সম্প্রতি, দেশীয় সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪ এবং মাইটিভি এর ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সাইবেরিয়া অঞ্চলের কোলা ব-দ্বীপে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্ত বা কূপের ভেতর থেকে মানুষের চিৎকার শোনা গেছে।
চ্যানেল২৪ এর ভিডিওতে যা দাবি করা হয়েছে
১ম দাবি – সোভিয়েত ইউনিয়নের খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্তটির নিচের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮১৫ সেন্টিগ্রেডেরও বেশি।
২য় দাবি – ১৯৯২ সালে রাশিয়া যখন খননকার্য বন্ধ করে দেয়, তখন খনন বন্ধ করার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল যে, এর চেয়ে বেশি খনন করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে।
৩য় দাবি – পৃথিবীর গভীরতম সেই গর্তের ভেতরে মাইক্রোফোনের সাহায্যে মানুষের চিৎকারের শব্দ রেকর্ড করা হয়েছিল। উক্ত রেকর্ড দাবিতে একটি অডিও ক্লিপও সংযুক্ত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। দাবি করা হয়েছে, প্রকল্প প্রধান ডেভিড গুবারম্যান এ বিষয়ে কোনো কারণ দেখাতে পারেননি।
একই দাবি করা হয়েছে মাইটিভির প্রতিবেদনেও।
প্রতিবেদনগুলো দেখুন মাইটিভি (আর্কাইভ) এবং চ্যানেল২৪ (আর্কাইভ)।
একই ভিডিও গণমাধ্যমগুলোর ইউটিউব চ্যানেলে দেখুন চ্যানেল২৪ (আর্কাইভ) এবং মাইটিভি (আর্কাইভ)।
সেইসাথে চ্যানেল২৪ এ প্রচারিত ভিডিও ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একই দাবিতে বেশকিছু পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে
(আর্কাইভ)।
একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোলা ব-দ্বীপে সোভিয়েত ইউনিয়নের খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্ত বা কূপের ভেতর থেকে মানুষের আর্তচিৎকার শুনতে পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং ফান্ডিং এবং প্রযুক্তিগত নানা কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই প্রজেক্ট ঘিরে আলোচিত দাবিটি প্রজেক্ট চলাকালীন সময়েই ফিনিশ একটি সংবাদপত্রের এপ্রিল ফুল বিষয়ক সংবাদ (যা কিনা একটি পাঠক কলামের গল্প থেকে নেওয়া) থেকে পরবর্তীতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেন প্রজেক্ট প্রধান।
১ম দাবির সত্যতা যাচাই
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট IFL SCIENCE এর ওয়েবসাইটে গত ২২ মার্চ প্রকাশিত “The Deepest Hole Ever Dug By Humans Had To Be Destroyed” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোলা ব-দ্বীপের খনন করা গর্তের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮০°সেলসিয়াস বা ৩৫৬° ফারেনহাইট।
একই তথ্য এসেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম New York Post এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও।
পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট Scientific American এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় যে, উক্ত গর্তের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮০°সেলসিয়াস বা ৩৫৬° ফারেনহাইট।
অর্থাৎ, সাইবেরিয়া অঞ্চলে খননকৃত উক্ত গর্তের তাপমাত্রা ৮০০° সেলসিয়াসের বেশি রেকর্ড করা হয়েছিল দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
২য় দাবির সত্যতা যাচাই
১৯৯২ সালে খনন বন্ধ করার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে New York Post এর একই প্রতিবেদনে উল্লেখ পাওয়া যায়, বিজ্ঞানীরা খননকাজে যে তাপমাত্রা প্রত্যাশা করেছিলেন তার থেকে বেশি তাপমাত্রার কারণে ভূগর্ভস্থ খননকাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও, IFL Science এর দেওয়া তথ্যমতে, তাপমাত্রার সমস্যার পাশাপাশি, সদ্য বিলুপ্ত হওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনীতি এবং ফান্ডের অপ্রতুলতাও প্রজেক্টটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী ছিল।
পাশাপাশি, মার্কিন সাময়িকী Smithsonian এর ওয়েবসাইটে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক প্রথিতযশা সাংবাদিক এলিসিয়া অল্ট এর লেখা “Ask Smithsonian: What’s the Deepest Hole Ever Dug?” শীর্ষক শিরোনামের নিবন্ধ থেকেও জানা যায় খননকাজ বন্ধ হওয়ার পেছনে কারণ ছিল উচ্চ তাপমাত্রায় খননে সক্ষম যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা।
পরবর্তীতে আলোচিত প্রজেক্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও জানা যায়, কোলার কূপটিসহ এই ধরনের আরও দুইটি কূপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দুর্ঘটনা এবং কারিগরি কারণে।
অর্থাৎ, “১৯৯২ সালে প্রজেক্ট বন্ধের কারণ ছিল এর থেকে বেশি খনন করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে” শীর্ষক দাবিটিও সঠিক নয়৷
৩য় দাবির সত্যতা যাচাই
পৃথিবীর গভীরতম সেই গর্তের ভেতরে মাইক্রোফোনের সাহায্যে মানুষের চিৎকারের শব্দ রেকর্ড করা হয়েছিল কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট Skeptoid এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, Christianity Today রেডিওর হোস্ট রিচ বুহলার এর দীর্ঘ অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে জানানো হয়, উক্ত অডিও ক্লিপটি কোনোরকম যাচাই ছাড়াই খননকার্যের সাথে জুড়ে দিয়ে বহু বছর ধরে প্রচার হয়ে আসছে।
এছাড়াও, আলোচ্য অডিও ক্লিপটির ব্যাপারে অনুসন্ধানে ২০১০ সালের ২৫ মে ইউটিউবে আপলোডকৃত “Sounds of Hell Debunked” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে জানা যায়, আলোচ্য অডিও ক্লিপটি ১৯৭২ সালে নির্মিত Baron Blood সিনেমার অডিও ক্লিপের ল্যুপ ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে অধিকতর অনুসন্ধানে প্রজেক্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের press সেকশনে ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়।
প্রজেক্টের স্থায়ী ডিরেক্টর ডেভিড গুবারম্যান জানান, “কিছু পাবলিকেশনে এই ধরণের সংবাদ পুরোপুরি বিস্মিত করেছিল আমাকে। আমরা কাজ করছিলাম, হঠাত করে আঞ্চলিক সংবাদপত্রগুলো এবং পার্টি কমিটির সচিবরা ফোন কলের ঝড় বইয়ে দিলো যেন, জিজ্ঞেস করলো ড্রিলিং কেমন চলছে, কোনো আকর্ষণীয় খবর আছে কিনা। আমি উত্তর দিলাম, না, আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যেই ১২ কিলোমিটার ড্রিল করেছি। এটা জানার পর তারা ফোন রেখে দিলো। এর মিনিট বিশেক পর আবার ফোন এলো। আমি নিজেই এবার জানতে চাইলাম, সবাই হঠাত করে আমাদের বিষয়ে এভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কেন? ফোন কলদাতা জানালেন, সকল পত্রিকায় নাকি এসেছে, আমরা জাহান্নামের অস্তিত্ব পেয়েছি যেখানে শয়তান রয়েছে।”
ডেভিড গুবারম্যান বলছিলেন, “আমরা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানতে পারি, এই তথ্যটি ফিনিশ একটি তরুণ ঘরানার সংবাদপত্রে পহেলা এপ্রিল এপ্রিল ফুলের (april fool) দিন প্রকাশিত হয়েছিল। সেখান থেকে ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশ থেকে সারাবিশ্বেই এটি ছড়িয়ে পড়েছিল।”
ডেভিড গুবারম্যান পরিস্কার করেছেন, “আমি দায়িত্ব নিয়েই এটা বলছি যে, প্রজেক্টে কোনো সংবদেনশীল ঘটনাই ঘটেনি এবং আমরা শয়তান বা কারো শব্দই শুনিনি। এসব বিষয়ে যা ছড়িয়েছে তার কোনো সত্যতা নেই।”
ডেভিড গুবারম্যানের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে রিউমর স্ক্যানার টিম আলোচিত কথিত ঘটনাটির আদ্যেপান্ত জানার চেষ্টা করেছে।
কোলা সুপারডিপ বোরহোল প্রকল্পের অধীনে খননকৃত পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর গর্তে নরকের আর্তনাদ শুনতে পাওয়ার উক্ত গল্পটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯৮৯ সালে। ট্রিনিটি ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্ক নামের একটি খ্রিস্টান নেটওয়ার্ক তাদের টিভি শো এবং নিউজলেটারে সর্বপ্রথম এই গল্পটি ফিচার করে। এরপর আরো কিছু খ্রিস্টান ট্যাবলয়েড বিষয়টিকে যাচাই ছাড়াই প্রচার করে।
Christianity Today এর রেডিও হোস্ট রিচ বুহলার বিষয়টির সত্যতা নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করেন। দীর্ঘ সেই অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ট্রিনিটি ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্ক উক্ত গল্পটির সোর্স হিসেবে ফিনিশ জার্নাল Ammennusastia এর নাম উল্লেখ করে। লক্ষ্যণীয় যে, ডেভিড গুবারম্যানও ফিনিশ একটি নিউজপেপারের বিষয়েই উল্লেখ করেছিলেন।
পরবর্তীতে জানা যায়, Ammennusastia প্রকৃতপক্ষে কোনো জার্নাল নয় বরং একটি লুথেরান ম্যাগাজিন মাত্র। পরবর্তীতে, Ammennusastia কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন বুহলার।
Ammennusastia কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, গল্পটি তাদের ম্যাগাজিনে লিখেছিলেন একজন স্টাফ রিপোর্টার, যিনি অপর একটি ফিনিশ দৈনিক পত্রিকা Etelä-Suomen Sanomat এর একটি আর্টিকেল পড়ে উক্ত গল্পটি লিখেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি পত্রিকার যে অংশ থেকে গল্পটি সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন সেটি ছিল পত্রিকার পাঠক কলাম। সেখানে পত্রিকার পাঠক যেকোনো গল্প পাঠাতে পারতেন এবং সেগুলো সেই পত্রিকায় ছাপা হতো। এভাবেই, কোনো যাচাই বাছাই ছাড়াই গল্পটি বিভিন্ন মাধ্যম ঘুরে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে।
আর প্রত্যেকবার মুখ বদলের সময় গল্পের বদলে যাওয়ার নিয়ম মেনে গল্পটি একেক স্থানে একেকভাবে প্রচার পেতে থাকে। এমনকি, ১৯৯২ সালে আলাস্কায় একটি তেলের খনিতে খননকৃত গর্ত দিয়ে শয়তান উঠে এসে ১৩ জন খনি শ্রমিককে মেরে ফেলা শীর্ষক এই গল্পের ভিন্ন একটি সংস্করণও লোকমুখে শুনতে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং তার বরাতে পাওয়া তথ্য প্রমাণ থেকেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, কোলা ব-দ্বীপের গভীরতম গর্ত বা কূপের ভেতর থেকে মানুষের চিৎকার শোনার বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা।
কেন কোলা সুপারডিপ বোরহোল প্রকল্প?
স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বৈরথ পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে চলে গিয়েছিল মহাকাশ পর্যন্ত। স্নায়ুযুদ্ধের ফলেই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের অবতরণ করার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল দুই পক্ষ। শুধু মহাকাশই নয়, দুই পক্ষের এই প্রতিযোগিতা চলেছিল ভূপৃষ্ঠের নিচেও। সবচেয়ে গভীর মানবসৃষ্ট সুড়ঙ্গ খোঁড়ার এই দৌড়ে অবশ্য এগিয়ে ছিল মার্কিনিরাই। ১৯৬৬ সালে প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার প্রজেক্ট হাতে নেয় মার্কিনিরা। এ প্রজেক্টের নাম দেওয়া হয় Project Mohole।
খুব বেশি পিছিয়ে ছিল না সোভিয়েত ইউনিয়নও। মার্কিনীদের মাত্র চার বছর পরেই তারাও ভূগর্ভে সবচেয়ে গভীর গর্ত খোঁজার প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় Kola Superdeep Borehole Project। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন ছিল মার্কিনীদের পেছনে ফেলার সুযোগ অন্যদিকে তেমনি ছিল ভূগর্ভস্থ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অসীম সম্ভাবনা। সেই উদ্দেশ্যে বহুদূর এগিয়েও গিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।
প্রায় ২০ বছরের প্রচেষ্টায় ৭.৫ মাইল বা প্রায় ১২.২ কিলোমিটার গভীর গর্ত খনন করতে সক্ষম হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সেই গভীরতায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৮০°সেলসিয়াস যা ছিল বিজ্ঞানীদের পূর্বে অনুমিত (১০০°সেলসিয়াস) তাপমাত্রার থেকে অনেক বেশি। এই বিপুল তাপের মধ্যে খননকার্য চালানোর মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় ১৯৯২ সালে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে, ২০০৫ সালে কোলা সুপারডিপ বোরহোল প্রকল্পটি তহবিলের অভাবে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এখনও সাইবেরিয়া অঞ্চলে খননকৃত গর্তটি মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় গর্ত হিসেবে স্বীকৃত। সেইসাথে এই প্রকল্পে খননকৃত গর্তের মাটি থেকে অন্তত ২৪ টি নতুন প্রাগৈতিহাসিক এককোষী জীবের সন্ধান পায় তারা। এছাড়াও, ভূপৃষ্ঠের নিচের মাটির গঠন এবং গুণাগুণ সম্পর্কে তথ্য আবিষ্কার ছিল এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
মূলত, সোভিয়েত ইউনিয়নের খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্তের ভিতর থেকে মানুষের চিৎকার শোনা গিয়েছে শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রকল্প প্রধান এবং তার বরাতে পাওয়া তথ্য প্রমাণ থেকেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, কোলা ব-দ্বীপের গভীরতম গর্ত বা কূপের ভেতর থেকে মানুষের চিৎকার শোনার বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা। প্রজেক্ট চলাকালীন সময়েই ফিনিশ সংবাদপত্রের এপ্রিল ফুলের একটি সংবাদ (যা কিনা একটি পাঠক কলামের গল্প থেকে নেওয়া) থেকে ভুয়া এই গল্পটি পরবর্তীতে সারাবিশ্বেই বিভিন্ন সংস্করণে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া, বিপদ হতে পারে এমন আশঙ্কায় প্রজেক্টটি বন্ধ হয়ে যায় শীর্ষক দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে, ১৯৯২ সালে উচ্চ তাপমাত্রায় খননে সক্ষম যন্ত্রপাতি ও তহবিলের অপ্রতুলতার কারণে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি খননকৃত গর্তটির তাপমাত্রা ৮০০° সেলসিয়াসের বেশি রেকর্ড করা হয়েছিল দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
সুতরাং, সোভিয়েত ইউনিয়নের খননকৃত পৃথিবীর গভীরতম গর্তের ভেতরে নরকের আর্তনাদ শুনতে পাওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- IFL Science: The Deepest Hole Ever Dug By Humans Had To Be Destroyed
- The New York Post: World’s deepest manmade hole dubbed ‘well to hell’ plunges 40,000 feet
- Skeptoid: The Siberian Hell Sounds
- Youtube: Sounds of Hell Debunked
- Snopes: The Well to Hell
- ZME Science: The World’s Deepest Hole Lies Beneath this Rusty Metal Cap – The Kola Superdeep Borehole
- BBC: The deepest hole we have ever dug
- Atlas Obscura: Kola Superdeep Borehole
- Smithsonian: Ask Smithsonian: What’s the Deepest Hole Ever Dug?
- Scientific American: How Deep Is the Deepest Hole in the World?
- Kola Superdeep: Official Website
- Rumor Scanner’s Own analysis