিপটিতে প্রদর্শিত বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম দেশ টিভি এর লোগো’র সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া Desh TV এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ জানুয়ারি “আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করেছে: মঈন খান” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের একটি অংশই আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ দেশে এক দলীয় বাকশাল শাসন কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, ‘সারা বিশ্ব বলছে গত ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা সুষ্ঠু হয়নি।’ গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণফোরাম এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টির আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

তবে উক্ত প্রতিবেদনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব ছাড়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য উপস্থাপিত হয়নি।

ভিডিও যাচাই ০২

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, Sheershanews নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর “বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপকহারে গ্রেপ্তার করায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। 

আলচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর আরও একটি ভিডিও ফুটেজে বিজিবি’র সিপাহি রহিস উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে কথা বলা হয়। উক্ত বিষয়ের সাথে আলোচিত দাবির সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।

পরবর্তীতে আলোচিত দাবির বিষয়ে গুগলে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ওয়েবসাইটে গত ১ ফেব্রুয়ারি “ঝিনাইদহ-১ আসনে আব্দুল হাইয়ের এমপি পদ স্থগিত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাইকোর্ট ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছে। গত ০১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের একক বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।

এই উক্ত ঘটনার সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়া, দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের পদত্যগের দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণফোরাম এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টির আলোচনায় বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে এক দলীয় বাকশাল শাসন কায়েম করেছে। সারা বিশ্ব বলছে গত ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা সুষ্ঠু হয়নি। এই তথ্যের ভিত্তিতে সেসময় বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেশ টিভিতে সংবাদ প্রচারিত হয়। এছাড়া একই বছরের নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে সেসময় শীর্ষ সংবাদ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও প্রচারিত হয়। সম্প্রতি, উক্ত পৃথক দুইটি সংবাদের ভিডিও ফুটেজ একত্রে যুক্ত করে জাতীয় সংসদের সদস্য ও মন্ত্রীরা পদত্যাগ করছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক সময়ে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পদত্যাগের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সুতরাং, ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো সংবাদ প্রতিবেদনের ফুটেজ যুক্ত করে জাতীয় সংসদের সদস্য ও মন্ত্রীরা পদত্যাগ করছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার গুজব

গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। তবে গতকাল ৩০ জানুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সংসদ ভেঙ্গে দিলো রাষ্ট্রপতি, পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো সিএসসি (সিইসি)’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘সংসদে হাসিনাকে লাল কার্ড, পুনরায় নির্বাচন ঘোষণা দিলো রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি কর্তৃক

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৬২ হাজার বার। ভিডিওটিতে ১ হাজারের বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

পরবর্তীতে আরও একটি ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম ও থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিগুলো হল-

  • রাষ্ট্রপতি পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন (থাম্বনেইল)
  • রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন (শিরোনাম)
  • সিইসি পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন (শিরোনাম)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ ভেঙে দেননি এবং রাষ্ট্রপতি কিংবা সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণাও দেননি বরং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি  তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কোথাও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া কিংবা রাষ্ট্রপতি ও সিইসি কর্তৃক পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের উদ্যোগের বিষয়ে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া উক্ত ভিডিওটিতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের কোনো ভিডিও ক্লিপও দেখা যায়নি। 

ভিডিওতে প্রচারিত এই দাবিগুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

অনুসন্ধানের এপর্যায়ে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই- ০১

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আরটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘নওগাঁ-২ আসনে ভোট স্থগিত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র শুরুর দিকের একটি ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটিতে দেখা যায়, নওগাঁ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হকের মৃত্যু হওয়ায় ওই আসনে ভোট গ্রহণ স্থগিতের বিষয়ে সেসময় গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বের এবং এর সাথে আলোচিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই- ০২

আলোচিত ভিডিওটি থেকে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যের ফুটেজ অংশের কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আরটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩০ জানুয়ারি ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটিতে গতকাল (৩০ জানুয়ারি) শুরু হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ভাষণ দিতে দেখা যায়। তিনি দীর্ঘ বক্তব্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দেশের উন্নয়ন, সংসদ ও সংসদ সদস্যদের ভূমিকাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।

অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের এই ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবির কোনো মিল নেই।

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ২৯৮ আসনের ফলাফলে ২২২ টি আসন লাভ করে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এরই মধ্যে ৩০ জানুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সংসদ ভেঙ্গে দিলো রাষ্ট্রপতি, পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো সিএসসি (সিইসি)’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘সংসদে হাসিনাকে লাল কার্ড, পুনরায় নির্বাচন ঘোষণা দিলো রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল বসিয়ে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি ও সিইসিকে জড়িয়ে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং রাষ্ট্রপতি ও সিইসি কর্তৃক পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সাকিবের আউট হয়ে ফেরার সময়ের এই ভিডিওতে ভুয়া ভুয়া ধ্বনি শোনা যায়নি

সম্প্রতি, দর্শকরা সাকিব আল হাসানকে ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি দিয়েছেন দাবিতে গত ২৬ জানুয়ারি চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলা সাকিব আল হাসানের আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার সময়কার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

ভুয়া ভুয়া ধ্বনি

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই ভিডিও ব্যবহার করে ফেসবুকের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিপিএলে গত ২৬ জানুয়ারি খুলনা টাইগার্স বনাম রংপুর রাইডার্সের খেলায় সাকিবের আউট হয়ে ফেরার সময়ের এই ভিডিওতে ভুয়া ভুয়া ধ্বনি শোনা যায়নি বরং বিপিএলে গত ২০ জানুয়ারি আরেক ম্যাচে দর্শকদের ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনির শিকার হন সাকিব। উক্ত সময়ের অডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এই ভিডিওয়ের সঙ্গে যুক্ত করে ভাইরাল ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি এবং ভিডিওতে যুক্ত অডিওর বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

ভিডিও যাচাই 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা স্কোরবোর্ডের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খেলাধুলা বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল ‘T Sports Bangladesh’ এ গত ২৬ জানুয়ারি “Extended Highlights | Khulna Tigers vs Rangpur Riders | BPL 2024” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ম্যাচটির হাইলাইটস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner

৪০ মিনিট ০৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওর ৩১ মিনিটের পর থেকে আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কোথাও সাকিব আল হাসানকে উদ্দেশ্য করে দর্শকদের ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান শোনা যায়নি। 

অডিও যাচাই 

ভিডিওটিতে যুক্ত ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ দুয়োধ্বনির অনুসন্ধানে খেলাধুলা বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ‘T Sports’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ জানুয়ারি “Shakib vs Tamim | Match 3 | BPL 2024 | T Sports” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়৷ 

উক্ত ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০ জানুয়ারি সাকিব আল হাসানের রংপুর টাইগার্সের মুখোমুখি হয় তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশাল। উক্ত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের সপ্তম ওভারে ফরচুন বরিশালের ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল মুখোমুখি হন সাকিব আল হাসানের বোলিং এর। ওভারে শেষের দিকে দর্শকদের “ভুয়া ভুয়া” দুয়োধ্বনির শিকার হন সাকিব আল হাসান। 

উক্ত সময়ের ভিডিওর ২ মিনিট থেকে ২ মিনিট ৭ সেকেন্ড পর্যন্ত সাকিবকে উদ্দেশ্য করে দর্শকদের দেওয়া ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানের সাথে গত ২৬ জানুয়ারি ‘সাকিব আল হাসান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার সময় তাকে উদ্দেশ্যে করে দর্শক ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়েছে’ দাবিতে প্রচারিত আলোচ্য ভিডিওতে থাকা অডিওর মিল রয়েছে।

মূলত, গত ২৬ জানুয়ারি চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এ খুলনা টাইগার্সের মুখোমুখি হয় সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্স। উক্ত ম্যাচে সাকিব আল হাসান ৪ বলে ২ রান করে ক্যাচ আউট হয়ে মাঠ থেকে সাজঘরে ফেরার সময়কার একটি ভিডিও প্রচার করে সাকিবকে উদ্দেশ্য করে দর্শকরা ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি দিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে, গত ২৬ জানুয়ারি সাকিব আউট হয়ে মাঠ থেকে ফেরার সময়ের এই ভিডিওতে দর্শকদের কর্তৃক তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ দুয়োধ্বনি শোনা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, গত ২০ জানুয়ারি বিপিএলের আরেক ম্যাচে সাকিবকে উদ্দেশ্য করে দর্শকদের ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ দুয়োধ্বনি দেওয়ার সময়ের ভিডিওর অডিওস ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই অডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে তামিম ইকবালকে দর্শকরা ভুয়া ভুয়া দুয়োধ্বনি দিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছিল। 

সুতরাং, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ দুয়োধ্বনি যুক্ত গত ২৬ জানুয়ারি সাকিব আল হাসানের আউট হয়ে ফেরার সময়কার ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত। 

তথ্যসূত্র

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিষয়ে এই ভিডিওতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল কোনো মন্তব্য করেননি 

সম্প্রতি, আমার আইডল মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ শেষে রিয়াদকে প্রশংসায় ভাসালেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল– শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি এখন অবধি সাড়ে ছয় লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় তিন হাজার শেয়ার হয়েছে।

২০২৩ সালে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 
২০২৩ সালে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বাংলাদেশের ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে এমন কোনো মন্তব্য করেননি বরং গত বছর বিশ্বকাপ জয়ের পর ম্যাক্সওয়েলের প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও ব্যবহার করে ভিত্তিহীন এই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।  

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শুরুতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের একটি প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার কিছু অংশ দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কয়েকজন ক্রিকেটারের ছবি এবং ম্যাক্সওয়েলের ছবি ব্যবহার করে উপস্থাপক মনগড়া কিছু কথা বলেছেন। 

উপস্থাপক বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করবে রিয়াদ। আমার কথায় সত্যি হলো। ম্যাচ জয়ের পর বাংলাদেশের সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে একি বললেন অস্ট্রেলিয়ান হার্ড হিটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। বাজে একটি বিশ্বকাপ পার করেছে বাংলাদেশ দল। নয়টি ম্যাচের সাতটিতেই হার। বিশ্বকাপে পুরোপুরি ম্যানপুল ছিলো বাংলাদেশ দল। তবে, ব্যাতিক্রম ছিলেন একমাত্র মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শত ব্যর্থতার মধ্যে উজ্জ্বল একটি নাম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩২৮ রান করে হয়েছেন সেরা রান সংগ্রাহক। এমন উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পর রিয়াদকে নিয়ে মুখ খুলেছন অস্ট্রেলিয়ান হার্ড হিটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ম্যাচ শেষে এই হার্ড হিটার বলেন, রিয়াদকে আমি বেশ অনেক আগে থেকেই চিনি। সে দারুণ একজন ক্রিকেটার। বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র রিয়াদকেই আমি অনুসরণ করতাম। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আমি শুনেছিলাম তাকে নাকি বাদ দিতে চেয়েছিল ম্যানেজমেন্ট। এরপর যখন শুনলাম বিশ্বকাপে রিয়াদ খেলবে তারপরেই আমি বলেছিলাম দারুণ কিছু করে দেখাবে রিয়াদ। কারণ, সে ক্রিকেটের একজন কিংবদন্তি। এতবড় মাপের ক্রিকেটাররা দলের ব্যর্থতায়ও উজ্জ্বল থাকে নিজের পারফরম্যান্সে। রিয়াদেী ব্যাটিং দেখে একজন ফিনিশার হিসেবে আমি বেশ খুশি।”

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের প্রেস কনফারেন্সের বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে International Cricket Council এর ফেসবুকে পেজে গত বছরের (২০২৩) ২৫ অক্টোবর “Watch Australia’s #CWC23 post-match media conference” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

১২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের প্রেস কনফারেন্সের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গত বছর অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও এটি। এছাড়া, ভিডিওটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। 

পাশাপাশি, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, আমার আইডল মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ শেষে রিয়াদকে প্রশংসায় ভাসালেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল- শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন একটি প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও ক্লিপ এবং কয়েকটি ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, আমার আইডল মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ শেষে রিয়াদকে প্রশংসায় ভাসালেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কারের পর প্রথম হ্যালো বলার দাবিটি সত্য নয়

0

সম্প্রতি “জেনে নিন হ্যালো বলার ইতিহাস” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, হ্যালো’ একটা মেয়ের নাম। পুরো নাম মার্গারেট হ্যালো ( Margaret Hello)। তিনি আর কেউ নন – বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল এর গার্ল ফ্রেন্ড। গ্রাহাম বেল হলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক। আবিষ্কারের পর তিনি প্রথম যে কথাটি বলেন তা হচ্ছে “হ্যালো।” 

আলেক্সান্ডার

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মার্গারেট হ্যালো নামে গ্রাহামবেলের কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না এবং টেলিফোন আবিষ্কারের পর তিনি প্রথম শব্দ “হ্যালো” বলেননি বরং গ্রাহামবেলের স্ত্রীর নাম ছিল ম্যাবেল হাববার্ড। অপরদিকে টেলিফোন যোগাযোগে “হ্যালো” শব্দের প্রচলন ঘটান টমাস আলভা এডিসন।

মূলত, আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের মার্গারেট হ্যালো নামে কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না এবং টেলিফোন আবিষ্কারের পর তিনি প্রথম শব্দ “হ্যালো” বলেননি বরং গ্রাহামবেলের স্ত্রীর নাম ছিল ম্যাবেল হাববার্ড। এছাড়া ১৮৭৬ সালের ৭ মার্চ বেল যখন প্রথম সফলভাবে টেলিফোনে কল করতে সমর্থ হন, তখন তিনি সর্বপ্রথম কথা বলেছিলেন তার সহযোগী টমাস ওয়াটসনের সঙ্গে। তিনি তাকে বলেছিলেন, “মি. ওয়াটসন, এখানে আসুন। আমি আপনাকে দেখতে চাই।” যার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দাবির সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও এই দাবিটি ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।