Home Blog Page 535

সোমালিয়ার জলদস্যু কর্তৃক এমভি আবদুল্লাহ  ছিনতাইয়ের ঘটনায় গণমাধ্যমে পুরোনো ছবি প্রচার

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। উক্ত ঘটনায় দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ‘ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে পাহাড়ায় জলদস্যুদের ৩ সদস্য’ শীর্ষক ক্যাপশনে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকা তিন জলদস্যুর একটি ছবি প্রকাশ করা হয়।

জলদস্যু

দাবি করা হচ্ছে, সোমালিয়ান জলদস্যুদের ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর পাহাড়ায় থাকা তিন জলদস্যুর ছবি এটি।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাহাজে তিন জলদস্যুর অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকার এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে সোমালিয়ার জলদস্যু কর্তৃক বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাইয়ের ঘটনার নয় বরং ছবিটি ২০১২ সাল থেকেই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ছবিটি বেশ কয়েক বছর ধরেই সোমালিয়ান জলদস্যুদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ঘটনায় প্রতীকী ছবি হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।

এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন ( , , , , )।

পরবর্তীতে ছবিটি’র মূল উৎস অনুসন্ধানে স্টকফটো ওয়েবসাইট অ্যালামি’তে ২০১২ সালে  ‘STOLEN SEAS, Somali pirates, 2012’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।.

Screenshot: Alamy

সেখানে উল্লেখিত বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০১২ সালে তোলা। ছবি স্বত্ব হিসেবে সেখানে ‘এভারেট কালেকশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে ছবিটি কোন দস্যুতার ঘটনার সে ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

Image Comparison by Rumor Scanner

তাছাড়া উক্ত ওয়েবসাইটে একই শিরোনামে প্রায় একই ধরনের অপর একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখিত বিস্তারিত বিবরণী থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি ২০১২ সাল থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান।

পাশাপাশি, দেশীয় বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত সোমালিয়ার জলদস্যুদের স্পষ্ট কোনো ছবি প্রকাশ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, উক্ত ঘটনার শুধুমাত্র ভারতীয় নৌবাহিনীর মূখপাত্রের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত চার জলদস্যুর অস্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত সোমালিয়ার জলদস্যুদের নয়।

মূলত, গত ১২ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে ২৩ জন নাবিকসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। উক্ত ঘটনায় দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে পাহাড়ায় থাকা তিন সোমালিয়ার জলদস্যু দাবিতে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি ২০১২ সাল থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান। তবে ছবিটি কোন ঘটনার সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সোমালিয়ার জলদস্যু কর্তৃক বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ অপহরণের ঘটনায় একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে

সুতরাং, প্রায় ১২ বছর পূর্বের একটি ছবিকে সম্প্রতি সোমালিয়ার জলদস্যু কর্তৃক বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাইয়ের ঘটনার ছবি দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

গুজব প্রতিরোধের অগ্রযাত্রায় পঞ্চম বছরে পদার্পণ করলো রিউমর স্ক্যানার

0

২০২০ সালের প্রারম্ভে করোনা মহামারির তাণ্ডবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের মানুষ যখন ঘরবন্দি সে সময়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়াতে থাকে একের পর এক অপতথ্য। এই অপতথ্যের হাত থেকে নেটিজেনদের রেহাই দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে ১৭ মার্চ সল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিষ্ঠার খুব কম সময়ের মাঝে পাঠকদের আস্থা অর্জন করায় রিউমর স্ক্যানারকে আর পেছন ফেরে তাকাতে হয়নি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন অবধি প্রায় চার হাজার ভুল তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন ঘিরে সহিংসতা, দেশজুড়ে বেশ কয়েকদফা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া অপতথ্যের পাশাপাশি একাধিক মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বৈদেশিক নিষেধাজ্ঞার গুজব শনাক্ত করেছি আমরা।

কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২১ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) এর স্বীকৃতি পায় রিউমর স্ক্যানার।

২০২২ সালে ভারতের কর্ণাটকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে আন্দোলন,  রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব বিতর্কসহ একাধিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরব আমিরাত সফর, সিলেটে ভয়াবহ বন্যা, শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া ঘোষণা, হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, পাঠ্য বই, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফর, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, টি ২০ বিশ্বকাপ, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা, মাশরাফি বিন মুর্তজার সম্পদ, রাজনৈতিক সহিংসতা, হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামিক দলের নেতাদের মুক্তির আন্দোলন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ফুটবল বিশ্বকাপ, ও আলোচিত শিশু সুবর্ণ আইজ্যাক বারী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজব শনাক্ত করেছি আমরা।

২০২৩ সালে পাঠ্যবই, মেট্রোরেল, তুরষ্কের ভূমিকম্প, একাধিক সংসদীয় আসনে উপ নির্বাচন, একাধিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, নিউজিল্যান্ডে ভূমিকম্প, বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা, ঘূর্ণিঝড় মোখা, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, বিতার্কিক রাকিব, আলোচিত শিক্ষার্থী মাহের আলী রুশো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইতালি সফর, একাধিক সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, সাঈদীর মৃত্যু, ভারতীয় পণ্য বয়কট, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বহুল আলোচিত সমাবেশ, যানবাহনে আগুন, হরতাল, অবরোধ, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামসহ আরও বিভিন্ন বিষয় জড়িয়ে প্রচারিত অসংখ্য গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজব শনাক্তে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পজিটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

২০২৪ সালে এখন অবধি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিশ্ব ইজতেমা, ভারতের অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিরতা, বিপিএল, বেইলি রোডে আগুন ও সর্বশেষ সোমালিয়ান জলদস্যুদের দ্বারা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই হওয়ার ঘটনাসহ আরও বেশ কয়েকটি ঘটনায় অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া গুজব শনাক্ত করা হয়েছে।

এসব বিষয়ের বাহিরেও প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিয়মিত  দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার জন্য ফান্ড রাইজিংয়ের নামে অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা, এনসিটিবির পাঠ্য বইয়ের ভুল, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য বিকৃতি, বিভিন্ন সিম অপারেটরদের ফ্রী ইন্টারনেট সেবা প্রদান, চাকরির ভুয়া বিজ্ঞপ্তি, ডিফফেক ভিডিও, গণমাধ্যমের ফটোকার্ড বিকৃতি ও এআই জেনারেটেড ছবি শনাক্ত করে আসছি আমরা।

২০২২ সাল থেকে প্রতি ছয় মাস পর পর বাংলাদেশ ও বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি গণমাধ্যমের ভুল তথ্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছে রিউমর স্ক্যানার। যার ইতিবাচক ফলস্বরূপ গণমাধ্যমের ভুল সংখ্যার সর্বশেষ পরিসংখ্যানে ভুল তথ্য প্রচারের প্রবণতা কমতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

দীর্ঘ পথচলায় নানা বাধা বিপত্তি ডিঙিয়ে রিউমর স্ক্যানার এগিয়ে যাচ্ছে আপন গতিতে। পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের অকুণ্ঠ সমর্থন আমাদের এই দীর্ঘ পথচলাকে করেছে সমৃদ্ধ।  

নিরপেক্ষ অবস্থান অটুট রেখে আমাদের আগামীর অগ্রযাত্রা হোক অপ্রতিরোধ্য। শুভ জন্মদিন রিউমর স্ক্যানার।

তরমুজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া 

0

সম্প্রতি, “রমজানে জনগণ ৭ দিন তরমুজ না খেয়ে থাকতে পারলে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা ছেড়ে দিবো; ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক শিরোনামে বা তথ্যে কালের কণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

তরমুজ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তরমুজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে  ফটোকার্ড পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের একটি লোগো দেখা যায়। তবে ফটোকার্ডটি প্রচারের কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।

পরবর্তীতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কালের কণ্ঠের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও কালের কণ্ঠ’র ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

ইন্টারনেটে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে আলোচিত দাবির প্রেক্ষিতে কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় পরবর্তীতে বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে দৈনিক কালের কণ্ঠের সহকারী ফিচার সম্পাদক দাউদ হোসাইন রনির সাথে কথা হয় রিউমর স্ক্যানার টিমের।

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘কালের কন্ঠ এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। এটি ফেক।’

এছাড়া কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের মিল থাকলেও শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সুস্পষ্ট ভিন্নতা দেখা যায়।

Photocard Comparison: Rumor Scanner

অর্থাৎ, দৈনিক কালের কণ্ঠের ফটোকার্ড দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তৈরি করা হয়েছে। 

এছাড়া, রমজানে ব্যাবসায়ীদের পক্ষ থেকে ৭ দিন তরমুজ না খাওয়ার চ্যালেঞ্জ দেওয়ার দাবির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে কোনো গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মূলত, সম্প্রতি “রমজানে জনগণ ৭ দিন তরমুজ না খেয়ে থাকতে পারলে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা ছেড়ে দিবো; ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক শিরোনামে বা তথ্যে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কালের কণ্ঠ এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেট থেকে কালের কণ্ঠের ফটোকার্ড সংগ্রহ করে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। দৈনিক কালের কণ্ঠের সহকারী ফিচার সম্পাদক দাউদ হোসাইন রনিও ফটোকার্ডটি ভুয়া বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার করা হলে সেগুলো তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, রমজানে ব্যাবসায়ীদের পক্ষ থেকে ৭ দিন তরমুজ না খাওয়ার চ্যালেঞ্জ দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে দৈনিক কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া। 

তথ্যসূত্র

  • Kaler Kantho – Facebook
  • Kaler Kantho – Website
  • Statement from Daud Hossain Rony
  • Rumor Scanner’s Own Analysis 

জলদস্যুদের হাতে নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজকে উদ্ধার করতে রাশিয়া যুদ্ধ জাহাজ পাঠায়নি 

২৩ জন নাবিকসহ বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। জলদস্যুদের হাত থেকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি ২৩ নাবিকসহ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে। এরই মধ্যে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে “এইমাত্র পাওয়া খবর জিম্মি বাংলাদেশী নাবিকদেরকে নিয়ে আসার জন্য যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে রাশিয়া” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

জাহাজ

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত এক ভিডিও প্রায় ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮০০ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওতে প্রায় ৬২ হাজার ৬০০ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ৮১৬ বার। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারে রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর দাবিটি সঠিক নয় বরং ২০২২ সালে সময় টিভিতে প্রচারিত ভিন্ন ঘটনার পুরোনো একটি ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে সময় টিভি’র একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত লোগোর সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড  সার্চের মাধ্যমে সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই “এবার নিজেদের নৌ শক্তি দেখালো রাশিয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner

সময় টিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি রাশিয়ার নৌবাহিনী দিবসের সেন্ট পিটার্সবার্গের নেভা নদীতে আয়োজিত নৌ মহড়ার। সেদিন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতিতে মহড়ায় অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন প্রদর্শন করা হয়। 

অর্থাৎ, সময় টিভি’র প্রচারিত ভিন্ন ঘটনার পুরোনো একটি ভিডিওকেই এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে রাশিয়া দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে, জাহাজ উদ্ধারের বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশিয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কোনো সংবাদ কিংবা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে অনুসন্ধানে কালবেলার ওয়েবসাইটে গত ১৭ মার্চ “জিম্মি জাহাজে অভিযানের অনুমতি চেয়েছিলো ইইউ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশ সরকারের কাছে জিম্মি জাহাজে অভিযানের অনুমতি চেয়েছিল তবে জাহাজে থাকা নাবিক, ক্রু এবং অন্যদের প্রাণনাশের আশংকার কথা ভেবে অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। 

মূলত, গত ১২ মার্চ মোজম্বিকের রাজধানী মাপুটো থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অপহরণ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরই মাঝে উক্ত ঘটনায়  “এইমাত্র পাওয়া খবর জিম্মি বাংলাদেশী নাবিকদেরকে নিয়ে আসার জন্য যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে রাশিয়া” শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জাহাজ উদ্ধারের বিষয়ে কোনো যুদ্ধ জাহাজ পাঠানো হয়নি কিংবা এ বিষয়ে রাশিয়ার কোনো প্রকার তৎপরতা পাওয়া যায়নি । প্রকৃতপক্ষে সময় টিভিতে ২০২২ সালে রুশ নৌবাহিনীর মহড়ার পুরোনো একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/ Update

১৮ মার্চ, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত ভিডিওকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

এমভি আবদুল্লাহ থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর উদ্দেশ্যে গুলি ছোঁড়ার ভুল দাবি গণমাধ্যমে

গত ১২ মার্চ মঙ্গলবার আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে ২৩ জন নাবিকসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রচার করে কতিপয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের এই জাহাজটি উদ্ধার করতে গেলে ভারতের নৌবাহিনীর উদ্দেশ্যে গুলি ছোঁড়ে জলদস্যুরা। 

এমভি আবদুল্লাহ

উক্ত দাবিতে সংবাদ প্রচার করেছে সময় টিভি (ইউটিউব) এবং ইত্তেফাক (ইউটিউব)।

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সোমালিয়ান জলদস্যুরা ভারতের নৌবাহিনীর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নয় বরং মাল্টার মালবাহী জাহাজ এমভি রুয়েন থেকে গুলি ছুঁড়েছে।

গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদগুলোতে সূত্র হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্রের এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টের কথা উল্লেখ করা হয়। এই সূত্রে ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্রের এক্স অ্যাকাউন্ট ‘স্পোকসপার্সন নেভি’ থেকে গত ১৬ মার্চ প্রকাশিত আলোচ্য ভিডিও যুক্ত মূল পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটি থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর সোমালিয়ার জলদস্যুরা ‘এমভি রুয়েন’ নামের একটি জাহাজ ছিনতাই করে। পরবর্তীতে, জলদস্যুরা এই জাহাজটিকে জলদস্যু জাহাজ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। গত ১৫ মার্চ ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ ছিনতাইকৃত এই জাহাজটি আটকালে জাহাজটি থেকে জলদস্যুরা ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের দিকে গুলি চালায়।

Screenshot: X.

পরবর্তীতে উক্ত সূত্রে গত ১৬ মার্চ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের ছিনতাই করা মাল্টার মালবাহী জাহাজ ‘এমভি রুয়েন’ উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এ সময় জাহাজের ১৭ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে এবং আত্মসমর্পণ করেছে জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যু।

অর্থাৎ, ভারতীয় নৌবাহিনীর উদ্দেশ্যে মাল্টার মালবাহী জাহাজ ‘এমভি রুয়েন’ থেকে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল।

অন্যদিকে গত ১৫ মার্চ ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্রের এক্স অ্যাকাউন্ট ‘স্পোকসপার্সন নেভি’ থেকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ নিয়ে সর্বশেষ পোস্ট করা হয়। এই পোস্টে এমভি আবদুল্লাহয় অবস্থানরত ৪ সোমালি জলদস্যুর ছবি প্রকাশ করে ভারতীয় নৌবাহিনী।

এই পোস্টে আরও জানানো হয়, সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তা করতে কাছাকাছি এলাকায় একটি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ ও একটি দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল উড়োজাহাজ অবস্থান করছে।

তবে বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর উদ্দেশ্যে গুলি ছোঁড়ার কোনো তথ্য ভারতীয় নৌবাহিনী প্রকাশ করেনি।

মূলত, গত ১৬ মার্চ ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্রের এক্স অ্যাকাউন্টে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া জাহাজ মাল্টার পতাকাবাহী এমভি রুয়েন থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর উদ্দেশ্যে গুলি ছোঁড়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এই ভিডিওকেই পরবর্তীতে সময় টিভি ও ইত্তেফাক বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে গুলি ছোঁড়ার ঘটনা বলে প্রচার করেছে।

সুতরাং, বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে জলদস্যুরা ভারতীয় নৌবাহিনীর উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়েছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/ Update

১৮ মার্চ, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে কতিপয় টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

ভারতীয় নৌবাহিনী বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করেনি 

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। জাহাজ উদ্ধার এবং মুক্তিপণের দাবি সংক্রান্ত আলোচনার মধ্যেই গত ১৫ মার্চ থেকে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, জাহাজটি ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করেছে। 

উক্ত দাবিতে ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন উত্তরবঙ্গ সংবাদ, উইয়ন, দ্য হ্যান্স ইন্ডিয়া, নিউজ ট্রাক লাইভ, ফার্স্ট পোস্ট, ইন্ডিয়া শিপিং নিউজ, নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নিউজ১৮, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

জাহাজ

একই দাবিতে বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরও অসংখ্য পোস্ট নজরে এসেছে রিউমর স্ক্যানারের৷ এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় নৌবাহিনী বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করেছে দাবিতে ভাইরাল খবরটি সঠিক নয় বরং ভারতের নৌবাহিনীর এক্স অ্যাকাউন্টে এমভি আবদুল্লাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা চার সোমালি জলদস্যুর ছবি প্রকাশকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম যে সংবাদগুলো প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোর সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্রের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের একটি পোস্ট। গত ১৫ মার্চ বিকেলে প্রকাশিত এই পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তার জন্য কাছাকাছি এলাকায় ভারতের যুদ্ধজাহাজ ও দূরপাল্লার টহল উড়োজাহাজ মোতায়েন রয়েছে। এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার খবর পেয়ে গত মঙ্গলবারই ভারতীয় নৌবাহিনী দূরপাল্লার মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্র্যাফ্ট (এলআরএমপি) পি-৮১ মোতায়েন করে। পরে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজও মোতায়েন করা হয়।

জাহাজটিতে থাকা সশস্ত্র চার জলদস্যুদের একটি ছবিও একই পোস্টে প্রকাশ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। 

কিন্তু এই পোস্টে এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করা হয়েছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

তবে এই এক্স হ্যান্ডেলে এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধার সংক্রান্ত কোনো তথ্য না মিললেও আফ্রিকার দেশ মাল্টার আরেকটি জাহাজ উদ্ধারের তথ্য দেওয়া হয়েছে। গত ১৬ মার্চ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক এক্স পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, সোমালি উপকূলে তিন মাস আগে জলদস্যুদের ছিনিয়ে নেওয়া পণ্যবাহী জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধারে ৪০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান সফলভাবে শেষ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী; আরব সাগরে দুস্যদের আটকের পাশাপাশি মুক্ত করেছে জিম্মি নাবিকদের। মাল্টার পতাকাবাহী এমভি রুয়েন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিনিয়ে নেওয়ার পর থেকে সোমালি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেটি ব্যবহার করে তারা অন্য জাহাজ ছিনিয়ে নিতে সাগরে ঘুরছিল।  

মূলত, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। এরপর ১৫ মার্চ থেকে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, জাহাজটি ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করেছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এখনো উদ্ধার হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৫ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা চার সোমালি জলদস্যুর ছবি প্রকাশ করা হয় ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্রের এক্স অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে। উক্ত পোস্টে জানানো হয়, এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তার জন্য কাছাকাছি এলাকায় ভারতের যুদ্ধজাহাজ ও দূরপাল্লার টহল উড়োজাহাজ মোতায়েন রয়েছে। এরপরেই ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া, পরদিন একই অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক এক্স পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়, গত ডিসেম্বরে হাইজ্যাক হওয়া মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধার করেছে ভারতের নৌবাহিনী।

সুতরাং, ভারতীয় নৌবাহিনী বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করেছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যে মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস নামের ট্রেন চলাচলের ভুয়া দাবি

0

সম্প্রতি, ‘মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস’ নামের একটি ট্রেন পাকিস্তানের বেলুচিস্তান থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯৫০-৬০ এর দশকে চলাচল করতো’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ট্রেন

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে পাকিস্তানে ১৯৫০-১৯৫৫ সালে মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস নামে ট্রেন চলাচলের দাবিটি সঠিক নয় বরং এই তথ্যটি উইকিপিডিয়া সূত্রে ভিত্তিহীনভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার হয়ে আসছে।

মূলত, ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর PAKHIGHWAY নামে একজন উইকিপিডিয়া সম্পাদক Pakistan Eastern Railway এর উইকিপেজ সম্পাদনা করে সেখানে ৫২১৪ নাম্বার বিশিষ্ট মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস ট্রেন সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধ করেন৷ সেখানে তিনি লেখেন, ট্রেনটি ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত চলাচল করতো। যেটি পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের কোহ-ই-তাফতান (Kuh-e-Taftan) থেকে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্রগ্রাম পর্যন্ত চলতো। ট্টেনটি ভারতের আটারি (Attari) ও বেনাপোলের মধ্যে ১৯৮৬ কিলোমিটার বা ১২৪৫ মাইল ভারতের রেলপথ এবং রোলিং স্টক ব্যবহার করতো। পরবর্তীতে মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস ট্রেন সম্পর্কিত এই তথ্যগুলোই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে উইকিপিডিয়া কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস ট্রেন সম্পর্কিত তথ্যটির কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র উল্লেখ না থাকায় মুছে ফেলে। এছাড়া PAKHIGHWAY নামে ঐ সম্পাদককে একাধিক একাউন্ট ব্যবহার সহ একাধিক অভিযোগে উইকিপিডিয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালেও দাবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

ফেসবুকে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে চবির ডি ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের গুজব 

0

আজ (১৬ মার্চ) অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে “ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে” শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

কী দাবি করা হচ্ছে?  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এর পূর্বে একইদিন রাত ১ টা ৪৫ মিনিটে ফেসবুকে Jahid Afridi (আর্কাইভ) নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “Cu ‘D’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা ২০২৩-২০২৪  এর প্রশ্ন আমাদের হাতে চলে আসছে নিচে প্রশ্নের কিছু অংশ ফ্রি তে দেওয়া হলো। সময় রাত ২ টা ৬ মিনিট। এই টুকুই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট । যারা টাকার বিনিময়ে সম্পূর্ণ প্রশ্ন সংগ্রহ করতে চাও তারা দ্রুত ইনবক্সে  যোগাযোগ করো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্সড। গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ২০২৪ এর ১০০% অরজিনাল প্রশ্ন নিতে এবং কেউ যদি ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট পরিবর্তন করতে চাও  ইনবক্সে যোগাযোগ করো। আমাকে বিশ্বাস না হলে আমাকে দিয়ে কাজ করানোর দরকার নেই।  টাকা পড়ে দিব আগে কাজ করেন। আপনাকে বিশ্বাস হয় না এই সব বলে কেউ মেসেজ দিও না। তাহলে বল্ক দিতে বাধ্য হবো। ধন্যবাদ সবাইকে।” 

পোস্টে একটি ছবি সংযুক্ত রয়েছে, যেখানে একটি ছাপা প্রশ্নের একাংশ দেখা যাচ্ছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চবির ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগের রাতে ফেসবুকে এই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় দুই ঘন্টা পর ওই পোস্ট এডিট/সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে চবির আজকের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে আলোচিত পোস্টটিতে থাকা প্রশ্নপত্রের সাথে চবির ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মূল প্রশ্নের মিল (, ) পাওয়া যায়। 

অনুসন্ধানে আলোচিত পোস্টটির (Jahid Afridi নামক একটি অ্যাকাউন্টের পোস্ট) ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাত ০১ টা ৪৫ মিনিটে যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। দুপুর ০২ টা ০৯ মিনিটে ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।

Screenshot: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, চবির ডি ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের ভুয়া দাবি প্রচারে ডিজিটাল জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। 

একই অ্যাকাউন্টে এমন ঘটনার আরো উদাহরণ 

Jahid Afridi নামের অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটিতে পূর্বেও এমন প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানো হয়েছে।  

এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গত ০৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘বি’ ইউনিটের উপ-ইউনিট ‘বি১’ এর পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে ‘বি১’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে- শীর্ষক দাবিতেও একই কায়দায় পোস্ট করা হয়। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে। 

একই অ্যাকাউন্টে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এমন আরেকটি প্রতারণামূলক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

মূলত, আজ (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে একই দিন রাত ০১ টা ৪৫ মিনিটে ফেসবুকে প্রকাশিত এক পোস্টে “ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়। উক্ত পোস্টে প্রশ্নপত্রের একটি ছবিও যুক্ত রয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, চবির ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ০২ টা ০৯ মিনিটে রাতের পোস্টটি এডিট করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ছবি যুক্ত করে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত বছরও একই কায়দায় ঢাবি, মেডিকেলসহ একাধিক পাবলিক এবং ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। দেখুন এখানে।

সুতরাং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহশোমির রোজা নিয়ে গবেষণা দাবিতে ভুয়া তথ্য প্রচার

0

সম্প্রতি, নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহশোমির গবেষণা দাবিতে কিছু তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

যা দাবি করা হচ্ছে

জাপানি নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী উসেনরি ওসমি। তিনি গবেষণা ও আবিষ্কার করেন যে, ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা রোজা রাখলে মানুষের দেহে অটোফেজি (Auto phazy) চালু হয়। তিনি প্রমাণ করেন যে, রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ নিন্মুক্ত উপকারগুলো পান।

১) দেহের সেল পরিস্কার হয়।
২) ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়।
৩) পাকস্থলীর প্রদাহ সেরে যায়।
৪) ব্রেইনের কার্যকারিতা বাড়ে।
৫) শরীর নিজে নিজেই সেরে যায় ( Autophazy)।
৬) ডাইয়াবেটিস ভালো হয়।
৭) বাধ্যর্ক রোধ করা যায়।
৮) স্থুলতা দূর হয়।
৯) দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়।
১০) মানুষ ও জীবের প্রতি সহানুভূতি জন্মায়।”

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,ইয়োশিনোরি ওহশোমির গবেষণা দাবিতে রোজার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হওয়ার তথ্য সঠিক নয় বরং অধ্যাপক ইয়োশিনোরি ওহশোমি এমন মন্তব্য বা গবেষণা করেননি।

মূলত, ২০১৬ সালে অটোফেজি নিয়ে গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কার পান ইয়োশিনোরি ওহশোমি। অটোফেজি মানবদেহের একটি চলমান প্রক্রিয়া। রোজা বা উপবাসসহ নানান উপায়ে এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা যায়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে নির্দিষ্ট সময় রোজা রাখলে অটোফেজি চালু হয় এবং রোজার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয় বলে প্রমাণ দিয়েছেন ইয়োশিনোরি এমন দাবিতে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। ইয়োশিনোরির কর্মস্থল টোকিও ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিও ইয়োশিনোরির নামে প্রচারিত তথ্যগুলোকে মিথ্যা বলে ২০২২ সালে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছিলো। তবে রোজা ক্যান্সার চিকিৎসায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বলে বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও দাবিটি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ভুয়া ইমেইলে মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্পের প্রতারণামূলক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে

0

সম্প্রতি, সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প (প্রজেক্ট ২০২৪) এর ৮ম পর্যায়ের আওতায় শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে দাবিতে একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের তারিখ গত ০৩ মার্চ ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে। কথিত এই বিজ্ঞপ্তির আওতায় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রে কেন্দ্র শিক্ষক পদে ৮২৫ জন এবং ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রে কেন্দ্র শিক্ষক পদে ১৩৩ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া, আবেদনের নিয়মাবলীতে লেখা আছে, উক্ত পদ সমূহের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের ১৪ মার্চ ২০২৪ ইং রাত ১২ টা মধ্যে ছবি ও সিভি [email protected] শীর্ষক ইমেইল অ্যাকাউন্টে প্রেরণ করার কথা বলা হয়েছে।

মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা

উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবি সম্বলিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প এর কথিত এই বিজ্ঞপ্তিটি সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া বলে প্রকল্পটির পরিচালকের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পটির ভিন্ন একটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে গেল বছর (২০২৩) ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।

উক্ত ফ্যাক্টচেকে দেখা গিয়েছিল, সেসময়ও একই ইমেইল ([email protected]) ব্যবহার করে ভুয়া সেই বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছিল। 

সরকারের হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সেসময় একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলা হয়, “একটি কুচক্রী দল জনসাধারণের নিকট অর্থ আত্নসাতের লক্ষ্য এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।” 

উক্ত প্রকল্পে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে উক্ত প্রকল্প এবং হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর ওয়েবসাইটে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সন্ধান মেলেনি। 

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে জানতে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৬ষ্ঠ পর্যায় প্রকল্পের বর্তমান প্রকল্প পরিচালক যুগ্মসচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার৷ তিনি জানিয়েছেন, এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তারা প্রকাশ করেননি। 

তাছাড়া, একনেকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২২ সালের ১৪ জুন একনেক কর্তৃক “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রকল্পটির অনুমোদিত মেয়াদ ০১ জুলাই ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। অর্থাৎ, কথিত এই বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রকল্পকে ৮ম পর্যায়ের প্রকল্প বলে যে দাবি করা হচ্ছে তাও সঠিক নয়৷  

মূলত, সম্প্রতি সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প (প্রজেক্ট ২০২৪) এর ৮ম পর্যায়ের আওতায় শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে দাবিতে একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি ফেসবুকে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের তারিখ গত ০৩ মার্চ ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে [email protected] এই ইমেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কথিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেনি। ভুয়া এই ইমেইল ব্যবহার করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে অন্তত গত বছর থেকে বিভিন্ন সময়ে এই প্রকল্পের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প (প্রজেক্ট ২০২৪) এর নাম ব্যবহার করে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

  • হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট: নোটিশ 
  • Statement from Srikanto Kumar Chanda
  • Rumor Scanner’s own analysis