গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। জাহাজ উদ্ধার এবং মুক্তিপণের দাবি সংক্রান্ত আলোচনার মধ্যেই গত ১৫ মার্চ থেকে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, জাহাজটি ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করেছে।
উক্ত দাবিতে ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন উত্তর বাংলা সংবাদ, WION, The Hans India, News Track Live, First Post, Marine Insight, Myind, India Shipping News, New Indian Express, News18, Indian Express।
একই দাবিতে বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরও অসংখ্য পোস্ট নজরে এসেছে রিউমর স্ক্যানারের৷ এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় নৌবাহিনী বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করেছে দাবিতে ভাইরাল খবরটি সঠিক নয় বরং ভারতের নৌবাহিনীর এক্স অ্যাকাউন্টে এমভি আবদুল্লাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা চার সোমালি জলদস্যুর ছবি প্রকাশকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম যে সংবাদগুলো প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোর সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্রের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের একটি পোস্ট। গত ১৫ মার্চ বিকেলে প্রকাশিত এই পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তার জন্য কাছাকাছি এলাকায় ভারতের যুদ্ধজাহাজ ও দূরপাল্লার টহল উড়োজাহাজ মোতায়েন রয়েছে। এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার খবর পেয়ে গত মঙ্গলবারই ভারতীয় নৌবাহিনী দূরপাল্লার মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্র্যাফ্ট (এলআরএমপি) পি-৮১ মোতায়েন করে। পরে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজও মোতায়েন করা হয়।
জাহাজটিতে থাকা সশস্ত্র চার জলদস্যুদের একটি ছবিও একই পোস্টে প্রকাশ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী।
কিন্তু এই পোস্টে এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করা হয়েছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
তবে এই এক্স হ্যান্ডেলে এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধার সংক্রান্ত কোনো তথ্য না মিললেও আফ্রিকার দেশ মাল্টার আরেকটি জাহাজ উদ্ধারের তথ্য দেওয়া হয়েছে। গত ১৬ মার্চ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক এক্স পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, সোমালি উপকূলে তিন মাস আগে জলদস্যুদের ছিনিয়ে নেওয়া পণ্যবাহী জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধারে ৪০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান সফলভাবে শেষ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী; আরব সাগরে দুস্যদের আটকের পাশাপাশি মুক্ত করেছে জিম্মি নাবিকদের। মাল্টার পতাকাবাহী এমভি রুয়েন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিনিয়ে নেওয়ার পর থেকে সোমালি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেটি ব্যবহার করে তারা অন্য জাহাজ ছিনিয়ে নিতে সাগরে ঘুরছিল।
মূলত, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। এরপর ১৫ মার্চ থেকে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, জাহাজটি ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করেছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এখনো উদ্ধার হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৫ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা চার সোমালি জলদস্যুর ছবি প্রকাশ করা হয় ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্রের এক্স অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে। উক্ত পোস্টে জানানো হয়, এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তার জন্য কাছাকাছি এলাকায় ভারতের যুদ্ধজাহাজ ও দূরপাল্লার টহল উড়োজাহাজ মোতায়েন রয়েছে। এরপরেই ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া, পরদিন একই অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক এক্স পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়, গত ডিসেম্বরে হাইজ্যাক হওয়া মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধার করেছে ভারতের নৌবাহিনী।
সুতরাং, ভারতীয় নৌবাহিনী বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করেছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Indian Navy: X Post about MV Abdullah
- Indian Navy: X Post about MV Ruen
- Rumor Scanner’s own analysis