সম্প্রতি, “মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষায় শিক্ষকের বেতন ৫,০০০ আর মন্দিরভিত্তিক গনশিক্ষায় শিক্ষকের বেতন ১৪,৫০০ টাকা!” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও প্রচারিত দাবির সাথে ও আলাদাভাবে ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শীর্ষক একটি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবিও প্রচারিত হয়েছে।
কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের চলতি প্রকল্পে কেন্দ্র শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বরং তাদের বেতন ৫,০০০ টাকা এবং উক্ত পদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা উল্লেখ করে প্রচারিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি বানোয়াট।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে দেখা যায়, একটি কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই মন্দিরভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা শীর্ষক দাবিটির সূত্রপাত হয়েছে। ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শীর্ষক ফেসবুকে প্রকাশিত কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মন্দিরভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা উল্লেখ করা হয়।

আলোচিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ছড়িয়ে পড়ার পর তা মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের দৃষ্টিগোচর হলে তাদের সংশ্লিষ্ট ফেসবুক গ্রুপে মন্দির ভিত্তিক গণশিক্ষার শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ এবং মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষার শিক্ষকদের বেতন মাত্র ৫,০০০ টাকার বিষয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। ফলে পরবর্তীতে এই বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে ‘মন্দিরভিত্তিক শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা’ দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে।

মন্দিরভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের ভুয়া বিজ্ঞপ্তি
অনুসন্ধানে গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গনশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শিরোনামের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার হতে দেখা যায়। যেটি চলতি মাসেও ফেসবুকে পোস্ট হয়েছে।

‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গনশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শীর্ষক শিক্ষক নিয়োগের এ বিজ্ঞপ্তিটির সত্যতা অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে ‘মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা পঞ্চগড়’ এর ফেসবুক আইডির গত ৩০ সেপ্টেম্বরের পোস্টসহ বেশকিছু পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে চাকরির বিজ্ঞপ্তিটিকে ভুয়া বলে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে বিজ্ঞপ্তিটির সত্যতা জানতে চেয়ে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৬ষ্ঠ পর্যায় এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নিত্য প্রকাশ বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া নিশ্চিত করেন এবং উক্ত পদে শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা দাবিটি সঠিক নয় বলে জানান। পাশাপাশি জনাব নিত্য প্রকাশ বিশ্বাস উক্ত চাকরির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে গত ১ অক্টোবর হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তির পিডিএফ পাঠান। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও গত ১ অক্টোবর প্রকাশিত সতর্কীকরণ সে বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ভাইরাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে দেওয়া এ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এতদ্বারা সকলের উদ্দেশ্যে জানানো যাচ্ছে যে, একটি প্রতারক চক্র “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পে” শিক্ষক নিয়োগ করা হবে মর্মে আনলাইনে নিম্নে বর্ণিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এ বিজ্ঞপ্তিটি অত্র প্রকল্পের নয়। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৬ষ্ঠ পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পে বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না। তাছাড়া বর্তমানে প্রকল্পের ৬ষ্ঠ পর্যায় চলমান। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৯ম পর্যায় প্রকল্প নামে কোন প্রকল্প নেই। একটি কুচক্রী দল জনসাধারণের নিকট অর্থ আত্নসাতের লক্ষ্য এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতদভিন্ন মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৬ষ্ঠ পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের সম্মানী মাসিক ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা। এ বিজ্ঞপ্তি থেকে সকলকে বিরত থাকা এবং কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।”
এছাড়াও আলাদাভাবে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান ৬ষ্ঠ পর্যায় চলমান থাকার বিষয়টি এবং ভুয়া চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে থাকা ৯ম পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের অস্তিত্ব না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার। একনেকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৪ জুন একনেক কর্তৃক “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রকল্পটির অনুমোদিত মেয়াদ ০১ জুলাই ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
‘মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম কিশোরগঞ্জ’ এর প্রকাশিত গত ফেব্রুয়ারির একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্র শিক্ষকের বেতন সর্বসাকুল্যে ৫,০০০ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়।

মূলত, মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের কেন্দ্র শিক্ষকের বেতন ১৪,৫০০ টাকা উল্লেখ করে ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শিরোনামের একটি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গত সেপ্টেম্বর থেকে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষায় বেতন ৫,০০০ টাকা আর মন্দিরভিত্তিক গণশিক্ষায় বেতন ১৪,৫০০ টাকা শীর্ষক দাবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত এ চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া এবং উক্ত পদে ১৪,৫০০ টাকা বেতন থাকার দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকদের মতো মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকদের বেতনও ৫,০০০ টাকাই।
সুতরাং, মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্পে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে প্রচারিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া এবং উক্ত পদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statement of the project director of temple-based children and mass education program.
- Warning notice on the viral fake job Circular by Hindu Trust.
- Job Circular of Temple Based Education Program, Kishoreganj
- Rumor Scanner’s analysis