Home Blog Page 575

ছবিটি হযরত মুহাম্মাদ সা. পায়ের ছাপের নয়

0

সম্প্রতি ‘প্রিয় নবীজির পায়ের চাপ’ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর পায়ের ছাপের নয় বরং এটি ইরাকের প্রাচীন শহর উর থেকে সংগৃহীত মানুষের পায়ের ছাপ সম্বলিত একটি ইটের ছবি, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার প্যান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Alain Truong নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল ‘Penn Museum opens new Middle  East Galleries‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Alain Truong

ছবিটির বিস্তারিত বিবরণীতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার প্যান মিউজিয়ামের সৌজন্যে বলা হয়, ইরাকের উর-নাম্মুর মানুষের পায়ের ছাপ সম্বলিত একটি ইট। 

পরবর্তীতে ছবিটির বিস্তারিত বিবরণীর সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার প্যান মিউজিয়ামের ওয়েবসাইটে ‘BRICK‘ শীর্ষক শিরোনামে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Penn Museum

মিউজিয়ামের ওয়েবসাইটটিতে প্রদত্ত ছবিটির বিস্তারিত তথ্য থেকে জানা যায়, মিউজিয়ামে ইটটির নাম্বার B16460। এটিকে বর্তমানে মিউজিয়ামের মিডল ইস্ট গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হচ্ছে। 

Screenshot: Penn Museum

ছবিটির বিস্তারিত তথ্য থেকে আরও জানা যায়, কাদামাটি নির্মিত এই ইটটি সংগ্রহ করা হয়েছিল ইরাকের উর শহর থেকে,  ইটটির নির্মাণকাল খ্রীস্টপূর্ব ২১০০-২০০০ সাল। 

আলোচিত ছবিটি ছাড়াও মিউজিয়ামটির ওয়েবসাইটে এটির আরও একাধিক ছবিও প্রকাশ করা হয়।

Screenshot: Penn Museum

অপরদিকে ওয়েবসাইটে প্রদত্ত ছবিটির বিস্তারিত বিবরণীর সাথে এটির হযরত মুহাম্মাদ সা. এর পায়ের ছাপ হওয়ার ব্যাপারে অনুসন্ধানে কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর পায়ের ছাপ দাবিতে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর পায়ের ছাপের ছবি নয় এবং এর সঙ্গ সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততাও নেই। এটি মূলত ইরাকের প্রাচীন শহর উর থেকে সংগৃহীত খ্রীস্টপূর্ব ২১০০-২০০০ সালে কাদামাটি নির্মিত একটি ইটে পায়ের ছাপ। 

সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার প্যান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত পায়ের ছাপযুক্ত কাটামাটি দিয়ে নির্মিত ইটের একটি ছবিকে হযরত মুহাম্মাদ সা. এর পায়ের ছাপ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে  প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেই প্রথম নয়, এর আগেও দেশে ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্মেছে

সম্প্রতি, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের বরাতে’দেশে প্রথমবার জন্ম নিলো ম্যাকাও পাখির বাচ্চা’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন প্রতিবেদন দেখুন আরটিভি, প্রথম আলো, জাগো নিউজ২৪, বিডিনিউজ২৪, দেশ রূপান্তর, আমাদের সময়.কম, আজকের পত্রিকা, ডিবিসি নিউজ, ঢাকা পোস্ট, ঢাকা ট্রিবিউন, যুগান্তর, ডেইলি বাংলাদেশ, ভোরের কাগজ, দৈনিক আমাদের সময়.কম, মানবকন্ঠ, অধিকার বিডি, রাইজিং বিডি, অপারেজয় বাংলা, প্রতিদিনের সংবাদ, বাংলাদেশ বুলেটিন, আপন দেশ, কুমিল্লার কাগজ

গণমাধ্যমের ফেসবুক পেইজে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

Image Collage: Rumor Scanner

গণমাধ্যমের প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন ভোরের কাগজ, দৈনিক আমাদের সময়, যুগান্তর। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের বরাতে দেশে প্রথমবারের মতো ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্মের দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অন্তত ২০১১ সালেই বাংলাদেশে ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্ম নেওয়ার তথ্য খোদ গণমাধ্যম সূত্রেই পাওয়া যায়। 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইংরেজি দৈনিক Daily Star এ ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘Macaws breed in captivity‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Daily Star 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঢাকার একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় দুটি ডিম ফুটে ম্যাকাওয়ের বাচ্চা জন্মেছে। যা সেই সময়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ম্যাকাওয়ের প্রজননের ঘটনা। 

Screenshot: Daily Star

এছাড়া প্রতিবেদনটি থেকে ম্যাকাওয়ের বাচ্চা দুইটির ছবিও পাওয়া যায়। পাশাপাশি প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, উপমহাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু ম্যাকাওয়ের প্রজননের জন্য আদর্শ নয়, বিশেষ করে আবদ্ধ পরিবেশে। তবে সেই সময়ে নারী ম্যাকাওটি এপ্রিল, জুন এবং আগস্ট মাসে ডিম দেয়৷ এর মধ্যে প্রথম চারটি ডিম থেকে বাচ্চা না ফুটলেও তৃতীয়বার দেওয়া ডিম থেকে দুইটি ডিম ফুটে বাচ্চা জন্ম নেয়।

Screenshot: Daily Star

পরবর্তীতে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ এ ২০১১ সালের পহেলা অক্টোবর ‘ম্যাকাও ছানাটি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছে‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Bangla News24

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রাজধানীর হাতিরপুলে নিজ বাড়িতে মাঝারি আকারের একটি পাখির চিড়িয়াখানা পরিচালনা করেন পাখি-প্রজনন বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল ওয়াদুদ৷ তার এই চিড়িয়াখানাতেই বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো জন্ম নেয় ম্যাকাও পাখির দুইটি ছানা। পরবর্তীতে এদের মধ্যে একটি ছানা অসুস্থ হয়ে পড়লে  শিশুপাখিটিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট প্লিজেন্ট পশু হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এছাড়া জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠে ২০১৫ সালের ১৩ মে ‘সাত বাচ্চার মা সেই প্রিন্সেস‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Kaler Kantho

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পাখি-প্রজনন বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল ওয়াদুদের কাছে থাকা প্রিন্সেস নামের ম্যাকাও পাখিটি ২০১১ সালে প্রথম ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চাও হয়। পরবর্তীতে এই পাখিটিই ২০১৫ সালে আরও সাতটি বাচ্চার জন্ম দেয়।

Screenshot: Kaler Kantho

তবে শুধু আব্দুল ওয়াদুদের কাছেই নয় গণমাধ্যম সূত্রে আরও বেশ কয়েকজন পাখি পালকের কাছে বাংলাদেশে ম্যাকাওয়ের বাচ্চা জন্ম নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

যেমন, ২০১৮ সালের ১২ মে জাতীয় দৈনিক সমকালে ‘ম্যাকাও প্রেমিক রনি‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Samakal

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিলেটের শ্রীমঙ্গলের রনি রাজ আহমেদ ম্যাকাও পাখি পোষেন। সেই সময়ে রনি রাজ আহমেদের পক্ষীশালায় ১১টি পূর্ণবয়স্ক ম্যাকাও পাখি ছিল। তিনি কলোনি করে পাখি পোষেন। তার পাখির কলোনিতে নয়টি বাচ্চা দেয় তিন জোড়া ম্যাকাও।

Screenshot: Samakal

উল্লেখ্য, কলোনি হলো অনেক বড় জায়গায় পাখি ছেড়ে পালন করা। প্রায় মুক্ত পরিবেশে পাখি খেলাধুলা করে। সঙ্গী বেছে নেয়। কলোনি পদ্ধতিতে বাংলাদেশে রনি রাজ প্রথম ম্যাকাও-এর বাচ্চা ফোটাতে পেরেছেন। তার আগে ড. ওয়াদুদ, শহীদুল ইসলাম পিন্টু ম্যাকাও-এর বাচ্চা উৎপাদনে সফল হন। যদিও তা কলোনি পদ্ধতিতে ছিল না।

Screenshot: Samakal

পরবর্তীতে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রাণী কল্যাণ ও সাপ বিষয়ক সচেতনতা নিয়ে কাজ করা অলাভজনক উদ্যোগ Deep Ecology and Snake Conservation Foundation এর ফেসবুক গ্রুপের একটি পোস্টে আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্মের ইনচার্জ ও  গ্রুপটির এডমিন আদনান আজাদের একটি কমেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি লিখেন, ‘২০০৯ সালে আমিই বাংলাদেশে প্রথম ম্যাকাও সফল ব্রিডিং শুরু করি। এরপর বাংলাদেশে আরো অনেকেই ম্যাকাও ব্রিডিং করেছে। ২০০৯ সালে ব্রিডিং করলেও ২০১১তে ফেসবুক প্রথম ভিডিও পোস্ট আপশন চালু করলে আমি সেই ভিডিও পোস্ট দেই যা আমার ফেসবুকে আজও আছে।’ 

Screenshot: Adnan Azad Facebook Comment

তিনি তার এই কমেন্টে ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট ফেসবুকে ‘বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া প্রথম ম্যাকাউ ছানা‘ শীর্ষক তার ধারণকৃত একটি ভিডিও দৃশ্যও সংযুক্ত করেন। 

Screenshot: Adnan Azad Facebook Post 

রিউমর স্ক্যানার টিমের এই পর্যন্ত অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, দেশে এবারেই প্রথম নয়, ইতোপূর্বেও দেশে ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্মের ঘটনা ঘটেছে।

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে। 

তিনি এ প্রসঙ্গে রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা বা অন্য কোথাও ব্যক্তিগতভাবে কেউ ম্যাকাওয়ের বাচ্চা জন্ম দিয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই। তবে কেউ চাইলে করতেও পারে। কিন্তু সরকারিভাবে অর্থাৎ আমাদের কোনো সাফারিপার্ক বা চিড়িয়াখানায় এর আগে হয় নাই, এটাই প্রথম।’

অর্থাৎ, দেশে এর আগেও ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় ম্যাকাও পাখি জন্ম নিলেও সরকারিভাবে অর্থাৎ দেশের কোনো সাফারিপার্ক বা চিড়িয়াখানায় এবারই প্রথম ম্যাকাও পাখির বাচ্চার জন্মের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পার্ক কর্তৃপক্ষের বরাতে গণমাধ্যমে এই তথ্যটিকেই দেশে প্রথমবারের মতো ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্ম নেওয়ার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ পূর্বে গণমাধ্যমের বরাতেই দেশে একাধিকবার ম্যাকাও পাখি জন্ম নেওয়ার সংবাদ জানা যায়।

মূলত, সম্প্রতি গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্মের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পরবর্তীতে দেশীয় একাধিক গণমাধ্যম সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের বরাতে প্রচার করে যে, এটিই দেশে প্রথমবারের মতো ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্ম নেওয়ার ঘটনা। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্মানোর ঘটনাটি প্রথমবারের মতো দেশে ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্ম নেওয়ার ঘটনা নয়। প্রকৃতপক্ষে, খোদ গণমাধ্যম সূত্রেই ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্মানোর তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া অনুসন্ধানে ব্যক্তি উদ্যোগে ২০০৯ সালেও দেশে ম্যাকাও পাখির প্রজননের তথ্য পাওয়া যায়। 

সুতরাং, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের বরাতে সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্ম নেওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

মাটির ৭.৫ মাইল নিচে মানুষের চিৎকারের শব্দ শুনতে পাওয়ার সংবাদটি মিথ্যা

সম্প্রতি, দেশীয় সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪ এবং মাইটিভি এর ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সাইবেরিয়া অঞ্চলের কোলা ব-দ্বীপে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্ত বা কূপের ভেতর থেকে মানুষের চিৎকার শোনা গেছে।

চ্যানেল২৪ এর ভিডিওতে যা দাবি করা হয়েছে

১ম দাবি – সোভিয়েত ইউনিয়নের খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্তটির নিচের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮১৫ সেন্টিগ্রেডেরও বেশি।

২য় দাবি – ১৯৯২ সালে রাশিয়া যখন খননকার্য বন্ধ করে দেয়, তখন খনন বন্ধ করার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল যে, এর চেয়ে বেশি খনন করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে। 

৩য় দাবি – পৃথিবীর গভীরতম সেই গর্তের ভেতরে মাইক্রোফোনের সাহায্যে মানুষের চিৎকারের শব্দ রেকর্ড করা হয়েছিল। উক্ত রেকর্ড দাবিতে একটি অডিও ক্লিপও সংযুক্ত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। দাবি করা হয়েছে, প্রকল্প প্রধান ডেভিড গুবারম্যান এ বিষয়ে কোনো কারণ দেখাতে পারেননি। 

একই দাবি করা হয়েছে মাইটিভির প্রতিবেদনেও। 

প্রতিবেদনগুলো দেখুন মাইটিভি (আর্কাইভ) এবং চ্যানেল২৪ (আর্কাইভ)।

একই ভিডিও গণমাধ্যমগুলোর ইউটিউব চ্যানেলে দেখুন চ্যানেল২৪ (আর্কাইভ) এবং মাইটিভি (আর্কাইভ)। 

সেইসাথে চ্যানেল২৪ এ প্রচারিত ভিডিও ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একই দাবিতে বেশকিছু পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে 

(আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোলা ব-দ্বীপে সোভিয়েত ইউনিয়নের খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্ত বা কূপের ভেতর থেকে মানুষের আর্তচিৎকার শুনতে পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং ফান্ডিং এবং প্রযুক্তিগত নানা কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই প্রজেক্ট ঘিরে আলোচিত দাবিটি প্রজেক্ট চলাকালীন সময়েই ফিনিশ একটি সংবাদপত্রের এপ্রিল ফুল বিষয়ক সংবাদ (যা কিনা একটি পাঠক কলামের গল্প থেকে নেওয়া) থেকে পরবর্তীতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেন প্রজেক্ট প্রধান।

১ম দাবির সত্যতা যাচাই

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট IFL SCIENCE এর ওয়েবসাইটে গত ২২ মার্চ প্রকাশিত “The Deepest Hole Ever Dug By Humans Had To Be Destroyed” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোলা ব-দ্বীপের খনন করা গর্তের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮০°সেলসিয়াস বা ৩৫৬° ফারেনহাইট।

Source: IFL Science

একই তথ্য এসেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম New York Post এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও।

Source: The New York Post

পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট Scientific American এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় যে, উক্ত গর্তের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮০°সেলসিয়াস বা ৩৫৬° ফারেনহাইট।

Source: Scientific American

অর্থাৎ, সাইবেরিয়া অঞ্চলে খননকৃত উক্ত গর্তের তাপমাত্রা ৮০০° সেলসিয়াসের বেশি রেকর্ড করা হয়েছিল দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।

২য় দাবির সত্যতা যাচাই

১৯৯২ সালে খনন বন্ধ করার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে New York Post এর একই প্রতিবেদনে উল্লেখ পাওয়া যায়, বিজ্ঞানীরা খননকাজে যে তাপমাত্রা প্রত্যাশা করেছিলেন তার থেকে বেশি তাপমাত্রার কারণে ভূগর্ভস্থ খননকাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। 

Source: The New York Post 

এছাড়াও, IFL Science এর দেওয়া তথ্যমতে, তাপমাত্রার সমস্যার পাশাপাশি, সদ্য বিলুপ্ত হওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনীতি এবং ফান্ডের অপ্রতুলতাও প্রজেক্টটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী ছিল।

Source: IFL Science

পাশাপাশি, মার্কিন সাময়িকী Smithsonian এর ওয়েবসাইটে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক প্রথিতযশা সাংবাদিক এলিসিয়া অল্ট এর লেখা “Ask Smithsonian: What’s the Deepest Hole Ever Dug?” শীর্ষক শিরোনামের নিবন্ধ থেকেও জানা যায় খননকাজ বন্ধ হওয়ার পেছনে কারণ ছিল উচ্চ তাপমাত্রায় খননে সক্ষম যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা।

Source: Smithsonian

পরবর্তীতে আলোচিত প্রজেক্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও জানা যায়, কোলার কূপটিসহ এই ধরনের আরও দুইটি কূপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দুর্ঘটনা এবং কারিগরি কারণে। 

Statement source: http://superdeep.pechenga.ru/

অর্থাৎ, “১৯৯২ সালে প্রজেক্ট বন্ধের কারণ ছিল এর থেকে বেশি খনন করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে” শীর্ষক দাবিটিও সঠিক নয়৷ 

৩য় দাবির সত্যতা যাচাই

পৃথিবীর গভীরতম সেই গর্তের ভেতরে মাইক্রোফোনের সাহায্যে মানুষের চিৎকারের শব্দ রেকর্ড করা হয়েছিল কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট Skeptoid এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল প্রকাশিত  এক প্রতিবেদনে বলা হয়, Christianity Today রেডিওর হোস্ট রিচ বুহলার এর দীর্ঘ অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে জানানো হয়, উক্ত অডিও ক্লিপটি কোনোরকম যাচাই ছাড়াই খননকার্যের সাথে জুড়ে দিয়ে বহু বছর ধরে প্রচার হয়ে আসছে।

Source: Skeptoid

এছাড়াও, আলোচ্য অডিও ক্লিপটির ব্যাপারে অনুসন্ধানে ২০১০ সালের ২৫ মে ইউটিউবে আপলোডকৃত “Sounds of Hell Debunked” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে জানা যায়, আলোচ্য অডিও ক্লিপটি ১৯৭২ সালে নির্মিত Baron Blood সিনেমার অডিও ক্লিপের ল্যুপ ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

Source: Youtube 

পরবর্তীতে অধিকতর অনুসন্ধানে প্রজেক্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের press সেকশনে ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়। 

প্রজেক্টের স্থায়ী ডিরেক্টর ডেভিড গুবারম্যান জানান, “কিছু পাবলিকেশনে এই ধরণের সংবাদ পুরোপুরি বিস্মিত করেছিল আমাকে। আমরা কাজ করছিলাম, হঠাত করে আঞ্চলিক সংবাদপত্রগুলো এবং পার্টি কমিটির সচিবরা ফোন কলের ঝড় বইয়ে দিলো যেন, জিজ্ঞেস করলো ড্রিলিং কেমন চলছে, কোনো আকর্ষণীয় খবর আছে কিনা। আমি উত্তর দিলাম, না, আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যেই ১২ কিলোমিটার ড্রিল করেছি। এটা জানার পর তারা ফোন রেখে দিলো। এর মিনিট বিশেক পর আবার ফোন এলো। আমি নিজেই এবার জানতে চাইলাম, সবাই হঠাত করে আমাদের বিষয়ে এভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কেন? ফোন কলদাতা জানালেন, সকল পত্রিকায় নাকি এসেছে, আমরা জাহান্নামের অস্তিত্ব পেয়েছি যেখানে শয়তান রয়েছে।”

ডেভিড গুবারম্যান বলছিলেন, “আমরা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানতে পারি, এই তথ্যটি ফিনিশ একটি তরুণ ঘরানার সংবাদপত্রে পহেলা এপ্রিল এপ্রিল ফুলের (april fool) দিন প্রকাশিত হয়েছিল। সেখান থেকে ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশ থেকে সারাবিশ্বেই এটি ছড়িয়ে পড়েছিল।”

Statement source: http://superdeep.pechenga.ru/

ডেভিড গুবারম্যান পরিস্কার করেছেন, “আমি দায়িত্ব নিয়েই এটা বলছি যে, প্রজেক্টে কোনো সংবদেনশীল ঘটনাই ঘটেনি এবং আমরা শয়তান বা কারো শব্দই শুনিনি। এসব বিষয়ে যা ছড়িয়েছে তার কোনো সত্যতা নেই।”

ডেভিড গুবারম্যানের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে রিউমর স্ক্যানার টিম আলোচিত কথিত ঘটনাটির আদ্যেপান্ত জানার চেষ্টা করেছে। 

কোলা সুপারডিপ বোরহোল প্রকল্পের অধীনে খননকৃত পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর গর্তে নরকের আর্তনাদ শুনতে পাওয়ার উক্ত গল্পটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯৮৯ সালে। ট্রিনিটি ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্ক নামের একটি খ্রিস্টান নেটওয়ার্ক তাদের টিভি শো এবং নিউজলেটারে সর্বপ্রথম এই গল্পটি ফিচার করে। এরপর আরো কিছু খ্রিস্টান ট্যাবলয়েড বিষয়টিকে যাচাই ছাড়াই প্রচার করে। 

Christianity Today এর রেডিও হোস্ট রিচ বুহলার বিষয়টির সত্যতা নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করেন। দীর্ঘ সেই অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ট্রিনিটি ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্ক উক্ত গল্পটির সোর্স হিসেবে ফিনিশ জার্নাল Ammennusastia এর নাম উল্লেখ করে। লক্ষ্যণীয় যে, ডেভিড গুবারম্যানও ফিনিশ একটি নিউজপেপারের বিষয়েই উল্লেখ করেছিলেন। 

পরবর্তীতে জানা যায়, Ammennusastia প্রকৃতপক্ষে কোনো জার্নাল নয় বরং একটি লুথেরান ম্যাগাজিন মাত্র। পরবর্তীতে, Ammennusastia কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন বুহলার। 

Ammennusastia কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, গল্পটি তাদের ম্যাগাজিনে লিখেছিলেন একজন স্টাফ রিপোর্টার, যিনি অপর একটি ফিনিশ দৈনিক পত্রিকা Etelä-Suomen Sanomat এর একটি আর্টিকেল পড়ে উক্ত গল্পটি লিখেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি পত্রিকার যে অংশ থেকে গল্পটি সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন সেটি ছিল পত্রিকার পাঠক কলাম। সেখানে পত্রিকার পাঠক যেকোনো গল্প পাঠাতে পারতেন এবং সেগুলো সেই পত্রিকায় ছাপা হতো। এভাবেই, কোনো যাচাই বাছাই ছাড়াই গল্পটি বিভিন্ন মাধ্যম ঘুরে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। 

আর প্রত্যেকবার মুখ বদলের সময় গল্পের বদলে যাওয়ার নিয়ম মেনে গল্পটি একেক স্থানে একেকভাবে প্রচার পেতে থাকে। এমনকি, ১৯৯২ সালে আলাস্কায় একটি তেলের খনিতে খননকৃত গর্ত দিয়ে শয়তান উঠে এসে ১৩ জন খনি শ্রমিককে মেরে ফেলা শীর্ষক এই গল্পের ভিন্ন একটি সংস্করণও লোকমুখে শুনতে পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং তার বরাতে পাওয়া তথ্য প্রমাণ থেকেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, কোলা ব-দ্বীপের গভীরতম গর্ত বা কূপের ভেতর থেকে মানুষের চিৎকার শোনার বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা।  

কেন কোলা সুপারডিপ বোরহোল প্রকল্প?

স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বৈরথ পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে চলে গিয়েছিল মহাকাশ পর্যন্ত। স্নায়ুযুদ্ধের ফলেই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের অবতরণ করার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল দুই পক্ষ। শুধু মহাকাশই নয়, দুই পক্ষের এই প্রতিযোগিতা চলেছিল ভূপৃষ্ঠের নিচেও। সবচেয়ে গভীর মানবসৃষ্ট সুড়ঙ্গ খোঁড়ার এই দৌড়ে অবশ্য এগিয়ে ছিল মার্কিনিরাই। ১৯৬৬ সালে প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার প্রজেক্ট হাতে নেয় মার্কিনিরা। এ প্রজেক্টের নাম দেওয়া হয় Project Mohole। 

খুব বেশি পিছিয়ে ছিল না সোভিয়েত ইউনিয়নও। মার্কিনীদের মাত্র চার বছর পরেই তারাও ভূগর্ভে সবচেয়ে গভীর গর্ত খোঁজার প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় Kola Superdeep Borehole Project। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন ছিল মার্কিনীদের পেছনে ফেলার সুযোগ অন্যদিকে তেমনি ছিল ভূগর্ভস্থ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অসীম সম্ভাবনা। সেই উদ্দেশ্যে বহুদূর এগিয়েও গিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। 

প্রায় ২০ বছরের প্রচেষ্টায় ৭.৫ মাইল বা প্রায় ১২.২ কিলোমিটার গভীর গর্ত খনন করতে সক্ষম হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সেই গভীরতায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৮০°সেলসিয়াস যা ছিল বিজ্ঞানীদের পূর্বে অনুমিত (১০০°সেলসিয়াস) তাপমাত্রার থেকে অনেক বেশি। এই বিপুল তাপের মধ্যে খননকার্য চালানোর মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় ১৯৯২ সালে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে, ২০০৫ সালে কোলা সুপারডিপ বোরহোল প্রকল্পটি তহবিলের অভাবে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

এখনও সাইবেরিয়া অঞ্চলে খননকৃত গর্তটি মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় গর্ত হিসেবে স্বীকৃত। সেইসাথে এই প্রকল্পে খননকৃত গর্তের মাটি থেকে অন্তত ২৪ টি নতুন প্রাগৈতিহাসিক এককোষী জীবের সন্ধান পায় তারা। এছাড়াও, ভূপৃষ্ঠের নিচের মাটির গঠন এবং গুণাগুণ সম্পর্কে তথ্য আবিষ্কার ছিল এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। 

মূলত, সোভিয়েত ইউনিয়নের খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্তের ভিতর থেকে  মানুষের চিৎকার শোনা গিয়েছে শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রকল্প প্রধান এবং তার বরাতে পাওয়া তথ্য প্রমাণ থেকেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, কোলা ব-দ্বীপের গভীরতম গর্ত বা কূপের ভেতর থেকে মানুষের চিৎকার শোনার বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা। প্রজেক্ট চলাকালীন সময়েই ফিনিশ সংবাদপত্রের এপ্রিল ফুলের একটি সংবাদ (যা কিনা একটি পাঠক কলামের গল্প থেকে নেওয়া) থেকে ভুয়া এই গল্পটি পরবর্তীতে সারাবিশ্বেই বিভিন্ন সংস্করণে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া, বিপদ হতে পারে এমন আশঙ্কায় প্রজেক্টটি বন্ধ হয়ে যায় শীর্ষক দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে, ১৯৯২ সালে উচ্চ তাপমাত্রায় খননে সক্ষম যন্ত্রপাতি ও তহবিলের অপ্রতুলতার কারণে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি খননকৃত গর্তটির তাপমাত্রা ৮০০° সেলসিয়াসের বেশি রেকর্ড করা হয়েছিল দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।

সুতরাং, সোভিয়েত ইউনিয়নের খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্তের ভেতরে নরকের আর্তনাদ শুনতে পাওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সৌদি আরবে ভারী বর্ষণের সংবাদে গণমাধ্যমে ভিন্ন ঘটনার ছবি প্রচার

সম্প্রতি, সৌদি আরবে ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দুইটি ছবি ব্যবহার সেগুলো সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ছবি বলে দাবি করা হয়েছে।

উক্ত ছবিগুলো ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন মানবকণ্ঠ, বাংলাভিশন। 

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সৌদি আরবে ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সাথে প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন দেশের বন্যার পুরোনো ছবিকে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ছবি যাচাই ১

Screenshot source: Manobkantha

সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে মানবকণ্ঠ

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Rueters এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৯ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সে সময়ের বন্যার ঘটনার এই ছবিটি তুলেছেন রয়টার্সের জন্য তুলেছিলেন Abdel Hadi Ramahi।

Screenshot source: Reuters

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার ঘটনার নয়।

ছবি যাচাই ২

সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে বাংলাভিশন। 

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, মেক্সিকোর রেডিও Punto y Aparte Radio আগস্ট ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের বন্যার ঘটনা বিষয়ক সংবাদটিতে প্রচারিত ছবিটির ক্যাপশনে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। 

Screenshot source: Punto y Aparte Radio

আরও অনুসন্ধান করে, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন মার্কেট ইন্টেলিজেন্স বিষয়ক ওয়েবসাইট FreightWaves এ একইদিন (২৩ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের বন্যার ঘটনা বিষয়ক সংবাদটিতে প্রচারিত ছবিটির ক্যাপশনে ছবিটি ডালাস থেকে তোলা বলে উল্লেখ করা হয়।  

Screenshot source: FreightWaves

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার ঘটনার নয়।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহিত বলে উল্লেখ করেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখে নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহিত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো সৌদি আরবের সাম্প্রতিক সময়ে ভারী বর্ষণের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।  

মূলত, সম্প্রতি সৌদি আরবে ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে ভিন্ন ভিন্ন দেশের পুরোনো ছবি ব্যবহার করে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো সৌদি আরবের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একাধিক ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সম্প্রতি সৌদি আরবে ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

এটি দশ বছর ধরে অক্ষত কোনো হাফেজের লাশ নয়

0

সম্প্রতি, ‘একজন হাফেজে কুরআনের লাশ দাফনের দশ বছর পরেও অক্ষত’ শীর্ষক শিরোনামে অলৌকিক ঘটনা দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি অলৌকিক কোনো ঘটনার নয় বরং এটি ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার ‘ইয়াসের বিন তামরিন’ নামের এক ব্যক্তির মৃতদেহ দাফনের পূর্বে ধারণ করা একটি ভিডিও।

মূলত, ২০১৭ সালে ইয়াসের বিন তামরিন নামে এক ব্যক্তি ইন্দোনেশিয়ার গুনুং সিন্দুর রুতানে দুই পুলিশ অফিসারকে গুলি করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দী ছিলেন। বন্দী অবস্থায় ২০১৮ সালে তার মৃত্যু হয়। দাফনের পূর্বে ঐ ব্যক্তির লাশের প্যাকেট খুলে মুখমন্ডল দেখানোর ভিডিওকেই সাম্প্রতিক সময়ে ‘একজন হাফেজের লাশ ১০ বছর পরেও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে’ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, একই ভিডিও একই দাবিতে গত বছরের (২০২২) শুরুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সে সময় বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

ইসলাম গ্রহণকারী আলফি বেস্ট জুনিয়র ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি নন

সম্প্রতি, আলফি জেনারে (প্রকৃত নাম আলফি বেস্ট জুনিয়র) ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং তিনি খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছেন শীর্ষক দুইটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলফি বেস্ট জুনিয়রের ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি সত্য হলেও তিনি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি নন বরং ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কোনো নির্ভরযোগ্য তালিকা না থাকলেও ইংল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন স্যার জিম র‍্যাটক্লিফ।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে আলফি বেস্টের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ০৭ মার্চ প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারের শর্ট ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তিনি তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

পুরো সাক্ষাৎকারটি দেখুন এখানে। 

Screenshot source: YouTube

অর্থাৎ, আলফি বেস্টের ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি সত্য।

আলফি বেস্ট ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কোনো নির্ভরযোগ্য তালিকা খুঁজে পায়নি। তবে ইংল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যের ধনী ব্যক্তিদের তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়।  

ব্রিটেনভিত্তিক পত্রিকা The Sunday Times এর ওয়েবসাইটে “Is the party over? The Rich List 2023 revealed” শীর্ষক শিরোনামে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের একটি তালিকায় দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের ধনীদের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে গোপি হিন্দুজা ফ্যামিলি। এই তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন স্যার জিম র‍্যাটক্লিফ। তবে, তালিকার শীর্ষস্থানে গোপি হিন্দুজা পরিবার অবস্থান করায় একক ব্যক্তি হিসেবে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন স্যার জিম র‍্যাটক্লিফ। 

Source: The Sunday Times

একই তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলফি বেস্ট ফ্যামিলি ব্রিটেনের শীর্ষ ধনীর তালিকার ২৩২ নম্বর অবস্থানে রয়েছে।

Source: The Sunday Times

আরও অনুসন্ধান করে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে গত ১৯ মে প্রকাশিত “Manchester United bidder Jim Ratcliffe up to second on UK rich list” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, ব্রিটেনের শীর্ষ ধনীর তালিকায় সবার উপরে আছে গোপি হিন্দুজা পরিবার। এর পরের অবস্থানে আছেন স্যার জিম র‍্যাটক্লিফ। তবে এখানেও একক ব্যক্তি হিসেবে তিনিই শীর্ষ অবস্থানে আছেন।

Source: The Guardian

অর্থাৎ, আলফি বেস্ট জুনিয়র ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী নয়। 

তবে, অনুসন্ধানে গত ০৯ মে ব্রিটেনের আরেক সংবাদমাধ্যম The Sun এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের জিপসি (রোমানি সাব গ্রুপ) ধনীদের তালিকায় প্রথম স্থানে আছে আলফি বেস্ট জুনিয়রের বাবা আলফি বেস্ট।

Screenshot source : The Sun

মূলত, আলফি জেনারে (প্রকৃত নাম আলফি বেস্ট জুনিয়র) ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং তিনি খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছেন শীর্ষক দুইটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, আলফি বেস্ট জুনিয়রের ইসলাম গ্রহণের দাবিটি সত্য হলেও তিনি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কোনো নির্ভরযোগ্য তালিকা খুঁজে পায়নি। তবে ইংল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় আলফি বেস্ট ফ্যামিলি ২৩২তম অবস্থানে রয়েছেন। তবে যুক্তরাজ্যের জিপসি (রোমানি সাব গ্রুপ) ধনীদের তালিকায় প্রথম স্থানে আছে আলফি বেস্ট জুনিয়রের বাবা আলফি বেস্ট। অর্থাৎ, আলফি বেস্ট জুনিয়র এককভাবে ধনীদের কোনো তালিকাতেই প্রথম অবস্থানে নেই। 

সুতরাং, আলফি বেস্ট জুনিয়র ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং তিনি খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছেন শীর্ষক দুইটি দাবি সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা আংশিক মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সৌদি আরবে রোনালদোর জন্য সোনার মোটরসাইকেল তৈরি হওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য সৌদি আরবে সাত কোটি টাকার সোনার মোটর সাইকেল তৈরি করা হয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এবং ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে প্রদর্শিত মোটরসাইকেলটি ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য তৈরি করা হয়নি বরং এই  মোটরসাইকেলটি সৌদি আরবের ফয়সাল আবু সারা নামের এক ব্যক্তির।

অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে মোটরসাইকেলের পাশে প্রদর্শিত একটি আরবি ভাষা সম্বলিত পতাকা দেখতে পাওয়া যায়। জানা যায়, এটি সৌদি আরবের জাতীয় পতাকা এবং এতে ইনস্টাগ্রামের লোগো সম্বলিত একটি নাম (faisal_abu_sara) প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে উক্ত নামের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে Faisal Abu Sara নামের ব্যক্তির ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে উক্ত মোটরসাইকেল একাধিক ছবি ও ভিডিও পাওয়া যায়।

Screenshot: Instagram

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, দাবিকৃত মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেটের সাথে ফয়সাল আবু সারাহ নামের ব্যক্তির ইন্সটাগ্রামে প্রদর্শিত একটি মোটরসাইকেল নম্বর প্লেটের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও Roya Sports নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর ফয়সাল আবু সারাহর একটি সাক্ষাতকারের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও রোনালদোর জন্য নির্মিত মোটরসাইকেল দাবিতে প্রচারিত মোটরসাইকেলটির অনুরূপ মোটরসাইকেল দেখতে পাওয়া যায়।

Screenshot: YouTube

অর্থাৎ উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, উক্ত মোটরসাইকেলটি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য তৈরি করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। 

তবে উক্ত মোটরসাইকেলটি আসলেই স্বর্নে মোড়ানো কিনা কিংবা বাইকটির সৌন্দর্য বর্ধনে কি ব্যবহৃত হয়েছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি।

পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে রোনালদোর জন্য কোথাও সোনার মোটরসাইকেল তৈরির কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য সাত কোটি টাকার সোনার একটি মোটর মোটরসাইকেল তৈরি করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মোটরসাইকেলটি রোনালদোর জন্য তৈরি করা নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাইকটির মালিক ফয়সাল আবু সারা নামের এক সৌদি নাগরিকের।

সুতরাং, ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য সৌদি আরবে সাত কোটি টাকার সোনার মোটরসাইকেল তৈরি করা হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

বিএনপি নেতা চাঁদের বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল তারিখ প্রচার

সম্প্রতি, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার ঘটনায় উক্ত বক্তব্য প্রদানের তারিখ হিসেবে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন দিনের কথা উল্লেখ করে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

Collage by Rumor Scanner
Collage by Rumor Scanner

২০ মে (শনিবার) উল্লেখ করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন সমকাল, ভোরের কাগজ, আজকালের খবর, সিলেট টুডে, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস

২১ মে (রবিবার) উল্লেখ করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন চ্যানেল আই অনলাইন

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর কথা ২০ মে বা ২১ মে বলেননি বরং গত ১৯ মে (শুক্রবার)  রাজশাহীর পুঠিয়ায় অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Bangladesh Nationalist Party – BNP’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৯ মে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশ থেকে সম্প্রচারিত লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ৪৭ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর বক্তব্যখুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Facebook

উক্ত লাইভ ভিডিওর ৪৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড হতে ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে বলতে শোনা যায়, “আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। একদফা- শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।”

পরবর্তীতে, উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে সমাবেশ মূলধারার গণমাধ্যম মানবজমিন এর ওয়েবসাইটে গত ২০ মে ‘পুঠিয়ায় বিএনপির সমাবেশ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Majabzamin Website

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯মে(শুক্রবার) বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর হাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি’র জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থাৎ, বিএনপি নেতা চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর কথা ১৯ মে(শুক্রবার) রাজশাহীর পুঠিয়ায় অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশে বলেছিলেন।

মূলত, গত ১৯ মে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর হাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বক্তব্য প্রদানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে বলে বক্তব্য প্রদান করেন। এ বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তিনি এই বক্তব্য ২০ ও ২১ তারিখে প্রদান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, ২০ ও ২১ তারিখ রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিএনপির কোনো সমাবেশই অনুষ্ঠিত হয়নি।

প্রসঙ্গত, পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের নিয়ে ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের গত ১৯ মে দেওয়া এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠানোর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

চাচাতো বোনের সাথে ৫ বছরের সম্পর্ক ভেঙে অন্যত্র বিয়ের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড

সম্প্রতি ‘চাচাতো বোনের সাথে ৫ বছর রিলেশন করার পরে। বিয়ে করতে যাচ্ছে অন্য এক জনকে‘ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাচাতো বোনের সাথে ৫ বছর সম্পর্ক শেষে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সত্য নয় বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও। 

দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচারিত এই সংক্রান্ত ভিডিওগুলোর কমেন্টবক্স যাচাই করে। কমেন্টবক্সে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই এটিকে বানানো, ভুয়া, অভিনয় ও স্ক্রিপ্টেড হিসেবে উল্লেখ করেন।

Screenshot Collage: Rumor Scanner 

এসব কমেন্টের সূত্রে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে Proyojon TV নামের একটি চ্যানেলে গত ১৮ মে ‘চাচাতো বোনের সাথে প্রেম হলোনা আর বিয়ে করা!!‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Proyojon Tv Youtube

ভিডিওটির শুরুতে একজনকে বলতে শোনা যায়, চাচাতো বোনের সাথে প্রেম, পারিবারিক কলহের কারণে প্রেমকে অস্বীকার করে অন্যত্র বিয়ের পিড়িতে বসে চাচাতো ভাই। অত:পর যা ঘটে। 

এরপর ভিডিওটি চলতে শুরু করে এবং ভিডিওটির শেষ অংশে পুনরায় বলা হয়, ‘যারা প্রেম করেন, তারা আজকের ভিডিওটির কথা একটু চিন্তা করবেন। এমনটি ঘটতে পারে আপনার সাথেও। আবেগের বশে কখনো প্রেম করা উচিত নয়। কারণ, যখন বিবেক জাগ্রত হয়, তখন আর সে প্রেম, আর প্রেম থাকে না। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।’ পুরো ভিডিওটির কোথাও ঘটনাটি সংগঠনের স্থান, সময় সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।

তবে ইউটিউব চ্যানেলটির বিস্তারিত বিবরণী অনুসন্ধান করে দেখা যায়, প্রয়োজন টিভি বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত একটি চ্যানেল। এই চ্যানেলটি বিভিন্ন ইসলামী বিষয়, শিক্ষামূলক ঘটনা, সাক্ষাৎকার, শর্টফিল্ম, ইসলামী নাটক, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি প্রচার করে থাকে।

Screenshot: Proyojon Tv Youtube

অর্থাৎ এটি একটি বিনোদনধর্মী ইউটিউব চ্যানেল।

পরবর্তীতে চ্যানেলটির সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে  Proyojon TVProyojon TV BD নামে দুইটি পেইজ খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

পেইজ দুটিতে চাচাতো বোনের সাথে ৫ বছর সম্পর্ক শেষে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিদের একাধিক ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

ভিডিওগুলোতে তাদেরকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতেও দেখা যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

এমন কিছু ভিডিও দেখুন 

অর্থাৎ চাচাতো বোনের সাথে ৫ বছর সম্পর্ক শেষে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিও এভাবেই ধারণকৃত একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও। 

দর্শকের বিভ্রান্তি 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত উক্ত ভিডিওগুলোর কমেন্টবক্সে কেউ কেউ ভিডিওগুলোকে বানানো, ভুয়া, অভিনয় ও স্ক্রিপ্টেড হিসেবে উল্লেখ করলেও বিপরীতে এমন অনেক মন্তব্য পাওয়া যায়, যেখানে দর্শকেরা ঘটনাটিকে সত্য হিসেবে ধরে নিয়েছেন। 

যেমন, আহমেদ ইকবাল নামে একজন লিখেছেন, ‘এই মেয়েটিকে ফেলে যদি অন্য জায়গায় বিয়ে করে তাহলে শুধু অন্যায় হবে না পাপও হবে, মানুষের মন থেকে ভালবাসা নামক বিশ্বাস উঠে যাবে, আমিও একজন ছেলে এমনটা আমার সাথে হলে কখনও তাকে ফেলে রেখে চলে যেতে পারব না, এই মেয়েকে বিয়ে করলে আর কিছু না হলেও জীবনে সুখি হবে ছেলেটি, মায়া মমতা ভালবাসায় সারাটিজীবন আগলিয়ে রাখবে,,।’ 

আলমগীর হোসেন বাবুল নামে একজন লিখেছেন, ‘মেয়েটা যেহেতু লাভ করে তা হলে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে কেন এসব কাহিনি করলো না। এখন যদি এই মেয়ে টা কে বিয়ে করে তা হলে অন্য দিকে আরেক টা মেয়ের লাইফ নষ্ট। এভাবে কেউ বিয়ে বন্ধ করে না। ‘

Image Collage: Rumor Scanner 

এমডি জুয়েল এমডি রানা নামে একজন লিখেছেন, ‘এটা পাগলামি ছাড়া আর কিছু না। এ সময় যত ভালবাসা থাকুক না কেন উল্টে গেলে আর একটি মেয়ের জীবন লাইফ নষ্ট হয়ে যাবে যে মেয়েটা তার জন্য বধু সেজে বসিয়া আছে সে মেয়েটি তো সমাজের কাছে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।’

কোনো কোনো দর্শককে আবার ঘটনার সবশেষ পরিণতি জানতে চেয়েও মন্তব্য করতে দেখা গেছে পোস্টগুলোতে।

মূলত, গত ১৮ মে ইউটিউবে Proyojon TV নামের একটি চ্যানেলে ‘চাচাতো বোনের সাথে প্রেম হলোনা আর বিয়ে করা!!’ শীর্ষক একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওতে থাকা একজন নারী দাবি করেন, তার সাথে ৫ বছর সম্পর্ক শেষে সেখানে বর সাজে উপস্থিত ব্যক্তিটি অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে ‘চাচাতো বোনের সাথে ৫ বছর রিলেশন করার পরে। বিয়ে করতে যাচ্ছে অন্য এক জনকে’ শীর্ষক দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রথম যেখানে প্রচার করা হয়েছিল সেটি একটি বিনোদনধর্মী ইউটিউব চ্যানেল। এছাড়া অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিদের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে দৃশ্যায়িত একাধিক ভিডিওতে খুঁজে পাওয়া যায়। 

সুতরাং, চাচাতো বোনের সাথে ৫ বছর সম্পর্ক শেষে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার ঘটনা উল্লেখ করে একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিওকে সত্য ঘটনা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ভারতীয় গণমাধ্যমে তামান্না ভাটিয়ার NBK108 সিনেমার আইটেম গানে অভিনয়ের মিথ্যা সংবাদ  

সম্প্রতি, “ভারতীয় অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া NBK108 সিনেমার একটি আইটেম গানে পারফর্ম করছেন’ দাবিতে একটি তথ্য দেশটির সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। 

উক্ত দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম News18 (আর্কাইভ) ও Bharat Times (আর্কাইভ)।

Screenshot: News18

বিস্তারিত অংশে আরো উল্লেখ করা হয়, “আইটেম গান এর পাশাপাশি তিনি সিনেমাটির প্রধান নারী চরিত্রগুলোর একটিতেও অভিনয় করবেন”

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, NBK108 সিনেমার আইটেম গানের দৃশ্যে ও সিনেমাটিতে তামান্না ভাটিয়ার অভিনয়ের তথ্যটি সঠিক নয় বরং, কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২০ মে “Tamannaah On Rumours About Her Song In Anil Ravipudi’s Film: “Baseless”” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, “অনীল রবিপুরী পরিচালিত নন্দমুরী বালাকৃষ্ণের পরবর্তী সিনেমা NBK108 এর একটি আইটেম গানের দৃশ্যে তামান্না ভাটিয়া অভিনয় করছেন দাবিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো ভিত্তিহীন।”

Source: NDTV

পাশাপাশি, ভারতীয় চলচ্চিত্র বিষয়ক ওয়েবসাইট “Filmy Today” এর ওয়েবসাইটে “Tamannaah Bhatia Denies Rumours Of Falling Out With Filmmaker Anil Ravipudi” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনেও তামান্না ভাটিয়ার টুইটার একাউন্টের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, “উক্ত সিনেমায় তামান্না ভাটিয়া অভিনয় করার (আইটেম গান সহ) খবর মিথ্যা।”

Source: Filmy Today 

প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তামান্না ভাটিয়ার টুইটার একাউন্টে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার। অনুসন্ধানে তামান্না ভাটিয়ার ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ২০মে পোস্ট করা একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত টুইট বার্তা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, “আলোচ্য সিনেমায় একটি চরিত্রে অভিনয় ও আইটেম গানের দৃশ্যে অভিনয়ের ব্যাপারে তামান্না ভাটিয়াকে জড়িয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলো ভিত্তিহীন।”

Screenshot Source: Twitter 

মূলত, তেলেগু অভিনেতা নন্দমুরী বালাকৃষ্ণের পরবর্তী সিনেমা NBK108 আগামী অক্টোবরে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। সেই সিনেমার একটি আইটেম গানে তামান্না ভাটিয়া অভিনয় করবেন দাবিতে একটি তথ্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই তামান্না ভাটিয়ার নাম জড়িয়ে উক্ত প্রতিবেদনগুলো প্রচার করা হচ্ছে। তামান্না ভাটিয়া নিজেও টুইট করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

উল্লেখ্য, তেলেগু অভিনেতা নন্দমুরী বালাকৃষ্ণের পরবর্তী সিনেমা NBK108 আগামী অক্টোবরে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। অনীল রবিপুরী পরিচালিত তেলেগু ভাষার সিনেমাটিতে নন্দমুরী বালাকৃষ্ণ ছাড়াও কাজল আগারওয়াল এবং অর্জুন রামপাল অভিনয় করেছেন। 

প্রসঙ্গত, পূর্বেও বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত শ্যুটিংয়ের সময় বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দাবিতে ছড়িয়ে পড়া গুজব শনাক্ত করে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ভারতীয় গণমাধ্যমে “NBK108 সিনেমার আইটেম গানের দৃশ্যে তামান্না ভাটিয়া অভিনয় করবেন ” শীর্ষক দাবি দাবি প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র