ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে তারেক রহমানের নামে প্রচারিত বক্তব্যটি এডিটেড

সম্প্রতি, হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

যা দাবি করা হচ্ছে-

ভিডিওতে তারেক রহমানকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “সুমন সাহেব সংসদে গিয়ে বলছেন চাটুকারিতা করতে গিয়ে চাটুকারিতার এক পর্যায়ে যে এই সংসদে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে আমার এই সিটে কোনো অবস্থায় যুদ্ধাপরাধী এবং পূর্বে জামায়াতে ইসলামকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন ঐ সকল ব্যক্তিরা সাঈদী, নিজামী, কাদের মোল্লা, মুজাহিদ,তারা কেউ বসেছিল কিনা উনি নাকি নিশ্চিত হয়েছে উনার চেয়ারে উনারা বসেন নাই তাই তিনি সংসদে বসেছেন…”

ব্যারিস্টার সুমনকে

টিকটকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৩ লক্ষ ২২ হাজার আটশত ৪৯৩ বার। ভিডিওটিতে ১৩ হাজার ৩ শত ৬৯ টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে সংসদে গিয়ে চাটুকারিতা বিষয়ক কোনো মন্তব্য করেননি বরং তারেক রহমানের ভিন্ন ঘটনার বক্তব্যের ভিডিওতে ভিন্ন ঘটনার অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই:

ভিডিওটির সত্যতা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিএনপির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর “একজন গ্রেফতার হলে সঙ্গে সঙ্গে আর একজন নেতৃত্ব নিন, নেতৃত্ব দিন”-তারেক রহমান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও গুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই ভিডিওতে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান এবং একজন গ্রেফতার হলে সঙ্গে সঙ্গে আর একজন নেতৃত্ব নেতৃত্ব দেওয়ার কথা জানান। তবে তিনি এই ভিডিওতে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

অডিও যাচাই: 

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন এক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি “সংসদে সাঈদী, নিজামীর চেয়ারে বসবেনা ব্যারিষ্টার সুমন! সুমন কি বসার যোগ্য? ড. ফয়জুল হক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Youtube

উক্ত ভিডিওর ৫৫ সেকেন্ডের পর থেকে “সুমন সাহেব সংসদে গিয়ে বলছেন চাটুকারিতা করতে গিয়ে চাটুকারিতার এক পর্যায়ে যে এই সংসদে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে আমার এই সিটে কোনো অবস্থায় যুদ্ধাপরাধী এবং পূর্বে জামায়াতে ইসলামকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন ঐ সকল ব্যক্তিরা সাঈদী, নিজামী, কাদের মোল্লা, মুজাহিদ তারা কেউ বসেছিল কিনা উনি নাকি নিশ্চিত হয়েছে উনার চেয়ারে উনারা বসেন নাই তাই তিনি সংসদে বসেছেন।” শীর্ষক অডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত অডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন কিনা তা অধিকতর নিশ্চিতে অনুসন্ধানে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর বিএনপির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি ভিডিও বক্তব্য প্রকাশ করে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান এবং একজন গ্রেফতার হলে সঙ্গে সঙ্গে আর একজন নেতৃত্ব নেতৃত্ব দেওয়ার কথা জানান। এছাড়া, অনলাইন এক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক তার ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি ভিডিও প্রকাশ করে “সুমন সাহেব সংসদে গিয়ে বলছেন চাটুকারিতা করতে গিয়ে চাটুকারিতার এক পর্যায়ে যে এই সংসদে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে আমার এই সিটে কোনো অবস্থায় যুদ্ধাপরাধী এবং পূর্বে জামায়াত ইসলামকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন ঐ সকল ব্যক্তিরা সাঈদী, নিজামী, কাদের মোল্লা, মুজাহিদ তারা কেউ বসেছিল কিনা উনি নাকি নিশ্চিত হয়েছে উনার চেয়ারে উনারা বসেন নাই তাই তিনি সংসদে বসেছেন।” শীর্ষক মন্তব্য করেন। সম্প্রতি, তারেক রহমানের সেই ভিডিওর বার্তার অডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বাদ দিয়ে ড. ফয়জুল হকের উক্ত ভিডিওর অডিও যুক্ত করে তারেক রহমান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে আলোচিত মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই  ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img