সম্প্রতি, সময় টিভি’র লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ডে “বিটিএস আর্মি ভি নিজে স্বীকার করলেন তার লিঙ্গ নেই তিনি একজন হিজলা” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিটিএস তারকা ভি’কে নিয়ে উক্ত শিরোনামে সময় টিভি কোনো ভিডিও, ফটোকার্ড, নিউজস্ক্রল কিংবা প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে সময় টিভি’র লোগো যুক্ত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত দাবির সত্যতা শুরুতেই সময় টিভি’র ফেসবুক পেজে অনুসন্ধান চালায় রিউমার স্ক্যানার টিম। কিন্তু, অনুসন্ধানে সময় টিভি’র ফেসবুক পেজে উক্ত শিরোনামের কোনো ভিডিও, ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, সময় টিভি’র ফেসবুক পেজে প্রচলিত ফটোকার্ডের ডিজাইন ও ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডের ডিজাইন ও ফন্টের ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison Image By Rumor Scanner
পরবর্তীতে সময় টিভি’র ওয়েবসাইটে বিটিএস তারকা ভি’কে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বেশকিছু প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু, বিটিএস তারকা ভি’কে নিয়ে উক্ত শিরোনামের কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিটিএস তারকা ভি’কে নিয়ে সময় টিভি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন-
তাছাড়া সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনের নিউজ স্ক্রল পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে সময় টিভি’র প্রচলিত নিউজস্ক্রলের সাথে প্রচারিত ছবিটির বৈসাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison Image By Rumor Scanner
মূলত, সম্প্রতি বিটিএস তারকা ভি কে নিয়ে সময় টিভি’র লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। ফটোকার্ডটির শিরোনামে দাবি করা হয়েছে, “বিটিএস আর্মি ভি নিজে স্বীকার করলেন তার লিঙ্গ নেই তিনি একজন হিজলা”। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, সময় টিভি এরূপ কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, বিটিএস তারকা ভি’এর ছবির সাথে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভি’র লোগো ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে “বিটিএস আর্মি ভি নিজে স্বীকার করলেন তার লিঙ্গ নেই তিনি একজন হিজলা” শীর্ষক দাবিতে ফটোকার্ডটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও এনটিভি’র ফটোকার্ড বিকৃত করে ফুটবল কিংবদন্তি পেলে’র নেম ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, “বিটিএস আর্মি ভি নিজে স্বীকার করলেন তার লিঙ্গ নেই তিনি একজন হিজলা” শীর্ষক শিরোনামে ইন্টারনেটে প্রচারিত সময় টিভি’র লোগো সম্বলিত ফটোকার্ডটি বানোয়াট।
সম্প্রতি, “হঠাৎ ভিসা নিষেধাজ্ঞার ২৮০ এমপি মন্ত্রীর ওপরে নিষেধাজ্ঞা দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। নির্বাচন কমিশন সঙ্গে আলোচনার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে নির্বাচন হওয়ার আলোচনা হয় ইনশাআল্লাহ” শীর্ষক দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ২৮০ জন এমপি-মন্ত্রীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি।
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনারের সাথে বৈঠক করেছিলেন। সে বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেরই ভিডিও এটি।
অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
পরবর্তীতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ২৮০ জন এমপি-মন্ত্রীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সামাজিক মাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
মূলত, গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ২৮০ জন এমপি-মন্ত্রীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ২৮০ জন এমপি-মন্ত্রীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জুলিয়েট রোজের দাম ও উৎপাদনের সময়সীমার সম্পর্কে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সত্য নয় বরং এই তথ্যগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে ফুলটির উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে।
মূলত, ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড অস্টিন ১৫ বছরের একটি ব্যয়বহুল প্রজনন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ‘জুলিয়েট রোজ’ নামে গোলাপের একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরেই এই ফুলকে সবচেয়ে দামী ফুল, এর প্রতিটির মূল্য শতাধিক কোটি টাকা এবং একেকটি ফুল ফুটতে ১৫ বছর সময় লাগার দাবি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু অস্টিনের প্রতিষ্ঠান থেকে বিষয়গুলো সত্য নয় নিশ্চিত করে রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়, প্রতিটি জুলিয়েট রোজের পাইকারি মূল্য সাড়ে তিন ডলার। তাই এটি সবচেয়ে দামি ফুলও নয়। এমনকি এই ফুল ফুটতে ১৫ বছর সময় লাগার দাবিটিও সঠিক নয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও তথ্যটি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি ফাতেমা (রা.) এর কবরের দৃশ্য নয় বরং উসমান ইবনে আফফান (রা.) এর কবরের দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) কবর সৌদি আরবের মদিনা শরীফের মসজিদে নববীর দক্ষিণ পূর্ব দিকে “জান্নাতুল বাকি” নামের কবরস্থানে অবস্থিত। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত উসমান ইবনে আফফান (রা.) এর ঐ কবরের ছবিকেই সাম্প্রতিক সময়ে ফাতেমা (রা.) এর কবরের ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ছবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর একমাত্র সঞ্চারণশীল মহাদেশ নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশই সঞ্চারণশীল।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর “Australia Is Drifting So Fast GPS Can’t Keep Up” শীর্ষক শিরোনামের একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, পৃথিবীর সকল মহাদেশ ভিন্ন ভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত। এই টেকটোনিক প্লেটগুলো প্রতিনিয়ত সঞ্চারণশীল। টেকটোনিক প্লেটের এই স্থানচ্যুতির কারণেই প্রতিনিয়তই মহাদেশগুলো নিজ স্থান থেকে খানিকটা সরে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ যে টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত প্রতিবছর নিজ স্থান থেকে ২.৭ ইঞ্চি সরে যাচ্ছে। আবার উত্তর আমেরিকার স্থানচ্যুতির পরিমাণ বছরে প্রায় ১ ইঞ্চি। একইভাবে প্যাসিফিক প্লেট বছরে প্রায় ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি দূরে সরে যাচ্ছে।
Source: National Geographic
নিবন্ধ থেকে এও জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ যে টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত তা তুলনামূলক দ্রুত গতিতে সঞ্চারিত হচ্ছে। ১৯৯৪ সালে জিপিএস স্থানাঙ্কের সর্বশেষ সমন্বয়ের পর থেকে সে নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান প্রায় ৪.৯ ফুটের মতো সরে গেছে।
অর্থাৎ, পৃথিবীর সকল মহাদেশেরই কমবেশি স্থানচ্যুতি ঘটছে।
এছাড়াও, Ireland Geological Survey এর ওয়েবসাইটে “The Earth through time” শীর্ষক শিরোনামের একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
Source: Ireland Geographical Survey
উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে টেকটোনিক প্লেটগুলোর সঞ্চারণ ঘটে চলেছে। টেকটোনিক প্লেট সমূহের ক্রমাগত স্থানচ্যুতি ও সঞ্চারণের ফলেই পৃথিবী পৌঁছেছে আজকের অবস্থায়।
এছাড়াও, নিবন্ধটিতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মহাদেশগুলোর অবস্থানও দেখানো হয়েছে।
উক্ত নিবন্ধের সাথে সংযুক্ত ভিডিওতে গ্রাফিক্সের সাহায্যে গত ১০০ মিলিয়ন বছরে পৃথিবীর মহাদেশগুলোর অবস্থান পরিবর্তন ও এর গতিপথ চিত্রায়িত করা হয়েছে।
মূলত, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ যে টেকটনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত সেটি তুলনামূলক দ্রুত গতিতে সঞ্চারিত হচ্ছে। এ ঘটনাকেই সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর একমাত্র চলন্ত মহাদেশ দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর মহাদেশগুলো ভিন্ন ভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের ওপর মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে সঞ্চারণশীল অবস্থায় আছে এবং মহাদেশগুলোর এ সঞ্চারণশীলতা এখনও চলমান।
সুতরাং, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ পৃথিবীর একমাত্র চলন্ত মহাদেশ দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনীর চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে “বাংলাদেশ দখলে নিল মায়ানমার সীমান্তে ব্যাপক যুদ্ধ বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে জান্তা বাহিনী” শীর্ষক শিরোনাম এবং “বাংলাদেশ দখলে নিল মায়ানমার” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশ দখলে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনীর চলমান সংঘাতের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক ভিন্ন ঘটনার সংবাদের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি।
ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই ০১
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৬ ফেব্রুয়ারি “বাংলাদেশে ঢুকার অপেক্ষায় সীমান্তে হাজারও রোহিঙ্গা!। Myanmar। Jamuna TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
Video Comparison : Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘর্ষে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় থাকা দেশটির নাগরিকদের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে বলা হয়।
ভিডিও যাচাই ০২
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ ফেব্রুয়ারি “মিয়ানমার সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে যা বললো বিজিবি। BGB । Myanmar Border । Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
Video Comparison : Rumor Scanner
এই ভিডিওতে মিয়ামনার সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম বক্তব্য দেন।
ভিডিও যাচাই ০৩
প্রাসঙ্গিক একাধিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৬ ফেব্রুয়ারি “চরম ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে বাংলাদেশ। DBC। News Special” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির কিছু অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
Video Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওতে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে নিহত বাংলাদেশি নারী এবং একজন রোহিঙ্গার বিষয়ে বলা হয়।
ভিডিও যাচাই ০৪
আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত সর্বশেষ ভিডিওটির অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৭ ফেব্রুয়ারি “বার্মায় আমেরিকা বিজয়! ভারতের বিপর্যয়! সতর্ক না হলে বাংলাদেশের মহাবিপদ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে৷
Video Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওতে গোলাম মাওলা রনি চলমান মিয়ানমার সংঘাতের বিষয়ে এর সাথে সম্পৃক্ত একাধিক বিষয় নিয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করে।
উল্লেখ্য, সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হামলা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমার বর্ডার পুলিশের সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মূলত, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আবারও মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ উক্ত সংঘর্ষে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে দেশটির বহু মানুষ। এছাড়া উক্ত সংঘাতের ঘটনায় প্রাণে বাঁচতে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) প্রায় শতাধিক সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারা বর্তমানে তত্ত্বাবধানে বিজিবির ক্যাম্পগুলোতে আটক আছেন। এরই ধারাবাহিক সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ দখলে নিল মায়ানমার সীমান্তে ব্যাপক যুদ্ধ বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে জান্তা বাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে যে, আলোচিত দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনীর চলমান সংঘাতের ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশিসহ সহ দুই ব্যক্তির মৃত্যু এবং মিয়ানমার বর্ডার পুলিশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও তারা বর্তমানে বিজিবির নিকট আটক রয়েছেন এবং তাদের ফেরত নিতে দেশটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সুতরাং, মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশ দখলে নেওয়ার একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ফ্রেঞ্চাইজি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে খেলতে আসছেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল- শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চলমান চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ফ্রেঞ্চাইজি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলার জন্য গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সাথে কোনো চুক্তি হয়নি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া, ফ্রেঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্স তাঁদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে তথ্যটি মিথ্যা বলে একটি পোস্টও দিয়েছে।
শুরুতে আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
তবে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রেঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্স তাঁদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Rangpur Riders Facebook Page
উক্ত পোস্টটিতে বলা হয়, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বিপিএল খেলার জন্য কোন প্রস্তাবই দেয়নি রংপুর রাইডার্স, ম্যাক্সওয়েলও আগ্রহ দেখাননি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ভুল খবর পরিবেশিত হচ্ছে। নতুন কোন ক্রিকেটার দলে যুক্ত হলে রংপুর রাইডার্সের অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা জানিয়ে দেয়া হয়। অসত্য, ভুল, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন থেকে সবাই বিরত থাকি।
এছাড়া সম্প্রতি নিজেদের ফেসবুক পেজে একাধিক পোস্টের মাধ্যমে রংপুর রাইডার্স নতুন করে চার বিদেশি খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ানোর কথা জানিয়েছে। এর মধ্যেও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের নাম ছিল না। এই তালিকায় থাকা খেলোয়াড়রা হলেন ইমরান তাহির, জেমস নিশাম, রেজা হেনড্রিকস, টম মুরস।
মূলত, গত ১৯ জানুয়ারি দেশের ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেট লীগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর দশম আসর শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন ফ্রেঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে খেলতে আসছেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল- শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি মিথ্যা। এছাড়া রংপুর রাইডার্স তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আলোচিত দাবিটি মিথ্যা বলে জানিয়েছে।
সুতরাং, ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলতে আসছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল- শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে শুক্রবারের জুম্মা নামাজের পর জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা পিটিয়েছেন দাবিতে ‘জুম্মা শেষে ওবায়দুল কাদেরকে পিটালো জামায়াত শিবিরের লাখো নেতাকর্মীর’ শীর্ষক থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ওপর জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং গত ২৮ জানুয়ারি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নির্বাচন বাতিল করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দাবিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার বিক্ষোভ মিছিলের একটি ভিডিওতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার আলোচিত দাবিটি প্রচারিত করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে ভিডিওটির শুরুতে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ছোট ছোট কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। এরপর পুরো ভিডিওটি জুড়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার একটি বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওটির কোথাও ওবায়দুল কাদেরের ওপর জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের হামলার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। এছাড়াও এ বিষয়ে কোনো তথ্যও উপস্থাপন করা হয়নি।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ক্লিপগুলো অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভিডিওটির শুরুতে দেখানো ছোট ক্লিপগুলোর যথাযথ উৎসের সন্ধান পাওয়া না গেলেও Bangladesh Jamaat-e-Islami এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওর সাথে এটির হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রহসনের ডামি নির্বাচন বাতিল করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখা।’
এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাংলানিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ২৮ জানুয়ারি বিভাগীয় শহরে জামায়াতের বিক্ষোভ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: banglanews24
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ডামি নির্বাচন বাতিল করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে সারাদেশের সব মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে জামায়াতের মহানগরী শাখাগুলো। এর প্রেক্ষিতে রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াত।
Screenshot: banglanews24
তবে উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও উক্ত বিক্ষোভ মিছিলের দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ওপর জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের হামলা করার দাবির পক্ষের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও দেখা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি দিনটি রবিবার ছিল।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ওবায়দুল কাদেরর ওপর জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের হামলা করার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২৮ জানুয়ারি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নির্বাচন বাতিল করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে সারাদেশের সব মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহানগরী শাখাগুলো। উক্ত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াত। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টেকনিক্যাল মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। উক্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের একটি ভিডিওটিতে সম্প্রতি ‘জুম্মা শেষে ওবায়দুল কাদেরকে পিটালো জামায়াত শিবিরের লাখো নেতাকর্মীর’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে উক্ত মিছিল থেকে ওবায়দুল কাদের কিংবা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে পিটানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, জুম্মা শেষে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের ওবায়দুল কাদেরকে পেটানোর দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “সংসদে বসেই পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুনরায় নির্বাচনের অনুমোদন দিলো রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক শিরোনাম ও “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক দাবি সম্বলিত থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেননি এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নতুন নির্বাচনের অনুমোদন দেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি।
ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিগুলোর বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, এটি ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া একটি বক্তব্যের ভিডিওটি। ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনের পরও আলাপ-আলোচনা চলতে থাকবে। যদি এই আলোচনার মাধ্যমে যদি আমরা কোনো সমঝোতায় আসতে পারি, প্রয়োজনে আমরা পুনরায় নির্বাচন দিব।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের পর কোন সমঝোতা হলে, তখন সেই সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন হতে পারে।
ভিডিও যাচাই-২
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি “কী করবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর ৫২.১০ মিনিট থেকে ৫৩.২০ মিনিট পর্যন্ত অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে হলে তিনি বলেন, মিডটার্ম ইলেকশনের (মধ্যবর্তী নির্বাচন) বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং আমি দায়িত্ব নিয়েই এটি বলছি।
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিগুলোর সাথে উক্ত ভিডিওর কোনো সম্পর্ক নেই।
উক্ত ভিডিওতে অনলাইন এক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হককে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়।
কিন্তু, উক্ত ভিডিওর কোথাও আলোচিত দাবিগুলোর স্বপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে কোনো সমঝোতায় পৌঁছালে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে। তার সে পুরোনো বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পুনরায় নির্বাচনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পুনরায় নির্বাচনের অনুমোদন দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
বাংলাদেশে ২০২৩ এবং চলতি বছর (২০২৪) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের একাধিক শ্রেণিতে (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম) নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বা পাঠ্যক্রম চালু করেছে সরকার। ২০২৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতেও এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন আসার ফলে সাধারণত সংশ্লিষ্ট শ্রেণির বইগুলোতেও পরিবর্তন আসে। পঞ্চম শ্রেণিতে এ বছর যেহেতু শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন হয়নি, তাই স্বাভাবিকভাবেই এই শ্রেণির বইতেও পরিবর্তন আসার কথা নয়। কিন্তু এই শ্রেণির ‘ইংরেজি বইয়ে পরিবর্তন এসেছে’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ ছড়িয়ে পড়া লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত ২৪ জানুয়ারি কতিপয় ফেসবুক পোস্টে (১, ২) প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের একাধিক ছবি পোস্ট করা হয়।
পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ইংরেজি বইয়ের তিনটা পৃষ্ঠার ছবি দুইটি বই থেকে তুলে পোস্টগুলোতে যুক্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, একটি বইয়ের শিশুদের মধ্যে ছেলেদের পরনে টি-শার্ট ও প্যান্ট এবং মেয়েদের পরনে ফ্রক রয়েছে। তবে অন্য বইয়ের একই পৃষ্ঠায় একই ছেলের পরনে পাঞ্জাবি ও টুপি এবং মেয়েদের পরনে হিজাব রয়েছে। একইভাবে বাকি দুই পৃষ্ঠার ছবিগুলোতেও পোশাক সম্পর্কিত সমজাতীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “৫ম শ্রেণির বইয়ের টেক্সটে কোনো পরিবর্তন না আনলেও ইংরেজি বইয়ের কিছু ছবিতে এই সুন্দর পরিবর্তনটা চোখে পড়লো।”
Screenshot: Facebook
কিন্তু বইগুলো কোন সালের সংস্করণ তা এই পোস্টগুলো থেকে স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
পরদিন (২৫ জানুয়ারি) আরো কিছু পোস্ট (১, ২) ফেসবুকে এসেছে, যাতে একই পৃষ্ঠার ছবি যুক্ত থাকতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এসব পোস্টের ক্যাপশনে এই ছবিগুলোর বিষয়ে আরো স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে।
ক্যাপশন থেকে জানা যাচ্ছে, বইয়ের ছবি দুইটির একটি এক বছর আগের অর্থাৎ ২০২৩ সালের পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ের। অন্য ছবিটি চলতি (২০২৪) বছরের একই শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের।
দাবি করা হচ্ছে, চলতি বছরের বইয়ের লেখায় কোনো পরিবর্তন না হলেও বিবর্তন হয়েছে বইয়ের ছবিতে, বিশেষ করে হিজাব আর টুপিতে। টি-শার্ট পরা ছেলে দুই’টাকে পাঞ্জাবি পরানো হয়েছে, মাথায় টুপি দেয়া হয়েছে। ফ্রক পরা মেয়ে দুইটাকে ফুলহাতা কাপড় পরানো হয়েছে।
Screenshot: Facebook
এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে উল্লিখিত তথ্যগুলো সঠিক নয় দাবি করে ২৬ জানুয়ারি আরো কিছু পোস্ট নজরে এসেছে আমাদের।
এনায়েত উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি তার পোস্টে বলছেন, “৫ম শ্রেনীর ইংরেজি বই নিয়ে একটা ভুল বুঝাবুঝি চলছে। অনেকেই এই বইয়ের একই লেখায় দুই ধরনের ইলাস্ট্রেশন দেখিয়ে একটা ২০২৩ সালের আরেকটি ২০২৪ সালের বলে দাবী করছেন। সরকার কিভাবে মৌলবাদীদের চাপে বাচ্চাদের গতবছরের ছবিতে হিজাব টুপি পরিয়ে দিয়েছে বলে বিস্তর গালাগালি করছে।”
তার দাবি, “মূলত দুইটা ছবিই এই বছরের, ২০২৪ সালের শিক্ষাবর্ষের। যেই ছবিতে হিজাব টুপি নাই, সেটা জেনারেল লাইনের বাংলা এবং ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। অন্য যেই বইতে হিজাব এবং টুপি পরা ছবি আছে, সেটি এবতাদিয়া মিডিয়ামের ছাত্রছাত্রীদের জন্য।”
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, ফেসবুকে পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের দুইটি সংস্করণের ছবি নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে তার সারসংক্ষেপ এটাই যে, একদল বলছেন, গত বছরের বইয়ের সাথে চলতি বছরের বইয়ের ভেতরের কিছু ছবির মিল নেই। আরেক দল বলছেন, এই দাবিটি সঠিক নয়। দুটোই এই বছরেরই বই, যার একটি প্রাথমিক স্তরের (যেখানে হিজাব, টুপি বা ঘোমটা নেই ছবিতে), অন্যটি ইবতেদায়ি স্তরের (যেখানে হিজাব, টুপি বা ঘোমটা আছে ছবিতে)।
রিউমর স্ক্যানার টিম পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হতে অনুসন্ধান শুরু করে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর ওয়েবসাইটে প্রতি বছরই সে বছরের সকল শ্রেণির সকল মাধ্যমের বইগুলোর পিডিএফ সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরও (২০২৪) তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক স্তরের এ বছরের বইটির পিডিএফ সংস্করণ থেকে দেখা যাচ্ছে, বইতে শিশুদের পোশাকে কোনো পরিবর্তন নেই। ২০২৩ সালের প্রাথমিক স্তরের বইয়ের ছবির সাথে হুবহু মিল পাওয়া যাচ্ছে এই বইয়ের।
Screenshot collage: Rumor Scanner
একইভাবে ২০২৪ সালের ইবতেদায়ি স্তরের পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে থাকা ছবিগুলোতে শিশুদের পোশাকে ইসলামিক চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছে। অর্থাৎ, ছেলেদের পাঞ্জাবি-টুপি এবং মেয়েদের হিজাব পরতে দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের একই স্তরের বইয়ের পিডিএফ সংস্করণেও একই ছবি পেয়েছি আমরা।
Screenshot collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, এনসিটিবির ওয়েবসাইটের বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ থেকে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, যারা “দুইটা ছবিই ২০২৪ সালের এবং যে ছবিতে হিজাব টুপি নাই, তা প্রাথমিক স্তরের এবং যে বইতে হিজাব এবং টুপি পরা ছবি আছে, সেটি এবতেদায়ি স্তরের” বলে দাবি করছিলেন তাদের দাবিই সঠিক।
কিন্তু এই অনুসন্ধান আমরা এখানেই শেষ করিনি। রিউমর স্ক্যানার টিম সরেজমিনে দেশের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে চলতি বছরের প্রাথমিক স্তরের পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি বই সংগ্রহ করেছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
২০২৪ সালে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের কাছে বিতরণের জন্য ছাপাকৃত এই বইয়ের ১০ (৩য় ইউনিট), ১৩ (৩য় ইউনিট), ১৪ (৪র্থ ইউনিট) এবং ১৬ (৪র্থ ইউনিট) নং পৃষ্ঠায় থাকা ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের বইয়ের একই পৃষ্ঠার ছবিগুলোর সাথে উক্ত পৃষ্ঠার ছবিগুলোর মিল নেই। ছবিগুলোতে মেয়েদের হিজাব, নারীদের ঘোমটা, ছেলেদের পাঞ্জাবি-টুপি পরিহিত দেখা যায়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
এই বইতে ছাপাজনিত ত্রুটির কারণে ছবি পরিবর্তন হয়ে থাকতে পারে এই আশঙ্কায় রিউমর স্ক্যানার টিম দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বইয়ের সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠাগুলোর ছবি সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। আমরা চাঁদপুর, যশোর, কুমিল্লা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের একাধিক স্কুলের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে বইটির ছবি সংগ্রহ করে একই ফলাফল অর্থাৎ ছবিগুলোতে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি।
প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলোতে এই পরিবর্তন দেখা গেলেও ইবতেদায়ি স্তরের বইয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমরা ভোলার একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা থেকে ইংরেজি বই সংগ্রহ করে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে থাকা বইয়ের ছবির সাথে অমিল পাইনি।
অর্থাৎ, এনসিটিবি ২০২৪ সালের দাবিতে প্রাথমিক স্তরের ইংরেজির যে বইটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে তার চারটি পৃষ্ঠার ছবির সাথে দেশের স্কুলগুলোতে বিতরণ করা বইয়ের উক্ত চার পৃষ্ঠার ছবির মিল নেই।
পঞ্চম শ্রেণিতে এ বছর নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন না হলেও কেন এই শ্রেণির বইতে পরিবর্তন – এমন প্রশ্ন রেখেছিলাম এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামের কাছে। তার কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মোঃ মোখলেস উর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম আমরা। জনাব মোখলেস রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “স্যার (চেয়ারম্যান) আমাকে আপনার পাঠানো বিষয়টি দেখিয়েছেন। আমি যা ব্যাখ্যা দেওয়ার স্যারকে দিয়েছি। স্যারের বক্তব্যই আমার বক্তব্য।” আমরা পরবর্তীতে একাধিকবার এনসিটিবির চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, পঞ্চম শ্রেণিতে এ বছর নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন না হলেও বিতরণ করা প্রাথমিক স্তরের ইংরেজি বইয়ের চারটি পৃষ্ঠায় থাকা ছবিতে পরিবর্তন হয়েছে। তবে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বইয়ের ছবিতে এই পরিবর্তন নেই। ওয়েবসাইটের সাথে মাঠ পর্যায়ের বইয়ের এই গরমিলের কারণ নিয়ে এনসিটিবি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।