Home Blog Page 575

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি’র অবস্থান নিয়ে তারেক রহমানের নামে প্রচারিত বক্তব্যটি এআই দিয়ে তৈরি

সম্প্রতি, ফিলিস্তিন নয় যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে ইসরাইলকে সাপোর্ট করছে বিএনপি– শীর্ষক ক্যাপশনে তারেক রহমানের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

৪৯ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বলতে শোনা যায়, প্রিয় দেশবাসী! আসসালামু আলাইকুম। আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, ইসরায়েল- হামাস ইস্যুতে বিএনপি’র অবস্থান কী? বলে রাখা ভালো বাংলাদেশের রাজনীতি খুবই জটিল। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। তারা সাপোর্ট করছে ফিলিস্তিনকে। এখন যদি আমরা ফিলিস্তিনকে সাপোর্ট করি তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উপর বেজার হবে, নষ্ট হবে আমাদের সুসম্পর্ক। তাই চুপচাপ থাকবো। সুযোগ বুঝে সিদ্ধান্ত নেব। কাকে সাপোর্ট করলে ফায়দা আমাদের। সবাইকে ধন্যবাদ!  বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিন্দাবাদ। 

ইসরায়েল

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুলন্ধানে দেখা যায়, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে ইসরায়েলকে সাপোর্ট করছে বিএনপি শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি নয় বরং তারেক রহমানের ভিন্ন ঘটনার বক্তব্যের ভিডিওর স্ক্রিনশট নিয়ে তাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে আলোচিত দাবি সম্বলিত অডিও যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

শুরুতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এমন কোনো বক্তব্য দিয়েছেন কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের কোনো বিশ্বস্ত সূত্র হতে উক্ত বক্তব্য সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, তারেক রহমান দেশবাসী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়ে থাকে। 

তবে, আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে তারেক রহমানের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে এ সংক্রান্ত কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি, বিএনপি’র মিডিয়া সেল এবং বিএনপি’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও উক্ত ভিডিও সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে বক্তব্যটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ২৫ জুলাই “লন্ডন হতে সরাসরি। ২৫ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার ২৭ জুলাই ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করার আহবান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য”- শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির পোশাক এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের মিল খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। তবে, এই ভিডিওতে তারেক রহমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নিয়ে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা বক্তব্যটি দেননি। 

Comparison Image By Rumor Scanner

এতে প্রতীয়মান হয় যে গত ২৫ জুলাই তারেক রহমানের দেওয়া ভিডিও বক্তব্যটির কোনো একটি অংশ থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে আলোচিত ভিডিওটিতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

আলোচিত ভিডিওতে থাকা অসংগতি 

৪৯ সেকেন্ডের আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওতে থাকা কণ্ঠের সাথে তারেক রহমানের কণ্ঠের মিল নেই এবং কথা বলার সময়ও কণ্ঠস্বরের কোনো পরিবর্তন নেই। 

এছাড়া, চোখের নড়াচড়া ও কথা বলার সময় ঠোঁটর নড়াচড়ার মধ্যেও অসংগতি রয়েছে। 

মূলত, গত ২৭ জুলাই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করার আহবান জানিয়ে একটি বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্য তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে সেই ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তাতে ফিলিস্তিন নয় যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে ইসরাইলকে সাপোর্ট করছে বিএনপি শীর্ষক অডিও যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা উক্ত ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেয় এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

সুতরাং, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ঘটনায় বিএনপি’র অবস্থান নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিকৃত বা এডিটেড। 

তথ্যসূত্র

ভিরাট কোহলির পুমার সাথে তিনশ কোটি রূপির স্পন্সর বাতিল করার গুজব 

0

ভারতীয় ক্রিকেট তারকা ভিরাট কোহলি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমা’র সাথে তিনশ কোটি টাকার স্পন্সর বাতিল করবেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ভিরাট কোহলির

যা দাবি করা হচ্ছে

বিরাট কোহলি পুমার সাথে ৩০০ কোটি INR মূল্যের তার যোগাযোগ শেষ করবেন কারণ তারা ইসরায়েলের ক্রীড়া ইভেন্টগুলিতে স্পনসর করছে এবং অবদান রাখছে, যা সরাসরি ইসরায়েলের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তিনি তার ম্যানেজার বান্টি সাজদেহের সাথে বিচ্ছেদ করেছেন, যা তাকে পুমার ৩০০ কোটি INR চুক্তির চুক্তি পেতে সাহায্য করেছিল। এই দ্বন্দ্বের পর তিনি নিজের ব্র্যান্ড চালু করতে চলেছেন। আপনার প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা, কোহলি। স্যালুট বিরাট কোহলি!

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমা’র সাথে ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলির তিনশত কোটি রূপির চুক্তি ছিল না বরং উক্ত চুক্তি ছিলো ১১০ কোটি ভারতীয় রূপির সমমূল্যের। কিন্তু উক্ত চুক্তি বাতিলের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে ভিরাট কোহলি এবং তার ম্যানেজার বান্টি সাজদেহ’র আলাদা হওয়ার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India এর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি “Virat Kohli strikes Rs 100-crore deal with Puma” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিরাট কোহলি প্রথম ভারতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে একটি একক ব্র্যান্ডের সাথে একশত কোটি টাকার এনডোর্সমেন্ট চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন৷ তিনি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমার সাথে আট বছরের প্রায় ১১০ কোটি ভারতীয় রূপির সমমূল্যের চুক্তি করেছেন।

অর্থাৎ, ২০২৫ সালে ভিরাট কোহলির সাথে পুমার প্রায় ১১০ ভারতীয় রূপির সমমূল্যের চুক্তি শেষ হবে।

এছাড়া, ভারতীয় গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভিরাট কোহলি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমার সাথে চুক্তি বাতিল করার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম News 18 এর ওয়েবসাইটে গত ২০ নভেম্বরে “Virat Kohli and His Long-standing Manager Bunty Sajdeh Part Ways” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিরাট কোহলি এবং ম্যানেজার বান্টি সাজদেহ আলাদা হয়ে গেছেন।

মূলত, গত নভেম্বর মাসে ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলি এবং তার ম্যানেজার বান্টি সাজদেহ আলাদা হয়ে যান। এই বিষয়ে তখন ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে সম্প্রতি উক্ত ঘটনাকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ ইস্যুর সাথে জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ভিরাট কোহলি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমার সাথে তিনশ কোটি রূপির স্পন্সর বাতিল করবেন। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম কিংবা কোনে গ্রহণযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমার সাথে তিনশ কোটি রূপির স্পন্সর বাতিল করবেন দাবিতে ফেসবুকে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ভুয়া রুটিন প্রচার

0

সম্প্রতি, ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সময়সূচি দাবিতে একটি রুটিনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

এসএসসি

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার রুটিন এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি বরং ২০২৩ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার রুটিন ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত রুটিনটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার রুটিন দাবিতে প্রচারিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

Source: Facebook Claim Post

ছবিটি পর্যবেক্ষণে বেশকিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

  • উক্ত ছবিতে রুটিন প্রকাশের তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ৯ নভেম্বর ২০২৪; যা অসঙ্গতিপূর্ণ। তারিখের ফন্টের সাথে অন্যান্য টেক্সট ফন্টের পার্থক্য রয়েছে।
  • সেখানে শুরুতে উল্লেখিত ‘২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময়সূচি’ বাক্যটির ২০২৪ অংশের ৪ সংখ্যাটি’র ফন্টের সাথে অন্যান্য সংখ্যার ফন্টের পার্থক্য রয়েছে। এতে বোঝা যায়, ২০২৪ এর শেষে ৪ সংখ্যাটি সম্পাদনার মাধ্যমে বসানো হয়েছে।
  • এছাড়াও, রুটিনটিতে উল্লেখিত পরীক্ষার তারিখগুলোর ফন্টের সাথে অন্যান্য টেক্সট ফন্টের মিল পাওয়া যায়নি। এতে বোঝা যায়, এই তারিখগুলোও সম্পাদনার মাধ্যমে বসানো হয়েছে।

পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ২০২৩ এর রুটিনটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: Dhaka Education Board

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এই রুটিনটি’র সাথে আলোচিত রুটিনটিতে উল্লেখিত সবগুলো বিষয়ের সিরিয়াল এবং দিনের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, ২০২৩ সালের এই রুটিনটি সম্পাদনার মাধ্যমে ২০২৪ সালের রুটিন দাবিতে প্রচারিত আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

এছাড়াও বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়েরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এইচএসসি ২০২৪ এর রুটিন এখনো প্রকাশিত হয়নি।

পরবর্তীতে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘গুজব থেকে সাবধান। এসএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এর রুটিন এখনো চূড়ান্ত হয়নি’ শীর্ষক ক্যাপশনে আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির একটি বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেন।

Screenshot: Facebook

আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক প্রফেসর আবুল কালাম বাশার স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো যাচ্ছে, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হবে। পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ইতোমধ্যে ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসএসসি পরীক্ষা ২০২৪-এর সময়সূচি দেখা যাচ্ছে, যা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত বা প্রকাশিত নয়। সময়সূচি চূড়ান্ত হলে সকল বোর্ডের ওয়েবসাইটে এবং জাতীয় পত্রিকাসমূহের মাধ্যমে জানা যাবে।”

এছাড়া ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া রুটিনের ছবির  বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ডেইলি ক্যাম্পাসকে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, বোর্ডের পক্ষ থেকে রুটিন প্রকাশ হলে সেটা আগে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। আমরা এখনো কোনো রুটিন প্রকাশ করিনি।

অধ্যাপক তপন কুমার আরও বলেন, ‘প্রতি বছর প্রশ্নফাঁসসহ এ ধরনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি চক্র অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। আমরা তাদের বিষয়ে সজাগ রয়েছি। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আমাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসরণ করলে আশা করলি বিভ্রান্তি এড়াতে পারবেন। ২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সব নিয়মিত, অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচিতে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত হলে বোর্ডের পক্ষ থেকে ওয়েবসাইটে রুটিন প্রকাশিত হবে।’

মূলত, ২০২৩ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সময়সূচির একটি ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে সেখানে উল্লেখিত তারিখগুলো পরিবর্তন করে ২০২৪ সালের বিভিন্ন তারিখ বসিয়ে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময়সূচি এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি।

সুতরাং, ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশিত হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত রুটিনের ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

মেয়েরা জিন্স পরছে, তাই এত ভূমিকম্প হচ্ছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি মাওলানা ফজলুর রহমান

সম্প্রতি, ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে জাতীয় ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি সংবাদের স্ক্রিনশট প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমান “মেয়েরা জিনস পরছে, তাই এত ভূমিকম্প” হচ্ছে শীর্ষক মন্তব্য করেছেন। 

মেয়েরা জিন্স পরছে

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে বিগত বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও মতামত কলাম দেখুন কালের কণ্ঠ, জাগোনিউজ২৪, এনটিভি।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমান মেয়েরা জিন্স পরছে, তাই এত ভূমিকম্প হচ্ছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং পাকিস্তানের স্যাটায়ার বা ব্যাঙ্গাত্মকমূলক সাইটে ২০১৪ সালে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাস্তব বক্তব্য হিসেবে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত মূলত গত ০২ ডিসেম্বর সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্পের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এদিন সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫.৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ ছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস। পরবর্তীতে কালের কন্ঠ পত্রিকার ২০১৫ সালের একটি সংবাদ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম, যাতে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

আমরা ২০১৫ সালের ৩১ মে প্রকাশিত কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদনটি তাদের ওয়েবসাইটে খুঁজে পেয়েছি। কালের কণ্ঠ দাবি করেছে, ইসলামাবাদে একটি সংবাদ সম্মেলনে জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলামি ফজল (JUI-F)-এর মুখ্য মওলানা ফজলুর রহমান বলেছেন, মেয়েদের জিনস পরাই ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ের কারণ। নারীদের বস্তায় পুরে বাড়ির মধ্যে রেখে দিয়ে দেশে শরিয়াহ আইন চালু করলে, তালিবানি ভাইরা আর পাকিস্তান আক্রমণ করবে না বলেও ফজলুর রহমান মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে সংবাদটিতে৷ 

কালের কণ্ঠ তাদের প্রতিবেদনে কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করেনি। আমরা যাচাই করে দেখেছি, প্রতিবেদনটি প্রকাশের এক দিন পূর্বে অর্থাৎ ৩০ মে ভারতের সংবাদমাধ্যম জি নিউজ এর বাংলা ভাষার অনলাইন সংস্করণে একই ভাষায় উক্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রতিবেদনেও কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ না পাওয়া গেলেও একইদিন (৩০ মে) দেশের আরেক সংবাদমাধ্যম এনটিভির অনলাইন সংস্করণে একই খবর প্রকাশ হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

এই খবরে দাবি করা হয়, মাওলানা ফজলুর গতকাল শুক্রবার (২৯ মে) দেওয়া এক বক্তব্যে আলোচিত মন্তব্যটি করেন। এই তথ্যের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের মুখপত্র দাবিকৃত শেখইয়ারমামি ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইটের নাম। 

আমরা আলোচিত এই ওয়েবসাইটে ২৫ মে প্রকাশিত খবরটি খুঁজে পেয়েছি। এই প্রতিবেদনেও এসেছে, শুক্রবার তিনি উক্ত মন্তব্য করেন। 

কিন্তু ২৫ মে এর পূর্বে শুক্রবার ছিল ২২ মে। অর্থাৎ, তিনি ২২ মে উক্ত মন্তব্যটি করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। 

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ২২ মে Khabaristan Times নামে পাকিস্তানের একটি ওয়েবসাইটে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রতিবেদনেও প্রায় একই তথ্যই উল্লেখ পাওয়া যায়। 

এই সাইটটি এখন আর সচল নেই৷ সাইটের ফেসবুক পেজে ২০১৭ সালের জানুয়ারির সর্বশেষ পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২৫ জানুয়ারি থেকে পাকিস্তানে ব্লক করা হয়েছে তাদের ওয়েবসাইট।

Screenshot,: Facebook 

সেসময় পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে, খবরিস্তান টাইমস ছিল মূলত একটি স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গধর্মী সাইট। একাধিক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর সাইটটি ব্লক করে দিয়েছে সরকার। 

আমরা এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে জেনেছি, ২০১৪ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি Pakistan Today নামে একটি ওয়েবসাইট একই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে মাওলানা ফজলুরের বক্তব্যের তারিখ ৩১ জানুয়ারি উল্লেখ পাওয়া যায়৷ 

অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্লাটফর্ম ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, সেসময় পাকিস্তান টুডে এর স্যাটায়ার বিভাগের নাম ছিল “খবরিস্তান টুডে।” পরবর্তীতে এই “খবরিস্তান টুডে” একটি স্বতন্ত্র সাইট হিসেবে খবরিস্তান টাইমস নামে আত্মপ্রকাশ করে। 

অর্থাৎ, তারিখ বদলে দিয়ে একাধিক বার আলোচিত বক্তব্যটি মাওলানা ফজলুরের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।  

মূলত, ২০১৫ সাল থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমানের দাবিতে নারীদের জিন্স পরিধানের সঙ্গে ভূমিকম্পের সম্পর্ক নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি প্রচার করা হলেও এটি মূলত স্যাটায়ার বা ব্যাঙ্গাত্মকমূলক সাইটে ২০১৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাস্তব বক্তব্য হিসেবে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।

সুতরাং, ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমান “মেয়েরা জিনস পরছে, তাই এত ভূমিকম্প” হচ্ছে শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে গেল কয়েক বছর ধরেই প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

‘পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড’ পেলো রিউমর স্ক্যানার

0

নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো গুজব প্রতিরোধে ভূমিকা রাখায় ‘পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

আজ ৯ই ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার লিডসউইন লিমিটেডের আয়োজনে বাংলা একাডেমীর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বিশ্ব নাগরিক গঠনে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন শীর্ষক সম্মেলন- ২০২৩ এ রিউমর স্ক্যানারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো: ছাকিউজ্জামানসহ প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ সদস্যের হাতে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান এবং নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান।

অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে রিউমর স্ক্যানারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো: ছাকিউজ্জামান বলেন, অন্যান্য খাতের পাশাপাশি ইন্টারনেটে শিক্ষা খাত নিয়ে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য মোকাবেলায় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে রিউমর স্ক্যানার। নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়সহ ২০২৩ সালে শিক্ষা খাত নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ১০০ টি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা খাতের বিষয়ে গুজব মোকাবেলায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রয়োজন।

দেশব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছে প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লিডসউইন লিমিটেডের এডুম্যান প্রজেক্ট।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমের অধীন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবি করে ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ভিডিও যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। ভিডিওগুলো হচ্ছে- ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই’, ‘ওরে ও কোলা ব্যাঙ’, ‘ঝিংগা লালা হু’, ‘প্যাক প্যাক ডাকে প্রশিক্ষণ’ ও ‘মাম্মি কি রুটি গোল গোল’।

বার্তা প্রেরক

মোঃ ছাকিউজ্জামান
সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও উপ-সম্পাদক
[email protected]

সুখের এবং কষ্টের কান্নায় আলাদা চোখ দিয়ে প্রথমে পানি ঝরার দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি, ‘সুখের কান্নায় ডান চোখে, কষ্টের কান্নায় বাম চোখে আগে পানি আসে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

কষ্টের কান্নায়

খানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

যা দাবি করা হচ্ছে

ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত ফটোকার্ডটিতে বলা হয়েছে, “আপনি জানলে অবাক হবেন! আমরা যখন সুখে কান্না করি তখন সেটা প্রথম ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরে, এবং কষ্টের কান্না করলে প্রথম বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে থাকে। আর এই পানি কি শুধুই পানি! এতে রয়েছে শ্লেষ্মা, তেল, ইলেক্ট্রোলাইট-এর এক জটিল মিশ্রণ। যেটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোেধী, যা চোখকে বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে থাকে।”

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুখের ও কষ্টের কান্নায় যথাক্রমে ডান ও বাম চোখে প্রথমে পানি আসে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার আগে রিউমর স্ক্যানারের পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে চোখের অশ্রু সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো-

অশ্রু কীভাবে উৎপন্ন হয়?

চোখের গোলকের বাইরের অংশে অবস্থিত ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিতে অশ্রু উৎপন্ন হয়। এই গ্রন্থি টিয়ার ফিল্মের মধ্যম স্তর নিয়ে গঠিত। স্বাস্থ্যকর অশ্রু চোখকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে বাধা দেয়। চোখের কর্নিয়াকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি অশ্রু উৎপন্ন করে। মানুষ যখন কাঁদে তখন তরল চোখের বাইরে বের হয়ে আসে, যাকে আমরা অশ্রু বলি।

অশ্রুর ধরন

মানুষের চোখের সুস্থতার জন্য অশ্রু একটি অপরিহার্য জিনিস। অশ্রুর সাথে মানুষের আবেগের সংযোগ রয়েছে। মানুষের চোখ থেকে ৩ ধরনের অশ্রু উৎপন্ন হয়।

বেসাল টিয়ার্স

এটি চোখের মৌলিক অশ্রু। বেসাল টিয়ার্স চোখের পাতা নাড়াচাড়া করতে সাহায্য করে। কারণ এর মাধ্যমে চোখ পিচ্ছিল থাকে। এটি তিনটি লেয়ারের সাহায্যে তৈরি হয় যার সবচেয়ে ভেতরেরটি মিউকাস লেয়ার, মাঝেরটি অ্যাকুয়াস লেয়ার আর ওপরেরটি তৈলাক্ত লিপিড লেয়ার। এই লেয়ারগুলো চোখের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এরা চোখকে ভেজা রাখে, বাইরের ময়লা এবং ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

ইরিটেন্ট টিয়ার্স বা রিফ্লেক্স টিয়ার্স

চোখকে ধোঁয়া, ধুলাবালি বা জ্বালাপোড়ার হাত থেকে এই অশ্রু সাহায্য করে। এটি চোখকে পরিষ্কার রাখে। যখন চোখে জ্বালাপোড়া তৈরি হয়, তখন এই টিয়ার তৈরি হয়ে চোখের জ্বালাপোড়ার জন্য দায়ী পদার্থকে চোখ থেকে বের করে দেয়। এটি ব্যক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

ইমোশনাল টিয়ার্স

মানুষের দুঃখ, কষ্ট, ভয়, আনন্দ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল অবস্থার প্রতিক্রিয়ায় এই অশ্রু তৈরি হয়। এ কান্নায় অনেক বেশি মাত্রার হরমোন এবং প্রোটিন থাকে।

চোখের বিভিন্ন স্তর

মানবদেহের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিতে কয়েকটি স্তর রয়েছে। এরমধ্যে একটি হল আভ্যন্তরীণ বা শ্লেষ্মা স্তর, যা অশ্রুকে চোখের কাছে আটকে রাখে। আরেকটি স্তর হল, জলীয় মাঝারি স্তর। এটি চোখের সবচেয়ে পুরু স্তর। এই স্তরটি চোখকে হাইড্রেটেড রাখে, ব্যাক্টেরিয়া দূর করে এবং কর্নিয়াকে রক্ষা করে। তৃতীয় স্তরটি হল, বাইরের তৈলাক্ত স্তর, যা চোখের চোখের অশ্রু পৃষ্ঠকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।

এবার আসি আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে। আমরা কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্টের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা পলিটিফ্যাক্টের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত চোখের অশ্রু সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই।

উক্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান ক্লিভল্যান্ডের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানানো হয়, কষ্ট বা সুখের জন্য কান্না আলাদা আলাদা হয় না। অর্থাৎ, অশুনালিতে চোখের জলের পরিবর্তন হয় না, একইভাবে থাকে।

উক্ত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা চেকইওরফ্যাক্টকে আমেরিকান একাডেমি অব অপথালমোলজি জানায়, ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির সময়ে আলাদা চোখ থেকে প্রথমে পানির আসার দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি।

এছাড়াও, স্বাস্থ্যবিষয়ক অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সুখের কান্না করলে প্রথম ডান চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে এবং কষ্টের কান্না করলে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝড়ার  তথ্যটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে ‘সুখের কান্না করলে প্রথমে ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরে এবং কষ্টের কান্না করলে প্রথমে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ফটোকার্ড সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমেরিকান একাডেমি অব অপথালমোলজির মতে, ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির সময়ে আলাদা চোখ থেকে প্রথমে পানির আসার দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি।

সুতরাং, সুখের কান্না করলে প্রথম ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরে এবং কষ্টের কান্না করলে প্রথমে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

যেভাবে জন্ম নিলো ভুয়া মোজো স্টুডিও বাংলা

0

সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনে অনুদান পাঠানো, ফিলিস্তিনের প্রতি সরাসরি সমর্থন ও তাদের সমর্থনে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি প্রবর্তন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত আকিজ গ্রুপ ও তাদের কোলা ব্র্যান্ড মোজো।

অপরদিকে একই সময়ে একই ইস্যুর কারণে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মার্কিন কোম্পানির পণ্য কোকাকোলা তথা কোককে ইসরায়েলকে সমর্থণকারী কোম্পানির পণ্য হিসেবে বর্জন করা হচ্ছে। কোকাকোলা বয়কটের ফলে স্থানীয় সোডা পণ্যের বিক্রি বেড়েছে এসব দেশে। এই যেমন কোকা কোলা বয়কটের ফলে বিদেশি ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতায় ধুকতে থাকা মিশরের স্থানীয় সোডা প্রস্তুতকারক স্পিরো স্প্যাথিস এর বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে মোজোর আলোচিত হওয়া এবং কোকের বয়কটের ফলশ্রুতিতে সামাজিক মাধ্যমে মোজো বনাম কোক শীর্ষক একটি আলোচনার জন্ম নেয়। এ সময় কেউ কেউ কোক স্টুডিও বাংলার মতো মোজো স্টুডিও বাংলা চাই এমন কিছু পোস্ট করে। এরপরই ফেসবুকে নিজেদের মোজোর অফিশিয়াল উদ্যোগ হিসেবে উপস্থাপন করে উদয় ঘটে মোজো স্টুডিও বাংলা নামের একটি ফেসবুক পেজের। 

মোজো স্টুডিও বাংলা ফেসবুক পেজ 

Mojo Studio Bangla নামের ফেসবুক পেজটি গত ২ ডিসেম্বর তৈরি করা হয়। পেজটির পক্ষ থেকে এটিকে মোজোর অফিশিয়াল পেজ হিসেবে উপস্থাপন করে কোক স্টুডিও বাংলার বিপরীতে মোজো স্টুডিও বাংলা’র ঘোষণা দেওয়া হয়। লোকজনও এটিকে মোজোর আসল পেজ ধরে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং পেজটি প্রচার করে।

মোজো স্টুডি

মোজোর অফিশিয়াল উদ্যোগ বোঝাতে সময় টিভির ফটোকার্ড এডিট করে প্রচার

গত ৪ ডিসেম্বর সোমবার পেজটিতে সময় টেলিভিশনের ফটোকার্ডে “কবে শুরু হতে যাচ্ছে মোজো স্টুডিও বাংলা” শিরোনামের একটি সংবাদ পোস্ট করা হয়। তবে অনুসন্ধানে সময় টিভির ফেসবুক পেজে এমন কোনো সংবাদের ফটোকার্ড প্রকাশের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মূলত মোজো স্টুডিও বাংলা উদ্যোগটি আসল এটি বোঝানো এবং বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য পেজটি সময় টিভির ফটোকার্ড এডিট করে ভুয়া এ সংবাদ প্রচার করে।

লক্ষাধিক টাকার গিভওয়ে ঘোষণা

Mojo Studio Bangla পেজটি তৈরির দু-তিন দিনের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ফলোয়ার লাভ করে এবং পরবর্তীতে আরও বেশি ফলোয়ার পেতে নিজেদের মোজোর অফিশিয়াল হিসেবে উপস্থাপন করে পেজটি থেকে আইফোন প্রো ম্যাক্সসহ লাখ টাকার গিফট দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রমোশনাল গিভওয়ে পোস্ট করা হয়। শর্ত হিসেবে পেজে লাইক দেওয়া, গিভওয়ে পোস্টটি শেয়ার করা এবং Mojo Studio Bangla নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে বলা হয়। গিভওয়ে ঘোষণার পর লোকজন সেটিকে মোজোর উদ্যোগ ভেবে অংশগ্রহণ করে। যার ফলে তাদের ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবারও বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত সেই ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। 

মোজো স্টুডিও বাংলা চাই নামের একটি ইভেন্ট এর সাথে মোজো স্টুডিও বাংলা পেজের যোগসূত্র 

অনুসন্ধানে কোক স্টুডিওর পরিবর্তে মোজো স্টুডিও বাংলা চাই নামের একটি ইভেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। গত ২৭ নভেম্বর Faiyaz Ef Ti নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ইভেন্টটি তৈরি করা হয়। ঐ একই অ্যাকাউন্ট থেকে “MOJO STUDIO VS COKE STUDIO এর মারামারি চাই” নামের অপর একটি ইভেন্টও তৈরি করা হয়। 

Collage by Rumor Scanner 

পরবর্তীতে ২ ডিসেম্বর তৈরি হওয়া কোক স্টুডিও বাংলা নামের পেজটির একাধিক পোস্টে Faiyaz Ef Ti নামের অ্যাকাউন্টটিকে ট্যাগ করতে দেখা যায়। যার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় ২৭ নভেম্বর ‘কোক স্টুডিওর পরিবর্তে মোজো স্টুডিও বাংলা চাই’ শীর্ষক ইভেন্ট তৈরি করা আইডিটিই Mojo Studio Bangla নামের পেজটির পিছনে রয়েছে। 

Collage by Rumor Scanner

মোজো স্টুডিও বাংলা মোজোর কোনো অফিশিয়াল পেজ নয়

মোজো স্টুডিও বাংলা পেজটি মোজোর অফিশিয়াল উদ্যোগ ধরে নিয়ে যখন রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ছিল। ঠিক তখন বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে রিউমর স্ক্যানার। রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় মোজোর সাথে। পেজটির বিষয়ে জানতে চাইলে মোজো কর্তৃপক্ষ জানায়,  “মোজো স্টুডিও বাংলা মোজোর অফিশিয়াল কোনো পেজ না। অন্য কেউ একজন এই নামে পেজ চালাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে পেজটি রিমুভ করার চেষ্টা চালাচ্ছি।”

পরবর্তীতে মোজোর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঐ পেজটিকে ভুয়া নিশ্চিত করা হয়। পোস্টটিতে লেখা হয়, “সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, Mojo Studio Bangla নামে একটি ফেইসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে যা  Mojo কর্তৃক কোন অফিশিয়াল পেইজ নয়, এটি একটি Fake পেইজ যা দ্বারা মানুষকে প্রলোভন এবং বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মোজো কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তাই সকলকে বিভ্রান্ত না হয়ে Mojo ভেরিফাইড পেইজের সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।”

Screenshot from Mojo’s FB post

সুতরাং, মোজো স্টুডিও বাংলা নামের পেজটি মোজোর অফিশিয়াল কোনো পেজ নয়, প্রকৃতপক্ষে মোজোর অফিশিয়াল উদ্যোগ দাবি করা এ পেজটি ছিল একটি ভুয়া পেজ।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis 
  • Statement from Mojo

মহাজাগতিক রশ্মির কারণে রাতের নির্দিষ্ট সময় ফোন, মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখার সতর্কবার্তাটি ভুয়া

দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুগল, নাসা এবং বিবিসি নিউজের বরাতে “আজ রাত ১২ টা ৩০ থেকে ৩ টা ৩০ পর্যন্ত আপনার ফোন,মোবাইল,ট্যাব বন্ধ রাখুন এবং শরীর থেকে দূরে রাখুন” শীর্ষক একটি তথ্য প্রচার করে দাবি করা  হচ্ছে “সিঙ্গাপুর টেলিভিশন জানিয়েছে উক্ত সময়ে আমাদের পৃথিবী উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মহাজাগতিক রশ্মির সম্মুখীন হবে যা আমাদের পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে যাবে তাই আপনার ফোন বন্ধ রাখুন, আপনার ফোন শরীরের কাছে রাখবেননা- এতে আপনার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।”

মহাজাগতিক রশ্মি

উক্ত দাবিতে বাংলাদেশে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ভারতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

২০১৬ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

২০১৭ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

২০১৯ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

২০২০ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিঙ্গাপুরের টেলিভিশন, গুগল, নাসা কিংবা বিবিসি নিউজ কেউই মহাজাগতিক রশ্মির কারণে ক্ষতির আশঙ্কায় সম্প্রতি রাতের নির্দিষ্ট সময় ফোন, মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখতে বলেনি। বরং কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাতে এই বানোয়াট তথ্যটি ২০১৬ সাল থেকে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মার্কিন ফেডারেল সরকারের স্বাধীন সংস্থা নাসা এবং ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার। 

থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল একাডেমিক সার্ভিসেস বিভাগের প্রধান সুপালর্ক কারুহেনন ফ্রান্সের নিউজ এজেন্সি এএফপিকে আলোচিত এই সতর্কবার্তাটি “ভুয়া খবর” বলে জানিয়েছে।

তিনি বলেছেন, মহাজাগতিক রশ্মি, যা সূর্য থেকে বা আমাদের সৌরজগতের বাইরে মহাজাগতিক ঘটনা থেকে নির্গত হয় যেমন ব্ল্যাক হোল বা সুপারনোভা, উপগ্রহের কম্পিউটার চিপগুলোর মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে এই রশ্মি আমাদের শরীরকেও একইভাবে প্রভাবিত করবে।

এছাড়া, দেশের মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে উল্লেখিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।

মহাজাগতিক রশ্মি কি?

মহাজাগতিক রশ্মি হলো অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার স্রোত। বহির্বিশ্ব থেকে ওই সব কণা এসে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। কণার ওই বারিবর্ষণ এক অবিশ্রান্ত প্রক্রিয়া। মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে শতকরা ৮৯ ভাগ প্রোটন, ৯ ভাগ বিকিরণ এবং ২ ভাগ থাকে কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও লোহার ভারি নিউক্লিয়াস। এগুলোই হলো প্রাইমারি মহাজাগতিক রশ্মি। প্রায় আলোর বেগেই ওরা ছুটে চলে।

প্রাইমারি মহাজাগতিক রশ্মির ওই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার যখন বায়ুমেন্ডলের বিভিন্ন পদার্থের নিউক্লিয়াসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তখন নতুন কণার সৃষ্টি হয়। নতুন কণাদের তখন বলা হয় সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মি। সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মির কণারাও প্রচন্ড বেগে ছুটে চলে। অন্যান্য পরমাণুর সঙ্গে ওদের আবার সংঘর্ষ হয় এবং আবার নতুন পদার্থ কণা ওরা সৃষ্টি করে। চলার পথে বহুবার সংঘর্ষ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পৃথিবী পৃষ্ঠে সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মির খুব কম সংখ্যক কণারাই এসে পৌঁছতে পারে। সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে প্রধানত পজিট্রন, নিউট্রন, মেসন, নিউট্রিনো প্রভৃতি। এ সব কণাদের বলা হয় প্রাথমিক বা মৌলিক কণা। এ নিয়ে বিস্তারিত দেখুন এখানে 

মূলত, বিগত কয়েক বছর ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাসা এবং বিবিসি নিউজের বরাত দিয়ে  দাবি প্রচার করে বলা হচ্ছে, সিঙ্গাপুর টেলিভিশনে একটি খবর প্রচারিত হয়েছে যে মহাজাগতিক রশ্মির জন্য রাত ১২.৩০ থেকে ৩.৩০ পর্যন্ত মোবাইল ফোন, মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখতে হবে যা মানবদেহের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে সিঙ্গাপুরের টেলিভিশন, গুগল, নাসা কিংবা বিবিসি নিউজ কেউই এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। এছাড়া, থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান প্রধান সুপালর্ক কারুহেনন প্রচারিত দাবিটিকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে।

সুতরাং, মহাজাগতিক রশ্মির কারণে রাত ১২ টা ৩০ থেকে ৩ টা ৩০ পর্যন্ত ফোন,মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখতে হবে শীর্ষক দাবিতে  ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রশিক্ষণ দাবিতে হিন্দি ছড়া আবৃত্তি করে শিক্ষকদের গোল নৃত্যের ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়

সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় নারী-পুরুষ একটি ছড়া সদৃশ গানের মাধ্যমে গোল হয়ে নৃত্য করছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লিখিত ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওগুলো প্রায় ছয় লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হিন্দি ছড়া আবৃত্তি করে শিক্ষকদের গোল নৃত্যের ভিডিওটি দেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীনে কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য নয় বরং ভারত ও পাকিস্তানে বিভিন্ন সময়ে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি অন্তত ২০১৯ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কিছু ব্যক্তি গোল হয়ে দাঁড়িয়ে বিশেষ ভঙ্গির মাধ্যমে হিন্দিতে যা উচ্চারণ করছেন তার তা হলো, 

মাম্মি কি রুটি গোল গোল, পাপা কি পেইসে গোল গোল। 

আমরা এই লাইনগুলো কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে দেখেছি, এটি ভারতে বহুল প্রচলিত একটি হিন্দি ছড়া। 

ইংরেজি বর্ণে যা লিখলে দাঁড়ায়, 

Mummy ki roti gol gol,

Papa ka paisa gol gol,

Dada ka chashma gol gol,

Dadi kee bindiya gol gol,

Upar pankha gol- gol

Niche dharti gol –gol

Chanda gol Suraj gol

Ham bhi gol tum bhi gol

Saari duniya gol–matol

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের কিছু ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচিত ভিডিওটি (, , , ) পোস্ট করতে দেখা যায়৷ তবে এই পোস্টগুলোর ক্যাপশনে ভিডিওটির সূত্রের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Facebook 

২০২১ সালেও ভারতে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

রিউমর স্ক্যানার টিম ভিডিওটির প্রকৃত সূত্র অনুসন্ধানে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের একাধিক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে একই ভিডিও পোস্ট করতে দেখেছে। 

১১ ফেব্রুয়ারি Imran Nasir নামে দুইটি অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট (, ) করা হয়৷ 

Screenshot: Facebook

একই মাসে পাকিস্তানভিত্তিক আরও কিছু অ্যাকাউন্ট এবং পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। দেখুন এখানে, এখানে। 

তবে পাকিস্তানের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টচেক পাকিস্তানের ফ্যাক্টচেকার আহমের খান (Ahmer Khan) রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, তারা নিশ্চিত যে এটা পাকিস্তানের কোনো দৃশ্য নয়৷ 

রিউমর স্ক্যানার টিম সে বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ভারতের কতিপয় পেজ থেকেও একই ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে ০৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভারতের হায়দারাবাদ ভিত্তিক একটি পেজে ভিডিওটি (আর্কাইভ) শেয়ার হতে দেখা যায়। 

Screenshot: Facebook

তবে এ সকল পোস্টগুলোর ক্যাপশনে ভিডিওটির সূত্রের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

ফেসবুকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিগত বিভিন্ন সময়ে এই ছড়াটি শিক্ষার্থীদের আবৃত্তি করার পোস্ট নজরে এসেছে আমাদের৷ দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।

ভারতের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ফ্যাক্টচেকার অন্কিতা দেশকার (Ankita Deshkar) রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, এটি ভারতের কোনো পাঠ্যবইয়ে নেই। তবে শিশুরা মজাচ্ছলে এটি আবৃত্তি করে থাকে। ভারতের আরেক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টলি’র ফ্যাক্টচেকার ভারত গুনিগান্টি’ও (Bharath Guniganti) একই মত দিয়েছেন। 

মূলত, সম্প্রতি নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় নারী-পুরুষ একটি ছড়া সদৃশ গানের মাধ্যমে গোল হয়ে নৃত্য করছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং এই ভিডিওর দৃশ্যের সাথে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত ২০১৯ সাল থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভিডিওতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যে ছড়াটি আবৃত্তি করছেন সেটি ভারতে বহুল প্রচলিত একটি শিশু ছড়া হলেও এটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভূক্ত নেই বলে ভারতের একজন ফ্যাক্টচেকার রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন।  

সুতরাং, অন্তত ২০১৯ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান ভারত ও পাকিস্তানে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে এটিকে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

হালনাগাদ/ Update

০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে একটি টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে রাসিক মেয়রের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সাম্প্রতিক ছবি দাবিতে পুরোনো ছবি প্রচার

সম্প্রতি, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ’ শীর্ষক শিরোনামে রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন দাবিতে  শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর

দৈনিক ইত্তেফাক-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।   

নিউজটি দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে অনেকে তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে উক্ত নিউজটির লিংক শেয়ার করেছেন। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (এখানে)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের এই ছবিটি সাম্প্রতিক  সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৫ অক্টোবর তৃতীয় মেয়াদে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেদিন বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম ও রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকসহ বেশকয়েক জন মেয়রের প্রথম কার্যদিবসে শুভেচ্ছা জানাতে তার কার্যালয়ে যান। এটি সেসময়ে তোলা ছবি। এছাড়া, গত ৬ ডিসেম্বর এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে রাহেনুল হক কিংবা মেরাজুল ইসলামের কোনো সৌজন্য সাক্ষাৎ অথবা শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

অনুসন্ধানের শুরুতে ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়ে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হচ্ছে, গত ৬ ডিসেম্বর (বুধবার) রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনে রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সঙ্গে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এছাড়াও দাবি করা হয়, এসময় তার সঙ্গে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। 

Screenshot: Daily Ittefaq

উক্ত ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। তবে প্রতিবেদনটিতে এটিও দেখা যায়, উক্ত সাক্ষাতের বিষয়ে মেয়র লিটনের কাছে জানতে চাইলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তাই উক্ত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম-এর ফেসবুক আইডিতে গত ১৫ অক্টোবর রাজশাহীর আলোকবর্তিকা, মাননীয় রাসিক মেয়র জননন্দিত জননেতা জনাব এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভাইয়ের তৃতীয় মেয়াদে প্রথম কার্যদিবসে শুভেচ্ছা…… শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

ছবিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় দৈনিক ইত্তেফাকে ব্যবহৃত ছবিটির সাথে উক্ত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। 

Photo Comparison by Rumor Scanner 

এছাড়াও ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ছবিটি মূলত রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের তৃতীয় মেয়াদে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম কার্যদিবসে শুভেচ্ছা জানানোর সময় ধারণ করা হয়েছে। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Khalid Hossain Sajan নামের একটি ফেসবুক আইডিতে গত ৮ ডিসেম্বর করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

পোস্টটিতে তিনি লিখেছেন, ‘Mohammad Sirajul Islam ভাই একটি দায়িত্বশীল পোস্ট এ থেকে আপনার থেকে এই ধরনের পোস্ট বা নিউজ জনগণ এমনকি কি আপনার কর্মীরাও আসা করেনা। যে ছবি দিয়েছেন তা Md Merazul Islam Meraz ভাই গত ১৫ অক্টোবর ই পোস্ট দিয়েছে।  চারঘাট বাঘার জনগণ আসা করে আপনি সবসময় সত্যের সাথে থাকবেন। আপনার জন্য শুভকামনা সবসময়’

এছাড়াও তিনি পোস্টটিতে দুটো স্ক্রিনশট যুক্ত করেছেন, একটি হলো Mohammad Sirajul Islam নামের ব্যক্তির নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনটিরর শেয়ার করা লিংকের এবং অপরটি হলো পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম-এর ফেসবুক আইডিতে গত ১৫ অক্টোবর মেয়রের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় নিয়ে করা আলোচিত ছবিযুক্ত ফেসবুক পোস্টের।

পরবর্তী অনুসন্ধানে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের তৃতীয় মেয়াদে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে দৈনিক যুগান্তর-এর ওয়েবসাইটে গত ১৫ অক্টোবর তৃতীয় মেয়াদে রাসিক মেয়রের দায়িত্ব নিলেন লিটন শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Daily Jugantor

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় নির্বাচিত মেয়র এবং ৪০ জন কাউন্সিলরের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরপর বিকালে নগর ভবনে মেয়র দপ্তর কক্ষে নবনির্বাচিত পরিষদের উপস্থিতিতে তৃতীয়বারের মত সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

তাছাড়া, আলোচিত ছবির বিষয়ে জানতে পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামের  সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, ছবিটি মূলত গত ১৫ অক্টোবর তোলা। মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তৃতীয়বারের মত সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করার দিন তার প্রথম কার্যদিবসে শুভেচ্ছা জানাতে তারা মেয়রের কার্যালয়ে যান। সেসময় তাদের সাথে রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি আরও জানান, গত ৬ ডিসেম্বর মেয়রের সাথে তাদের কোনো সাক্ষাৎ কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময়ের ঘটনা ঘটেনি। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলেও ১৫ অক্টোবরেই আপলোড করা হয়েছিল। 

অর্থাৎ, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ’ শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাক-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

মূলত, গত ১৫ অক্টোবর তৃতীয়বারের মত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেদিন বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম ও রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকসহ বেশকয়েক জন মেয়রের প্রথম কার্যদিবসে শুভেচ্ছা জানাতে তার কার্যালয়ে যান। সেদিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি ছবি সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাক তাদের একটি প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে করে প্রচার করে। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, গত ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনে রাজশাহী-৬ (বাঘা ও চারঘাট উপজেলা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি ৬ ডিসেম্বরের নয় এবং উক্ত দিনে মেয়রের সাথে পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম ও রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সাক্ষাৎ কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সুতরাং, গত ১৫ অক্টোবরের একটি ছবিকে দৈনিক ইত্তেফাক তাদের ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ’ শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ের ছবি দাবিতে প্রচার করেছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র