সম্প্রতি, ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে “ব্রেকিং নিউজ হাসিনার বিরুদ্ধে পিটারের ভয়ংকর রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে কারাবন্দী হাসিনা” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করেনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর কারাবন্দী হওয়ার দাবিটিও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপের সাথে উক্ত দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দী থাকার কোনো দৃশ্য বা তথ্য প্রমাণ দেখা যায়নি।
সাধারণত কোনো একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দী হলে সেটি নিয়ে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়া স্বাভাবিক। তবে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর কারাবন্ধী হওয়ার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি বরং আলোচিত দাবি প্রচারের পরবর্তী সময়ে অতীতের ন্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়মিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও বৈঠকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনে দেখুন –
- ইফতার পার্টি না করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা কেন?
- প্রধানমন্ত্রী বললেন, পুরুষদের বিরুদ্ধে বেশি কিছু বলে ভোট হারাতে চাই না
- জনসমর্থন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী
- জন্মবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই ০১
আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত প্রথম ভিডিওটির অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে 1A নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৭ মার্চ “আমেরিকা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেই – প্রফেসর হাসনাতের বিশ্লেষণ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিওতে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাংলাদেশের সামনে সম্ভাবনার সঙ্গে আছে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ শীর্ষক নিবন্ধ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ প্রফেসরড.মোহা.হাছানাত আলীকে আলোচনা করতে দেখা যায়। তবে ভিডিওর কোথাও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট প্রকাশ হওয়া কিংবা এমন কোনো রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়নি।
ভিডিও যাচাই ০২
দ্বিতীয় ভিডিওটির অনুসন্ধানে রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৭ মার্চ “পিটার হাসের নতুন তৎপরতা! পকেটে হোয়াইট হাউজের লাল কার্ড! কেউ আশায় বুক বাঁধছেন! অনেকে কাঁপছেন!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওতে গোলাম মাওলা রনিকে নয়া দিগন্তে পিটার হাসকে নিয়ে তার লিখা নিবন্ধ নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, পুরো ভিডিওর কোথাও আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো দৃশ্য কিংবা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ১৫ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোতে বাংলাদেশের সামনে যে সম্ভাবনা ও চ্যালেন্জ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন। যেখানে তিনি বলেন, “প্রতিদিন এই দেশের সম্ভাবনা, জনগণের শক্তি ও সহনশীলতা এবং এর প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ আমাকে মুগ্ধ করে। যেমনটা আমি গত বছর বলেছিলাম, বাংলাদেশ তার জন্মলগ্ন থেকে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এক দিন এক দিন করে এগিয়ে আসে—এমন এক ভবিষ্যৎ আমি দেখতে পাই, আমি এই দেশের সামনে সম্ভাবনা দেখতে পাই। তবে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও চোখে পড়ে।”
মূলত, গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর পূর্ন হলো বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের। এ উপলক্ষ্যে তিনি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধটিতে তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। পিটার হাসের উক্ত নিবন্ধকে কেন্দ্র করে “ব্রেকিং নিউজ হাসিনার বিরুদ্ধে পিটারের ভয়ংকর রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে কারাবন্দী হাসিনা” শীর্ষক থাম্বনেইলে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের রিপোর্ট প্রকাশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর কারাবন্দী হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।