সম্প্রতি, হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
যা দাবি করা হচ্ছে-
ভিডিওতে তারেক রহমানকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “সুমন সাহেব সংসদে গিয়ে বলছেন চাটুকারিতা করতে গিয়ে চাটুকারিতার এক পর্যায়ে যে এই সংসদে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে আমার এই সিটে কোনো অবস্থায় যুদ্ধাপরাধী এবং পূর্বে জামায়াতে ইসলামকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন ঐ সকল ব্যক্তিরা সাঈদী, নিজামী, কাদের মোল্লা, মুজাহিদ,তারা কেউ বসেছিল কিনা উনি নাকি নিশ্চিত হয়েছে উনার চেয়ারে উনারা বসেন নাই তাই তিনি সংসদে বসেছেন…”
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৩ লক্ষ ২২ হাজার আটশত ৪৯৩ বার। ভিডিওটিতে ১৩ হাজার ৩ শত ৬৯ টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে সংসদে গিয়ে চাটুকারিতা বিষয়ক কোনো মন্তব্য করেননি বরং তারেক রহমানের ভিন্ন ঘটনার বক্তব্যের ভিডিওতে ভিন্ন ঘটনার অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই:
ভিডিওটির সত্যতা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিএনপির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর “একজন গ্রেফতার হলে সঙ্গে সঙ্গে আর একজন নেতৃত্ব নিন, নেতৃত্ব দিন”-তারেক রহমান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও গুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই ভিডিওতে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান এবং একজন গ্রেফতার হলে সঙ্গে সঙ্গে আর একজন নেতৃত্ব নেতৃত্ব দেওয়ার কথা জানান। তবে তিনি এই ভিডিওতে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
অডিও যাচাই:
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন এক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি “সংসদে সাঈদী, নিজামীর চেয়ারে বসবেনা ব্যারিষ্টার সুমন! সুমন কি বসার যোগ্য? ড. ফয়জুল হক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
উক্ত ভিডিওর ৫৫ সেকেন্ডের পর থেকে “সুমন সাহেব সংসদে গিয়ে বলছেন চাটুকারিতা করতে গিয়ে চাটুকারিতার এক পর্যায়ে যে এই সংসদে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে আমার এই সিটে কোনো অবস্থায় যুদ্ধাপরাধী এবং পূর্বে জামায়াতে ইসলামকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন ঐ সকল ব্যক্তিরা সাঈদী, নিজামী, কাদের মোল্লা, মুজাহিদ তারা কেউ বসেছিল কিনা উনি নাকি নিশ্চিত হয়েছে উনার চেয়ারে উনারা বসেন নাই তাই তিনি সংসদে বসেছেন।” শীর্ষক অডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত অডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন কিনা তা অধিকতর নিশ্চিতে অনুসন্ধানে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর বিএনপির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি ভিডিও বক্তব্য প্রকাশ করে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান এবং একজন গ্রেফতার হলে সঙ্গে সঙ্গে আর একজন নেতৃত্ব নেতৃত্ব দেওয়ার কথা জানান। এছাড়া, অনলাইন এক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক তার ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি ভিডিও প্রকাশ করে “সুমন সাহেব সংসদে গিয়ে বলছেন চাটুকারিতা করতে গিয়ে চাটুকারিতার এক পর্যায়ে যে এই সংসদে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে আমার এই সিটে কোনো অবস্থায় যুদ্ধাপরাধী এবং পূর্বে জামায়াত ইসলামকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন ঐ সকল ব্যক্তিরা সাঈদী, নিজামী, কাদের মোল্লা, মুজাহিদ তারা কেউ বসেছিল কিনা উনি নাকি নিশ্চিত হয়েছে উনার চেয়ারে উনারা বসেন নাই তাই তিনি সংসদে বসেছেন।” শীর্ষক মন্তব্য করেন। সম্প্রতি, তারেক রহমানের সেই ভিডিওর বার্তার অডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বাদ দিয়ে ড. ফয়জুল হকের উক্ত ভিডিওর অডিও যুক্ত করে তারেক রহমান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে আলোচিত মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত জনসমুদ্রে জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জনগণকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধের জন্য সংগঠিত হতে আহ্বান জানান। ২০১৭ সালে এই ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।
সম্প্রতি, ‘Rare Footage of 1971, 7th march (১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বিরল দৃশ্য)’ শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি মঞ্চে উপস্থিত হয়ে নৃত্য করছেন এবং তা দেখে উপস্থিত জনতা তাকে উৎসাহ ও সমর্থন জানাচ্ছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বিরল দৃশ্য’ শিরোনামে ভাইরাল ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং ব্যাঙ্গাত্মক উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় তৈরি একটি ডিপফেক ভিডিও এটি।
এ বিষয়ে ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওগুলোতে ‘Putki Pat’ নামের একটি জলছাপ লক্ষ্য করা যায়। এই জলছাপের সূত্রে একই নামের একটি ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায় এটা একটি স্যাটায়ার ফেসবুক পেজ। বিভিন্ন বিষয় স্যাটায়ার পোস্ট করা হয় এই পেজ থেকে। তবে আলোচ্য ভিডিওটি বর্তমানে ফেসবুক পেজটিতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পরবর্তীতে ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে Wevolver.com নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১৯ এপ্রিল প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে আলোচ্য ভিডিওর মতো একই ধরনের ভিন্ন দুটি ভিডিও দেখা যায়। তবে, এই সংস্করণে স্টেজ এবং দর্শক সহ সবকিছু আগের মতো থাকলেও স্টেজে থাকার ব্যক্তির পরিবর্তন দেখা যায়। এই সংস্করণগুলোতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের পরিবর্তে একটিতে জনপ্রিয় জোকার চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র এবং অপরটিতে আমেরিকান র্যাপার লিল ইয়াচটিকে দেখা যায়।
উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায় এই ভিডিও ক্লিপগুলো ভিগল এআই (Viggle AI) দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot: Facebook.
এই সূত্র ধরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ১৭ এপ্রিল সংস্কৃতি বিষয়ক নিউজ পোর্টাল ‘uproxx’ এ এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জনপ্রিয় আমেরিকান র্যাপার লিল ইয়াচটির ২০২১ সালের একটি কনসার্টের ভিডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিও ক্লিপটি ব্যবহার করে মিম তৈরি সামাজিক মাধ্যমের ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এআই ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে লিল ইয়াচটির স্থানে বিভিন্ন চরিত্র ও ব্যক্তিদের ছবি প্রতিস্থাপন করে এই মিমগুলো তৈরি করা হচ্ছে।
পরবর্তীতে ‘TheAIGRIDTutorials’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ এপ্রিল প্রচারিত একটি ভিডিও থেকে আলোচ্য ভিডিওটি কীভাবে তৈরি করা হয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। জানা যায়, ভিগল এআইয়ের ডিস্কোর্ড সার্ভারে কিছু কমান্ড এবং যে ব্যক্তিকে নিয়ে এমন ভিডিও বানানো হবে তার একটি ছবি দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে এমন ভিডিও তৈরি সম্ভব।
ভিগল এআইয়ের ডিস্কোর্ড সার্ভারে যুক্ত হয়ে বিষয়টি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
এছাড়া লিল ইয়াচটির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালে প্রচারিত একটি ভিডিওতে ভাইরাল ভিডিওটির মূল দৃশ্য দেখা যায়।
মূলত, সম্প্রতি জনপ্রিয় আমেরিকান র্যাপার লিল ইয়াচটির ২০২১ সালের কনসার্টের ভিডিও ক্লিপ ভিগল নামের একটি এআই সেবার মাধ্যমে পরিবর্তন করে লিল ইয়াচটির স্থানে বিভিন্ন চরিত্র ও ব্যক্তিদের ছবি প্রতিস্থাপন করে মিম তৈরি করা সামাজিক মাধ্যমের ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে একই ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করে লিল ইয়াচটির স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রতিস্থাপন করে ‘১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বিরল দৃশ্য’ শিরোনামে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ‘১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বিরল দৃশ্য’ শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত ডিপফেক যা স্যাটায়ার বা ব্যাঙ্গাত্মক উদ্দেশ্যে তৈরি।
সম্প্রতি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে থেকে ‘জয়বাংলা’ খচিত রামদা সহ বিপুল অস্ত্র উদ্ধারের তিনটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি বরং পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম এবং বিশ্বস্ত সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ছবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে।
image Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলে একটি অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ছাত্রাবাসটি থেকে বিপুল সংখ্যক দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় সেখানে মদ-গাঁজাও পাওয়া যায়।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দ্য ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর “TERROR RISING” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ছবিটির সাথে আলোচিত ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে।
image Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এই ছবিটি ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলে অভিযান চালিয়ে পাওয়া অস্ত্রের ছবি।
অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০১৯ সালের৷
উক্ত পোস্টে থাকা ছবিটির সাথে আলোচিত ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে।
Image Comparison: Rumor Scanner
ফেসবুকে করা পোস্টের ক্যাপশনেও ছবিটি নোয়াখালী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র বলে দাবি করা হয়।
ছবিটি কোন স্থানের তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটি নিশ্চিত যে এই ছবিটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
মূলত, সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে থেকে ‘জয়বাংলা’ খচিত রামদা সহ বিপুল অস্ত্র উদ্ধারের তিনটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হল থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি। আলোচিত দাবির সাথে যে তিনটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে তার মধ্যে দুইটি ছবি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ সালে পুলিশের এক অভিযানে হল থেকে অস্ত্র উদ্ধারের সময়। অপর একটি ছবি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কিনা তা নিশ্চিত না হলে এটিও ২০২১ সাল থেকে ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে।
সুতরাং, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলে পুলিশের এক অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত ১৬ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারী বর্ষণের কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে দুবাইয়ে বন্যার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে যাতে দেখা যায় অসংখ্য গাড়ি পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বন্যার দৃশ্য নয় বরং এটি জাপানে ২০১১ সালের সুনামি আঘাত হানার দৃশ্য।
ভিডিওটির সত্যতা জানতে কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জাপান ভিত্তিক গণমাধ্যম TBS News DIG এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি “[3.11] 津波が押し寄せる岩手・宮古市の沿岸 部【JNNアーカイブ 311あの日の記録】” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও গুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানে ৯.০ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণে বিশাল সুনামির সৃষ্টি হয়। যার কারণে জাপানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ১৫ হাজার ৮৯৯ জনের প্রাণহানি ঘটে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি’র ওয়েবসাইটে ২০১১ সালের ১১ মার্চ “Japan earthquake: Tsunami hits north-east” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ ঘটনার সত্যতা জানা যায়।
মূলত, ২০১১ সালে জাপানে ৯.০ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট সুনামির কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অনেক সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সেই সুনামির দৃশ্য জাপানের একাধিক গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। জাপানের সে সময়ের সুনামির দৃশ্যের একটি ভিডিও সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বন্যার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, জাপানের সুনামির দৃশ্য সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বন্যার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা
গত কয়েকদিন ধরে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে ‘MARUF MR Creation’ নামক একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট (আর্কাইভ) থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিনোদন জগতের দুই তারকা চিত্রনায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমা এবং অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওবায়দুল কাদের, অপূর্ব কিংবা পূর্ণিমা কেউই মারা যাননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিত্তিহীনভাবে উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই ব্যক্তিদের মৃত্যুর ভুয়া দাবি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ওবায়দুল কাদেরসহ উক্ত তারকাদের মৃত্যুর বিষয়ে প্রচারিত ভিডিওগুলো প্রত্যেকটি আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিউমর স্ক্যানারের পাঠকদের সুবিধার্থে পৃথক পর্যবেক্ষণ এবং প্রকৃত তথ্য পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলোঃ
ওবায়দুল কাদের কি মারা গেছেন?
গত ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মারা গেছেন দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot : TikTok
উক্ত পোস্টে বলা হয়, ‘ওবায়দুল কাদেরের লাশ নোয়াখালী তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে’।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তজার্তিক কোনো সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে আলোচিত দাবির সত্যতা সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে আলোচিত দাবি প্রচারের পরবর্তী সময়ে একাধিক জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন:
অর্থাৎ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন এবং জনসম্মুখে একাধিক স্থানে তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব কি মারা গেছেন?
বিনোদন জগতের তারকা শিল্পী অপূর্ব মারা গেছেন দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot : TikTok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে অপূর্বের মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। টিকটকে অপূর্বের মৃত্যুর দাবির সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে অপূর্বের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার কার্যক্রমের ভিডিও (আর্কাইভ) প্রচার হতে দেখা গেছে।
অর্থাৎ, অভিনেতা অপূর্ব মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
চিত্রনায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমা কি মারা গেছেন?
চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা মারা গেছেন দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot : TikTok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পূর্নিমার মৃত্যুর দাবির বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। টিকটকে পূর্ণিমার মূত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে পূর্ণিমার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করতে দেখা গেছে।
অর্থাৎ, চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
মূলত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিনোদন জগতের তারকাদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে সূত্র ও প্রমাণবিহীন নানা ধরনের তথ্য প্রচারের প্রবণতা দেখা যায়। গত কিছুদিন ধরে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে ‘MARUF MR Creation’ শীর্ষক অ্যাকাউন্টে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অভিনেতা অপূর্ব এবং চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার মৃত্যুর দাবি প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে যে, উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের কেউই মারা যাননি। মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত তাদের কারো মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ওবায়দুল কাদেরসহ উক্ত তারকারা নিয়মিত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিভিন্ন তারকাদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নাট্য অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এবং চিত্রনায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমার মূত্যুর দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি “বাংলাদেশের ৬৮ হাজার নারীকে ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি” শীর্ষক একটি সংবাদ সম্বলিত ফটোকার্ড দেশের দুই বেসরকারি গণমাধ্যম যমুনা টিভি ও সময় টিভি প্রকাশ করেছে দাবিতে অসংখ্য পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
এছাড়া, বিবিসি বাংলা’য় ২০২২ সালে প্রায় একই প্রসঙ্গে প্রকাশিত একটি সংবাদের বরাত দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ১৪ হাজার নারীকে ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সময় বা যমুনা টিভি “বাংলাদেশের ৬৮ হাজার নারীকে ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি” শীর্ষক কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এমনকি এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ অন্য গণমাধ্যমেও সম্প্রতি আসেনি। তাছাড়া, বিবিসি বাংলার আলোচিত প্রতিবেদনেও ১৪ হাজার বাংলাদেশি নয়, বলা হয়েছে প্রায় চারশ বাংলাদেশি নারীকে ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দুই ফটোকার্ড যে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তাদের অর্থাৎ সময় টিভি ও যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়েছে তা খুঁজে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় রিউমর স্ক্যানার। গণমাধ্যম দুইটির কথিত এই ফটোকার্ড দুইটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ফটোকার্ডগুলো প্রকাশের তারিখ গত ২২ এপ্রিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সূত্র ধরে শুরুতে সময় টিভি এবং পরে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ডের অস্তিত্ব মেলেনি। এমনকি এই দুই গণমাধ্যমের প্রচলিত যে ফটোকার্ড রয়েছে সেগুলোতে থাকা উপাদান যেমন ফন্ট, কালার গ্রেডিংসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোতেও বেশ অমিল পাওয়া গেছে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডগুলোর সাথে।
আমরা এই দুই গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখেছি। কিন্তু সময় বা যমুনার ওয়েবসাইটে গত কিছুদিনের মধ্যে এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে এই দুই গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের সাথেও কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার। সময় টিভির জয়েন্ট নিউজ এডিটর মামুন শেখ জানিয়েছেন, “আমাদের হাউজ থেকে এরকম কোনো নিউজ করা হয়নি। এমন কোনো তথ্যও আমাদের জানা নাই।”
যমুনা টিভির কথিত ফটোকার্ড নিয়েও প্রায় একই তথ্য দিয়েছেন গণমাধ্যমটির নিউ মিডিয়া এডিটর রুবেল মাহমুদ। তিনি বলছেন, তাদের ব্যবহৃত ফন্টের সাথে এই ফটোকার্ডের ফন্টের মিল নেই।
অর্থাৎ, দেশের প্রথম সারির দুই গণমাধ্যমকে জড়িয়ে কথিত একটি সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আমরা এই সংবাদ অন্যান্য গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে কিনা খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো খবরের হদিস মেলেনি।
তবে প্রায়ই এ সংক্রান্ত নানা খবর গণমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসতে দেখে আসছে রিউমর স্ক্যানার। যেমন, গত জানুয়ারিতে জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর হাজার হাজার মেয়েকে উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা হয় যৌনকর্মী হিসেবে।
জাতীয় আরেক দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় গত বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে ভারতে পাচার করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার নারী। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার নারীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
ভারতের যৌন পল্লীতে বাংলাদেশি নারীদের পাচার হওয়া প্রসঙ্গে বিগত বছরগুলোর আরো কিছু সংবাদ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
অন্যদিকে, বিবিসি বাংলার ২০২২ সালের যে সংবাদের বরাতে বাংলাদেশের ১৪ হাজার নারীকে ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি করা হয়েছে শীর্ষক দাবি করা হচ্ছে সে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে আমরা সংবাদ প্রতিবেদনটি খুঁজে বের করেছি। ভারতে পাচারের শিকার ১৪ হাজার নারীকে দিয়ে যেভাবে চলছিল যৌন ব্যবসা শীর্ষক শিরোনামের এই সংবাদটি বিবিসি বাংলা প্রকাশ করে ২০২২ সালের ০৮ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ, নেপাল, থাইল্যান্ড, রাশিয়া আর উজবেকিস্তান থেকেও নারীদের নিয়ে আসা হত খরিদ্দারকে সন্তুষ্ট করার জন্য। এরা মিলে চক্রটির সাথে জড়িয়ে ছিল প্রায় ১৪ হাজারেরও বেশি নারী। বিবিসি লিখেছে, তাদের প্রায় অর্ধেকই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।
প্রতিবেদনে এটাও উল্লেখ আছে যে, বাংলাদেশি নারীদের সংখ্যাটা প্রায় শ চারেক বলে মনে করা হয়।
অর্থাৎ, বাংলাদেশের ১৪ হাজার নারীকে ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি করা হয়েছে দাবিতে নিজেদের প্রতিবেদনে কোনো তথ্য দেয়নি বিবিসি বাংলা। বরং লিখেছে যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা এদের মধ্যে ৪০০ এর মতো।
মূলত, সম্প্রতি “বাংলাদেশের ৬৮ হাজার নারীকে ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি” শিরোনামের একটি সংবাদ সম্বলিত ফটোকার্ড দেশের দুই বেসরকারি গণমাধ্যম যমুনা টিভি ও সময় টিভি প্রকাশ করেছে শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লেও রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দাবিটির পক্ষে সত্যতা মেলেনি। গণমাধ্যম দুইটির পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, প্রায় একই সময়ে বিবিসি বাংলা’য় ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি সংবাদের বরাত দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ১৪ হাজার নারীকে ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু বিবিসি বাংলার উক্ত প্রতিবেদনেই উল্লেখ আছে যে, এই ১৪ হাজার নারীর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন।
সুতরাং, “বাংলাদেশের ৬৮ হাজার নারীকে ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি” শিরোনামের একটি সংবাদ সম্বলিত ফটোকার্ড যমুনা টিভি ও সময় টিভি প্রকাশ করেছে শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উক্ত ফটোকার্ডগুলোও ভুয়া।
ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক করে আলোচনায় আসা ইসলামি আলোচিত বক্তা রাহুল হোসাইন রুহুল আমিন ওরফে ব্রাদার রাহুলের সাথে সম্প্রতি দুই ইহুদি ব্যক্তির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দুই ইহুদি ব্যক্তির সাথে ইসলামিক বক্তা রাহুল হোসাইন রুহুল আমিন ওরফে ব্রাদার রাহুলের এই ছবিটি আসল নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন একটি ছবিকে সম্পাদনা করে ভিন্ন ব্যক্তির মুখের ওপর ব্রাদার রাহুল হোসেনের মুখমণ্ডল বসিয়ে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবিটির সাথে প্রচারিত ছবিটিতে থাকা দুই ইহুদি ব্যক্তির ড্রেস, চেহারা এবংকি ব্যাকগ্রাউন্ডেরও হুবহু মিল রয়েছে।
Photo Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে পরিদর্শন করেন নেতুরেই কার্তার সদস্যরা। ছবিটি সেইসময়কার তোলা।
অর্থাৎ, উক্ত ছবিটি এডিট করে আলোচিত ইসলামিক বক্তা রাহুল হোসাইন রুহুল আমিন ওরফে ব্রাদার রাহুলের মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে।
মূলত, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে পরিদর্শন করেন নেতুরেই কার্তার সদস্যরা। সম্প্রতি, তাদের ঐ পরিদর্শন চলাকালে তোলা একটি ছবিকে বিকৃত করে এক ব্যক্তির মুখমণ্ডলের স্থলে আলোচিত ইসলামিক বক্তা রাহুল হোসাইন রুহুল আমিন ওরফে ব্রাদার রাহুলের মুখমণ্ডল বসিয়ে দাবি করা হচ্ছে, ব্রাদার রাহুল দুই ইহুদি ব্যক্তির সাথে ছবি তুলেছেন।
সুতরাং, রাহুল হোসাইন রুহুল আমিন ওরফে ব্রাদার রাহুলের সাথে দুই ইহুদি ব্যক্তির ভাইরাল এই ছবিটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
সম্প্রতি ১২ বছর বয়সী গলার রোগে আক্রান্ত সুমাইয়া আক্তার নামের এক শিশুর চিকিৎসার জন্য সহায়তা চেয়ে বেশকিছু পোস্ট ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছে। পোস্টগুলোতে তার চিকিৎসা সহায়তার জন্য ফিতরা বা জাকাতের টাকাও চাওয়া হয়েছে।
পোস্টগুলোতে বলা হচ্ছে– “ভিক্ষুকের মত নির্লজ্জ ভাবে পায়ে ধরে শুধু শেয়ার ভিক্ষা চাচ্ছি। সাহায্য করতে না পারলেও অন্তত একটি শেয়ার করুন। আপনার শেয়ারের মাধ্যমে হয়তো কোনো বিত্তবান, দানশীল ও দ্বীনদার ব্যক্তির নজরে আসবে ইনশাআল্লাহ। ফেতরা বা যাকাত হিসাবে কমপক্ষে একজনের ফিতরা যদি যদি পায় ছোট্ট বোনকে চিকিৎসা করা সম্ভব ইনশাল্লাহ।
নাম সুমাইয়া আক্তার, বয়স ১২, পিতা- মোঃ মহিদুল শেখ, গ্রাম-সুবিদপুর চিরাপাড়া, কাউখালী, পিরোজপুর। শারীরিক অসুস্থতার পরে টিভি হওয়ায় গলায় জটিল অপারেশন করতে হয়েছে। বর্তমানে বরিশাল শেরে -ই বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে অপারেশন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় চার তলায় (নাক,কান,গলা) মহিলা ওয়ার্ড ৬নং বেডে ভর্তি আছেন।
সুমাইয়ার বাবা একজন দিনমজুর তাই অর্থের অভাবে চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সামাজের বিত্তবান ও মানবিক ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর বিশেষ অনুরোধ রইলো।”
এ পোস্টগুলোর শেষে টাকা পাঠানোর জন্য পিতা মহিদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে বিকাশসহ বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) নাম্বার উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দেখা গেছে এসব পোস্টে ভিন্ন ভিন্ন বিকাশ নাম্বার যুুক্ত করা হয়েছে। হুবহু পোস্ট কপি করে কেবল নাম্বার পরিবর্তন করে পোস্টগুলো করা হয়েছে।
যেমন একটি পোস্টে বিকাশ ও নগদ পার্সোনাল নাম্বার হিসেবে দেয়া হয়েছে 01911129496 ও 01861343647 সংখ্যার দুটি নাম্বার। অপর এক পোস্টে যুক্ত করা হয়েছে 01617633720 সংখ্যার একটি নগদ পার্সোনাল নাম্বার। অন্য আরেক পোস্টে যুক্ত করা হয়েছে 01943733625 সংখ্যার বিকাশ ও নগদ পার্সোনাল নাম্বার। ০১৮৭৮৭৬০৫৪৯ সংখ্যার একটি রবি নাম্বার যুক্ত করা হয়েছে অপর আরেক পোস্টে। ০১৩২৫৭০৫৫০৮ শীর্ষক একটি পার্সোনাল বিকাশ, রকেট ও নগদ নাম্বার যুক্ত করা হয়েছে অন্য আরেকটি পোস্টে। সুমাইয়া আক্তার নামের ওই শিশুর চিকিৎসা সহায়তার জন্য বিভিন্ন পোস্টে আরও যুক্ত করা হয়েছে এমন কিছু নাম্বার হলো– 01830973418, 0185433893, 01602528493, 01778899196, 01863338422 এবং 01848386601 ইত্যাদি নাম্বার।
মোঃ ওমর ফারুক নাম দিয়ে কিছু পোস্টে 0112005552925 সংখ্যার এক্সিম ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করা হয়েছে।
পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় প্রথমদিকে বিভিন্ন ফেক আইডি থেকে বিভিন্ন গ্রুপে এসব পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে রিয়েল অ্যাকাউন্টধারীরও কপি-পেস্ট করে পোস্ট করেন কিংবা শেয়ার করে সেগুলো প্রচার করেন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গলার টিবি রোগে আক্রান্ত শিশু সুমাইয়ার তথ্য ও ছবি ব্যবহার করে প্রতারক চক্র নিজেদের বিকাশ নাম্বার যুক্ত করে বিভিন্ন গ্রুপে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করছে, এ পোস্টগুলোর সাথে সুমাইয়ার পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই।
অনুসন্ধানে Md Mynul Islam নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সুমাইয়ার চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে দেওয়া প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। ওই পোস্টে থেকে জানা যায়– ১২ বছর বয়সী সুমাইয়া আক্তার গলার টিবি রোগে আক্রান্ত। তার বাসা ৪নং চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সুবিদপুর এলাকায়। তার সুমাইয়া তার বাবা মোঃ মহিদুল ইসলামের বড় মেয়ে।
ওই পোস্টে তিনি লেখেন– “৪নং চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সুবিদপুর দিনমজুর অসহায় মোঃ মহিদুল ইসলামের বড় মেয়ে মোসা: সুমাইয়া আক্তার, বয়স ১২ বছর গলার ডান পাসে ছয়টি টিভি রোগে আক্রান্ত। মহিদুল সাধ্য অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখানোর পরে তিনটি টিভি ফেটে যায় আর তিনটি টিভি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। আর মেয়েটিও অসুস্থ হতে থাকে, তাই এমন অবস্থায় আজকে সকালে মেয়েটিকে নিয়ে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তার বলছেন জরুরীভাবে অপারেশন করা দরকার আর তিনটি টিউমার ফেটে যাওয়ায় সেখানে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। তাই অপারেশনের পরে টিভি গুলি ঢাকা মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
কিন্তু দিনমজুর মহিদুলের পক্ষে সুমাইয়ার চিকিৎসা চালানো অসম্ভব,তাই আমরা সবাই যদি মেয়েটার পাশে দাঁড়াই আল্লাহর রহমতে মেয়েটি বেঁচে যেতে পারে। যোগাযোগ-মোঃ মহিদুল ইসলাম 01778801201 মোঃ মাইনুল ইসলাম 01851279908 বিকাশ/নগদ।”
FB post of Md Mynul Islam
চিকিৎসা সহায়তার জন্য গত ১১ মার্চের আরেক পোস্টে (আর্কাইভ) তিনি লেখেন– “সহযোগিতার আবেদন; মোসাম্মদ সুমাইয়া আক্তার,বয়স ১২ বছর।
পিতা-মোঃ মহিদুল শেখ, গ্রাম-সুবিদপুর। ইউনিয়ন- ৪নং চিরাপাড়া, কাউখালী, পিরোজপুর। শারীরিক অসুস্থতা অতঃপর টিভি হওয়ায় গলায় জটিল অপারেশন করতে হয়েছে। বর্তমানে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হসপিটালে অপারেশন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় চার তলায় (নাক,কান,গলা) মহিলা ওয়ার্ড ৬নং বেডে ভর্তি আছেন। সুমাইয়ার বাবা একজন দিনমজুর তাই অর্থের অভাবে চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিত্তবান ও মানবিক ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ রইলো। মোঃ মহিদুল -01778801201
Fb post of Md Mynul Islam
মইনুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায় তিনি শিশু সুমাইয়ার এলাকারই বাসিন্দা এবং একজন সেচ্ছাসেবী, মানবসেবামূলক কাজ করে থাকেন। সেই সূত্রেই তিনি সুমাইয়ার জন্য চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে পোস্ট দেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৮ ফেব্রুয়ারির একটি পোস্টে সুমাইয়ার জন্য এ পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন বলে জানান।
Fb post of Md Mynul Islam
সুমাইয়ার চিকিৎসার জন্য জনাব মইনুল ইসলাম যে এমএফএস নাম্বারটি দিয়েছেন সেটি হলো– 01851279908।
তবে পরবর্তীতে জনাব মইনুল ইসলামের গত ১১ মার্চের ফেসবুক পোস্ট থেকে ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে সাহায্য পাঠানোর নাম্বার বদলিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার যুক্ত করে প্রচার করার ঘটনা ঘটেছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়ে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে জনাব মইনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সুমাইয়ার আরও কিছু ছবি এবং চিকিৎসার কাগজপত্র আমাদের পাঠিয়ে নিশ্চিত করেন– “এগুলোর একটি নাম্বারও ঠিক নেই। সবগুলোই ভুয়া। সুমাইয়ার জন্য চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর আসল নাম্বার হচ্ছে– 01851279908।”
তিনি আরও জানান– “সুমাইয়া বর্তমানে হাসপাতাল থেকে রিলিজ হয়ে নিজ বাড়ীতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য আপাতত আর কোনো সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে না।”
মূলত, গলায় টিবি রোগে আক্রান্ত ১২ বছর বয়সী শিশু সুমাইয়ার জন্য তার বাবার পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভবপর না হওয়ায় তাদের পক্ষে তাদের এলাকার মইনুল ইসলাম নামের এক সেচ্ছাসেবী ফেসবুকে সুমাইয়ার জন্য চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে পোস্ট করেন। পরবর্তীতে মইনুল ইসলামের পোস্ট থেকে ছবি ও তথ্য নিয়ে বিকাশ নাম্বার বদলিয়ে প্রতারকচক্র নিজেদের বিকাশ, নগদ ইত্যাদি নাম্বার যুক্ত করে চিকিৎসার জন্য জাকাত-ফিতরার নামে আর্থিক সাহায্য তুলছেন, যার সাথে সুমাইয়ার পরিবারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সুতরাং, সুমাইয়া আক্তার নামের এক শিশুর তথ্য ও ছবি ব্যবহার করে চিকিৎসার জনয় জাকাত-ফিতরার নামে আর্থিক সাহায্য উত্তোলনের বিষয়টি ভুয়া ও প্রতারণামূলক।
সম্প্রতি, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী এই ০৬ জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠিত হয়েছে দাবিতে একটি তালিকার ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠিত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিতব্য ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনের ছবি ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠিত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোর সাথে যুক্ত তালিকার ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে তালিকাটিতে চাঁদপুর জেলার কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার নামের পাশে EVM (Electronic Voting Machine) শীর্ষক লেখা লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: Facebook
এটি দেখে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এই তালিকাটি নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো তালিকার।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গত ১৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখা-২ এর সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ শাহজালাল এর স্বাক্ষরিত ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর প্রজ্ঞাপন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রজ্ঞাপনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor শ্চান্নের
উক্ত প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, এটি আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী তফসিলের বিবরণী। কুমিল্লা অঞ্চলের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার সমন্বয়ে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন থেকে আরও জানা যায়, মন্তব্য কলামে ‘EVM’ চিহ্নিত উপজেলাসমূহে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং বাকি উপজেলাসমূহে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
অর্থাৎ, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর তফসিলে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী জেলার সমন্বয়ে গঠিত কুমিল্লার নির্বাচনী এলাকার তালিকার ছবি উক্ত ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠিত হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলাকে প্রজ্ঞাপনে বিভাগ ক্যাটাগরিতে স্থান দেওয়ার কারণ কী বা এর সাথে প্রশাসনিক বিভাগের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার পরিচালক জনাব শরিফুল আলমের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। তিনি জানান, “এটি নির্বাচন কেন্দ্রিক বিষয়। এখানে প্রশাসনিক বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই।”
তিনি আরও জানান, “কুমিল্লায় আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থাকার কারণে অন্যান্য বিভাগীয় এলাকার নামের সাথে কুমিল্লার নাম এসেছে।”
অনুসন্ধানে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা নিয়ে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থাকার তথ্য জানা যায়।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লাকে বিভাগ করার দাবিতে গেল বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন করে আসছে সেখানকার মানুষেরা। বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লা নামে বিভাগ দিতে চান না। তিনি ফরিদপুর বিভাগ পদ্মার নামে এবং কুমিল্লা বিভাগ মেঘনার নামে করার কথা জানান।
জাতীয় দৈনিক মানবজমিনের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ নামে নতুন দুই বিভাগ করার সিদ্ধান্ত সেই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
তবে পরবর্তীতে মেঘনা নামে কুমিল্লা অঞ্চল নিয়ে বিভাগ হওয়া নিয়ে নতুন কোনো তথ্য অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি।
মূলত, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী এই ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠিত হয়েছে দাবিতে সম্প্রতি একটি তালিকার ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত তালিকাটি ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর তফসিলে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী জেলার সমন্বয়ে গঠিত কুমিল্লার নির্বাচনী এলাকার প্রজ্ঞাপনের ছবি, যা ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর প্রজ্ঞাপনের ছবি ব্যবহার করে কুমিল্লা নামে বিভাগ গঠিত হয়েছে শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ০৯ এপ্রিল জান্নাত বাণী নামে এক নারীর মোবাইলে একটি খুদে বার্তা বা মেসেজ আসে। মেসেজটি ছিল এরকম, “Jannat apu, ami tomar khub kacher keo. Lojjai porichoy dete parchi na. Amader barite onek ovab jacche, khub baje obostha. Edike samne Eid ki hobe jani na. Abbur haat e o tk nai, tomader Fitra ba Zakat er kisu tk pathale khub upokar hobe. Plz Plz. 01836714650 Bkash+Nagad send money korbe plz.” (বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত)
এই মেসেজ পেয়ে তিনি ভেবে নিয়েছেন, তার আত্মীয় কেউই হয়ত মেসেজটি পাঠিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি মেসেজে দেওয়া নাম্বারে কিছু টাকা পাঠিয়েও দেন। আমরা নাম্বারটির বিষয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করে গত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানের অন্তত ২৩ জন ব্যক্তির অভিযোগ দেখেছি, যারা একই মেসেজ পেয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মেসেজের শুরুতে তাদের নাম উল্লেখ দেখে। তবে এদের অনেকেই নিজেরাই প্রাথমিক কিছু অনুসন্ধানের পর বুঝে নিয়েছেন যে মেসেজদাতারা হয়ত প্রতারণা করছেন। তাই টাকা পাঠাননি।
তবে সকলের ক্ষেত্রেই যে প্রাথমিক সতর্কতা পালন করা হয় বিষয়টা মোটেও এমন নয়। রিউমর স্ক্যানারের ইনভেস্টিগেশন ইউনিট বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছে, অন্তত ২০২১ সাল থেকে একই মেসেজ ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার থেকে অসংখ্য ব্যক্তিকে পাঠানো হয়েছে। মেসেজের ভাষা এবং অসহায়ত্বের আকুতিতে বিশ্বাস করে একাধিক ব্যক্তি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে সহায়তার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছি আমরা।
ঈদকে ঘিরে প্রতারণার ফাঁদ
চলতি বছর বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর পালিত হয় গত ১১ এপ্রিল। ফিতরা এবং জাকাতের অর্থ সহায়তা হিসেবে চেয়ে পাঠানো মেসেজগুলো পেয়ে কেউ তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে কিনা তা দেখতে ঈদের আগে অন্তত এক সপ্তাহ রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট নজর রেখেছিল ফেসবুকে৷ আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এই সময়ে অন্তত ১১ টি ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নাম্বার থেকে একই মেসেজ পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তিদের। এর মধ্যে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ দেখা গেছে +8801872703502 এই নাম্বারটির বিষয়ে। কমপক্ষে ৪০ জন ব্যক্তি অন্তত গত ০৯ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত এই নাম্বার থেকে একই মেসেজ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্ট এবং কমেন্টে।
Screenshot: Facebook
আমরা এ সংক্রান্ত ফেসবুকে যেসব নাম্বারের সন্ধান পেয়েছি এদের সবগুলো ট্রু কলার অ্যাপে দিয়ে দেখা গেছে, সেখানে সবচেয়ে বেশি (অন্তত ৮৪ টি) স্প্যাম রিপোর্ট করা হয়েছে +8809617609850 এই নাম্বারে। শুধু এই বছরই নয়, অন্তত ২০২৩ সাল থেকে এই নাম্বার থেকে একই মেসেজ পাওয়ার অভিযোগ দেখা গেছে অ্যাপটিতে। এসব অভিযোগের সবচেয়ে পুরোনো তিনটি এসেছে ঈদুল ফিতরের আগের দিন, গত বছরের ২১ এপ্রিল। পরের দুইদিনও একাধিক ব্যক্তি একই নাম্বার থেকে টাকা চেয়ে একই কায়দায় মেসেজ পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। এরপর জুলাই এবং সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে এই নাম্বার থেকে অর্থ চাওয়ার অভিযোগ এসেছে ট্রু কলারে।
Screenshot: True Caller App
গত ০৭ এপ্রিল মোহাম্মদ ফাহিম আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকের একটি পাবলিক গ্রুপে এই নাম্বারটির বিষয়ে সকলকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, তাকে গত বছর ঈদুল ফিতরের আগের দিন এই নাম্বার থেকে একই মেসেজ দিয়ে +8801911756867 নাম্বারে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। জনাব ফাহিম বলছেন, “এরা মানুষের আবেগ কে কেন্দ্র করে এই রকম কারসাজি করে। আমি প্রথমে বিষয়টা বিশ্বাস করলেও পরে উক্ত নাম্বারে কল করলে কল রিসিভ করে না।”
এসব ছাপিয়ে একক এবং নিয়মিত একই কায়দায় অর্থ সহায়তা চেয়ে আসছে এমন একটি নাম্বারের সন্ধান মিলেছে। +8801905479586 এই নাম্বারটি ট্রু কলারে নাম দেখাচ্ছে ‘সীমা’। অন্তত ২০২২ সাল থেকে এই নাম্বার থেকে মেসেজ পেয়ে আসছেন, ট্রু কলারে এমন অভিযোগে স্প্যাম রিপোর্ট করা হয়েছে ৬২ টি৷ ৪১ জন ব্যক্তি নাম্বারটির বিষয়ে নিজেদের অভিযোগ জানিয়েছেন, যার সবচেয়ে পুরোনোটি এসেছে ২০২২ সালের পহেলা জুন৷ তবে সেসময় কোনো ঈদ ছিল না৷ মোস্তাবির শামীম নামে যে ব্যক্তি সেদিন অভিযোগ করেন তার বক্তব্য এমন, “টাকার জন্য প্রতারণা করছে৷ বিশ্বাস করবেন না।” জনাব শামীমকে ঠিক কী মেসেজ লিখে পাঠানো হয়েছিল তা জানা সম্ভব না হলেও এই নাম্বার থেকে পরবর্তীতে একই মেসেজ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে যাওয়ার স্ক্রিনশট পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। স্ক্রিনশটে দেখা যায়, মেসেজ পাঠানো ব্যক্তি নিজেকে সীমা বলে পরিচয় দিয়ে ১০০ বা ২০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদে পাঠাতে অনুরোধ করছেন৷
Screenshot: Facebook
এই নাম্বারটির বিষয়ে ট্রু কলার অ্যাপের অভিযোগগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের জুন, আগস্ট এবং নভেম্বরে অনিয়মিতভাবে নাম্বারটির বিষয়ে অভিযোগ আসলেও ২০২৩ সালের মে থেকে চলতি এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি মাসেই অর্থ চেয়ে মেসেজ পাওয়ার অভিযোগ এসেছে৷
উপরোক্ত তিন নাম্বার বাদে চলতি বছর ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ফিতরা বা জাকাতের অর্থ সহায়তা চেয়ে আরো যে ০৮টি নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে এগুলো হলো +8801836714650, +8801617740109, +8801832453496, +8801831703438, +8801877693312, +8801833861130, +8801870943701 এবং +8801957278937। এসব নাম্বারের প্রতিটির বিরুদ্ধেই ট্রু কলার অ্যাপে স্প্যাম রিপোর্ট এবং অভিযোগ দেখতে পেয়েছি আমরা। এই ১১টি নাম্বার থেকে অন্তত দেড় শতাধিক অভিযোগ এসেছে ফেসবুকেই৷ এর বাইরে ট্রু কলার অ্যাপে স্প্যাম রিপোর্ট পড়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক, অভিযোগ এসেছে তার প্রায় অর্ধেক।
Table: Rumor Scanner
গেল বছর (২০২৩) ঈদুল ফিতর পালিত হয় ২২ এপ্রিল। সেদিন এবং তার আগের দিন একাধিক ব্যক্তির (১, ২, ৩) ফোনে +8809617609850 এই নাম্বার থেকে মেসেজ পাঠিয়ে একই পদ্ধতি অবলম্বন করে +8801911756867 এই নাম্বারে অর্থ সহায়তা পাঠাতে বলা হয়। একই নাম্বার (+8809617609850) থেকে একই মেসেজ পাঠিয়ে ভিন্ন আরেকটি নাম্বারেও (+8801912099081) অর্থ সহায়তা পাঠানোর অনুরোধ পাওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
২০২৩ সালে এর বাইরে অন্য কোনো নাম্বার থেকে বহুল আলোচিত এই মেসেজ পাওয়ার কোনো অভিযোগ ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে পায়নি রিউমর স্ক্যানার। তবে এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে অন্তত ১১টি ভিন্ন নাম্বারের মাধ্যমে এই প্রতারণা চেষ্টার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। এই ঘটনাগুলো প্রায় সবগুলোই ঘটেছে সে বছরের রমজান এবং ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে। এসব নাম্বারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে +8801616727641 নাম্বারটি নিয়ে। বাকি ১০টি নাম্বার হচ্ছে, +8801615751185, +8801616727635, +8801616730400, +8801616727629, +8801615751094, +8801614255318, +8801616604959, +8801616727637, +8801615751155 এবং +8801616727636। সে সময় অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি বাংলাদেশ’ এ বিষয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। গণমাধ্যমটির পক্ষ থেকে সে সময় চট্টগ্রামের সিআইডির এক কর্মকর্তার বক্তব্যও নেওয়া হয়েছিল। বক্তব্যে তিনি জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতারকরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে তারা কাজ করছেন।
রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতারণার এই নতুন ফাঁদ পাতা শুরু হয় আরও অন্তত এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালে। সে বছরও ঈদুল ফিতরের সময়ই জাকাত বা ফিতরার অর্থ চেয়ে মেসেজ এসেছে এমন অন্তত পাঁচটি নাম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে ফেসবুকে। নাম্বারগুলো হচ্ছে +8801762029987, +8801864405536,+8801755350231, +8801864405874 এবং +8801864405865। এর মধ্যে ১২ মে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ জানিয়ে পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। তারা বলছেন, সেদিন এবং এর আগের দিন তারা এমন মেসেজ পেয়েছেন। দাতব্য সংস্থা ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল ফারুক ১২ মে একটি পোস্টে জানান, তাকে সেদিন রাত ১২ টায় এমন মেসেজ দেওয়া হয়। তার কাছে সন্দেহ হওয়ায় তিনি ট্রু কলার অ্যাপের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে এরা প্রতারক চক্র।
একই ব্যক্তিই কি এসবের পেছনে?
চলতি বছর (২০২৪) যে ১১টি নাম্বারের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ৭টি রবি, ২টি বাংলালিংক এবং একটি এয়ারটেল সিমের নাম্বার। বাকি একটি দেশীয় কোনো অপারেটরের নয়। এই নাম্বারগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এদের একটির সাথে অন্যটির সিরিয়াল বা প্যাটার্নে মিল নেই৷ গত বছর (২০২৩) যে দুই নাম্বার একই কাজে ব্যবহার হতে দেখা গেছে সেগুলো বাংলালিংক নাম্বার। এই দুই নাম্বারও একটি অপরটির সাথে সিরিয়াল বা প্যাটার্নে মিল নেই। তবে ২০২২ সালের নাম্বারগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের কাছে মনে হয়েছে, সে সময় একই ব্যক্তি বা চক্র এই প্রতারণার সাথে জড়িত ছিল। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, সে বছর যে ১১টি নাম্বারের খোঁজ আমরা পেয়েছি তার সবগুলোই ছিল এয়ারটেলের। এর মধ্যে একটি সিরিজে তিনটি নাম্বারের প্রথম আটটি ডিজিটে এবং আরেকটি সিরিজে থাকা পাঁচটি নাম্বারের প্রথম নয়টি ডিজিটে মিল পাওয়া গেছে। সিরিজ এবং ডিজিটের মধ্যে মিল থাকা একই ব্যক্তি বা চক্রের কাজ বলেই সন্দেহ বাড়িয়েছে।
Graphic: Rumor Scanner
২০২১ সালে আমরা যে পাঁচটি নাম্বারের মাধ্যমে প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছি তার মধ্যেও তিনটি নাম্বার (+8801864405536, +8801864405865, +8801864405874) একই সিরিজের এবং এদের প্রথম আট ডিজিট হুবহু একই।
ফাঁদে পা দিয়েছেন কেউ কেউ
রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় একটি কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন সাব্বির আহমেদ শাকিল নামে এক ব্যক্তি। গত বছর (২০২৩) ঈদুল ফিতরের সময় তিনি +8809617609850 এই নাম্বার থেকে মেসেজ পান। তাকে একই কায়দায় সাহায্যের অনুরোধ জানানো হয়। বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্ট হিসেবে দেওয়া হয় +8801911756867 এই নাম্বার। জনাব শাকিল ঈদের আগের দিন (২১ এপ্রিল) রাতে নগদের মাধ্যমে উক্ত নাম্বারে দেড় হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন (ট্রানজেকশন আইডি: 71U6T68Y)। রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট শাকিলের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে। তিনি বলছিলেন, তার কাছে মনে হয়েছে তার পরিচিত কেউই হয়ত বিপদে পড়েছে। তিনি তাই টাকা পাঠিয়ে দেন৷ পরবর্তীতে উক্ত নাম্বার থেকে আর কোনো মেসেজ আসেনি। তিনিও আর যোগাযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন আমাদের।
একই দিন (২১ এপ্রিল, ২০২৩) একই নাম্বার থেকে (+8809617609850) মেসেজ পান আজরাফ ফাহিম নামে এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ফাহিম রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটকে বলছিলেন, ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় এই মেসেজ পাওয়ার পর পরদিন সকালেই তিনি উক্ত মেসেজে দেওয়া নাম্বারে (+8801911756867) ৫০০ টাকা পাঠিয়ে দেন (ট্রানজেকশন আইডি: ADM5Q7A4GR)।
একই নাম্বার (মেসেজকৃত এবং অর্থ পাঠাতে দেওয়া বিকাশ/নগদ নাম্বার) থেকে এর আগের বছরও (২০২২) মেসেজ পাওয়ার প্রেক্ষিতে টাকা পাঠিয়েছেন এমন আরো একজনকে খুঁজে বের করেছে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। তানভীর রেজভী রোহান নামে এই ব্যক্তি সে সময় উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। রোহান আমাদের টাকা পাঠানোর অভিজ্ঞতা বলছিলেন এভাবে, “তখন আমার অনেক জুনিয়র আমার কাছে বিভিন্ন সহায়তা চাইত। আমিও এইরকম এই মনে করে টাকাটা পাঠিয়ে দেই। এবং পরে আমি টাকা গিয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্যে তাকে ম্যাসেজ করেছিলাম টাকা পেয়েছে কিনা। সে আর কোন উত্তর দেই নি। তখন ব্যাপারটা বুঝতে পারি নি। উল্টো মনে হলো লোকটি কেমন অকৃতজ্ঞ।”
প্রতারণার শিকার হয়েছেন, এই বিষয়টি রোহান বুঝতে পেরেছেন বেশ কিছুদিন পর। রোহান বলছেন, “গত কিছু দিন আগে একজনের ফেইসবুক পোস্টে বুঝতে পারি আমার সাথে স্ক্যাম হয়েছে। সেইটা আরো দুই বছর আগেই। গত সোমবার (০৮ এপ্রিল) দেখি একেই ধরনের ম্যাসেজ একটি রবি নম্বর থেকে আবার এসেছে।” প্রথমবার ৫০০ টাকা দেওয়ার পর দ্বিতীয়বার আর ফাঁদে পা দেননি তিনি।
মেসেজে সংশ্লিষ্টদের নাম উল্লেখের নেপথ্যে
রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান চলাকালে অসংখ্য ভুক্তভোগীর একটি প্রশ্ন পেয়েছে, যাদের মেসেজ পাঠানো হয় তাদের নাম জানছে কীভাবে প্রতারকরা। এক্ষেত্রে প্রতারকদের কাছে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ট্রু কলার অ্যাপ। সুইডেন ভিত্তিক এই উদ্যোগের শুরু ২০০৯ সালে। অ্যাপটির কারিগররা এমন একটি পরিষেবা তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা সহজেই অজানা নম্বর থেকে আসা কলগুলোকে শনাক্ত করবে। এর পেছনের মানুষরা নিজেদের আজ সফল ভাবতেই পারেন। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় সাড়ে ৩৭ কোটি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে গেছে অ্যাপটি। তাদের কাছে কলার আইডি এবং স্প্যাম ব্লক করার জন্য এটি প্রথম পছন্দের অ্যাপ। তবে এর ক্ষতিকারক দিকটিও ভাবাচ্ছে মানুষকে। মেসেজ সংক্রান্ত আমাদের এই গবেষণাকেই উদাহরণ হিসেবে দেখুন না! ২০২১ সাল থেকে পরের তিন বছরে অন্তত ২৯ টি ভিন্ন ভিন্ন ফোন নাম্বারের মাধ্যমে যারাই আলোচিত মেসেজটি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তাদের সকলকেই নাম ধরে সম্বোধন করা হয়েছে। আমাদের বিশ্লেষণ বলছে, সকলে এদের ফাঁদে পা না দেওয়ার বড় কারণ ছিল ট্রু কলার অ্যাপ। যাদের ফোনে এই অ্যাপ ইনস্টল করা আছে তারা প্রযুক্তি সচেতন হিসেবে অপরিচিত নাম্বার দেখে নাম্বারটি ট্রু কলারের মাধ্যমে যাচাই করে দেখেছেন যে এরা আসলে প্রতারক। তাদের কাছের কোনো আত্মীয় নয়। তাই টাকা পাঠানো থেকে বিরত থেকেছেন।
প্রতারকরাও ঠিক এভাবেই সংশ্লিষ্টদের নাম বের করেছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এক্ষেত্রে দৈবচয়নভিত্তিতে কোনো নাম্বার নির্বাচন করে প্রতারকরা সেটি ট্রু কলারে ইনপুট দিয়ে নাম বের করে থাকতে পারেন। এতে করে টার্গেটের কাছে বিশ্বস্ততা অর্জনের চেষ্টা করেছেন তারা। সফলও যে হয়েছেন তা অনেকের এই ফাঁদে পা দেওয়া থেকেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ট্রু কলারে নাম্বারের বিপরীতে উক্ত নাম্বারের মালিকের নাম ভেসে ওঠে কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে অ্যাপটির ওয়েবসাইটেই। তার আগে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি এই সুবিধা কতটা কার্যকরী। আমরাও দৈবচয়নভিত্তিতে বিভিন্ন সিম অপারেটরের কিছু নাম্বার বেছে নিয়ে তা ট্রু কলারে দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি এই নাম্বারগুলোর মালিক কারা। এর প্রেক্ষিতে সাতটি নাম্বার যাচাই করে পাঁচটিতে নাম্বারের বিপরীতে মালিকের নাম পাওয়া গেছে। দুইটিতে কারো নাম আসেনি। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, এর বাইরে আমাদের ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের একজন সদস্য তার পরিচিত একজনের নাম্বার ট্রু কলারে দিয়ে উক্ত ব্যক্তির নামের পরিবর্তে একটি লাইব্রেরির নাম ভেসে ওঠতে দেখেছেন৷ আমরা উক্ত ব্যক্তির সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি বলছিলেন, উক্ত লাইব্রেরিটি তিনি যে বিল্ডিংয়ে থাকেন সে বিল্ডিংয়েই অবস্থিত। তবে ট্রু কলারে কেন এই লাইব্রেরির নাম আসছে তা তিনি জানাতে পারেননি।
Screenshot collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, নাম্বার দিয়ে নাম খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে ট্রু কলার অ্যাপ শতভাগ কার্যকরী কোনো উপায় নয়৷ এক্ষেত্রে নাম্বারের বিপরীতে ভিন্ন ব্যক্তির নাম জানিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগও থেকে যাচ্ছে।
ফেরা যাক ট্রু কলারে নাম্বারের বিপরীতে উক্ত নাম্বারের মালিকের নাম ভেসে ওঠার পদ্ধতি প্রসঙ্গে। ট্রু কলারে রিভার্স ফোন লুকআপ নামে একটি ফিচার রয়েছে। এই ফিচার ব্যবহার করেই অপরিচিত নাম্বারের মালিক শনাক্তে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় নেয় অ্যাপটি। এই নাম আপনাকে দেখাতে পরামর্শ নেওয়া হয় আপনার মতোই অগণিত ট্রু কলার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকেই৷ অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে ট্রুকলার এর ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পাওয়া নামের পরামর্শ যাচাই করার মাধ্যমে ট্রু কলার কোনও কলারের নাম নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ: যদি একটি বিমা সংস্থার বিরক্তকারী নম্বর এই উদ্যোগের নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যবহারকারীর দ্বারা ‘বিমা স্প্যাম’ হিসাবে রিপোর্ট করা হয়, তাহলে রিভার্স ফোন লুকআপে সেই নম্বরটিকে ‘বিমা স্প্যাম’ হিসেবেই দেখাবে। অর্থাৎ, অ্যাপটি পুরোপুরি ইউজার নির্ভর পদ্ধতিতে চলছে। ইউজাররাই কোনো নাম্বারের বিপরীতে নাম দিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি যে নাম উক্ত নাম্বারের জন্য ইউজাররা দেন সেটিই রিভার্স ফোন লুকআপে দেখাবে। তবে প্রতারকরা যে ট্রু কলারের মাধ্যমেই নাম বের করছেন তা শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলার সুযোগ নেই।
বিকাশ নগদে সংশ্লিষ্ট নাম্বারগুলোর অদ্ভুতুড়ে নাম
ইউজাররাই ট্রু কলারে সংশ্লিষ্ট নাম্বারগুলোর অধিকাংশগুলোরই নাম দিয়েছেন মেয়ে ফ্রেন্ড (Meye fr.) নামে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে ১১টির মধ্যে নয়টিই এই নামে ট্রু কলারে দেখা যাচ্ছে। এই বছর বাকি যে দুই নাম্বার এই প্রতারণার সাথে জড়িয়েছে সেগুলোর একটির নাম সীমা (+8801905479586) এবং অন্যটি ‘fake taka chay’ (9617609850) নামে ট্রু কলারে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া, ২০২৩ ও ২০২২ সালে তিনটি করে নাম্বার মেয়ে ফ্রেন্ড নামেই পাওয়া যাচ্ছে অ্যাপটিতে। তবে ২০২১ সালে তিনটি নাম্বার (+8801755350231, +8801864405874,+8801864405865) ফারিয়া নামে পাওয়া যাচ্ছে৷
অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করা গেছে বিকাশ ও নগদে নাম্বারগুলোর পরিচয়ের ক্ষেত্রে। যেমন, এই বছর দুইটি নাম্বারের বিপরীতে বিকাশে ‘গুপিন হাজডা’ (Gupin Hajda) নাম দেখা যাচ্ছে। এছাড়া, বাকি নাম্বারগুলোর ক্ষেত্রেও বিকাশের অ্যাপে বাংলাদেশে সচরাচর ব্যবহৃত হয়না এমন নাম যেমন লক্ষ্মণ হাজডা, দিলীপ হেমব্রম, সুমলা হেমরম, লক্ষ্মী হেমরম, শিল্পী টুডু, সোহেল মারডি, সৌরভী রানী দেওয়া হয়েছে বিকাশে৷ এক্ষেত্রেও ২/৩ টি নাম্বারের ক্ষেত্রে নামের শেষের অংশগুলোয় মিল (হেরব্রম, হাজডা) পাওয়া যাচ্ছে৷ ২০২৩ এবং ২০২২ সালের নাম্বারগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্য বিকাশে নামের প্যাটার্নে মিল পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ২০২২ সালে সিরিয়ালের দুইটি নাম্বারের (+8801616727636, +8801616727637) ক্ষেত্রে বিকাশে একই নাম (মোঃ শফিকুল) পাওয়া যাচ্ছে। ২০২১ সালের নাম্বারগুলোর ক্ষেত্রে বিকাশে কারো নাম জানা সম্ভব হয়নি।
বিকাশ অ্যাপে কিছু নাম্বারের বিপরীতে নামের বা নামের কিছু অংশের মিল পাওয়া গেলেও আরেক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদের ক্ষেত্রে দুইটি বাদে বাকি নাম্বারগুলোর নামের সাথেই অন্য নাম্বারের নামের মিল পাওয়া যায়নি। এই দুই নাম্বারের ক্ষেত্রে চলতি বছর +8801831703438 নাম্বারের বিপরীতে নগদে মনিকা সরেন নাম এবং +8801870943701 নাম্বারের বিপরীতে ডমনিকা সরেন নাম উল্লেখ রয়েছে।
Table: Rumor Scanner
কিছু ক্ষেত্রে এমনও ঘটেছে, বিকাশ অ্যাপে একটি নাম্বার হিন্দু নামের ব্যক্তির নামে উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু নগদ অ্যাপে একই নাম্বার মুসলিম নামের ব্যক্তির নামে উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে। এমন নজির ২০২৪ সালে চারটি, ২০২৩ সালে দুইটি রয়েছে। উল্টো নজিরও পাওয়া যাচ্ছে একটি (২০২২ সালে)। কিন্তু একই নাম্বার দুই অ্যাপে দুইজন ভিন্ন ধর্মের অনুসারীর নামে হওয়া বেশ অদ্ভুতই বটে!
সচেতনতাই পরামর্শ
আলোচিত এই প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট কথা বলেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ রেজাউল মাসুদের সাথে।
রেজাউল মাসুদ বলছেন, “অনলাইনের ট্রানজেকশন বিশেষ করে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লেনদেন বেড়ে যাওয়াতে এই ধরনের প্রতারণা অনেক বেড়েছে। প্রতারক চক্র ঈদ মৌসুম অথবা কোন ধরনের বিশেষ উৎসবকে টার্গেট করে। কেউ বলে আমাদের এলাকায় এক বিধবা মা তার তিনটা সন্তান বিয়ে দিতে পারছেন না আপনার ঈদের জাকাত দিতে পারেন উনাকে। কেউ বলে আমাদের এলাকায় এক দরিদ্র পরিবার আছে সে পরিবারে বড় ছেলের জন্য একটা রিকশা কিনে দিতে হবে জাকাত দিতে পারেন। আবার নিজের জন্য আপনি যেভাবে মেসেজ দিয়েছেন এভাবে চায়। মোটকথা হলো একটা বিশ্বাস একটা আস্থা একটা ধর্মীয় বিষয়কে পুঁজি করে এ সমস্ত লোক জাকাতের নাম বলে বিভিন্ন জনের কাছে টাকা হাতিয়ে নেয়।”
তারা এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে জনাব মাসুদ জানাচ্ছেন, “টাকার পরিমান খুব বেশি থাকে না ৫০০-১ হাজার দুই হাজার। ভিক্টিমরা এই অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে খুব যে বেশি প্রতারিত হইছে সেটা বেশি নিজে মনে করে না। আবার প্রতারিত হওয়ার কথা ভাবলেও কম টাকার কারণে সে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে না।” পুলিশের এই কর্তার মতে, এই সুযোগে জাকাত ফিতরা বিভিন্ন আর্থিক সহায়তার নাম বলে এ প্রতারক চক্র অনেক জনের কাছে প্রতারণা করে যাচ্ছে। “আমরা এমন তথ্য পাই অভিযোগ পায় যাচাই বাছাই করে দেখি কিন্তু আমাদের কাছে কেউ যদি সাইবারে অভিযোগ করে কিংবা এই ধরনের কোন মামলা করে তখন আমাদের জন্য কাজটা করতে আরো সুবিধা হয়।”
জনাব মাসুদের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম এ বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কী পরামর্শ থাকছে। তিনি বলেন, “আপনি যাকে টাকা দিবেন তাকে যেন আপনি ব্যক্তিগতভাবে চিনেন জানেন তার মোবাইল নাম্বার। টাকাটা কোন খাতে যাচ্ছে এটা ডিটেলস জেনে তারপর টাকাটা দেবেন।”