Home Blog Page 531

ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি কর্তৃক সচিবালয় দখলে নেওয়ার ভুয়া তথ্য প্রচার

গত ২৩ ডিসেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাতেই হাসিনার পতন। ইশরাকের নেতৃত্বে সচিবালয় দখলে নিলো বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘রাতেই ইশরাকের নেতৃত্বে সচিবালয় দখলে নিলো বিএনপি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ইশরাক

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় আড়াই হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় ১২৩টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি সচিবালয় দখলে নেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন যেখানে ইশরাক হোসেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ এবং বিএনপির পুরোনো কার্যক্রমের বিভিন্ন দৃশ্য দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “রাতে বিশাল মিছিল নিয়ে রাজপথে নামেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। এর আগের দিন তারেক রহমানের নির্দেশে ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন থেকে সকল নাগরিকদের সরে যেতে বিশেষ আহ্বান জানান। এছাড়া ইশরাক হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ সরকারের জন্য অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। এজন্য বিএনপির আন্দোলনকে সমর্থন জানানোর বিশেষ অনুরোধ জানান।”

উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন দুইটি ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই-১

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইশরাক হোসেনের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর ‘ইশরাক হোসেন ঢাকা ৬ প্রত্যাহার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Ishraque Hossain Official YouTube

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

ভিডিও যাচাই-২

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইশরাক হোসেনের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ৮ ডিসেম্বর ‘সরকার পতনের একদফা দাবিতে ইশরাকের নেতৃত্বে মশাল মিছিল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Ishraque Hossain Official YouTube

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো দ্বিতীয় ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মশাল মিছিলের সময়ে ধারণকৃত। তবে উক্ত ভিডিওতে কোথাও সচিবালয় ঘেরাওয়ের দৃশ্য দেখানো হয়নি।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত ইশরাক হোসেনের হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি কর্তৃক সচিবালয় দখলে নেওয়ার দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি সচিবালয় দখলে নেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাতেই হাসিনার পতন। ইশরাকের নেতৃত্বে সচিবালয় দখলে নিলো বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘রাতেই ইশরাকের নেতৃত্বে সচিবালয় দখলে নিলো বিএনপি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও সেনাবাহিনীর সহায়তায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন ভবন দখলের ভুয়া খবর প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি সচিবালয় দখলে নিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নুরের নেতৃত্বে ঢাকা ঘেরাও করার দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, “এইমাত্র, রাতেই ঘেরাও ঢাকা || ফুঁসে উঠেছে নুর বাহিনী।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ঢাকা ঘেরাও

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে  ঢাকা ঘেরাওয়ের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০২২ সালের ০৭ অক্টোবরে ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মারধর করে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় গণ অধিকার পরিষদের মশাল মিছিলের ভিডিও। যা ভুয়া লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপের সহায়তায় সাম্প্রতিক ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, ২০২২ সালের ০৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে ঐ দিনই মশাল মিছিল করে গণ অধিকার পরিষদ। সম্প্রতি ঐ মশাল মিছিলের একটি ভিডিওকে নুর বাহিনীর রাতের মধ্যেই ঢাকা ঘেরাও করার ভিডিও দাবিতে  ভুয়া লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপের সহায়তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ভিডিওটি প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার তথ্যটি ভিত্তিহীন

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের চাপে

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০১

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতে একজন সংবাদ পাঠককে একটি সংবাদ প্রতিবেদন পড়ছেন। 

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া Jamuna TV এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর “গণবিক্ষোভের মুখে কিরগিজিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের সংবাদ পাঠকের দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

 Video Comparison: Rumor Scanner

সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কিরগিজিস্তানের বিরোধীদলের সহিংস বিক্ষোভের কারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কুবাতবেক বরোনভ পদত্যাগ করেন। বিক্ষোভরত বিরোধীদলের সমর্থকরা জাতীয় সংসদ ভবন, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও প্রধান নিরাপত্তা ভবন দখল করে নেয় এবং তারা নির্বাচন কমিশনকে সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে বাধ্য করে।

অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ২০২২ সালে কিরগিজিস্তানের বিরোধীদলের সহিংস বিক্ষোভের কারণে প্রধানমন্ত্রী কুবাতবেক বরোনভ পদত্যাগ করার ঘটনার সংবাদ পাঠের দৃশ্য প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০২

আলোচিত ভিডিওটির অনুসন্ধানে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া Somoy TV এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ সেপ্টেম্বরে “বেগম জিয়ার কিছু হলে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর বিচার হবে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের সংবাদ প্রতিবেদনের একটি মূহুর্তের দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তির দাবিতে সরকার বিরোধী আইনজীবীদের সংগঠন ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট পদযাত্রার আয়োজন করে।

এছাড়া দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার প্রেক্ষিতে কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে কোনো সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর কিরগিজিস্তানের বিরোধীদলের সহিংস বিক্ষোভের কারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কুবাতবেক বরোনভ পদত্যাগ করেন। সেই সময়ে উক্ত ঘটনা নিয়ে দেশিয় ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভিতে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়া গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তির দাবিতে সরকার বিরোধী আইনজীবীদের সংগঠন ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট পদযাত্রার আয়োজন করে। সম্প্রতি, যমুনা টিভির উক্ত সংবাদ উপস্থাপকের বলা “কিরগিজিস্তানে গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক বাক্য থেকে কিরগিজিস্তানে শব্দটি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী শীর্ষক তথ্যে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তির দাবিতে সরকার বিরোধী আইনজীবীদের সংগঠন ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট পদযাত্রার ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্র ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মাঠে নামার গুজব

সম্প্রতি, “সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে মাঠে নামলো বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ইশরাক

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মাঠে নামেননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটির প্রথমেই একটি সংবাদপাঠের ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়। ভিডিওর পরবর্তী অংশে একটি ভিডিও প্রতিবেদনের ফুটেজ ব্যবহার করা হয় যেখানে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে একাধিক বিএনপি নেতাকে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, NTV News ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর “রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ করছেন বিএনপিনেতারা | BNP | NTV News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর কিছু অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর  মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর “সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে মাঠে নামলো বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন | BD politics news | BD Election 2024” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওতে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের লিফলেট বিতরণের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

তবে, ভিডিওর কোথাও সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে ইশরাক হোসেনের প্রচার বিষয়ে কোনোরূপ তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 

এই উপলক্ষে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন মাঠে নেমেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন মাঠে নেমেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশের নির্বাচন বন্ধের জন্য শেখ হাসিনার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার গুজব 

সম্প্রতি, নির্বাচন বন্ধে হাসিনার উপর নিষেধাজ্ঞা দিলো জাতিসংঘ– শীর্ষক শিরোনামে এবং হাসিনার উপর চটলো, জাতিসংঘ দিলো রেড এলার্ট জরুরী নিষেধাজ্ঞা– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি জরা হচ্ছে, বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জাতিসংঘ। 

নির্বাচন বন্ধের

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি জাতিসংঘ বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের মুখপত্র স্টিফেন ডুজারিকের করা প্রেস ব্রিফিংয়ের একটি ভিডিও কেটে চটকদার থাম্বনেইলে তা প্রচার করা হচ্ছে। 

ভিডিও যাচাই 

আলোচিত ভিডিওটিতে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিককে বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে জাতিসংঘে লোগো দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ২২ ডিসেম্বর “Gaza, Gaza/Food Insecurity, Sudan & other topics – Daily Press Briefing (21 Dec 2023)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

৩০ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২১ মিনিটের পর থেকে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumour Scanner 

স্টিফেন ডুজারিককে সাংবাদিক মুশফিক ফজল আনসারী “গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সরকার আগামী ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং তারা অন্যান্য দলগুলোর নেতাকর্মীদের জেলে আটকে রাখছে৷ এপর্যন্ত ছয়জন মারাও গেছে। এখন জেনারেল সেক্রেটারি কী পদক্ষেপ নিবেন? শীর্ষক একটি প্রশ্ন করেন।

এই প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, মুশফিক (সাংবাদিকের নাম) আমি আপনার উত্তর আগেই দিয়ে দিয়েছি। আমরা নির্বাচনের পর পদক্ষেপ নিব। তবে, নির্বাচনের আগে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তনীয় থাকবে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। যেখানে ভোটাররা নির্দ্বিধায় ভোট দিতে পারবে৷ আমরা নির্বাচনের পর অবশ্যই এটি নিয়ে কথা বলবো। তবে, নির্বাচনের আগে আমাদের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয় থাকবে। 

অর্থাৎ, সাংবাদিক মুশফিক ফজল আনসারীর প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের মুখপত্র স্টিফেন ডুজারিক বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন। তখন স্টিফেন ডুজারিক নির্বাচন বন্ধ বা শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো কথা বলেননি। 

এছাড়া, জাতিসংঘ বাংলাদেশের নির্বাচন বন্ধে শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি, জাতিসংঘের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটেও এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।  

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে বেশ কয়েকজন ধরেই এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার দাবি জানিয়ে আসছে জাতিসংঘসহ বিভন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “নির্বাচন বন্ধে হাসিনার উপর নিষেধাজ্ঞা দিলো জাতিসংঘ” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় জাতিসংঘের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক মুশফিক ফজল আনসারীর প্রশ্ন এবং তার উত্তরের ঘটনার ভিডিওর সাথে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত ব্রেফিংয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিক মুশফিক ফজলের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের নির্বাচন বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সংক্রান্ত কোনো কথা বলেননি।

সুতরাং, জাতিসংঘ বাংলাদেশের নির্বাচন বন্ধে শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নির্বাচন বর্জন করে শাহজাহান ওমরের ক্ষমা চাওয়ার গুজব

সম্প্রতি, “সিইসি নিজেই হাসিনাকে অবৈধ ঘোষণা করলো নির্বাচন বর্জন করে ক্ষমা চাইলো শাহজাহান ওমর” শীর্ষক শিরোনাম এবং একই তথ্য সম্বলিত থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

শাহজাহান

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবৈধ ঘোষণা করেননি এবং নির্বাচন বর্জন করে শাহজাহান ওমরের ক্ষমা চাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন যেখানে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে কয়েকটি ভিডিও দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “দর্শক ইসি নিজেই এই সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করলেন। যেকোনো সময় পালিয়ে যাবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ভয়ঙ্কর বিপদ আসতেছে। শাহজাহান বিরত্তোম এটি বুঝেই কিন্তু আওয়ামীলীগ থেকে আবারও পল্টি নিলো।”

উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই – ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দেখানো হয়। উক্ত ভিডিও ক্লিপটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভয়েজ অব আমেরিকা বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ ডিসেম্বর  ‘হাবিবুল আউয়াল : তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোন মন্তব্য করা এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওটির ২৩ মিনিট ২২ সেকেন্ড সময় থেকে পরবর্তী এক মিনিট সময় পর্যন্ত অংশটুকু আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে ভয়েজ অব আমেরিকা বাংলায় এক সাক্ষাৎকার দেন তিনি। উক্ত সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

ভিডিও যাচাই – ০২ এবং ০৩ 

আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে পরবর্তীতে Voice Bangla নামক ইউটিউব চ্যানেলের গত ১৯ ডিসেম্বর “এক সপ্তার মধ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে? ইসি আনিসুর কিসের ইঙ্গিত দিলেন?। Mostofa Feroz। voice bangla” শীর্ষক শিরোনাম এবং গত ২০ ডিসেম্বর “শাহজাহান ওমরের পাশ থেকে সরে গেলো আওয়ামী লীগও..। Mostofa Feroz। voice bangla” শীর্ষক শিরোনামে পৃথক দুইটি ভিডিও (,) খুঁজে পাওয়া যায়।

এই দুইটি ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলোর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিও দুটিতেই ভয়েজ বাংলার প্রতিষ্ঠাতা এবং সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কতিপয় কিছু গণমাধ্যম প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন পাঠ করে নিজস্ব মতামত ব্যাক্ত করেন। 

ভিডিও যাচাই – ০৪ 

আলোচিত ভিডিওটির সর্বশেষ অংশে সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিও দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গোলাম মাওলা রনির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ২০ ডিসেম্বর একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওতে নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমানসহ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি তার নিজস্ব অভিমত ব্যাক্ত করেন। 

অর্থাৎ প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব কাজী হাবিবুল আউয়ালের অবৈধ ঘোষণা করার এবং নির্বাচন বর্জন করে শাহজাহান ওমরের ক্ষমা চাওয়া বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর হঠাৎ করেই বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপির সেসময়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর। এর পরপর তাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করার কথা জানায় বিএনপি। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর ২৮ অক্টোবরের বাস পোড়ানোর ঘটনার মামলায় জামিন পান তিনি।

গত ২২ ডিসেম্বর ঝালকাঠির রাজাপুর ডাকবাংলো মোড়ে ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে শাহজাহান ওমর বলেন,  ‘এবারকার নির্বাচন তো, কী নির্বাচন পাতছে। এটা তো কোনো নির্বাচন না। আরে বেডা! নির্বাচনের সক্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে, ভালো প্লেয়ার না থাকলে, উভয় পক্ষের মাইকিং, স্লোগান, মিটিং-মিছিল না থাকলে নির্বাচন মনে হয় না।’

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সবচেয়ে বড় চমক ছিল নিজ দলের নেতা বসিয়ে দিয়ে বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরকে ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রদান। শাহজাহান ওমরকে মনোনয়ন প্রদানের পর থেকে তিনি আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা বক্তব্য দিয়ে বার বারই খবরের শিরোনাম হচ্ছেন। এছাড়া আগামী নির্বাচন নিয়ে পেশাগত কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে কথা বলছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেটে “সিইসি নিজেই হাসিনাকে অবৈধ ঘোষণা করলো নির্বাচন বর্জন করে ক্ষমা চাইলো শাহজাহান ওমর” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সিইসির অবৈধ ঘোষণা এবং নির্বাচন বর্জন করে শাহজাহান ওমরের ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

জামালপুরে চা বাগান নেই, ভাইরাল ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ার 

0

সম্প্রতি, জামালপুরের দৃশ্য দাবিতে চা বাগানের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি রাস্তার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

জামালপুরে চা বাগান

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জামালপুরের দৃশ্য দাবিতে চা বাগানের মধ্য দিয়ে যাওয়া রাস্তার ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং জামালপুরে কোনো চা বাগানও নেই বরং ইন্দোনেশিয়ার একটি রাস্তার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে iman tv নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি শর্ট ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি একটি ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল। 

পরবর্তীতে, ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে একাধিক হ্যাশট্যাগযুক্ত একই স্থানের আরেকটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটির লোকেশন ইন্দোনেশিয়ার সিউইডে উল্লেখ করা।

Screenshot: Tiktok 

এরপর ইন্দোনেশিয়ার সিউইডে এমন জায়গা সম্পর্কে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দৃশ্যটির সদৃশ আরও কিছু ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দেশের চা বাগানের সর্বশেষ তালিকাতে জামালপুরে কোনো চা বাগান থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি জামালপুরের চা বাগানের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বাংলাদেশের জামালপুরের নয়, এমনকি জামালপুরে কোনো চা বাগানই নেই৷ প্রকৃতপক্ষে, ইন্দোনেশিয়ার এই দৃশ্যকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, ইন্দোনেশিয়ার রাস্তার দৃশ্যকে বাংলাদেশের জামালপুরের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

পুলিশের গুলিতে চরমোনাই পীর ফয়জুল করিমের নিহতের গুজব

গত ২২ ডিসেম্বর Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিলো চরমোনাই, পুলিশের গুলিতে ফয়জুল করিম নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

পুলিশের গুলিতে

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১৭ হাজার ৭ শত অধিক বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে ১ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

পরবর্তীতে একই ভিডিও নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশের গাড়িতে চরমোনাই পীর কর্তৃক আগুন লাগানো কিংবা পুলিশের গুলিতে চরমোনাই পীর ফয়জুল করিমের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কোথায় পুলিশের গাড়িতে আগুন কিংবা পুলিশের গুলিতে কারো নিহত হওয়ার দৃশ্য দেখা যায়নি।

ভিডিওটি’র বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২২ ডিসেম্বর ‘ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল থেকে সরাসরি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Islami Andolan Bangladesh Facebook

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

সেখানে উল্লেখিত বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ভিডিওটি গত ২২ ডিসেম্বর একতরফা নির্বাচন বাতিল,নতুন শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলের ঘটনার সময়ে ধারণকৃত।

তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিক্ষোভ মিছিলটি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেলেও সেখানে পুলিশের সাথে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তাছাড়া গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে অন্যকোনো ঘটনার প্রেক্ষিতেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কোনো নেতাকর্মী দ্বারা পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া কিংবা পুলিশের গুলিতে চরমোনাই পীর ফয়জুল করিমের নিহত হওয়ার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

বরং আজ ২৩ অক্টোবর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দলটির সিনিয়র নায়েবে আমীর ফয়জুল করিমকে একটি সেমিনারে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

Screenshot: Islami Andolan Bangladesh Facebook

মূলত, গত ২২ ডিসেম্বর একতরফা নির্বাচন বাতিল ও নতুন শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিক্ষোভ মিছিল করে। পরবর্তীতে সেটি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। এরপর উক্ত ঘটনার ভিডিও’র সাথে ‘পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিলো চরমোনাই, পুলিশের গুলিতে ফয়জুল করিম নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইল জুড়ে দিয়ে  ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। সম্প্রতি পুলিশের গাড়িতে চরমোনাই পীর কর্তৃক আগুন লাগানো কিংবা পুলিশের গুলিতে চরমোনাই পীর ফয়জুল করিমের নিহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র সিনিয়র নায়েবে আমীর ফয়জুল করিম বর্তমানে জীবিত এবং সুস্থ আছেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, পুলিশের গাড়িতে চরমোনাই পীর কর্তৃক আগুন লাগানো কিংবা পুলিশের গুলিতে চরমোনাই পীর ফয়জুল করিমের নিহত হওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বুক চিন চিন করছে হায় শীর্ষক নাচের ভিডিওটি নতুন শিক্ষাক্রমের সাথে সম্পর্কিত নয়

সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, একটি স্কুলের মাঠে একজন মেয়ে ও একজন পুরুষ বুক চিন চিন করছে নামক গানের সাথে নাচে অংশ নিয়েছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষাক্রমের দৃশ্য৷ 

বুক চিন চিন করছে হায়

উক্ত দাবিতে প্রচারিত এ সংক্রান্ত ফেসবুকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই ভিডিও পোস্ট করে একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। দাবি করছেন, এখানে যে মেয়েকে নাচতে দেখা যাচ্ছে সে তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী৷  

উক্ত দাবিতে প্রচারিত এ সংক্রান্ত ফেসবুকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়া, কিছু পোস্টে এই ভিডিওর দৃশ্যকে ছাত্রীর সাথে শিক্ষকের নাচের দৃশ্য বলে দাবি করেছেন।

উক্ত দাবিতে প্রচারিত এ সংক্রান্ত ফেসবুকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লিখিত দাবিগুলোতে সংযুক্ত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ১৫ লক্ষ বা ১.৫ মিলিয়ন বার দেখা হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বুক চিন চিন করছে শীর্ষক নাচের ভিডিওটি নতুন শিক্ষাক্রমের সাথে সম্পর্কিত নয় বরং কুমিল্লার ‘মাছিমপুর আর আর ইনস্টিটিউশন’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ও একজন যাদু শিল্পীর নাচের দৃশ্য এটি৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে অনুষ্ঠানস্থলের নাম ‘মাছিমপুর আর আর ইনস্টিটিউশন’ উল্লেখ পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook 

এই বিদ্যালয়টি কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় অবস্থিত। 

প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে Al Mamun Chhoton নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১০ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিওর (আর্কাইভ) অনুষ্ঠানস্থলের সাথে আলোচিত ভিডিওটির অনুষ্ঠানস্থলের দৃশ্যমান মিল পাওয়া যায়। 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি মাছিমপুর আর আর ইনস্টিটিউশনের ‘শিক্ষক কর্মচারীদের অবসরোত্তর সম্মাননা, কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও উপহার প্রদান এবং প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের ১৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন’ অনুষ্ঠানের ভিডিও। গত ২১ ফেব্রুয়ারি এই অনুষ্ঠানটি হয়েছিল। জনাব ছোটন সেসময়েও এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন। দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot: Facebook

জনাব ছোটনের অ্যাকাউন্ট (আর্কাইভ) পর্যবেক্ষণ করে জানা যাচ্ছে, তিনি মাছিমপুর আর আর ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সভাপতি। এই পরিষদই আলোচিত অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল। 

আমরা ছোটনের সাথে আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, এটা একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দৃশ্য। এখানে যে দুইজনকে নাচতে দেখা যাচ্ছে তাদের একজন ভাড়াটে যাদুশিল্পী এবং আরেক জন ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া ছাত্রী।

এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত গণমাধ্যমের সংবাদ দেখুন Gnews24, আলোকিত সকাল। 

মূলত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার তিতাসের ‘মাছিমপুর আর আর ইনস্টিটিউশন’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ও একজন যাদু শিল্পী বুক চিন চিন শীর্ষক গানের মাধ্যমে নাচ পরিবেশন করেন। উক্ত নাচের ভিডিও সম্প্রতি ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি নতুন শিক্ষাক্রমের দৃশ্য। 

উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য প্রতিরোধে অবদান রাখায় গত ০৯ ডিসেম্বর ‘পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, কুমিল্লার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ও একজন যাদু শিল্পীর নাচের দৃশ্যকে নতুন শিক্ষাক্রমের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • Al Mamun Chhoton: Facebook Post
  • Statement from Al Mamun Chhoton
  • Rumor Scanner’s own investigation 

মুফতি আমির হামজার কোলে থাকা শিশুটি তার সন্তান নয় 

0

সম্প্রতি, “৯২৫ দিন পর জালিমের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই ১৩ দিনের মধ্যে পুত্র সন্তানের বাবা হলেন প্রিয় শায়েখ মুফতি আমির হামজা” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে যেখানে শায়েখ মুফতি আমির হামজার কোলে একটি শিশুকে দেখা যাচ্ছে। 

আমির হামজা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিতে মুফতি আমির হামজার কোলে থাকা শিশুটি তার নয় বরং নেয়ামত উল্লাহ নিজামি নামক এক ব্যাক্তির সন্তানকে মুফতি আমির হামজার সন্তান দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে শুরুতে আলোচিত দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুক ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে একটি পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হচ্ছে। ‘প্রিয় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে সত্যের সন্ধান নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা আলোচিত পোস্টটিতে উক্ত দাবিটি প্রথম প্রচার করা হয় বলে প্রতীয়মান হয়। তবে বর্তমানে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।   

পোস্ট সরিয়ে ফেললেও এই পোস্টের স্ক্রিনশটই পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়েছে। 

পরবর্তীতে দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। একটি পোস্টের কমেন্ট সেকশনে ‘Mohammad Kafil Uddin’(আর্কাইভ) নামক এক ব্যাক্তি শিশুটি নেয়ামত উল্লাহর বলে মন্তব্য করেন। 

Screenshot: Facebook 

উক্ত মন্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘Neamat Ullah Nizami’(আর্কাইভ) নামক এক ব্যাক্তির ফেসবুক পেজে একই ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে (আর্কাইভ) পাই আমরা। উক্ত পোস্টের বিস্তারিত বর্ণনাতে তিনি উল্লেখ করেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমার দুই কন্যা ‘নাজিবা’ এবং ‘আকসা’ কে দেখতে আসলেন প্রিয় মুফাস্সির৷ হাফেজ মুফতী আমীর হামজা ভাই।”

Screenshot Comparison : Rumor Scanner 

এছাড়া উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনে মুফতি আমির হামজার আরও কিছু ছবি দেখতে পাই আমরা।

Screenshot : Facebook Post

মূলত, গত ০৫ ডিসেম্বর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান মুফতি আমির হামজা। পরবর্তীতে নেয়ামত উল্লাহ নিজামি নামক এক ব্যাক্তির নবজাতক শিশুকে দেখতে যান তিনি এবং সেখানে তিনি শিশুটি কোলে নিয়ে ছবি তুলেন। উক্ত ছবিটিকে “৯২৫ দিন পর জালিমের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই ১৩ দিনের মধ্যে পুত্র সন্তানের বাবা হলেন প্রিয় শায়েখ মুফতি আমির হামজা” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে আটক হন আমির হামজা। গত ০৪ ডিসেম্বর আদালত থেকে তিনি জামিনের আদেশ পান। পরবর্তীতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গত ৭ ডিসেম্বর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সুতরাং, ৯২৫ দিন পর জালিমের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই ১৩ দিনের মধ্যে পুত্র সন্তানের বাবা হলেন প্রিয় শায়েখ মুফতি আমির হামজা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র