ভারতের শিশুকে বাংলাদেশের শিশু বলে আর্থিক সহায়তার নামে প্রতারণা

সম্প্রতি “#আয়েশা_আক্তার_আলভিয়া কে বাচাতে এগিয়ে আসুন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আল খলিল হসপিটালে আয়েশাকে নেওয়া হয়, ডক্টর পরিক্ষা নিরিক্ষা করে জানায় আয়েশার ফুসফুস ছিদ্র ও কিডনি তে সমস্যা, বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে” শীর্ষক শিরোনামে এক শিশুর ছবি আর্থিক সাহায্যের আবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভাইরাল কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানেএখানেএখানেএখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় আয়েশা আক্তার আলভিয়া নামে প্রচারিত ছবির শিশুটি বাংলাদেশের নয় বরং ছবিগুলো Aashu Saini নামের ভারতের এক শিশুর।

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে “3-Year-Old’s Kidneys and Liver Are Failing, He Needs Your Help” শিরোনামে গণ-অর্থায়ন প্ল্যাটফর্ম Milaap ওয়েবসাইটের একটি ফান্ডরাইজিং পোস্টে ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়াও, Milaap এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং টুইটার একাউন্টে শিশুটির জন্য ফান্ডরাইজিং নিয়ে গত আগস্ট মাসে প্রকাশিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

মূলত, ছবিতে থাকা শিশুটির নাম আশু সাইনি,বয়সঃ ৩ বছর, লিঙ্গঃ ছেলে। Milaap এর ফান্ডরাইজিং পোস্ট হতে জানা যায়, আশু’র অ্যাকিউট লিভার ফেইলিউর, স্টেজ 3 অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিউর এবং হেমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোম (HUS) ধরা পড়ে। তার লিভার স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং তার কিডনি তার রক্ত ​​থেকে বর্জ্য ফিল্টার করতে পারে না। আশুর চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন বলে ডাক্তার জানিয়েছিলেন।

Image Source: Milaap

অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে আশু’র ছবি সংযুক্ত করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে; আয়েশা আক্তার আলভিয়া, পিতাঃ মোঃ হাকিম মিয়া, স্থায়ী বাসা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয় নগর পরিচয় দেয়া হচ্ছে এবং বলা হয়েছে আয়েশা আক্তার আলভিয়া বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আয়েশার ফুসফুস ছিদ্র ও কিডনি তে সমস্যা। সেখানে পিতার নাম মোঃ হাকিম মিয়া উল্লেখ থাকলেও সহযোগীতা পাঠানোর জন্য বিভিন্ন গ্রুপ-পেজে করা পোস্টগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন বিকাশ, নগদ, রকেট নাম্বার সংযুক্ত করা হয়েছে।

তবে বহুল ব্যবহৃত নাম্বারে (০১৮৫৯৪৬৯৬০২) রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। উক্ত নাম্বারটি Truecaller এবং Eyecon অ্যাপে সার্চ করার পর তা Fraud এবং Torun Mon Fd2 নামে প্রদর্শিত হচ্ছে।

এছাড়া প্রায় একই ক্যাপশনে ( ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার ব্যবহার করে ) ভিন্ন কিছু ছবি সংযুক্ত করে এধরণের সাহায্যের আবেদন গত কয়েকমাস মাস যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। সেসব পোস্ট গুলোতেও রোগীর বাবার নাম হাকিম মিয়া উল্লেখ থাকলেও নাম্বারের জায়গায় একেকজন পোস্টদাতা একেক নাম্বার ব্যবহার করেছে। এছাড়া, গত জুন মাসে করা পোস্টগুলোতে আয়েশাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আল খলিল হস্পিটালে নেয়ার তারিখ ১০ মে ২০২১ দেয়া ছিলো, কিন্তু অক্টোবর মাসে করা পোস্টগুলোতে সে তারিখ পরিবর্তন করে ১০ আগস্ট ২০২১ দেয়া হয়।

আয়েশা আক্তার আলভিয়া নামে ফেসবুকে হওয়া পোস্টগুলোতে থাকা ভিন্ন ভিন্ন নাম্বারের তালিকাঃ 01784248634, 01757235323, 01923878211, 01968601782, 01672635360, 01814099612

রিউমর স্ক্যানার টিম কিশোরগঞ্জ জেলার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, বর্তমানে এবং পূর্বে আয়েশা আক্তার আলভিয়া নামে কোনো রোগীর রেকর্ড নেই তাদের কাছে। তবে আয়েশা আক্তার আলভিয়া নামের বাংলাদেশের কোন শিশু বাস্তবিকভাবে রোগাক্রান্ত কিনা এবং তার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন কিনা তা নিশ্চিত করা যায়নি।

অর্থাৎ, আর্থিক সহায়তার নামে প্রতারণার উদ্দেশ্য ভারতীয় শিশু’র ছবি সম্বলিত পোস্ট বাংলাদেশী শিশু দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]

  • Claim Review: #আয়েশা_আক্তার_আলভিয়া কে বাচাতে এগিয়ে আসুন
  • Claimed By: Facebook Posts
  • Fact Check: False

[/su_box]

তথ্যসূত্র

  1. Milaap: https://milaap.org/fundraisers/help-aashu-saini
  2. Milaap: https://milaap.org/stories/help-aashu-saini
  3. Milaap FB Post: https://www.facebook.com/315603771494/posts/10160219124366495
  4. Milaap Tweet: https://twitter.com/milaapdotorg/status/1422200214258081793
  5. Jahurul Islam Medical College Statement

আরও পড়ুন

spot_img