ভিডিওটিতে বক্তব্যরত তরুণী বিএনপি নেতা ড. মঈন খানের মেয়ে নন

সম্প্রতি, “ডক্টর মঈন খানের মেয়ে কালো পতাকার মিছিলে অংশগ্রহণ করে কি বললেন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে ৩৫০০ এর অধিক রিয়েক্ট পড়েছে, ৮৪জন ব্যবহারকারী ভিডিওটিতে কমেন্ট করেছেন চারশোর অধিক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।

ফ্যাক্টচেক

ভাইরাল ভিডিওতে বক্তব্যরত নারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খানের মেয়ে নন বরং তিনি গণঅধিকার পরিষদের একাংশের (নুরুল হক নুর) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব জেনি ইসরাত।

গুজবের সূত্রপাত

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওর ওপরের ডান কোণে থাকা BD Culture শীর্ষক লোগোর সূত্র ধরে ইউটিউবে “BD Culture” নামক একটি চ্যানেলের সন্ধ্যান পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

Indication By Rumor Scanner

পরবর্তীতে উক্ত চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করে গত ৩০ জানুয়ারি “মঈন খানকে গ্রেফতারের পর! মেয়ের কন্ঠকে পুলিশ বন্ধ করতে চেয়েছিল দেখুন | BD” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। যার সাথে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।

Source: Youtube

অর্থাৎ উক্ত ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও ডাউনলোড করে তা টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওর দাবির বিষয়ে অর্থাৎ ভিডিওতে বক্তব্যরত তরুণী বিএনপি নেতা ডক্টর আব্দুল মঈন খানের মেয়ে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

অনুসন্ধানে দৈনিক নয়াদিগন্তের ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর “বার্লিন ম্যারাথনে বিজয়ী বাংলাদেশী মাহরীন খান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিএমডব্লিউ বার্লিন ম্যারাথনে অপেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে পুরস্কার পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খানের মেয়ে মাহরীন খান। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে মাহরীন খান আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পিএইচডিরত ছিলেন।

তবে উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ড. মঈন খানের মেয়ে মাহরীন খানের ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর মেয়েটির চেহারার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Comparison Image By Rumor Scanner

পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান তিন মেয়ের জনক। এরমধ্যে একজন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, আরেকজন বিশ্বব্যাংকে চাকুরি করেন এবং অপরজন পিএইচডি করছেন। 

এছাড়াও, ভিডিওর মেয়েটি ড. মঈন খানের মেয়ে নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

সেইসাথে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিয়া পরিবার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেকে বেড়িয়ে আসার আহ্বানও জানান।

পরবর্তীতে, আলোচিত ভিডিওর মেয়েটির প্রকৃত পরিচয় নিয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটিতে মেয়েটির দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে ভিডিওটি গণঅধিকার পরিষদের কর্মসূচি থেকে ধারণ করা।

পরবর্তীতে এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের (নুরুল হক নুর) ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হাসান আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ভিডিওর মেয়েটির নাম জেনি ইসরাত। তিনি গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা দক্ষিণের দায়িত্বে আছেন।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী জেনি ইসরাতের নামে পরিচালিত ফেসবুক পেজ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ফেসবুক পেজের অ্যাবাউট সেকশন থেকে জানা যায় জেনি ইসরাত গণঅধিকার পরিষদের একাংশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব।

আলোচিত ভিডিওর মেয়েটির চেহারার সাথে গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী জেনি ইসরাতের নামে পরিচালিত ফেসবুক পেজে প্রাপ্ত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison Image By Rumor Scanner

যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, আলোচিত ভিডিওর মেয়েটি গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব জেনি ইসরাত।

এ পর্যায়ে সাম্প্রতিক সময়ে গণ অধিকার পরিষদের কোনো কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ছিল কিনা তা জানতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ৩০ জানুয়ারি “গণ অধিকার পরিষদের মিছিলে পুলিশের বাধা, লাঠিপেটায় আহত ১০” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনের প্রতিবাদে সংসদ অভিমুখে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ছিল গণ অধিকার পরিষদের। তবে বিজয়নগরে এই পূর্ব ঘোষিত মিছিলের শুরুতেই পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। উক্ত ঘটনায় পুলিশের লাঠিপেটায় গণ অধিকার পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

পরবর্তীতে একই দিনে উক্ত ঘটনা নিয়ে দৈনিক আমাদের সময় এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Source: Amader Somoy Facebook page

উক্ত ভিডিওতে মিছিলের সামনের সারিতে আলোচিত নারীকে দেখা যায়।

মূলত, গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর বিজয়নগরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনের প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদের পূর্ব নির্ধারিত কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংগঠনটির একাংশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব জেনি ইসরাত একটি একটি বক্তব্য প্রদান করেন। তার উক্ত বক্তব্যের ভিডিওকেই পরবর্তীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের মেয়ের বক্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।

সুতরাং, গণ অধিকার পরিষদের নেত্রী জেনি ইসরাতের বক্তব্যের ভিডিওকে বিএনপি নেতা ড. মঈন খানের মেয়ের বক্তব্যের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img