রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি বঙ্গবাজারে আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে উদ্ধারকৃত কাপড়চুরির ঘটনার নয় বরং এটি ফিলিপাইনে কম দামে ব্যবহৃত বা পুরোনো কাপড় বিক্রি করা একটি দোকানে ক্রেতাদের হুড়োহুড়ির ভিডিও।
ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যম ‘News5Everywhere’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘Balyahan, agawan ng mga customer sa isang ukay-ukay sa Lucena, viral‘ (লুসিনায় একটি উকাই-উকাইতে ক্রেতাদের ধস্তাধস্তি) শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে বঙ্গবাজারে কাপড় চুরির দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত হুবহু মিল রয়েছে।
Screenshot: News5Everywhere Youtube
উল্লেখ্য, লুসিনা ফিলিপিনের একটি শহরে নাম। ফিলিপাইনে ব্যবহৃত বা পুরোনো কাপড় বিক্রির দোকানগুলোকে উকাই উকাই বলা হয়ে থাকে।
এছাড়া, ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল VICE Japan নামের একটি জাপানি টুইটার(আর্কাইভ) হতে টুইট করা হুবহু একই ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
টুইটারে পোস্টকৃত ভিডিওটির জাপানিজ ভাষার ক্যাপশনকে ইংরেজি অনুবাদ করে জানা যায়, ভিডিওটি গত ফেব্রুয়ারিতে ফিলিপাইনের লুসিনা সিটির একটি উকাই উকাই(ব্যবহৃত কাপড় বিক্রির দোকান) থেকে ধারণ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম KameraOne এর ওয়েবসাইটে গত ১ মার্চ প্রকাশিত ৩ মিনিট ৩২ সেকেন্ড দীর্ঘ একটি ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও ভিডিওটিকে ফিলিপাইনের লুসিনা সিটির একটি ব্যবহৃত কাপড়ের দোকানে ক্রেতা সমাগমের ফুটেজ বলে উল্লেখ করা হয়।
মূলত, গত ০৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লেগে কয়েক হাজার দোকানের কোটি কোটি টাকার কাপড় আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। এ ঘটনায় আগুনের ভিতর থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায়ীরা কিছু কাপড় উদ্ধার করে মার্কেটের সামনের রাস্তায় রাখলেও পরবর্তীতে সেই কাপড়গুলো রাস্তা থেকে চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলেন ব্যবসায়ীরা। তবে, উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিপাইনের লুসিনা সিটির একটি ব্যবহৃত ও পুরোনো কাপড় বিক্রির দোকানে ক্রেতাদের অত্যধিক ভিড়ের কারনে সৃষ্ট হুড়োহুড়ির ভিডিওকে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকৃত কাপড় চুরির ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক বিষয় সনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ফিলিপাইনের একটি কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের হুড়োহুড়ির ভিডিওকে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকৃত কাপড় চুরির ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আদালতের আইনি নোটিশ দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আইনি নোটিশটি দিয়েছেন মো. মাহমুদুল হাসান নামে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।
আইনি নোটিশ কি? কে দেয়?
আইনি নোটিশ নিয়ে বিশ্লেষণে দেখা যায়, আইনি নোটিশ বা উকিল নোটিশ হচ্ছে যেকোনো মামলার কার্যক্রম শুরুর আগে প্রতিপক্ষকে দেওয়া নোটিশ। কারো বিরুদ্ধে মামলা করার আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে এ নোটিশ দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নোটিশের জবাব না এলে তখন মামলা দায়ের করতে হয়।
আইনি নোটিশ নিয়ে আরও জানা যায়, হাইকোর্টে মামলা পরিচালনার জন্য সাধারণত হাইকোর্টের নিবন্ধনযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ প্রেরণের দায়িত্ব প্রদান করতে হয়। বিপরীতে জেলা জজ আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য জজ আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এমন আইনজীবীকে দিয়ে উকিল নোটিশ দিতে হয়। তবে এই উকিল নোটিশের সঙ্গে আদালতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
উকিল বা আইনি নোটিশ নিয়ে বিশ্লেষণে বুঝা যায়, এই নোটিশ আইনজীবী কর্তৃক পাঠাতে হয় এবং এর সঙ্গে আদালতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে গত ৯ এপ্রিল ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Bangla Tribune
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত ৯ এপ্রিল রেজিস্ট্রি ডাকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিনকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়৷ এই নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।
এসব প্রতিবেদন থেকেও বাংলাদেশের ট্রিবিউনের অনুরূপ তথ্য জানা যায়। এছাড়া এ প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত উক্ত আইনি নোটিশের বিষয়ে পরবর্তী কোনো হালনাগাদ তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
উল্লেখ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ উদযাপনের জন্য গত ১১ এপ্রিল একটি নির্দেশনা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
Image: Department of Secondary and Higher Education Notice
নির্দেশনায় বলা হয়,
নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপন অনুষ্ঠান আবশ্যিকভাবে জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে।
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও যথাযথ আড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে। ইউনেস্কো কর্তৃক মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ‘Intangible Cultural Heritage’ এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করতে হবে। সকালে আবশ্যিকভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যালি করতে হবে।
নতুন কারিকুলামের সাথে সমন্বয় করে ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক ভিত্তিক ‘বৈচিত্র্যে ভরা বৈশাখ’ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে এবং বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা এ কার্যক্রম সুবিধাজনক সময়ে মূল্যায়ন করবেন।
তবে পরবর্তীতে আজ ১৩ এপ্রিল আগের নির্দেশনাটি বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ উদযাপনের নতুন আরেকটি নির্দেশনা জারি করে।
Image: Department of Secondary and Higher Education New Notice
এ নির্দেশনায় বলা হয়,
নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপন অনুষ্ঠান জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। অনু্ষ্ঠানে পবিত্র রমজানের পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করে হবে।
সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে ও ধর্মীয় অনূভুতি বজায় রেখে যথাযথ আড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে।
পাশাপাশি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকেও একই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
Image: Department of Secondary and Higher Education New Notice
পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পহেলা বৈশাখ পালন সংক্রান্ত একটি নির্দেশনায় জাতীয় সংগীত, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে নববর্ষ পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
Image: Department of Madrasah Education Notice
মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আদালতের আইনি নোটিশ দাবিতে তথ্য প্রচারের ফলে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি
পহেলা বৈশাখ বন্ধে আইনজীবী প্রদত্ত নোটিশকে
আদালতের আইনি নোটিশ দেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ফলে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
যেমন, সৈয়দ ফাহিম নামে একজন লিখেছেন, ‘এর কারণ হিসেবে কি বলছে আদালত?’
সাদিকুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘খুবই ভাল। কিন্তু হঠাৎ এই রকম সিদ্ধান্তের কারণ কি?’
রাকিব হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘আদালতও মৌলবাদীদের পক্ষে চলে গেলো।’
তীর্থ নামে একজন লিখেছেন, ‘সম্ভবত রমজানের কারণে।’
ফারহানা ইতি নামে একজন লিখেছেন, ‘ঠিক আছে। রোজা, রমজানের দিনে এসব না করাই ভালো।’
Screenshot Collage: Rumor Scanner
মূলত, গত ৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিনকে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে একটি আইনি নোটিশ পাঠান৷ এই আইনজীবীর এই নোটিশটিকেই পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদালত কর্তৃক আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়।
সুতরাং, পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে এক আইনজীবীর পাঠানো আইনি নোটিশকে আদালতের পাঠানো আইনি নোটিশ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
দীর্ঘদিন ধরে ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা জিয়া’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।
২০১৭ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে। ২০১৮ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে। ২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে। ২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে। ২০২৩ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে।
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রাজনীতিবিদদের বক্তব্য দেখুন:
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারের তালিকায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার তৃতীয় হওয়ার দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে কিছু ভিত্তিহীন, ভুয়া এবং অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটের সূত্রে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডার এর প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম এই তথ্যটি প্রচার করা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিবছরই এই তথ্যটি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
অনুসন্ধান যেভাবে
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনলাইন নিউজ পোর্টাল Bangla Insider এ ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর ‘দুর্নীতিতে জিয়া পরিবার বিশ্বে ৩য়‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Bangla insider
প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক পরিবারের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে জিয়া পরিবার। তালিকার শীর্ষস্থানে আছে সদ্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত হওয়া পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি নওয়াজ শরীফের পরিবার।’ ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্বে সেরা দুর্নীতিবাজ ১০ রাজনৈতিক পরিবারের এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এসব তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পোর্টালটি তথ্যসূত্র হিসেবে জানায়,
ফক্স নিউজ পয়েন্ট এবং র্যাংকার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এসব তথ্য জানিয়েছে।
ফক্স নিউজ ফোর এবং র্যাংকার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, বিশ্বজুড়ে অফশোর র্যাংকিং এর মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেন বিষয়ে গবেষণা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
অর্থাৎ প্রতিবেদনটিতে এসব তথ্যের উৎস হিসেবে অনলাইন পোর্টালটি তিনটি আলাদা আলাদা সূত্র ব্যবহার করেছে। যথা:
ফক্স নিউজ পয়েন্ট
র্যাংকার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড
ফক্স নিউজ ফোর
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তী অনুসন্ধানে উক্ত সূত্রসমূহ যাচাই করে দেখে।
‘ফক্স নিউজ পয়েন্ট’ যাচাই
বাংলা ইনসাইডারের উপরিউক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত সূত্র ‘ফক্স নিউজ পয়েন্ট’ নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই নামে কোনো ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠানেরই অস্তিত্ব নেই। তবে উক্ত নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে একটি একাউন্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: fox News Point
একাউন্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি ২০১৭ সালের জুলাই মাসে খোলা হয়েছিল। একাউন্টটি ২১ জনকে অনুসরণ করার বিপরীতে ১৮ জন উক্ত একাউন্টটিতে অনুসরণ করে। পাশাপাশি একাউন্টটিতে সবশেষ ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ টুইট করা হয়েছিল।
একাউন্টটি সূত্রে foxnewspoint.com নামে একটি ওয়েবসাইট ঠিকানা পাওয়া গেলেও সেটিতে প্রবেশ করা যায়নি। অর্থাৎ বর্তমানে ওয়েবসাইটটি আর কার্যকর নয়। তবে পরবর্তীতে আরও অধিকতর অনুসন্ধানে সাইটটির এবাউট সেকশনের একটি আর্কাইভ ভার্সন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Fox News Point About Us
এই সেকশনটিতে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, এই ওয়েবসাইটটি বিশ্বের নানা খবর, সমস্যা এবং অন্যান্য সমস্ত ধরণের তথ্য সরবরাহ করে। তবে এই সেকশনটি থেকে ওয়েবসাইটটির পরিচালনায় কারা জড়িত এমন কোনো সুস্পষ্ট তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে ২০১৭ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দশ দুর্নীতিগ্রস্থ পরিবারের যে তালিকাটি পাওয়া যায়, সেটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
এই তালিকার শীর্ষে আছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পরিবার, দ্বিতীয় স্থানে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় স্থানে উত্তর কোরিয়ার কিম জং-উনের পরিবার রয়েছে। তবে এই তালিকায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে এই তালিকাগুলো কোন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে এমন কোনো তথ্য সেগুলোতে উল্লেখ করা হয়নি।
অর্থাৎ বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার তৃতীয় হওয়ার দাবিতে Fox News Point নামের যে তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়েছে সেটি একটি ভুয়া ওয়েবসাইট এবং ওয়েবসাইটটিতে প্রকাশিত তালিকাগুলোতে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের নাম পাওয়া যায়নি।
‘র্যাংকার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’ যাচাই
বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার তৃতীয় হওয়ার দাবিতে Fox News Point এর পাশাপাশি আরেকটি যে সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি হলো ‘র্যাংকার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’।
উক্ত সাইটটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে ranker.com (আর্কাইভ) নামে একটি ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবার সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Ranker
তবে ওয়েবসাইটটিতে ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘Top 10 Corrupt World Leaders‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া গেলেও সেখানে খালেদা জিয়ার নাম পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Ranker
এছাড়ার ওয়েবসাইটটির এবাউট সেকশনে (আর্কাইভ) প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, এই ওয়েবসাইটটি ফিল্ম, খেলাধুলা থেকে খাবার পর্যন্ত সবকিছুর উপর র্যাঙ্কিংয়ের সুনির্দিষ্ট উৎস হতে চায়। এটি ফ্যান-পরিচালিত র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী শীর্ষে অবস্থান করছে৷ ওয়েবসাইটটি বিশ্বাস করে, একজন লেখক বা সমালোচকের মতামতের চেয়ে লক্ষাধিক মানুষের মতামত বেশি প্রাসঙ্গিক। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাঞ্জেলসে অবস্থিত।
Screenshot: Ranker
এ প্রসঙ্গে আরও অনুসন্ধানে ওয়েবসাইটটির FAQ বিভাগ থেকে জানা যায়, ওয়েবসাইটটিতে যে র্যাংকিং বা তালিকা করা হয় তা মূলত ওয়েবসাইটটির ব্যবহারকারীরা নিজেরাই করে থাকেন। এই সাইটটিতে যে কারোর পক্ষে তালিকা তৈরি করা, ভোট দেওয়া ও ভোট সরিয়ে নেওয়া সম্ভব৷
Screenshot: Ranker
অর্থাৎ রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক বিশ্লেষণে এ ওয়েবসাইটটিও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র হিসেবে প্রতীয়মান হয় না। পাশাপাশি এই ওয়েবসাইটেও বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারের তালিকায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার তৃতীয় হওয়া শীর্ষক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
‘ফক্স নিউজ ফোর’ যাচাই
উপরিউক্ত উৎসগুলো ছাড়াও এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ফক্স নিউজ ফোর’ নামে একটি ওয়েবসাইটের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস থেকে পরিচালিত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
Screenshot: Fox 4 News
তবে নিউজ পোর্টালটিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবার’ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Fox 4 News
পূর্বকোণের প্রতিবেদন ও দুঃখ প্রকাশ
রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা‘ শীর্ষক শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে পেপারকাটটি পাওয়া যায়, সেটি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক পূর্বকোণের।
Screenshot: Facebook
পত্রিকাটি বাংলা ইনসাইডারের উপরিউক্ত প্রতিবেদনটির সূত্রে ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা’ শীর্ষক শিরোনামে লিড সংবাদটি প্রকাশ করে।
Image: Daily Purbokone News Screenshot
তবে এরপরের দিনই এই সংবাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পূর্বকোণ পত্রিকাটি জানায়, ‘তাদের ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা’ শীর্ষক লিড সংবাদটি নিয়ে পাঠকমহলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অনলাইন নিউজ পোর্টাল banglainsider.com/bangladesh/8090 থেকে সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে।
Image: Daily Purbokone News Screenshot
কিন্তু ফক্স নিউজ পয়েন্ট ও র্যাংকার ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের যে তালিকার বরাত দিয়ে সংবাদটি ছাপা হয়েছে তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার নাম নেই। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
তবে পত্রিকাটি এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিলেও পত্রিকাটির এর আগের দিনের প্রকাশিত লিড সংবাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে সেটিই প্রায় প্রতিবছর ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
প্রসঙ্গত, দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটির জন্য খালেদা জিয়ার মানহানির অভিযোগে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন মামলা করেন।
Screenshot: bdnews24
এই মামলায় চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার সম্পাদক তসলিম উদ্দিন চৌধুরী ও পরিচালনা সম্পাদক জসীম উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সমনও জারি করেছিল তৎকালীন আদালত।
প্রসঙ্গত, কিছু কিছু অনলাইন পোর্টালে ২০২১ সালে ‘বিবিসির দুর্নীতিবাজ নারীর তালিকায় তিন নম্বরে খালেদা জিয়া’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে।
এই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছিল ২০২১ সালের সারা বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারীকে নিয়ে৷ তবে ১০০ নারীর এই তালিকায় কোনো বাংলাদেশির নাম পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ নারীর তালিকা শীর্ষক বিবিসির কোনো তালিকাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর ‘দুর্নীতিতে জিয়া পরিবার বিশ্বে ৩য়’ শীর্ষক শিরোনামে বাংলা ইনসাইডার নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ প্রকাশ করে। বাংলা ইনসাইডারের এই প্রতিবেদন সূত্রে ওই বছরেরই ১১ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক পূর্বকোণ ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি লিড সংবাদ প্রকাশ করে। তবে বাংলা ইনসাইডার যেসব সূত্র ধরে এই সংবাদটি প্রচার করে, সেসব সূত্রে খালেদা জিয়ার নাম না থাকায় পূর্বকোণ দুঃখ প্রকাশপূর্বক তাদের অনলাইন ভার্সন থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নিলেও পত্রিকাটির উক্ত সংবাদের পেপারকাট দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারের তালিকায় খালেদা জিয়া তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলা ইনসাইডার যেসব সূত্র ধরে বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারের তালিকায় খালেদা জিয়া তৃতীয় হওয়ার প্রতিবেদনটি করেছে, সেসব সূত্রের মধ্যে একটি ভিত্তিহীন ও ভুয়া এবং অপরটি একটি অনির্ভরযোগ্য র্যাংকিং ভিত্তিক ওয়েবসাইট।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের নিকৃষ্টতম প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছিল। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অস্তিত্বহীন কিছু সাইট এবং দি টপটেনস.কম (thetoptens.com) নামের একটি সামাজিক যোগাযোগ সাইটের অনির্ভরযোগ্য জরিপের বরাতে এই তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছিল। এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান পড়ুন এখানে।
সুতরাং, বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারের তালিকায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার তৃতীয় হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের পুলিশের হামলার সংবাদে মসজিদের মেঝেতে পরে থাকা মানুষেরএকটি ছবি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আল-আকসা মসজিদে নামাজরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার ঘটনায় প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ছবিটি ২০২২ সালের ২২ এপ্রিলে আল আকসা মসজিদেই ইসরায়েলি পুলিশ কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার ঘটনায় ধারণকৃত।
ছবিটির ক্যাপশনে লেখা ছিলো, ‘২২ এপ্রিল, অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে পিছনে বেঁধে পবিত্র আল-আকসা মসজিদের মেঝেতে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল। ছবি: রিজওয়ান শফিকা (অনূদিত)।
এছাড়া, একই তারিখে আলজেরিয়ান সাংবাদিক ‘হাফিদ দেরাদজি’ এর ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে “New violations against our people and sanctities from within Jerusalem. The continuing crime against our people requires adherence to our right to defend our dignity, our land and our sanctity by all means.”(স্বয়ংকৃত অনূদিত) শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত টুইটেও একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Twitter
অর্থাৎ, সাম্প্রতিক সময়ে আল-আকসা মসজিদে নামাজরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইজরায়েলি পুলিশের হামলার দাবিতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি প্রায় ১ বছর আগের।
মূলত, গত ৫ এপ্রিল ইসরায়েলি পুলিশ কর্তৃক আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের নামাজরত অবস্থায় দুইবার হামলার ঘটনা ঘটে। প্রথমে ছয়জন এবং পরবর্তীতে ১২ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনারদাবি করে একটি ছবি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাম্প্রতিক ইসরায়েলি পুলিশ আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের নামাজরত অবস্থায় হামলার ঘটনায় প্রচারিত ছবিটি অন্তত এক বছর পুরানো।
উল্লেখ্য, এর আগেও বিভিন্ন সময় এক ঘটনার প্রেক্ষিতে অন্য ঘটনার ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো সনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
সুতরাং, আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার প্রায় ১ বছর পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে আল-আকসা মসজিদে নামাজরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার ঘটনার ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পর্তুগীজ তারকা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কোরআন পড়ছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটি রোনালদো নন প্রকৃতপক্ষে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির নাম Bewar Abdullah। তিনি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের বাসিন্দা। ঐ ব্যক্তির চেহারা ও দৈহিক গড়ন দেখতে অনেকটাই রোনালদোর মতো।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে ২০২১ সালের ৭ মে Bewar Abdullah নামের একটি একাউন্টে ‘Hello’ (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া।
Screenshot: Beware Abdullah’s Tiktok
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো দেখতে এক ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করছেন। এই ভিডিওটির সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কোরআন পড়ছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তী অনুসন্ধানে এই টিকটক অ্যাকাউন্টের একাধিক কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই অ্যাকাউন্টটি থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো দেখতে একই ব্যক্তির আরও অনেকগুলো ভিডিও কন্টেন্ট রয়েছে।
Screenshot: Beware Abdullah’s Tiktok
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের আগস্টেও একই অ্যাকাউন্ট থেকে ইতালিয়ান ফুটবল ক্লাব জুভেন্টাসের জার্সি পরে “মুহাম্মাদুন নাবিয়ুনা” শিরোনামের একটি ইসলামিক সংগীত গাওয়ার অভিনয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো’র দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
সেসময় রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো দেখতে উক্ত ব্যক্তির প্রকৃত নাম Bewar Abdullah। তিনি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের বাসিন্দা। তার মুখাবয়বের কারণে অনেকেই তার বিভিন্ন ছবিতে তাকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো লাগছে বলে মন্তব্য করে থাকেন।
যেমন, ২০২১ সালের ১৬ জুন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে “Hi ✔️” শীর্ষক শিরোনামে CR7 লেখা একটি ছবি পোস্ট করা হয়।
Screenshot: Beware Abdullah’s Facebook
উক্ত পোস্টের কমেন্টবক্স ঘুরে দেখা যায়, অনেকেই তাকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো লাগছে বলে মন্তব্য করেছেন।
Screenshot: Beware Abdullah’s Facebook
এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত অনুসন্ধান পড়ুন এখানে।
মূলত, পর্তুগীজ তারকা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কোরআন পড়ছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটি রোনালদো নন। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটি Bewar Abdullah, যার চেহারা ও চুলের গঠন অনেকটা রোনালদোর মতো। ২০২১ সালে কুরআন তেলাওয়াত সম্পর্কিত তার ধারণকৃত একটি ভিডিওকেই সম্প্রতি টিকটকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কোরআন পড়ছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। রোনালদো কোরআন পড়ছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটি রোনালদো নন। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটি Bewar Abdullah, যার চেহারা ও চুলের গঠন অনেকটা রোনালদোর মতো। ২০২১ সালে কুরআন তেলাওয়াত সম্পর্কিত তার ধারণকৃত একটি ভিডিওকেই সম্প্রতি টিকটকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কোরআন পড়ছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, দেখতে প্রায় একই চেহেরার ভিন্ন ব্যক্তির কোরআন পড়ার ভিডিওকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কোরআন পড়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “অংকিতা বিজয় নামে এক সাম্যবাদি সেকুলার হিন্দু মেয়ে আব্দুলের প্রেমে পড়ে নিজ ধর্ম ও জন্মদাতা মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজন সব ত্যাগ করে জান্নাতী হতে চেয়েছিল। কিন্তু তার প্রেমিক আব্দুলই তাকে জীবিত অবস্থায় নরক দেখিয়ে দিলো।” শীর্ষক শিরোনামে একজন নারীর কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে উক্ত নারীর নাম অংকিতা বিজয় দাবি করে বলা হচ্ছে উক্ত নারী একজন মুসলিম যুবকের সাথে প্রেম করে ধর্ম ও পরিবার ত্যাগ করার পর সেই মুসলিম প্রেমিক দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অংকিতা বিজয় দাবি করে যে নারীর ছবি প্রচার করা হয়েছে তা অংকিতা বিজয় নামের কোনো নারীর নয় বরং ছবিগুলো মালায়লাম অভিনেত্রী অনিকা বিক্রমনের এবং এই অভিনেত্রী মুসলিম প্রেমিকের জন্য ধর্ম ও পরিবার ত্যাগ করেননি ও মুসলিম প্রেমিক কর্তৃক নির্যাতিতও হননি বরং তিনি তার স্ব ধর্মীয় সাবেক প্রেমিক অনুপ পিল্লাই কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করে সেই ছবিগুলো প্রচার করেছিলেন।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, অভিনেত্রী অনিকা বিক্রমন, যাকে শেষ তামিল ছবি বিষমকরণে দেখা গিয়েছিল। তিনি তার প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টের মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ছবিতে তার শরীরে আঘাতের ক্ষত এবং কালো দাগ দেখা যায়।
“মালায়ালাম অভিনেত্রী অনিকা বিক্রমন তার প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাইয়ের বিরুদ্ধে লাঞ্ছনার অভিযোগ এনেছেন৷ তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ক্ষতবিক্ষত মুখের হৃদয়বিদারক ছবি শেয়ার করে অনুপ পিল্লাইয়ের সাথে তার অপব্যবহারমূলক সম্পর্কের বিষয়েও বিবরণ দিয়েছেন। প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।”
অর্থাৎ, মালায়লাম অভিনেত্রী অনিকা বিক্রমন এর নির্যাতনকারী প্রাক্তন প্রেমিকের নাম আব্দুল কিংবা কোনো মুসলিম নয় বরং নির্যাতনকারী প্রেমিকের নাম অনুপ পিল্লাই।
বিরুদ্ধে ফেসবুকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বেশকিছু ছবি প্রচার করেন। ছবিগুলোতে সেই অভিনেত্রীর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যায়। অভিনেত্রী অনিকা বিক্রমন এর পোস্ট করা সেই ছবিগুলোই সংগ্রহ করে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িকভাবে উপস্থাপন করে তাকে অংকিতা বিজয় দাবি করে ‘মুসলিম প্রেমিকের জন্য ধর্ম ও পরিবার ছাড়ার পর সেই প্রেমিক কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন’ বলে ভুল দাবি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অনিকা বিক্রমন একজন দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রী, যিনি ২০২১ সালে ‘Enga Pattan Sothu’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন।
সুতরাং, অনিকা বিক্রমন নামের এক অভিনেত্রীর ছবিকে অংকিতা বিজয় দাবি করে তার মুসলিম প্রেমিকের জন্য ধর্মত্যাগ ও পরবর্তীতে মুসলিম প্রেমিক কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হওয়ার যে দাবিগুলো করা হয়েছে তা মিথ্যা।
সম্প্রতি, আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনার পর সাদা কাফনে মোড়ানো এক ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।দাবি করা হচ্ছে, ছবির ব্যক্তি সম্প্রতি আল-আকসা মসজিদকে বিস্ফোরণ ও হামলা থেকে রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
টুইটারে একই দাবিতে প্রচারিত একটি টুইট দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।
Source: Twitter Screenshot
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য ছবিটি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তির নয় বরং এটি মালয়েশিয়ার দাফনকার্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি কর্মশালায় অংশ নেওয়া একজন জীবিত ব্যক্তির ছবি।
আলোচ্য ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, Blogspot.com নামের একটি ব্লক সাইটে ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত একই ছবিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
“ACTIVITIES IN KPTM” শীর্ষক সেই ব্লগ পোস্ট থেকে জানা যায়, লেখক ‘REHLA-AL-KHULUD PROGRAMS’ নামের দাফনকার্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এক কর্মশালায় যুক্ত ছিলেন। সেই কর্মশালায় ধর্মীয় বিধিবিধান অনুসারে মরদেহ দাফন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছিলো।
পরবর্তীতে, ব্লগসাইটটির অন্য একটি ব্লগপোস্টের মাধ্যমে লেখকের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় রিউমর স্ক্যানার টিম। লেখকের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কিত সেই ব্লগপেজ থেকে জানা যায় লেখকের নাম Mohammad Haris.
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যম, লেখকের ব্লগপেজে প্রাপ্ত নামের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ Haris Sebiey নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার। ব্লগসাইটে প্রাপ্ত লেখকের ছবি ও ফেসবুক আইডিতে প্রাপ্ত ছবি তুলনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে উক্ত ব্লগের লেখক এবং ফেসবুক একাউন্টের মালিক একই ব্যক্তি।
পরবর্তীতে, উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ২০১৪ সালের ১১ অক্টোবরের একটি পোস্টেও একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের চেক-ইন ডেসক্রিপশনে Kolej Poly-tech MARA নামক স্থান স্থানের উল্লেখ্য পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে, গুগল সার্চের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে Kolej Poly-tech MARA মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি পলিটেকনিক কলেজ। যা সংক্ষেপে KPTM নামে পরিচিত।
অর্থাৎ, আলোচ্য ছবিটির মূল উৎস (ব্লগপেজ এবং লেখকের ফেসবুক পোস্টের) তথ্য অনুসারে ছবিটি মালয়েশিয়ার কুয়ালালাপুরের একটি কলেজের কর্মশালা থেকে ধারণ করা হয়েছে।
ঘটনার অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে, ২০১৪ সালের ১১ই অক্টোবর KPTM কলেজে সত্যিই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যবস্থাপনা(মৃতদেহ দাফন) সংক্রান্ত কোনো প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার। KPTM PART-TIME JOBS & VOLUNTEERING ACTIVITIES নামক গ্রুপের একটি ডিজিটাল ব্যানারে ১১ই অক্টোবর KPTM আয়োজিত Rehlah-Al-Khulud নামের সেই কর্মশালার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, সেদিনের কর্মশালায় অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থীর ব্লগসাইটে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ২০১৪ সালের ১১ই অক্টোবর KPTM এ আয়োজিত REHLAH-AL-KHULUD অনুষ্ঠানের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়। ব্লগ পেজটিতে পাওয়া তথ্য থেকে এও নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সেদিনের কর্মশালায় দাফনকার্য সম্পন্ন করার বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল।
মূলত, ২০১৪ সালের ১১ই অক্টোবর মালয়েশিয়ার কুয়ালালাপুরে মরদেহ দাফনকার্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করার হয়। ঐ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ধারণকৃত এক ব্যক্তির কাফন মোড়ানো ছবিকে সম্প্রতি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তির ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক বিভ্রান্তিকর তথ্যকে সনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, মালয়েশিয়ায় মরদেহ দাফন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালার ছবিকে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তির ছবি দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে: যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল অনুমোদন দিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ক্ষিপ্ত আ’লীগ’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশনে সেনাবাহিনীর স্মারকলিপি দেওয়ার দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউব ও টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।
Screenshot: YouTube
ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
Screenshot Source: YouTube
টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
Screenshot Source: TikTok
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল অনুমোদন কিংবা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে কোনো স্বারকলিপি দেয়নি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
গত ৪ এপ্রিল Sabai Sikhi(আর্কাইভ) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এবং sifat…12345(আর্কাইভ) নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে ১ মিনিট ৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
Screenshot Source: Image Collage by Rumor Scanner
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তাকে দেখা যায়।
১ মিনিট ৪ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওটিতে বলা হয়, ‘এবার সরকারের অনুমোদন দিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নেওয়ার ব্যবস্থার জন্য নির্বাচন কমিশনের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুকূলে সকল রাজনৈতিক দল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাদের যোগ্যতা যাচাই করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছাড়া জনগণ যেন নির্ভিগ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেদিকে তদারকি করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এদিকে নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ইভিএম এর পরিবর্তে তিনশো আসনে ব্যালটের মাধ্যমে তাদের প্রার্থী নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যাতে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সঠিকভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারে। এদিকে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দেওয়ায় বিপাকে পড়ে গেলো আওয়ামী লীগ সরকার।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া ভিডিও’র শুরুতে যাকে একটি ফাইলে স্বাক্ষর করতে দেখা যাচ্ছে তিনি বর্তমানে সেনাবাহিনীর কোনো দায়িত্বে নেই বরং তিনি সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। তিনি ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানেরদায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর বর্তমান প্রধান হলেন এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি। ভিডিওটির ১৭ সেকেন্ডের সময় সেনাবাহিনীর এক উর্ধতন কর্মকর্তাকে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে দেখা যায়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত ছবিটি জাগো নিউজ এর অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ০৫ জুন ‘যতক্ষণ আগুন থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেনাবাহিনী থাকবে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটির ২৪ সেকেন্ডের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩ সদস্যকে রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত ছবিটি বিবিসি নিউজের অনলাইন সংস্করণে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘নির্বাচনী কাজে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো সূত্রে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল অনুমোদন কিংবা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নিকট কোনো স্মারকলিপি দেওয়ার কোনো সংবাদ সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
(১) আইনপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে আনীত প্রত্যেকটি প্রস্তাব বিল আকারে উত্থাপিত হইবে।
(২) সংসদ কর্তৃক কোন বিল গৃহীত হইলে সম্মতির জন্য তাহা রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিতে হইবে।
(৩) রাষ্ট্রপতির নিকট কোন বিল পেশ করিবার পর পনর দিনের মধ্যে তিনি তাহাতে সম্মতিদান করিবেন কিংবা অর্থবিল ব্যতীত অন্য কোন বিলের ক্ষেত্রে বিলটি বা তাহার কোন বিশেষ বিধান পুনর্বিবেচনার কিংবা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্দেশিত কোন সংশোধনী বিবেচনার অনুরোধ জ্ঞাপন করিয়া একটি বার্তাসহ তিনি বিলটি সংসদে ফেরত দিতে পারিবেন; এবং রাষ্ট্রপতি তাহা করিতে অসমর্থ হইলে উক্ত মেয়াদের অবসানে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।]
(৪) রাষ্ট্রপতি যদি বিলটি অনুরূপভাবে সংসদে ফেরত পাঠান, তাহা হইলে সংসদ রাষ্টপতির বার্তাসহ তাহা পুনর্বিবেচনা করিবেন; এবং সংশোধনীসহ বা সংশোধনী ব্যতিরেকে ২[***] সংসদ পুনরায় বিলটি গ্রহণ করিলে সম্মতির জন্য তাহা রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হইবে এবং অনুরূপ উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিবেন; এবং রাষ্ট্রপতি তাহা করিতে অসমর্থ হইলে উক্ত মেয়াদের অবসানে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।
(৫) সংসদ কর্তৃক গৃহীত বিলটিতে রাষ্ট্রপতি সম্মতিদান করিলে বা তিনি সম্মতিদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইলে তাহা আইনে পরিণত হইবে এবং সংসদের আইন বলিয়া অভিহিত হইবে।
Screenshot: bdlaws.minlaw.gov.bd
অর্থাৎ, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নতুন আইন প্রণয়নের একমাত্র ক্ষমতা বাংলাদেশের আইনসভা জাতীয় সংসদের। কোনো আইন অনুমোদনের ক্ষমতা সংসদ ব্যতীত সেনাবাহিনী কিংবা অন্য কোনো সংস্থার নেই।
মূলত, সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল অনুমোদন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নেওয়ার ব্যবস্থার জন্য নির্বাচন কমিশনের নিকট একটি স্মারকলিপি দিয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইউটিউব এবং টিকটকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল অনুমোদন কিংবা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে কোনো স্বারকলিপি দেয়নি।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাম জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিল অনুমোদন এবং এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিকাশের পক্ষ থেকে ১৪০০ টাকা উপহার দেওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং বিকাশের ওয়েবসাইট নকল করে তৈরি ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে উপহার প্রদানের এই প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপহার প্রদানের উক্ত দাবিটি বিকাশের ওয়েবসাইট নকল করে তৈরি ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে ছড়িয়েছে। এমন কয়েকটি ভুয়া ওয়েবসাইট দেখুন এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।
Screenshot: fake website
উপহার দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উক্ত ভুয়া ওয়েবসাইটটিতে যা করতে বলা হচ্ছে-
Screenshot: fake website
এরপর প্রদর্শিত ফর্মটি পূরণ করতে বলা হয়।
Screenshot: fake website
এরপর অভিনন্দন জানিয়ে টাকা উপহার পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হওয়ার কথা বলা হয়।
Screenshot: fake website
পরের ধাপে বিকাশ নাম্বার, বিকাশের পিন এবং বিকাশের ব্যালেন্স জানতে চাওয়া হয়।
Screenshot: fake website
এরপর ভেরিফিকেশন কোড চাওয়া হয়।
Screenshot: fake website
এরপর অভিনন্দন জানিয়ে সফলভাবে বিকাশ নাম্বারটি সংযুক্ত হওয়ার কথা বলা হয়।
Screenshot: fake website
শেষ ধাপে একটি বক্স থেকে লেখা কপি করে ১০টি ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করতে বলা হচ্ছে।
Screenshot: fake website
এরপর অভিনন্দন জানিয়ে সফলভাবে আবেদনটি সম্পন্ন হওয়ার কথা বলা হয়। কিছুক্ষনের মধ্যে বিকাশ নাম্বারে টাকা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ১০ টি পোস্টে কমেন্ট না করলে আবেদনটি বাতিল করার কথাও বলা হচ্ছে।
Screenshot: fake website
বিকাশ কি এমনকোনো অফার দিচ্ছে?
যে ওয়েবসাইট থেকে এই উপহার দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে সেটি বিকাশের লোগো ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া একটি ওয়েবসাইট।
Screenshot: fake website
বিকাশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এমন কোনো অফারের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও উপরের প্রদর্শিত সবগুলো প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করে ক্যাম্পেইনটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে যেকোন ভুল নম্বর কিংবা ভুল তথ্য দিলেও সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার কথা বলা হয়। শেষ ধাপের পর আর টাকা পাওয়া যায়নি বিষয়টি নিশ্চিত হয় রিউমর স্ক্যানার টিম।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, এটি একটি ভুয়া ক্যাম্পেইন। প্রকৃতপক্ষে বিকাশের পক্ষ থেকে এমন কোনো অফার দেওয়া হচ্ছে না।
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়,
‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু প্রতারক চক্র বিভিন্ন নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা অফার দেখিয়ে বিকাশ গ্রাহকদের টাকা এবং বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিকাশ এ ধরনের কোনো অফার ঘোষণা করেনি এবং উক্ত অফারগুলোর সাথে বিকাশ-এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই, এসব মিথ্যা অফারের লোভে পড়ে কিংবা প্রতারিত হয়ে এই ধরনের কোনো ওয়েবসাইট অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে কোনো লেনদেন করবেন না এবং আপনার বিকাশ একাউন্ট নাম্বার, পিন, ভেরিফিকেশন কোড বা অন্য কোনো তথ্য দিবেন না। এছাড়া এ ধরনের ওয়েবসাইটের লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকবেন। মনে রাখবেন, বিকাশ কখনোই আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন ও ভেরিফিকেশন কোড জানতে চায় না।’
Screenshot: Statement from Bkash Customer Care
মূলত, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিকাশের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের ১৪০০ টাকা উপহার দেওয়ার দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিকাশের পক্ষ থেকে এমন কোনো অফার ঘোষণা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে বিকাশের লোগো ব্যবহার করে বিকাশের ওয়েবসাইটের আদলে তৈরি ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতারণার উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে একাধিকবার বিকাশের ওয়েবসাইট নকল করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে উপহারের প্রলোভন দেখানো হয়। সেসময় উক্ত বিষয়গুলোকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিকাশের পক্ষ থেকে ১৪০০ টাকা উপহার দেওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “প্রথম আলো আমার মত একজন হিরো আলমকে সৃষ্টি করেছে। মতি ভাই আমাকে গুরুত্ব দিয়ে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় লিখছে। আর এই কারণে সরকার প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ইন্দন যোগাচ্ছে মামুনুর রশীদ গংরা। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের হিরো আলম” শীর্ষক একটি বক্তব্যকে আলোচিত ইউটিউবার হিরো আলমের বক্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেপ্রচারিত হয়েছে।
Screenshot from Facebook
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিনেতা মামুনুর রশীদকে সমালোচনার পাশাপাশি মূলধারার জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানকে
প্রশংসা করে ফেসবুকে প্রচারিত বক্তব্যটি আলোচিত ইউটিউবার হিরো আলম দেননি বরং কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত মন্তব্যকে হিরো আলমের বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে, কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গণমাধ্যম, অভিনেতা হিরো আলমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং তার ইউটিউব অ্যাকাউন্টে উক্ত দাবিতে সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Facebook.
এছাড়া দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও উল্লিখিত তথ্য সম্বলিত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে কোনো তথ্য না পাওয়ায় পরবর্তীতে বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে অভিনেতা হিরো আলমের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
হিরো আলম রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “ না, না, আমি এইসব বিষয়ে জানিই না। প্রথম আলো কি লিখেছে, অন্য কে কি গুজব ছড়াচ্ছে, আমি এসব নিয়ে থাকি না। আমার সিনেমা রিলিজ হচ্ছে, এসব নিয়ে আমি দৌড়ের উপর আছি। এই ধরণের কথা বলিইনি।”
অর্থাৎ, অভিনেতা মামুনুর রশরীদকে সমালোচনার পাশাপাশি প্রথম আলো এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে প্রশংসা করে ফেসবুকে প্রচারিত মন্তব্যটি হিরো আলম করেননি।
মূলত, আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে উদ্ধৃত করে অভিনেতা মামুনুর রশীদকে সমালোচনার পাশাপাশি দৈনিক প্রথম আলো এবং পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানকে প্রশংসা করে সম্প্রতি ফেসবুক একটি মন্তব্য প্রচারিত হয়। তবে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এরূপ বক্তব্যের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বিষয়টি নিয়ে হিরো আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উক্ত মন্তব্যটি করেননি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ তৈরি ও পরিবেশনের অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। পাশাপাশি নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, “এখন রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। এর মধ্য দিয়েই হিরো আলমের উত্থান হয়েছে।” উল্লেখ্য, পূর্বেও হিরো আলমের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে তা যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, অভিনেতা মামুনুর রশীদকে সমালোচনার পাশাপাশি প্রথম আলো ও পত্রিকাটির সম্পাদককে নিয়ে প্রশংসাসূচক একটি মন্তব্যকে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই হিরো আলমের বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।