সম্প্রতি, হলে তারাবির নামাজ পড়ায় ৫ শিক্ষার্থীকে পেটানোয় ২জন আটক-শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল “বাংলা ভিশন” এর একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, এই ঘটনাটি বাংলাদেশের।

ফটোকার্ড যুক্ত করে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হলে তারাবির নামাজ পড়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ফটোকার্ডটিতে বেসরকারি ইলেকট্রনিক টেলিভিশন বাংলা ভিশন এর লোগো রয়েছে এবং প্রচারের তারিখ হিসেবে ১৮ মার্চ ২০২৪ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে এসব তথ্যের সূত্র ধরে ফেসবুকে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাংলা ভিশন এর ফেসবুক পেজে আলোচিত ফটোকার্ডটি খুঁজে পাওয়া (আর্কাইভ) যায়।

উক্ত গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে ফটোকার্ড নিয়ে প্রচারিত পোস্টের কমেন্টে এসম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তারাবির নামাজ পড়ায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করা ঘটনা ঘটেছে। আহতরা হলেন- আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তানের একজন করে এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে যাওয়া দু’জন নাগরিক। এই ঘটনায় সন্দেহভাজন দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এছাড়া একই বিষয়ে শিরোনামে ভারতের কথা উল্লেখ না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আরও কিছু গণমাধ্যম। প্রতিবেদন দেখুন– যুগান্তর, দেশ রূপান্তর এবং দৈনিক শিক্ষা।
প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করায় বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন না পড়েই তারা বিষয়টিকে বাংলাদেশের মনে করে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান গেজেট এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ মার্চ “গুজরাটে নামাজ পড়া নিয়ে বিরোধ, হামলা বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৬ মার্চ (শনিবার) রাতে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। একদল বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে হামলা চালায়। এই লোকেরা ধর্মীয় স্লোগান তুলে সেখানকার লোকজনের ওপর হামলা শুরু করে। মূলত আফ্রিকান দেশ, আফগানিস্তান এবং উজবেকিস্তানের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে পাঁচ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
অর্থাৎ, হলে তারাবির নামাজ পড়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তবে এসম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম না উল্লেখ করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।
মূলত, গত ১৬ মার্চ ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তারাবির নামাজ পড়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনা ঘটে। এতে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তানের একজন করে এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে যাওয়া দু’জসহ মোট পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তারাবির নামাজ পড়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Bangla Vision- Facebook Post
- Bangla Vision- হলে তারাবির নামাজ পড়ায় ৫ শিক্ষার্থীকে পেটানোয় ২জন আটক
- The Hindustan Gazette- গুজরাটে নামাজ পড়া নিয়ে বিরোধ, হামলা বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর
- Rumor Scanner’s Own Analysis