ঢাবিতে ইফতার আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি

গত ১৩ মার্চ দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মচারীদের আবাসিক ভবন বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শীর্ষক সেমিনার করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকারের অভিযোগ তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে দেওয়া প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমানের একটি চিঠি এবং এ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে দাবি করা হচ্ছে, ঢাবিতে ইফতার আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। 

ঢাবিতে ইফতার

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পোস্ট দেখুন ফেস দ্য পিপল

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজসহ আরো কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বরং গত ১৩ মার্চ যে অনুষ্ঠানে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে তার প্রেক্ষিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানোর জন্য এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি না নেওয়ার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে দেওয়া প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমানের একটি চিঠিটি খুঁজে বের করেছি আমরা। গত ১৫ মার্চের এই নোটিশের বরাত দিয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যমের (, , , , ) খবরে দাবি করা হয়, ১৩ মার্চ যে অনুষ্ঠানে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে তার প্রেক্ষিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানোর জন্য এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি না নেওয়ার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

রিউমর স্ক্যানারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর মো. আশিকুল হক আমাদের কাছে চিঠিটির একটি কপি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে একই তথ্যই উল্লেখ রয়েছে। 

Image: Rumor Scanner’s own source

অর্থাৎ, চিঠিতে ইফতার নিষিদ্ধের কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। কিন্তু এ সংক্রান্ত সংবাদ এবং নিউজের ফটোকার্ড প্রচার করে ফেসবুকে উক্ত দাবিই করা হচ্ছে। 

রিউমর স্ক্যানার টিম তবু ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে দেখার চেষ্টা করেছে এই চিঠি প্রকাশ পরবর্তী সময়ে ঢাবিতে ইফতার আয়োজনে কোনো বাধা ছিল কিনা। 

আমরা যাচাই করে দেখেছি, গতকাল ২২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিয়াকান্দি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন, ২১ মার্চ দর্শন বিভাগের ১৫ তম ব্যাচ, ১৯ মার্চ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে এক খন্ড কলারোয়া সোনাই’ (প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা- ১ আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ স্বপন), ১৮ মার্চ ঢাবি মডেল ইউনাইটেড ন্যাশনস এসোসিয়েশন, ১৭ মার্চ আনোয়ারার স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন, ১৬ মার্চ মার্কেটিং বিভাগের ১২ তম ব্যাচ, একইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক্স আর্মি ক্যাডেটস এসোসিয়েশন, ১৫ মার্চ লাইসিয়াম (রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিবার, বঙ্গবন্ধু হল এর ইফতার আয়োজনের তথ্য ফেসবুকেই পাওয়া যাচ্ছে। 

তাছাড়া, গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজানের অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজানের আলোচনাসম্পর্কিত অনুষ্ঠান আয়োজনে কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রক্টর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। রমজানের অনুষ্ঠান আয়োজনে ‘নিষেধাজ্ঞা’ শব্দটির উল্লেখ ওই বিজ্ঞপ্তির কোথাও নেই।”

Collected from Facebook

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আসছে। কতিপয় রাজনৈতিক সংগঠনের অনুসারীরা পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছেন, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত রীতিনীতি লঙ্ঘিত ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে।

মূলত, গত ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শীর্ষক সেমিনারে হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে দেওয়া প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমানের একটি চিঠি এবং এ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ঢাবিতে ইফতার আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, উক্ত চিঠিতে ঢাবিতে ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজনে কোনো নিষেধাজ্ঞার বিষয় উল্লেখ নেই। বরং এটা উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানোর জন্য ১৩ মার্চের অনুষ্ঠানের মতো কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি না নেওয়ার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। তাছাড়া, ঢাবিতে এই চিঠি প্রকাশ পরবর্তী সময়েও একাধিক ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজনের তথ্য পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ একইসাথে ঢাবির পক্ষ থেকেও আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগের চিঠির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট বিভ্রান্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। 

সুতরাং, রমজানে ঢাবিতে ইফতার আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে: যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img