সম্প্রতি আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদের নির্বাচনী প্রচারণায় চলচ্চিত্র অঙ্গনের শিল্পীরা অংশ নিয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে চলচ্চিত্র জগতের বিভিন্ন নায়ক ও নায়িকারা নাচ-গান করছিলেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিলে উন্নয়ন হয়, নৌকা মার্কার বিজয় মানে জনগণের জয় শীর্ষক গান গাচ্ছিলেন।
ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে উক্তা দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি চিত্রনায়ক ফেরদৌসের নির্বাচনী প্রচারণায় চলচ্চিত্র শিল্পীরা অংশগ্রণ করার ঘটনার নয় বরং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আয়োজনে বার্ষিক বনভোজনের একটি দৃশ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার একটি গান যুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির একটি দৃশ্যে ‘Creative Solution’ শীর্ষক লেখা উল্লেখ রয়েছে।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Creative Solution নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি তারিখে “তারকাদের পিকনিক। নাচ গানে নায়ক নায়িকাদের জম্পেশ আড্ডা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি’র আয়োজনে গাজীপুরে অবস্থিত মেঘবাড়ী রিসোর্টে বার্ষিক বনভোজন ২০১৮ অনুষ্ঠানের ভিডিও। এরই অংশ হিসেবে চলচ্চিত্র শিল্পীরা নাচ-গানে ব্যস্ত সময় পার করেন। তবে উক্ত ভিডিওতে নৌকা মার্কায় ভোট দিলে উন্নয়ন হয়, নৌকা মার্কার বিজয় মানে জনগণের জয় শীর্ষক কোনো গান শোনা যায়নি।
দেশীয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল Asian TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি’র বার্ষিক বনভোজন – ২০১৮ এর একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
অডিও যাচাই
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর অডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে SM VISION 71 নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
উক্ত ভিডিওতে থাকা অডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা অডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিও থেকে জানা যায়, এটি আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী প্রচারণার গান।
মূলত, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির উদ্যোগে গাজীপুরের মেঘবাড়ী রিসোর্টে বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র জগতের বিভিন্ন শিল্পীরা নাচ-গানে অংশ নেন। উক্ত অনুষ্ঠানের একটি ভিডিওতে আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী প্রচারণার গানের অডিও যুক্ত করে সম্প্রতি চিত্রনায়ক ফেরদৌসের নির্বাচনী প্রচারণায় চলচ্চিত্র শিল্পীরা অংশগ্রণ করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে, যা সঠিক নয়।
সুতরাং, পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে চিত্রনায়ক ফেরদৌসের নির্বাচনী প্রচারণায় চলচ্চিত্র শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেছেন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেয়েদের উচ্চতা বা হাইট মাপা হয়” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেয়েদের উচ্চতা মাপা শীর্ষক যে ভিডিওটি বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সেটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের একটি ভিডিওকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওতে আমরা উচ্চতা মাপতে থাকা ব্যাক্তির মাথায় পরিহিত একটি ক্যাপ দেখতে পাই। উক্ত ক্যাপটির সাথে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ক্যাপের ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison : Rumor Scanner
সার্বিক পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান হয় যে ভিডিওটি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর নয়।
পরবর্তীতে ভিডিওটির কয়েকটি স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Indore Physical Academy’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশনে দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতীর মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের জেলা ইন্দোরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে মেয়েদের উচ্চতা মাপার সময়ে ধারণকৃত ভিডিও এটি।
তাছাড়া, ইন্দোর ফিজিক্যাল একাডেমি নামের ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এখানে ভারতীয় বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণের ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
মূলত, সম্প্রতি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর দাবিতে মেয়েদের উচ্চতা মাপার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। ভারতীয় ইন্দোরে সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে মেয়েদের উচ্চতা মাপার একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে মেয়েদের উচ্চতা মাপা শীর্ষক ভারতের একটি ভিডিও বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, একটি বাসভবনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বেশকিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, বাড়িটি মালয়েশিয়া সরকার ইসলামিক স্কলার ড. জাকির নায়েককে উপহার দিয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল পোস্টগুলোতে যে বাসভবনের ছবি দেখা যাচ্ছে তা মালয়েশিয়া সরকার ড. জাকির নায়েককে উপহার দেননি বরং এটি মালয়েশিয়ার ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে সেলাঙ্গর রাজ্যের রাজা সুলতান শারাফউদ্দিন ইদ্রিস শাহকে উপহার দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসাদটি ডা. জাকির নায়েককে মালয়েশিয়ার সরকার দিয়েছেন কি না তা নিয়ে অনুসন্ধানে ভাইরাল পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে পোস্টগুলোতে কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে প্রাসাদটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে স্টক ফটোর ওয়েবসাইট শাটার স্টকে অনুরূপ প্রাসাদটির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Shutter Stock
ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, প্রাসাদসম বাসভবনটির নাম ইসতানা দারুল এহসান। এটি মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের সুলতানের অন্যতম একটি রাজকীয় আবাসস্থল।
এই সূত্রে পরবর্তী অনুসন্ধানে ফ্লিকারে একই বাসভবনের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: flickr
ওয়েবসাইটটিতে প্রদত্ত ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, প্রাসাদটি ২০০০ সালের ২০ নভেম্বর নির্মাণ করা হয়। পুত্রজায়া লেকের পাশে অবস্থিত এই বিশাল ধূসর প্রাসাদটি মালয়েশিয়ার ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে সেলাঙ্গর রাজ্যের রাজাকে উপহারস্বরূপ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে এই প্রাসাদটি ড. জাকির নায়েককে দেওয়া হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, জাকির নায়েক ২০১৬ সালে ভারত থেকে গিয়ে মালয়েশিয়ায় বসবাস শুরু করেন। তবে মালয়েশিয়াসহ আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমের নির্ভরযোগ্য সূত্রে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক তাকে কোনো প্রাসাদ উপহার দেওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি ফেসবুকে রাজকীয় একটি প্রাসাদের ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, প্রাসাদটি মালয়েশিয়া সরকার ড. জাকির নায়েককে দিয়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাসাদটি মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক ড. জাকির নায়েককে উপহার দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের সুলতান শারাফউদ্দিন ইদ্রিস শাহের অন্যতম একটি রাজকীয় আবাসস্থল এটি, যা মালয়েশিয়ার ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং, মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের সুলতান শারাফউদ্দিন ইদ্রিস শাহের বাসভবনকে মালয়েশিয়ার সরকার কর্তৃক ড. জাকির নায়েককে বসবাসের জন্য উপহার দেওয়া হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে Sumon Hosen নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ঢালিউডের আলোচিত চিত্রনায়ক জায়েদ খান এবং চিত্রনায়িকা পরীমনির মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢালিউডের আলোচিত তারকা জায়েদ খান এবং পরীমনি মারা যাননি। সম্প্রতি তাদের অসুস্থতার কোনো সংবাদও পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই তারকাদের মৃত্যুর ভুয়া দাবি প্রচার করা হয়েছে।
চিত্রনায়িকা পরীমনি ও চিত্রনায়ক জায়েদ খানের মৃত্যুর দাবির বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের শুরুতে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে উক্ত তারকাদের মৃত্যুর বিষয়ে প্রচারিত ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। জায়েদ খানের মৃত্যু দাবিতে প্রচারিত পোস্টে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে শুটিং করতে গিয়ে দোতালা ভবন থেকে পড়ে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
Screenshot: TikTok
তবে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া টিকটকে জায়েদ খানের মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে আজ জায়েদ খানের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার কার্যক্রমের ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়।
Screenshot: Zayed Khan Facebook
অর্থাৎ, চিত্রনায়ক জায়েদ খান শুটিং করতে গিয়ে দোতালা ভবন থেকে পড়ে গিয়ে মারা যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।
পরবর্তীতে চিত্রনায়িকা পরীমনির মৃত্যু দাবিতে প্রচারিত পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সেখানে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot: TikTok
তবে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া টিকটকে পরীমনির মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ গতকাল পরীমনির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার ছেলে রাজ্যকে কোলে নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক মিজানুর রহমান আরিয়ানের একটি ছবি প্রচার হতে দেখা যায়। এতে বোঝা যায়, তিনি বর্তমানে ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন।
Screenshot: Pori Moni Facebook
অর্থাৎ, চিত্রনায়িকা পরীমনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।
মূলত, বিনোদন অঙ্গণের তারকাদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে নানা ধরনের তথ্য প্রচারের প্রবণতা দেখা যায়। একই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে Sumon Hosen নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে চিত্রনায়ক জায়েদ খান এবং চিত্রনায়িকা পরীমনির মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত তারকাদের কেউই মারা যাননি। উক্ত তারকাদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুকে সচল থেকে নিয়মিত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে বিনোদন অঙ্গনের ৯ তারকার মৃত্যুর গুজব প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, চিত্রনায়ক জায়েদ খান এবং চিত্রনায়িকা পরীমনি মারা গেছেন দাবিতে টিকটকে প্রচারিত তথ্যগুলো ভুয়া এবং বানোয়াট।
সম্প্রতি, “এইমাত্র নির্বাচন বর্জন করলো জাতীয় পার্টি হাইকোর্ট থেকে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা” শীর্ষক শিরোনাম এবং “নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াল জাতীয় পার্টি হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়ে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় ৩ হাজার ৬ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় পার্টি (জাপা) নির্বাচন বর্জন করেনি এবং হাইকোর্টও নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন।
আলোচিত ভিডিওটির শুরুতেই কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা এবং সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে কয়েকটি ভিডিও দেখানো হয় এবং দাবিটি প্রসঙ্গে চ্যানেলটির উপস্থাপক বলেন, “দর্শক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালো জাতীয় পার্টি,জাকের পার্টি সহ সব দল। এখন নির্বাচন কমিশনার কি করবে। এই নির্বাচন কি করতে পারবে?মোটেও না। চলুন আমরা ভিডিওতে দেখি যে, জাতীয় পার্টি সহ সমস্ত দলগুলো এই মুহূর্তে নির্বাচন প্রত্যাহার করার হিড়িক পড়েছে। চলুন আমরা ভিডিওতে দেখি…।”
ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত প্রথম দুইটি ভিডিও ক্লিপই গত ১৭ ডিসেম্বর জাকের পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘটনায় বায়ান্ন টেলিভিশন এবং চ্যানেল ২৪ (১,২) এ প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।
Video Comparison : Rumor Scanner Video Comparison : Rumor Scanner
আলোচিত ভিডিওটির পরবর্তী অংশে থাকা ভিডিওটির অনুসন্ধানে Voice Bangla নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ ডিসেম্বর “প্রত্যাশিত ৪০ থেকে ২৬ টি আসন পেয়ে মুখ ভার জাতীয় পার্টির!। Mostofa Feroz । Voice Bangla” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটিতে ভয়েস বাংলার প্রতিষ্ঠান মোস্তফা ফিরোজ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন বিন্যাস নিয়ে নিজস্ব মতামত ব্যাক্ত করেন।
আলোচিত দাবিটির সর্বশেষ ভিডিওটির অনুসন্ধানে কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৭ ডিসেম্বর “হঠাৎ জাতীয় পার্টির অফিসে পুলিশ মোতায়েন।Jatiya Part। BD Police। Kalbela” শীর্ষক শিরোনামে একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় পার্টির কিছু নেতাকর্মীরা বনানী কার্যালয়ের সামনে নির্বাচন বর্জনের জন্য বিক্ষোভ করে। উক্ত বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অর্থাৎ, উপরোক্ত ভিডিওগুলোর কোনোটিতেই জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন এবং হাইকোর্টের রায়ে নির্বাচন বাতিল শীর্ষক কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি।
এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলোর বিষয়ে কেনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে গত ১৮ ডিসেম্বর “ভোটে থাকার সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৩টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দলটি। উক্ত প্রতিবেদনে দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে উদ্ধৃত করে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয় নিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করছে না।
উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণা ও আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। তবে গত ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট সরাসরি খারিজ করে দেন।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতির মাঠ। এই নির্বাচনের অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অনেক আগ থেকেই বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আসলেও এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল নানা কৌতূহল। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলটির অভ্যন্তরেও পক্ষে বিপক্ষে নানা মত ছিল। এসবের প্রেক্ষিতে নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন গত ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বনানীতে অবস্থিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের বৈঠক চলাকালে নির্বাচন থেকে সরে দেওয়ার দাবিতে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন জাতীয় পার্টির একদল নেতা-কর্মী। এসময় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী গণমাধ্যমেও কথা বলেন। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রচারিত একাধিক ভিডিও সংগ্রহ করে তার সাথে পুরোনো ভিন্ন ঘটনায় পুলিশের বাঁধা দানের ভিডিওসহ বেশকয়েকটি ভিডিও যুক্ত করে জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন এবং হাইকোর্টের রায়ে নির্বাচন বাতিল হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। গত ১৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন। এছাড়া হাইকোর্ট কর্তৃক নির্বাচন বাতিলের কোনো ঘোষণাও আসেনি। প্রকৃতপক্ষে, কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রতীকও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং, জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন এবং হাইকোর্টের রায়ে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর অধীনেই নির্বাচন হবে: সিইসি। শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা– শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সেনাবাহিনীর অধীনেই নির্বাচন হবে। এছাড়া আরও দাবি করা হয়, শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং দেশের শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসার তথ্যটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৩ মিনিট ৬ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেশীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের থাম্বনেইল ব্যবহার করে উপস্থাপক সেই সংবাদগুলো নিজের মতো আলোচনা করেছেন।
এছাড়া, ভিডিওটিতে উপস্থাপককে সিইসি’র আলোচিত মন্তব্য এবং এমপি, ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীতে, দাবিগুলো যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত মাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, দেশের শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা এ বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সেনাবাহিনীর অধীনেই নির্বাচন হবে: সিইসি। শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি সংবাদের থাম্বনেইল যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সুতরাং, শতাধিক এমপি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং সেনাবাহিনীর অধীনেই নির্বাচন হবে- সিইসি এমন মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, “সৌম্য ভাইয়ের জন্যই আমরা এই ম্যাচটি হেরেছি” শীর্ষক একটি মন্তব্যকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নিউজিল্যান্ডের সাথে গত ১৭ ডিসেম্বর ওডিআই ম্যাচে পরাজয়ের জন্য সৌম্য সরকারকে দায়ী করে এমন কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে ‘Cricket Zone 24’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে উক্ত মন্তব্যটি নাজমুল হোসেন শান্তর নামে প্রথম প্রচার করা হয় এবং পরবর্তীতে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
গুজবের সূত্রপাত
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Cricket Zone 24’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১৭ ডিসেম্বর “সৌম্য ভাইয়ের জন্যই আমরা এই ম্যাচটি হেরেছি” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে ‘Cricket Zone 24’ নামের পেজটির নাম এবং লোগো রয়েছে। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, উক্ত পেজের পরিচালকরাই ভাইরাল এই ফটোকার্ডটির নির্মাতা। এছাড়াও এই পেজটি থেকে প্রায় একই ডিজাইনের ফটোকার্ড (১, ২, ৩) বিভিন্ন সময়ে প্রচার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে বাস্তব দাবিতে প্রচার
সৌম্য সরকারকে নিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
Screenshot: Facebook PostScreenshot: Facebook Post
এছাড়াও গণমাধ্যম কিংবা ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সৌম্য সরকারকে নিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর এমন কোনো মন্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তবে ম্যাচ শুরুর আগেরদিন অর্থাৎ গত ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সৌম্য সরকারকে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, আলাদা কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে কথা বলতে চাই না, সবাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সৌম্যর দায়িত্বটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে উনার বোলিংটাও খুব জরুরি। যেহেতু সাকিব ভাই নেই, তাই (সৌম্যর) ব্যাটিংয়ের সাথে বোলিংটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, টিম ম্যানেজমেন্ট এই কথা চিন্তা করেই তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর সাথে অভিজ্ঞতাটা তো আছেই।’
অর্থাৎ, সেখানেও তিনি সৌম্য সরকারকে নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি বরং তিনি সাকিব আল হাসানের বিকল্প হিসেবে দলে সৌম্য সরকারকে দেখেছেন।
তাছাড়া, গত ১৭ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের সাথে সিরিজের প্রথম ওডিআই ম্যাচে পরাজয়ের পর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি বরং ম্যাচ পরবর্তীত সংবাদ সম্মেলনে দলের ওপেনার এনামুল হক বিজয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন।
Screenshot: BCB YouTube Channel
সেসময় এনামুল হক বিজয় সৌম্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে আরেক খেলোয়াড়ের মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না। আমি মনে করি ম্যানেজমেন্ট ভালো বুঝবে। একজন খেলোয়াড় হয়ে আরেকজনকে সাপোর্ট করবো। এটা একদম ভেতর থেকে আসে, যেই আসুক।’
বিজয় আরও বলেন, ‘সবাই তাকে (সৌম্য) পুরো সাপোর্ট দেবে। খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিটা খেলোয়াড়কে সমর্থন দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।’
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে পরাজয়ের জন্য সৌম্য সরকারকে দায়ী করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত উক্ত মন্তব্যটি করেননি।
মূলত, গত ১৭ ডিসেম্বর সিরিজের প্রথম ওডিআই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ডিএলএস মেথডে ৪৪ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয় নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সে ম্যাচে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সৌম্য সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ রোলে খেলানো হলেও তিনি আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং কোনো ক্ষেত্রেই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি একসময়ের এই হার্ডহিটার ব্যাটার। উক্ত ম্যাচে পরাজয়ের কারণে সৌম্য সরকারকে দায়ী করে নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে ‘Cricket Zone 24’ একটি ফেসবুক পেজ থেকে “সৌম্য ভাইয়ের জন্যই আমরা এই ম্যাচটি হেরেছি” শীর্ষক একটি মন্তব্যকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচে পরাজয়ের জন্য সৌম্য সরকারকে দায়ী করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত উক্ত মন্তব্যটি করেননি।
প্রসঙ্গত, গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে বাংলাদেশকে ৪৪ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টির কারণে খেলার স্কোর ডিএলএস নিয়মে ২৪৫ হয় এবং বাংলাদেশ ৩০ ওভারে ২০০ রান করায় ৪৪ রানে নিউজিল্যান্ড জয় পায়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের আইপিএল খেলার যোগ্যতা নিয়ে শোয়েব আখতারের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, “সৌম্য ভাইয়ের জন্যই আমরা এই ম্যাচটি হেরেছি” শীর্ষক একটি মন্তব্যকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘ডিবি হারুন সহ অসংখ্য পুলিশকে নিষেধাজ্ঞা নিষেধাজ্ঞায় নির্বাচন বন্ধ’ শীর্ষক থাম্বনেইল এবং একই তথ্য সম্বলিত শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সহ বাংলাদেশ পুলিশের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। এছাড়াও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধ করার মতও কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে এক নারী কণ্ঠে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পাচ্ছে ডিবি হারুন সহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর পুরুষ উপস্থাপকের কণ্ঠে বেশকিছু অপ্রাসঙ্গিক কথা বলার পর বলা হয়, ‘আমরা দেখবো যে ডিবি হারুন সহ অসংখ্য পুলিশের উপর ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা এসে গেছে।’ তারপর তিনি আপডেট এই ভিডিওটি না টেনে শেষ পর্যন্ত দেখার জন্যে আহ্বান জানিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে পর পর ৫ টি ভিডিও দেখান। যার কোনোটিতেই ডিবি হারুনসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কিংবা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর প্রথম ক্লিপটির সাথে উক্ত প্রতিবেদনের হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
তবে উক্ত প্রতিবেদনটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক ৬টি মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি প্রদানের বিষয়টিকে নিয়ে করা হয়েছে। যার সাথে ডিবি হারুনের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিওটিতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রধানমন্ত্রী, রওশন এরশাদ, নির্বাচন কমিশন এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা যায়। তবে তার বক্তব্যে কোথাও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নিবার্চন বন্ধ হওয়া বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
ভিডিও যাচাই ৩
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওতে IBTV USA নামের একটি গণমাধ্যমের ভিডিও প্রতিবেদন দেখানো হয়। উক্ত গণমাধ্যমের নামের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে IBTV USA এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচন সুষ্ঠু দেখতে চায় অস্ট্রেলিয়া I Australia I elections I BD I শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করেও এতে ডিবি প্রধান হারুন ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভিডিও যাচাই ৪
এরপর আলোচিত ভিডিওটিতে ফিরোজ নামের একজন ইউটিউবারের ভিডিও দর্শকদের উদ্দেশ্যে দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওর সন্ধানে ফিরোজ নামটির সূত্র ধরে Voice Bangla নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সন্ধান পাওয়া যায়। চ্যানেলটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় উক্ত চ্যানেলটি আলোচিত ভিডিওর সেই ফিরোজ নামের ব্যক্তির। তার পুরো নাম মোস্তফা ফিরোজ। পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওতে তার পরিহিত পোশাকের সূত্র ধরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে উক্ত ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশে ভোটাধিকার নিশ্চিত দেখতে চায় জাতিসংঘ’ I Mostofa Feroz I Voice Bangla শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করেও তাতে আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে দেখা যায় না।
ভিডিও যাচাই ৫
ভিডিওটির একদম শেষ পর্যায়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে আরেকটি ইউটিউবারের ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমিও তো মানুষ; বলছেন বর্তমান ডিবি প্রধান হারুন।’ উক্ত কথাটি এবং ভিডিওর বাম পাশের উপরের HUQ লেখাটির সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Dr. Fayzul Huq নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ ডিসেম্বর ডিবির হারুনওতো মানুষ! তার কি বাঁচার অধিকার নেই? হঠাৎ কেন এই দাবী হারুনের? ড. ফয়জুল হকDr. Fayzul Huq শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত চ্যানেলের মালিক ড. ফয়জুল হক মূলত ভিডিওটিতে সময়ের কণ্ঠস্বর নামের একটি গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে গত ১০ ডিসেম্বর আমিও তো মানুষ, আমার কি বাঁচার অধিকার নেই? বললেন ডিবিপ্রধান শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমিও তো মানুষ, আমার কি বাঁচার অধিকার নেই? উক্ত বক্তব্যের সূত্র ধরে ড. ফয়জুল হক নামের ওই ব্যক্তি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করেন। কিন্তু তাতে ডিবি প্রধান হারুনের ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এছাড়াও ভিডিওটিতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বন্ধ হবার বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে মার্কিন ভিসা নীতির ঘোষণা নিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে গত ২৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : US Embassy
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আজ, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে, আমি ইমিগ্রেশন এন্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা 212(a)(3)(C) (“3C”) এর অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী , বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে: ভোট কারচুপি , ভোটারদের ভয় দেখানো , সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া, এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমসহ সকলের। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’
ডিবি হারুন সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইট (U.S. DEPARTMENT OF THE TREASURY), যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইট (USA gov) এবং বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা বা তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের টুইটার অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশের কারো উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গত ২৪ জুলাই ম্যাথিউ মিলার বলেন, যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাম প্রকাশ করে না। তবে নিষেধাজ্ঞায় পড়া অফিসিয়াল বা সরকারি ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে।
Screenshot: state.gov, USA
যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া, তাদের মধ্যে অফিসিয়াল বা সরকারি ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো নাম প্রকাশ করে না সেহেতু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সহ অসংখ্য পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশটি নাম প্রকাশ করতো। অর্থাৎ ডিবি প্রধান হারুন সহ বেশকিছু পুলিশ সদস্যের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দাবিটি কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চরে মাধ্যমে উক্ত নিষেধাজ্ঞার জন্যে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো গণমাধ্যমে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য খুজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিঘ্নিত হতে পারে এমন সম্ভাবনায় সম্প্রতি ৬টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে। উক্ত ঘটনায় বাংলাদেশের অন্যান্য গণমাধ্যমের পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনের সাথে অন্যান্য আরও কিছু গণমাধ্যমের ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি প্রতিবেদন ও কয়েকটি ইউটিউবারের ভিডিও যুক্ত করে ‘ডিবি হারুন সহ অসংখ্য পুলিশকে নিষেধাজ্ঞা নিষেধাজ্ঞায় নির্বাচন বন্ধ’ শীর্ষক থাম্বনেইল এবং শিরোনাম যুক্ত করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ ছাড়াই অধিক অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে আলোচিত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ডিবি হারুন সহ অসংখ্য পুলিশকে নিষেধাজ্ঞা এবং উক্ত নিষেধাজ্ঞায় আসন্ন নির্বাচন বন্ধ হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, হাসিনা গ্রেফতার দেশ চালাবে সেনাবাহিনী ক্ষমা চেয়ে তফসিল বাতিল করলেন সিইসি– শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হয়েছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিল করেছে এবং দেশ পরিচালনা করবে সেনাবাহিনী।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কর্তৃক নির্বাচনের তফসিল বাতিল এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক দেশ চালানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও।
ভিডিও যাচাই- ১
ভিডিওটিতে বিএনপি’র নেত্রী রুমিন ফারহানাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
রুমিন ফারহানার বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Rumeen’s Voice নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২ ডিসেম্বর “অস্ট্রেলিয়ান এমপির জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচনের কথা।” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিওটিতে রুমিন ফারহানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র গ্রেফতার, তফসিল বাতিল কিংবা সেনাবাহিনী কতৃক দেশ চালানো নিয়ে কোনো কথা বলেননি বা তথ্য উল্লেখ করেননি বরং তিনি ভিন্ন কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিও যাচাই- ২
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Dr. Fayzul Huq নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২ ডিসেম্বর “নির্বাচন হবে জাতিসংঘের অধীনে। অস্ট্রোলিয়ান এমপির আহবান!” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
এছাড়া ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ড. ফয়জুল হক নামের একজন ব্যক্তি কয়েকটি সংবাদ নিয়ে কথা বলছেন। তবে, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র গ্রেফতার, তফসিল বাতিল কিংবা সেনাবাহিনী কতৃক দেশ চালানো নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
Video Comparison by Rumor Scanner
পাশাপাশি, দাবিগুলো যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সামাজিক মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী গ্রেফতার হলে ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিল হলে এবং সেনাবাহিনীর কাছে দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই তা গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়ার কথা। কিন্তু উক্ত দাবিগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আলোচিত দাবিগুলো মিথ্যা।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘হাসিনা গ্রেফতার দেশ চালাবে সেনাবাহিনী ক্ষমা চেয়ে তফসিল বাতিল করলেন সিইসি’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রতীকও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার, নির্বাচনের তফসিল বাতিল এবং দেশ চালাবে সেনাবাহিনী শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লাক্স সাবানের মোড়কে জায়েদ খানের ছবিটি বাস্তব নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে লাক্স সাবানের মোড়কে থাকা গোলাপ ফুলের ছবির স্থলে জায়েদ খানের ছবি বসিয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, শ্রীলংকান অনলাইন কেনাকাটার প্রতিষ্ঠান ustore এর ওয়েবসাইটে আলোচিত পণ্যটির মোড়কের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি লাক্স সাবানের মোড়ক খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত মোড়কের সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত মোড়কের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকৃত লাক্স সাবানের মোড়কে কোনো ব্যক্তির ছবি নেই, বরং জায়েদ খানের যে ছবিটি আলোচিত দাবির ছবিতে দেখা যাচ্ছে মোড়কের মূল ছবিতে একই স্থানে একটি গোলাপ ফুল দেখা যাচ্ছে।
এ থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে জায়েদ খানের ছবিটি লাক্স সাবানের মোড়কের গায়ে যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে লাক্স সাবানের কোনো বিজ্ঞাপনে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনোরূপ তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোর কমেন্ট সেকশনে লাক্স সাবানের মোড়কের ছবিটিকে বাস্তব ছবি মনে করে একাধিক ব্যক্তি মতামত ব্যক্ত করেছেন।
Screenshot collage: Rumor Scanner
মূলত, ইউনিভার্সাল কোম্পানির উৎপাদিত লাক্স সাবানের একটি মোড়কে গোলাপ ফুলের ছবি ব্যবহার করে বাজারজাত করা হয়। উক্ত পণ্যের মোড়কে গোলাপ ফুলের স্থানে বাংলাদেশের নায়ক জায়েদ খানের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে আলোচিত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, লাক্স সাবানের মোড়কে জায়েদ খানের ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।