রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মেট্রোরেলে দুই তরুণীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং ভিডিওটি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মেট্রোরেলের ভেতরের।
অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলোতে “মেট্রোতে দুই তরুণীর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ভাইরাল” শীর্ষক শিরোনামে বাংলাদেশি বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম সময় টিভির একটি ফটোকার্ড এবং জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম লক্ষ্য করা যায়।
Collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সময় টিভির ফেসবুক পেজ আন্তর্জাতিক সময় এ গত ২৪ মার্চ “মেট্রোতে দুই তরুণীর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ভাইরাল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ফটোকার্ড এবং দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে গত ২৩ মার্চ “মেট্রোতে দুই তরুণীর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ভাইরাল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেট্রোরেলে ধারণ করা দুই তরুণীর ভাইরাল ভিডিওটি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মেট্রোরেলের ভেতরের।
তাছাড়া একাধিক গণমাধ্যম তাদের ফেসবুক পেজে (১, ২) ঘটনাটি’র বিস্তারিত উল্লেখ না করে শুধুমাত্র শিরোনাম এবং ফটোকার্ড পোস্ট করার ফলে ঘটনাটি ভারতের হলেও স্থানের নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় বিষয়টি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনদের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে এবং নেটিজেনরা বিষয়টি সঠিকভাবে না জেনেই ঘটনাটি বাংলাদেশের মনে করেছেন।
Screenshot: Facebook
উক্ত পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর বিশ্লেষণ করে ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনদের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এর ওয়েবসাইটে গত ২৩ মার্চ “Beyond Intolerable…’: Intimate Holi Celebration Inside Delhi Metro Sparks Online Debate” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দিল্লি মেট্রোরেলের ভেতরে ‘আং লাগা দে’ নামক একটি হিন্দি গানের সুরে হোলি খেলার সময় দুজন তরুণীর অন্তরঙ্গ আচরণে লিপ্ত হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
অর্থাৎ, মেট্রোরেলে দুই তরুণীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। তবে এ সম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম না উল্লেখ করে বাংলাদেশে প্রচার করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।
পাশাপাশি, দেশিয় মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মেট্রোরেলে হোলি খেলার সময় দুজন তরুণীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের অঙ্গভঙ্গির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমসহ বাংলাদেশি গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের ফটোকার্ড ও প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের একাধিক ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ভারতের নয়াদিল্লির মেট্রোরেলে হোলি খেলার সময় দুজন তরুণীর অন্তরঙ্গ অঙ্গভঙ্গির ঘটনাকে বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘রাজধানীর ভালোমানের আবাসনে থাকে বরিশালের ৮৭ শতাংশ মানুষ’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের ফটোকার্ডের আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বরিশালের ৮৭ শতাংশ মানুষ রাজধানীর ভালোমানের আবাসনে থাকেন শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত আলোচিত ফটোকার্ডটি বাংলাভিশন প্রকাশ করেনি বরং ‘রাজধানীর বস্তিতে থাকা ১৩ শতাংশ মানুষ বরিশালের’ শীর্ষক শিরোনামে বাংলাভিশনের প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশন এর লোগো রয়েছে এবং ফটোকার্ডটিতে প্রকাশের তারিখ ২৪ মার্চ, ২০২৪ উল্লেখ রয়েছে।
পরবর্তীতে এসব তথ্যের সূত্র ধরে বাংলাভিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৪ মার্চ তারিখে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বাংলাভিশনের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলা ভিশনের ফেসবুক পেজে গত ২৪ মার্চ ‘রাজধানীর বস্তিতে থাকা ১৩ শতাংশ মানুষ বরিশালের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম ও ছবি ব্যবহৃত গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া একই শিরোনামে গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্য মতে ঢাকা শহরের বস্তিতে বসবাসকারী প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ মানুষই বরিশালের। গত ২৪ মার্চ বিবিএস এর সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২৩’ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
Screenshot: bvnews24
পরবর্তীতে আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে বাংলাভিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেগতকাল ২৬ মার্চ একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, বাংলাভিশনের নামে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ছবিটি ভুয়া। সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পেতে লাইক দিন বাংলাভিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে।
Screenshot: Facebook
উক্ত পোস্টে একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে বাংলাভিশনের পক্ষ থেকে ‘রাজধানীর ভালোমানের আবাসনে থাকে বরিশালের ৮৭ শতাংশ মানুষ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিকে ভুয়া দাবি করে তার পাশে ‘রাজধানীর বস্তিতে থাকা ১৩ শতাংশ মানুষ বরিশালের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত তাদের আসল ফটোকার্ডটির তুলনামূলক পার্থক্য তুলে ধরা হয়।
পরবর্তীতে বরিশালের ৮৭ শতাংশ মানুষ রাজধানীর ভালো মানের আবাসনে বসবাস করেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও অন্য কোনো গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি ঢাকায় বস্তিতে থাকা মানুষের পরিসংখ্যান জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’ (বিবিএস)। তাদের এই পরিসংখ্যান মতে, ঢাকা শহরের বস্তিতে বসবাসকারী প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ মানুষই বরিশালের। উক্ত বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশন‘রাজধানীর বস্তিতে থাকা ১৩ শতাংশ মানুষ বরিশালের’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে উক্ত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে এর শিরোনাম পরিবর্তন করে ‘রাজধানীর ভালোমানের আবাসনে থাকে বরিশালের ৮৭ শতাংশ মানুষ’ শীর্ষক শিরোনামে ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ফটোকার্ডের মূলত কবে থেকে এভাবে লেখা হয়?)
সুতরাং, ‘রাজধানীর ভালোমানের আবাসনে থাকে বরিশালের ৮৭ শতাংশ মানুষ’ শীর্ষক শিরোনামে বাংলাভিশনের লোগো সম্বলিত আলোচিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, হলে তারাবির নামাজ পড়ায় ৫ শিক্ষার্থীকে পেটানোয় ২জন আটক-শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল “বাংলা ভিশন” এর একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হলেতারাবির নামাজ পড়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ফটোকার্ডটিতে বেসরকারি ইলেকট্রনিক টেলিভিশন বাংলা ভিশন এর লোগো রয়েছে এবং প্রচারের তারিখ হিসেবে ১৮ মার্চ ২০২৪ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে এসব তথ্যের সূত্র ধরে ফেসবুকে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাংলা ভিশন এর ফেসবুক পেজে আলোচিত ফটোকার্ডটি খুঁজে পাওয়া (আর্কাইভ) যায়।
Screenshot: Bangla Vision Facebook Page
উক্ত গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে ফটোকার্ড নিয়ে প্রচারিত পোস্টের কমেন্টে এসম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তারাবির নামাজ পড়ায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করা ঘটনা ঘটেছে। আহতরা হলেন- আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তানের একজন করে এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে যাওয়া দু’জন নাগরিক। এই ঘটনায় সন্দেহভাজন দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এছাড়া একই বিষয়ে শিরোনামে ভারতের কথা উল্লেখ না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আরও কিছু গণমাধ্যম। প্রতিবেদন দেখুন– যুগান্তর, দেশ রূপান্তর এবং দৈনিক শিক্ষা।
প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করায় বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন না পড়েই তারা বিষয়টিকে বাংলাদেশের মনে করে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
Comment Collage By Rumor Scanner
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান গেজেট এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ মার্চ “গুজরাটে নামাজ পড়া নিয়ে বিরোধ, হামলা বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৬ মার্চ (শনিবার) রাতে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। একদল বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে হামলা চালায়। এই লোকেরা ধর্মীয় স্লোগান তুলে সেখানকার লোকজনের ওপর হামলা শুরু করে। মূলত আফ্রিকান দেশ, আফগানিস্তান এবং উজবেকিস্তানের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে পাঁচ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
অর্থাৎ, হলেতারাবির নামাজ পড়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তবে এসম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম না উল্লেখ করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।
মূলত, গত ১৬ মার্চ ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেতারাবির নামাজ পড়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনা ঘটে। এতে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তানের একজন করে এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে যাওয়া দু’জসহ মোট পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেতারাবির নামাজ পড়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টিনেল রকের ঠিক পশ্চিমে ইয়োসেমাইটের দক্ষিণ দিকে অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতের উপর নেমে আসা একটি পূর্ণিমা” শীর্ষক শিরোনামে একটি পূর্ণিমাস্নাত জলপ্রপাতের একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এসব পোস্টে ৪৭ হাজারের অধিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা। পোস্টগুলোতে ৯০০ এর অধিক মন্তব্য করা হয়েছে। এছাড়াও পোস্টগুলো দুই হাজারেরও অধিকবার পোস্টগুলো শেয়ার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর ক্যাপশনে বলা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োসেমাইট পার্কে অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতের উপর নেমে আসা একটি পূর্ণিমার ছবি এটি। প্রতি বছর কয়েক দিনের জন্য, মনে হয় যেন চাঁদ জলপ্রপাতের মধ্য দিয়ে নেমে যাচ্ছে- বলেও দাবি করা হয় পোস্টগুলোতে। ফলে অনেক নেটিজেন ছবিটিকে বাস্তব মনে করে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায় পূর্ণিমাস্নাত জলপ্রপাতের ছবিটি বাস্তব কোনো ছবি নয় বরং দুটি ভিন্ন ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে rsvn_La Luna নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই এর একটি পোস্টে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Indication By Rumor Scanner
উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায় আলোচিত ছবিটি উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ব্যবহারকারী নিজেই এডিটিং এর মাধ্যমে তৈরি করেছেন।
পরবর্তীতে, উক্ত পোস্টের ক্যাপশনের সূত্র ধরে ফটোগ্রাফার Marc Bouldoukian এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ও NASA’র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভিন্ন ভিন্ন দুটি ছবি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।
Image By Rumor Scanner
উক্ত ছবি দুটি পর্যবেক্ষণ করে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে আলোচিত ছবিটি এ দুটি ছবির সমন্বয়েই তৈরি করা হয়েছে।
Risvan নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটির অ্যাবাউট সেকশন থেকে জানা যায়, Risvan নামের উক্ত ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী একজন ডিজিটাল আর্টিস্ট। এছাড়াও অ্যাকাউন্টটিতে বহু এডিটেড ছবি ও ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কে সূর্য দিগন্ত রেখায় ঢলে পড়লে পার্কের জলপ্রপাতে সোনালি রংয়ের পানির অনিন্দ্য সুন্দর এই দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
মূলত, রিসভান নামের একজন ডিজিটাল আর্টিস্ট ২০১৭ সালে ফটোগ্রাফার Marc Bouldoukian এর ধারণকৃত একটি জলপ্রপাতের ছবি ও NASA’র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের একটি পূর্ণ চাঁদের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে পূর্ণিমাস্নাত জলপ্রপাতের একটি ছবি তৈরি করেন। উক্ত ছবিকেই সম্প্রতি বাস্তব ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতের উপর নেমে আসা পূর্ণিমার ছবি দাবিতে একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা এডিটেড বা বিকৃত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, করাচি জাতীয় স্টেডিয়ামে পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) এর মুলতান সুলতানস বনাম ইসলামাবাদ ইউনাইটেড এর মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচে ব্রিটিশ কমেডিয়ান মিস্টার বিন (রোয়ান অ্যাটকিনসন) উপস্থিত ছিলেন না বরং সেদিন গ্যালারিতে উপস্থিত পাকিস্তানি কমেডিয়ান পাক বিন নামে খ্যাত আসিফ মোহাম্মদ এর ছবিকেই উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে সত্যতা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে পাকিস্তানের ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Aik News এর ইনস্টাগ্রাম অ্যকাউন্টে গত ১৯ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবি গুলোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত পোস্টের বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, তিনি আসল মিস্টার বিন (রোয়ান অ্যাটকিনসন) নন। পিএসএলের ফাইনালে মুলতান সুলতানস বনাম ইসলামাবাদ ইউনাইটেড ম্যাচে টিভি স্ক্রিনে দেখানো ব্যক্তির নাম আসিফ মোহাম্মদ। তিনি পাকিস্তানি মিস্টার বিন নামে পরিচিত। আসিফ মোহাম্মদের বাচনভঙ্গি মিস্টার বিনের মতো হওয়ায় তিনি পাকিস্তানি মিস্টার বিন নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
অনুসন্ধানে WONDER WORLD নামক ইউটিউব চ্যানেলে ১৯ মার্চ “Wonder World Thanks Mr. Pak BeanAsif for PSL Final Fun!” শীর্ষক শিরোনামে মুলতান সুলতানস বনাম ইসলামাবাদ ইউনাইটেড ম্যাচে একই ব্যক্তির একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিও থেকেও জানা যায়, তিনি পাকিস্তানি মিস্টার বিন (পাক বিন) আসিফ মোহাম্মদ।
Screenshot: Youtube
পিএসএল’র মুলতান সুলতানস বনাম ইসলামাবাদ ইউনাইটেড ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানি মিস্টার বিন (পাক বিন) খ্যাত আসিফ মোহাম্মদের উপস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
এছাড়া, পিএসএল’র মুলতান সুলতানস বনাম ইসলামাবাদ ইউনাইটেড ফাইনাল ম্যাচে ব্রিটিশ কমেডিয়ান মিস্টার বিন (রোয়ান অ্যাটকিনসন) এর উপস্থিতির বিষয়ে অনুসন্ধানে পাকিস্তানি গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, করাচি জাতীয় স্টেডিয়ামে পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) এর মুলতান সুলতানস বনাম ইসলামাবাদ ইউনাইটেড ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানি মিস্টার বিন (পাক বিন) খ্যাত আসিফ মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন। তার চেহারা ও বাচনভঙ্গি অনেকটা মিস্টার বিন (রোয়ান অ্যাটকিনসন) এর মতো হওয়ায় ইন্টারনেটে তাকে আসল মিস্টার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, পিএসএলের ফাইনালে পাকিস্তানি মিস্টার বিন (পাক বিন) খ্যাত আসিফ মোহাম্মদের উপস্থিতির ছবি ইন্টারনেটে ব্রিটিশ কমেডিয়ান মিস্টার বিন (রোয়ান অ্যাটকিনসন) এর উপস্থিতির দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ২২ মার্চ রাশিয়ার মস্কোতে এক কনসার্ট অনুষ্ঠানস্থলে বন্দুকধারীরা অন্তত ১৪০ জনকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এই ঘটনায় কতিপয় ব্যক্তির ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এরা এই ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারী।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এগুলো মস্কোর সাম্প্রতিক হামলায় যুক্ত সন্দেহভাজনদের ছবি নয় বরং ২০২৩ সালে ভিন্ন ঘটনায় সন্দেহভাজন এই হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এদের অন্তত চার জন মারা যাওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আইএস হামলাকারী চারজনের ছবি প্রকাশ করেছে। তবে মুখোশে ঢাকা এই ব্যক্তিদের ছবির সাথে আলোচিত ছবিগুলোর দৃশ্যমান মিল পরিলক্ষিত হয়নি।
Screenshot: BBC
এই চারজনই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন বলে আরেক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। বিবিসি এদের স্পষ্ট ছবিও প্রকাশ করেছে প্রতিবেদনে যার সাথে আলোচিত ছবিগুলোর মিল পরিলক্ষিত হয়নি।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
আলোচিত ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২৩ সালের জুনে প্রকাশিত রাশিয়ার এক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সেসময় রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে এদের ছবি প্রকাশ করে।
রাশিয়ান গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, এদের মধ্যে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে।
মূলত, গত ২২ মার্চ রাশিয়ার মস্কোতে এক কনসার্ট অনুষ্ঠানস্থলে বন্দুকধারীরা অন্তত ১৪০ জনকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় কতিপয় ব্যক্তির ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এরা এই ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারী। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়৷ এদের ছবি গত বছর ভিন্ন ঘটনায় রাশিয়ার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রকাশ করে যাদের মধ্যে পরবর্তীতে অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর রাশিয়ান গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। তাছাড়া, সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় প্রকাশিত সন্দেহভাজনদের সাথেও এদের ছবির মিল পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, গত বছর রাশিয়ায় ভিন্ন হামলার ঘটনায় প্রকাশিত কতিপয় সন্দেহভাজনদের ছবিকে সাম্প্রতিক মস্কো হামলার সন্দেহভাজনদের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
বাল্ট্রা প্রশান্ত মহাসাগরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি ছোট দ্বীপ। এই দ্বীপকে রহস্যময় দাবি করে ইন্টারনেটে বেশ কিছু তথ্য প্রচলিত রয়েছে। দাবি করা হয়, “বাল্ট্রা দ্বীপ এমন এক রহস্যময় জায়গা, যেখানে নাবিক ও অভিযাত্রীদের আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে যায় এবং কম্পাস অনিয়মিত দিকনির্দেশ করে অথবা স্থির হয়ে যায়। এ দ্বীপে পা দিয়ে মানুষের মনে এক অদ্ভুত হালকা অনুভূতি জাগে, যা দ্বীপ ছাড়ার কিছুদিন পর নিজে থেকেই স্বাভাবিক হয়ে যায়। বাল্ট্রায় কোনো গাছ ও প্রাণীর অস্তিত্ব নেই, এমনকি পাখিরাও এর কাছে আসা এড়িয়ে চলে। চারপাশে বৃষ্টি হলেও দ্বীপের ভেতরে একফোটা বৃষ্টি পড়ে না।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানের জানা যায়, বাল্ট্রা দ্বীপে উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব নেই এবং সেখানে বৃষ্টিপাত হয় না বলে ইন্টারনেটে ছড়ানো দাবিগুলো মিথ্যা। বাস্তবে বাল্ট্রা দ্বীপে বৃষ্টিপাত হয় এবং সেখানে উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে।
বাল্ট্রা দ্বীপের অবস্থান
বিশ্বস্ত ইংরেজি বিশ্বকোষ ব্রিটানিকা থেকে জানা যায়, বাল্ট্রা গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত একটি ছোট দ্বীপ। এটি ইকুয়েডর থেকে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব অংশে অবস্থিত। এই দ্বীপের আয়তন প্রায় ২১ বর্গ কিলোমিটার। এটি একসময় সান্তা ক্রুজ দ্বীপের একটি অংশ ছিল কিন্তু ভৌগোলিক পরিবর্তনের ফলে সান্তা ক্রুজ থেকে আলাদা হয়ে একটি নতুন স্বতন্ত্র দ্বীপে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইকুয়েডর সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে এই দ্বীপে একটি বিমান ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেয়, যা ১৯৪৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। পর্যটনের বৃদ্ধির সাথে সাথে ইকুয়েডর সরকার বিমান ঘাঁটিটি বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করে, যা বর্তমানে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে পর্যটকদের জন্য প্রধান প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করছে।
বাল্ট্রা দ্বীপে কি বৃষ্টি হয় না?
বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে প্রচলিত দাবিগুলোর একটি হলো এই দ্বীপে বৃষ্টির হয় না, দ্বীপটির চারপাশে প্রচুর বৃষ্টি হলেও এর ভেতরে কোন বৃষ্টির ফোটা পড়ে না। এই দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
কি–ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বিজ্ঞান বিষয়ক নিউজ ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্স এ পৃথিবীর ১০টি শুষ্ক স্থানের তালিকা পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে এই শুষ্ক স্থানগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত বিরল একটি ঘটনা এবং কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এসব শুষ্ক আবহাওয়ায় কিছু উৎপাদন করা খুবই কঠিন। অবিরাম বাষ্পীকরণ এবং প্রস্বেদনের কারণে গাছপালা বা মানুষের ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট পানি থাকে না। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ১০টি স্থানের মধ্যে বাল্ট্রা আইল্যান্ডের নাম নেই।
আমেরিকা ভিত্তিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ডিসকভারির ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হলো চিলিতে অবস্থিত আতাকামা মরুভূমি। একই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ওয়েবসাইট থেকেও পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, বিশ্বস্ত সূত্রগুলোতে পাওয়া শুষ্ক স্থান সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বাল্ট্রা দ্বীপের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। দ্বীপটিতে বৃষ্টিপাতের বিষয়ে অনুসন্ধানে ১৯৮০ সালের এপ্রিলে অর্নিথোলজি বিষয়ক অন্যতম প্রধান জার্নাল “The Auk” এ প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন এবং এর প্রভাব যেভাবে ডারউইনের ফিঞ্চ ( গ্যালাপাগোস ফিঞ্চ) পাখিদের জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করে তার ওপর পিটার আর. গ্রান্ট ও পিটার টি. বোগের এই গবেষণা থেকে জানা যায়, বালট্রার বার্ষিক বৃষ্টিপাত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য দ্বীপের তুলনায় অনেক কম। গবেষণাকালীন ১৯৬৭ ও ১৯৭০ সালে দ্বীপটিতে ১ মিলিমিটারেরও কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট নট ইয়োর অ্যাভারেজ আমেরিকায় ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি ব্লগ খুঁজে পাওয়া যায়। এই ব্লগে আমেরিকান পর্যটন পরামর্শদাতা অ্যাঞ্জি ড্রেক তার গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানান। ব্লগটিতে অ্যাঞ্জি উল্লেখ করেন, তারা বৃষ্টির মৌসুমে গ্যালাপাগোস ভ্রমণে গিয়েছিলেন এবং বাল্ট্রা দ্বীপে পৌঁছানোর সময় হালকা বৃষ্টি হয়েছিল।
ভ্রমণ বিষয়ক আরেকটি ওয়েবসাইট হয়্যার অ্যান্ড হোয়েন থেকে জানা যায়, বাল্ট্রা দ্বীপে বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০০ মিলিমিটার। এই দ্বীপে ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ঘটে, যার পরিমাণ ১১৩ মিলিমিটার। অন্যদিকে, অক্টোবর মাসে সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হয় যা মাত্র ৩ মিলিমিটার।
সুতরাং, বাল্ট্রা দ্বীপে বৃষ্টিপাত হয় না এমন দাবি অসত্য।
বাল্ট্রা দ্বীপে কি কম্পাস অনিয়মিত দিকনির্দেশ দেয়?
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ বিষয়ক মার্কিন অলাভজনক সংস্থা গ্যালাপাগোস কনজারভেন্সির ওয়েবসাইটে বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কিত এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ইকুয়েডরের মূলভূমি ও গ্যালাপাগোসের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী দুই বিমানবন্দরের একটি বাল্ট্রা দ্বীপে অবস্থিত। এই দ্বীপটি গ্যালাপাগোসে পা রাখা অধিকাংশ পর্যটকের জন্য প্রবেশ দ্বার হিসেবে কাজ করে। বাল্ট্রা এয়ারপোর্ট এই অঞ্চলের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দর। প্রতি বছর প্রায় ২,০০০ বাণিজ্যিক ফ্লাইট গ্যালাপাগোসে আগমন করে, এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিমান বাল্ট্রায় অবতরণ করে।
পরবর্তীতে, ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে বাল্ট্রা দ্বীপে অবস্থিত সিমোর বিমানবন্দরে বিমান অবতরণের কয়েকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায় (১,২,৩)। এই ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে কম্পাসের অনিয়মিত দিকনির্দেশনা দেওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিমানগুলোর পাইলটকেও এই বিষয়ে কিছু বলতে শোনা যায়নি। বরং, খুব স্বাভাবিকভাবেই বিমানগুলোকে অবতরণ করতে দেখা যায়।
তাছাড়া, বাল্ট্রা দ্বীপে যদি কম্পাস অনিয়মিত দিকনির্দেশ দিত, তবে এই দ্বীপের এয়ারপোর্টে প্রতি বছর এত সংখ্যক বাণিজ্যিক ফ্লাইটের অবতরণ এবং নিরাপদ বিমান চলাচল ব্যাহত হতো। এমনকি এখানে একটি সক্রিয় বিমানবন্দরের অস্তিত্ব রাখাও সম্ভব হতো না। বিশ্বব্যাপী বিমান নিরাপত্তা ও নেভিগেশন সম্পর্কিত বিশ্বস্ত সূত্রগুলোতেও এই অস্বাভাবিকতার বিবরণ পাওয়া যেত। কিন্তু এমন কোনো তথ্য বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বাল্ট্রা দ্বীপে নাবিক বা অভিযাত্রীদের সঙ্গে থাকা কম্পাসের আচরণ বদলে যাওয়ার দাবিও অসত্য।
বাল্ট্রা দ্বীপে কি গাছ ও প্রাণীর অস্তিত্ব নেই?
উল্লিখিত গ্যালাপাগোস কনজারভেন্সির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাল্ট্রা একটি শুষ্ক অঞ্চল এবং এখানকার উদ্ভিদজগৎ প্রধানত লবণ সহিষ্ণু উদ্ভিদ, কাঁটাযুক্ত নাশপাতি ক্যাকটাস এবং পালো সান্টো গাছে ভরপুর। এখানে বহু পাখি লক্ষ্য করা যায়, যার মধ্যে বুবি এবং ফ্রিগেট বার্ড অন্যতম।
ইকুয়েডর ভিত্তিক ভ্রমণ সংস্থা হ্যাপি গ্রিংগো ট্রাভেলের ওয়েবসাইটের বাল্ট্রা দ্বীপ ভ্রমণ বিষয়ক একটি ব্লগেও একই তথ্য দেওয়া হয়েছে। এই ব্লগে বাল্ট্রা দ্বীপের বন্যপ্রাণী সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যায়। ব্লগে বলা হয়েছে, বাল্ট্রা দ্বীপের শুষ্ক ইকোসিস্টেমে বিশেষভাবে বসবাস করে এমন একটি প্রাণী হল গ্যালাপাগোস ভূমি ইগুয়ানা। এরা বড় ক্যাকটাস গাছের নিচে বাস করে এবং তাদের প্রিয় খাবার হল কাঁটাযুক্ত নাশপাতি ক্যাকটাস। ১৯৩০-এর দশকে বাল্ট্রা দ্বীপ থেকে কিছু ভূমি ইগুয়ানাকে নিকটবর্তী নর্থ সেইমোর দ্বীপে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে ইগুয়ানাদের জনসংখ্যা সংকটাপন্ন ছিল। কয়েক বছর পর, ১৯৫৪ সালে বাল্ট্রায় ইগুয়ানার প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরে, নর্থ সেইমোর থেকে বাল্ট্রায় ইগুয়ানার জনসংখ্যাকে পুনর্বাসন করা হয় এবং আজ বাল্ট্রা দ্বীপে ৪০০-এরও বেশি ভূমি ইগুয়ানা ঘুরে বেড়ায়। এছাড়া বাল্ট্রার বিমানবন্দরে আগত পর্যটকরা গ্যালাপাগোস ফিঞ্চ পাখিদেরও সাক্ষাৎ পায়।
Screenshot: Happy Gringo Travel.
২০১২ সালে কানাডা ভিত্তিক ভ্রমণ সংস্থা সিএনএইচ ট্যুরসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মানুষের কার্যকলাপ ও বিদেশী প্রাণীর অনুপ্রবেশে বাল্ট্রা দ্বীপের ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯০-এর দশকে গ্যালাপাগোস ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস এবং চার্লস ডারউইন রিসার্চ স্টেশনের উদ্যোগে দ্বীপটির ইকোসিস্টেম পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালে বাল্ট্রা দ্বীপে নীল পায়ের বুবি পাখির নতুন একটি বসতির সন্ধান মিলে, যা ইকোসিস্টেম পুনর্বাসনের ইঙ্গিত দেয়।
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্রে চার্লস ডারউইন ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন থেকে (১,২) বাল্ট্রা দ্বীপের ইকোসিস্টেম পুনর্বাসনে সংস্থাটির নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে চার্লস ডারউইন ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করলে সংস্থাটি রিউমর স্ক্যানার টিমকে নিশ্চিত করে বাল্ট্রা দ্বীপে উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী রয়েছে।
এছাড়া গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের ক্রুজ বুকিং সংক্রান্ত প্ল্যাটফর্ম গ্যালাপাট্যুরসের ওয়েবসাইটে বাল্ট্রা দ্বীপ ভ্রমণের সময় পর্যটকরা যেসব প্রাণী দর্শনের আশা করতে পারেন তার একটি তালিকা পাওয়া যায়।
Screenshot: Galapatours.
তাছাড়া ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে, একাধিক স্টক ফটো ওয়েবসাইটে বাল্ট্রা দ্বীপে তোলা বিভিন্ন গাছ ও প্রাণীর ছবি খুঁজে পাওয়া যায় (১,২,৩,৪,৫)।
অর্থাৎ, বাল্ট্রা দ্বীপে উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব নেই এমন দাবিটিও অসত্য।
মূলত, বাল্ট্রা দ্বীপ দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি ছোট দ্বীপ। বেশ কিছু বছর ধরে এই দ্বীপকে রহস্যময় দাবি করে ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়। ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিগুলো অনুযায়ী, বাল্ট্রা দ্বীপে নাবিক ও অভিযাত্রীরা অস্বাভাবিক আচরণ করে, কম্পাস অনিয়মিত দিকনির্দেশনা দেয়, কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর অস্তিত্ব নেই এবং দ্বীপে বৃষ্টি পড়ে না। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের গভীর অনুসন্ধানে এই দাবিগুলোর অসত্য প্রমাণিত হয়েছে। বাস্তবে, বাল্ট্রা দ্বীপে জনজীবন রয়েছে, এখানে বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে এবং দ্বীপটিতে বৃষ্টিপাতও ঘটে। এমনকি গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত দুটি প্রধান বিমানবন্দরের একটি এই দ্বীপে অবস্থিত।
সুতরাং, বাল্ট্রা দ্বীপকে রহস্যময় দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “পবিত্র মাহে রমজানে ও ওরা থেমে নেই” ও “নারী পুরুষ সমান অধিকার রমজানে প্রকাশ্যে সিগারেট খাচ্ছে” শীর্ষক ক্যাপশনসহ সমজাতীয় আরও কিছু ক্যাপশনে এক দোকানে এক নারীর চা-সিগারেট একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওর শুরুতে দেখা যায়, এক নারী দোকানে চা-সিগারেট হাতে নিয়ে বসে আছেন। এরপর একজন এসে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি পর্দার আড়ালে বসে সিগারেট খাচ্ছেন কেন?” তখন মহিলাটি বলেন, “এতে সমস্যা কি?” পরবর্তীতে তাদের মধ্যে রমজান মাসে চায়ের দোকানে বসে সিগারেট খাওয়া নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রমজান মাসে দোকানে এক নারীর চা-সিগারেট পান সংক্রান্ত ভাইরাল ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি উক্ত ভিডিওটি বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অনেক নেটিজেন বিষয়টিকে বাস্তব ঘটনার ভিডিও ভেবে নিজেদের মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন।
Screenshot Collage: Rumor Scanner
এ পর্যায়ে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির উপরের ডান কোণে TCN-Today Current News শীর্ষক একটি লোগো লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে এই লোগোর সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Today C News নামক একটি ফেসবুক পেজে গত ২০ মার্চে “পবিত্র মাহে রমজানে ও ওরা থেমে নেই” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Facebook
এছাড়া, একই ফেসবুক পেজে গত ২৩ মার্চে “যেই কারণে রমজানে প্রকাশ্যে সিগারেট খান এই নারী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওতে দোকানে চা-সিগারেট পানের ভাইরাল ভিডিও নিয়ে একই নারী একটি বার্তা দেন। দোকানে চা-সিগারেট পানের ভাইরাল ভিডিওটি একটা অভিনয়ের অংশ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, একটা মেয়ে চায়ের দোকানে বসে চা-সিগারেট খাচ্ছে। এটাকে সবাই বাস্তব ভেবে নিয়েছেন। এটা আসলে বাস্তব না। এটা একটা ভ্লগ ছিল। এ ধরণের ঘটনা আসলে আমাদের সমাজে এভেইলেবল ঘটছে। তো ওইটা নিয়েই আমরা একটা ভ্লগ বানিয়েছি। এখানে দেখা যাচ্ছে যে এটাকে সবাই বাস্তব ভেবে আমার ফ্যামিলিকে বা আমাকে বিভ্রান্ত করছে। আসলে এটা রিয়েল ছিল না। সম্পূর্ণটাই অভিনয় ছিল। আমি কিছুদিন ধরেই অভিনয় করছি। ছোটখাটো পেজের নাটক করি, ইউটিউব চ্যানেলের কিছু কাজ করি, সব তো আর ভাইরাল হয় না, এ বিষয়টা ভাইরাল হয়েছে দেখে অনেকেই অনেক মন্তব্য করছে। অভিনয়কে রিয়েলিটির ভাব না দিলে এটা ভাইরাল হবে না, আর এটা চলবেও না। অভিনয়টাকে আমরা রিয়েলিটির ভাব দেওয়ার জন্যই এই কাজটা মূলত করেছি।
Screenshot: Facebook
উল্লেখ্য, ফেসবুক পেজটির অ্যাবাউট সেকশন পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এটি একটি ভিডিও ক্রিয়েটর পেজ। তবে এই পেজের বিস্তারিত বিবরণীতে বা ভাইরাল ভিডিওর কোথায়ও কমেডি বা পেরোডি ভিডিও পোস্টের বিষয়ে কোনো ডিসক্লেইমার উল্লেখ নেই। যার দরুন ভিডিওটি দেখে নেটিজেনরা সহজেই বিভ্রান্ত হয়েছেন।
Screenshot: Facebook
মূলত, Today C News নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে “পবিত্র মাহে রমজানে ও ওরা থেমে নেই” শীর্ষক শিরোনামে রমজান মাসে দোকানে এক নারীর চা-সিগারেট পানের অভিনয়ের একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। তবে ভিডিওটিতে নাটক বা অভিনয় সংক্রান্ত কোনো ডিসক্লেইমার না থাকায় নেটিজেনরা এতে বিভ্রান্ত হন এবং পরবর্তীতে তা বাস্তব ঘটনার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, রমজান মাসে দোকানে এক নারীর চা- সিগারেট পান সংক্রান্ত একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও বাস্তব ঘটনা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে ৩৫০০ এর অধিক রিয়েক্ট পড়েছে, ৮৪জন ব্যবহারকারী ভিডিওটিতে কমেন্ট করেছেন চারশোর অধিক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।
ফ্যাক্টচেক
ভাইরাল ভিডিওতে বক্তব্যরত নারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খানের মেয়ে নন বরং তিনি গণঅধিকার পরিষদের একাংশের (নুরুল হক নুর) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব জেনি ইসরাত।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওর ওপরের ডান কোণে থাকা BD Culture শীর্ষক লোগোর সূত্র ধরে ইউটিউবে “BD Culture” নামক একটি চ্যানেলের সন্ধ্যান পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Indication By Rumor Scanner
পরবর্তীতে উক্ত চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করে গত ৩০ জানুয়ারি “মঈন খানকে গ্রেফতারের পর! মেয়ের কন্ঠকে পুলিশ বন্ধ করতে চেয়েছিল দেখুন | BD” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। যার সাথে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।
Source: Youtube
অর্থাৎ উক্ত ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও ডাউনলোড করে তা টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওর দাবির বিষয়ে অর্থাৎ ভিডিওতে বক্তব্যরত তরুণী বিএনপি নেতা ডক্টর আব্দুল মঈন খানের মেয়ে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিএমডব্লিউ বার্লিন ম্যারাথনে অপেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে পুরস্কার পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খানের মেয়ে মাহরীন খান। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে মাহরীন খান আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পিএইচডিরত ছিলেন।
তবে উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ড. মঈন খানের মেয়ে মাহরীন খানের ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর মেয়েটির চেহারার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Comparison Image By Rumor Scanner
পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান তিন মেয়ের জনক। এরমধ্যে একজন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, আরেকজন বিশ্বব্যাংকে চাকুরি করেন এবং অপরজন পিএইচডি করছেন।
এছাড়াও, ভিডিওর মেয়েটি ড. মঈন খানের মেয়ে নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
সেইসাথে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিয়া পরিবার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেকে বেড়িয়ে আসার আহ্বানও জানান।
পরবর্তীতে, আলোচিত ভিডিওর মেয়েটির প্রকৃত পরিচয় নিয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটিতে মেয়েটির দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে ভিডিওটি গণঅধিকার পরিষদের কর্মসূচি থেকে ধারণ করা।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের (নুরুল হক নুর) ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হাসান আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ভিডিওর মেয়েটির নাম জেনি ইসরাত। তিনি গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা দক্ষিণের দায়িত্বে আছেন।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী জেনি ইসরাতের নামে পরিচালিত ফেসবুক পেজ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ফেসবুক পেজের অ্যাবাউট সেকশন থেকে জানা যায় জেনি ইসরাত গণঅধিকার পরিষদের একাংশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব।
আলোচিত ভিডিওর মেয়েটির চেহারার সাথে গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী জেনি ইসরাতের নামে পরিচালিত ফেসবুক পেজে প্রাপ্ত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison Image By Rumor Scanner
যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, আলোচিত ভিডিওর মেয়েটি গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব জেনি ইসরাত।
এ পর্যায়ে সাম্প্রতিক সময়ে গণ অধিকার পরিষদের কোনো কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ছিল কিনা তা জানতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ৩০ জানুয়ারি “গণ অধিকার পরিষদের মিছিলে পুলিশের বাধা, লাঠিপেটায় আহত ১০” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনের প্রতিবাদে সংসদ অভিমুখে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ছিল গণ অধিকার পরিষদের। তবে বিজয়নগরে এই পূর্ব ঘোষিত মিছিলের শুরুতেই পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। উক্ত ঘটনায় পুলিশের লাঠিপেটায় গণ অধিকার পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে একই দিনে উক্ত ঘটনা নিয়ে দৈনিক আমাদের সময় এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Source: Amader Somoy Facebook page
উক্ত ভিডিওতে মিছিলের সামনের সারিতে আলোচিত নারীকে দেখা যায়।
মূলত, গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর বিজয়নগরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনের প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদের পূর্ব নির্ধারিত কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংগঠনটির একাংশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব জেনি ইসরাত একটি একটি বক্তব্য প্রদান করেন। তার উক্ত বক্তব্যের ভিডিওকেই পরবর্তীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের মেয়ের বক্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।
সুতরাং, গণ অধিকার পরিষদের নেত্রী জেনি ইসরাতের বক্তব্যের ভিডিওকে বিএনপি নেতা ড. মঈন খানের মেয়ের বক্তব্যের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মুসলিম বিশ্ব এই মুহূর্তে পবিত্র রমজান মাস পালন করছে। গত ১১ মার্চ সৌদি আরবে শুরু হয়েছে রমজান মাস। ২২ মার্চ দেশটির পবিত্র নগরী মক্কার কাবা শরীফ প্রাঙ্গণে তারাবির নামাজে শরিক হন মুসুল্লিরা। দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হচ্ছে, সেদিন তারাবির সময়ে মুসল্লিদের সংখ্যা এতই বেশি ছিল যে প্রথমবারের মতো কাবার মসজিদুল হারাম পেরিয়ে নামাজের কাতার গিয়েছিল তিন কিলোমিটারেরও বেশি দূরের মাআলা এলাকায়। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের বরাত দিয়ে এই দাবি করেছে গণমাধ্যম। তাছাড়া, উক্ত সময়ের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে জানিয়ে উক্ত ভিডিওর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
উক্ত দাবিতে গালফ নিউজের প্রতিবেদন দেখুন এখানে। গালফ নিউজের প্রতিবেদনে উক্ত তথ্যের বিষয়ে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি বরং এ সংক্রান্ত এক্সে প্রকাশিত একটি ভিডিওকেই সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হারাম শরীফের যে ভিডিওটির মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি গণমাধ্যমে এসেছে তা সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত বছরের রমজানের এই ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হলেও সৌদি আরবের গণমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য মেলেনি। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিও উক্ত দাবিটি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন।
গালফ নিউজ যে ভিডিওটি প্রচার করছে সেটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এক্সে গাজী আলজেহানি নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৩ মার্চ এই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ৩৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি আজ সকাল পর্যন্ত মাত্র ৪৬৬ জন দেখেছেন৷
এই পোস্টের ক্যাপশনে আরবি ভাষায় যা লেখা রয়েছে তার বাংলা অনুবাদ করলেও একই দাবি দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, কাবা শরীফ থেকে মুসুল্লিদের নামাজ আদায়ের কাতার প্রায় তিন কিলোমিটার দূর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
Screenshot: X
আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করে একই ভিডিও গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল মাক্কাহ হারাম নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্টে খুঁজে পেয়েছি।
Screenshot: X
আল মউয়ালা সিমেট্রির এই দৃশ্য সেসময় ফেসবুকের একটি পোস্টে এবং ইউটিউবের একটি ভিডিওতেও পাওয়া যায়।
মিশরীয় সংবাদ বেশরাহার ১৭ এপ্রিল (২০২৩) রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২৭ রমজানের রাতে তারাবির নামাজের সময়ে মক্কার দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, এক বছরের পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করেছে গালফ নিউজ, যার বরাতে দেশের একাধিক গণমাধ্যমেও ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে সৌদি আরবের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান ‘No Rumors’ এর প্রতিষ্ঠাতা রায়ান আদিলের সাথে কথা বলেছি আমরা। রায়ান বলছেন, গত শুক্রবারের তারাবিতে বিশেষ কিছু হয়নি। সবসময় যেমন হয় তেমনই হয়েছিল। এজন্য এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদও সৌদি গণমাধ্যমে নেই।
সেদিন মক্কার হারাম শরীফে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাব্বির রায়হান তাহসিন নামে এক বাংলাদেশিও রিউমর স্ক্যানারকে একই তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলছেন, “এখন হারাম শরীফে এত ভিড় শুরু হয়নি। আস্তে আস্তে হবে।”
তবে গালফ নিউজেরই গত বছরের এপ্রিলের এক সংবাদে সেসময় ২৭ রমজানের নামাজের কাতার মসজিদুল হারাম থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটেছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।
মূলত, পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবের মক্কায় সারাবিশ্বের মুসুল্লিরা জড়ো হয়েছেন। গত শুক্রবার (২২ মার্চ) তারাবির নামাজের সময়ের দৃশ্য দাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক গণমাধ্যম গালফ নিউজ একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করেছে, সেদিন মসজিদুল হারাম পেরিয়ে নামাজের কাতার গিয়েছিল তিন কিলোমিটারেরও বেশি দূরের মাআলা এলাকায়। উক্ত সংবাদের বরাতে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমেও একই সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ২০২৩ সালের এপ্রিলের। সেসময় ২৭ রমজানের রাতে মসজিদুল হারামের কাছে অবস্থিত আল মউয়ালা সিমেট্রির দৃশ্য এটি। তাছাড়া, হারাম শরীফে গত শুক্রবার তারাবির নামাজে মুসুল্লিদের যে দীর্ঘ স্রোতের তথ্য প্রচার করা হয়েছে তারও কোনো নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র মেলেনি।
সুতরাং, গত ২২ মার্চ মক্কার হারাম শরীফে তারাবির নামাজের সময়ের দৃশ্য দাবিতে এক বছরের পুরোনো ভিডিও প্রচার করে মসজিদুল হারাম পেরিয়ে সেদিন নামাজের কাতার তিন কিলোমিটারেরও বেশি দূর পৌঁছেছিল বলে গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
২৫ মার্চ ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে একাধিক গণমাধ্যমে একই দাবি সম্বলিত প্রতিবেদন আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত প্রতিবেদনগুলোকে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।