গৌরী খানের ‘তরী’ রেস্তোরাঁয় দুজনের এক বেলা ভরপেট খেতে লাখ টাকা খরচ হওয়ার দাবিটি মিথ্যা

গত ফেব্রুয়ারিতে মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকা বান্দ্রায় ‘তরী’ নামের একটি রেস্তোরাঁ খুলেন শাহরুখ খানের স্ত্রী, প্রযোজক ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গৌরী খান। সম্প্রতি এই রেস্তোরাঁ নিয়ে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের একাংশে দাবি করা হয়েছে, এই রেস্তোরাঁয় দুটো মানুষের ভরপেট খেতে পকেট থেকে লাখখানেক টাকা বেরিয়ে যাবে।

গৌরী খানের

এ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, বাংলা ইনসাইডার

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গৌরী খানের মালিকানাধীন তরী রেস্তোরাঁঁতে দুই ব্যক্তির ভরপেট খাওয়ার ব্যয় লাখ টাকা হওয়ার দাবিটি মিথ্যা। এই রেস্তোরাঁঁর তিনটি সর্বাধিক মূল্যবান খাবারের যোগফল এক লাখ টাকা অতিক্রম করে না এবং ভারতের দুইটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে এই রেস্তোরাঁয় দুই ব্যক্তির খাবারের ব্যয় মদসহ প্রায় ৫ হাজার রুপি।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্যসূত্র হিসেবে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এবং লাইফস্টাইল সংক্রান্ত প্ল্যাটফর্ম কার্লি টেলসের কথা উল্লেখ রয়েছে।

উক্ত বিষয়টি যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে হিন্দুস্তান টাইমসের ওয়েবসাইটে বাংলাইংরেজি ভাষায় যথাক্রম গত ১৫ ও ২২ ফেব্রুয়ারি গৌরী খানের রেস্তোরাঁ নিয়ে প্রকাশিত দুইটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিবেদনগুলোতে খাবারের মূল্য সংক্রান্ত আলোচ্য তথ্যটি পাওয়া যায়নি।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি কার্লি টেলসের ওয়েবসাইটে গৌরী খানের তরী রেস্তোরাঁ নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এই প্রতিবেদনেও খাবারের মূল্য সংক্রান্ত আলোচ্য পাওয়া যায়নি।

কার্লি টেলসের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তরী রেস্তোরাঁর একটি ভ্লগ ভিডিও প্রকাশিত হয়। প্রায় ৯ মিনিটের এই ভিডিওতেও আলোচ্য দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, কতিপয় গণমাধ্যম যে সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানাচ্ছে সেই সূত্রেই এসব তথ্য নেই। 

পরবর্তীতে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ফুড ডেলিভারি সংস্থা জমেটোর ওয়েবসাইটে রেস্তোরাঁটির খাদ্য তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়।

গুগল ম্যাপেও রেস্তোরাঁটির একই খাদ্য তালিকা পাওয়া যায়। এই খাবারের তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে উচ্চমূল্যের খাবার হলো ব্ল্যাক মিসো কড (Black Miso Cod), যার দাম হচ্ছে ৪৭০০ রুপি। এরপরের স্থানে রয়েছে ইয়াকিনিকু এনজেড ল্যাম্ব চপ (Yakiniku NZ Lamb Chop), যার মূল্য ৩৮০০ রুপি এবং ইয়াকিনিকু লবস্টার (Yakiniku Lobster), যার মূল্য ২৯০০ রুপি। তালিকায় থাকা সবচেয়ে দামি তিন খাবার মিলিয়েও ১২ হাজার রুপি অতিক্রম করে না। সুতরাং দুটো মানুষের ভরপেট খেতে লাখ টাকা খরচের কোনো সম্ভাবনাই নেই।

এছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই রেস্তোরাঁয় দুজন মানুষের খাওয়ার জন্য প্রায় ২,০০০ রুপি খরচ হতে পারে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই রেস্তোরাঁয় মদসহ দুজন মানুষের খাওয়ার জন্য প্রায় ৫ হাজার রুপি খরচ হতে পারে।

মূলত, গত ফেব্রুয়ারিতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় ‘তরী’ নামের একটি রেস্তোরাঁ খুলেন শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরী খান। এই রেস্তোরাঁ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই রেস্তোরাঁয় দুটো মানুষের ভরপেট খেতে প্রায় লাখখানেক টাকা ব্যয় হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দাবিটি সত্য নয়। রেস্তোরাঁটির মূল্য তালিকা অনুযায়ী এর সবচেয়ে দামি খাবারের মূল্য ৪৭০০ রুপি। রেস্তোরাঁটির সবচেয়ে দামি তিনটি খাবার মিলিয়েও লাখ টাকার আশে পাশে যায় না।

সুতরাং, গৌরী খানের তরী রেস্তোরাঁয় ভরপেট খেতে দুজন মানুষের লাখ টাকা খরচ হয় দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img