সম্প্রতি, ইন্টারনেটে একটি গণজমায়েতের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জানাজায় মানুষের জমায়েতের দৃশ্য।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটি জিয়াউর রহমানের জানাজার নয় বরং এটি ১৯৬৩ সালে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে হোসেন সোহরাওয়ার্দীর জানাজার ছবি।
রিউমর স্ক্যানার টিম গেল বছরের (২০২২) শুরু থেকে কয়েক দফায় এই বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে। জানার চেষ্টা করেছে ছবির মূল সূত্র এবং কোন প্রেক্ষাপটে ছবিটি তোলা হয়েছিল। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গেল বছরের ডিসেম্বরে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে,
আলোচিত ছবিটি জিয়াউর রহমানের জানাজার নয়। প্রকৃতপক্ষে, জিয়াউর রহমানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় শেরেবাংলা নগরে মানিক মিঞা এভিনিউতে। কিন্তু আলোচিত ছবিটি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের।
উক্ত গণজমায়েত কোন ঘটনায় হয়েছিল সে বিষয়ে অনুসন্ধানের করে ১৯৬৩ সালের ৯ ডিসেম্বরের ‘Morning News’ পত্রিকার ছাপা সংস্করণের একটি পাতায় আলোচিত ছবিটির সাথে অনেকটা মিল আছে এমন একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
আলোচিত ছবিটির সাথে মর্নিং নিউজের ছবিটি হুবহু না মিললেও ছবির উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে একই স্থান থেকেই দুইটি ছবি তোলা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়৷
Screenshot source: Morning News
মর্নিং নিউজের সংবাদটি থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি ১৯৬৩ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জানাজার।
মূলত, সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি গণজমায়েতের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জানাজায় মানুষের জমায়েতের দৃশ্য। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম দীর্ঘ অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছে, ১৯৬৩ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জানাজার ছবি এটি। তাছাড়া, জিয়াউর রহমানের জানাজা হয়েছিল মানিক মিঞা এভিনিউতে।
উল্লেখ্য, গত বছরের (২০২২) ডিসেম্বরে এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, একটি কোলাজ ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে বামের ছবিতে যে ছেলে শিশুকে পানি পান করতে দেখা যাচ্ছে, ডানে সেই শিশুটির বর্তমান ছবি দেখা যাচ্ছে।
অর্থাৎ, দুইটি ছবির ছেলে দুইজন একই ব্যক্তি বলে দাবি করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোলাজ করা ভাইরাল দুই ছবির ছেলে দুইজন একই ব্যক্তি নয় বরং দুইজন ভিন্ন ব্যক্তির ছবিকে কোলাজের মাধ্যমে একই ব্যক্তির ভিন্ন বয়সের ছবি দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে, ‘Anja Ringgren Lovén’ নামক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত একটি পোস্টে প্রকাশিত ছবির সাথে উক্ত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, শিশুটির নাম হোপ। সে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে নাইজেরিয়াতে জন্মগ্রহণ করে এবং এখন তার বয়স ১০ বছর।
Image Comparison by Rumor Scanner
আরও অনুসন্ধান করে Anja Ringgren Lovén এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ০৮ এপ্রিল প্রকাশিত একটি পোস্টের ছবির সাথে উক্ত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এই ছেলেটির নাম প্রিন্স। দশ বছর আগে আঞ্জা লাভেন তাকে স্কুল ব্যাগ কিনে দেয়। আর সেদিন সে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান। অর্থাৎ, ১০ বছর পর প্রিন্স বড় হয়ে এমন হয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
মূলত, সম্প্রতি, কোলাজ করা দুইটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে দুই ছবিতে থাকা ছেলে দুইজন একই ব্যক্তি। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। দুইজন ভিন্ন ব্যক্তির ছবিকে কোলাজের মাধ্যমে একই ব্যক্তির ভিন্ন বয়সের ছবি বলে দাবি করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে ভুল ছবি ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, দুইজন ভিন্ন ব্যক্তির ছবিকে কোলাজের মাধ্যমে একই ব্যক্তির ভিন্ন বয়সের ছবি দাবি করে সম্প্রতি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি মক্কায় হিন্দুদের ঢুকতে না দেওয়ার কোনো ঘটনার নয় বরং এটি ২০২১ সালে একজন সৌদি নাগরিক নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করে মসজিদুল হারামের ইমামের মিম্বরে হামলা চেষ্টার ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ৪০ বছর বয়স্ক একজন ব্যক্তি নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করে মসজিদুল হারামের ইমামের মিম্বরে আক্রমণ করতে গিয়েছিল। এসময় সেখানে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে আটক করে।
প্রতিবেদনটিতে সৌদি আরবের স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে উল্লেখ করা হয়, মসজিদুল হারামের মিম্বরে আক্রমণ করতে উদ্যত ব্যক্তিটি একজন সৌদি নাগরিক, তিনি নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করেছিলেন।
পাশাপাশি এসব প্রতিবেদন থেকে কোথাও মক্কার মসজিদুল হারামের মিম্বরে আক্রমণ করতে যাওয়া ব্যক্তিটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, তিনি সৌদি নাগরিক ছিলেন এবং নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করে মসজিদুল হারামের মিম্বরে আক্রমণে উদ্যত হয়েছিলেন।
মক্কায় কি অমুসলিমরা প্রবেশ করতে পারেন?
মক্কা এবং মদীনায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা কোন রাজনৈতিক বা মানব কর্তৃপক্ষ দ্বারা তৈরি করা হয়নি। মূলত, মক্কা ও মদিনা ইসলামের দুইটি পবিত্র স্থান ও উপাসনার স্থান হওয়ায় এই দুইটির পবিত্রতা রক্ষায় সেখানে অমুসলিমদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
Screenshot: Arab News
ইমাম মাহদী কে?
ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের মতে, ইমাম মাহদি হলেন ইসলামের ভবিষ্যদ্বাণীকৃত মুক্তিদাতা, যিনি বিচার দিবস বা কিয়ামতের আগে সাত, নয় বা উনিশ বছর (বিভিন্ন ব্যাখ্যা অনুসারে) পৃথিবী শাসন করবেন এবং পৃথিবীকে মন্দ থেকে মুক্ত করবেন।
Screenshot: Gulf News
সমস্ত ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ একমত যে, ইমাম মাহদী কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে বিশ্বকে ন্যায়ে পূর্ণ করতে এবং পৃথিবীর সমস্ত অংশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে নিয়োজিত হবেন।
মূলত, ২০২১ সালের ২১ মে জুমার নামাজের সময় ৪০ বছর বয়সী একজন সৌদি নাগরিক নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি মক্কার মসজিদুল হারামের মিম্বরে আক্রমণে উদ্যত হন। এই সময়ে সেখানে নিয়োজিত নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে আটকও করে। সেই সময়ের ধারণকৃত একটি ভিডিওকে উল্লেখিত ব্যক্তিটিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী উল্লেখ করে সম্প্রতি হিন্দুদের মক্কায় ঢুকতে না দেওয়ার ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিওকে সম্প্রতি হিন্দুদের মক্কায় ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এমন দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা বাংলাদেশ সরকারের কোনো মন্ত্রীর ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
গত ২৩ মে Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। যেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের পুরোনো ভিডিও ক্লিপের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছবি সহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ের কয়েকটি পুরোনো ছবি দেখা যায়। রিউমর স্ক্যানার ছবি এবং ভিডিওগুলো যাচাই করে দেখেছে যেগুলোর সাথে প্রচারিত দাবির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচারিত অন্যান্য ভিডিওগুলোও পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সেখানে বিস্তারিত অংশে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ নেই।
পাশাপাশি, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এখন পর্যন্ত সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা কোনো মন্ত্রী বা অন্যকাউকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গত ২৫ মে ‘বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Prothom Alo
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছেন।
মার্কিন ভিসা নীতির ঘোষণা নিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে গত ২৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot bd.usembassy
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আজ, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে, আমি ইমিগ্রেশন এন্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা 212(a)(3)(C) (“3C”) এর অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী , বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে: ভোট কারচুপি , ভোটারদের ভয় দেখানো , সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া, এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমসহ সকলের। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’
পরবর্তীতে একই বিষয় নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টোনি ব্লিঙ্কেনের টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ২৪ মে প্রকাশিত একটি টুইট বার্তাও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Twitter
তাছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভিসা নীতি ঘোষণার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল আই এর টকশো অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রায় লাইভে যুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থাপক জিল্লুরের প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, “আমি একটি বিষয় খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আজ আমরা কাউকে স্যাংশন দিচ্ছি না। সেক্রেটারি অফ স্টেট একটি নতুন নীতির ঘোষণা করেছেন, যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেই সব ব্যক্তির ভিসা সুবিধায় বিধি–নিষেধ আরোপ করতে পারবে, যারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইট (U.S. DEPARTMENT OF THE TREASURY), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইট (USA gov) এবং বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা বা তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দিলেও সাম্প্রতিক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা কোনো মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন ভিসা নীতির ঘোষণায় কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, দল বা সংগঠনের কথা উল্লেখ করেনি।
মূলত, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ১০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও খণ্ড খণ্ড ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা বাংলাদেশের মন্ত্রীদের কারো ওপরই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ও বাহিনীটির ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, Sabai Sikhi নামের ইউটিউব চ্যানেলটিতে এর আগেও বেশ কয়েকটি মিথ্যা এবং গুজব নিয়ে তৈরি ভিডিও’র অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। যেগুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
তাছাড়া, পূর্বেও রাষ্ট্রপতিসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ১০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের সিলেবাস থেকে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ পড়ার তথ্যটি বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে সমগ্র ভারত নয়, কেবল ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস থেকে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিকাশ গুপ্তকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, গত শুক্রবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কবি ইকবালকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেশ ভাগ, হিন্দু ও উপজাতি বিষয়ক অধ্যয়ন যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এই সভায়।
Screenshot: Hindustan Times
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, আগামী ৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়টির এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সভায় এই প্রস্তাবগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদনের ব্যাপারে আলোচনা হবে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদনগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ দেওয়ার বিষয়টি পুরো ভারত কেন্দ্রিক নয়, কেবল ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত এপ্রিলে ভারতের দ্বাদশ ক্লাসের ইতিহাস বই থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্বলিত অধ্যায় সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও শিক্ষণ কাউন্সিল বা এনসিইআরটি। তবে এসময় কবি আল্লামা ইকবাল সম্পর্কিত কোনো পাঠ্যসূচি বাদ দেওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কবি আল্লামা ইকবালের কবিতা পড়ানোর ব্যাপারে তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, চলতি বছরের গত ৯ জানুয়ারি ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India এর ওয়েবসাইটে ‘UP teacher gets bail after 2 weeks in jail over Iqbal prayer‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও শিক্ষণ কাউন্সিলের অনুমোদিত কারিকুলামের কোর্স বইয়ে আল্লামা ইকবালের কবিতা উপস্থিত থাকার বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
Screenshot: Times of India
বাংলাদেশিগণমাধ্যমের বিভ্রান্তিকর শিরোনাম
ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম। প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যায়, প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি উল্লেখ না করে কেবল ভারত উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে আবার ঘটনাটি যে কেবল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের, সে সম্পর্কিত উল্লেখ পাওয়া যায়।
মূলত, ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সিলেবাস থেকে পাকিস্তানের জাতীয় কবি ইকবালকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই ঘটনায় দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে ভারতে সিলেবাস থেকে আল্লামা ইকবালকে বাদ দেওয়া হয়েছে শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে এই শিরোনামগুলোই কপি-পেস্ট হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে, সিলেবাস থেকে আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ দেওয়ার ব্যাপারটি কেবল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক, সমগ্র ভারতের নয়।
সুতরাং, ভারতে সিলেবাস থেকে পাকিস্তানের জাতীয় কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ পড়ার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘তিন মাসের জন্য ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশো বন্ধ ঘোষণা’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন বাংলা ভিশন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জার্মান ভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলার টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে না বরং টকশোটি নিয়ে ২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসের একটি পুরানো ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নতুন করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে দেখা যায়, মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ ভিশন এর ওয়েবসাইটে উক্ত দাবিতে সংবাদ প্রচারের প্রেক্ষিতে ২৮ মে দাবিটিকে মিথ্যা উল্লেখ ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশোটির উপস্থাপক সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন। ঐ পোস্টে তিন জানান,
‘আমার বন্ধুদের কেউ কেউ আমার কাছে জানতে চাইছেন, তিন মাসের জন্য আমাদের শো বন্ধ থাকবে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কিনা।’
Screenshot: Khaled Mohiuddin Facebook Post
আমি অবাক হলাম, এবছর এত বড় ব্রেক নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। তবে? কোথা থেকে এলো এই ঘোষণা? নিউজ পড়ে বুঝলাম, আমাদের ২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসের ঘোষণাকে এবছরের ঘোষণা মনে করেছেন সংবাদদাতা। একটু আনন্দ নিয়ে বলি ওইসময় আমাদের সঙ্গে চার লাখ ১১ হাজার দর্শক ছিলেন আজ আছেন আট লাখ ৬৫ হাজারের বেশি।’
প্রতিবেদনটিতে গণমাধ্যমটি জানায়, ‘জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের জনপ্রিয় টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে এমন সংবাদ প্রকাশ করা হয় বাংলাভিশন ডিজিটাল প্লাটফর্মে। কিন্তু আসলে শো’টি একদিনের জন্যও বন্ধ হচ্ছে না। পুরোনো ভিডিও থেকে তথ্য নেয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।’
Screenshot: Bangla Vision
উল্লেখ্য, ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশোটির উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন ২০২১ সালের ৩ জুলাই ইউটিউবে একটি শর্ট ভিডিওতে জানান, টকশোটির জন্য ঐ বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা বিরতি নিচ্ছেন।
Screenshot: Khaled Mohiuddin Jante Chay
মূলত, ২০২১ সালের ৩ জুলাই ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশোটির উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন একটি ইউটিউব শর্ট ভিডিওতে ঐ বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের বিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সম্প্রতি ২০২১ সালের ঐ ভিডিওয়ের ভিত্তিতেই বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলা ভিশন আগামী তিন মাসের জন্য খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় টকশো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাভিশনের এই সংবাদের প্রেক্ষিতে টকশোটির উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন নিজেই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে টকশোটি বন্ধ হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেন।
সুতরাং, আগামী তিন মাসের জন্য খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় টকশো বন্ধ ঘোষণার দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, হলিউড অভিনেতা ও সাবেক রেসলার ডোয়াইন জনসন (দ্য রক) এর সনাতন মন্দিরে পুরোহিতের পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকার কিছু ছবি বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডোয়াইন জনসন (দ্য রক) এর সনাতন মন্দিরে পুরোহিতের পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকার দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো বাস্তব নয় বরং উক্ত ছবিগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Bhargav Valera নামের ভারতীয় এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘dwayne johnson as a shadhu worshipping in mandir শীর্ষক ক্যাপশনে গত ২২ এপ্রিল প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) ভাইরাল ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ছবিগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot: Bhargav Valera Facebook
পরবর্তীতে, উক্ত ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট যাচাই করে দেখা যায়, তিনি প্রায়ই বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির এআই ছবি তৈরি করেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইলন মাস্ক এবং মার্ক জাকারবার্গ সহ আরও কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টগুলোর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এই ছবিগুলোও এআই দ্বারা তৈরি।
Screenshot: Bhargav Valera Facebook
ডোয়াইন জনসন (দ্য রক) এর সনাতন মন্দিরে দাঁড়িয়ে থাকা ছবির বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে Bhargav Valera এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “ছবিগুলো বাস্তব নয়, এগুলো তিনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই দ্বারা তৈরি করেছেন।”
পাশাপাশি, ডোয়াইন জনসন (দ্য রক) এর সম্প্রতি সনাতন ধর্ম গ্রহণ কিংবা সনাতন মন্দিরে যাওয়া বা সাধুরূপে পূজা করার কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, হলিউড অভিনেতা ডোয়াইন জনসন (দ্য রক) এর সনাতন মন্দিরে পুরোহিতের পোশাকে ভাইরাল ছবিগুলো বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিগুলো এআই দ্বারা নির্মিত, যা Bhargav Valera নামের এক ব্যক্তি তৈরি করেছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে তৈরি হলিউড অভিনেতা ডোয়াইন জনসনের সনাতন মন্দিরে পুরোহিতের পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকার কয়েকটি ছবিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “বাংলাদেশ থেকে সিএনজি নিয়ে কানাডায় গাড়ি চালান মিলন” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা। পত্রিকাটি দাবি করেছে, “কয়েকজন আত্মীয়র ব্যাগে করে সিএনজি বানানোর মালামাল আনিয়ে নিজ হাতে গাড়িটি পুনঃস্থাপন করেছেন ইসমাইল হোসেন মিলন। এরপর সেখানে গাড়িটি সচল করে চালান তিনি।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সিএনজি নিয়ে কানাডায় এক বাংলাদেশি কর্তৃক গাড়ি চালানোর দাবিটি সঠিক নয় বরং যুক্তরাজ্যে চলা এই সিএনজিটির চালক একজন নারী। কোনোরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই সিএনজিটি একজন বাংলাদেশির বলে বানোয়াট একটি দাবি প্রচার করা হচ্ছে।
জনকণ্ঠের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অনুসন্ধান
এ সংক্রান্ত জনকণ্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি ২৭ মে কানাডার টরেন্টো থেকে তোলা বলে দাবি করা হয়। একইসাথে এ সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্টের লিংকও যুক্ত করা হয় প্রতিবেদনের শেষে।
Screenshot source: Janakantha
উক্ত লিংকে প্রবেশ করে ‘Troll Colleges Sylhet’ নামক একটি পেজের একটি পোস্ট(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
এই পোস্টেও দৃশ্যটি কানাডার বলে দাবি করা হয় এবং পোস্টটি ‘Channel Dhaka’ নামক একটি পেজ থেকে নেওয়া বলে জানানো হয়।
Screenshot source: Facebook
পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ‘Channel Dhaka’ নামক পেজটিতে আলোচিত ছবিটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টে অবশ্য ভিন্ন দাবি দেখেছি আমরা। লেখা রয়েছে, “লন্ডনের রাস্তায় সিএনজি চালাচ্ছে সিলেটি প্রবাসী ইসমাইল হোসেন মিলন।”
অর্থাৎ, পোস্টে দৃশ্যটি লন্ডনের বলে দাবি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় পোস্টের Edit History চেক করে দেখেছি আমরা। সেখানে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাত ১০ টা ৩৫ মিনিটে যখন পোস্টটি প্রকাশ করা হয় তখন পোস্টের ক্যাপশনে লেখা ছিল, “বাংলাদেশ থেকে সিএনজি নিয়ে কানাডার রাস্তায় চালাচ্ছে সিলেটের স্পাউস ইসমাইল হোসেন মিলন। কয়েকজন আত্মীয়র ব্যাগে করে সিএনজি বানানোর মালামাল আনিয়ে নিজহাতে তিনি গাড়িটি পুনঃস্থাপন করেছেন। আজ বিকালে কানাডার টরোন্টো থেকে তোলা।”
পরবর্তীতে গতকাল (২৭ মে) বিকেল ৫ টা ৩১ মিনিটে পোস্ট এডিট করে বর্তমান ক্যাপশনটি দেওয়া হয়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
উক্ত পোস্টের একাধিক কমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একাধিক ব্যক্তি স্থানটি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বলে লিখেছেন। কেউ নির্দিষ্ট করে স্থানটির নামও (লন্ডনের টাফালগার স্কয়ারে কানাডা দূতাবাসের সামনে) লিখেছেন। একজন তার কমেন্টে Obayed Hossain নামে এক ব্যক্তিকে মেনশন করে বলেছেন, ছবিটি তিনিই তুলেছেন যুক্তরাজ্য থেকে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
এই তথ্যের সূত্র ধরে ওবায়েদ হোসেনের ফেসবুক প্রোফাইল (আর্কাইভ) পর্যবেক্ষণ করে ছবিটি খুঁজে পাইনি আমরা।
একই সময়ে অনুসন্ধান করে Bangladeshi Community UK -BCUK নামক ফেসবুক গ্রুপে গত ২৫ মে বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টা ৫৩ মিনিটে ওবায়েদ হোসেন কর্তৃক প্রকাশিত এক পোস্টে (আর্কাইভ) আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, লন্ডনের টাফালগার স্কয়ারে আজ প্রথমবার তিনি এই দৃশ্য দেখেছেন।
Screenshot source: Facebook
একই গ্রুপ পর্যবেক্ষণ করে গত ১২ এপ্রিল প্রকাশিত এক পোস্টেও (আর্কাইভ) লন্ডনে আরেকটি সিএনজির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: Facebook
এ থেকে প্রতীয়মান হয়, লন্ডনে সিএনজি চলতে দেখা বিরল কোনো দৃশ্য নয়।
তাছাড়া, ব্রিটিশ আইনেও যুক্তরাজ্যে সিএনজি চালিত যান চলাচলে বাধা নেই। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেখুন এখানে।
আলোচিত ছবিটির বিষয়ে জানতে পরবর্তীতে ওবায়েদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, ২৫ মে তিনি লন্ডনের টাফালগার স্কয়ারের পল মল স্ট্রিট থেকে ছবিটি তুলেছেন। একই সময়ে তোলা একই সিএনজির আরেকটি ছবিও তিনি রিউমর স্কয়ারের কাছে পাঠান।
Screenshot source: Rumor Scanner
এটিসহ দুইটি ছবির মূল ফাইল জনাব ওবায়েদ রিউমর স্ক্যানারের কাছে পাঠালে আমরা ছবি দুইটির মেটাডাটা বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছি যে, ওবায়েদের পাঠানো দুটো ছবিই তার নিজেরই তোলা। গত ২৫ মে লন্ডনের স্থানীয় সময় ১২ টা ৩৪ মিনিটে ছবিগুলো তোলা হয়৷
Screenshot collage: Rumor Scanner
ওবায়েদের পাঠানো দ্বিতীয় ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ড্রাইভারের আসনে একজন নারী রয়েছে। ওবায়েদ নিজেও বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছেন। তাছাড়া, সিএনজিতে পতাকা সদৃশ যে বস্তুটি দেখা যাচ্ছে তার সাথে সৌদি আরবের পতাকার মিল রয়েছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, উক্ত সিএনজির চালক একজন বাংলাদেশি পুরুষ শীর্ষক যে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।
লন্ডনের রাস্তায় সিএনজি চলার একটি ভিডিও-ও (আর্কাইভ) নজরে এসেছে আমাদের। তবে উক্ত সিএনজি আর আলোচিত ছবিটির সিএনজি একই নয় (একাংশের বডি কালারে ভিন্নতা)। এই সিএনজিতে অবশ্য সৌদি আরবের পতাকা সদৃশ কোনো বস্তুও দেখা যায়নি।
Screenshot source: Facebook
আলোচিত সিএনজির ছবিটির সাথে কথিত মিলনের গল্পটির সত্যতা জানতে একাধিক উপায়ে অনুসন্ধান করে দেখার চেষ্টা করেছি আমরা। উক্ত গল্পের সূত্রপাত হিসেবে Channel Dhaka এর পেজের পোস্টটি ফেসবুক মনিটরিং টুল মারফত নিশ্চিত হওয়ার পর রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে পেজটির এডমিন প্যানেলের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
Channel Dhaka কর্তৃপক্ষ রিউমর স্ক্যানার টিমকে জানিয়েছে, ছবিটি একটি গ্রুপ থেকে নিয়ে সার্কাজমের উদ্দেশ্যে ক্যাপশনে কথিত মিলনের নামে বানোয়াট গল্পটি উল্লেখ করেছেন তারা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের সাথে কথা বলার পরপরই আলোচিত পোস্টটির ক্যাপশনটি তারা আরো একবার এডিট করে Channel Dhaka. কথিত মিলনের গল্পটি কেটে দিয়ে ক্যাপশনে এবার লেখা হয়েছে, “লন্ডনের রাস্তায় সিএনজি।”
Screenshot collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, আলোচিত গল্পটিও বানোয়াট।
মূলত, সম্প্রতি কানাডায় ইসমাইল হোসেন মিলন নামে এক বাংলাদেশি সিএনজি চালাচ্ছেন শীর্ষক একটি দাবির সাথে সিএনজির একটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়৷ কানাডা নয় বরং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কানাডার দূতাবাসের সামনে থেকে তোলা ছবিতে যে সিএনজিটি দেখা যাচ্ছে সেটির চালক একজন নারী। তাছাড়া, কয়েকজন আত্মীয়র ব্যাগে করে সিএনজি বানানোর মালামাল আনিয়ে নিজ হাতে গাড়িটি পুনঃস্থাপন করেছেন ইসমাইল হোসেন মিলন শীর্ষক যে দাবি করা হয়েছে তাও বানোয়াট। একটি সার্কাজম পেজ থেকে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর রিউমর স্ক্যানারের সাথে এ বিষয়ে আলাপের পর পেজটি উক্ত গল্প পোস্টের ক্যাপশন থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
সুতরাং, ‘বাংলাদেশ থেকে সিএনজি নিয়ে কানাডায় গাড়ি চালান বাংলাদেশি মিলন’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, বিকাশের ছয় কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষ্যে বিকাশের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীদের ৬৬০০ টাকা বোনাস দেওয়ার দাবিতে ‘বিকাশে ৬৬০০ টাকা বোনাস’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত ক্যাম্পেইনে ব্যবহৃত ওয়েবসাইটটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিকাশের ছয় কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষ্যে বিকাশের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীদের ৬৬০০ টাকা বোনাস দেওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং বিকাশের ওয়েবসাইট নকল করে তৈরি ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বোনাস প্রদানের এই প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে বোনাসের প্রলোভন দেখানো ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Fake Website
সেখানে ব্যক্তিগত কিছু তথ্য জানিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে বলা হয়।
Screenshot: Fake Website
ফরমটি পূরণ করার পরের ধাপে অভিনন্দন জানিয়ে বোনাস পাওয়ার কথা বলা হয়। এই ধাপে বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
Screenshot: Fake Website
বিকাশে কি এমন কোনো অফার চালু আছে?
যে ওয়েবসাইট থেকে এই বোনাস দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে সেটি বিকাশের লোগো ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া একটি ওয়েবসাইট।
Screenshot: Fake Website
এছাড়াও, বিকাশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এমনকোনো অফারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে বিকাশ থেকে এমন বোনাস দেওয়া প্রসঙ্গে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও উপরে প্রদর্শিত সবগুলো প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করে ক্যাম্পেইনটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে যেকোনো ভুল নম্বর কিংবা তথ্য দিলেও সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার কথা বলা হয়। শেষ ধাপের পর আর টাকা পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত হয় রিউমর স্ক্যানার টিম। তাছাড়া বিকাশ সবসময় পিন নম্বর এবং ভেরিফিকেশন কোড কোথাও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে গ্রাহকদের।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, এটি একটি ভুয়া ক্যাম্পেইন। প্রকৃতপক্ষে বিকাশের পক্ষ থেকে এমন কোনো বোনাস দেওয়া হচ্ছে না।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে বলা হয়, ‘অনুগ্রহ করে এ ধরনের ভুল তথ্য দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না। বিকাশের তুমুল জনপ্রিয়তার জন্য কিছু অসাধু চক্র বিভিন্ন নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা অফার দেখিয়ে বিকাশের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিকাশ এ ধরনের কোনো অফার ঘোষণা করেনি এবং উক্ত অফারগুলোর সাথে বিকাশ-এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই, এসব মিথ্যা অফারের লোভে পড়ে কিংবা প্রতারিত হয়ে এই ধরনের কোনো ওয়েবসাইট অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে কোনো লেনদেন করবেন না এবং আপনার বিকাশ একাউন্ট নাম্বার, পিন, ভেরিফিকেশন কোড বা অন্য কোনো তথ্য দিবেন না। এছাড়া এ ধরনের ওয়েবসাইটের লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকবেন।মনে রাখবেন, বিকাশ কখনোই আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন ও ভেরিফিকেশন কোড জানতে চায় না।’
Screenshot: Conversation between Bkash and RS Team
মূলত, বিকাশের ছয় কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষ্যে বিকাশের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীদের ৬৬০০ টাকা বোনাস দেওয়ার দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিকাশের পক্ষ থেকে এমন কোনো বোনাস ঘোষণা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে বিকাশের লোগো ব্যবহার করে বিকাশের ওয়েবসাইটের আদলে তৈরি ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতারণার উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে একাধিকবার বিকাশের ওয়েবসাইট নকল করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রলোভন দেখানো হয়। সেসময় উক্ত বিষয়গুলোকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বিকাশের ছয় কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষ্যে বিকাশের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীদের ৬৬০০ টাকা বোনাস দেওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি শেষ হলো বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন সিটি করপোরেশনটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন সহ আরও ছয়জন। গত ২৫ মে সারাদিন এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার পর ফলাফল ঘোষণা করা শুরু হয়। নানা কারণে আলোচিত এই নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমসহ নেটিজেনদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। যার প্রভাবে দ্রুত সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নানা ভুল তথ্য৷
নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে বিজয়ী ঘোষণা
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে নির্বাচনটির রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক ফল ঘোষণার আগেই সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এমন একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে ২৬ মে, রাত ১ টা ২৬ মিনিটে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম যখন নির্বাচনের সবশেষ ফলাফল ঘোষণা করেন, তখন দেখা যায়, সিটি করপোরেশনটির ৪৮০ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট।
Screenshot: Somoynews.tv
অর্থাৎ, ভোট প্রাপ্তির দিক দিয়ে সিটি করপোরেশনটির নির্বাচনের ৪৮০ কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী, আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেন জায়েদা খাতুন।
ভোট সংখ্যার ব্যবধান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে গণমাধ্যমে একাধিক ভুল তথ্য
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম ২৫ মে সিটি করপোরেশনটির নির্বাচন শেষে ২৬ মে রাত ১ টা ২৬ মিনিটে সিটি করপোরেশনটির নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন।
এ নিয়ে বেসরকারি সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল সময় টিভির ফেসবুক পেইজে প্রচারিত লাইভ দেখুন এখানে, জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক মানবজমিনের ফেসবুক পেইজে প্রচারিত লাইভ দেখুন এখানে।
Image Collage: Rumor Scanner
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার আগেই দেশীয় কিছু অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জায়েদা খাতুন ও আজমত উল্লা খানের ভোটের ব্যবধান সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আসতে থাকে।
দাবি ১: জায়েদা খাতুন ১৬৯৩০ ভোটে হারিয়েছেন আজমত উল্লা খানকে।
Screenshot: Gazipur City Facebook Page
এই দাবির পক্ষে Gazipur City (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেইজে ২৬ মে রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে প্রদত্ত একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, গাজীপুরের মোট ৪৮০ টি কেন্দ্রের মধ্যে সবগুলোর প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী নৌকা মার্কার আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ৭১ হাজার ৭৭ ভোট ও ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৭ ভোট। অর্থাৎ জায়েদা খাতুন ১৬ হাজার ৯৩০ ভোটে বিজয়ী।
এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার পর ২৬ মে সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটে Rip Milestone (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Rip Milestone Facebook Page
এছাড়া, ফেসবুকে প্রচারিত এই তথ্যটি উল্লেখ করেই রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার আগেই রাত ১২ টা ৫৮ মিনিটে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টাইমস (আর্কাইভ), রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার পরে ২৬ মে সকাল ১০ টা ২২ মিনিটে অনলাইন সংবাদমাধ্যম সোনালী নিউজ জায়েদা খাতুন ১৬৯৩০ বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে।
Image Collage: Rumor Scanner
দাবি ২: জায়েদা খাতুন ১৬২৪৮ ভোটে হারিয়েছেন আজমত উল্লা খানকে।
Screenshot: The Citizens Voice-নাগরিকের কণ্ঠ
এই দাবির পক্ষে The Citizens Voice-নাগরিকের কণ্ঠ (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেইজে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার ফল ঘোষণার একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬২৪৮ ভোটের ব্যবধানে জায়েদা খাতুন বিজয় লাভ করেছেন।
উক্ত দাবিতে ফল ঘোষণার আগেই ২৬ মে রাত ১ টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
Image Collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে ফেসবুকে প্রচারিত এই তথ্যটি উল্লেখ করেই রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার আগেই অনলাইন পোর্টাল বার্তা বাজার (আর্কাইভ) ২৬ মে রাত ১ টা ৮ মিনিটে তাদের ফেসবুক পেইজে জানায়, সিটি করপোরেশনটির ৪৮০ কেন্দ্রের সর্বশেষ বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ১৬ হাজার ২৪৮ ভোটে জয়লাভ করেছে ঘড়ি মার্কা।
Screenshot: Barta Bazar
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার আগেই গণমাধ্যমগুলো অনির্ভরযোগ্য সূত্রে ভুল তথ্য প্রচার করেছে৷
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জায়েদা খাতুন কত ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন?
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে এরপরের দিন ২৬ মে, রাত ১ টা ২৬ মিনিটে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন।
Screenshot: Somoynews.tv
তার ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনটির ৪৮০ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। এই হিসেবে তাদের ভোট ব্যবধান দাঁড়ায় ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট৷
Image: Gazipur City Corporation Election Result
অর্থাৎ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জায়েদা খাতুন মূলত ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট ব্যবধানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খানকে হারিয়েছেন।
মূলত, গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় এবং ২৬ মে রাত ১ টা ২০ মিনিটের পর সিটি করপোরেশনটির নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। তবে তার ফল ঘোষণার আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খানের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রচার হতে থাকে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মেয়র পদে জায়েদা খাতুন ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খানের প্রাপ্ত ভোটের প্রকৃত ব্যবধান ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট।
সুতরাং, গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬৯৩০, ১৬২৪৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।