সম্প্রতি, “বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে এইমাত্র মাঠে নামলো সেনাবাহিনী | Caretaker Government | BD Politics News” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে মাঠে নামেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কী ওয়ার্ড সার্চের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে বিএনপি’র পক্ষে সেনাবাহিনী মাঠে নামার দাবির কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওতে দুটি ভিন্ন ভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপনের ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। এরপর ভিডিওটিতে একজন সেনা কর্মকর্তার বক্তব্য দেখানো হয়।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে সেনাবাহিনীর বৈঠকের পর প্রেস বিফিংয়ের দৃশ্য এটি। প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
উক্ত প্রতিবেদনে সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সেনাবাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের বৈঠক সম্পর্কে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর বরাত দিয়ে জানানো হয়, “নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হোক, তা নির্বাচন কমিশন চায়। এটা একটা প্রারম্ভিক আলোচনা। কীভাবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হবে, কোথায় কোথায় তারা কীভাবে কাজ করবে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ করবে। তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিলে অবশ্যই নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে।”
অর্থাৎ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে সেনা বাহিনীর বৈঠক হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
উল্লিখিত ঘটনার সাথে বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে সেনাবাহিনীর মাঠে নামার দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। উক্ত ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ পাঠের ভিডিও এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে সেনাবাহিনীর বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, সেনাবাহিনী বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘ফিলিস্তিন সেনাদের মহড়া’ শীর্ষক শিরোনামে কয়েকজন সেনাসদস্যের স্কেটিং সু পরিহিত অবস্থায় শহরে টহল দেওয়ার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি সেনাদের মহড়া দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ফিলিস্তিনের নয় বরং, এটি আফগানিস্তানের কাবুল শহরে ধারণকৃত তালিবানের বিশেষ ফোর্সের সদস্যদের ভিডিও।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনামে থেকে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি মূলত আফগানিস্তানের মিলিটারী বাহিনীর।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সেনা সদস্যদের গাড়ির সাথে উক্ত ভিডিওর সেনা সদস্যদের গাড়ির মিল রয়েছে। উভয় গাড়ি-ই সেনাবাহিনীর Camouflage অর্থাৎ, পরিবেশের ছদ্মবেশ ধারণকারী প্যার্টানে রঙ করা। এছাড়াও গাড়িটিকে ধরে স্কেটিং করা সেনা সদস্যের পোশাকেরও মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
আলোচিত ভিডিওটির একটি পর্যায়ে আরেকজন সেনা সদস্যকে দেখতে পাওয়া যায়, যার দুই কাঁধে দুটো পতাকা লাগানো রয়েছে। উক্ত ভিডিওতেও একই রকম পোশাক এবং কাঁধে পতাকাধারী একজন সেনা সদস্যকে দেখতে পাওয়া যায়। যাদের দুজনের পতাকার প্যাটার্নের মিল রয়েছে। এছাড়াও উভয়ের মাথার টুপিরও বেশ মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
তাছাড়াও ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, সম্প্রতি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালিবানের নিরাপত্তাবাহিনীদের মহড়া দেওয়ার সময় উক্ত ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।
Screenshot: Youtube
এছাড়াও পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে yadullah marvi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ নভেম্বর Afghanistan militray show in street! শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ২২ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, The Telegraph এর ইউটিউব চ্যানেলে ব্যবহৃত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণীতে বলা হয়েছে, উক্ত ভিডিওটি কাবুলে সেনা সদস্যদের মহড়া দেওয়া ভিডিওর প্রথম পার্ট। পরবর্তীতে আরও ভিডিও প্রচার করা হবে। যার জন্যে দর্শকদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।
Screenshot: Youtube
তাই পরবর্তীতে আরও ভিডিও প্রচার করা হয়েছে কিনা তা দেখতে উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, উক্ত চ্যানেলটিতে পরবর্তীতে Afghanistan militray show in street! (Episode 2), (Episode 3), (Episode 4), (Episode 5) এবং (Episode 6) শীর্ষক শিরোনামে আরও পাঁচটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। যার কয়েকটি পর্ব থেকে বিভিন্ন ক্লিপ সংগ্রহ করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, yadullah marvi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ১১ নভেম্বর Afghanistan military show in street! শীর্ষক শিরোনামে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালিবানের বিশেষ ফোর্সের স্টেটিংয়ের মাধ্যমে মহড়া দেওয়ার একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিন্ন প্রক্রিয়ায় শহরের মাঝে তালিবান বাহিনীর এই মহড়া দেওয়ার ভিডিও দ্রুত সময়ে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে উক্ত ইউটিউব চ্যানেলে একই প্রক্রিয়ায় তালিবানের এই বিশেষ বাহিনীর মহড়া দেওয়ার বেশকিছু ভিডিও প্রচার করা হয়। সম্প্রতি, উক্ত ভিডিওগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সমন্বয়ের মাধ্যমে তৈরিকৃত একটি ভিডিওকে ফিলিস্তিন সেনাদের মহড়া দেওয়ার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে, যা সঠিক নয়।
সুতরাং, আফগানিস্তানের কাবুলে তালিবান বাহিনীর মহড়া দেওয়ার ভিডিওকে ফিলিস্তিন সেনাদের মহড়া দেওয়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ০৭ ডিসেম্বর Bd VIP News নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘নির্বাচনের দায়িত্ব নিলো সেনাপ্রধান। সারাদেশে সেনা মোতায়েন শুরু। ক্ষেপেছে সিইসি’ শীর্ষক শিরোনাম এবং ‘নির্বাচনের দায়িত্ব নিলো সেনাপ্রধান, ক্ষেপেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১ লক্ষ ৯ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় ২ হাজার ৮ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণে সেনাপ্রধান দায়িত্ব নেননি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের ক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয়। তবে আজ (১৭ ডিসেম্বর) আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে সেনাপ্রধান, প্রধান নির্বাচন কমিশন এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের পুরোনো কিছু কার্যক্রমের দৃশ্য দেখানো হয়।
ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “দর্শক বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পেয়েছেন সেনাবাহিনী৷ সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি জেলায় জেলায় টহল দিচ্ছেন। প্রত্যেকটি জেলায় পৌছে গেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। দর্শক এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার কারণে তিনি ক্ষেপে গিয়েছেন। এদিকে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সেনা সদস্যরা…..”
উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তবে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সেনাপ্রধান শফিউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যের অংশটি পর্যবেক্ষণ করে তার সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির মিল পাওয়া যায়নি। আলোচিত ভিডিওটিতে সেনাপ্রধান কর্তৃক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হলেও ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সেনাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি মাঠ পর্যায়ে সৈনিকদের কার্যক্রম প্রসঙ্গে কথা বলেন; যার সাথে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো যোগসূত্র নেই।
এছাড়াও, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যের অংশটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ১০ জুলাই ‘সিইসির কাছে সাংবাদিকদের যত প্রশ্ন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Somoy TV
এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
তবে এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
তবে মূল ধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিউজবাংলা২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ ডিসেম্বর “নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে রাষ্ট্রপতির সম্মতি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।
উক্ত প্রতিবেদনে ইসি সচিবকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সিইসি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতির কাছে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছেন। রাষ্ট্রপতি বিষয়টি শুনেছেন, আশ্বাস দিয়েছেন যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।
অর্থাৎ, সেনাবাহিনীকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নির্বাচনে পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর মাঠে নামার অনুমতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৭ ডিসেম্বর Bd VIP News নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘নির্বাচনের দায়িত্ব নিলো সেনাপ্রধান। সারাদেশে সেনা মোতায়েন শুরু। ক্ষেপেছে সিইসি’ শীর্ষক শিরোনাম এবং ‘নির্বাচনের দায়িত্ব নিলো সেনাপ্রধান, ক্ষেপেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। তবে আজ (১৭ ডিসেম্বর) আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জন্য নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপত। তবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর মাঠে থাকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, সেনাপ্রধান কর্তৃক আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব নেওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, সৌদি আরবের খামিস মুশাইত নামক স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী আগুনে পুড়ে মারা গেছে শীর্ষক একটি দাবি একটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সৌদি আরবের খামিস মুশাইত এ সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং চলতি বছরের মার্চের উক্ত ঘটনাকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, এই দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ২০ জনের সবাই বাংলাদেশি ছিলেন না।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দুর্ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যমে বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবে এমন কোনো ঘটনার খবরের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সৌদি আরব ভিত্তিক গণমাধ্যম Al Arabiya এর ওয়েবসাইটে গত ২৮ মার্চ “At least 20 Umrah pilgrims killed, 29 injured in bus crash heading to Mecca” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৭ মার্চ মক্কায় ওমরাহ হজ করতে যাওয়া কিছু হাজী খামিস মুশাইত থেকে আভা নামক এলাকায় যাওয়ার সময় ব্রেক জনিত কারণে আকাবাত শার সড়কে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। উক্ত দুর্ঘটনায় ২০ জন হাজী নিহত এবং আরও ২৯ জন আহত হয়। হজযাত্রীদের মধ্যে সৌদি নাগরিকসহ এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিকও ছিল।
দুবাই ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম Khaleej Times এর ওয়েবসাইটে একই দিন “Video: 20 Umrah pilgrims killed, 29 injured in Saudi bus crash” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
জাতীয় দৈনিক The Daily Star এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত বাস দুর্ঘটনায় ৮ বাংলাদেশি নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছেন।
আরেক জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতেও একই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।
মূলত, গত ২৭ মার্চ মক্কায় ওমরাহ হজ করতে যাওয়া কিছু হাজী খামিস মুশাইত থেকে আভা নামক এলাকায় যাওয়ার সময় বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। উক্ত দুর্ঘটনায় ২০ জন হাজী নিহত এবং আরও ২৯ জন আহত হয়। এর মধ্যে ৮ জন বাংলাদেশি নিহত এবং ১৮ জন আহত হন। তবে সম্প্রতি সেই দুর্ঘটনার কিছু ছবি প্রকাশ করে ২০ জনেরও বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার তথ্য সাম্প্রতিক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে ৷
সুতরাং, সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় একাধিক বাংলাদেশি আগুনে পুড়ে নিহত হওয়ার পুরোনো সংবাদ সাম্প্রতিক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, একসাথে পদত্যাগ করলেন শেখ হাসিনা ও সিইসি তফসিল বাতিল দেশ চালাবে সেনাবাহিনী– শীর্ষক ক্যাপশনে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিল করা হয়েছে এবং দেশ চালানোর দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে।
উক্ত তথ্যে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগ কিংবা তফসিল বাতিল করে সেনাবাহিনী কর্তৃক দেশ চালানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, খণ্ড খণ্ড কয়েকটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটিতে বিএনপি’র নেতা গোলাম মাওলা রনির বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখা যায়।
গোলাম মাওলা রনির বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গোলাম মাওলা রনির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৯ নভেম্বর “পদত্যাগ করতে পারেন সিইসি ! সরকারের সমঝোতার ব্যর্থটা নিয়ে বোমা ফাটালেন বিগ্রেডিয়ার সাখাওয়াত!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
১৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটিতে বিএনপি’র নেতা গোলাম মাওলা রনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া, ভিডিওটির শুরুতে গোলাম মাওলা রনিকে বলতে শোনা যায়, আমাদের বাংলাদেশে এখন সিইসি নামক যিনি রয়েছেন প্রধান ইলেকশন কমিশনার জনাব কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি কি পদত্যাগ করেছেন বা পদত্যাগ করছেন বা তাঁর পক্ষে পদত্যাগ সম্ভব কি না? এই বিষয়টি নিয়ে তাত্ত্বিক কিছু আলোচনা হবে। এর অর্থ এই নয় যে তিনি পদত্যাগ করেছেন বা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
Video Comparison : Rumor scanner
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগ কিংবা তফসিল বাতিল করে সেনাবাহিনী কর্তৃক দেশ চালানোর দাবিগুলো নিয়ে গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে কেনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্টানেটে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টানেটে “একসাথে পদত্যাগ করলেন শেখ হাসিনা ও সিইসি তফসিল বাতিল দেশ চালাবে সেনাবাহি” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পদত্যাগ, নির্বাচনের তফসিল বাতিল এবং দেশ চালাবে সেনাবাহিনী শীর্ষক তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মারা যাওয়ার খবরটি সঠিক নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবি সম্বলিত অডিও যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে যমুনা টেলিভিশনের উপস্থাপিকাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন।
এরপরই সময় টিভির একটি ফুটেজ দেখানো হয় যেখানে রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। পরবর্তীতে একজন ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, আমাদের হাতে আর কোনো চিকিৎসা নেই এই মুহুর্তে এবং সর্বপরি, একজন ব্যক্তিকে দর্শকদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে দেখা যায়।
এই ভিডিওটির নিচে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে খালেদা জিয়া, হাসিনা খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায় শীর্ষক একটি লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
এরপরই ভিডিওটির উপস্থাপক ক্যামেরার সামনে আসেন এবং তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মৃত্যু সজ্জায় খালেদা জিয়া। যেকোনো সময় মারা যাবে। সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। বিএনপির ভেতরে এই মুহুর্তে শোকের ছায়া।
এরপর তিনি খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা জানতে দর্শকদের পুরো ভিডিওটি দেখতে বলেন। তবে ভিডিওটির কোথাও খালেদা জিয়া মারা গেছেন শীর্ষক তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
ভিডিও যাচাই ১
আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে দেখানো যমুনা টিভির ফুটেজটি অনুসন্ধানে ভিডিওতে দেখানো ‘অবরোধ সমর্থনে বিএনপির মিছিল’ শীর্ষক লেখাটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ ডিসেম্বর অবরোধের সমর্থনে রাজধানীতে বিএনপির মশাল মিছিল | BNP blockade | Jamuna TV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর শুরুতে দেখানো যমুনা টিভির উপস্থাপিকার ফুটেজের সাথে উক্ত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
তবে উক্ত ভিডিওটিতে উপস্থাপিকাকে বলতে শোনা যায়, ‘সরকার পতনের দাবিতে টানা ৩৬ ঘন্টা অবরোধ পালন করছে বিএনপি। কর্মসূচির সমর্থনে রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মশাল মিছিল করে দলীয় নেতাকর্মীরা। দলটির অভিযোগ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বের হওয়া মশাল মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।’ যার সাথে আলোচিত ভিডিওটির কোনো মিল নেই।
অর্থাৎ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ভিডিওতে ভিন্ন অডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ২
পরবর্তী ভিডিওটিতে ‘সময় টিভি’র একটি ফুটেজ দেখানো হয়, যেখানে বিএনপির সিনিয়র সুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওটির নিচের দিকে, ‘শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য বেগম জিয়ার সাজা স্থগিত’ শীর্ষক লেখাটি দেখতে পাওয়া যায়। যার সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সময় টিভির প্রতিবেদনটি পাওয়া না গেলেও যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত শুনেই হাসপাতালে রিজভী | Jamuna TV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর রুহুল কবির রিজভীর সাথে উক্ত ভিডিওর রিজভীর শার্টের রঙ এবং চেকের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও, দুই ভিডিওতেই তার মুখে মাস্ক দেখতে পাওয়া যায়। আর আলোচিত ভিডিওটির উপরে দেখতে পাওয়া যায় ভিডিওটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে এবং কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে পাওয়া যমুনা টিভির প্রতিবেদনের শিরোনাম থেকেও জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি হাসপাতালে ধারণ করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ৩
আলোচিত ভিডিওটিতে এরপর একজন ব্যক্তিকে মাইক্রোফোন হাতে কথা বলতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওর ডান পাশে উপরে ‘NewsNow বাংলা’ নামের একটি লোগো দেখা যায়। লোগোটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে NEWS NOW বাংলা-এর ফেসবুক পেজে গত ৯ অক্টোবর আমাদের হাতে আর কোনো চিকিৎসা নানাই, খালেদা জিয়া বেশি দিন বাঁচবে না: বোর্ড চিকিৎসক শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটি মূলত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্যে গঠন করা বোর্ডের বোর্ড চিকিৎসকের। তিনি মূলত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অবস্থা বর্ণনা করছিলেন। যেখানে তিনি সাংবাদিকদের জানান তার উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া উত্তম।
ভিডিও যাচাই ৪
আলোচিত ভিডিওটিতে উপস্থাপক দর্শকদের উদ্দেশ্যে সর্বশেষ যে ভিডিওটি দেখান তার সূত্র অনুসন্ধানে ভিডিওটির কয়েকটি কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Dr. Fayzul Huq Voice নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ৯ অক্টোবর জীবন নিয়ে লড়ছেন বেগম জিয়া। চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। ডঃ ফয়জুল হক। শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটি মূলত ৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে বোর্ড চিকিৎসকদের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বিবৃতির পর প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত ভিডিওতে খালেদা জিয়ার মারা যাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়াও বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কোনো গণমাধ্যমে-ই খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ খুঁজে পাওযা যায়নি।
মূলত, বিগত চার মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। গত ১১ ডিসেম্বর তার কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)-তে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা প্রদানের পর পুনরায় কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘আর বাঁচানো গেল না খালেদা জিয়াকে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মূলত যমুনা টিভি ও সময় টিভির ভিন্ন ঘটনার দুটি পুরোনো ফুটেজে ভিন্ন ভিন্ন অডিও যুক্ত করে তার সাথে আরেকটি সংবাদের এবং ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিন্ন ঘটনার ভিডিও যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে খালেদা জিয়ার মৃত্যু বিষয়ক কোনো তথ্য নেই।
সুতরাং, আর বাঁচানো গেল না খালেদা জিয়াকে শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “আমি হিন্দু গরুর গোস্ত খেয়েছি আরো খাবো। হিন্দু ধর্মে কোথাও লেখা নেই যে গরুর গোস্ত খাওয়া যাবে না। গরুর প্রতি যদি আপনাদের এতো মোহাব্বত থাকে তাহলে গরুর চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করেন কেন? দয়া করে ধর্মের দোহায় দিয়ে সম্প্রদায়ী সন্ত্রাস সৃষ্টি করবেন না।” শীর্ষক একটি মন্তব্যকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “আমি হিন্দু গরুর গোস্ত খেয়েছি আরো খাবো। হিন্দু ধর্মে কোথাও লেখা নেই যে গরুর গোস্ত খাওয়া যাবে না। গরুর প্রতি যদি আপনাদের এতো মোহাব্বত থাকে তাহলে গরুর চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করেন কেন? দয়া করে ধর্মের দোহায় দিয়ে সম্প্রদায়ী সন্ত্রাস সৃষ্টি করবেন না।” শীর্ষক কোনো মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেননি বরং ২০১৫ সালে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এবং ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কয়েন্ড কাটজুর মন্তব্যের একটি অংশের সাথে অতিরিক্ত কিছু বাক্য জুড়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ছড়ানো হচ্ছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মমতা বন্দোপাধ্যায় এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে উক্ত দাবি সম্পর্কিত কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ২২ মে “আমি হিন্দু, গরুর মাংস খেয়েছি, আবার খাব” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : NTV Online
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এবং ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কয়েন্ড কাটজু ‘আমি হিন্দু, আমি গরুর মাংস খেয়েছি এবং আবার খাব। গরুর মাংস খাওয়ায় দোষের কিছু নেই। পৃথিবীর ৯০% মানুষ গরুর মাংস খায়। তারা কি সবাই পাপী? এবং আমি এটা বিশ্বাস করি না, গরু পবিত্র অথবা আমাদের মা। কীভাবে একটি পশু মানুষের মা হতে পারে? এ জন্যই আমি বলি, ৯০ শতাংশ ভারতীয়ই মূর্খ, মি. মুখতার আব্বাস নাকভিসহ।’ শীর্ষক একটি মন্তব্য করেন।
সার্বিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ধারণা করা যায় মার্কয়েন্ড কাটজুর উক্ত মন্তব্যর কিছু অংশের সাথে অতিরিক্ত বাক্য জুড়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান টুডে’র ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল “Mamata: BJP spreading canards that I eat beef, spending crores on social media to tarnish my image” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কলকাতায় অনুষ্ঠিত তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন উপলক্ষে দেওয়া বক্তৃতায় গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে তাকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মূলত, প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এবং ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কয়েন্ড কাটজুর একটি মন্তব্যের কিছু অংশের সাথে অতিরিক্ত বাক্য জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমি হিন্দু গরুর গোস্ত খেয়েছি আরো খাবো। হিন্দু ধর্মে কোথাও লেখা নেই যে গরুর গোস্ত খাওয়া যাবে না। গরুর প্রতি যদি আপনাদের এতো মোহাব্বত থাকে তাহলে গরুর চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করেন কেন? দয়া করে ধর্মের দোহায় দিয়ে সম্প্রদায়ী সন্ত্রাস সৃষ্টি করবেন না’। এছাড়া দেশীয় কিংবা ভারতীয় কোনো গণমাধ্যমেও বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নামে একটি মন্তব্য দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, এমপির বাড়ি থেকে ৪৬৬ কোটি টাকা উদ্ধারের একটি সংবাদ বাংলাদেশের দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা’র ফটোকার্ড যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এমপির বাড়ি থেকে ৪৬৬ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের। ভারতের ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস রাজ্যসভার এমপি ধীরাজ প্রসাদ সাহু’র বাড়ি থেকে এই টাকা উদ্ধার করা হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত কালবেলা’র ফটোকার্ডের সূত্র ধরে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে এসম্পর্কিত একটি ফটোকার্ড (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Kalbela Facebook
কালবেলার উক্ত ফটোকার্ডটি নিয়ে প্রচারিত পোস্টটির কমেন্টে উল্লেখিত এসম্পর্কিত বিস্তারিত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। কালবেলা’র ওয়েবসাইটে ‘এমপির বাড়ি থেকে উদ্ধার ৪৬৬ কোটি টাকা!’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এমপির বাড়ি থেকে ৪৬৬ কোটি টাকা উদ্ধারের উক্ত ঘটনাটি ভারতের।
প্রতিবেদনে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি বরাতে জানানো হয়, কংগ্রেসের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ধীরজ প্রসাদ সাহু’র বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৩৫৩ দশমিক ৫ কোটি রুপি উদ্ধার করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৬৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
প্রতিবেদনটি’র শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ করা না হলেও প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশে এটি ভারতের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিষয়টি যথাযথ যাচাই না করে শুধুমাত্র শিরোনামটি কপি-পেস্ট করে ফেসবুকে প্রচার করছেন। ফলে ঘটনাটি ভারতের হলেও ভারত শব্দটি উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
Screenshot Collage : Rumor Scanner
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি’র ওয়েবসাইটে গত ১১ ডিসেম্বর ‘Rs 350 Crore, 176 Bags Full, 25 Machines: Day 5 Of Congress MP’s Cash Haul’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ধীরাজ প্রসাদ সাহু’র বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৩৫৩ দশমিক ৫ কোটি রুপি উদ্ধার করা হয়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৬৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান।
অর্থাৎ, এমপির বাড়ি থেকে ৪৬৬ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তবে এসম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম উল্লেখ না করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।
মূলত, সম্প্রতি ভারতের ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ধীরাজ প্রসাদ সাহু’র বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৩৫৩ দশমিক ৫ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৬৬ কোটি টাকা) উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের একাধিক ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ভারতে এমপির বাড়ি থেকে ৪৬৬ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, একটি মাছের কিছু ছবিসহ মাছটির বিষয়ে একাধিক তথ্য সম্বলিত সতর্কতামূলক একটি বার্তা ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভাইরাল এই বার্তাটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এখানে মাছের তিনটি ছবি যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছবিতে ছবিটি ধারণের তারিখ উল্লেখ রয়েছে ১৭ অক্টোবর। অন্য ছবিগুলোতে তারিখ উল্লেখ নেই। “মিথ্যা রূপচাঁদা মাছ চান্দা মাছ থেকে সাবধান” শিরোনাম এবং মানুষকে সচেতন হওয়ার বার্তা দিয়ে শুরু করা ভাইরাল পোস্টটিতে যা লেখা রয়েছে তা হলো, “আজকাল বিশেষত অনেক শহরে এবং গ্রামগঞ্জের বাজারে একধরনের মাছ বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে, যাকে মৎস ব্যবসায়ীরা রূপচাঁদা মাছ বা চান্দা মাছ অথবা চাঁদা মাছ বলছেন। এই মাছ কোথা থেকে আসে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বলছেন, এই মাছ পুকুরে চাষ করা হয়। দামেও অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশ সস্তা। তাই গ্রামগঞ্জে মানুষের পছন্দের তালিকায় একেবারে প্রথম সারিতে এখন এই মাছ। কিন্তু এই মাছের সম্পর্কে শুনলে আপনি চমকে উঠবেন। এই মাছ মূলত মাংসাশী শ্রেণির। এখন অনেক মৎস ব্যবসায়ীও এই মাছ চাষ করছেন। এই মাছগুলি ধরতে ও মারতে পুকুরে তীব্রমাত্রায় বিষ প্রয়োগ করতে হয়। এরা নাকি মানুষখেকো সেই পিরানহা মাছের জাত। যে জলে এই পিরানহা মাছ হয়, সেখানে নামলে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় লাগে একজন আস্ত মানুষকে হজম করতে। এই মাছ চেনার উপায় হল, এর সামনের দাঁত অবিকল মানুষের মতো। এই মাছ খেলে ফুসফুস ক্যানসার, ব্রেন ক্যানসার, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগ শরীরে দানা বাঁধে। যদি কোনো মৎস ব্যবসায়ী এই মাছ বিক্রি করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি বিধি মোতাবেক জেল- জরিমানা হওয়ারও বিধান রয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে ব্যবসায়ীরা এই মাছকে রূপচাঁদা বা চাঁদা অথবা চান্দা বলে বিক্রি করে চলেছেন। কাজেই সবাইকে সতর্ক হতে অনুরোধ করছি। এই মাছ এলাকায় বিক্রি হতে দেখলে অবিলম্বে ওই মৎস্য ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন। তাঁদেরও সাবধান করুন।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মিথ্যা রূপচাঁদা বা চান্দা মাছ থেকে সাবধান শীর্ষক প্রচারিত পোস্টের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারত থেকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টটি বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, এই মাছটি মানুষখেকো নয় বলে মত দিয়েছেন ভারত ও বাংলাদেশের একাধিক বিশেষজ্ঞ।
রিউমর স্ক্যানার টিম আলোচিত দাবিটির সূত্রপাত খোঁজার মাধ্যমে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।
ফেসবুক মনিটরিং টুল এবং একাধিক ম্যানুয়াল পদ্ধতির অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ বিষয়ে উক্ত তিনটি ছবি যুক্ত করে সম্ভাব্য সবচেয়ে পুরোনো পোস্টগুলো (১, ২, ৩, ৪) পাওয়া যায় গত ২১ অক্টোবর। সেদিন একাধিক ফেসবুক পেজ এবং অ্যাকাউন্ট থেকে একই পোস্ট করা হলেও সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (সন্ধ্যা ৭ টা ২৫ মিনিটে) করা হয় Arup Mitra নামে ভারতের কলকাতার একজন গণিত শিক্ষকের অ্যাকাউন্ট থেকে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: Facebook
আরো অনুসন্ধান করে গত ০১ অক্টোবর ভারতের একটি পেজ এবং অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত ১৭ অক্টোবরে তোলা ছবিটি বাদে অন্য ছবিগুলো সমেত এবং একটি পত্রিকার কাটিং সম্বলিত একই শিরোনামের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: Facebook
পোস্টে যে পত্রিকার কাটিং রয়েছে, তার লেখার সাথে ভাইরাল পোস্টগুলোর তথ্যের দৃশ্যমান মিল পাওয়া যাচ্ছে। পত্রিকায় এই লেখাটি লিখেছেন শুভজিৎ বোস নামে একজন শিক্ষক যিনি ভারতের শিলিগুড়ির নকশালবাড়ির রথখোলায় থাকেন বলে উল্লেখ করেছেন লেখার শেষে৷
Image: Facebook
আমরা প্রাসঙ্গিক অনুসন্ধানে জনাব শুভজিৎ বোসের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছি। তার অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ নামে ভারতের কলকাতা ভিত্তিক একটি পত্রিকায় নিয়মিতই লিখে থাকেন। তবে সেখানে আলোচিত এই কাটিংটি পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকার সংবাদ সমন্বয়ক দীপ সাহার (Deep Saha) সাথে কথা বলেছে। তিনি আমাদের নিশ্চিত করেছেন, পত্রিকার কাটিংটি উত্তরবঙ্গ সংবাদের জনমত বিভাগে প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রায় সমজাতীয় একটি দাবি ২০১৯ সালেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
তবে, সম্প্রতি আলোচিত দাবিটি ভারত থেকেই প্রথম ছড়িয়েছে এবং এর সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভাইরাল সতর্কতামূলক বার্তাটির উৎসের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর পোস্টে উল্লিখিত তথ্যগুলো যাচাই করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় রিউমর স্ক্যানার টিম৷
ভারতে এই মাছটি বিক্রি হচ্ছে কিনা বা এটির বিষয়ে কোনো নেতিবাচক ধারণা রয়েছে কিনা তা জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে আমরা কথা বলেছিলাম দেশটির পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) ফিশারি সায়েন্স বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. মানোজ কুমার পাতি‘র (Dr. Manoj Kumar Pati) সাথে৷ জনাব মানোজ রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, এটির বৈজ্ঞানিক নাম Piractus sp. এবং এটি এখানে (ভারতে) পাওয়া যায়। ভোক্তারা এটি পছন্দ করে এবং খাচ্ছেও। কেউ বলছে না, এটি মানুষখেকো। স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে যদি বলতে হয়, আমি মনে করি না এই মাছ খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান United States Geological Survey এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, Piractus sp. বৈজ্ঞানিক নাম সম্বলিত মাছটির সাধারণ নাম unidentified pacu (অশনাক্তকৃত পাকু)।
Screenshot: USGS
তবে এই মাছের নাম পাকু নয় বলে মনে করছেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা৷ রিউমর স্ক্যানার টিমকে এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবদুল্লাহ আল মামুন। তারা দুজনই বলছেন, এটি পিরানহা মাছ৷
ড. আবদুল্লাহ আল মামুন এর কারণ হিসেবে বলছেন, পিরানহার মতো সাইজ নয় পাকুর। পাকু এটির চেয়েও সাইজে বড় হয়ে থাকে৷
বাংলাদেশের মাছের প্রজাতির ডাটাবেজ হিসেবে কাজ করা সংস্থা Bangladesh Fisheries Information Share Home (BdFISH) এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, লাল পাকু ও লাল পিরানহা এর মধ্যে বাহ্যিক পার্থক্য অতি সামান্যই যদিও খাদ্যাভ্যাস ও স্বভাবে রয়েছে বড় ধরণের পার্থক্য। যার ফলে মাছের এই প্রজাতি দুটি শনাক্তকরণে ভুল করার অবকাশ থেকে যায়।
এই সাইটে লাল পাকু এবং লাল পিরানহার কিছু সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, পিরানহার দাঁত এক সারিতে থাকে। ভাইরাল পোস্টগুলোর ছবিতে থাকা মাছটির চোয়ালেও এক সারিতেই দাঁত দেখা যাচ্ছে।
Screenshot: Bdfish
একই ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, পিরানহা সম্পূর্ণভাবে মাংসাশী (Carnivorous) অর্থাৎ কেবলমাত্র প্রাণীজাতীয় খাবারই খেয়ে থাকে। হিংস্র শিকারি মাছ হিসেবে পিরানহার পরিচিতি পৃথিবীব্যাপী বলেও উল্লেখ করা হয়েছে তাতে। এই মাছ মানুষকে আক্রমণ করে এমন নজিরও রয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলছেন, পিরানহা মাছ খেলে কোনও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।
তবে বাংলাদেশে এই মাছ নিষিদ্ধ রয়েছে ২০০৮ সাল থেকে। এটি নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে যে স্বাস্থ্যগত কোনো ঝুঁকি নেই তা স্পষ্ট জনাব ইয়াহিয়া মাহমুদের কথাতেই। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বন্যা প্রবণ দেশ। এখন পুকুরে বা ঘেরে যদি পিরানহা মাছ চাষ করা হয় এবং সেই মাছ যদি পানিতে ভেসে অবরুদ্ধ স্থান থেকে মুক্ত জলাশয় যেমন নদী, খাল বিলে চলে আসে, তখন তাদের আক্রমণে দেশীয় ছোট বড় সব মাছ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
ভারতে অবশ্য দুয়েকটি রাজ্য বাদে সকল স্থানেই এই মাছ বিক্রির অনুমতি রয়েছে৷
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও ভিন্ন নামে এই মাছ বিক্রির বিষয়ে জানিয়েছেন ড. আবদুল্লাহ আল মামুন। নোবিপ্রবির এই শিক্ষক বলছিলেন, বাংলাদেশে এটি রূপচান্দা মাছ নামে বিক্রি হয়। তবে তা খুবই কম। কুমিল্লার লাকসামের কিছু হ্যাচারিতে এর চাষ হয়ে থাকে।
মূলত, সম্প্রতি পিরানহা সদৃশ একটি মাছের কিছু ছবিসহ মাছটির বিষয়ে একাধিক তথ্য সম্বলিত সতর্কতামূলক একটি বার্তা ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দাবি করা হয়েছে, মৎস্য ব্যবসায়ীরা রূপচাঁদা মাছ বা চান্দা মাছ অথবা চাঁদা মাছ বলে এটি বাজারে বিক্রি করছেন৷ এরা মানুষখেকো সেই পিরানহা মাছের জাত। যে পানিতে এই পিরানহা মাছ হয়, সেখানে নামলে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় লাগে একজন আস্ত মানুষকে হজম করতে। এই মাছ খেলে ফুসফুস ক্যানসার, ব্রেন ক্যানসার, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগ শরীরে দানা বাঁধে। যদি কোনো মৎস ব্যবসায়ী এই মাছ বিক্রি করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি বিধি মোতাবেক জেল-জরিমানা হওয়ারও বিধান রয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল এই সতর্কতামূলক এই বার্তাটি ভারত থেকে প্রথম ছড়িয়েছে৷ সেখানকার একজন শিক্ষক এই মাছটিকে পাকু বলেও চিহ্নিত করে এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এটির নাম পিরানহা বলে মত দিয়েছেন। তাছাড়া, এই মাছ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে নিষিদ্ধ হলেও বাকি স্থানগুলোতে বিক্রিতে বাধা নেই। তবে বাংলাদেশে পিরানহা বিক্রি নিষিদ্ধ।
সুতরাং, ভারত থেকে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যা রূপচাঁদা বা চান্দা মাছ থেকে সাবধান শীর্ষক প্রচারিত ভাইরাল সতর্কবার্তার তথ্যাবলি বাংলাদেশের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কুমিল্লার লাকসামের কৃষ্ণপুর এলাকায় বাস দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উক্ত ঘটনায় নিহতের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা (৫, ৮, ৯, ১৫, ২০, ৩০) ছড়িয়ে পড়ে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লার লাকসামে বাস দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫, ৮, ৯, ১৫, ২০ বা ৩০ নয় বরং উক্ত দুর্ঘটনায় একজন বাসযাত্রী নিহত হয়েছেন।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার সংবাদমাধ্যম সমকালের ওয়েবসাইটে “এস্কেভেটরের বাকেটে ঢুকে পড়ল বাস, নিহত ১, আহত ১৫” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লার লাকসামে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বাসযাত্রী নিহত হয়েছেন। এতে আরও অন্তত ১৫ যাত্রী আহত হয়েছেন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত সিফাত হোসেন (২৫) নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়ার মোতালেব হোসেনের ছেলে।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য লাকসাম থানায় যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শাহাবুদ্দিন খান বলেন, লাকসামের দুর্ঘটনায় একজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
দৌলতগঞ্জ বাজার (লাকসাম) ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার শিহাব রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি।”
মূলত, গত ১৩ ডিসেম্বর কুমিল্লার লাকসামের কৃষ্ণপুর এলাকায় নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী ইকোনো পরিবহনের সাথে এক্সেভেটর (ভেকু) বহনকারী একটি খোলা ট্রাক্টরের সংঘর্ষ হয়। উক্ত দুর্ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় নিহতের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে বেশিরভাগ পোস্টেই ৮, ৯, ২০ ও ৩০ জন নিহতের দাবি ছিল। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। এই দুর্ঘটনায় প্রায় ১৫ জন ব্যক্তি আহত হলেও মারা গেছেন একজন যুবক। নিহত ব্যক্তির নাম সিফাত হোসেন (২৫)। তিনি নোয়াখালীর বাসিন্দা।
সুতরাং, কুমিল্লার লাকসামে বাস দুর্ঘটনায় একজন নিহত হলেও উক্ত দুর্ঘটনায় ৫, ৮, ৯, ১৫, ২০ ও ৩০ জন নিহতের দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।