জলদস্যুদের হাতে নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজকে উদ্ধার করতে রাশিয়া যুদ্ধ জাহাজ পাঠায়নি 

২৩ জন নাবিকসহ বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। জলদস্যুদের হাত থেকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি ২৩ নাবিকসহ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে। এরই মধ্যে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে “এইমাত্র পাওয়া খবর জিম্মি বাংলাদেশী নাবিকদেরকে নিয়ে আসার জন্য যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে রাশিয়া” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

জাহাজ

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত এক ভিডিও প্রায় ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮০০ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওতে প্রায় ৬২ হাজার ৬০০ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ৮১৬ বার। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারে রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর দাবিটি সঠিক নয় বরং ২০২২ সালে সময় টিভিতে প্রচারিত ভিন্ন ঘটনার পুরোনো একটি ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে সময় টিভি’র একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত লোগোর সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড  সার্চের মাধ্যমে সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই “এবার নিজেদের নৌ শক্তি দেখালো রাশিয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner

সময় টিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি রাশিয়ার নৌবাহিনী দিবসের সেন্ট পিটার্সবার্গের নেভা নদীতে আয়োজিত নৌ মহড়ার। সেদিন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতিতে মহড়ায় অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন প্রদর্শন করা হয়। 

অর্থাৎ, সময় টিভি’র প্রচারিত ভিন্ন ঘটনার পুরোনো একটি ভিডিওকেই এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে রাশিয়া দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে, জাহাজ উদ্ধারের বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশিয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কোনো সংবাদ কিংবা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে অনুসন্ধানে কালবেলার ওয়েবসাইটে গত ১৭ মার্চ “জিম্মি জাহাজে অভিযানের অনুমতি চেয়েছিলো ইইউ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশ সরকারের কাছে জিম্মি জাহাজে অভিযানের অনুমতি চেয়েছিল তবে জাহাজে থাকা নাবিক, ক্রু এবং অন্যদের প্রাণনাশের আশংকার কথা ভেবে অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। 

মূলত, গত ১২ মার্চ মোজম্বিকের রাজধানী মাপুটো থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অপহরণ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরই মাঝে উক্ত ঘটনায়  “এইমাত্র পাওয়া খবর জিম্মি বাংলাদেশী নাবিকদেরকে নিয়ে আসার জন্য যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে রাশিয়া” শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জাহাজ উদ্ধারের বিষয়ে কোনো যুদ্ধ জাহাজ পাঠানো হয়নি কিংবা এ বিষয়ে রাশিয়ার কোনো প্রকার তৎপরতা পাওয়া যায়নি । প্রকৃতপক্ষে সময় টিভিতে ২০২২ সালে রুশ নৌবাহিনীর মহড়ার পুরোনো একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/ Update

১৮ মার্চ, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত ভিডিওকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

আরও পড়ুন

spot_img