Home Blog Page 530

নিক্সন চৌধুরী নির্বাচনী প্রচারণায় ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে পালিয়ে যাওয়া বিষয়ক মন্তব্য করেননি

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের একটি বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে জনাব নিক্সনকে বলতে শোনা যায়, “নির্লজ্জের মতো পালাইয়ে যাইয়েন না। আমি আপনের সাথে ইলেকশন করতে চাই। আমি নির্বাচন করতে চাই কারণ আমার দেখতে হবে। দশ বছর আমি কষ্ট করসি। আমার কামাইটা কী। আপনি পালাই গেলে আমি খেলবো কার সাথে কাকা? আমার আদরের কাকা, আমার সম্মানের কাকা, আমার ইজ্জতের কাকা, একটু খেলবেন না? আপনি তো কয়েক মিটিংয়ে কইসেন, খেলা হবে। খেলা আবার বিশ মিনিটে ছাইড়া দিয়েন না৷ পুরা ৯০ মিনিট খেইলেন। আপনার কাছে হাত জোর কইরা আমি অনুরোধ করি কাকা, খেলা ছাইড়া পিছপা দিয়ে পলাইয়া যাইয়েন না। যেমন অবস্থা হইসে তালমাতাল, মনে হয় না, পুরা সময় খেলতে পারবেন।….”

ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উক্ত কথাগুলো বলে চ্যালেন্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী।

এইতো সময় নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত ভিডিওটি এখন অবধি দশ হাজারের অধিক মানুষ দেখেছেন। 

নিক্সন চৌধুরী

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত বক্তব্যটি নিক্সন চৌধুরী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে দেননি বরং একই আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে উদ্দেশ্য করে উক্ত বক্তব্য দেন তিনি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে বাংলাদেশ নিউজ টিউব (Bangladesh News Tube) নামে একটি পেজে গত ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত উক্ত বক্তব্যের একটি লাইভ ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

৯ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওতে ১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড সময় থেকে নিক্সনকে বলতে শোনা যায়, একটা দুইটা কাজী কেন হাজার কাজীও নিক্সন চৌধুরীর সামনে আইসা দাঁড়ানো ক্ষমতা নাই। ফাঁপরবাজি পরে করেন। পালানোর সময় হয়ে গেছে। পালানোর হুইসেল বাজছে। আমরা কিন্তু টের পাই, রাজনীতি করি।” 

এরপরই আলোচিত মন্তব্যগুলো করেন তিনি। 

আমরা লাইভ ভিডিওটির পুরো বক্তব্য শুনে দেখেছি। নিক্সন চৌধুরী তার বক্তব্যে বেশ কয়েকবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহর নাম উচ্চারণ করলেও ওবায়দুল কাদেরের নাম বা তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। 

প্রথম আলোর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের শেখপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী প্রচারণায় কাজী জাফর উল্যাহর বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন আওয়ামী যুবলীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। 

উক্ত বক্তব্যের বিষয়ে গণমাধ্যমের আরো কিছু সংবাদ দেখুন ডেইলি স্টার, ইনকিলাব।

মূলত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। এই আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ। গত ২১ ডিসেম্বর ফরিদপুরে এক নির্বাচনী সভায় নিক্সন চৌধুরীকে জাফর উল্যাহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নির্লজ্জের মতো পালাইয়ে যাইয়েন না। আমি আপনের সাথে ইলেকশন করতে চাই। আমি নির্বাচন করতে চাই কারণ আমার দেখতে হবে। দশ বছর আমি কষ্ট করসি। আমার কামাইটা কী। আপনি পালাই গেলে আমি খেলবো কার সাথে কাকা? আমার আদরের কাকা, আমার সম্মানের কাকা, আমার ইজ্জতের কাকা, একটু খেলবেন না? তবে ইন্টারনেটে এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে এই বক্তব্যটি নিক্সন ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, কাজী জাফর উল্যাহকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই আসনে আরো চার প্রার্থী রয়েছেন।

সুতরাং, নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে জাফর উল্যাহকে উদ্দেশ্য করে নিক্সন চৌধুরীর দেওয়া বক্তব্যকে ওবায়দুল কাদেরকে দেওয়া বক্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি

সম্প্রতি, “হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো সেনাবাহিনী, রাতেই সারাদেশে সেনা মোতায়ন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৭ মে “যুদ্ধ করতে চান? ৩০ মিনিটও টিকবেন না’ | Rangamati | Army Commander | Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, পার্বত্য নিউজ এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালে প্রকাশিত “পার্বত্য কোটা উপজাতি, অউপজাতি সবার জন্য প্রযোজ্য হতে হবে- মে. জে. সাইফুল আবেদীন” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীন ২০২১ সালের ২৬ মে রাঙামাটিতে এপিবিএন আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধনকালে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। সেসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা যদি যুদ্ধ করতে চান, আসুন যুদ্ধ করি । আপনারা এক হাজার দুই হাজার তিন হাজার লোক নিয়ে, আর এই ক’টা অস্ত্র নিয়ে আমাদের সাথে যদি যুদ্ধ করতে চান, আধা ঘন্টাও টিকতে পারবেন না।”

অর্থাৎ, সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীনের বক্তব্যটি পুরোনো এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেওয়া।

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Cumillar Kagoj এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ “কুমিল্লায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী, পুরোদমে কাল থেকে-” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, কালের কণ্ঠ এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ “কুমিল্লায় মাঠে সেনাবাহিনী, পুরোদমে কাল থেকে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Source: কালের কণ্ঠ

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে কুমিল্লায় মাঠে নামে সেনাবাহিনী। সেসময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর ৩১ বীরের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুব আলম বলেন, কুমিল্লা শহরে একটি ক্যাম্প এবং বাকিগুলো অন্য এমন স্থানে করা হবে যাতে একটি স্থান থেকে দুই-তিনটি উপজেলায় সহজে যাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, সেনা কর্মকর্তার ভিডিওটি করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ের।

ভিডিও যাচাই-৩

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Bangla Info Tube এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর “নির্বাচনে মাঠে সেনাবাহিনী! ! Live With Shahed Alam I Bangladesh Election talk I Vote 2018” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত ফুটেজগুলো পুরোনো এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গের। 

উল্লেখ্য, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে ইন এইড টু দ্যা সিভিল পাওয়ারের আওতায় সমগ্র বাংলাদেশের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে।

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার নিমিত্তে স্থানীয় বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে নির্বাচন বর্জন করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় “হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো সেনাবাহিনী, রাতেই সারাদেশে সেনা মোতায়ন” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নির্বাচন হবে না শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার

সম্প্রতি, “ভোট চাইতে গিয়ে ঝাড়ু পিটা খেলো আ.লীগ নির্বাচন হবে না বললো সিইসি” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

নির্বাচন হবে না

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ

উক্ত দাবিতে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি গত ২৫ ডিসেম্বর ‘Bd VIP News’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচার করা হয়। ভিডিওটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ অবধি প্রায় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৪ বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় ১২ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টটির মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন হবে না শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং ভোট চাইতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঝাড়ু পিটা খাওয়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তৈরি করা একটি ভিডিও প্রতিবেদন। যেখানে চ্যানেল ২৪, এটিএন বাংলার একটি ভিডিও প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নেত্রী রুমিন ফারহানার একটি ভিডিও দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, ‘দর্শক এবার ভোট চাইতে নিজ এলাকায় গেলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের সাহেব ভোট চাইতে যাওয়াই কিন্তু তার সাথে অনেক নেতাকর্মী ছিলো। এদিকে আওয়ামী লীগের ভোট চাইতে যাওয়াই আওয়ামীলীগ সমর্থকদের কঠিনভাবে ধাওয়া করলেন গ্রামের মহিলারা। ঝাড়ু নিয়ে যে দৌড়ানি দিয়েছেন সেটা নিয়ে ভিডিও এখন সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল…।’ 

ভিডিও যাচাই 

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রথমেই চ্যানেল ২৪ এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর “চট্টগ্রাম -১২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ঝাড়ু নিয়ে ধাওয়া দিলো নৌকার সমর্থকরা। Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।  

Video Comparison : Rumor Scanner 

পরবর্তী ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কালবেলা’র ওয়েবসাইটে গত ২৫ ডিসেম্বর “পটিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ঝাড়ু নিয়ে ধাওয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর (ঈগল) কর্মীরা গত ২৪ ডিসেম্বর উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের অলিরহাট এলাকায় গণসংযোগ করতে গেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর কিছু নারী সমর্থক তাদের ঝাড়ু নিয়ে ধাওয়া করে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। 

উক্ত ঘটনায় ঝাড়ু নিয়ে ধাওয়া করার ভিডিওটিকেই আলোচিত ভিডিওটিতে ‘ভোট চাইতে গিয়ে ঝাড়ু পিটা খেলো আ.লীগ ‘শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।  

পরবর্তী ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর “ভোটের পরিবেশে শতভাগ মন দিতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী! ATN News “ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দ্বিতীয় ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।

আলোচিত ভিডিওতে সর্বশেষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নেত্রী রুমিন ফারহানার একটি ভিডিও দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Rumeen’s Voice’ নামক ইউটিউব চ্যনেলে গত ২৪ ডিসেম্বর “এবার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন? Rumeen’s Voice। রুমিন ফারহানা। Rumeen Farhana” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সর্বশেষ ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটিতে রুমিন ফারহানা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব মতামত ব্যাক্ত করেন। 

অর্থাৎ ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে আলোচিত ভিডিওতে সিইসি কর্তৃক নির্বাচন হবে না শীর্ষক মন্তব্যের দাবি কিংবা ভোট চাইতে গিয়ে ঝাড়ু পিটা খেলো আ.লীগ শীর্ষক দাবি থাকলেও ভিডিওতে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না শীর্ষক কোনো মন্তব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেছেন বিষয়ক কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন হবে না শীর্ষক মন্তব্য করেছেন এবং ভোট চাইতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঝাড়ু পিটা খাওয়ার দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ভারতে আবিষ্কৃত নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নয়

সম্প্রতি, ভারতে আবিষ্কৃত হয়েছে নতুন প্রজাতির একটি ব্যাকটেরিয়া। গবেষকরা এর নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ডিবিসি নিউজ, বাংলাদেশ জার্নাল, বিবিএস বাংলা (ফেসবুক)। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজের পোস্টসহ অন্যান্য পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে টিকটকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে আবিষ্কৃত নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নয় বরং সংশ্লিষ্ট গবেষকরা এর নাম দিয়েছেন ‘প্যান্টোইয়া টেগোরি’।‌

এ বিষয়ে জানতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ভারতের সংবাদমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ ডিসেম্বর Pantoea Tagorei: Visva-Bharati University Names Plant-Beneficial Bacteria After Rabindranath Tagore শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের অধ্যাপক বোম্বা দাম ও তার পাঁচ সহকারী গবেষক পাঁচ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছেন। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘প্যান্টোইয়া টেগোরি’।‌ 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে এই ব্যাকটেরিয়ার নামকরণ কেন এমন প্রশ্নে গবেষকরা বলছেন, রবিঠাকুর নিজে গাছপালা পছন্দ করতেন এবং কৃষিকাজে তার নিজের নানা রকমের অবদান রয়েছে। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি বিজ্ঞানসাধনায় উৎসাহও দিতেন। 

অনুসন্ধানে গবেষণা দলটির সদস্য অরজিত মিশ্র কর্তৃক তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। 

টুইটে তিনি জানান, ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কারের ঘটনাটির মাধ্যমে তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান জানাতে তার নামের সাথে মিল রেখে ‘প্যান্টোইয়া টেগোরি’ নাম দিয়েছেন৷ 

Screenshot: X

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার সংক্রান্ত এই গবেষণা প্রতিবেদনটি ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মাইক্রোবায়োলজিতে (Indian Journal of Microbiology) প্রকাশিত হয়েছে। 

পরবর্তীতে জার্নালটিতে গত ১৪ ডিসেম্বর Pantoea tagorei sp. nov., a Rhizospheric Bacteria with Plant Growth-Promoting Activities শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Springer 

এই প্রতিবেদনেও ব্যাকটেরিয়াটির নামের বিষয়ে একই তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়।

মূলত, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি একটি ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন যার নামকরণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের সাথে মিল রেখে রাখা হয়েছে ‘প্যান্টোইয়া টেগোরি’।‌ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি সম্মান জানাতে এই নামকরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এই ঘটনাকে ব্যাকটেরিয়াটির নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, ভারতে নতুন আবিষ্কৃত ব্যাকটেরিয়ার নাম ‘প্যান্টোইয়া টেগোরি’ দেওয়া হলেও এর নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দাবিতে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

জ্বালানী তেলের অভাবে নয়, ৮টি ট্রেন বন্ধ নাশকতার শঙ্কায় 

0

সম্প্রতি জ্বালানী তেলের অভাবে ৮ টি ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

৮টি ট্রেন বন্ধ

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জ্বালানী তেলের অভাবে নয় বরং সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেনে নাশকতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার কারণে উক্ত ৮টি ট্রেনের চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ২২ ডিসেম্বর আটটি ট্রেনের চলাচল স্থগিত, দুটি সীমিত শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চলমান হরতাল-অবরোধে নাশকতা এড়াতে চার জোড়া ট্রেনের চলাচল স্থগিত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চলাচলের পথ সীমিত করা হয়েছে এক জোড়া ট্রেনের। এসব ট্রেনের সব কটিই রাতে চলাচল করে। 

প্রথম আলো বলছে, রেলের হিসাবে এক জোড়া ট্রেন হলো গন্তব্য স্থানে যাওয়া ও আসা। অর্থাৎ চার জোড়া ট্রেনের চলাচল স্থগিত মানে আটটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল হলো। 

রেলের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেছেন, এটা বড় কোনো ঘটনা নয়। রাতে কিছু ট্রেনে যাত্রী পাওয়া যায় না। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধও আছে। সার্বিক বিবেচনা করে কিছু ট্রেনের যাত্রা সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত রাখা হচ্ছে। আর একটি ট্রেনের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। 

পশ্চিম অঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, মূলত ট্রেনগুলো রাতে যাত্রা করে। আমরা নিরাপত্তা দিতে পারছি না। এজন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। নিরাপদ ট্রেন করতে যা যা করার দরকার অমরা মিটিং করে সেটি করছি।

এ বিষয়ে আরো কিছু গণমাধ্যমের সংবাদ দেখুন আজকের পত্রিকা, কালবেলা, যমুনা টিভি। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ট্রেনগুলো বন্ধ রাখার বিষয়ে নাশকতার শঙ্কা ব্যতিত জ্বালানী তেলের অভাব বা অন্য কোনো কারণ উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত নভেম্বর থেকে হরতাল-অবরোধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ট্রেনে আগুন দেওয়াসহ নানা ধরণের নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার শঙ্কায় সম্প্রতি আটটি ট্রেনের চলাচল সাময়িক বন্ধ রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। উক্ত ঘটনাকেই জ্বালানী তেলের অভাবে ট্রেনগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পূর্বে পুলিশ কর্তৃক ট্রেনে আগুন দেওয়ার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত একটি ভিডিওর বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, নিরাপত্তার শঙ্কায় দেশের আটটি ট্রেনে চলাচল বন্ধ রাখার ঘটনাকে জ্বালানী তেলের অভাবে ট্রেনগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

খালেদা জিয়াকে দেখতে আসলেন শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে মিথ্যা তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি, “হঠাৎ খালেদাকে দেখতে আসলেন হাসিনা,খালেদাকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছালো হাসিনা” শীর্ষক শিরোনাম এবং একই তথ্য সম্বলিত থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

খালেদা জিয়াকে

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে আসেননি এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছানোর কোনো ঘটনাও ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক পুরনো ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন এবং সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিও দেখানো হয়।  

উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই 

অনুসন্ধানের শুরুতেই সময় টেলিভিশন এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ দেখানো হয়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সময় টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি “সেদিন কেঁদেছিলেন খালেদা জিয়া,বিমর্ষ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীও।Arafat Rahman koko। Khaleda Zia” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির ১ মিনিট ৫ সেকেন্ড সময় থেকে ১ মিনিট ১২ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকু আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার বাসভবন গুলশানের ফিরোজায় দেখা করতে যান। 

ভিডিওটির পরবর্তী অংশে চ্যানেল ২৪ এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ “মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া” শীর্ষক শিরোনাম একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির প্রথম কয়েক সেকেন্ড অংশটুকু আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়। 

 Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের প্রথম অংশে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেল থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়।

ভিডিওটির সর্বশেষ অংশে সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনিকে দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে গোলাম মাওলা রনির ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর “বেগম জিয়াকে দেখতে প্রধানমন্ত্রী যাবেন!  ইটা কেমন দুঃস্বপ্ন!” শীর্ষক শিরোনামে একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটিতে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখতে যাবে বলে ধারণা করেন তিনি এবং এ বিষয়ে তিনি তার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। 

এই ভিডিওগুলো কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

অর্থাৎ প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরনো যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে খালেদা জিয়াকে দেখতে আসলেন শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছানোর কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও আলোচিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে ব্যাবহৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Bangladesh Awami league’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ “HPM Sheikh Hasina visits Zafar Iqbal at CMH”শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা প্রধানমন্ত্রীর ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে ব্যবহৃত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Comparison : Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদনে ব্যাবহৃত ছবিটিকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে সম্পাদনার মাধ্যমে ব্যাবহার করা হয়েছে। 

মূলত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দি হন। ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে এবং মামলা চলমান রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে “হঠাৎ খালেদাকে দেখতে আসলেন হাসিনা,খালেদাকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছালো হাসিনা” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, খালেদা জিয়াকে দেখতে আসলেন শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের সংঘর্ষে পুলিশ আহতের দাবিতে মিথ্যা তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি, পুলিশ বিএনপি জামায়াতের ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশকে পিটিয়ে মাথা ফাটালো– শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলা হয়েছে। 

পুলিশ, বিএনপি

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি এবং কোনো পুলিশ সদস্যও আহত হননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ঘটনার পুরোনো একটি ভিডিও ক্লিপ ও একটি সংবাদ প্রতিবেদন এবং কয়েকটি ছবি যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও।

ভিডিও যাচাই- ১

অনুসন্ধান করে এই ভিডিও সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভিডিও যাচাই- ২

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে একজন সংবাদ উপস্থাপককে সংবাদ উপস্থাপন করতে দেখা যায়। উপস্থাপকের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ ডিসেম্বর “তেজগাঁওয়ে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিলো দুবৃর্ত্তরা, ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে এক নারী ও তার শিশুসন্তানসহ ওই ট্রেনের চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। 

তখন ঘটনাস্থল থেকে লাইভ করেন যমুনা টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক। সেই লাইভের ভিডিও এটি। 

অর্থাৎ, পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার কোনো ভিডিও নয় বরং রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আগুনের ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদন এটি। 

পরবর্তীতে, দাবিটি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করতে গণমাধ্যম ও  সামাজিক মাধ্যমের কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিগত কয়েকবছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকরা দফায় দফায় বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী পক্ষসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলছে। এর প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশি বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তিকে জড়িয়ে নানা সময় নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘পুলিশ বিএনপি জামায়াতের ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশকে পিটিয়ে মাথা ফাটালো’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি নয়। প্রকৃতপক্ষে সম্প্রতি পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি এবংকি কোনো পুলিশ সদস্যও আহত হোননি। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতের সংঘর্ষে পুলিশকে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ওবায়দুল কাদের ও জি এম কাদেরের মৃত্যুর গুজব

সম্প্রতি, “জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুর নির্বাচন বন্ধ জিএম কাদের ও ওবায়দুল কাদের নিহত” শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

মৃত্যুর

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিহত হননি এবং ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন স্থগিত-ও করা হয়নি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি একটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর “মাদারীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে কু*পি*য়ে হ*ত্যা | Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, মাদারীপুরের কালকিনিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনিতে স্বতন্ত্র ও নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিবাদে জড়ায় দু’পক্ষ। এ ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী তহমিনা বেগমের এসকেন্দার খাঁ নামের এক সমর্থক নিহত হন। 

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর Voice Bangla ইউটিউব চ্যানেলে “স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কি নির্বাচনী মাঠে টিকতে পারবেন? Mostofa Feroz I Voice Bangla” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে নৌকা প্রার্থীদের প্রভাবের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে কতটা সুবিধা করতে পারবেন সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেইসাথে ভিডিওতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনা করতে দেখা যায়।

ভিডিও যাচাই-৩

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি’র ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বরের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা করতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, উপরোক্ত তিনটি ভিডিওকেই অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-৪

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে NTV News ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর “জাতীয় পার্টির প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে হা-ম-লা | NTV News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, জাতীয় পার্টির প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। 

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওর সূত্র ধরে, ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর দৈনিক মানবজমিন এর ওয়েবসাইটে “মৌলভীবাজারে জাপার নির্বাচনী কার্যালয়ে নৌকা সমর্থকদের হামলা ও ভাংচুর, আহত ৫” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজার-৩ সংসদীয় আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. আলতাফুর রহমানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা ও ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পাশপাশি প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “জাতীয় পার্টি মোটামুটি একটা উত্তরবঙ্গের দল: জি এম কাদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে আজ রোববার(২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জীবিত এবং সুস্থ্য আছেন।

এছাড়াও, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম আলো’র ওয়ারবসাইটে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর “ইসি কারও প্রার্থিতা বাতিল করলে আওয়ামী লীগের কিছু বলার নেই: কাদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রোববার(২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। যৌক্তিক কোনো কারণে সে রকম (প্রার্থিতা বাতিল) কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে আমাদের কিছু বলার নেই।’

অর্থাৎ, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জীবিত আছেন।

এছাড়াও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে আসন্ন ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিতের সত্যতা জানা যায়নি।

মূলত, আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিহত হয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান  জি এম কাদের নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভিডিওটি পুলিশ কর্তৃক ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনার নয়

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিএনপির ডাকা ও হরতাল অবরোধের সময় বেশ কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তদের দ্বারা ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গত ০১ নভেম্বরও বিএনপির অবরোধ চলাকালে পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশনের কাছে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা দেশি বোমা নিক্ষেপ করে। এই ঘটনার পরপর সেদিন ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

পাবনা জেলা প্রচার দল – Bnpp নামের একটি পেজ থেকে প্রচারিত ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, দুইজন পুলিশ সদস্য হাতে থাকা একটি বোতল ও কিছু তরল জাতীয় পদার্থ সম্বলিত পলিথিন নিয়ে রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশে আরো দুই ব্যক্তি এবং রেলওয়ের একজন গার্ডকে দেখা যাচ্ছে৷ পাঁচ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “পেট্রোল বোমা কারা মারে এবার দেখে নিন, মৈত্রী ট্রেনে পেট্রোল বোমা হামলার নাটক।”

ট্রেনে আগুন

এই ভিডিওটি এখন অবধি ২১ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে ২৭ হাজারেরও বেশি। এছাড়া, পোস্টটিতে প্রায় ৫০ হাজার পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টটির মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়। ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

সেসময় ভিডিওটি আরও একাধিক পেজ এবং অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

চলতি মাসেও ভিডিওটি সমজাতীয় দাবিতে ফের ইন্টারনেটে ছড়াতে শুরু করেছে। 

এ সংক্রান্ত ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই ভিডিও টিকটকে দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি পুলিশ কর্তৃক ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনার নয় বরং গত ০১ নভেম্বর পাবনায় মৈত্রী ট্রেনে বোমা নিক্ষেপের ঘটনা পরবর্তী সময়ে ঘটনাস্থল থেকে জব্দকৃত আলামত পুলিশের হাতে দেখা যাওয়ার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে গত ০১ নভেম্বর উক্ত দাবিতে প্রকাশিত ভাইরাল পোস্টটি বিশ্লেষণ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে কোনো স্থান এবং উপস্থিত ব্যক্তিদের পোশাক থেকে তাদের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় ভিডিওটির ক্যাপশনের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করেছি আমরা। 

ক্যাপশনে মৈত্রী ট্রেনে হামলার তথ্যের সূত্রে সেদিন দেশের একাধিক গণমাধ্যমে (, , ) পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশনের কাছে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলার একটি খবর নজরে আসে আমাদের। 

খবরে বলা হয়, বিএনপির তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সেদিন  দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী জংশন ও বাইপাস স্টেশনের মাঝামাঝি লোকোশেড এলাকায় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙেছে। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

গণমাধ্যমকে সেসময় ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুজ্জামান রুমেল বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে একটি বোতল ও ভেতরে পেট্রল জাতীয় কিছু পদার্থ জব্দ করা হয়েছে।’

একই তথ্য দিয়েছেন পাকশী রেলওয়ে জোনের পুলিশ সুপার সাহাবউদ্দীন।

এ বিষয়ে ফেসবুকের দুইটি পেজে সেদিন একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। দুইটি ভিডিওতেই (, ) ভাইরাল ভিডিওর ক্লিপটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot collage: Rumor Scanner 

আরেকটি ভিডিওতে একজন পুলিশের হাতে উক্ত আলামতগুলো দেখা যায়। ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তির জিজ্ঞাসার জবাবে তাকে জানানো হয়, এগুলো পেট্রোল বোমা। 

অর্থাৎ, পুলিশ যেসব আলামত জব্দের কথা বলছে তা থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয়ে যে, ভাইরাল ভিডিওতে পুলিশের হাতে থাকা বস্তুগুলোই এসব আলামত। 

মূলত, সম্প্রতি দেশে বিএনপির ডাকা ও হরতাল অবরোধের সময় বেশ কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তদের দ্বারা ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশই ট্রেনে আগুন লাগিয়েছে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, দুইজন পুলিশ সদস্য হাতে থাকা একটি বোতল ও কিছু তরল জাতীয় পদার্থ সম্বলিত পলিথিন নিয়ে রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশ কর্তৃক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগানোর এই দাবিটি সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে, গত ০১ নভেম্বর বিএনপির অবরোধ চলাকালে পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশনের কাছে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা দেশি বোমা নিক্ষেপ করে। দুর্বৃত্তদের ঐ হামলার পর পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে কিছু আলামত জব্দ করে। ঘটনাস্থলে পুলিশের হাতে থাকা সেসব আলামতের ভিডিও সেসময় গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। যা সেসময় এবং পরবর্তীতে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ কর্তৃক ট্রেনে আগুন ধরানোর দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পূর্বে টিয়ার শেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ ও সাংবাদিকের চেষ্টাকে বিএনপির ডাকা ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিক মিলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হলে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, গত নভেম্বরে ট্রেনে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনার পর পুলিশের জব্দকৃত আলামত পুলিশের হাতে থাকাকালীন ধারণকৃত ভিডিওকে পুলিশ কর্তৃক ট্রেনে আগুন দেওয়ার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

প্রধানমন্ত্রীসহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মিথ্যা দাবি প্রচার

সম্প্রতি, “প্রধানমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা চিঠি প্রকাশ করলো ডে বাইডেনে,নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে” শীর্ষক শিরোনাম এবং “প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

৩০ মন্ত্রীর উপর

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নেত্রী রুমিন ফারহানার একটি ভিডিও দেখানো হয়।

উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Rumeen’s Voice নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ ডিসেম্বর “মার্কিন রাষ্ট্রদূত ভারতে গেলেন কেন?।Rumee’s Voice। রুমিন ফারহানা। Rumeen Farhana” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটিতে রুমিন ফারহানা বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ভারত সফর এবং আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজস্ব অভিমত ব্যাক্ত করেন। 

অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বিষয়ক কোনো তথ্যের উপস্থিতি ছিলো না। ভিডিওটিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে রুমিন ফারহানার বক্তব্য যুক্ত করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে, প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সামাজিক মাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে, দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীসহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে  প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি “প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেনা। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ঘটনার  ভিডিও যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীসহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র