Home Blog Page 575

সেনাবাহিনীর নামে ফেসবুকে প্রচারিত গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা সংক্রান্ত রেড এলার্টটি ভুয়া

0

সম্প্রতি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাতে গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি রেড এলার্ট সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ডায়াবেটিস

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

যা দাবি করা হচ্ছে 

ফেসবুক প্রচারিত পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে “রেড এলার্ট! সকালের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, যদি আপনার বাসায় অপরিচিত কেউ এসে বলে যে আমরা মেডিকেল কলেজ থেকে এসেছি। আপনার রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখব, কোন ফি লাগবে না। ভুলেও পরীক্ষাটা করতে দিবেন না। শীঘ্রই ৯৯৯ কল দিবেন কিংবা পুলিশকে অবহিত করবেন। কারণ তারা আইএস জঙ্গি। তারা আপনার রক্তে এইচ আইভি এইডস ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিবে। বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে এটা শেয়ার করুন।

জনসচেতনতায়: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী”

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাতে ফেসবুকে ‘রেড এলার্ট’ শীর্ষক মেডিকেল শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ বাসায় এসে রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাইলে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে ২০১৮ সাল থেকেই বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত রেড এলার্টটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পরামর্শমূলক এই রেড এলার্টটিতে বলা হয়েছে, 

“সকালের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, যদি আপনার বাসায় অপরিচিত কেউ এসে বলে যে আমরা মেডিকেল কলেজ থেকে এসেছি। আপনার রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখব, কোন ফি লাগবে না। ভুলেও পরীক্ষাটা করতে দিবেন না। শীঘ্রই ৯৯৯ কল দিবেন কিংবা পুলিশকে অবহিত করবেন। কারণ তারা আইএস জঙ্গি। তারা আপনার রক্তে এইচ আইভি এইডস ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিবে। বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে এটা শেয়ার করুন। জনসচেতনতায়: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী”

বিষয়টি অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ কিংবা আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও এসম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

চলতি বছর বাংলাদেশ স্কাউটসের সূত্রেও একই তথ্য ছড়ানো হয়

চলতি বছরের জুন মাসে একই দাবি সম্বলিত তথ্য বাংলাদেশ স্কাউটসের বরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সেসময় রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে  স্কাউটসের জনসংযোগ ও মার্কেটিং বিভাগের উপ পরিচালক মো: মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে স্কাউটসের উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য শাখার পরিচালকের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

পরবর্তীতে স্কাউটসের জাতীয় সদর দফতরের পরিচালক (সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘না, আমরা এমন কোনো রেড এলার্ট দেইনি। কে বা কারা এটা ছড়াচ্ছে আমাদের জানা নেই।’

অর্থাৎ, একই দাবিতে বাংলাদেশ স্কাউটসের সূত্রে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়। 

বিষয়টি যেভাবে ছড়ালো

অনুসন্ধানে ২০১৮ সালে ০৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশের সূত্রে একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য এবং সময় উল্লেখ করা হয়নি।

Screenshot: Facebook 

গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে সেসময় এধরণের সতর্কবার্তা দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, কোনো সূত্র উল্লেখ না করেও একই দাবিতে ২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন সূত্রের বরাতে ও সূত্রবিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, মেডিকেল শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ বাসায় এসে রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাইলে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাতেও একই তথ্য প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর আগে চলতি বছরের জুনে একই দাবিতে বাংলাদেশ স্কাউটসের সূত্রে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেসময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই ধরনের কোনো রেড এলার্ট দেননি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।

সুতরাং, মেডিকেল শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ বাসায় এসে রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাইলে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাবিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উদ্ধৃত করে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ইসরায়েলি পণ্যের ভুয়া তালিকা ভাইরাল

0

সম্প্রতি ইসরায়েলি পণ্য দাবিতে বিভিন্ন ধরণের ৩৩ টি পণ্যের একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে এসব পণ্য বয়কটের আহবান জানানো হচ্ছে। 

১৫ টি ক্যাটাগরির এই তালিকায় যেসব পণ্য রয়েছে, সেগুলো হলোঃ জুতার মধ্যে বাটা, শ্যাম্পুর মধ্যে ক্লিয়ার, সানসিল্ক, ডাভ, সাবানের মধ্যে লাক্স, ডাভ, লাইফবয়, টয়লেট্রিজ পণ্যের মধ্যে লরিয়াল,বস, গার্নিয়ার, ওয়াশিং পাউডারের মধ্যে সার্ফ এক্সেল, হুইল, রিন, ক্রিম বা বডি লোশনের মধ্যে ভ্যাসলিন, ডাভ, পন্ডস, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, বেবি লোশন জনসন অ্যান্ড জনসন, নুডলসের মধ্যে ম্যাগী, কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয়র মধ্যে কোকাকোলা, পেপসি, স্প্রাইট,  ফান্টা, সেভেন আপ, অ্যাটম, অ্যাকুয়াফিনা, চায়ের মধ্যে তাজা, বডি স্প্রের মধ্যে এক্স, অ্যান্টি পারসপিরেন্ট পণ্য হিসেবে রেক্সোনা, পাউডারের মধ্যে পন্ডস, টুথপেস্ট হিসেবে পেপসোডেন্ট, ক্লোজ আপ এবং গাড়ি হিসেবে ফোর্ডের নাম রয়েছে। 

পণ্যের

উক্ত তালিকা সম্বলিত ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইসরায়েলি পণ্য দাবিতে বিভিন্ন ধরণের ৩৩ টি পণ্যের যে তালিকাটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলো ইসরায়েলি পণ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে এই পণ্যগুলোর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কোনোটির সাথে ইসরায়েলের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পণ্যগুলো সম্পর্কে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলো যাচাই করে। তবে পোস্টগুলোতে উক্ত পণ্যগুলোকে ইসরায়েলি পণ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও কোনো তথ্যসূত্র বা কিসের ভিত্তিতে এ পণ্যগুলোকে ইসরায়েলি পণ্য বলা হচ্ছে সে সম্পর্কিত কোনো সূত্র খুঁজে পায়নি।

পরবর্তীতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে উক্ত পণ্যগুলোর প্রতিটির নাম ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

বাটা

প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে অনুসন্ধানে এটির ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, এটি ১৮৯৪ সালে চেক প্রজাতন্ত্রের (তৎকালীন চেকোশ্লোভাকিয়া) জিলিন শহরে তিন সহোদরের হাত ধরে পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। 

বর্তমানে বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাটা কোম্পানির সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের লাউসেনে অবস্থিত।  প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে সন্দ্বীপ কাতারিয়া নামে একজন ভারতীয় নাগরিক কর্মরত আছেন। 

পাশাপাশি আরও দেখা যায়, বাটা বিশ্বের ৭০ টির বেশি দেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে ইসরায়েলে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ব্যবসা সম্পর্কে জানা যায় এটি প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩৪ বছর পর, ১৯২৭ সালে।  

শ্যাম্পু:  ক্লিয়ার, সানসিল্ক ও ডাভ
ওয়াশিং পাউডার:  সার্ফ এক্সেল, হুইল, রিন
ক্রিম/ বডি লোশন: ভ্যাসলিন, ডাভ, পন্ডস, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি
সাবান: লাক্স, ডাভ, লাইফবয়
বডি স্প্রে: এক্স
টুথপেস্ট: পেপসোডেন্ট, ক্লোজ আপ
এন্টি পারসপিরেন্ট: রেক্সোনা

এই পণ্যগুলো নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ক্লিয়ার, সানসিল্ক ও ডাভ এই তিনটি শ্যাম্পু ও ওয়াশিং পাউডার সার্ফ এক্সেল, হুইল, রিন এবং  ক্রিম বা বডি লোশনের মধ্যে ভ্যাসলিন, ডাভ, পন্ডস, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ইত্যাদি পণ্যগুলো ইউনিলিভার কোম্পানির। 

ইসরায়েলি পণ্য হিসেবে প্রচারিত তালিকাগুলোর মধ্যে থাকা টুথপেস্ট পেপসোডেন্ট নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি একটি আমেরিকান ব্র্যান্ড। ১৯১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিকাগোর পেপসোডেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে এটি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৪২ সালে ইউনিলিভার এটি কিনে নেয়। তবে ২০০৩ সালে ইউনিলিভার উত্তর আমেরিকায় পণ্যটির সত্ত্ব চার্চ অ্যান্ড ডোয়াইট নামে আরেকটি আমেরিকান কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। 

আরেকটি টুথপেস্ট ক্লোজ আপ নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটিও ইউনিলিভারের একটি পণ্য। 

এগুলো ছাড়াও এক্স বডি স্প্রেটিও ইউনিলিভারের তৈরি।

এন্টি পারসপিরেন্ট হিসেবে বহুল ব্যবহৃত রেক্সোনাও ইউনিলিভারের পণ্য। এটি ১৯০৮ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় শেলডন ড্রাগ কোম্পানির হাতে তৈরি হয়। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে এটিও ইউনিলিভারের সাথে একীভূত হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ইউনিলিভার সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যে ১৮৮৩ সালে লিভার সহোদরদের হাতে সানলাইট নামে একটি সাবান প্রস্তুত মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে।

এরপর  ১৯৩০ সালে নেদারল্যান্ডের কোম্পানি মার্গারিন ইউনির সাথে একীভূত হয়ে ইউনিলিভার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

বেবি লোশন: জনসন অ্যান্ড জনসন

পণ্যটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির একটি পণ্য। এই জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানি ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা শুরু করে। এর সদর দফতর যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের নিউ ব্রান্সউইকে। 

নুডলস: ম্যাগী (Meggi)

পণ্যটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে Meggi হিসেবে প্রচার করা হলেও এটির শুদ্ধ বানান Maggi। এই নুডলসটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৮৪ সালে, সুইজারল্যান্ডের উদ্যোক্তা জুলিয়াস ম্যাগীর হাত ধরে। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে নেসলে এটিকে কিনে নেয়। 

উল্লেখ্য, নেসলেও একটি সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি, যেটি ১৮৬৭ সালে হেনরি নেসলে নামক একজন জার্মান-সুইস নাগরিকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। 


কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয়: কোকাকোলা, পেপসি, স্প্রাইট, ফান্টা, সেভেন আপ, অ্যাটম, অ্যাকুয়াফিনা

এই পণ্যগুলো নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উল্লিখিত পণ্যগুলোর মধ্যে কোকাকোলা ১৮৮৬ সালে আমেরিকার আটলান্টার ফার্মাসিস্ট, জন এস. পেম্বারটন (১৮৩১-৮৮) তার পেম্বারটন কেমিক্যাল কোম্পানিতে তৈরি করেছিলেন।

পরবর্তীতে ১৮৯২ সালে কোকাকোলা কোম্পানী আমেরিকান কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দফতর আমেরিকার আটলান্টার জর্জিয়ায় অবস্থিত। স্প্রাইট ও ফান্টা কোকাকোলারই দুইটি পণ্য।

অপরদিকে পেপসি, সেভেন আপ, অ্যাকুয়াফিনা, অ্যাটম নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই পণ্যগুলো পেপসিকো কোম্পানির তৈরি। পেপসিকো আমেরিকান ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি। এটি ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দফতর নিউ ইয়র্কে। 

টয়লেট্রিজ: লরিয়াল,বস, গার্নিয়ার

এই পণ্যগুলোর মধ্যে লরিয়াল, গার্নিয়ার ফরাসি প্রসাধনী নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান লরিয়ালের পণ্য।

এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯০৯ সালে ইউজিন শ্যুলার নামে একজন ফরাসি ফার্মাসিস্ট এবং উদ্যোক্তার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এটির সদর দফতরও ফ্রান্সে অবস্থিত।

অপরদিকে বস সম্পর্কে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি ১৯২৪ সালে হুগো ফার্দিনান্দ বস নামে এক জার্মান নাগরিকের হাত ধরে মেটজিনজেন নামে জার্মানির একটি শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দফতরও এখানে অবস্থিত। 

চা: তাজা

এ চা নিয়ে অনুসন্ধানে তাজা নামের আলাদা কোনো পণ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং অনুসন্ধানে Brooke Bond Taaza Tea নামে একটি চা পাতার ব্র্যান্ড খুঁজে পাওয়া যায়। ব্রুক বন্ড ১৮৪৫ সালে আর্থার ব্রুক নামে একজন ব্রিটিশের হাত ধরে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এটি লিপটন টিস অ্যান্ড ইনফিউশন্স এবং ইউনিলিভারের সাথে একীভূত হয়ে যায়।

পাউডার: পন্ডস

এই পাউডারটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৮৪৬ সালে আমেরিকান ফার্মাসিস্ট থেরন টি পন্ড টি টি পন্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই পন্ডসের যাত্রা। বর্তমানে এটিও ইউনিলিভারের সাথে একীভূত হয়ে গিয়েছে। 

গাড়ি: ফোর্ড

এই গাড়ি কোম্পানিটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটিও একটি আমেরিকান কোম্পানি১৯০৩ হেনরি ফোর্ড ও ১১ জন বিনিয়োগকারীর হাত ধরে এটি যাত্রা শুরু  করে। এর সদর দফতর মিশিগানের ডেট্রয়েটে অবস্থিত। 

এই পর্যন্ত অনুসন্ধানে উক্ত পণ্যগুলোর কোনোটিরই উৎপাদন, প্রতিষ্ঠা বা কারখানার সাথে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের পণ্য বয়কট করার আহবান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু পণ্যের একটি তালিকা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই তালিকা থাকা পণ্যগুলোর কোনোটিই ইসরায়েলের পণ্য নয়। বরং কোনো ধরনের নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানের পণ্যের নাম যুক্ত করে উক্ত তালিকাটি তৈরির মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহবান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসরায়েলি পণ্য হিসেবে কতিপয় পণ্যের নামের একটি তালিকা প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলকে নিয়ে সাকিব আল হাসানের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার 

0

সম্প্রতি, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ গ্যারি স্টিডের বাংলাদেশ দলকে নিয়ে করা মন্তব্যের প্রতিউত্তরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান “নিউজিল্যান্ডের ওয়ার্ল্ড কাপ যেন কয়টা?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে। 

 সাকিব আল হাসানের

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট দলের কোচ গ্যারি স্টিডের বাংলাদেশ দলকে নিয়ে করা মন্তব্যের প্রতিউত্তরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান “নিউজিল্যান্ডের ওয়ার্ল্ড কাপ যেন কয়টা?” শীর্ষক মন্তব্য করেননি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

গুজবের সূত্রপাত

অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা যায়, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল সম্পর্কে সাকিব আল হাসানের মন্তব্যটি ‘148km/h deliveries from Ispahani Mirzapur End’ নামক একটি ফেসবুক পেজে গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে প্রথম পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়।

Screenshot: Facebook.

পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এটি একটি সার্কাজম বা কমেডি পেজ। এছাড়া উক্ত পোস্টেও সার্কাজম করে করা একটি মন্তব্য পাওয়া যায়। 

Screenshot comparison: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, একটি সার্কাজম পেজ থেকে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল সম্পর্কে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মন্তব্যটি প্রথম প্রচার করা হয় এবং পরবর্তীতে তা ফেসবুকে বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।

যা বলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধান কোচ

কি-ওয়ার্ড সার্চ করে নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যম Stuff এ  গত ১২ অক্টোবর “Cricket World Cup: Black Caps shelve egos in search of win over Bangladesh” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সম্পর্কে নিউজিল্যান্ডের কোচ গ্যারি স্টিডের একটি মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, অবশ্যই ম্যাচ দুটি সহজ হবে না। তবে এ দুই দল (বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান) সম্ভবত সেই ছয়-সাত দলের অন্তর্ভুক্ত নয়, যারা সত্যিকার অর্থে নিজেদের বিশ্বকাপের জয়ের দাবিদার বলতে পারে।

পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান কোনো মন্তব্য করেছেন কি না অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

একটি দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক অন্য একটি দেশের ক্রিকেট দলকে নিয়ে মন্তব্য করলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলকে নিয়ে সাকিব আল হাসানের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত মন্তব্যটির কোনো তথ্যপ্রমাণ না পাওয়া যাওয়ায় এটি প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট দলকে নিয়ে এমন কোনো মন্তব্য করেননি। 

মূলত, গত ১২ অক্টোবর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ গ্যারি স্টিড ‘বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জেতার মতো দল নয়’ শীর্ষক একটি মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান গ্যারি স্টিডের করা মন্তব্যের প্রতিউত্তরে নিউজিল্যান্ড দলকে নিয়ে “নিউজিল্যান্ডের ওয়ার্ল্ড কাপ যেন কয়টা?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাকিব আল হাসান নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলকে নিয়ে এমন কোনো মন্তব্য করেননি বরং একটি সার্কাজম/মিম সম্পর্কিত ফেসবুক পেজ থেকে উক্ত দাবিটি প্রথম প্রচার করা হয় এবং পরবর্তীতে সাকিবের করা বাস্তব মন্তব্য হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।  

সুতরাং, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলকে নিয়ে সাকিব আল হাসান “নিউজিল্যান্ডের ওয়ার্ল্ড কাপ যেন কয়টা?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে  প্রচারিত তথ্যটি; সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ফিলিস্তিনের পুরোনো মিলিটারি ট্রেনিংয়ের ছবিকে হামাস কর্তৃক ইসরায়েলি সৈন্যদের আটকের দাবিতে প্রচার 

0

সম্প্রতি, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে আটক ইসরায়েলের হানাদার বাহিনীকে নিয়ে যাচ্ছে হামাস যোদ্ধারা শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

আটক ইজরায়েলের

কতিপয় পোস্টে সরাসরি উক্ত দাবি না থাকলেও ছবির ক্যাপশন উক্ত ঘটনার দাবিকেই ইঙ্গিত করছে বলে প্রতীয়মান হয়। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের যেসব পোস্টে এই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তার কিছু নমুনা দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এমনকি এই ছবির সাথে হামাস যোদ্ধাদের দ্বারা ইসরায়েলের সৈন্যদের আটকের ঘটনারও কোনো সম্পর্ক নেই বরং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফিলিস্তিনের মিলিটারি ট্রেনিংয়ের সময়ে তোলা ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিটির বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে الغرفة المشتركة لفصائل المقاومة الفلسطينية (The joint room for Palestinian resistance factions) নামক একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্টে থাকা একাধিক ছবির মধ্যে আলোচিত ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Telegram 

ছবিগুলোর বিষয়ে আরবি ভাষায় লেখা পোস্টে বলা হয়, সেদিনের (২৮ ডিসেম্বর) Extreme Corner 3 নামক একটি মিলিটারি ট্রেনিংয়ের ছবি এটি। 

এর আগে একই দিন একই চ্যানেলের আরেক পোস্টে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে ট্রেনিংটির বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়। 

Screenshot: Telegram

একই দিনের উক্ত ট্রেনিংয়ের ভিডিও ফুটেজও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। দেখুন এখানে এবং এখানে। 

মূলত, গত ০৭ অক্টোবর থেকে অদ্যাবধি চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে আটক ইসরায়েলের হানাদার বাহিনীকে নিয়ে যাচ্ছে হামাস যোদ্ধারা শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে তার সাথে উক্ত ঘটনার সংশ্লিষ্টতা নেই৷ প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ফিলিস্তিনের গাজায় মিলিটারি ট্রেনিংয়ের সময়ের এই ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, গাজায় পুরোনো মিলিটারি ট্রেনিংয়ের ছবিকে হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের সৈন্যদের সাম্প্রতিক সময়ে আটকের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

  • الغرفة المشتركة لفصائل المقاومة الفلسطينية: Telegram Post
  • Rumor Scanner’s own analysis 

বাইতুল মুকাদ্দাসে হামাস যোদ্ধাদের প্যারাসুট নিয়ে নামার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মিশরের  

সম্প্রতি,বায়তুল মোকাদ্দাস রক্ষায় হামাস যোদ্ধাদের প্যারাসুট নিয়ে আকাশ থেকে অবতরণের দাবিতে “আমি বায়তুল্লাহ (১ম ক্বিবলা) রক্ষায় পাঠানো আবাবিল দেখি নাই, কিন্তু বায়তুল মোক্বাদ্দাস (২য় ক্বিবলা) রক্ষায় পাঠানো আবাবিল দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহুআকবার” শীর্ষক একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

বাইতুল মুকাদ্দাসে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাইতুল মুকাদ্দাস রক্ষায় হামাস যোদ্ধাদের আকাশ থেকে প্যারাসুট নিয়ে অবতরণের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ফিলিস্তিনের নয়। প্রকৃতপক্ষে মিশরের পুরোনো একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে উক্ত ভিডিওটিতে একটি আরবি বাক্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। আরবি বাক্যটির অনুবাদ করে সেখানে মিশরের নাম দেখতে পাওয়া যায়। এ থেকে সন্দেহ জাগে, এটি মিশরের কোনো ভিডিও হতে পারে। 

পরবর্তীতে ভিডিওটিতে থাকা আরবি এই বাক্যটির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মাউদ হাসান নামে একজন মিশরীয় নাগরিকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটিতে দেখা যাওয়া পতাকার সাথে ফিলিস্তিনের পতাকার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভিডিওটিতে তিনি ‘النسور البشرية في مصر’ শীর্ষক একটি শিরোনাম যুক্ত করেন। যার বাংলা অনুবাদ দাঁড়ায়, মিশরে মানব শকুন।

Image Collage: Rumor Scanner

পাশাপাশি এই ভিডিওটিতে olaalkasem একটি টিকটক অ্যাকাউন্টের নাম দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত নামের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গত ২০ সেপ্টেম্বর টিকটকেও একই শিরোনামে এই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: ola alkasem Tiktok

অর্থাৎ ভিডিওটি গত সেপ্টেম্বর থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান। অপরদিকে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু হয় গত ৭ অক্টোবর থেকে।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ফিলিস্তিনের কোনো ভিডিও নয় এবং চলমান সংঘাতেরও নয়।

মূলত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে আকস্মিক এবং নজিরবিহীন মিসাইল হামলা চালায় হামাস। এরপর ইসরায়েল সীমানা অতিক্রম করে দেশটিতে প্রবেশ করে হামাস যোদ্ধারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষায় হামাস যোদ্ধাদের প্যারাসুট দিয়ে আকাশ থেকে অবতরণের দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটির সাথে হামাস কিংবা ফিলিস্তিনের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে মিশরের পুরোনো একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।  

উল্লেখ্য, পূর্বেও হামাস যোদ্ধাদের প্যারাসুটের মাধ্যমে ইসরাইলে অবতরণের ভিডিও দাবিতে মিশরের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হলে সেটি মিথ্যা প্রমাণ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, মিশরের পুরোনো একটি ভিডিওকে বায়তুল মুকাদ্দাস  রক্ষায় হামাস যোদ্ধাদের প্যারাসুট নিয়ে আকাশ থেকে অবতরণের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভিডিওটি ইসরায়েলি সেনার আরেক ইসরায়েলি সেনাকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাওয়ার নয়

সম্প্রতি, “ইসরায়েলি সৈন্যরা জোর করে ইসরায়েলি সৈন্যকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সে কাঁদছে আর বলছে- না, আমি মরতে চাই না!” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

যুদ্ধে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইসরায়েলি সৈন্যকে জোর করে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের নয় বরং ভিডিওটি ২০০৫ সালের ভিন্ন একটি ঘটনার পুরানো ভিডিও।

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘ציוני פטריוטי ישראלי’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে  ২০১৪ সালের ৬ আগস্ট ‘התנתקות 2005 – ד”ר סודי נמיר צדק – מחילה סליחה וכפרה (হিব্রু ভাষা)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তীতে দাবিটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান মিসবারে গত ৯ অক্টোবর ‘The video is old and does not show an Israeli officer refusing to go to fight in the Gaza Strip‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটির নাম সোদি নামির, যিনি একজন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী। ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে নিজেদের  প্রত্যাহারের সময় তাকে জোরপূর্বক গুশ কাতিফ বসতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। 

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, সোদি নামিরকে গুশ কাতিফ বসতি থেকে সামরিক পোশাক পরিহিত দুইজন ব্যক্তি যাত্রীবাহী বাসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সোদি নামির চিৎকার করে বসতি ছেড়ে চলে যেতে অস্বীকার করছিলেন এবং বলছিলেন, হত্যাকারীরা ইসরায়েলে প্রবেশ করবে এবং তাদের রকেট অ্যাশকেলনে (ইসরায়েলের একটি শহর) আঘাত করবে। 

পাশাপাশি ২০২১ সালের ১২ মে  ‘מרים כהן’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে  প্রকাশিত ভিডিও থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Facebook

মূলত, ২০০৫ সালে ডিসএনগেজমেন্ট প্ল্যান নামে একটি চুক্তির আওতায় ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে ৮ দিনে ২৫ টি বসতি প্রত্যাহার করে নেয়। এই ২৫ টি বসতির একটি ছিল গুশ কাতিফ। এই গুশ কাতিফের সোদি নামির নামক একজন বসতি স্থাপনকারীকে সামরিক পোশাক পরিহিত দুইজন ব্যক্তি নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চিৎকার করে যেতে অস্বীকার করেন। সে সময়ের ধারণকৃত একটি ভিডিওকেই সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তন সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি সৈন্যরা জোর করে আরেক ইসরায়েলি সৈন্যকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়। চলমান এই সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সুতরাং, ২০০৫ সালে গাজা থেকে একজন ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেওয়ার একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ইসরায়েলি সৈন্যরা জোর করে আরেক ইসরায়েলি সৈন্যকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আল-আকসা ফিলিস্তিনিরা দখলে নেয়নি,পূর্ব থেকেই নিয়ন্ত্রণ ওয়াকফের হাতে

0

সম্প্রতি, আল-আকসা মসজিদ দখলে নিয়েছে স্বাধীনতা কামী ফিলিস্তিনিরা শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

আল-আকসা

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

এছাড়া, কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে ৫৬ বছর পর আল আকসা মসজিদের গেইটের চাবি ফিরিয়ে দিয়েছে ইহুদি সেনারা।

উক্ত দাবিতে কিছু ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি আল আকসা ফিলিস্তিন কর্তৃক দখলের যে দাবিটি করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বরং পূর্বে থেকেই এটির নিয়ন্ত্রণ মুসলিম অধ্যুষিত জর্ডানের একটি ওয়াকফের অধীনে। তবে এটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি ইসরায়েল দেখভাল করে। তাছাড়া, ৫৬ বছর পর আল আকসার একটি গেইটের চাবি সাবেক এক ইহুদি সেনার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি গত মে মাসের। 

আল আকসার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে? 

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান জানা যাচ্ছে, অন্তত গত ০৮ অক্টোবর থেকে আল আকসা ফিলিস্তিন কর্তৃক দখলের দাবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। 

আমরা উক্ত দাবির সাথে অন্তত দুইটি ভিডিওর বিষয়ে ইতোমধ্যেই ফ্যাক্টচেক করে জানিয়েছি, উক্ত দুইটি ভিডিওর একটি (ক্লেইম আর্কাইভ , ) গত এপ্রিলের লাইলাতুল কদরের রাতের এবং অন্যটি (ক্লেইম আর্কাইভ , ) একটি ড্রামা সিরিজের দৃশ্য। 

উক্ত দুইটি ফ্যাক্টচেক – 

আল আকসার নিয়ন্ত্রণ বা দখল ফিলিস্তিনের হাতে গেলে এতে নির্বিঘ্নেই নামাজ আদায়ের কথা মুসলিমদের। কিন্তু গত ১৩ অক্টোবর (শুক্রবার) জুমার নামাজ আদায়ে মুসলিমদের আল আকসা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায়ে বাঁধা পাওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। 

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম Anadolu Agency এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সেদিন ইসরায়েল পুলিশ ৭০ বছরের বেশি বয়সের মুসলিমদেরই আল আকসায় প্রবেশ করতে দিয়েছিল। 

আনাদোলুর খবরে বলা হচ্ছে, চলমান সংঘাতকে ঘিরে সেদিন ইসরায়েল পুলিশের কঠোর অবস্থান ছিল আল আকসার আশেপাশে সহ পুরো জেরুজালেমেই।

Screenshot: Anadolu agency

মার্কিন সংবাদমাধ্যম CNN এর এক প্রতিবেদনেও একই তথ্য দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম The Guardian ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান লিখেছে, শুক্রবার ষাট বছরের কম বয়সী মুসুল্লিদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি আল আকসায়। 

Screenshot: The Guardian 

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আল আকসা প্রাঙ্গণটি মূলত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে জর্ডানের একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান। 

এই তথ্যের বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Al Jazeera এর চলতি বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়,  ইসরায়েল আল আকসাসহ গোটা জেরুজালেমকে নিজেদের ভূমি বলে দাবি করে থাকে। তবে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের দাবিকে সমর্থন করে না। 

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, জর্ডানের সাথে চুক্তির আওতায় আল আকসার নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাগুলোর দায়িত্বে রয়েছে জর্ডানের একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান। তবে আল আকসা প্রাঙ্গণের বাইরের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করে ইসরায়েল। 

Screenshot: Al Jazeera 

বিবিসি বাংলা’র এক প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।  

Screenshot: BBC BANGLA 

সার্বিক অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, আল আকসা প্রাঙ্গণের নিয়ন্ত্রণ জর্ডানের একটি ওয়াকফের হাতে রয়েছে। তবে এর নিরাপত্তার বিষয়টি ইসরায়েলের অধীন। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে আল আকসা প্রাঙ্গণটির নিয়ন্ত্রণ বদল বা ফিলিস্তিনের দখলে আসার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

আল আকসার চাবি ফিরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত ঘটনার নেপথ্যে

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আমরা দেখেছি, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যু শুরু (০৭ অক্টোবর) হওয়ার পর থেকেই ৫৬ বছর পর ইহুদি সেনা কর্তৃক আল আকসা মসজিদের গেইটের চাবি ফিরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

রিউমর স্ক্যানার টিম কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখেছে, চলতি বছরের মে মাসে Anadolu Agency এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ ১৯ মে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ইয়ার বারাক নামে একজন সাবেক ইসরায়েলি সৈন্য ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় আল আকসার পশ্চিম গেট থেকে একটি চাবি নিয়েছিলেন। এ নিয়ে অনুশোচনা হওয়ায়  চাবিটি তার মালিকের কাছে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বারাক। এরপরই গত মে মাসে তিনি জেরুজালেমের ইসলামিক এনডাউমেন্টস বিভাগের মহাপরিচালক শেখ আজম আল-খতিবের কাছে চাবিটি ফেরত দেন। 

Screenshot: Anadolu Agency 

এই ঘটনা ভিন্ন আল আকসার চাবি ফেরত সংক্রান্ত সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোন সূত্রে আসেনি। 

অর্থাৎ, গত মে মাসের একটি ঘটনাকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

মূলত, সম্প্রতি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ দখলে নিয়েছে ফিলিস্তিনিরা এবং ৫৬ বছর পর আল আকসা মসজিদের গেইটের চাবি ফিরিয়ে দিয়েছে ইহুদি সেনারা শীর্ষক দুইটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, সম্প্রতি উক্ত দুইটি ঘটনার কোনোটিই ঘটেনি। আল আকসা প্রাঙ্গণের নিয়ন্ত্রণ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ জর্ডানের একটি ওয়াকফের হাতে রয়েছে। তবে এর নিরাপত্তার বিষয়টি ইসরায়েলের অধীন। অন্যদিকে, গত মে মাসে ৫৬ বছর পর সাবেক এক ইহুদি সেনা কর্তৃক তার কাছে থাকা আল আকসা মসজিদের গেইটের একটি চাবি ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সুতরাং, জর্ডানের ওয়াকফের নিয়ন্ত্রণে থাকা আল-আকসা মসজিদ ফিলিস্তিনিদের দ্বারা দখলে নেওয়া এবং গত মে মাসে ৫৬ বছর পর আল আকসার একটি গেইটের চাবি সাবেক এক ইহুদি সেনার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে সাম্প্রতিক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

ইসরায়েলে তালেবানের সৈন্য পাঠানো সংক্রান্ত ভুয়া দাবি ইন্টারনেটে  

সম্প্রতি, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে ইসরায়েলে সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।  

সৈন্য পাঠানো

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পোস্ট দেখুন ফেস দ্য পিপল। 

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আফগানিস্তান ইসরায়েলে সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত জানিয়ে তালেবান কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি বরং ভুয়া একটি ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে উক্ত তথ্যটি ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টিকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে তালেবান। 

ফেক ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্ট দাবিটির উৎস?

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ০৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উক্ত বিষয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইসরাইলকৃত অবরুদ্ধ পবিত্র জেরুজালেম শহরকে দখলমুক্ত করতে ইসরায়েলে সৈন্য পাঠাতে চায় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান। এ জন্য ইরান, ইরাক ও জর্ডানের কাছে অনুমতি চেয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস শনিবার (৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

তবে ইনকিলাব জানিয়েছে, তালেবান আসলেই এই তিন দেশের কাছে সৈন্য পাঠানোর জন্য তাদের ভূখণ্ড ব্যবহারের কোনও অনুরোধ জানিয়েছে কি না সেটির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

Screenshot: Inqilab 

এই প্রতিবেদনের সূত্রে পরবর্তীতে এক্সপ্রেস এর ওয়েবসাইটে আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনেও ইনকিলাবের তথ্যগুলোই পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ, এক্সপ্রেস নিশ্চিত হতে পারেনি এ বিষয়ে। 

Screenshot: Express

এই বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যমে সংবাদ না পেয়ে আফগানিস্তান বা তালেবান সূত্র খোঁজ করতে গিয়ে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) ‘Taliban Public Relations Department, Commentary’ নামক একটি ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে গত ০৭ অক্টোবর প্রকাশিত একটি টুইটে কিছু তথ্য দেখতে পেয়েছি আমরা। 

টুইটে দাবি করা হয়, সেদিন সন্ধ্যায় (০৭ অক্টোবর) পররাষ্ট্র দপ্তর ইরান, ইরাক এবং জর্ডানে তার সমকক্ষদের সাথে যোগাযোগ করেছে, তাদের পুরুষদের পবিত্র ভূমিতে যাওয়ার পথে তাদের সার্বভৌম ভূখণ্ড অতিক্রম করার অনুমতি চেয়েছে। 

টুইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, তালেবান তাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সুসংবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আশা করছে তারা সেই সুসংবাদ পাবে।

Screenshot: X

পরদিন, অর্থাৎ ০৮ অক্টোবর সকালে একই অ্যাকাউন্ট থেকে করা আরেক টুইটে দাবি করা হয়, ইরানের সাথে তালেবান একটি ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। তবে তালেবানের প্রস্তাবে ইরাক সাড়া দেয়নি, এবং জর্ডান তালেবানদের তাদের দেশে প্রবেশে বাধা দেয় বলে দাবি করা হয় একই টুইটে। 

Screenshot: X

রিউমর স্ক্যানার টিম বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধান করতে গিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম Forbes এর ওয়েবসাইটে গত ০৭ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানতে পারে, আলোচিত এক্স অ্যাকাউন্টটি তালেবান কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা হয় শীর্ষক কোনো প্রমাণ মেলেনি। 

Screenshot: Forbes

একইদিন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম WIO News এর ব্যুরো চিফ আনাস মল্লিক টুইট করে জানান, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

Screenshot: X

পরবর্তীতে গত ০৯ অক্টোবর রিউমর স্ক্যানার টিমের নজরে আসে, আলোচিত এক্স অ্যাকাউন্টটির নাম বদলে #FreePalestine রাখা হয়েছে। তখনও অ্যাকাউন্টের নামের পাশে ভেরিফাইডের ব্লু টিক দেখা যাচ্ছিল। সেসময় এ বিষয়টি জানিয়ে একটি টুইটও করা হয় অ্যাকাউন্টটি থেকে। 

Screenshot: X

তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় অ্যাকাউন্টটি পূর্বের নামেই (Taliban Public Relations Department, Commentary) ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন আর অ্যাকাউন্টটিতে ভেরিফাইড ব্লু টিক দেখা যাচ্ছে না৷ 

রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, আলোচিত এক্স অ্যাকাউন্টটির সাথে তালেবান সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই। অ্যাকাউন্টটি ফেক ভেরিফাইড হয়ে পরিচালিত হচ্ছিল।

তালেবান সরকারের অবস্থান কী? 

আলোচিত এক্স অ্যাকাউন্টটির টুইটটির বিষয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম Voice of America এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক  প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, তালেবানের কাতারের দোহায় অবস্থিত রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান মোহাম্মদ সুহাইল শাহিন সাংবাদিকদের বলেছেন, আলোচিত তথ্যটি সত্য নয়। 

ভয়েস অফ আমেরিকা এ বিষয়ে জানতে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের সাথে কথা বলেছে। তিনি জানিয়েছেন, তালেবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এটাই তালেবানের অবস্থান।  

Screenshot: VoA

আলোচিত বিবৃতিটি গত ০৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র  মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, গাজা উপত্যকায় চলমান ঘটনার প্রতি কড়া নজর রেখেছে আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাত । এ ধরনের ঘটনার কারণ হচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরায়েলিদের দ্বারা নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার লঙ্ঘন এবং পবিত্র স্থানগুলোর ঘন ঘন অবমাননা, যা অমর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। ইসলামী আমিরাত ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা এবং তাদের আশ্রয়স্থলের প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধকে তাদের বৈধ অধিকার বলে মনে করে। আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাত ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক ভূমিতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ, ঐতিহাসিক ও আইনি অধিকারের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে। আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাত ইসলামী দেশসমূহ, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশেষ করে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারকারী দেশসমূহকে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। সমাধানের জন্য  হস্তক্ষেপ প্রয়োজন যাতে ফিলিস্তিনিরা তাদের ন্যায্য অধিকার পায়।

Screenshot: Ministry of Foreign Affairs of Afghanistan

তবে এই বিবৃতি এবং পরবর্তীতে প্রকাশিত অন্যান্য বিবৃতিতেও ‘ইসরায়েলে সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত আফগানিস্তান’ শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মূলত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুর মধ্যেই ইসরায়েলে সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়৷ তালেবান এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, একটি ভুয়া ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তালেবানের পক্ষ থেকে এমন তথ্যকে ভুয়া বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।   

প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সুতরাং, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে ইসরায়েলে সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।  

তথ্যসূত্র

প্রথম আলো’র নকল ফটোকার্ডে ইন্টারনেটে ছড়ানো হলো জাতিগত বিদ্বেষ 

0

সম্প্রতি, ‘চাকমা ছেলে ফেসবুকে কোরিয়ান সেজে বাঙালি বিটিএস ফ্যান মেয়ের সাথে প্রেম। দেখা করতে ডেকে নিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য প্রথম আলোর ফটোকার্ডের ডিজাইনের আদলে তৈরি একটি ছবির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

জাতিগত বিদ্বেষ 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে আর্কাইভ), এখানে আর্কাইভ এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোরিয়ান সেজে চাকমা ছেলের বিটিএস ভক্ত বাঙালি মেয়ের সাথে প্রেম এবং স্বর্ণালংকার ছিনতাই দাবি করে প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথম আলো’র বিনোদন শাখার ফটোকার্ড বিকৃত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।  প্রথম আলো’র লোগো সম্বলিত এই ফটোকার্ডে সংবাদটিকে বিনোদন শাখার বলে উল্লেখ করা হয়। এবং প্রচারের তারিখ হিসেবে গত ১১ অক্টোবরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

Screenshot: Facebook Claim Post

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগো ও তারিখের সূত্র ধরে প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ১১ অক্টোবর গণমাধ্যমটির বিনোদন শাখা হতে এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়েছে কিনা তা খুঁজে দেখি আমরা। অনুসন্ধানে একই দিনে প্রথম আলো’র বিনোদন শাখা থেকে প্রকাশিত ৫ টি (,, ,, ) ফটোকার্ড পাওয়া গেলেও উক্ত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে শিরোনামের টেক্সট ফন্ট ডিজাইন ব্যতীত আলোচিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথে প্রথম আলো’র বিনোদন শাখা থেকে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলোর ডিজাইনের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Photocard Comparison by Rumor Scanner

তাছাড়া, উক্ত ফটোকার্ডে ‘স্বর্ণালঙ্কার’ শব্দটিও ভুল বানানে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির উৎস সন্ধানে

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Jui Ful’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ০৭ অক্টোবর প্রকাশিত এক পোস্টে (আর্কাইভ) আলোচিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিটি সহ আলোচিত তরুণ-তরুণীর আরও কয়েকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

পোস্টকারীর জুই ফুলের(কথিত) ভাষ্যমতে, ছবির ছেলেটির নাম জুন এবং তিনি একজন বিদেশি। বিদেশি ছেলে জুনের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে, তবে এই পোস্ট থেকে ছবির মেয়ে ও ছেলেটির বিস্তারিত পরিচয় বা জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে একই আইডি একই বিষয় নিয়ে করা আরেক পোস্টের কমেন্টে কথিত জুনের(তরুণীর) পরিচয় সম্পর্কে পোস্টকারীর একটি মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে পোস্টকারী জানান, কথিত জুন নামের ছবির সেই তরুণ চাকমা নন।

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে, ছবির তরুণ-তরুণীর পরিচয় জানতে পোস্টকারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অর্থাৎ, ছবির তরুণ-তরুণীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া না গেলেও উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। 

মূলত, গত ০৭ অক্টোবর ‘Jui Ful’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রেমের সম্পর্কের বর্ণনা দিয়ে এক তরুণের সাথে তার(পোস্টকারীর) ছবি দাবি করে একাধিক ছবি প্রচার হয়। পরবর্তীতে সেই পোস্ট থেকে একটি ছবি সংগ্রহ করে তা যুক্ত করে ‘চাকমা ছেলে ফেসবুকে কোরিয়ান সেজে বাঙালি বিটিএস ফ্যান মেয়ের সাথে প্রেম। দেখা করতে ডেকে নিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে ছবির তরুণ-তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটা নিশ্চিত যে প্রথম আলো এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত তরুণ-তরুণীর ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথম আলো’র বিনোদন শাখার ফটোকার্ড ফর্মেটে বসিয়ে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত আট মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে অপপ্রচারের বিষয়ে গত ০৫ সেপ্টেম্বর বিস্তারিত ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, প্রথম আলো’র ফটোকার্ড দাবি করে ‘চাকমা ছেলে ফেসবুকে কোরিয়ান সেজে বাঙালি বিটিএস ফ্যান মেয়ের সাথে প্রেম। দেখা করতে ডেকে নিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই’ শীর্ষক শিরোনামে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক অনুদান ঘোষণার দাবিটি মিথ্যা 

0

সম্প্রতি, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮ বিলিয়ন ডলারের মিলিটারি এইড ঘোষণা করেছে।’ শীর্ষক দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত নির্দেশনার তথ্য সম্বলিত একটি স্ক্রিনশট  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

৮ বিলিয়ন ডলার

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়া, জো বাইডেনের কথিত নির্দেশনার তথ্য সম্বলিত স্ক্রিনশট ব্যতীত একই দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন; এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), , এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ইসরায়েলের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোনো সামরিক অনুদান ঘোষণা করেননি বরং গত ২৫ জুলাই  ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান প্রদানের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মেমোরেন্ডামকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।  

ইসরায়েলকে মার্কিন প্রশাসনের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়ার দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট এবং মূলধারার আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংবাদমাধ্যমে উক্ত দাবির স্বপক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে গত ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইউক্রেনকে অনুদান প্রদান সম্পর্কিত একটি মেমোরেন্ডাম খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত মেমোরেন্ডামটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত তথ্য সম্বলিত স্ক্রিনশটে থাকা দেশের নাম এবং অনুদানের পরিমাণ ব্যতীত বাকি সকল তথ্যের সাথে এই মেমোরেন্ডামটির হুবহু মিল রয়েছে।

Screenshot Comparison by Rumor Scanner

এছাড়া, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম AP এর ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন সাভেটের বরাতে বলা হয়, প্রচারিত মেমোটি নকল বা জাল। 

তবে, সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে ফোনে কথা বলেছেন। ফোনালাপকালে ইসরায়েলে হামাসের হামলার ঘটনায় বাইডেন নিন্দা জানানোর পাশাপাশি চলমান সংঘাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তার আশ্বাস দেন জো বাইডেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চলমান সংঘাত শুরুর পর এই প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানের প্রস্তুতির জন্য দুইটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মূলত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। হামলার পর গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর সাথে ফোনে কথা বলে এই হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে ৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন শীর্ষক দাবিতে বাইডেনের কথিত নির্দেশনার তথ্য সম্বলিত একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের জন্য কোনো অনুদানের ঘোষণা দেননি। প্রকৃতপক্ষে গত ২৫ জুলাই ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদানের বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনুমোদন প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মেমোরেন্ডামকে বিকৃত করে তৈরি স্ক্রিনশটের মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে ৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র