সম্প্রতি, “বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে এইমাত্র মাঠে নামলো সেনাবাহিনী | Caretaker Government | BD Politics News” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে মাঠে নামেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কী ওয়ার্ড সার্চের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে বিএনপি’র পক্ষে সেনাবাহিনী মাঠে নামার দাবির কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওতে দুটি ভিন্ন ভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপনের ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। এরপর ভিডিওটিতে একজন সেনা কর্মকর্তার বক্তব্য দেখানো হয়।
ভিডিও যাচাই
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Somoy Tv এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর “নির্বাচনের মাঠে ১৩ দিন থাকতে পারে সেনাবাহিনী! | BD Army | President’s Permission | EC | Somoy TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে সেনাবাহিনীর বৈঠকের পর প্রেস বিফিংয়ের দৃশ্য এটি। প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
এছাড়াও, প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর “ভোটের মাঠে সেনা মোতায়েন হতে পারে ১৩ দিন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সেনাবাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের বৈঠক সম্পর্কে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর বরাত দিয়ে জানানো হয়, “নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হোক, তা নির্বাচন কমিশন চায়। এটা একটা প্রারম্ভিক আলোচনা। কীভাবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হবে, কোথায় কোথায় তারা কীভাবে কাজ করবে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ করবে। তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিলে অবশ্যই নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে।”
অর্থাৎ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে সেনা বাহিনীর বৈঠক হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
উল্লিখিত ঘটনার সাথে বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে সেনাবাহিনীর মাঠে নামার দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। উক্ত ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ পাঠের ভিডিও এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে সেনাবাহিনীর বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, সেনাবাহিনী বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।