পাথর লুট ইস্যুতে সিলেটে বিএনপির ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে প্রকাশ্যে পাথর লুটপাটের ঘটনা সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই লুটপাটের পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে বলে নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। এ ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের পদও স্থগিত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

এরই প্রেক্ষিতে, মধ্যরাতে সিলেটে বিএনপির পাথর এবং বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চলছে সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযান দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সিলেটের নয়। ভিডিওটির সাথে সিলেটে পাথর লুটের ঘটনারও সম্পর্ক নেই। এমনকি সিলেটে বিএনপির পাথর এবং বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর আলাদা কোনো অভিযান পরিচালনার খবরও পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে একজন ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনার একটি ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সময় টিভির ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর প্রকাশিত ‘চট্টগ্রামে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ৮০’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমের সাদৃশ্য রয়েছে। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওসমান আলী নামক একজন ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর আনুমানিক ৫০০-৬০০ জন বিশৃঙ্খলাকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যদের ৬টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়। 

বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও এক পর্যায়ে দুষ্কৃতিকারীরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দুষ্কৃতিকারীরা এ সময় যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত এসিড হামলা চালায় এবং ভারী ইট পাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুঁড়তে শুরু করে। এতে সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্যসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়।

এ অভিযানের পর দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্তকরণে যৌথবাহিনীর ১০টি টহল দল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে হাজারী লেন এলাকায় গেলেলুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা পুনরায় যৌথবাহিনীর ওপর এসিড সদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করে। এসময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে।

ঢাকা পোস্টকালের কন্ঠের ওয়েবসাইটে ‍উক্ত ঘটনা নিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতির বরাতে প্রচারিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। সময় টিভির প্রতিবেদনটিও আইএসপিআর -এর বিবৃতির বরাত দিয়েই করা হয়েছে।

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি চট্টগ্রামের পুরোনো ভিন্ন ঘটনার।

এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্রে সিলেটে পাথর লুট ইস্যুতে সিলেট বিএনপির পাথর ও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী আলাদাভাবে অভিযান চালিয়েছে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, আজ (১৩ আগস্ট) সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক।

সুতরাং, ২০২৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের হাজারী গলির পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দিয়ে সম্প্রতি সিলেটে বিএনপির পাথর এবং বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img